ভালোবাসি বুঝে নাও পর্ব-০৮

0
5461

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও🍁🍁
#পর্ব_৮
#সুমাইয়া_সুলতানা _সুমী(writer)
.
,,,রাতে,,,
সারা বাড়ি খুজেও কোথাও মেহরাব ভাইয়াকে পাচ্ছি না,, কোথায় গেলো মানুষ টা একেবারে উধাও হয়ে গেলো নাকি,,,পায়ের বেথ্যাটা একটু কমেছে তাই হাঁটতে পারছি নয়তো হাটতেই পারতাম না,,বাগানে যেখানে চরাট পাতা সেখানে গেলাম কিন্তু সেখানেও পেলাম না,, আমি আমার নিজের উপর ভীষণ অবাক হচ্ছি যে আমি কয়দিন আগেও ভূতের ভয়ে ঘর থেকে বেরোচ্ছিলাম না সেই আমিই এখন এই রাতে একা একা বাগানে চলে গেলাম?? কোথাও না পেয়ে বারান্দায় বসে আকাশের দিকে তাকাতেই দেখলাম ছাদের উপর কারো আবছা ছায়া দেখা যাচ্ছে আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে ওটাই ভাইয়া,,, ছাদটা একদম খোলামেলা তাই এখান থেকে দেখা যাচ্ছে ,, ছাদের সিঁড়ি টা বাইরে হওয়াই আমি আস্তে আস্তে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলাম,, ছাঁদে জালিয়ে রাখা ছোট বাল্ব এর আলোই দেখলাম মেহরাব ভাই পকেটে হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছাদের একদম কিনায় দাড়িয়ে আছে,,, আমি আস্তে করে ভাইয়া পাশে দাড়ালাম কিন্তু ভাইয়ার মতো ছাদের ওতো কিনায় না।

এতো কিনারায় দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?? পড়ে যাবেন তো।

ভাইয়া কিছু বললো না একি ভঙ্গিতে দাড়িতে থাকলো৷ তাই আমিই বলতে শুরু করলাম।

জানেন তো মাহি খুব খারাপ সবসময় শুধু বোকামি করে,, ভুলভাল কাজ করে সবাইকে টেনশনে ফেলায়,,কিছু বুঝতে চাই না বড্ড বেশি অবুঝ,, কাউকে কষ্ট দিবে না বলতে বলতে নিজের অজান্তেই সবাইকে কষ্ট দিয়ে ফেলে। আসোলো কি বলেন তো বোকা তো তাই, কিন্তু আমি আজীবন এমন বোকা আর এমন অবুঝই থাকতে চাই,, যদি এমন বোকা আর অবুঝ হয়ে সবার কাছ থেকে এতো ভালবাসা পাওয়া যায় তো আমি এমনি থাকতে চাই,,, কখনো বড় হতে চাই না,,, কিন্তু আজকে অনেক বেশিই দুষ্টামি আর বোকামি করে ফেলেছি এর জন্য সবাই অনেক কষ্ট পেয়েছে তার জন্য আমি সত্যি অনেকগুলো সরি,, এই শেষ বারের মতো কি আমায় ক্ষমা করে দেওয়া যায় না??? আই প্রমিস আর কখনো এমন করবো না ৩ সত্যি (মাহি একা একা কথাগুলো বলে মেহরাব এর দিকে তাকিয়ে দেখলো মেহরাব চলে যাচ্ছে তাই পিছন থেকে মেহরাব এর একটা হত ধরে বলল)

সরি আর কখনো এমন করবো না এবারের মতো মাফ করে দেন,,,এখন থেকে যা করবো যেখানে যাবো সব কিছু আপনাকে বলে করবো প্লিজ এই শেষ বারের মতো মাফ করে দেন প্লিজ(কাঁদো ফেস করে ঠোঁট উল্টে বলল মাহি)

মেহরাব পিছনে তাকিয়ে দেখলো মাহি ওর একহাত ধরে আরেক হাত দিয়ে নিজের এক কান ধরে রেখেছে আর মুখটা কাঁদো কাঁদো ফেস করে ঠোঁট টা উল্টে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। দেখতে একদম ছোট কিউট বাচ্চা লাগছে,, এমন করে বললে কি আর রাগ করে থাকা যায়?? তাই বললাম

ঠিক আছে যা এবারের মতো তোকে মাফ করে দিলাম কিন্তু এর পর থেকে আর করবো না মনে থাকে যেনো,, এখন আয় এখানে বস পায়ে তো বেথ্যা।

মেহরাব এর কথা শুনে মাহি খুশি হয়ে মেহরাব এর হাত ধরে ঝুলে পড়লো আর বলল। ইয়ে আমি আপনার রাগ ভাঙ্গাতে পেরেছি।

আরে কি করছিস পড়ে যাবো তো,,,, ধিঙ্গি মেয়ে এভাবে কেউ হাত ধরে ঝোলে যদি পড়ে যেতাম,,, (তারপর দুজন নিচে বসে পড়ল)

ভাইয়া আমি আপনার কাছে একটা জিনিস চাবো দিবেন??

তুই চাইলে আমি চাঁদ তারা ছাড়া পৃথীবির সব কিছু তোর সামনে হাজির করতে পারবো ইনশাআল্লাহ (বিরবির করে বলল মেহরাব)

হুম বল কি?.

বলছি কি মেঘলা আপুর বিয়েটা যদি এখানে করা হয় তাহলে কেমন হয়?? দাখেন এই গ্রামে অনেক গরীব মানুষ আছে যারা শহরের ভালো ভালো খাবার খেতে পারে না,, আবার আমরা তো কখনো গ্রামের বিয়ে কেমন হয় তা দেখিনি তাই বলছিলাম যদি আপুর বিয়ে এখানে হয় তাহলে এককাজে সব কাজ হয়ে যাবে কি বলেন??(কথাগুলো বলে মাহি মেহরাব এর দিকে তাকালো মেহরাব কি বলে তা দেখার জন্য)

হুম কথাগুলো তুই ঠিকি বলছিস কিন্তু,, শহর থেকে এখানে আসতে তো অনেক সময় লাগবে, আর মেঘরা বরযাত্রী নিয়ে আসতে গেলেও তো সম্যাসা হবে অনেক ভোরে বেরোতে হবে আবার যে জ্যাম,, তাতে আজকে বেরোলে পরদিন সকালে বরযাত্রী আসবে। আর এখানে তো কোনো কমিউনিটি সেন্টার ও নেই যে ওরা সেখানে থাকবে।

কেনো এমন করলে কেমন হয়?? মেঘ ভাইয়ারা বিয়ের ১সপ্তাহ আগেই এখানে আসলো আর এই বাড়িটাও অনেক বড় একপাশে বরপক্ষ আর আরেক পাশে কনেপক্ষ থাকলো,, তারপর বিয়ে হয়ে গেলে রাতটা এখানে থেকে পরদিন সকালে সবাই একসাথে রওনা দিবো বলেন বলন আইডিয়াটা কেমন??

হুম তোর আইডিয়া টা মন্দ নয় দেখি আমি আব্বু আর মামাকে বলে দেখি ওনারা কি বলে,, এখন যা অনেক রাত হয়ে গেছে।

আচ্ছা ঠিক আছে। তারপর আমি আর ভাইয়া ছাদ থেকে নেমে যার যার রুমে চলে গেলাম।

,,,সকালে,,,

মিষ্টি একটা সুবাসে আমার ঘুম ভেঙে গেলো আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে সামনে টেবিলের দিকে তাকাতেই আমার চোখমুখ চকচক করে উঠলো।

একি শাপলা ফুল?? এগুলো এখানে?? কে এনেছে?? আর কার জন্য??(আমি বিছানা থেকে নেমে ফুলগুলো হাতে নিয়ে বললাম)

ফুলগুলো আপনারই আর আপনার মেহরাব ভাই আনছে বাবা কি ভালুপাশা(মেঘলা)

সত্যি বলছো আপু?? এগুলো আমার?? আমি সবগুলো ফুল বোতোলের মধো পানি দিয়ে তার মধো ডুবিয়ে রাখবো যাতে এগুলো শুকিয়ে না যায় ইয়ে কি সুন্দর।

হুমম আপনি খুশিতো?? বাবা ফুলগুলোর জন্য কি কান্ডটাই না করলি।।।

হিহিহি সবি ফুলগুলোর জন্য?? আচ্ছা আপু সবাই কোথায়?? আর বাড়িটা এতো চুপচাপ কেনো?? ইশিতা আপু কোথায়??

বসার ঘরে আমার বিয়ে নিয়ে বড়রা সব আলোচনা করছে,, আর ইশিতা লুকিয়ে শুনছে কি বলছে ওখানে৷ তারপর আমাকে এসে বলবে।।

ওহ আচ্ছা,, (মনে হয় ভাইয়া আমার বলা কথাগুলো সবাইকে বলছে বাবা গো আমার তো ভয় লাগছে কি যে হবে,, মনে মনে বললাম)

আব্বু আমি তো আমার মনে যা ছিলো সব তোমাদের বললাম এখন দাখো তোমরা কি করবে, আর তাছাড়া নানুও এখন অসুস্থ এই শরীর নিয়ে এতোটা পথ পাড়ি দিলে ওনার শরীল নিতে পারবে?? (মেহরাব)

হ্যাঁ বড় ভাইজান মেহরাব কথাগুলো ঠিকি বলছে,, আমারও এখন কাজের সময় এতো কাজ ফেলে আগে আগে যেতে পারবো না সেই বিয়ের দিন গিয়ে আর পরদিনই চলে আসতে হবে, তাই বলছিলাম বিয়ের অনুষ্ঠান এখানে করলই ভালো হয়(ছোটমামা)

কথাটা তো ঠিকি কিন্তু সম্যসা তো অন্য জয়গায়(মেহরাব এর বাবা)

কোথায় সম্যাসা দুলাভাই??(মাহির বাবা)

আরে মেঘরা কি মানবে?? এতোদূর কি ওরা আসতে রাজি হবে??

আরে আগে তো বলে দাখেন তারপর দাখেন ওনারা কি বলে (মাহির বাবা)

হ্যাঁ ভাইয়া তুমি এখনি ফোন করো মেঘের বাবাকে দাখো ওনারা কি বলান(ছোট মামা)

তারপর মেহরাব এর বাবা মেঘ এর বাবাকে ফোন করলো তারপর সবাই মিলে ওনাদের বিষয় টা ভালো মতো বুঝিয়ে দিলো,, ওনারও খুশি কেননা ওনারা কখনো গ্রামের বিয়ে দাখেননি এতোদিন এই দমবন্ধ কর শহরের সব কিছু দেখতে দেখতে কেমন একঘেয়েমি হয়ে গেছে তাই ওনারও চাই গ্রামে খোলা আকাশের নিচে বিশুদ্ধ বাতাসে বিয়েটা হোক,, তাই ওনারা আগামি সপ্তাহে সব তলপি তলপা গুছিয়ে গ্রামে আসছে।

যাক তাহলে সব সম্যসা মিটে গেলো বিয়েটা এখানেই হচ্ছে (ছোটমামা)

আমার মাহিটা বোকা হলেও মাথায় একটু হলেও ঘিলু আছে,, কেমন বড়দের মতো আমায় সুন্দর করে বুঝিয়ে বলল কথাটা,, নইলে আমরা তো কেউ এভাবে ভাবিইনি,, এই জন্যই তো তোকে এতো ভালোবাসি আমার অবুঝ রাজকন্যা(মনে মনে বলল মেহরাব)

এদিকে আড়াল থেকে ইশিতা কথাগুলো শুনে সেই খুশি হয়েছে, তাই খুশিতে চেঁচাতে চেঁচাতে মাহিদের রুমে গেলো। রুমে গিয়ে দেখলো মাহি আর মেঘলা বসে বসে নখ কামড়াচ্ছে।

এই ছুড়ি তোর বিয়া,, লাল শাড়ি দিয়া (ইশিতা কথাগুলো বলে নাচতে নাচতে মেঘলাদের কাছে আসলো)

ইশিতা কি হয়েছে?? কি সিদ্ধান্ত হলো নিচে বল (মেঘলা)

হ্যাঁ ইশিতা আপু যলদি বলো নইলে নক কামড়াতে কামড়াতে আঙুলই খেয়ে ফেলবো (মাহি)

বলছি মাহি তোর আর আঙুল খেতে হবে না,মেঘলা আপুর বিয়ে এখানেই হচ্ছে আর সমনের সপ্তাহে মেঘ ভাইয়ারা আসছে ইয়ে অনেক মজা হবে।

সত্যি বলছো ইশিতা আপু??(মাহি)

হুম সত্যি সত্যি ৩ সত্যি (এই বলে মাহিকে নিয়ে ঘুরতে লাগলো। আর ওদিকে মেঘলা তো লজ্জাতে মুখ তুলতেই পারছে না তাই দেখে ইশিতা বলল)

লাজে রাঙা হলো কণে বউগো মালা বদল হবে এরাতে আহা মালা বদল হবে এরাতে (বলে ইশিতা আর মাহি হাসতে লাগল)

আপু তোমরা থাকো আমি আসছি,, এই বলে মাহি ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো তারপর মেহরাব কে খুঁজতে লাগল।দেখলো দূরে মেহরাব ফোনে কার সাথে যেনো কথা বলছে তাই মাহি খুশিতে দৌড়ে মেহরাব এর কাছে গিয়ে মেহরাব এর সামনে পা উচু করে দাড়িয়ে মেহরাব এর দু চয়াল ধরে টেনে বলল।

ওলে ওলে আমার কুচুপুচু ভাইয়ে থ্যাংকু থ্যাংকু গাড়ি গাড়ি থ্যাংকু এই বলে মেহরাব এর চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে আবার দৌড়ে চলে গেলো।

এরূপ ঘটনায় মেহরাব তো পুরাই বোকা বনে গেলো,, কি হলো কেনো হলো কিছুই বুঝলো না তাই ওখানেই ফোন হাতে নিয়ে ভ্যাবলার মতো দাড়িয়ে থাকল।

চলবে,,,,,,