ভালোবাসি হয়নি বলা পর্ব-০৪

0
360

#ভালোবাসি_হয়নি_বলা
#পর্বঃ৪
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

রুদ্রঃ কি হয়েছে..? দাদাভাই কিছু বলেছে..?

নূর রুদ্র কে দেখে ঝটপট উঠে দাঁড়ালো।
নূরঃ আপনি….
রুদ্র স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো,’ আমি তো ছাঁদেই ছিলাম। তোমাকে কান্না করতে দেখে এগিয়ে আসলাম…
নূর কিছু না বলে চুপচাপ ছাঁদ থেকে নেমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
রুদ্র নূরের পথ আঁটকে বলে উঠলো,’ কান্না কেনো করছিলে..?’
নূরঃ সেটা যেনে আপনি কি করবেন…?
রুদ্রঃ আমার কথার উত্তর দাও..
নূরঃ উত্তর দিতে ইচ্ছুক নই।
রুদ্রঃ তাহলে সারাদিন এখানে থেকে যাও..
নূরঃ মানে..?
রুদ্রঃ কি হয়েছে না বলে ছাঁদ থেকে নামতে পারবে না।
নূরঃ ভয় দেখাচ্ছেন..!
রুদ্রঃ ভাবতে পারো..
নূরঃ আমি ভয় পাই না..
রুদ্রঃ তাহলে নেমে দেখাও..
নূর পা বাড়াতেই রুদ্র নূরের হাত শক্ত করে চেপে ধরলো।
নূরঃ হাত ছাড়ুন। অসভ্য ছেলে।
রুদ্র কিছু না বলে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে।
নূর রেগে বলে উঠলো,’ আমি কিন্তু চিৎকার করবো!!
রুদ্রঃ করতে পারো সমস্যা হলে তোমার হবে আমার না…
নূর বিরক্ত হয়ে রুদ্রের হাতে কামড় বসালো।
রুদ্রঃ আহ্
নূরঃ হাত ছাড়ুন না হলে আরও দেবো।
রুদ্রঃ ডাইনী, পিশাচিনী মেয়ে!!
নূরঃ হা আমি এটাই..
রুদ্রঃ এতো জেদ কেনো বললে কি হয়..
নূরঃ আচ্ছা কি জানতে চান..?
রুদ্রঃ তোমার পরিচয়..
নূরঃ আমি আপনার একমাত্র ফুপিমণির একমাত্র মেয়ে। এবার পেয়েছেন আমার পরিচয়..?
রুদ্র নূরের হাত আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বলে উঠলো, ‘ তুমি কি আমার সাথে মজা করছো..?’
নূর রুদ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,’ আপনার আমার কথা মজা মনে হচ্ছে..? হাত ছাড়ুন।

রুদ্র নূরের হাত ছেড়ে দেয়।

নূর রুমে এসে কাপড় সব গুছিয়ে নিলো। বের হবে ইভা এসে সামনে দাঁড়ালো।
ইভাঃ কি হয়েছে নূর..? তুমি কোথায় যাচ্ছো..?
নূরঃ আমি চলে যাচ্ছি ইভা।
ইভা অবাক হয়ে বললো,’ তারমানে পেয়ে গেছো..?
নূরঃ হুম..
ইভাঃ কিভাবে..?
নূরঃ আর কোনো দিন দেখা হলে বলবো..
ইভাঃ আর কবে আসবে..?আমি বড় আপুদের তোমার কথা বললাম তারা বললো তোমাকে দেখতে আসবে।
নূর ইভার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললো,’ আসবো যখন তোমার মতো একটা মিষ্টি বোন আমাকে মিস করবে তখনি চলে আসবো..আজ আমাকে যেতে হবে ইভা।
ইভাঃ সত্যি আবার আসবে তো!!
নূরঃ হুম… আচ্ছা যাই..

নূর নিজের রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসতেই সবাই ওকে ঘিরে ধরলো। কোথায় যাচ্ছে..? আর কয়েকদিন থেকে গেলে এমন কি হতো!! আরও অনেক কথা।

সালমা বেগম নূরের গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো,’ তোমাকে দেখলে একজনের কথা খুব মনে পড়ে । মনে হয় সে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বড় ভাবি বলে জড়িয়ে ধরছে। আর একটা দিন থেকে যাও না।
নূর একটা মলিন হাসি দিয়ে বললো,’ সময় নেই মামণি আমার আম্মুর শরীর ভালো না এখনি যেতে হবে।
সালমা বেগমঃ একদিন তোমর আম্মুকে নিয়ে আসবে কেমন..
নূর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আনোয়ার চৌধুরীর রুমের দিকে তাকালো।
নূরঃ মায়ের সময় ফুরিয়ে এসেছে এখানে আসার সময় যে হাতে নেই। তবে অবশ্য চেষ্টা করবো।

আয়েশা বেগমঃ সাবধানে যেও আর আমাদের কথা মনে পড়লে আবার এসো।
নূরঃ অবশ্যই…

কুলসুম আক্তারঃ চলে যাচ্ছো কেনো মেয়ে..? আর কয়েকটা দিন থেকে যেতে পারতে। বাড়ির পুরুষ লোক গুলো ও বাড়িতে নেই৷ তুমি চলে গেছো শুনে আমাদের বকবে। হয়তো আমরা তোমার দেখ বাল করতে পারিনি..
নূরঃ না, না কিছুই হবে না মেঝো মামি আমার এখন যাওয়াটা বেশি প্রয়োজন।
কুলকুল আক্তারঃ ঠিক আছে তাহলে যাও।

নূর ব্যাগ হাতে বাড়ি থেকে বাহিরে পা রাখতেই আনোয়ার চৌধুরী বলে উঠলো,’ লতিফ গাড়ি বের করো….!
নূর সহ সবাই পেছন ফিরে তাকালো।
আনোয়ার চৌধুরীঃ বড় বউ আমি শহরে যাচ্ছি। হানিফ আসলে বলো…
সালমা বেগমঃ আচ্ছা আব্বা…কিন্তু হঠাৎ শহরে কেনো..?
আনোয়ার চৌধুরীঃ এসেই বলি…
সালমা বেগমঃ যা আপনার ইচ্ছে আব্বা।

আনোয়ার চৌধুরী নূরকে ইশারা করলো গাড়িতে বসতে।খুশিতে নূরের চোখে পানি চিকচিক করছে।
কুলকুল ভ্রু কুঁচকে নূর আর আনোয়ার চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে।
কুলসুম আক্তারঃ আচ্ছা বড়দি তোমার মনে হয় না আব্বা আর এই মেয়ের মধ্যে কিছু একটা প্লেন চলছে..?
সালমা বেগমঃ চুপ থাক মেঝো। গোয়েন্দা গিরি করা বন্ধ কর।

আনোয়ার চৌধুরী গাড়িতে বসলেন, নূরও বসলো।
লতিফ গাড়িতে উঠার আগেই ঝড়ের গতিতে কেউ এসে ড্রাইভিং সিটে বসে বলে উঠলো,’ লতিফ কাকা তুমি যেতে হবে না। ‘
আনোয়ার চৌধুরীঃ রুদ্র তুমি কোথায় যাবে দাদু..?
রুদ্রঃ তুমি যেখানে যাবে…
আনোয়ার চৌধুরীঃ তোমার যেতে হবে না।
রুদ্রঃ প্লিজ দাদু।
আনোয়ার চৌধুরীঃ ঠিক আছে।

রুদ্রঃ আমাকে কি ড্রাইভার মনে হয়..?
নূর মনে মনে বলে উঠলো, ‘নাটক শুরু ‘

আনোয়ার চৌধুরী রুদ্রের কথা শুনে নূরের দিকে তাকালো।
নূর না শুনার মতো বাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখে ইভা দৌড়ে আসছে।

নূরঃ ইভা তুমি এভাবে হুটহাট দৌড়ে কোথায় থেকে আসো…!
ইভাঃ আমিও যাবো ভাইয়ের সাথে ফিরে আসবো।

রুদ্রঃ তাহলে পেছনে বসে পর।
ইভাঃ সামনে…
রুদ্রঃ চুপচাপ পেছনে বস আর এই তুমি সামনে আসো..
নূরঃ আমি কেনো সামনে যাবো..? আমি এখানেই ঠিক আছি।

রুদ্রঃ তাহলে গাড়ি চলবে না৷
আনোয়ার চৌধুরী একবার রুদ্রের দিকে আরেক বার নূরের দিকে তাকাচ্ছে।

নূর বাধ্য হয়ে নেমে সামনে গেলো৷
রুদ্র নূরের দিকে তাকিয়ে বিজয়ী হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

সারা রাস্তা কেউ কোনো কথা বলেনি। ইভা তো গাড়িতে উঠে ঘুম দিয়েছে একদম হসপিটালের সামনে এসে ঘুম ভেঙেছে।

রুদ্রঃ হসপিটাল কেনো..??
নূরঃ তাহলে আপনি কি ভেবেছেন আমরা বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি!!
রুদ্রঃ সম সময় টেরামি কেনো করো। সুন্দর করে কি কথা বলতে পারো না!

আনোয়ার চৌধুরী ICU এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

রাবেয়া বেগম এর অবস্থা খুব খারাপ খুব কম শ্বাস নিচ্ছে। সারা শরীর একটু নাড়ানোর শক্তি নেই। চোখ মেলেও তাকাচ্ছে না।

আনোয়ার চৌধুরী মেয়ের এই অবস্থা দেখে বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করলো।

ইভা আর রুদ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ICU রুমের জানালা দিয়ে রাবেয়া বেগম এর দিকে। কে এই মহিলা..? এটাই কি তাদের ফুপিমণি..?

নূর শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার ভেঙে পরলে চলবে না।

মায়ের শেষ কথাগুলো খুব মনে পরছে,” নূর আমি থাকবো না তবে তুমি কখনো ভেঙে পরো না। আমার কথা মনে পড়লে দরজা বন্ধ করে রুমে কান্না করো। আকাশের দিকে তাকিয়ে তোমার মা’কে খুঁজার চেস্টা করো। আমি মা-রা যাওয়ার পর আকাশের তাঁরা হয়ে তোমাকে দেখবো তুমি আমাকে শত-শত তাঁরার মাঝে খুঁজে নিও।মানুষ তোমাকে ভেঙে দিতে চাইবে। এই পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে লড়াই করে বাঁচতে হবে। তোমাকে শক্ত হতে হবে তোমাকে আগলে রাখার কেউ নেই তুমি নিজে ছাড়া।

মায়ের কথা গুলো মনে করে চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো। না সে কাঁদবে না!

ডাক্তার নূরের কাছে এসে বললো,’ শুধু একজন কেবিনে প্রবেশ করতে পারবে… ‘
নূরঃ অভিক ভাই তাহলে নানাজি কে প্রবেশ করতে দেন.. ‘
ডাক্তারঃ তুমি…
নূরঃ প্লিজ..
ডাক্তারঃ ঠিক আছে।

রুদ্রঃ দাদাভাই উনি কে..? আর তুমি কাঁদছো কেনো..?
আনোয়ার চৌধুরীঃ ওখানে যে শান্তিতে শুয়ে আছে সে তোমার ফুপিমণি রুদ্র…
রুদ্রঃ কিন্তু ছোটো থেকে শুনে এসেছি ফুপিমণি মা-রা গেছে!!
ইভাঃ আমাদের মিথ্যা বলার কারন কি ছিলো..? আপনাদের কারনে আমরা কোনোদিন ফুপিমণির মুখ ও দেখতে পারিনি আজ যখন জানলাম তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে, বলে মুখে হাত দিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।

আনোয়ার চৌধুরী মাথা নিচু করে আছে। আজ তার জেদের জন্য রাবেয়া জীবিত থেকেও সবার কাছে মৃত।

আনোয়ার চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছে রাবেয়া বেগম এর সামনে।

কাঁপা কাঁপা হাতটা দিয়ে মেয়ের হাত ধরলো। চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো রাবেয়া বেগম এর হাতে।

আনোয়ার চৌধুরীঃ আমি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নই। আমার ভুলের জন্য আজ আমি তোমার মুখে হাসিটা দেখতে পাচ্ছি না । তোমার মুখে আব্বা ডাকটা শুনতে পাচ্ছি না । প্লিজ মা একবার চোখ খুলে তোমার ঘৃণিত বাবার দিকে তাকাও। আমি আজ তোমার চোখে আমার জন্য ঘৃণা সহ্য করতে পারবো না তাও আমার দিকে তাকিয়ে একবার বাবা বলো। আনোয়ার চৌধুরী মেয়ের দিকে তাকিয়ে বাচ্চাদের মতো কান্না করে যাচ্ছে।

বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা সবার চোখে পানি। রুদ্র, ইভা,অভিক,সবাই কাঁদছে।

রাবেয়া বেগম ধীরে ধীরে চোখ খুলে সামনে তাকালো।
এতো বছর পর কাউকে দেখে উত্তেজিত হয়ে পরলো। মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্ক খুলে কথা বলার জন্য চেষ্টা করছে। কিন্তু সব কথা কেমন যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে । ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে আর কেমন ছটফট শুরু করেছে।

অভিক যাওয়ার আগেই রুদ্র কেবিনে প্রবেশ করে অক্সিজেন মাস্ক জোর করে পরিয়ে বললো,’ ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে দিতে।’

অভিক কল করে নার্স ডেকে নিলো।

অভিকঃ ধন্যবাদ রুদ্র। আর আপনি কি ডাক্তার..?
রুদ্রঃ হুম।
অভিকঃ আপনার হসপিটাল,চেম্বার কোথায়..?

রুদ্রঃ আমি রাশিয়া থেকে ডাক্তার হয়ে বের হয়ে এসেছি।
অভিক অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,’ তাহলে তো খুব ভালো..!
রুদ্রঃ আমাদের গ্রামে হসপিটাল হচ্ছে আমি গ্রামে থাকতে চাই এটা আমার দাদাভাই এর স্বপ্ন। ডাক্তার অভিক আমি ফুপিমণির সম্পর্কে জানতে চাই..?
অভিকঃ আর কিছু করা সম্ভব না। আন্টির ব্রেইন টিউমার ছিলো। আসতে আসতে এটা এতোটাই প্রভাব বিস্তার করেছে, যে কোনো সময় কিছু একটা হয়ে যেতে পারে।

আনোয়ার চৌধুরী মেয়ের নিস্তেজ হয়ে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে আছেন।

রুদ্র বের হয়ে বাহিরে আসলো। নূর মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে পাশেই ইভা কান্না করছে।

রুদ্র গিয়ে নিঃশব্দে নূরের পাশে বসলো।

চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।