ভালোবাসি বুঝে নাও ৩ পর্ব-২৮+২৯+৩০

0
366

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_২৮
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
কারো গলার স্বর শুনে আমি পিছন ঘুরে তাকালাম আরে এনি তো সেদিনের সেই ছেলেটা। মেঘ ভাইয়ার ছোট ভাই পরনে হলুদ পাঞ্জাবি আর সানগ্লাস টা বুকের সাথে ঝুলানো অনেক স্টাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি পিছন ফিরে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম, জি আমাকে বলছেন?

অবশ্যই তোমাকে ছাড়া আর কাকে বলবো বলো? আর তোমাকে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে যাকে বলে হলুদে হলুদ পরী।

যদিও ওনার সাথে আমার কথা বলতে মোটেও ভালো লাগছে নাহ। বিরক্তি লাগছে অনেক তবুও বাধ্য হয়ে কথা বলছি। কেননা ওনি এখন আমাদের আত্মীয় আর ওনার সাথে বাজে ব্যাবহার করলে কেমন দেখায় তাই ভদ্রতার খাতিরে মুখে নকল হাসি ঝুলিয়ে বললাম। অনেক ধন্যবাদ। আচ্ছা আমায় একটু সাইট দিন আমি বেরোবো এখান থেকে ফ্রেশ হতে হবে।

কেনো ফ্রেশ হওয়ার কি দরকার তোমাকে এভাবেও অনেক সুন্দর লাগছে। বাই দ্যা ওয়ে আজকে যেহেতু হলুদ তাই আমি তোমাকে হলুদ লাগাতে পারি? এই ধরো বেয়াইসাব হিসাবে?

ওনার কথা শুনেতো আমার চোখ কপালে ব্যাটা বলে কি আমি চোখ বড় বড় করে ওনার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবো। তখনি পিছন থেকে কেউ বলল, একদম নাহ।

আমি আর নেহাল একসাথে সেদিকে তাকালাম দেখলাম মেহরাব ভাই দাঁড়িয়ে আছে। মুখে রাগী রাগী ভাব আর ঘামে গায়ের শার্টটা প্রায় অর্ধেকই ভিজে আছে। হয়ত আগুনের কাছে ছিলো তাই জন্য ফর্সা মুখটা কেমন লাল হয়ে আছে। তবে এটা রাগের কারণে নাকি আগুনের আঁচে হয়েছে সেটা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ওনি আমাদের কাছে এসে একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার নেহাল এর দিকে তাকিয়ে বলল, নেহাল তুই এখানে কি করছিস? মা তোকে ডাকছে খাবার দেওয়া হয়েছে৷ যলদি গিয়ে খেয়ে নে।

আরে মেহরাব ভাই খাওয়া দাওয়া ওসব পরে হবে আমি আসলে বউ মনিকে হলুদ দিতে এসেছিলাম। তখনি তোমার ফুপাত বোনের সাথে দেখা হয়ে গেলো তাই কথা বলছিলাম৷ আর আজকে যেহেতু হলুদ তাই ওকে হলুদ দেওয়ার কথা বলছিলাম। এই আরকি।

নেহাল এর কথা শুনে তো আমার প্রাণ যাই যাই অবস্থা কার সামনে কি বলছে। আমি শুকনো একটা ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে মেহরাব এর দিকে তাকালাম। দেখলাম ওনি ঘাড় ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকাচ্ছে আর ডান হাত দিয়ে ঘাড় ঢলছে। হয়ত রাগ কমানোর চেষ্টা করছে। আল্লাহ ওনি যেনো কোনো ঝামেলা না করে তাহলে পুরো অনুষ্ঠান বাড়িটা মুহুর্তের অন্যরকম রূপ ধারণ করবে। আর আমি চাই না আমার জন্য এমন কিছু হোক আমি মনে মনে প্রাণপোন আল্লাহ কে ডাকছি যাতে কোনো ঝামেলা না হয়৷ মেহরাব জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বলল, আগে গিয়ে খাবার খেয়ে নে তারপর মেঘলাকে হলুদ লাগাস। এখনি তো অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাচ্ছে না আর তোর সাথে যারা এসেছে ওরাও তোকে খুঁজতেছে জলদি যা।

কিন্তু মেহরাব ভাই

কোনো কিন্তু না তোকে যা বলছি তাই কর।

মেহরাব এর কথা শুনে নেহাল তো চলে গেলো কিন্তু যাওয়ার আগে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে গেলো। সেটাও ওনার চোখ এড়ালো নাহ যাক বাবা কোনো ঝামেলা হয়নি বাঁচা গেলো।

আর তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? গোসল কি রাতে করবি?

নাহ আমিতো এখনি যাচ্ছিলাম। ভয়ে ভয়ে কথাটা বলতেই মেহরাব আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো তারপর হঠাৎ করেই আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে নিচে নামতে লাগল। যেহেতু ছাঁদে অনুষ্ঠানটা হচ্ছে তাই বেশিরভাগ মানুষই এখানে। ওনি সবার চোখ এরিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে ওনার রুমে নিয়ে গেলো। আর রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমার দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে এগিয়ে আসল।

ক কি হয়েছে মেহরাব ভাই আপনি দরজা লাগালেন কেনো? ব বিশ্বাস করুন আমার কোনো দোষ নেই ওনিই নিজে এসে আগে কথা বলেছে। তাই আমিও বাধ্য হয়ে কথা বলেছি কথা না বললে খারাপ দেখায় না বলেন ? এই জন্যই বলেছি হাজার হোক মেঘ ভাইয়ার ছোট ভাই। আমি একা একাই বকবক করে যাচ্ছি কিন্তু ওনি কিছুই বলছে নাহ। আগের মতোই হেঁটে আমার দিকে এগিয়ে আসছে আমিও ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলাম৷ কিন্তু কপাল খারাপ একটু পিছাতেই দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেলো তাই বাধ্য হয়েই দাঁড়িয়ে থাকলাম। ওনি আমার কাছে এসে ওনার বাম হাতটা আমার মাথার পাশের দেওয়ালে রাখলেন। আমিতো ভয়ে একদম চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি। ওনি ডান হাতে আমার সামনে আসা চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে ওনার মুখটা আমার কানের কাছে এনে বলল, সাহস কত নেহালের আমার নিজেস্য সম্পত্তির দিকে হাত বারায়। বলে কিনা হলুদ লাগাবে ও যদি নেহাল না হতো তাহলে এতোক্ষণে হয়ত হসপিটালের বেডে পড়ে থাকত।

কথাটা বলেই ওনি আমার গালে লেগে থাকা হলুদের থেকে একটু হলুদ নিয়ে আমার গলায় লাগিয়ে দিলো। এই প্রথম ওনার স্পর্শ এতো কাছ থেকে অনুভব করছিলাম। আমি লজ্জায় আর চোখ খুলতে পারিনি সারা শরীলে কেমন অজানা শিহরণ বয়ে গেলে। তারপর ওনার গালটা আমার গালের সাথে ঘষে নিজের গালেও হলুদ লাগিয়ে নিলো। যদিও ওনার মুখে থাকা ছোট ছোট দাঁড়ি আমার গালে বিঁধছিলো। তবুও এই ভালো লাগার কাছে এতো সামান্য আঘাত কিছুই নাহ।

এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিন। বুঝলেন কথাটা বলে ওনি আমার কপালে একটা চুমো দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো৷ আর আমি কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে ওনার ছুঁয়ে দেওয়া জায়গায় আমার হাত দিয়ে স্পর্শ করলাম। কি হলো সেটা ভাবতেই হাজারও লজ্জ এসে আমায় ঘিরে ধরলো ওয়াশরুম এর বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আমি রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। কিন্তু বেরোতেই সামনে মীরা আপুর সাথে দেখা হলো।

একি তুমি রেডি না হয়ে মেহরাব এর রুমে কি করছো?

ওনার এভাবে চোখ পাকিয়ে প্রশ্ন করায় আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বললাম, আসলে আমি দেখতে এসেছিলাম এই রুমের ওয়াশরুমে কেউ আছে কিনা। আসলে সব রুমেই তো মানুষ তাই আর কি।

কেনো যেনো আমি আমার মনে হলো আমার কথা মীরা আপু মোটেও বিশ্বাস করেনি৷ আর কেনোই বা করবে যে নিজে রুমে পযন্ত কাউকে এলাও করে না আমি নাকি তার ওয়াশরুম ইউজ করতে এসেছি। মীরা আপু কিছুক্ষণ আমার দিকে পুলিশের মতো তাকিয়ে থেকে বলল, আচ্ছা যাও ওই রুমের ওয়াশরুম খালি আছে। আমি এই মাত্র গোসল করে বেরেলাম এখনো হয়ত কেউ যায়নি।

ওহ ঠিক আছে আপু ধন্যবাদ৷ বাপরে কি চাহনি পুরাই পুলিশ পুলিশ ভাব ওনাকে পুলিশের সাথে বিয়ে দিলেই ভালো হবে। কেননা পুলিশে পুলিশে জমবে ভালো।

ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে আমি আবার ছাঁদে চলে গেলাম৷ সবার মতো আমিও হলুদ শাড়ি পরেছি। দূরের মসজিদে আছরের আযান দিচ্ছে যেহেতু ছাঁদে অনুষ্ঠানটা হচ্ছে তাই ওততটাও গরম লাগছে না। অনেক বাতাস এখানে আমি গিয়ে মেঘলা আপুর পাশে বসলাম। সামনে তাকাতেই দেখি আমার থেকে কিছুটা দূরে একটা চেয়ারে নেহাল বসে আছে। ওনার গলায় ছোট ক্যামেরা ঝুলছে আমার দিকে তাকিয়ে কেমন মুচকি মুচকি হাসছে। আজব এভাবে হাসার কি হলো কে জানে। তখনি ছাঁদে মেহরাব এর এন্ট্রি হলো আর ওনাকে দেখে আমি আরেক দফা ক্রাশ খেয়ে বসে থাকলাম। ওনি হলুদ পাঞ্জাবি পরেছে ওনি একটু মোটা হয়ে যাওয়াই পাঞ্জাবি টা একদম টাইট ফিট হয়েছে গায়ের সাথে। আর এতেই যেনো ওনার সুন্দর্য্য আরো কয়েক গুন বেড়ে গেছে। হাতা কনুই অবধি গুছানো ওনি হাত দিয়ে চুল গুলো পিছনে ঠেলে দিয়ে একটা ছেলের সাথে কথা বলছে৷ মেহরাব ভাই এর দিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘলা আপু আমায় হালকা ধাক্কা দিয়ে কানে কানে বলল, আমি জানি আমার ভাই দেখতে অনেক সুন্দর আর অনেক মেয়ের ক্রাশ তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকিস না নজর লেগে যাবে।

শোনো আপু আমার বয়েই গেছে তোমার ভাইয়ের দিকে তাকাতে যে হাঁদা রাম আমি নাকি তার দিকে তাকাবো। আমার আর খায়ে দায়ে কাজ নাই।

তাই নাকি তা এতোক্ষণ ধরে কে তাহলে হা করে আমার ভাইকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো শুনি। আচ্ছা বাদদে মনে আছে তো আমি কি বলছিলাম।

কি বলছি?

গাধী মেয়ে ভুলে বসে আছে। তোকে আমার ভাইকে জ্বালাতে হবে বুঝলি আমাকে যে কষ্ট দিলো তার শোধতো তুলতেই হবে। আমিতো মেঘকে দেখে নেবো তবে তুই ভাইয়াকে দেখবি। দেখিস আবার বোকামি করে ভাইয়াকে জ্বালাতে গিয়ে অন্য কোনো ছেলের সাথে প্রেম প্রেম অভিনয় করিস না। তাহলে ওই ছেলেটা তো হসপিটালে ভর্তি হবেই আর তোর যে কি হবে সেটা আমি এই মুহুর্তে বলতে পারছি না।

আপুর কথা শোনে তো চিন্তায় পরে গেলাম এখন আমি কি করবো? ওনাকে কীভাবে জ্বালাবো? ভুলভাল কিছু করলেতো আমাকে ধরে সোজা উপরে পাঠিয়ে দেবে৷ বয়সে বড় ছেলেদের সাথে প্রেম করলে এই হয় এক জ্বালা কিছু বলাও যায় না। সব সময় ভয় থাকে যদি তুলে আছার মেরে দেয়। এই জন্য জুনিয়র ছেলের সাথে প্রেম করায় ভালো কিছু বললেই খালি ঠাস ঠাস করে চড় বসাবো

চলবে….

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_২৯
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
মীরা একটা ঝুড়িতে করে অনেক গুলে ফুল নিয়ে ছাঁদে আসছিলো। আসলে ফুলগুলি গায়ে হলুদের স্টেজে দেওয়া হবে। মীরাও আজকে হলুদ শাড়ি পরেছে আর আজকে ওকেও অনেক সুন্দর লাগছে যে কোনো ছেলের মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। মীরা গুণগুণ করে গান গাইতে গাইতে সিঁড়ি বেয়েঁ ছাঁদে উঠল ছাঁদের দরজা খুলায় ছিলো তাই মীরা অনায়াসে ভিতরে চলে আসলো। তবে তখনি ঘটলো এক অঘটন আসলে ছাঁদের দরজার থেকে একটু দূরেই মেহরাব দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো আর নেহাল ও মেহরাব এর পাশেই একটা চেয়ারে বসে মাহিকে দেখছিলো৷ তখনি মীরা স্টেজের কাছে আসতে গিয়ে শাড়িতে পা পেঁচিয়ে হুরমুর করে পরে গেলো। তবে মেহরাব এর উপরি পড়তো কিন্তু মীরা পড়ার আগেই মেঘলা মেহরাব কে ডাক দিলো ওকে সেমাই খাওয়ানোর জন্য তাই মেহরাব চলে গেলো। আর মীরা গিয়ে পড়ল চেয়ারে বসে থাকা নেহাল এর উপর৷ আর মীরার হাতে থাকা ফুল গুলোও ওর হাত থেকে পড়ে গেলো। মীরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে নেহাল এর গলা আঁকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে৷ আর নেহাল ও মীরা যাতে পড়ে না যায় তাই ওর কমড় শক্ত করে ধরে আছে। মীরার হাতে থাকা ফুল গুলো ওদের দুজনের গায়ের উপর পরতে লাগল। ঠিক সিনেমার মতো মীরা আস্তে করে চোখ খুলে পিটপিট করে তাকিয়ে দেখল ও কারো কোলে বসে আছে৷ কিন্তু এনি কে সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না তাই কয়েক সেকেন্ড যেতেই তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। নেহাল ও দাঁড়িয়ে নিজের গা থেকে ফুল গুলো ঝেড়ে ফেলতে লাগল।

আম সরি আসলে আমি বুঝতে পারিনি যে এভাবে পড়ে যাবো। আর আপনি আমায় না ধরলে আমিও এখানে পড়ে নিজের হাত পা ভাঙাতাম।

মীরার কথা শুনে নেহাল গায়ের থেকে ফুল ঝড়তে ঝাড়তেই মুচকি হেসে মীরার দিকে না তাকিয়ে বলল, ইটস ওকে সম্যসা নেই তবে এর পর থেকে একটু দেখেশুনে হাঁটবেন। আর যেটা পড়ে আপনি কমফোর্টেবল নন সেটা না পড়ায় ভালো।

মীরা আর নেহাল কথা বলছে ওদিকে মাহি মেঘলা সহ বাকিরাও হা করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। মেহরাব এর পিছনে এমন হয়েছে বিধায় মেহরাব ঘটনাটা দেখনি৷ মেহরাব চামচে করে একটু সেমাই মেঘলার মুখে তুলে দিতে গিয়ে দেখলো মেঘলা আর মাহি হা করে কি যেনো দেখছে। মেহরাব ও ভ্রু কুঁচকে ওদের দৃষ্টি অনুসরণ করে ওদিকে তাকিয়ে দেখল মীরা আর নেহাল কথা বলছে। আজব ওদের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে৷ মেঘলার আর মাহি একে অপরের দিকে তাকিয়ে মেঘলা বলল, আমিও যা ভাবছি তুইও কি ঠিক সেটাই ভাবছিস?

মাহি ও মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল তারপর কিছুক্ষণ পর দুজনে একসাথে বলে উঠল। ইয়েস।

এই দুটোই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস? কখন থেকে দেখছি কেমন গাধার মতো একদিকে তাকিয়ে আছিস। এভাবে তাকিয়ে না থেকে মেঘলা হা কর। মাহির সাথে থাকতে থাকতে তোরও মাথায় সম্যসা হয়ে গেছে।
মেহরাব এর ধমক শুনে দুজনে ঠিক হয়ে বসল আর মাহি তো মেহরাব কে মনে মনে একগাদা ভয়ংকর কিছু কথা বলছে। যেটার একটাও যদি মেহরাব এর কানে যাই তাহলে মাহির হাল বেহাল হয়ে যাবে।

বেশ জমকালো আয়োজনের মধ্যে দিয়েই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হলো। তবে এখন ছোটরা ডয়িং রুমে নাচানাচি করছে। আমি মেঘলা আপু ঈশিতা মীরা আপু আর মেহরাব ভাই এর সব বন্ধু বান্ধবীরা মিলে এক জায়গায় বসে আড্ডা দিচ্ছি। মেহরাব এখানে নেই হয়ত কোনো কাজে ব্যাস্ত আছে। আমাদের কথার মাঝেই ঈশিতা আর অভ্র ভাইয়ার ঝগড়া লেগে গেলো তাও আবার নাচ নিয়ে। শুনুন ভাইয়া আপনারা যতই বড় বড় কথা বলেন না কেনো আমাদের সাথে নেচে আপনারা কখনোই পারবেন নাহ।

ঈশিতার কথা শুনে অভ্র ভাইয়া হু হা করে হেসে বলল, তাই নাকি একবার নিজের দিকে তাকাও বাচ্চা একটা মেয়ে আমাদের সাথে পাল্লা দিতে এসেছে। যাও রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়ে গেছে।

আমি আপুর হাতে মেহেদী দেওয়া রেখে অভ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম, এটা কিন্তু আপনি ভুল বললেন ভাইয়া যতই হোক মেয়েদের সাথে আপনারা নেচে পারবেন নাহ। অন্তত এই বিষয়ে আমি আপনার সাথে একমত হতে পারলাম নাহ।

আমার কথার সাথে ওখানে থাকা বাকি মেয়েরাও তাল মিলাও। মীরা আপু দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল, এই বিষয়ে আমি মাহির সাথে একদম এক মত আপনারা কখনোই আমাদের সাথে পারবেন নাহ। শেষ হেরে ভূত হয়ে বসে থাকবেন।

আমাদের তর্ক বিতর্কের মধ্যে ওখানে মেহরাব ভাই আসলো রিফাত ভাইয়া কে উঠিয়ে দিয়ে ওনি ওনার জায়গায় বসে বলল, এখানে কি নিয়ে এতো কথা হচ্ছে শুনি।

দেখনা মেহরাব ওরা কি বলছে ওরা বলছে আমরা নাকি নাচতে পারি নাহ। আর ওদের সাথে নাকি কখনোই নেচে প্রথম হতে পারবো নাহ। সব ভালো ভালো নাচ নাকি ওরাই জানে।

অভ্র ভাইয়ার কথা শুনে মেহরাব তাচ্ছিল্য হেসে বলল, তোকেও বলি বাচ্চাদের সাথে লাগতে যাস কেনে? জানিস না তারা না পারলেও জেদ ধরে বলে আমি পারি। তাই খামেখা বাচ্চা পোলাপান এর সাথে না লাগাই ভালো। মেহরাব এর কথা শুনে ওখানে থাকা সবাই হাসতে লাগলো অভ্র ভাইয়া মেহরাব ভাই এর সাথে হাই ফাইভ দিয়ে বলল, একদম ঠিক বলেছিস মেহরাব সব গুলা পিচ্চি। জানে যে পারবে না তবুও কেমন জেদ করছে। এই পিচ্চিরা যাও যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।

এবার আর সয্য করা যায় নাহ আমি আপির হাতে মেহেদী দেওয়া বন্ধ করে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, দেখুন মেহরাব ভাইয়া আপনি যতই বড় হননা কেনো তাই বলে এভাবে আমাদের অপমান করতে পারেন না। আর আপনি যে এতে বড় বড় কথা বলছেন আপনি কি জানেন আমরা কি পারি আর কি না পারি। নিজে তে মনে হয় নাচের ন জানেন না।

আমার কথা শুনে মেহরাব বলল, আচ্ছা তাই বুঝি তোরা বুঝি খুব পারিস?

হ্যাঁ পারিই তো কোনো সন্দেহ আছে নাকি?

আচ্ছা আচ্ছা এভাবে একে অপরের সাথে ঝগড়া না করে আমরা বরং একটা প্রতিযোগিতা করে ফেলি দেখি কারা জিতে৷ তাহলেই তো প্রমাণ হয়ে যাবে কারা ভালে নাচতে পারে। অভ্র ভাইয়ার কথার সাথে সবাই একমত হলে আমি ভ্রু কুঁচচে মেহরাব এর দিকে তাকিয়ে দেখি ওনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমার তাকানো দেখে ফট করে চোখ মেরে দিলো আমিও চট করে চোখ নামিয়ে নিলাম। কি সাংঘাতিক লোক লাজ লজ্জা কিচ্ছু নেই

সত্যি সত্যি অভ্র ভাইয়ার কথামতো নাচের প্রতিযোগিতা করা হলো। আমরা সব মেয়েরা এক পাশে দাঁড়িয়ে আছি। আর আমাদের সামনে মেহরাবরা দাঁড়িয়ে আছে। তখনি সাউন্ড বক্সে গান বেজে উঠল গান বাজতেই মেহরাব এসে আমায় তার কাঁধে তুলে নিয়ে গানের সাথে তাল মিলিয়ে গাইতে লাগল।

Utha le jaaunga tujhe main doli mein.
Utha le jaaunga tujhe main doli mein.

Dekhti Reh jaaengi sakhiyan tumhari.
Utha le jaaunga tujhe main doli mein.
Dekhti Reh jaaengi sakhiyan tumhari.

Tumko mujhe pyar hai pyar hai pyar.

Oooo.Ooo. aa.a.a.a.a

মেহরাব এর আমায় নিয়ে গান গাইছে আর নাচতেছে এবার আমিও ওনার থেকে দূরে এসে দাঁড়ালাম। আর পিছন থেকে কেউ আমার মাথায় একটা উড়না দিয়ে দিলো আমিও উড়নার দুপাশে ধরে গানের সাথে তাল মিলায়ে গাইলাম।

Tere ghar aaungi dulhan ban jaaugi.
Akeli reh jaaengi sakhiyan bechaari.

Tumko mujhe pyar hai pyar hai pyar.
Oooo.Ooo. aa.a.a.a.a

তারপর আবার ও মেহরাব ভাই গাইতে লাগল আর এভাবেই অদল বদল করে পালা করে গানের সাথে সবাই নাচতে লাগল। আর সাথে শেষ হলো হলুদের এই জমকালো অনুষ্ঠান।

রাতে আমি মেঘলা আপু ঈশিতা মীরা আপু এই কয়জন একসাথে ঘুমাবো বলে ঠিক করেছি। আপু না প্লিজ এমনটা করো নাহ এতে কিন্তু ভাইয়া অনেক রেগে যাবে। আর যদি ভুলেও জানতে পারে তাহলে তো আর রক্ষা থাকবে নাহ।

আরে দেখ না ভীষণ মজা হবে। এই বলে আপু নিজের কাজে লেগে গেলো। আসলে আপু একটা আননোন নাম্বার দিয়ে মেহরাব ভাই কে বিরক্ত করতে বলছে আমায়। আর ওনি এখন ফোনে সিম লাগাতে ব্যাস্ত। এদিকে তো ভয়ে আমার জান যায় যায় অবস্থা। ঈশিতা ঘুমায় গেছে আর মীরা আপু পাশে বসে ফোন টিপছে।কিন্তু ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে ওনি এসবে চরম বিরক্ত হয়ত মেঘলা আপু এখানে না থাকলে আমাকে কড়া করে কয়েকটা কথা শুনায়ে দিতো।

ফোনে সিম সেট করা হয়ে গেলেই আমি ভয়ে ভয়ে পরপর দুইবার মেহরাব ভাই এর ফোন কুটুস করে মিস কল দিয়ে দিলাম। কিন্তু কপাল খারাপ ওনি কল ব্যাক করল নাহ আমি জানতাম ওনি কল ব্যাক করবে নাহ। দেখেছো আপু কল করেনি তাহলে থাক আর মিসকল দিবো নাহ।
আমি জানতাম ভাইয়া কল ব্যাক করবে নাহ কিন্তু আজকে ওর সাথে অভ্র ভাইয়ারা আছে। কেউ না কেউ তো ব্যাক করবেই তুই অনবরত মিসকল দিতেই থাক।আপুর কথামত আমিও আবার পুরো দমে মিস কল দেওয়া শুরু করলাম এখন আমার এতে ভালোই মজা লাগছে।

এই মেহরাব তোর ফোনে বার বার কে যেনো মিসকল দিচ্ছে একবার ব্যাক করবো নাকি?

অভ্রর কথা শুনে মেহরাব শুয়ে থাকা অবস্থায় মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে মাথাটা একটু উঁচু করে বলল, কোনো দরকার নেই যার প্রয়োজন সে নিজে থেকেই কল দিবে। আর এতোরাতে কোনো ভালো কেউ কারো ফোনে মিসকল দিবে নাহ। কথাটা বলে মেহরাব আবার শুয়ে পড়ল কিন্তু মাহি থেমে নেই এক নাগাড়ে মিসকল দিয়েই যাচ্ছে অভ্র কোনো উপায় না পেয়ে এবার কল ব্যাক করেই ফেলল। কল দিয়ে হ্যালো বলতেই অভ্রর চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।

হ্যালো কি হলো জান কথা বলছো না কেনো? পাশে কি বউ ঘুমিয়ে আছে নাকি? কথা বলো। আমি বেশ ভালোই বুঝেছি এটা অভ্র ভাইয়ার কন্ঠ তাই আমরাও ইচ্ছে করে এমন করলাম।

ফোন কানে ধরে অভ্রকে চোখ বড়বড় করে থাকতে দেখে মেহরাব উঠে এসে অভ্রর থেকে ফোনটা নিয়ে নিজের কানে নিলো। ওদিকে মাহিরাও গলা চেন্জ করে এবার মাহি বলল, কি হলো সুইটু কথা বলছো না কেনো? এই জোসনা ভরা রাতে একা একা ভালো লাগছে নাহ চলো প্রেম করি।

মাহি এমন অনেক কিছু বলছে আর পাশে মেঘলা তো হেসেই যাচ্ছে। কিন্তু ওরা কেউই জানেনা যে ফোনটা মেহরাব এর কাছে। মেহরাব প্রথমে কিছু বললো নাহ মাহির সব কথা শুনে একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল, শেষ? এবার আমি বলি? অনেক দিন তোর পিঠে মার পড়ে না তাইনা? এখন যদি আমি আসি তাহলে ওখানে থাকা সব কটার একটা কেউ আস্ত রাখবো না। সবগুলাকে চড় মেরে গাল লাল করে দেবো। লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি মাহি এসব ভুলভাল কাজ না করে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড় নয়ত সোজা গিয়ে ফুপিকে বলে দেবো। আর তোরা এখনো ছোট নেই। কথাটা বলেই মেহরাব ফোন কেটে দিলো। আর ওদিকে ফোন যেহেতু লাউডস্পিকারে দেওয়া ছিলো তাই সবাই শুনতে পেলো মেহেরাব এর ধমকে আমার অবস্থা তো খারাপ জলদি করে ফোন রেখে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম না জানি কাল সকালে কপালে কি আছে।

চলবে….

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_৩০
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
সকাল হতেই বাড়িতে হইচই লেগে গেলো।যতই হোক বিয়ে বাড়ি বলে কথা। সবাই নিজের কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যাস্ত। আর আমি তো মেহরাব ভাই এর থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি দেখা হলে যদি কিছু বলে। তবে একি বাড়িতে যখন আছি তখন দেখা তো হবেই। সকালের দিকে একবার চোখাচোখি হয়েছিলো তবে ওনি আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়েছিলো যেনো চোখ দিয়েই ভষ্ম করে দেবে। আমি তো ভয়ে ভয়ে চোখ নামিয়ে নিয়েছিলাম। সকালে বাড়ির সবার খাওয়ার জন্য খিচুড়ি রান্না করেছে। আমি চুপিচুপি মেহরাব ভাই এর রুমের ব্যালকণিতে গিয়ে বসে বসে খাচ্ছি। বাইরে অনেক মানুষ আর এতো মানুষের ভীড়ে ভালো লাগছিলো নাহ। আমার খাওয়ার মাঝেই আমার পাশে কেউ ধপ করে বসে পড়ল আমার হাতে থাকা ভাতের লোকমাটা মুখে না দিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখি মেহরাব। আমি চোখ বড় বড় করে ওনার দিকে তাকালাম ওনি আমার হাত থেকে ভাত গুলো মুখের মধ্যে নিয়ে খাওয়া শুধু করল। তারপর ওড়না দিয়ে নিজের মুখটা মুছে নিয়ে ফোনে কি যেনো করছে। ওনার কাজ কর্মে তো আমি পুরাই অবাক হা করে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি৷

সময় খুব কম এভাবে হা করে তাকিয়ে না থেকে যলদি করে খাবার দে আমার কাজ আছে।

ওনার কথায় আমার হুশ ফিরল আমি যলদি করে ভাত তুলে ওনার মুখের সামনে ধরতেই ওনি এক প্রকার লুফে নিলো। প্লেটে যা ভাত ছিলো ওনি আরাম করে সব গুলা ভাত খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ালো। আমার সাথে আয় আমি ভাত দিচ্ছি এনে খেয়ে নে। এই বলে ওনি যেভাবে হাওয়ার বেগে এসেছিলো আবার ওই ভাবেই চলে গেলো। মাঝ খান থেকে আমি নিরীহ বালিকা বোকার মতো শুধু চেয়েই থাকলাম।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল পড়বে পড়বে ভাব বাড়ি ভর্তি মেহমান গিজগিজ করছে। আমি গোসল সেরে রেডি হয়ে মেঘলা আপুর কাছে গেলাম আপুকে সাজানো হচ্ছে। তবে আপু এতো পরিমাণ কান্না করছে কান্নার জন্য ভালোমতো সাজাতেই পারছে নাহ। অবশেষে অনেক কষ্টে সাজানো শেষ হলো তখনি বাইরে থেকে আওয়াজ আসলো বর আসছে। আমি ততক্ষণাত দৌড়ে বাইরে গেলাম গিয়ে দেখি গেটে মেহরাব ভাই এর সব বন্ধুরা সহ আরো অনেকেই আছে। তবে মেয়েরা ওখানে নেই কেননা গেটে মেয়েরা থাকলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। আর মেয়েরা না থাকায় ভালো৷ আমি ভিড় ঠেলে ভিতরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু ফলাফল শূন্য। অগত্যা বাইরে দাঁড়িয়ে ওদের তর্ক বিতর্ক দেখতে লাগলাম। ওপাশ থেকে যেমন নেহাল ভাইয়া তো এপাশ থেকে তেমন অভ্র ভাইয়া কেউ কারো থেকে কম যায় না। তবে ওনারা এখানে যায় করুক না কেনো জুতু তো আমরাই চুরি করবো। অনেক্ক্ষণ পর ওনাদের লেনদেন শেষ হলে বর এসে স্টেজে বসল। তবে বরের পাশে থাকা বাহিনীরা হয়ত আগে থেকে জানত যে জুতু চুরি হতে পারে তাই সব গুলা যুক্তি করে প্রায় বরের মতো জুতু পড়ে এসেছে। এখন এখানে কোনটা বরের জুতু সেটা বোঝা বড়ই মুশকিল যেহেতু আমি বরের জুতু কেনা দেখেনি তাই আমি জানিনা কোনটা বরের জুতু৷ আর আমাকেই জুতু চুরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অবশেষে অনেক ভাবার পর আমার মাথা একটা বুদ্ধি এসেছে যেই জুতু গুলা বরের জুতুর মতো দেখতে আমি সব গুলাই চুরি করে এনেছি। এখন লুকানোর পালা প্রায় তিন সেট জুতু আমি একটা ব্যাগের মধ্যে করে জুতু নিয়ে যাচ্ছি। তখনি সামনে মেহরাব ভাই এর সাথে দেখা।

কিরে তোর হাতে ব্যাগ কেনো? আর ব্যাগে কি আছে?

ওনার প্রশ্নে আমি ঘাবড়ে গেলাম তবুও তোতলানো কন্ঠে বললাম, আ আসলে আমরা তো জানিনা যে বরের জুতো কোনটা তাই ওখানে যেগুলো বরের জুতোর মতো দেখতে সব গুলাই নিয়ে আসছি।
আমার কথায় যেনো মেহরাব চমকে গেলো অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এগুলো কোথায় লুকাবো? প্লিজ একটু সাহায্য করুন না।

একেতে ভুলভাল কাজ করেছিস আবার আমার কাছে এই কাজের জন্য সাহায্যও চাইছিস? আমাকে কি তোর পাগল মনে হয়? সর সামনে থেকে আমার অনেক কাজ আছে।

না না প্লিজ মেহরাব ভাই এভাবে বলবেন নাহ। এই জুতো যদি কোনো ভাবে হাত ছাড়া হয়ে যায় তাহলে মীরা আপু আর ঈশিতা আমায় কাঁচা চিবিয়ে খাবে।

আমার করুন মুখ দেখে হয়ত ওনার একটু দয়া হলো তাই ওনি আমায় জুতো লুকাতে সাহায্য করল। তারপর জুতো খুঁজা নিয়ে নেহাল ভাই আর মীরা আপুর মধ্যে সেকি ঝগড়া দেখার মতো। জুতু আমরা দিতে পারি তবে একটা শর্তে আগে পঞ্চাশ হাজার টাকা ছাড়ুন তারপর ভেবে দেখবো।

মীরা আপুর কথায় যেনো নেহাল ভাইয়ার মাথায় ছোট খাটো একটা বাজ পড়ল ওনি মাথায় হাত রেখে বলল, নিজে তো পাঁচ টাকা আয় করার সামর্থ্য নেই আবার বলে কিনা পঞ্চাশ হাজার দিতে। নিজেরা জুতু কিনতে পারেন না বলেই তো সবগুলা জুতো সরিয়ে দিয়েছেন।

নেহাল ভাইয়ার কথা শুনতেই মীরা আপু আমার দিকে তাকালো আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আপুর তাকানো দেখে ভয়ে ভীড়ের মধ্যে মিশে গেলাম। কেননা আপুকে তো বলায় হয়নি যে আমি একটা নয় তিনটা জুতু সরিয়েছি। তবে আপুও কম যায় না অনেক জোশ নিয়ে বলল, হ্যাঁ সত্যি আমাদের জুতু কেনার সার্মথ্য নেই তাই জন্য সবগুলা জুতো সরিয়েছি৷ তবে আপনাদের তো অনেক সামর্থ্য তাহলে টাকা ছাড়ছেন না কেনো? কিপ্টা লোক।

কি আমাকে কিপ্টা বলা আচ্ছা কত টাকা চাই আপনার পঞ্চাশ হাজার তো? ওকে দিচ্ছি। এই বলে নেহাল ওনার পকেটে হাত দিলো এদিকে মীরা আপু সহ আমরা তো ভীষণ খুশি। তবে সেই খুশিটাও বেশিক্ষণ স্হায়ী হলো না। কেননা নেহাল ওনার পকেট থেকে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট আর একটা এক হাজার টাকার নোট বার করে বলল, এই নিন পঞ্চাশ হাজার এবার খুশি? তাহলে জুতো দিন।

আমরা যেনো বোকা বনে গেলাম এটা কি হলো? বিষয় টা বোধগম্য হতেই আবার মেয়েরা সবাই হইহই করে চেঁচিয়ে উঠলাম। এভাবে অনেকক্ষণ চলল কেউ হার মানবে না অতঃপর পঞ্চাশ হাজার থেকে নেমে দশ হাজার টাকায় ওনারা জুতো পেয়ে গেলো তাও মেহরাব ভাই এর জন্য। কেননা সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে দূরের পথ তাই ওনি আমাদের থামিয়ে দিয়ে মিটমাট করে দিলো।

অবশেষে বিদায়ের পালা হাসি খুশি বাড়িটা মুহুর্তেই কেমন চুপচাপ হয়ে গেলো৷ আমিও অনেক কান্না করেছি কেননা আপুই তো ছিলো যায় কাছে আমি ওনার ব্যাপারে হাজারটা অভিযোগের ঝুড়ি নিয়ে বসতাম। এখন তো আপু চলে যাচ্ছে এখন তাহলে কার কাছে আমার মনের কথাগুলো বলব। এটা ভেবেই বুক ফেঁটে কান্না পাচ্ছে। মেহরাব ভাই আপুকে মেঘ ভাইয়ার হাতে তুলে দিয়েই ওখান থেকে চলে গেলো। আপুও ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করছিলো। তারপর সবাই মিলে আপুকে গাড়িতে তুলে দিলো৷ মামার পেশার বেড়ে গেছে তাই ওনাকে বসায়ে বাতাস দিচ্ছে মামী মণিও অনেক কান্না করছে। আমি মামী মণি কাছেই ছিলাম চার পাশে কোথাও মেহরাব ভাইয়াকে দেখতে পেলাম নাহ। আমি মামীর কাছ থেকে সরে মুখটা মুছে ছাঁদের দিকে গেলাম। যদি ভাইয়া ওখানে না থাকে তাহলে রুমে গিয়ে দেখবো। আমি সিঁড়ি বেয়ে ছাঁদের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখি ওনি ছাঁদের মাঝখানে বসে আছে। আর বার বার হাত দিয়ে মুখ মুছতেছে হয়ত কান্না করছে। চারপাশে আলো থাকায় ওনাকে আমি ভালোই দেখতে পাচ্ছিলাম। আমি এক পায় দুই পায় ওনার পাশে গিয়ে বসলাম৷ ওনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকালো কিছুক্ষণ পর ওনি হঠাৎ করেই আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। ওনি ওনার দুহাত দিয়ে আমার কমর জড়িয়ে ধরে পেটে মুখ গুজে দিয়েছে৷ বুঝতে পারছিলাম ওনি কান্না করছে কেননা আমার পেটে আমি ঠান্ডা কিছু অনুভব করছিলাম। ওনাকে এখন একদম একটা ছোট্ট বাচ্চার মতো লাগছে যেনো ওনার প্রিয় কোনো পুতুল কেউ ওনার থেকে কেড়ে নিয়েছে। আমি ওনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম যদি ছেলেটা একটু শান্ত হয়।

চলবে…..