ভালোবাসি পর্ব-০৫

0
5889

#ভালোবাসি
#পর্বঃ৫
#Tanisha Sultana (Writer)

“কথায় কথায় আপনি আমার দিকে এগিয়ে আসেন কেনো বলেন তো? দুর থেকে কি কথা বলা যায় না। না কি আমি কালা কোনটা

” দুর থেকে কথা বললে তুই বুঝিস কম

“ফালতু কথা। সব সময় আমার সাথে দশ হাত দুরে থাকবেন বুঝলেন

সায়ান তুলির কথায় কান না দিয়ে এগোতে থাকে। তুলি পিছিয়ে যাচ্ছে। পিছতে পিছতে ওয়াশরুমের দরজার কাছে চলে যায়। দরজাটা হালকা ভেরানো ছিলো। তুলি দরজায় ভর দেয় আর ধপাক করে পড়ে যায়। সায়ান মুখ ঢেকে ফেলে। তুলি পরেই কান্না শুরু করে দেয়

” থাম থাম এতো জোরে কাঁদলে মানুষ ভাববে আমি তোকে পটাচ্ছি।

তুলি নাক টেনে টেনে বলে

“আপনার জন্যই তো এমন হলো। আমার কোমরটা ভেঙে গেলো। এখন কি হবে আমার। এ্যা এ্যা

” স্টপ। কিচ্ছু হয় নাই জাস্ট পরে গেছিস।

সায়ানের ধমকে তুলি চুপ করে। সায়ান তুলিকে কোলে করে আয়নার সামনে দাঁড় করায়।

“শাড়িটা আমি পরিয়ে দেবো। অন্য সব কিছু তুই পরে আয়

” আমি পরবো না শাড়ি

“আর একটা কথা বললে একটা থাপ্পড় খাবি

সায়ান দরজা আটকে চলে যায়

” এই লোকটা আস্ত একটা হনুমান। একটুও ভালো করে কথা বলতে পারে না। সারাক্ষণ ধমক দেয়। শালা তুই বউ পাবি না। সারা জীবন চিরোকুমার থাকবি।

ধুর আমিও না ওনার তো বিয়ে হয়ে গেছে। তাও আবার আমার সাথে।

তুলি শাড়ি হাতে নিয়ে নিজে নিজে পরার ট্রাই করছে।

“যেটা পারিস না সেটা করার চেষ্টা করিস কেন

সায়ানের কথায় সোজা হয়ে দাঁড়ায়।

” চেষ্টা না করলে তো আর শিখতে পারবো না।

“অতিরিক্ত কথা বলিস তুই

সায়ান তুলিকে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে। আচল ঠিক করে দিচ্ছে তখন দরজা ঠেলে মায়া ঢোকে

” সায়ান তুমি ওকে শাড়ি পরাচ্ছো কেনো?

মায়ার কথায় তুলি সায়ান দুজনই মায়ার দিকে তাকায়

“ও পারতে পারে না তাই। আর তুমি এখন এখানে কেনো?

” তোমাকে নিতে এসেছি। সবাই আমাদের জন্য ওয়েট করছে তারাতাড়ি চলো। কি যেনো নাম তোমার ওহহ তুলি তুমি আমাদের সাথে যাবে?

“হুম ও যাবে

” ঠিক আছে চলো

ওরা তিনজন বেরিয়ে পরে। সায়ান ডাইভ করছে পাশে মায়া বসেছে। তুলি ইচ্ছে করেই পিছনে বসেছে।

ওরা একটা ক্লাবে আসে। সায়ান আর মায়া গল্প করতে করতে যাচ্ছে। মায়া শুধু বলছে সায়ান শুনছে। তুলি ওদের পেছনে আসছে। সায়ান তিনটে মেয়ে আর দুইটা ছেলের সাথে কথা বলছে আর মায়া সায়ানের পাশে বসে আছে

“সায়ান ও তোর বউ (আলিফ)

সবাই হাসে

” সায়ান তুমিও না একটা দুধের শিশুকে বিয়ে করলে। আমি না হয় একটা পবলেমে আটকে বিয়ের দিন উধাও হয়েছিলাম তাই বলে তুমি তোমার মেয়ের বয়সী একটা বাচ্চা কে বিয়ে করবে।
তবে যাই হোক এবার আমি চলে এসেছি। তুলি মন দিয়ে লেখাপড়া করো আমি তোমার সায়ান ভাইয়া আমরা তোমার পাশে আছি। অনেক বড় হও তারপর ভালো ছেলে দেখে তোমার বিয়ে দেবো

তুলি সায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো। তুলি ভেবেছিলো সায়ান হয়ত কিছু বলবে কিন্তু সায়ান চুপ করে আছে

“আপু তোমার বাবা কি তোমার থেকে তেরো বছরের বড়?

” মানে

“আমি সায়ানের থেকে তেরো বছরের ছোট। আর একটা বাবা তার মেয়ের থেকে ২৭-৩০ বছরের বড় হয়। তো তোমার কোন দিক থেকে মনে হয় আমি সায়ানের মেয়ের বয়সি। তুমি হয়ত জানো স্বামী সব সময় স্ত্রীর থেকে বড় হয়।

মায়া অপমান বোধ করে। তুলি এভাবে কথা বলবে তা মায়া ভাবে নি। সবাই তুলির দিকে তাকিয়ে আছে। সায়ান ছাড়া।

তুলি ওখান থেকে উঠে চলে আসে। একপাশে দাঁড়িয়ে আছে।

” আচ্ছা উনি কি মায়া আপুকে এক্সেপ্ট করে নেবে। আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে। যা খুশি করুক। আমাকে লেখাপড়া করতে হবে। উন্নতি করতে হবে

তুলির চোখ বেয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে।
তুলি একটু সায়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে মায়া সায়ানকে টেনে ডান্স ফ্লোরে নিয়ে যাচ্ছে। তুলি চোখ সরিয়ে নেয়।

“মায়া পাগলামী বন্ধ করো। আমি বিবাহিত

” কিন্তু ভালো তো আমাকে বাসো

“কাকে ভালোবাসি সে টা বড় কথা না। বড় কথা এটাই যে তুলি আমার বউ

” মাই ফুট। আমি তোমাদের ডিভোর্সের ব্যবস্হা করছি। সায়ান তুমি তো কখনো আমার মুখের ওপর কথা বলতে না। আমি যা বলতাম তাতেই হ্যাঁ বলতে। তাহলে এখন শুনছো না কেনো? আমি তোমাকে ভালোবাসি তুমিও আমাকে ভালোবাসো তাহলে এখানে তুলি কেনো থাকবে?

“আমি তুলিকে বিয়ে করেছি

” ওহহহ গড। সায়ান তাকাও আমার দিকে। আমার চোখের দিকে তাকাও। আমার চোখে তোমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছো?

“মায়া আমি এখানে থাকবো না। বাসায় যাবো।

” ঠিক আছে চলো
মায়া সায়ানের হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। হাজারটা কথা বলছে। সায়ান তুলির কথা ভুলে গেছে। মায়া এক ফাঁকে সায়ানের ফোন সাইলেন্ট করে দেয়।
তুলি সায়ানকে দেখে মায়ার হাত ধরে বেরিয়ে যাচ্ছে। তুলি ওদের পেছনে দৌড় দেয়। কিন্তু তুলি পৌছানোর আগেই ওরা গাড়ি নিয়ে চলে যায়। তুলি গাড়ির পেছনে দৌড়ায়। কিন্তু নাগাল পায় না। ক্লান্ত হয়ে বসে পরে তুলি

“আমাকে কেনো রেখে গেলেন সায়ান? আমি কোথায় যাবো এখন

কাঁদতে কাঁদতে বলে তুলি।

” আরে তুলি তুমি এখনে এভাবে কাঁদছো কেনো

পেছনে তাকিয়ে দেখে রিক। তুলি ভরসা করার মতো কাউকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে জোরে কান্না করে ফেলে। তুলি রিককে জড়িয়ে ধরেছে এতে রিকের ভালো লাগছে আবার তুলি কাঁদছে তাতে খারাপও লাগছে। রিক তুলির মাথায় হাত বুলায়

“বলো তুলি কি হয়েছে? তুমি একা কেনো? তোমার বাবা মা বা বাড়ির সবাই কোথায়?

” চলে গেছে। আমাকে একা ফেলে

হেঁচকি তুলে বলে তুলি। রিক তুলির চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে

“কোনো বেপার না আমি পৌঁছে দিয়ে আসছি তোমায়। কেঁদো না প্লিজ

তুলি রিকের গাড়িতে ওঠে। রিক নানা ভাবে তুলিকে হাসানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তুলি হাসছে না। তুলির মনে পাহাড় সমান অভিমান জমে আছে।

রিক তুলিকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দেয়। বাড়ির ভেতরে পৌঁছে দিতে চায় কিন্তু তুলি না করে।

সায়ান বাড়ি এসেই তুলির কথা মনে পরে। তারাহুরো করে বেরোনোর জন্য দরজা খুলে দেখে তুলি দাঁড়িয়ে আছে। চোখ মুখ ফুলে আছে। তুলি সায়ানকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢোকে।

” তুলি আমি আসলে

“আপনি আসলে কি ভালোবাসার মানুষ কে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছিলেন। তাই ফেলে এসেছেন তাই তো। আমি তো জোর করে আপনার ঘারে চেপে বসি নি। তাহলে কেনো? আপনার কাছে স্ত্রীর অধিকার ও চাই নি। আর কখনো চাইবোও না। বউ না মানলেন বোন তো হয়। সেই খাতিরেই না হয় আমাকে নিয়ে আসতেন।

তুলির গলা ধরে আসছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। সায়ানের তুলির কান্না সয্য হচ্ছে না। খুব খারাপ লাগছে

” তুলি সরি

“ইটস ওকে।

তুলি রুমে চলে যায়। সায়ান ওখানেই বসে পরে। আজ সায়ান একটা মস্ত বড় ভুল করেছে।

খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে তুলি। আর কখনো সায়ানের রান্না খাবে না। তাই নিজের রান্না নিজেই করলো। রান্না করে খাবার রুমে নিয়ে আসে। সায়ানের সামনে যাবে না আর। স্কুলের জন্যে রেডি হয়ে খাবার খেয়ে ড্রয়িং রুমে উঁকি দিয়ে দেখে সায়ান আছে কি না। নাহ নেই তুলি দৌড়ে চলে যায়।

সায়ানও আর তুলির সামনে যাবে না। তাই তুলির খোঁজ নেয় নি।

রিক স্যারের কোচিং এ বসে আছে প্রভা আর তুলি। সবার ছুটি হয়ে গেছে কিন্তু ওদের বসিয়ে রেখেছে। একটু পরে রিক চলে আসে হাতে খাবারের প্যাকেট নিয়ে। ওদের সামনে রাখে

” স্যার এসব কী? (প্রভা)

“তোমাদের জন্য গরম গরম বিরিয়ানি

বিরিয়ানির মান শুনেই তুলি প্যাকেট খুলে খেতে শুরু করে। রিক কেনো বিরিয়ানি এনেছে সেটা শোনার সময় নেই।প্রভা জিজ্ঞেস করলো

” স্যার বিরিয়ানি কিসের জন্য

“আমি তোমাদের টিচার তো ভালোবেসে কি তোমাদের কিছু খাওয়াতে পারি নি?

” হুম পারেন বাট

“আগে খাও। পরে বলছি

প্রভাও খাওয়া শেষ করে।

বাসায় ফেরার সময় তুলি বাজার করে নিয়ে আসে। সায়ানের কিছুই আর খাবে না। বাসায় ঢুকে দেখে সায়ান আর মায়া খাচ্ছে। মায়া তুলিকে ডাকে। তুলি না শোনার ভান করে রুমে চলে যায়।
রাত দশটায় তুলি রান্না করতে যায়। পেঁয়াজ কাঁটছে

” তুই রান্না করছিস কেনো?

তুলি সায়ানের কথা না শোনার ভান করে। সায়ান রেগে যায়। তুলির দিকে এগিয়ে যায় তুলি থামিয়ে দেয়

“একদম আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করবেন না। আমাকে আমার মতো থাকতে দেন। আমি তো আপনার লাইফে নাক গলাতে যায় না তো আপনিও আমার লাইফে নাক গলাতে আসবেন না

” নাক গলানোর কোনো ইচ্ছেই নেই আমার। আমার বাড়িতে থাকিস তাই বলতে এসেছিলাম খাবি কি না

সায়ান চলে যায়। তুলি রান্নায় মন দেয়।

চলবে