ভালোবাসি বুঝে নাও ৩ পর্ব-৩১+৩২+৩৩

0
503

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_৩১
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
সময় যে কখন কীভাবে চলে যায় বোঝায় যায় নাহ৷ মেঘলা আপুর বিয়ের আজকে চার মাস পূরণ হলো। অথচ মনে হচ্ছে এইতো কয়দিন আগে কত হইহই করে আপুর বিয়ে খেলাম। অর্নাস ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হয়ে গেছি তাও আবার মেহরাব ভাই এর ভার্সিটিতে৷ তার কড়া আদেশ ছিলো যেভাবেই হোক না কেনো ওই ভার্সিটিতে আমায় চান্স পেতেই হবে। নয়ত আমার ঘাড়ে আর মাথা থাকবে নাহ। অনেক সাধনা আর পরিশ্রম করে অবশেষে ভার্সিটিতে চান্স পেলাম। চান্স তো পেলাম কিন্তু তার কোনো দেখা নেই কেননা ওনি তো এখন অফিসের কাজ সামলাতে ব্যাস্ত ভার্সিটিতে আসবে কখন। তবুও ভার্সিটিতে তো আর ওনার মানুষের অভাব নেই সর্বক্ষণ কেউ না কেউ আমার উপর নজর রাখছে। ক্যান্টিনে গেলে তো অর্ডার নাই করতে টেবিলে খাবারের ছড়াছড়ি। আবার কিছু বলতে গেলেও বলে, আপনি কোনো কথা বলবেন না ভাবি ভাই এর কড়া আদেশ আছে। কি আর করা অগত্যা খাবার গুলা শেষ করতে হয়। এসব দেখে তো আমার হারামী বান্ধবী আর আপু আমায় লজ্জায় ফেলতে একটুও ছাড় দেয় নাহ। অলস দুপুর চোখ জ্বলে যাচ্ছে কিন্তু তবুও চোখে এক ফোঁটাও ঘুমের লেশমাত্র নেই। বাইরে কড়া রোদ ভ্যাপসা গরম শুক্রবার না হলে এতোক্ষণে হয়ত ভার্সিটিতে থাকতাম। বিছানায় গড়াগড়ি করছি মূলত ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করছি কিন্তু ঘুম বাবাজীর দেখা নেই। কলিং বেল এর শব্দে আমি তড়িৎ গতিতে উঠে বসে পড়লাম আব্বু নামাজে গেছে আম্মু ও মনির কে নিয়ে ঘুমিয়েছে তাহলে এখন আবার কে আসলো। ফোনে তাকাতেই দেখি অনেক বেজে গেছে এতোক্ষণে নামাজ শেষ হয়ত আব্বু এসেছে। চুল গুলি হাত খোপা করে বেঁধে চোখ ডলতে ডলতে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। কিন্তু দরজার উপারে অন্য কেউ মেহরাব ভাই একহাত দরজায় দিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে পাঞ্জাবি তাও আবার ঘামে প্রায় ভেজা হয়ত নামাজ শেষ করেই চলে আসছে। হাতে আবার কিসের যেনো প্যাকেট ওনি আমার হাতে প্যাকেট টা ধরিয়ে দিয়ে ভিতরে গিয়ে সোফায় বসে পড়লেন।

ওখানে ওভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে আমায় এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দে তো। আজকে অনেক বেশিই গরম পরেছে।

দরজা বন্ধ করে আমি প্যাকেটটা নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলাম ফ্রিজ থেকে পানির বতল বার করে। গ্লাসে পানি ঢেলে ওনাকে দিতেই যাবো তখনি মনে হলো আরে প্যাকেটে কি আছে সেটা তো দেখা হয়নি। আমি প্যাকেট টা খুলতেই আমার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো। কেননা বড়সব একটা আইসক্রিম এর বক্স আমিতো সেই খুশি। বক্সটা ফ্রিজে রেখে পানির গ্লাস নিয়ে গেলাম। ওনাকে পানি দিতেই এক নিশ্বাসে ঢকঢক করে পুরোটা গ্লাস শেষ করলেন।

এই টুকু পানি আনতে এতো সময় লাগল? আমিতো ভেবেছি হয়ত সুইজারল্যান্ড থেকে বরফ সংগ্রহ করে। সেটা গলায়ে তারপর পানি বানিয়ে আনছিস।

আসলে আমি বক্সটা ফ্রিজে রাখছিলাম তো তাই দেরি হলো। এখন আমি যায়? আসলে আমার আইসক্রিম টা দেখে লোভ সামলাতে পারছিলাম না তাই যাওয়ার জন্য এতো তাড়া।

যায় মানে আমি এখানে একা বসে কি করবো? সারাদিন পড়ে আছে আইসক্রিম তুই পরেও খেতে পারবি আগে এখানে এসে বস।

কি আর করা অগত্যা গ্লাসটা রেখে ওনার সামনের সোফায় গিয়ে বসলাম। কিন্তু ওনি কোনো কথা বলছেন না শুধু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আজব তো আমি কি কোনো ভীন গ্রহের প্রাণী নাকি এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কি। এইতো সেদিন ও ছোট মাহি আমার সামনে দৌড়ে বেড়াতো কিছু প্রয়োজন হলেই আগে আমার কাছে আসত। দেখতে দেখতে কত বড় হয়ে গেছিস এখন তো বিয়ে দেওয়া লাগবে।

হ্যা? আমিতো বড় হয়েছি আর আপনি তো বুড়ো হয়েছেন। ঝুলে ঝুলে মজার ছলে কথাটা বলে হেসে ফেলে সামনে তাকাতেই দেখি ওনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আমি বুড়ো হয়ে গেছি?

এইরে এখন কি বলবো একটা কেবলা মার্কা হাসি দিয়ে সোফা থেকে উঠে আমার রুমের দিকে দৌড় দিলাম। কেননা এখানে থাকা মানেই বিপদ।

এই দাঁড়া কোথায় পালাচ্ছিস আজকে তোর খবর আছে কতবড় সাহস আমাকে বুড়ো বলা। কিন্তু কে শোনে কার কথা ওনি পিছন থেকে বলছে আর ততক্ষণে আমি পগার পাড়।

বউমণি আসবো?

মেঘলা রুমে বসে ফোন দেখছিলো তখনি কারো গলার স্বর শুনে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো নেহাল দাঁড়িয়ে আছে। আরে নেহাল ভাইয়া আসো ভিতরে আসো।

নেহাল গিয়ে রুমে রাখা একটা সিঙ্গেল সোফায় বসে পড়ল৷ আসলে বউমণি তোমায় একটা কথা বলার ছিলো৷ কথাটা যে কিভাবে বলবো বুঝতে পারছিনা৷

আরে এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে চোখ বন্ধ করে বলে ফেলো তো। আমার কাছে এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে। তুমিই তো বলেছিলে আমি তেমার আপু তাহলে বলো বলো।

কীভাবে যে বলি সত্যি আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে।

বাবা এতো বড় একজন পুলিশ যে কিনা সারাক্ষণ চোর গুন্ডাদের পিটাই তার নাকি একটা কথা বলতে লজ্জা লাগছে। বলে ফেলো তো কোনো সম্যসা নেই বলো।

আসলে বউমণি তেমার ফুপাত বোন আছে না মাহি? ওকে আমি অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি৷ ওই যে ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হলো ও তোমার সাথে এসেছিলো সেদিনই প্রথম দেখেছিলাম। কি মায়াবী মুখ একদম পিচ্চি কেমন করে পিটপিট করে আমার দিকে তাকাচ্ছিলো। এটুকু বলে নেহাল হেসে দিলে। তারপর আরো করেকবার আর তোমাদের বিয়েতেও তো কত মজা হলো। বউমণি আমি চাইলে কিন্তু ওকে প্রপোজ করতে পারতাম। কিন্তু করিনি কেননা আমি চাইনি ওকোনো কিছুতে বিরক্তবোধ করুক৷ আমি ওকে সময় দিয়েছি ওর থেকে দূরে থেকেও সারাক্ষণ ওকে চোখে চোখে রেখেছি এখন তো ও বড় হয়ে গেছে তাই আমি চাইছি ওকে আমার বউ করে ঘরে তুলতে। আর আমিও তো জব করছি বলো। আসলে নিজের বিয়ের কথা এভাবে বলতেও আমার লজ্জা লাগছে। তবুও কি করবো বলো ওকে ছাড়া আর এক মুহুর্ত আমার থাকা অসম্ভব। প্লিজ বউমণি তুমি একটু মাকে বলোত৷ আমি জানি মা ওকে পছন্দ করে আর ও এই বাড়িতে বউ হয়ে এলে কত ভালো হবে বলো৷ তোমরা সারাক্ষণ একসাথে থাকতে পারবে অনেক মজা হবে।

নেহাল এর কথা শুনে মেঘলা চোখ বড়বড় হয়ে গেছে৷ কেননা নেহাল যেটা বলছে সেটা কখনোই সম্ভব নয়। ভাইয়া যদি জানতে পারে তাহলে অনেক বড় অঘটন ঘটে যাবে৷ মেঘলাকে এভাবে চুপ করে বসে থাকতে দেখে নেহাল একটু জোরেই বলল, কি হলো বউমণি এভাবে চুপ করে আছো কেনো? কিছু তো বলো।

নেহাল এর কথায় মেঘলার ধ্যান ভাঙ্গল। হ হ্যাঁ বলো।

বলো মানে আমি এতোক্ষণ কি বললাম শুনোনি? তুমি কিন্তু আমাকে সাহায্য করবে প্লিজ।

হ্যাঁ সেটাতো অবশ্যই তবে নেহাল তোমার সাথে আমার একটা খুবি গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে৷ শোনো না বলছি যে মাহি ভাইয়াকে মেঘলা আর কিছু বলতে যাওয়ার আগেই নেহাল এর ফোন বেজে উঠল। নেহাল ফোন ধরে কথা বলা শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আসলে বউমণি থানায় একটা কাজ পরে গেছে এখন আমায় যেতে হবে৷ বাকি কথা অন্যদিন শুনবো আর আমার কথাটা মনে থাকে যেনো ওকে। এই বলে নেহাল বেরিয়ে গেলো আর মেঘলা দাঁড়িয়ে ভাবছে এখন কি হবে। তখনি কেউ পিছন থেকে ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে ঘাড়ে মাথা রেখে বলল।

কি ব্যাপার কি এতো ভাবা হচ্ছে হুম। কথাটা বলে মেঘ মেঘলার ঘাড়ে নাক ঘষতে লাগল। কিন্তু মেঘলা সেতো নেহাল এর বলা কথা নিয়েই টেনশনে আছে।

শুনুননা মেঘ আপনার সাথে আমার একটা কথা আছে।

না এখন কোনো কথা নেই এখন আমি আদর করার মুডে আছি সো ডিসটার্ব করো নাতো। কথাটা বলেই মেঘ মেঘলার গলায় চুমো দিতে লাগল।

প্লিজ মেঘ একটাবার শুনুনা আমার কথা খুবি গুরুত্বপূর্ণ প্লিজ।

শুনতেই হবে? আচ্ছা ঠিক আছে বলো।

তারপর মেঘলা নেহাল এর বলা সবটা মেঘকে বলল সবটা শোনার পর মেঘ চিন্তিত হয়ে বলল, হুমম এটা খুবি সাংঘাতিক একটা বিষয়। তবে তুমি চিন্তা করো না আমি নেহাল কে চিনি ওর ছোট বেলা থেকেই একটা স্বভাব কোনো কিছু যদি ওর পছন্দ হয়। তাহলে সেটা নিয়ে প্রথম প্রথম অনেক মাতামাতি করে তবে সময়ের সাথে সাথে সেটার উপর থেকে আগ্রহ কমে যায়। তুমি চিন্তা করো না নেহাল এর এখন মাহিকে ভালো লেগেছে কিন্তু ওকে বুঝিয়ে বললে ও ঠিক বুঝতে পারবে।

হুম। মেঘ এর কথা শুনে কেনো জানি শান্তি পাচ্ছি না মনে হচ্ছে সামনে বড় কোনো ঝড় আসতে চলেছে৷ তবে সেটা কি?

চলে গেছে আরো একটা সপ্তাহ এখনতো মেহরাব এর দেখা পাওয়া একদম ডুমুরের ফুলের মতো। ওনার দেখায় মেলে নাহ। আজকে মেঘলা আপু ভার্সিটিতে আসিনি তাই আমি আর অনু( মাহির বান্ধবী) ক্যান্টিনে বসে ছিলাম৷ তখনি অনুর একটা কল আসায় ও বাইরে গিয়েছে কথা বলতে। আমি আমার ফোনটা বার করে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে কি মনে করে মেহরাব কে কল দিলাম। যদিও ওনি এখন অফিসে তবুও কল দিলাম প্রথমবার রিসিভ হলো নাহ৷ হয়ত ব্যাস্ত আছে তাই ভাবলাম আর একবার দিবো তারপর আর দিবো নাহ৷ যেই ভাবা সেই কাজ আবার ও কল দিলাম তবে এই বার রিসিভ হলো আমি খুশি মনে হ্যালো বলতে যাবো তখনি অপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসলো। ওনার ফোনে মেয়ের কন্ঠ শুনতেই মাথার ভিতর হাজার খারাপ চিন্তা আসলো তবুও সবকিছুকে ঢেলে দিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম।

মেহরাব আছে ওনাকে ফোনটা দেওয়া যাবে? কিন্তু উত্তরে ওপাশ থেকে যা শুনলাম সেটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম নাহ।

নাহ দেওয়া যাবে নাহ আমরা দুজন ভীষণ ব্যাস্ত আছি সো আার বার কল দিয়ে ডিসটার্ব না করলেই খুশি হবো ওকে?

চলবে…..

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_৩২
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
আজকে অনেক বেশিই ব্যাস্ত ছিলো মেহরাব। ক্লাইন্ড এর সাথে একটা মিটিং ছিলো সেটাই শেষ করে ক্লান্ত শরীল নিয়ে নিজের কেবিনে প্রবেশ করল। সেখানে আগে থেকেই বসে কাজ করছিলো সিমি। আসলে মেহরাব যে প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে সিমিও সেটাতে যুক্ত। মেহরাব কে দেখে সিমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিজের কাজে লেগে গেলো। মেহরাব ক্লান্ত পায়ে গিয়ে নিজের চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ল। তারপর গলায় থাকা কালো টাইটা হাত দিয়ে ঢিলে করতে করতে বলল, সরি আপনাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো।

ব্যাপার না আপনিও তো কাজেই গিয়েছিলেন। তা মিটিং টা কেমন হলো?

মুটামুটি ভালোই। কথাটা বলে মেহরাব চেয়ারে হেলান দিয়ে জোরে ক্লান্তির শ্বাস নিলো। তখনি সিমি বলল, আচ্ছা আমার কাজও শেষ আমি তাহলে এখন আসি আবার দেখা হবে। মেহরাব এর থেকে বিদায় নিয়ে সিমি দরজা অবধি গেলো তারপর কিছু মনে পড়ায় আবার পিছন ঘুরে তাকিয়ে বলল, মিস্টার মেহরাব আপনাকে একটা কথা বলতে ভুলে গেছি৷ আসলে আপনি যখন মিটিং এ ছিলেন তখন বার বার কেউ আপনার ফোনে কল দিচ্ছিলো। যদিও অনুমতি না নিয়ে কারো ফোন রিসিভ করা উচিত নয় তবুও বার বার ফোনটা রিং হচ্ছিলো বিধায় অগত্যা আমি ফোনটা রিসিভ করি। একটা মেয়ে কথা বলছিলো সম্ভবত আপনাকে চাইছিলো কিন্তু আপনি তো তখন মিটিং এ ছিলেন তাই আমি বলেছি যে ব্যাস্ত আছে বার বার ফোন দিয়ে বিরক্ত না করতে।

মেহরাব এতোক্ষণ চেয়ারে হেলান দিয়েই সিমির কথাগুলো শুনছিলো। হঠাৎ করে যেনো ওর টনক নড়ে উঠল তড়িঘড়ি করে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল মাহির ফোন। এতে যেনো মেহরাব এর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল মাহিকে কয়েক বার ফোন দিলো সাথে সাথে কিন্তু ফোনটা রিসিভ হলো নাহ৷ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সিমি ভ্রু কুঁচকে মেহরাব এর কান্ড দেখছিলো। আসলে ও কিছু বুঝতে পারছে না এই জন্য এভাবে তাকিয়ে আছে। মেহরাব ঘড়িতে সময় দেখল এখন লাঞ্চ এর সময় মাহি নিশ্চয়ই ভার্সিটিতে থাকবে নয়ত একটু পরেই বেরোবে। চেয়ার থেকে কোটটা নিয়ে ফোনটা প্যান্টের পকেটে রেখে সিমিকে কেবিনে রেখেই বেরিয়ে গেলো।

আজব তো কি এমন হলো যে মিস্টার মেহরাব এভাবে বেরিয়ে গেলো? কে ফোন দিয়েছিলো বিশেষ কেউ? কথা গুলো বলে মিস সিমিও কেবিন থেকে বেরিয়ে নিজের গন্তব্যে চলে গেলো।

গাড়ি নিয়ে মাহির ভার্সিটির গেটের সামনে অপেক্ষা করছে মেহরাব। রিফাত এর থেকে জেনেছে মাহি এখনো ভার্সিটিতেই আছে। তাই অপেক্ষা করছে আসলে এই ঘামে ভেজা শরীল নিয়ে আর ভিতরে যাবে না বিধায় এখানে দাঁড়িয়ে মাহির জন্য অপেক্ষা করা।

ক্লাস শেষ করে মাত্রই বাইরে বেরোলাম সাথে অনুও আছে। এক নাগাড়ে কথা বলেই যাচ্ছে ওর নাকি এখনি ক্ষিদে পেয়েছে ক্যান্টিনে যেতে বলছে৷ আজব এই মেয়েটা মানুষ নাকি রাক্ষস এখনি বাসায় যাবে তার নাকি এখনি আবার খাওয়া লাগবে। কিন্তু আমি ওকে ক্যান্টিনে যেতে দিলাম না হাত ধরে টানতে টানতে গেটের বাইরে নিয়ে আসলাম। তখনি সামনে তাকিয়ে দেখি মেহরাব গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গলায় থাকা টাইটা একদম ঢিলে হয়ে আছে। আর পরনের শার্টটা তো প্রায় অর্ধেক ভিজেই গেছে। শার্টের হাতা কনুই অবধি গোটানো মাথা ভর্তি চুল গুলো কপালে এলো মেলো ভাবে পড়ে আছে। বার বার হাত ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু ওনি এখন এখানে কেনো? থাকুক ওনার যেখানে ইচ্ছে থাকুক তাতে আমার কি হুম? আমি অনুর হাত ধরে টেনে রাস্তার পাশে দাঁড়ালাম রিক্সার জন্য৷ কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয় কোনো রিক্সায় পাচ্ছি না৷ ওদিকে অনুটাও হাত ফসকে দৌড়ে চলে গেছে। অগত্যা আমি একাই দাঁড়িয়ে আছি তখনি মেহরাব পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল, কিরে দেখছিস না আমি গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি তারপরের এই রোদের মধ্যে এখানে দাড়িয়ে কি করছিস?

বলবো না কথা ওনার সাথে ওনি যদি প্রশ্ন করতে করতে শহীদ ও হয়ে যায় তবুও কথা বলবো নাহ। আমি মনে মনে এই পণ করে দাঁড়িয়ে আছি। তখনি দূর হতে একটা রিক্সা আসলো এতে যেনো আমি হাতে চাঁদ পেয়ে গেলাম। খুশি হয়ে রিকসাওয়ালা কে বললাম। মামা যাবেন?

হ যামু উঠঠা বসেন।

না মামা ও যাবে না আপনি যেতে পারেন।

মেহরাব ভাই এর কথা শুনে রিকসাওয়ালা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে রিকশা নিয়ে চলে গেলো। আজব তো এটা কোনো কথা? রাগে আমার পুরো শরীল জ্বলে যাচ্ছে। মন চাইছে ওনাকে কড়া করে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিই কিন্তু না ওই যে আমি মনে মনে পণ করেছি ওনার সাথে কথা বলবো নাহ। তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। একে তো দুপুর তার উপর তীব্র রোদ রাস্তাঘাট পুরো ফাঁকা ভার্সিটির ছেলে মেয়েরা প্রায় সবাই চলে গিয়েছে। আবার কেউ কেউ ভিতরে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর ওনি এই সুযোগ টাই কাজে লাগাল। চার পাশে একবার চোখ বুলিয়ে টুপ করে আমায় কোলে তুলে নিলো। এবার আর চুপ থাকতে পারলাম নাহ।

এটা কোন ধরনের অসভ্যতামো এভাবে রাস্তার মধ্যে কোলে নিলে নিলেন কেনো?

এবার যেনো ওনি মুখে কলুপ এঁটেছেন আমার কোনো কথার জবাবই দিচ্ছে নাহ। আজব তো আমি কিছু বলছি নামান আমাকে এভাবে কোলে তুললেন কেনো? আজব তো কথা বলছেন না কেনো?

আমার এতো এতো প্রশ্নের একটার ও উত্তর ওনি দিলেন নাহ৷ চুপচাপ আমায় কোলে নিয়েই গাড়িতে বসায়ে দিলো৷ তারপর নিজেও বসে আমার সিটবেলটা লাগিয়ে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। এই যে পাশে আমি বসে এতো এতো বকবক করছি তাতে ওনার কিচ্ছু হচ্ছে না। ওনিতো আরামসে ড্রাইভ করছে। আমিও বকবক করতে করতে হাঁপিয়ে গেছি অবশেষে ক্লান্ত হয়ে চুপ করে বসে থাকলাম। ওনি গাড়িটা একটা রেস্টুরেন্টে এর সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করালো তারপর গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে রেস্টুরেন্টে এর ভিতরে চলে গেলো। আর যাওয়ার আগে গাড়ি লক করে রেখে গেছে যাতে আমি নামতে না পারি৷ আরে আমি কি বাচ্চা নাকি যে গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যাবো। আজব ওনার যদি খাওয়ারি থাকতো তাহলে হুদাই আমায় টেনে আনলো কেনো একা একা আসলেই পারতো। শুধু শুধু আমায় এভাবে টেনে আনল নিজে খাবে আর আমাকে বসায়ে রাখবে। আমার বুঝি ক্ষিদে লাগে না।

প্রায় অনেক সময় পর ওনি একগাদা প্যাকেট হাতে নিয়ে ফিরলো। ও গুলো নিয়েই গাড়িতে উঠে বসল তারপর প্যাকেটগুলো পিছনে রেখে আবার গাড়ি চালানোয় মন দিলো। কিন্তু ওনি বাড়ির দিকে যাচ্ছে না অন্য দিকে যাচ্ছে। যাক যেখানে ইচ্ছে যাক আমি কিছুই বলবো নাহ কেননা ওনিতো আমার প্রশ্নের কোনো উত্তরই দিবে নাহ। ফাঁকা একটা জায়গা দেখে ওনি গাড়িটা দাঁড় করাল। পিছন থেকে প্যাকেট গুলো সামনে নিয়ে এসে ওনি প্যাকেট গুলো থেকে খাবারে বক্স গুলো বার করল। তারপর হাতটা ধুয়ে বক্স থেকে খাবার নিয়ে আমার মুখের সামনে ধরল।

নে হা কর।

কিন্তু আমিতো আমি। এতোক্ষণ যখন এতো এতো প্রশ্ন করলাম একটারও তো উত্তর দিলো নাহ এখন আসছে কথা বলতে। বলবো না কথা আমি মুখ ঘুরিয়ে গাড়ির জানালার মুখ দিয়ে বাইরে দেখতে লাগলাম।

আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো তুই সোজা কথা মেয়ে না। এই বলে ওনি আমার মুখের দুপাশে হাত রেখে মুখটা ওনার দিকে ঘুরায়ে খাবার গুলো জোর করে আমার মুখের মধ্যে ঢুসে দিলো। মানে এভাবে কেউ কাউকে খাবার খাওয়াই? ওনি বাকি খাবার গুলোও জোর করে আমায় খাইয়ে দিয়ে হাত ধুয়ে সব কিছু গুছায়ে আমার মুখোমুখি হয়ে বসল। আর আমিতো এখনো মুখ ফুলায়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছি। এবার ওনি আমায় জোর করে নিজের কাছে টেনে নিলেন আমি ছাড়া পাবার জন্য জোড়াজুড়ি করতেই আমার মাথাটা ওনার বুকের সাথে চেপে ধরে দুহাতে আমাকে আগলে রেখে বলল।

একদম নড়াচড়া করবি নাহ এখন যা যা বলবো মন দিয়ে শুনবি। আমি জানতাম মেড্যামের পেট এখন ফাঁকা তাই রাগে মাথা ভর্তি হয়ে আছে। এখন আমি হাজার বললেও তোর মাথায় কিছু ঢুকবে নাহ। এই জন্যই তো আগে খাইয়ে নিলাম কেননা পেট ঠান্ডা তো সব ঠান্ডা। আজকে অফিসে কাজের অনেক চাপ ছিলো একজন ক্লাইন্ড এর সাথে মিটিং ছিলো। তাই ফোনটা কেবিনে রেখে আমি মিটিং এ ছিলাম। আর আমি যেই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি আমার সাথে সিমি নামের একটা মেয়েও এই প্রজেক্ট এ কাজ করছে।

ওনার এইটুকু কথা শুনেই আমি নড়ে উঠলাম কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই ওনি আমায় আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলল, আমার কথা এখনো শেষ হয়নি একদম নড়বি নাহ। তো আমি যখন মিটিং এ ছিলাম তখন আমার ফোনতো কেবিনে ছিলো। আর মিস সিমি আমার কেবিনে বসে কাজ করছিলো। তুই বার বার কল দিচ্ছিলি তাই বাধ্য হয়ে ওনি ফোনটা রিসিভ করেছে।

আমি মোটেও বার বার কল দিইনি ওকে মোট দুইবার কল দিয়েছিলাম। আর ওনি দ্বিতীয় বারের মাথায় কল রিসিভ করেছিলো। আর এভাবে কেউ কারো সাথে কথা বলে? কিভাবে কর্কশ গলায় কথা বলল একটু ভালো ভাবে বোঝায়ে বললে কি হতো। এক বাক্স অভিমান নিয়ে ওনার বুকের সাথে মাথা ঠেকিয়ে কথাগুলো বললাম। ওনি মুচকি হেসে বলল।

আরে মিস সিমি একটু ওরকমি কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে অনেক এক্সপার্ট। ওনি আসায় আমার অনেক উপকার হয়েছে। তবে একটা মজার কথা কি জানিস ওনি আমার থেকে দু বছরের বড়।

আমি চোখ বন্ধ করে ওনার কথাগুলো শুনছিলাম এখন মুটামুটি আমার অভিমানের পাল্লাটা একটু হালকা হয়েছে। ওনি আমার ওনার বুক থেকে তুলে আমার মুখের দুপাশে হাত রেখে কপালে গভীর ভাবে একটা চুমো দিয়ে বলল, এই চাঁদ মুখে হাসিটাই সব থেকে বেশি মানায়। আর এভাবে মুখ ফুলায়ে রাখলে মোটেও ভালো দেখায় নাহ। দূরে আছি বলে দেখা হচ্ছে না বলে কথা কম হচ্ছে বলে কখনো এটা ভাববি না যে আমার ভালোবাসা কম হয়ে গেছে। ভালোবাসা কখনো ফুরানোর জিনিস নয় আর এতো কাজ এতো ব্যাস্ততা কিসের জন্য? আরে বিয়ে করা লাগবে তো এভাবে সামনে মেয়ে রেখে আর কতদিন একা একা ঘুরবো বল। তোর বাপ যদি বলে যে আমার মেয়েকে খাওয়াবি কি তাহলে কি বলব? এই জন্যই তো আগে নিজেকে সেট করছি তারপর তারপর কি হুম।

ধ্যাত আপনি সব সময় শুধু বাজে কথা বলেন চলুন তো আমি বাড়ি যাবো অনেক দেরি হয়ে গেছে। আসলে আমি ওনার কথায় অনেক লজ্জা লাগছিলো তাই বাড়ির কথা বললাম। ওনি হয়ত বুঝতে পেরেছে যে আমি লজ্জার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি। তাই ওনিও মুচকি হেসে আমায় একহাতে জড়িয়ে ধরে গাড়ি চালানোও মন দিলো। আমাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে ওনি আবার ওনার অফিসে চলে গেলো। কিন্তু ওদের দুই জনের একজন ও বুঝতে পারলো নাহ যে একজোড়া লাল চোখ রেগে ওদের দিকে সারাক্ষণ নজর রেখেছে।

চলবে….?

#ভালোবাসি_বুঝে_নাও
#সিজন-৩ পর্ব_৩৩
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
,
সময় গতিশীল সে তার মতো নিজ গতিতে চলছে৷ দেখতে দেখতে আরো একটা মাস পার হয়ে গেলো। সবাই সবার মতো নিজের লাইফে ব্যাস্ত রোজকার মতো আজোও আমি রিকশা না পেয়ে হেঁটে যাচ্ছি। আসলে আমি বুঝি না রিকসাওয়ালাদের সাথে আমার কি সম্যসা কাজের সময়ই কেনো এই রিকসা গুলো পাই নাহ। নিজের মনে বিরবির করতে করতে যাচ্ছি তখনি সামনে হুট করে কেউ বাইক থামালো আমি ভয় পেয়ে দু কদম পিছিয়ে গেলাম।

আরে ভয় পেলে নাকি মিস বেয়ান সাহেবা।

এভাবে হুট করে সামনে গাড়ি থামালে যে কেউই চমকে যাবে৷ এভাবে আমার সামনে গাড়ি থামানোর মানে কি।

নেহাল মুচকি হেসে বাইক থেকে নেমে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, প্রথমত সরি এভাবে গাড়ি থামানোর জন্য। তোমাকে তো পিছন থেকে কতবার ডাকলাম তুমি তো শুনতেই পেলে না তাই জন্যই তো এভাবে দাঁড় করালাম। আর হ্যাঁ কালকে বাসায় থাকবে কিন্তু তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।

ওনার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছি নাহ ওনি ঠিক কি বলতে চাইছে। আর আমার বাসায় আমার জন্য কি সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। আমাকে এভাবে চিন্তিত হতে দেখে নেহাল বলল, আরে এতো কি ভাবছো? এতো ভেবো নাহ বেশি ভাবলে আবার বিয়ের আগেই মাথা খারাপ হয়ে যাবে।

আমি ওনার কথা বুঝতে না পেরে বললাম, মানে? কি বলছেন আপনি আমি ঠিক বুঝতে পারলাম নাহ৷

এই ছোট্ট মাথায় এতো চাপ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। যাও ভার্সিটিতে যাও কেননা আমি জানি আমি যদি এখন বলি যে আমি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি তাহলে তুমি মোটেও রাজি হবে নাহ। কেননা তুমি সেই ধরনের মেয়ে নও তাই জন্য বললাম নাহ। সাবধানে যাবে আর খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে। কথাটা বলে নেহাল চলে গেলো আর আমি শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলাম এভাবে হুট করে এসে আবার হুট করে চলে যাওয়ার মানে কি।

রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে গুটিগুটি পায়ে ভার্সিটির গেট দিয়ে ভিতরে যাবো তখনি অনু এসে আমার হাত চেপে ধরল। কিরে তুই এভাবে আমার হাত চেপে ধরলি কেনো? যলদি চল ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।

অনু আমার কথা পাত্তা না দিয়ে বলল, আজকে কোনো ক্লাস করা হবে নাহ। আজকে ক্লাস অফ।

অফ মানে কই আমি তো জানি না। আর নোটিশ ও তো দেয়নি তাহলে অফ কীভাবে হবে।

আরে আমি যখন বলছি তখন অফ এখন চলতো যাওয়া যাক।

আরে কিন্তু যাবোটা কোথায় আর এভাবে তুই আমার হাত টেনে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস? আমাদের কথার মাঝেই রিফাত ভাইয়া তার বাইক নিয়ে এসে আমাদের সামনে দাঁড় করালো। সব ঠিকঠাক আছে তো? আর ভাবি নাম্বার টু কেমন আছেন?

আমি ওনার কথা বুঝতেনা পেরে ভ্রু কুঁচকে ওনার দিকে তাকালাম।

আরে টু বলেছি বলে আবার ভাববেন না যে মেহরাব ভাই বিয়ে করছে আর আপনি দ্বিতীয়। আসলে হয়েছে কি মেঘ ভাই তো আমাদের বড় তাই মেঘলা ভাবি ওয়ান আর তারপর মেহরাব ভাই তারমানে আপনি টু। কথাটা বলেই ওনি দাঁত বের করে হেসে দিলো৷ আর এদিকে আমি ওনার আগামাথা হীন লজিক শুনে প্রায় অঙ্গান হওয়ার উপক্রম। রিফাত ভাইয়াকে থামিয়ে দিয়ে অনু বলল, আরে তোমরা কি এখানে দাঁড়িয়ে বকবক করবে নাকি যাবে৷ অলরেডি কিন্তু অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।

আরে কিন্তু যাবোটা কোথায়? কেউ আমাকে বলবে প্লিজ?

তোকে এখন বোঝাতে গেলে যেটুকু সময় আছে সেটাও চলে যাবে তাই বেশি কথা না বলে চুপচাপ বাইকে উঠ। যেখানে যাচ্ছি সেখানে গেলেই সবটা বুঝতে পারবি।

অনুর কথায় আমি আর কিছু বললাম না তবে এভাবে একটা ছেলের পিছনে কীভাবে বসব। কেমন যেনো অস্ততি হচ্ছে। তবুও এক পায় দু পায় বাইকের কাছে গেলাম যেই উঠবো তখনি রিফাত ভাইয়া বলল, আরে আরে ভাবি করেন কি আপনি কি আমায় মার খাওয়ানোর ইচ্ছে আছে নাকি?

মানে?

মানে হলো আপনি নয় আগে ওই যে অনু তুমি বসো তারপর ভাবি আপনি বসেন। নয়ত আমার গাল আর গাল থাকবে না পুরো খাল হয়ে যাবে উপর থেকে অর্ডার আছে।

রিফাত ভাইয়ার কথা প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পেরে আমি মুচকি হেসে পিছিয়ে আসলাম। আর অনু রেগে কটমট করতে করতে রিফাত ভাইয়ার পিছনে গিয়ে বসল। অনু বসতেই রিফাত ভাইয়া মজা করে বলল, আরে শক্ত করে ধরে বসো বুঝলে আর আরো সরে এসে বসো ভাবিকে জায়গা করে দেও নয়ত ভাবি যদি বাইক থেকে পড়ে যাই তাহলে কিন্তু আমার না থাকবে পা আর না থাকবে বাইক দুটোই চলে যাবে।

বেশ হবে এমনটা হলে তো আমি অনেক বেশিই খুশিই হবো৷ কিন্তু কি করা যাবে বলেন আমি তো আর ইচ্ছে করে আমার জানটাকে ফেলে দিতে পারবো না তাই মেহরাব ভাই এর হাতে আপনার মারটাও খাওয়া হবে নাহ আহারে দুঃখ জনক।

এমন ভাবে বলছো যেনো আমি মার খেলে তুমি বেশ খুশিই হবে।

আজব এখানে খুশি না হওয়ার কি আছে। এটা তো খুশিরই কথা বরং খুশি না হলে মানুষ সন্দেহ করবে

ওরা দুজনে আস্তে আস্তে বেশ জমিয়ে ঝগড়া করছে৷ আমি গিয়ে অনুর পাশে গিয়ে বসলাম আমার বসা দেখে অনু বলল, আমাকে শক্ত করে ধরে বস নইলে তোর কিছু হলে আবার অন্যকেউ আমাদের অনেক কিছু করে দেবে।

এই তুই চুপ করবি আর রিফাত ভাইয়া আপনি বাইক স্টার্ট দেন তো।

রিফাত ভাইয়া অনেক সাবধানে গাড়ি চালাচ্ছে তবে এতোই সাবধানে চালাচ্ছে যে মনে হচ্ছে বাইকে নয় যেনো কোনো ঠেলা গাড়িতে বসে যাচ্ছি। আর এ এর থেকে তো রিক্সা করে গেলেই আরো জোরে যেতাম।
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, আচ্ছা রিফাত ভাইয়া আপনি কি কোনো ভাবে বাইক চালানো ভুলে গেছেন? এমনিতে তো দেখি উড়াধুরা বাইক চালান তাহলে আজকে এমন স্লো চালানোর কারণ কি? আরে এভাবে চালালে তো যেখানে যাবো সেখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুইদিন লেগে যাবে।

লাগুক ভাবি তবুও আমি কোনো রিক্স নিতে চাই নাহ। এমনিতে তো আমরা বন্ধুরা তিন জনে অনায়াসে বসতে পারি তবে আপনাদের এভাবে তিন জন বসা খুবি রিক্স বিশেষ করে আপনার তাই আস্তে চালাচ্ছি।

আমি আর কথা বাড়ালাম নাহ যেহেতু বাইক আস্তে চলছে তাই আমি অনুকে ছেড়ে দিয়ে বসে আছি। কিন্তু কে জানতো সামনে রাস্তা ভাঙ্গা আছে। যখনি বাইক ভাঙ্গার কাছে গেলো তখন ঝাঁকুনি লেগে আমি রাস্তায় পড়ে গেলাম। বেশি বেথ্যা পাইনি তবুও কনুই আর হাতের তালুতে ছিলে গেছে পায়েও একটু লেগেছে। তবে এখন বেথ্যার থেকে লজ্জায় বেশি লাগছে। রিফাত ভাইয়া বাইক থামিয়ে অনুকে সাথে নিয়ে আমার কাছে আসল অনু আমাকে তুলে দাঁড় করালো৷ রিফাত ভাইয়ার মুখটা পুরো কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে। বেচারা অনেক ভয় পেয়ে গেছে।

ভাবি সরি আমি আসলে বুঝতে পারিনি এমনটা হবে। প্লিজ কিছু করবেন নাহ আপনার বেশি লেগেছে? চলুন পাশেই হসপিটাল আছে ওখান থেকে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে যায়।

আরে ভাইয়া এখানে আপনার কোনো দোষ নেই আপনি এতো চিন্তিত হবে না প্লিজ। আমি ঠিক আছি শুধু একটু পায়ে লেগেছে হয়ত এই আর কিছু নাহ।

মেহরাব ভাই তো আমায় মেরেই ফেলবে আমারি দোষ এভাবে না এসে রিকশা করে এলেই ভালো হতো। আপনি চলুন তো ডাক্তার দেখিয়ে তারপর যাবো।

আমার না করা সত্বেও রিফাত ভাইয়া আমাকে নিয়ে গেলো কনুই তে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ করে দিলো। আর পা মচকে গেছে হয়ত তাই কয়েকটা বেথ্যার ঔষধ ও দিলো। বলল কোনো সম্যসা নেই এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে তবে এখন একটু হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে বেথ্যা লাগছে পায়ে। তারপর আমরা বেরিয়ে পড়লাম তবে আসলাম কাজী অফিসের সামনে আমিতো অবাক এখানে আসলো কেনো ওরা তারমানে কি অনু আর রিফাত ভাইয়া বিয়ে করবে নাকি? আর আমি সাক্ষী?

কিরে ভিতরে চল এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

সত্যি করে বলত অনু তোরা আমায় এখানে আনলি কেনো বাই চান্স তুই আর রিফাত ভাইয়া বিয়ে টিয়ে করবি নাকি? আমার কথা শুনে রিফাত ভাইয়া হেসে বলল, আহ তাহলে তো বেশ হতো।

মাহি তোর মাথাটা কি একদম গেছে আমি নাকি বিয়ে করবো তাও আবার এই ভেবলা কে প্রশ্নই আসে নাহ। ওকে চুপচাপ আমার সাথে ভিতরে চল তাহলে বুঝতে পারবি আসল কাহিনী। আমিও আর কথা বাড়ালাম নাহ। যেহেতু পায়ে একটু বেথ্যা তাই অনু আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে আমিও খুড়াতে খুড়াতে ভিতরে ঢুকলাম। তবে ভিতরে গিয়েতো আমি আরেক দফা অবাক হলাম কেননা সেখানে মেঘলা আপু অভ্র ভাইয়া নাহিদ ভাইয়া আরো অনেকেই আছে। মেহরাব ভাই এর পুরো বন্ধু গ্যাৎ তবে সব থেকে বেশি অবাক হলাম ওদের সাথে ঈশিতাকে দেখে ও মেঘলা আপুর কাঁধে মাথা রেখে বসে বসে কান্না করছে। আমাকে দেখে আপু আমার কাছে এসে বলল, আরে তোরা চলে এসেছিস আর মাহি তোর পায়ে কি হয়েছে?

আরে আপু ও কিছুনা আসার সময় ছোট্ট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে৷ আসলে, আমাকে আর বলতে না দিয়ে মেঘলা আপু রিফাত ভাইয়া কে রেগে বলল, আপনাকে ছোট্ট একটা কাজ দেওয়া হলো সেটাও ঠিক মতো করতে পারলেন নাহ? এখন ভাইয়া যদি দেখে তাহলে আপনার কি অবস্থা করবে ভাবতে পারছেন? কেনো বাইক আস্তে চালানো যায় না? সব সময় জোরে চালাতে হবে কেনো শুনি?

রিফাত ভাইয়া কোনো কথা বলছে না চুপচাপ অপরাধীর মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। আরে আপু তুমি ভাইয়াকে কেনো বকছো ওনার তো কোনো দোষ নেই। ভাইয়া আস্তেই বাইক চালাচ্ছিলো আমিই অন্যমনষ্ক ছিলাম তাই পড়ে গিছিলাম। তুমি শুধু শুধু ভাইয়াকে বকা দিলে ।

আচ্ছা আয় এখানে বস।

আমাকে ধরে আপু বসিয়ে দিলো। আচ্ছা আপু এখানে এসব কি হচ্ছে? আর ঈশিতা এখানে কেনো? ও যে এখানে সেটা কি বাসায় কেউ জানে?

আচ্ছা আমি তোকে সবটা বলছি আসলে ঈশিতা বাড়ি থেকে পালিয়ে আসছে। অভ্র আর ঈশিতা একে অপরকে ভালোবাসে। আর মামা নাকি ঈশিতার বিয়ে ঠিক করছিলো অন্য জায়গায় তাই ঈশিতা চলে আসছে। এখন ওদেরই বিয়ে হবে আমরা সবাই চলে আসছি এখন ভাইয়া আসলেই হবে।

এসব কি বলছো আপু তাই বলে মামাকে বলবে নাহ৷ আর ঈশিতা তোর কত সাহস তুই মামার চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে আসছিস। তোর আব্বু তো জানিস কতটা কষ্ট পাবে এমনটা কেউ করে?

আহ মাহি তুই এখন ওকে বকাবকি করিস না তো বেচারি এমনিতেই অনেক ভয় পেয়ে আছে। এসে থেকে কান্না করছে।

তাই বলে এভাবে, আমার কথা শেষ নাই হতে মেহরাব এসে আমার পাশে গা ঘেষে বসে বলল, এভাবে কি হুম? অভ্র মামাকে বলেছিলো তবে মামা রাজি হয়নি বলছে শহরের ছেলের সাথে নাকি বিয়ে দেবে নাহ। তারা নাকি খারাপ হয়। আর এই কথা জানার পর থেকেই তো ঈশিতার বিয়ে আরো এগিয়ে দিয়েছিলো। আর পিচ্চি ভালোবাসতে সাহস লাগে সবাই তোর মতো ভীতু নাকি।

ওনার কথা শুনে আমি মুখ বাঁকিয়ে বসে থাকলাম ওনি মুচকি হেসে আমার উড়না দিয়ে মুখ মুছে বলল, কিরে এখনো বসে আছিস কেনো? জলদি কাজ শেষ কর আমার আবার অফিসে যেতে হবে।

ওনার কথা শুনে বাকিরা সব ফর্মালিটি সহ যা কাজ ছিলো সব শুরু করে দিলো এদিকে সবার চোখের আড়ালে ওনি আমার গায়ের সাথে ঘেষে বসে আমার ঘাড়ে ফুঁ দিচ্ছে ।

এসব কি হচ্ছে এমন করছেন কেনো?

আমার বউ আমার ইচ্ছে তাই ফুঁ দিচ্ছি তাতে তোর কি?

জানি ওনার সাথে কথায় পারবো নাহ । তাই এখান থেকে উঠে যাওয়াই ভালো এটা ভেবে আমি উঠতে গেলাম। এদিকে যে আমার পায়ে বেথ্যা সেটা বেমালুম ভুলে বসে আসি। উঠতে গিয়ে পায়ে বেথ্যা পেয়ে পড়ে যেতে গেলাম ওমনি মেহরাব আমায় শক্ত করে ওনার বুকের সাথে চেপে ধরে বলল,আরে আস্তে পড়ে যাবি তো। কথাটা বলেই ওনার চোখ আমার কনুইতে থাকা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ এ গেলো। ওনি আমাকে ওনার বুক থেকে তুলে আস্তে করে পাশে বসায়ে আমার হাত ধরে বলল, এসব কীভাবে হলো?

আমি ভয়ে ঢোক গিলে মেঘলা আপুর দিকে তাকালাম৷ আপুও ভয়ে ভয়ে বিরবির করে বলল, হয়ে গেলো যেটার ভয় পেয়েছিলাম সেটাই হলো। রিফাত আব তু তো গেয়া।

রোজা শেষ ঈদ ও শেষ এখন থেকে পুরোদমে গল্প চলবে। ইনশাআল্লাহ।

চলবে….