ভালোবেসে থাকবো পাশে পর্ব-০৯

0
582

#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে💝
#পর্বঃ_০৯
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা

আরিয়া আহিলকে কিছু বলতে যাবে তখনি সামনে এসে দাঁড়ালো শিশির।

তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। এত বেশি কিউট হতে কে বলেছিল তোমাকে?

আরিয়া মনে মনে বললো,, লুচু বেডা সবসময় ফাউল কথা কয়।

মনে মনে গালি না দিয়ে জোরেই বলো আমিও শুনি!

আরিয়া শিশিরকে কিছু না বলে তার পাশ কাটিয়ে আহিলের কাছে চলে গেলো।

এই আহুর বাইচ্ছা এত্ত লেইট করলি কেনো?

আর বলিস না দোস্ত! এই লেইট লতিফের বউটার লাগি লেইট হয়েছে। এমনিই লেইট করে তার উপর সাজতে সাজতে পুরা ভুত হয়া গেছে দেখ!

একদম উল্টা পাল্টা কিছু কইবি না।

উল্টা পাল্টা কিছু কই নাই। এমন ভাবে সাজছিস যেন বিয়া খাইতে যাচ্ছিস।

তখনি শিশির এসে বলল,, আজাইরা কথা রাখ আর গাড়িতে বস।

কিছুক্ষণ পরেই তারা গন্তব্যে পৌঁছে গেছে। চারদিকে সবুজের সমারোহ। এই কাঠফাটা রোদেও বাতাস টা অনেক ঠান্ডা। আর হবেই না কেন রাস্তার দুই পাশে যেই পর্যন্ত চোখ যাচ্ছে বড় বড় গাছ লাগানো। জায়গাটা বেশ সুন্দর। আরিয়া এমনিই প্রকৃতিপ্রেমি।

এমন জায়গায় নিয়ে আসার আইডিটা কার ছিলো রে আহু?

কেন! ভালো লাগে নি জায়গাটা?

আরে খুব খুব ভালো লাগছে। বাট আইডিয়া টা কে দিছে?

যেই দিয়ে থাকুক! তুই জেনে কী করবি?

আরে এতো সুন্দর একটা জায়গাতে ঘুরতে আসার জন্য যে আইডিয়াটা দিছে সেও নিশ্চয়ই খুব ভালো। ইচ্ছে তো করছে তার গালে টাস করে একটা কিস করে দেয়।

আরিয়ার কথা শুনে সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।

এভাবে তাকিয়ে কেন আছিস?

কী বললি এটা? সত্যিই তুই কিস করবি? তাইলে তুই শিশির ভাইয়াকে কিস কর!(ছোঁয়া)

আরিয়া কিছুটা জোরে চেঁচিয়ে ”কীহ্!” আমি এই লুচু বেডারে কিস করমু কেন?

কারণ আইডিয়াটা ভাইয়ারি ছিলো।

ওহ্!

হুম। আর কী জানি বললি এখন,, লুচু বেডা মানে? একটু আগেই তো বললি, এখানে আসার আইডিয়া যে দিছে সে ভালো মনের মানুষ।

আরে আমি তখন জানতাম নাকি যে আইডিয়া এই বেডা দিছে? যাই হোক, এনজয় কর।

হুহ চল।

সবাই সেলফি তুলতে ব্যস্ত। আরিয়া চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। সামনের কাটা চুল গুলা বেরিয়ে আসছে আর আরিয়া বিরক্ত হয়ে সেই চুল ঠিক করছে। এই ফাঁকে কেউ একজন আরিয়ার বেশ কয়েকটি ছবি তুলে নিল।

আশেপাশে কত্ত কাপল। আরিয়া তাদের দেখছে। হঠাৎ আরিয়ার মন খারাপ হয়ে গেল। রাতুল যদি আজ পাশে থাকতো তাহলে সেও তো আজ ওদের মতোই ভালোবাসার মানুষের হাতে হাত রেখে পাশেপাশে হাটতো। কিন্তু ভাগ্য তার সঙ্গ দেয় নি। চলে গেলো রাতুল আরিয়া মনে মনে আওড়াতে লাগলো’ ❝হারাতে চাইনি তাকে,, তবুও সে চলে গেলো❞!💔

আরিয়া মন খারাপ করে গাড়িতে গিয়ে বসে রইলো। যেই মেয়েটা প্রকৃতিপ্রেমী তার কাছেই আজ সব অসহ্য লাগছে!

গাড়ির সিটে মাথা হেলিয়ে দিল আরিয়া। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ভাবছে ভাগ্য টা এমন না হলেও তো পারতো।

________________________

কিছু পরিচিত মুখ, পরিচিত কণ্ঠ, পরিচিত পারফিউমের ঘ্রাণ মানুষ ঠিক ভুলতে পারে না। কিছতেই ভুলতে পারেনা কিছু পুরোনো অভ্যাস। মানুষ হাজার চেষ্টা করেও ভুলতে পারে না কিছু মুহূর্ত।

হঠাৎ করেই এগুলো মনে পড়ে গেলে কেমন যেন অনুভব হয়। ভিতরে একটা ঝড় বয়ে যায়। মুহুর্তগুলো থমকে যায় নিমিষেই। স্বাভাবিক হওয়ার কথা তখন আর মনে থাকে না।

স্তম্ভিত ফিরে পেলে এসব আর অস্বাভাবিক মনে হয় না। কিন্তু থমকে যাওয়া মুহূর্তগুলো অনুভব করিয়ে দেয় জীবন বদলে গেছে, পথ বদলে গেছে, স্বপ্ন বদলে গেছে, মানুষ বদলে গেছে এবার তুমিও বদলে যাও। হয় তো মানুষ কথা রাখেনি, নয়তো নিয়তি বেইমানি করেছে। মেনে নাও। এতেই সুখ।
________________________🌻

কারো কন্ঠ পেয়ে আরিয়া সামনে তাকালো, দেখলো শিশির ড্রাইভিং সিটে তার দিকে তাকিয়ে বসে আছে।

আরিয়া মনে মনে ভাবছে,, ওনি এসব কোথা থেকে জানলো? নিশ্চয় আহু বলেছে। তবে কথা গুলা তো উনি ঠিকই বলেছে। (থমকে যাওয়া মুহূর্তগুলো অনুভব করিয়ে দেয় জীবন বদলে গেছে, পথ বদলে গেছে, স্বপ্ন বদলে গেছে, মানুষ বদলে গেছে এবার তুমিও বদলে যাও। হয়তো মানুষ কথা রাখেনি,, নয়তো নিয়তি বেইমানি করছে। মেনে নাও, এতেই সুখ) আরিয়া কথাটা মনে মনে দুইবার আওড়ালো। হ্যাঁ এতেই সুখ।

আরিয়ার ঘোর কাটে শিশিরের কথায়,, কী ভাবছো আরিয়া?

আ….আপনি কখন এলেন?

যখন তুমি গভীর ভাবনায় মত্ত ছিলে!

আরিয়া ছোট্ট করে উত্তর দিলো,, ওহ্।

তারপর আর কোন কথা হয়নি। দুজনেই চুপ। হঠাৎ ছোঁয়া, আহিল আর অন্তু হন্তদন্ত হয়ে গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ালে।

তাদের দেখে আরিয়া আর শিশির গাড়ি থেকে বেরিয়ে এল।

এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন? কোথায় চুরি করতে গিয়ে ধরা খাইছস?(আরিয়া)

ফাইজলামি করিস না এখন? আমি সিরিয়াস মুডে আছি এন্ড তোর উপর ভিষণ রেগে আছি!

বাহ্ বাহ্! ভাবা যায় আহু আমাদের অন্তুও নাকি সিরিয়াস মুডে আছে আজ!(আরিয়া)

ধ্যাত সবসময় এমন করস কে! আর কথায় কমু না!

আরু তুই বল কোথায় ছিলি? পুরো জায়গায় তোকে খুজলাম কিন্তু কোথাও তোর কোনো পাত্তা নায়? এভাবে না বলে কয়ে উদাও হওয়ার অভ্যাস টা কি জীবনেও বদলাবি না তুই আরু? (ছোঁয়া)

আরে ইয়ার এত হাইপার হচ্ছিস কেন?

হাইপার হবো না তো কী করব? এখন বল একা একা এখানে চলে আসছিলি কেন?

ভালো লাগছিলো না!

সত্যিই কী তাই?

হুম।

আচ্ছা এখন সবাই গাড়িতে উঠে বসো। সামনের রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খেয়ে বাসায় চলে যাবো।(শিশির)

হুম ভাইয়া চল।

_____________________________

❝আরুপাখি❞

__কাউকে পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করেও যদি তাকে না পাও,বা পেয়েও হারিয়ে ফেলো? তাহলে বুঝে নিও তোমাকে পাওয়ার
জন্য অন্য কেউ প্রার্থনা করছে! যার প্রার্থনার জোর শক্তি তোমার প্রার্থনার থেকে ও অনেক বেশি!

সুতরাং যে যেতে চায় তাকে হাসি মুখে তার মতো করে তাকে যেতে দাও,তোমার শূন্যতা পূরণ করার মানুষ তার জীবনে ঠিক এসে গেছে! নয়তো কেউ এমনি এমনি বদলে যায় না হারিয়ে যায় না!

মনে রেখো জোর করে কাউকে ধরে রাখা যায় না! যে যাবার সে দুদিন আগে আর পরে যে কোনো অজুহাতে চলে যাবেই!
আর যে রবে শতো ঝড় তুফান
উপেক্ষা করে ও তোমার রয়ে যাবে!🖤

আমাদের জীবন থেকে প্রিয় মানুষ গুলো যখন হারিয়ে যায় তখন আমরা পাগলের মত কাঁদি। কিন্তু আমরা পাগলের মত কাঁদেও তাদের বলতে পারি না আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।।

প্রতি নিয়ত নিজেকে নিঃশেষ করি তাও তাদের একটু খারাপ করে কথা বলতে পারি না। হাজারটা অন্যায় করেও অনেক দিন পর একটু কল করলেও বা যোগাযোগ করলেও আমরা সেই মূহূর্তে সব ভুলে যাই। নিজেদের দুঃখ গুলো কষ্ট গুলো তাদের বুঝতে দেই না। কি এক অদ্ভুত ফিলিংস হয় তখন মনে হয় পুরো পৃথিবীকে জয় করে নিয়েছি।

কি এক অদ্ভুত ভালোবাসা তাই না হেরে যাওয়া সত্বেও বেঁচে থাকে। মরে যায় না বলেই মানুষ এতো দুঃখ পায়।

ভালোবাসি আরুপাখি। একটা সুযোগ দিবা প্লিজ। একটা বার বিশ্বাস করবা দয়া করে। কখনো ঠকাবো না তোমায়। প্লিজ আরুপাখি। আমার ভালোবাসায় রাঙিয়ে তুলবো তোমার জীবন। কখনো কোনো কষ্ট পেতে দিব না। শুধু একটা বার বিশ্বাস করো। সবসময় তোমার পাশে থাকবো। শত ঝড়-তুফান আসলেও তোমার হাতটা ছাড়বো না। কথা দিলাম #ভালোবেসে_থাকবো_পাশে💝

ইতি,
তোমার অচেনা কেউ!

এই নিয়ে আরিয়া বহুবার পড়েছে চিঠিটা।

ফ্ল্যাশব্যাক____

#চলবে…!!