ভালোবাসি বুঝে নাও পর্ব-০৫

0
5653

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও🍁🍁
#পর্ব_৫
#সুমাইয়া_সুলতানা _সুমী(writer)
.
আমরা সবাই মাঠে এসেছি,, পুরো মাঠ খালি,, সম্ভবত এখন পাঠ বোনার সময় এই জন্য,, সামনে ইশিতা আপু তার পিছে রকি আর রাকিব,, তার পিছে মেঘলা আপু,, তারপর আমি আর সবাই শেষে মেহরাব ভাই,,, সুহান আর মুনির আসিনী ওদের নাকি বেড়াতে ভালো লাগে না তাই বাড়িতে বসে আছে,,,

আমরা মাঠের মধ্যে একটা বাগান মতো জায়গা আছে সেখানে এসে থামলাম তখন ইশিতা আপু বলল।

জানিস মাহি এই জায়গাটার নাম কি??

কি??

এই জায়গার নাম হলো শিশু বাগান,,

কিহ শিশু বাগান?? এটা আবার কেমন নাম(মাহি)

আরে বহু বছর আগে এখানে একটা মোটা শিশু গাছ ছিলো তাই এই বাগানটার নাম শিশু বাগান,, এখন অবশ্য গাছটা নেই কেটে ফেলছে।

হ্যাঁ তুই দেখেছিস,, বহু বছর আগে এই গাছটা কি তুই লাগিয়ে ছিলি(মেহরাব)

নাহ আমি কেনো লাগাবো আমি কি তখন হয়েছিলাম নাকি??? আমি তো শুনেছি তাই বলছি।(ইশিতা)

উফ ইশিতা আপু তুমি ভাইয়ার কথায় কান দিও না তো তুমি বলো। (মাহি)

হুমম পাগলে পাগলে হালি যত্তসব আজগুবি গল্প(এই বলে ভাইয়া অন্য দিকে তাকিয়ে ফোন টিপতে লাগলেন)

আচ্ছা ওই যে দূরে একটা ছোট বাগান মতো লাগছে ওটা কি??(মেঘলা)

আরে ওটা তো মাদার বাগান(ইশিতা)

মাদার বাগান?? সেটা আবার কি??(মাহি)

শোন তাহলে,,, এখন থেকে কয়েক যুগ আগে ওখানে একটা রাজ মহল ছিলো আর সেই মহলে একজন রাজা ছিলো,, সেই রাজা খুব খারাপ ছিলো,, শুধু প্রজাদের উপর অত্যাচার করত,, আর রাতের বেলায় ঘোড়ায় চড়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়াতো,আর একদিন গ্রামের সবাই মিলে ওই রাজাকে মেরে ফেলছিলো অনেক অত্যাচারি ছিলো তো তাই,, আর কত সয্য করবে সবাই, তারপর ওই রাজ প্রাসাদ ভেঙে ফেলা হয়েছিলো,, তারপর ওখানে বিশাল বড় একটা মাদার গাছ হয়েছিলো, আর ওই মাদার গাছে সেই রাজার আত্মা থাকতো,, আর গ্রামের মানুষ কে ভয় দেখাতো,, তারপর গ্রামের মানুষ সবাই মিলে একটা বড় ওঝা ডেকে ওই মাদার গাছ অর্ধেক কেটে ফেলেছিলো, শোনা যায় এখনো পূর্নিমার ,, রাতে রাজার ঘোড়ার পায়ের ঠকঠক আওয়াজ হয় (ইশিতা)

কি বলছো আপু আমার তো ভয় করছে(ভয়ে ভয়ে বললো মাহি)

এক পাগল কি সব গাজাখুরি গল্প বলছে আর আরেক পাগল তা বসে বসে গিলছে (মেহরাব বলল)

এসব গল্প নয় ভাইয়া সব সত্যি।(ইশিতা)

হ্যাঁ তোর মাথা,,তুই তো ওই রাজার বউ ছিলি,,আগে চল(ধমক দিয়ে বলল মেহরাব)

তারপর আমরা সবাই দিঘীর পাড়ে গেলাম,, বিশাল বড় দীঘি এখানে নাকি মাছ চাষ করা হয়,,,, আমি পাশেই তাকিয়ে দেখলাম ওখানে ঝোপ ঝাড়ের ভিতর একটা ছোট ডোবা আর তার ভিতর অনেক গুলো শাপলা ফুল ফুটে আছে,,,আমি ফুলগুলো তুলার জন্য সামনে এগোতেই।

ওদিকে ঝোপের ভেতর কোথায় যাচ্ছি?? (মেহরাব)

হ্যাঁ মাহি ওখানে যাস না ওখানে সাপ আছে(ইশিতা)

আমি ওই ফুলগুলো নিবো(শাপলা ফুলগুলো কে উদ্দেশ্য করে)

দরকার নেই,, সন্ধ্যা হয়ে আসছে এখন বাড়ি চল সব(মেহরাব)

আমি তো ওই ফুলগুলো নিবোই সেটা যে কোরেই হোক,, (মনে মনে বলল মাহি)

এরপর সবাই বাড়ি চলে গেলো।

,,,রাতে,,,

এ কিরে তোদের এই অবস্থা কেনো??(সিঁড়ি দিয়ে মেহরাব উপরে উঠছিলো তখনি দেখলো রকি আর রাকিব নিচে নামছে,, ওদের দুজনের মুখে,, একজন এর মোছ আঁকা আর আরেক জনের দাড়ি আঁকানো তাই মেহরাব বলল)

মাহি আপু আমাদের চেনে না তো তাই এমন করেছে,,রকির মুখে মুছ আর আমার মুখে দাড়ি,, তবে আমাদের ভালোই লাগছে নিজেদের কেমন বড় বড় লাগছে।

তাই,, নাকি,, কিন্তু তোদের যে অবস্থা কেউ দেখলে ভয় পেয়ে যাবে।

তাহলে তো আরো ভালো সবাইকে ভয় দেখাবো হিহিহি।

হিহি করা বন্ধ কর আর বল মাহি কোথায়??

আপু তো উপরে বসে ফোনে গান শুনছে। একা একা।

আচ্ছা তোরা যা এখন,,তারপর রকি আর রাকিব চলে গেলো আর মেহরাব মাহির রুমে গেলো,, গিয়ে দেখলো মাহি বিছানার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে ফোন দেখছে।

আসতে পারি??

ভাইয়াকে দেখে তারাতারি উঠে নিজেকে ঠিক করে বসে রইলাম।হ্যাঁ আসুন ভাইয়া।

কিরে কি করছিস (মেহরাব)

কিছু না এই ফোনে গান দেখছি আর কি।

হুম,,, এখন ফোনটা রাখ আর আমার মাথাটা টিপে দে একটু,, খুব মাথা বেথ্যা করছে(এই বলে মেহরাব মাহির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো)

আরে ভাইয়া কি করছেন কি,,কেউ চলে আসবি তো। (ভাইয়া কোলে মাথাটা রাখতেই গায়ের মধ্যে কেমন যেনো একটা শীতল হাওয়া বয়ে গেলো)

আসুক যে খুশি,, তোকে যা করতে বললাম তাই কর। (চোখ বন্ধ করে)

তারপর আমি আর কি করবো জানি ভাইয়াকে কিছু বললে ভাইয়া শুনবে না তাই ভাইয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম,,কি সুন্দর সিল্কি চুল।,চুল থেকে অনেক সুন্দর একটা স্মেইল আসছে,, আমার জানা মতে ছেলেরা মেয়েদের চুলের গন্ধে মাতাল হয়ে যায় কিন্তু আমার ক্ষেএে তো পুরোই উল্টো আমি তো ভাইয়ার চুলের গন্ধে মাতয়ারা হয়ে যাচ্ছি,,

ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে মনে হয় ঘুমাই গেছে,, গরমে নাকের মাথায় ঘাম জমে কেমন চিকচিক করছে,, শুনেছি মেয়েদের নাক ঘামলে নাকি তার বর তাকে অনেক ভালোবাসে ভাইয়ার ও তো নাক ঘামছে তাহলে কী ভাইয়ার বউও ওনাকে অনেক ভালোবাসবে?? কপালটা কেমন চকচক করছে কপালটা আমায় টানছে লোভ সামলাতে না পেরে টুপ করে একটা চুমো দিয়ে দিলাম আর সাথে সাথে ভাইয়া চোখ মিলে তাকালো।

এইরে বুঝে ফেললো নাকি (মনে মনে বলল মাহি)

এটা কি হলো??

ক,,,কই,,কি হলো,(আমতা আমতা করে বলল)

তুই এই মাএ কি করলি??

ক,কই কিছু না তো,, আ,,আপনি উঠেন তো আমি নিচে যাবো খিদে পেয়েছে খাবো(আমতা আমতা করে বলে উঠে এক প্রকার ছুটে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম)

এটা কি হলো,,আমি যদি ভুল না করে থাকি তাহলে মাহি আমায় কিস করলো?? এটা সত্যি নাকি আমার মনের ভুল (নিজে নিজে বলল মেহরাব)

এ আমার কি হলো বুকের মধ্যে এমন লাগছে কেনো কেমন যেনো দম বন্ধ লাগছে, মনের ভিতর এক প্রকার ঝড় বয়ে চলেছে (জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলল মাহি)

কিরে তুই এখানে দাড়িয়ে একা একা কি করছিস??(মেঘলা)

ক,,কিছু না আপু এমনি তেই দাড়িয়ে আছি কেনো কিছু বলবে?

হ্যাঁ নিচে চল খাবি না?? সেই কখন থেকে মামি আর ফুপি তোকে খুঁজছে চল চল নিচে চল।

তারপর আপুর সাথে নিচে নেমে এলাম,,

এখানে কোনো ডাইনিং টেবিল নেই নিচে মাদুর পেতে সবাই খেতে বসে গেছে,, সবাই একসাথে সারি বেঁধে বসে গেছে,, বড় মামি ছোট মামি আর আমার আম্মু সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে,, বড়রা একসাথে আর আমরা ছোটরা একসারিতে বসলাম,, থালা নিয়ে কেবলি বসেছি তখনি কোথা থেকে ভাইয়া এসে ধপাস করে আমার পাশে বসে পড়লো।

আমি কিন্তু জেগে ছিলাম তুই কি করেছিস সবই মনে আছে (ফিসফিস করে কানে বললাম)

ভাইয়া এসব কেনো বলছে ওনি জানেন না, ওনি এসব বললে আমার কেমন যেনো লাগে বুকের মধ্যে ধকধক করে আর শ্বাস নিতে সম্যসা হয়,, আমার এ কি হলো শেষ মেষ কি শ্বাসকষ্টে মরবো (মনে মনে বলল মাহি)

কিরে ওমন চুপ করে আছিস কেনো,, কিছু বলল।

ম,,,মা আমাকে ভাত দাও (আমতা আমতা করে বললাম)

তা পানি না ফেলেই ভাত নিবি??(মেহরাব)

থালার দিকে তাকিয়ে দেখি সত্যি থালাতে পানি,, ইস আমার কি যে হলো, ওনাকে দেখলেই সব কিছু ভুল হয়ে যাচ্ছে।

আপনাকে কে বললো যে আমি পানির মধ্যেই ভাত নেবো আমি তো পানি ফেলতেই যাচ্ছিলাম,।

ওহ তাই বুঝি।

হুম তাই,,এখন কথা না বলে চুপ করে খান তো।

বাবা তোর তো দেখছি এখানে এসে অনেক সাহস হয়ে গেছে,, আমায় ধমকাচ্ছিস??.

না ইয়ে মানে সরি (এই বলে চুপ করে থাকলাম,, কি বলবো কিছুই বলার নেই আমার,,, উফফ সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে,, কেনো যে তখন ওমন করলাম কে যানে)

চলবে,,,???