ভালোবাসি বুঝে নাও পর্ব-০৭

0
6035

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও🍁🍁
#পর্ব_৭
#সুমাইয়া_সুলতানা _সুমী(writer)
.
মাহির চিৎকার শুনে মাঠে কাজ করা মানুষগুলো ওর দিকে এলো,, আসোলে দুপুর তো তাই সবাই গাছের ছায়ায় বসে দম নিচ্ছিল তখনি ওমন চিৎকার শুনে তারা উঠে কে চিৎকার করছে তা দেখতে গেলো,,,,গ্রামে এমনি হয় কারো কিছু হলে সবাই ছুটে আসে শহরে এমন হয় না,,,

কে তুমি আর এভাবে চিৎকার করে দৌড়াচ্ছো কেনো??(১ম লোকটি জিগাস করলো)

হ্যাঁ আর তোমাকে তো কখনো এ গ্রামে দেখিনি তুমি কাদের বাড়ি এসেছো?? (২য় লোক)

মাহিতো ভয়ে কোনো কথাই বলতে পারছে না তাও হাফাতে হাফাতে বলল।

আ,,,আমি ওই যে ও,,বাড়িতে এ,সেছি,,আমার নানু বাড়ি নানুর নাম,, ওয়াজেদ আলী আর ম,,মামার নাম ইসহাক (ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল)

ওহ তুমি তাহলে ওয়াজেদ কাকার নাতনি?? তা মা তুমি এখন মাঠে তাও আবার একা এভাবে দৌড়াচ্ছো কেনো??

আসোলে ওখানে স,,সাপ আর আমার পায়ে (এই টুকু বলে আর বলতে পারলো না)

সাবাই মাহির পায়ের দিকে তাকিয়ে দাখে পায়ে রক্তের দাগ,,

একি তোমাকে তো মনে হয় সাপে কেটেছে এই তোর গামছাটা দে তো (পাশের জনকে উদ্দেশ্য করে বলল,, তারপর তার থেকে গামছাটা নিয়ে কাটার একটু উপরে শক্ত করে গামছাটা বেধে দিলো)

বাড়িতে,,,

সবাই মাহিকে খুঁজতে শুরু করে দিয়েছে। মেহরাব ঘুম থেকে উঠে মাহিকে ডাকে কিন্তু কোথাও পাই না তারপর মেঘলা আর ইশিতার কাছে জিগাস করলে বলে যে মাহি ওদের সাথেই ঘুমিয়েছিলো তারপর ও কোথায় গেছে ওরা জানে না,, তারপর বাগানে বাড়ির বাইরে সবখানে খোঁজে কিন্তু কোথায় পাইনা তারপর সবাইকে ডেকে জিগাস করলে কেউ বলতে পারে না যে ও কোথায় এদিকে তো মেহরাব এর পাগল পাগল অবস্থা মাহির মা তো কান্না শুরু করেদিয়েছে,, কেননা মাহি কেবল হাতে পায়েই বড় হয়েছে বুদ্ধি এখনো হাঁটুর নিচে,, বড্ড অবুঝ আর একটু বোকাও যে যা বলে তাই বিশ্বাস করে,, কে যানে মেয়েটা কোথায় গেলো৷
তারপর মেহরাব বাগানের সেই চরাট পাতা ওখানে গেলো দেখলো একজন মহিলা ওখানে পাতা ঝাড়ু দিচ্ছে ওনাকে মাহির কথা জিগাস করলো।

আচ্ছা আপনি এখান দিয়ে কোনো মেয়েকে যেতে দেখেছেন?? গায়ে নীল রঙের সালোয়ার কামিজ পরাছিলো,, বেশি লম্বা না আবার খাটোও না গায়ের রঙ অনেক ফর্সা,,আর অনেক পাতলা (মেহরাব)

হ দেখছি ওই যে মাঠের দিকে গেছে অনেকক্ষণ আগে আমি (মহিলা আরো কিছু বলছিলো কিন্তু মেহরাব না শুনেই মাঠের দিকে দৌড় দিলো)

আমি বাড়ি যাবো (কেঁদে বলল মাহি)

তোমাকে তো ওঝার কাছে নিতে হবে, বিষ নামাতে হবে,, কি জানি কোনো বিষাক্ত সাপ কামড়াইলো কিনা(লোকটি)

মাহি কাউকেই চিনতে পারছে না তার উপর সবাই বলছে সাপে কামড় দিসে অনেক ভয় লাগছে তাই কাদতে লাগলো,, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে তখনি দেখলো সামনে মেহরাব আসছে মাহি মেহরাবকে দেখেই বসা থেকে উঠে খোড়াতে খোড়াতে গিয়ে মেহরাবকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলো।

এদিকে মেহরাব প্রায় অনেকটা দূর এসে দেখলো সামনে ৪,,,৫ লোক মিলে কিছু দেখছে আর কি যেনো বলাবলি করছে,, ওটা দেখেই মেহরাব এর প্রাণ পাখি প্রায় উড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা মন বলছে মাহির কিছু হলো না তো?? তখনি মাহি এসে ওকে জরিয়ে ধরলো।

তুমি কে?? (ওখানকার লোক মেহরাবকে জিগাস করলো)

আমি ওর বাড়ির লোক কি হয়েছে ওর??(মেহরাব)

ওর তো সাপে কেটেছে জলদি করে ওঝার কাছে নিয়ে যাও নইলে বিষ মাথায় ওঠে মইরা যাইবো।

এই কথাশুনে মেহরাব এর তো অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্হা যলদি করে মাহির পায়ের দিকে তাকালো দেখলো সত্যি রক্তের দাগ,,, তারপর মাহিকে কোলে তুলে নিয়ে যেতে লাগল।

আরে কই যাও ওঝার বাড়ি তো ওই দিকে।

ওঝা নয় আমি ওকে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাচ্ছি।

তারপর মেহরাব মাহিকে বাড়িতে নিয়ে গেলো আর মেহরাব এর গাড়ি করে গ্রামের উপজেলা সদর হসপিটাল এ নিয়ে গেলো। ডাক্তার মাহিকে দেখে অনেক পরিক্ষা নিরীক্ষা করে বললো যে ওকে কোনো সাপে কামড়ায়নি,, পায়ে একটা কাটা বেঁধেছিলো আর কাটাটা বেশি গভীর এ চলে যাওয়াই রক্ত বার হয়ছে,, তবে কাটা বার করে ফেলেছে এখন আর কিছু হবে না,, তবে পা একটু বেথ্যা হবে এই আর কি।

বাড়িতে,,,

মাহি বিছানায় শুয়ে আছে আর মেঘলা ইশিতা ওর পাশে বসে আছে,,, মাহি তো অনেক ভয়ে আছে কেননা কেউ কিছু না বললেও মেহরাব ভাই ওকে ছাড়বে না,, ইস কেনো যে ওমন করলাম এখন ভাবলেই নিজেই নিজের মাথায় গাট্টা মারতে মন চাচ্ছে (মাহি শুয়ে শুয়ে এসব ভাবছে তখনি মেহরাব রুমে আসলো)

মেঘলা ইশিতা তোরা বাইরে যা আমার মাহির সাথে কথা আছে(অনেকটা গম্ভীর সুরে)

মেহরাব এর কথা শুনেই মাহির হালুয়া টাইট,, নির্ঘাত ওকে এখন ধুমধারাক্কা মারবে ওরি বাবা,,

মেহরাব এর কথা মতো মেঘলা আর ইশিতা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো তখনি মেহরাব এসে মাহির হাত ধরে টেনে বলল চল।

নাম এখনি যেতে হবে চল চল(মেহরাব)

ক,,,কোথায় যাবো??(ভয়ে ভয়ে বলল মাহি)

কেনো কোথায় যাবি জানিস না?? ওই যে ওই ডোবার কাছে তোর তো ওই ফুলগুলো অনেক পছন্দ হয়েছে তাইনা?? তো এখন চল তোকে ওখানে দিয়ে আসি(এই বলে মেহরাব রেগে মাহির হাত ধরে টান দিলো আর মাহি সোয়া থেকে উঠে খাট থেকে প্রায় পরেই যাচ্ছিলো,, পায়ে বেথ্যা লাগাই বলল)

আহ ভাইয়া আমার লাগছে।

লাগছে?? আরে ওটুকু বেথ্যায় কিচ্ছু হবে না, তোরতো এখন ফুলগুলো লাগবে তাই না?? চল চল,, ভাবছি তোকে ওখানেই রেখে আসবো তারপর সারাদিন ওই ডোবার পাড়ে বসে থাকবি আর মাঝে মাঝে সাপের কামড় খাবি অনেক ভালো হবে তাই না?? আরে দেরি করছিস কেনো চল(দাতে দাত চেপে রেগে বলল মেহরাব)

মাহি মেহরাব এর এমন করা দেখে কেঁদে ফেললো,, ও নাই একটু ভুল করেছে তাই বলে এমন করতে হবে।আরে আমি কি জানতাম যে ওখানে সত্যি সাপ আছে (মনে মনে বলল মাহি)

এখন কেঁদে কোনো লাভ নেই তোকে তো ওখানে যেতেই হবে চল আমার সাথে(মাহির হাত ধরে টেনে, তখনি মেঘলা আর ইশিতা রুমে আসলো)

কি করছিস ভাইয়া ওর লাগছে তো বাচ্চা মানুষ বুঝতে পারিনি (মাহিকে মেহরাব এর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানায় বসায়ে বললো মেঘলা)

হ্যাঁ ও হয়তো বুঝতে পারিনী,, ও ভেবেছে ফুলটা নিয়েই চলে আসবে এতো কিছু হবে ও ভাবতে পারিনি(ইশিতা)

কেনো ভাববে না ও,, ও কি এখনো ছোট আছে নাকি?? চেনা নাই জানা নাই একটা জায়গায় এসে এমন করবে আর ওর জন্য বাড়ির বাকি সব লোক সাফার করবে কেনো?? ও বোঝে না ওর কিছু হলে আর সবার কি হবে,, এখন যদি ওর সত্যি কোনো বিষাক্ত কিছু কামড়ে দিতো তাহলে কি হতো?? এটা কি শহর নাকি যে ভালো কোথাও নিয়ে যাবো,, এটা গ্রাম এখানে সব কিছু নরমাল,, এখানে সব সময় সাবধানে থাকতে হয়,, সেটা ওর মাথায় ঢোকে না?? অবুঝ হওয়া ভালো তবে এতোটাও অবুঝ নয়,,, ওকে বুঝতে হবে ওর এসব কাজে আর সবার কি হয় (কথাগুলো বলে মেহরাব সবার আড়ালে চোখটা মুছে বাইরে চলে গেলো)

আর মাহিতো মেঘলাকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে সত্যি আজকে অনেক বড় ভুল হয়েগেছে এর জন্য সবাই অনেক কষ্ট পেয়েছে,, আমি কি করে পারলাম সবাইকে কষ্ট দিতে,,, মেহরাব ভাই ও অনেক কষ্ট পেয়েছে আমি দেখেছি এখানে কথাগুলো বলে ওনি নিজের চোখ মুছছিলেন,,, আচ্ছা আমি কি কোনোভাবে ভাইয়াকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললাম?? (মনে মনে এসব ভেবে মাহি আরো কাঁদতে লাগল)

সত্যি মাহি তুই আজকে কাজটা একদম ঠিক করিস নি,, সবাই কত টেনশনে ছিলো জানিস?? আর ভাইয়ার তো প্রায় পাগল পাগল অবস্থা হয়ে গিছিলো (মেঘলা)

হুম এখন থেকে আর এমন করবি না, আজকে মেহরাব ভাই অনেক রেগে গেছে ওনার রাগ তোরই ভাঙাতে হবে। ভুল তুই করেছিস তোকেই এর সমাধান করতে হবে (ইশিতা)

ভাইয়া কোথায়?? আমি ভাইয়াকে সরি বলবো আর ওনাকে প্রমিসও করবো আর কখনো এমন কাজ না করার (মাহি)

এখন নয় পরে,,এখন ভাইয়া অনেক রেগে আছে,, তুই পরে সরি বলিস,,, এখন তুই ঘুমা তো একটু।(মেঘলা)

আচ্ছা ঠিক আছে (ভাইয়ার রাগ তো আমি ভাঙিয়েই ছাড়বো,, মনে মনে বলল মাহি)

,,,রাতে,,,

চলবে,,,,,?