ভালোবেসে থাকবো পাশে পর্ব-০৮

0
601

#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে💝
#পর্ব_০৮
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা

ফুসকায় আরিয়া আর ছোঁয়া একটু বেশিই ঝাল নিয়েছিল। ছোঁয়া ঠিক থাকলেও আরিয়ার ঝালে অবস্থা খারাপ। নাক মুখ লাল হয়ে গেছে।

আরিয়ার এই অবস্থা দেখে কেউ একজন তাড়াতাড়ি আরিয়ার কাছে গিয়ে তার সামনে পানি ধরলো।

আরিয়া ব্যক্তিটির থেকে পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিল।
আরিয়া লোকটির দিকে তাকিয়ে বলল,, ”থ্যাংকস আহু”!!(যারা ভাবছিলেন শিশির হবে আর চুমু দিয়ে ঝাল সারাবে তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা!🙊)

রাখ তোর ধন্যবাশ দেওয়া৷😕 তুই যে ঝাল খাইতে পারিস না তাও কেন এত ঝাল দিতে কইলি।

এমনি মন চাইছিল।

হইছে এখন বাসায় চল। দুইদিন ভার্সিটি অফ। তাই কালকের পরের দিন সবাই মিলে ঘুরতে যাব।(আহিল)

ছোঁয়া উত্তেজিত হয়ে বলল,, কই যাবি দোস্ত?

বেশি দূরে না। কাছে কোথাও।

আচ্ছা।

আরিয়া রিকশায় উঠে বসল তখনি খেয়াল করল ওর শাড়ির আঁচলে একটা কাগজ বাঁধা। তাড়াতাড়ি করে খুলে দেখলো ভেতরে কিছু লেখা।

আরুপাখি,,
এখানেও আরুপাখি! কে এই লোক টা। চিঠি টা কখন রাখলো! কী চাই এই লোকটা! এত কিছু পরে ভাবলেও চলবে, পড়ে দেখি ভিতরে কী লেখা আছে! ভেবেই আবার পড়া শুরু করলো!

আরুপাখি,,

তোমাকে আরুপাখি বলে ডাকি বলে প্লিজ রাগ করিওনা লক্ষীটি। তুমিই তো বলছো যে তোমাকে ভালোবাসে শুধু মাত্র সেই তোমাকে আরু বলে ডাকবে। তাই আমিও তোমাকে ভালোবেসে আরুপাখি বলে সম্মোধন করলাম৷ আমার টা একটু ভিন্ন। কারণ তুমি আমার কাছে অনেক স্পেশাল। এখন আসল কথায় আসি।

-শুনো আরুপাখি নিজেকে কখনো অসুন্দর ভেবো না। মনে রেখো সৃষ্টিকর্তার তৈরি সব কিছুই সুন্দর। শ্যামলা কালো কিংবা ফর্সা সবার চেহারায় ভিন্ন একটা মায়াচ্ছন্নতা আছে আর এটা স্বতন্ত্র একজন কখনো আরেকজনের মত হতে পারেনা।তাই স্রষ্টার সৃষ্টিতে সবাই সুন্দর কেউ কুৎসিত নয়।সে ধলো হোক কিংবা কালো।

কালো ফর্সা সবার স্রষ্টাই এক আল্লাহ্‌ তিনি কাউকে অবহেলা করে সৃষ্টি করেন নাই তার কাছে সবাই সমান।কালো ধলো সবাই তার কাছে প্রিয়।মানুষ সৃষ্টির সেরা আশরাফুল মাখলুকাত সুতরাং আর গায়ের রং যাই হোক সবাই শ্রেষ্ঠ।
তাই নিজেকে আগে স্পেশাল ভাবো। কারো জন্য কেন নিজেকে কষ্ট দিবা? বেইমান, বিশ্বাসঘাতকদের জন্য নিজেকে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানেই হয় না।

শুনো কাউকে অগাধ বিশ্বাস করার বিনিময়ে উপহার হিসেবে তুমি পাবা চরম অবহেলা যা তোমার কল্পনার বাহিরে। সেই অবহেলাটাই তোমার জীবনটাকে ধুলিষাৎ করে দিবে।

বিশ্বাসঘাতকেরা সব সময়ই তোমার বিশ্বাসের সুযোগ নিবে। এরা তোমার বিশ্বাসটুকু এমন ভাবে অর্জন করবে যে কোনো ক্ষতি করলেও সেটা তুমি বুঝতে পারবে না। বুঝলেও সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে।

তোমাকে ব্যবহার করে এই লোকগুলো নিজেকে গড়ার চেষ্টা করবে। নাম কিনতে চাইবে। যখন নিজের কার্য সাধন হয়ে যাবে। তখন তোমাকে আর চিনবেও না।

বিশ্বাসঘাতকেরা বিষধর সাপের চেয়েও ভয়ংকর
কারন, সাপ পোষালে পোষ মানে কিন্তু বিশ্বাস ঘাতক আর বেইমানরা খাবে তোমার পড়বে তোমার কিন্তু গুণগান করবে অন্যের। দিনশেষে ওদের কাছে তুমি ফেলনার পাত্র হয়েই থাকবে।

তাই ভেবো না সবাই বিশ্বাসঘাতকতা করে। আর হ্যাঁ নিজেকে কখনো একা মনে করবা না। কেউ তো আছে যে তার নিজের থেকেও বেশি তোমাকে ভালোবাসে। কিছু খারাপ মানুষের জন্য নিজেকে কখনোই ছোট করে দেখবা না। যে যাবার সে চলে যাবেই। জীবনে কতো মানুষ আসবে যাবে দেখো দিন শেষে কে পাশে থাকে। ধৈর্য ধরো সেই মানুষটার জন্য যে শুধু তোমাকেই ভালোবাসবে। যে ভালোবেসে তোমার পাশে থাকবে!💝

আর একটা কথা,, রাতুলের জন্য আর কখনোই কাঁদবা না। তুমি জানো না অন্য করো জন্য তোমার চোখে পানি দেখলে একজনের ভিতরে খুবই কষ্ট দেয়। তার বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়। সেই দহন যে তাকে বড্ড বেশি পোড়ায়।

অযথা নিজেকে অসহায় কিংবা অপরাধী ভাবার কোন কারণ নেই। তুমি যা হারিয়েছো তা তোমার নয় বলেই তা তুমি পাওনি।। জীবন চলার পথে প্রতিটা মানুষের মধ্যে একটা না পাওয়ার গল্প থাকে। অপূর্ণতা আছে বলেই আমরা পূর্ণতার তৃপ্তিটা অনুভব করতে পারি।।

কষ্ট আছে বলেই আমরা প্রতিটা মূহুর্তে নিজেকে স্টং করে তুলতে পারি। আমাদের প্রতিটা মানুষের জীবন এক এক রকম ভাবে জটিল। এক জীবনের হিসাবটা মেলানো সম্ভব হয় না। পাওয়া না পাওয়ার মধ্যে জীবন পার হয় জীবনের গতিপথ। সবার দুঃখ কষ্ট আলাদা কারোটা দেখা যায় কারোটা অপ্রকাশিত রয়ে যায়। কেউ কেউ সহজে প্রকাশ করতে না পেরে জীবনের কাছে হেরে যায়।

অল্পতেই ভেঙে গেলে তাহলে পৃথিবী তোমার জন্য নয়। মানুষ যা মন থেকে চায় তা পায় না। তুমি ভাবছো শুধু তোমার সাথেই এমন হয়েছে,,?

না পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ যারা প্রিয় মানুষটা হারিয়ে জীবনের সাথে যুদ্ধ করছে। যারা আপনাকে ঠকিয়েছে তারা কি কখনোই ঠকবে না ভাবছো..?

কালের বিবর্তনে তারাও একদিন কোন না কোন ভাবে কারো না কারো দ্বারা প্রতারিত হবে। এটা আমার কথা না এটা আল্লাহর ওয়াদা।।

নিজের লাইফে মুভ অন করো। আর নিজেকে বদলে ফেল। যারা আজ তোমায় অবহেলা করছে তাদের জবাবটা সময় মতো দিয়। ভালো থেকো আরুপাখি।

সব শেষে বলছি__তোমার কাছে সে খুব তাড়াতাড়ি ধরা দিবে যে তোমাকে সত্যিই ভালোবাসে আরুপাখি।

অচেনা কেউ.!!!💞

আরিয়া মনে মনে ভাবছে,, কে এই চিঠি প্রেরক? এত বড় করে কেউ চিঠি লেখে! আর এসব কী বলল? আমাকে কেউ ভালোবাসে? তাও আবার তার নিজের থেকে বেশি? বিষয় টা সত্যিই এখন হাস্যকর!
আরিয়া আপনমনেই বলে উঠলো,,

এক সমুদ্র ভালোবাসার পরেও যখন দেখলাম সেই মানুষটি আমার ভালোবাসায় আর সন্তুষ্ট নয় তখন তাকে আমি আর ধরে রাখিনি।ছেড়ে দিয়েছি মুক্ত আকাশে। যে মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে থাকতে চায়না তাকে যতই শক্ত করে বেঁধে রাখিনা কেন সে বাঁধন ছিড়ে যাবেই।কারন সেতো তখন অন্যের শেকলে নিজেকে বাঁধতে চায়!

আমি নিজেকে তার থেকে গুটিয়ে নিয়েছি।যে মানুষটা আমায় অবহেলা করেছে প্রতিনিয়ত সে মানুষকে ভালোবাসাটাই ছিলো আমার সবচেয়ে বড় ভুল।আর এই ভুলের কারনে সবার মাঝে থেকেও বড্ড একা হয়ে গেছি আজ।তবুও তার সুখ কামনা করেছি।আমি যে আঘাত পেয়েছি সেই একই আঘাতে সে যেন কখনো জর্জরিত না হয়।

আর আমি কাউকে কখনোই আমার জীবনে জায়গা দিতে পারবো না। কাউকে ভালোবাসতে পারবো না।রাতুলতো আমার সাথে এমনটা না করলেও পারতো। যাই হোক সে ভালো থাকুক।

চোখের পানি মুছে রিকশার ভাড়া মিটিয়ে বাসায় এসে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।

শাওয়ার নিতে যাবে এমন সময় ফোন বেজে উঠলো। হাতে নিয়ে দেখে ফারিয়ার ফোন।

ফোন কেন দিয়েছিস?

আরু…

কত বার বলব আমাকে আরু বলে ডাকার অধিকার নাই তোর।

ও সরি! যেটার জন্য ফোন দিয়েছি। বিয়ে তো এগিয়ে আসছে,, আমাদের সাথে শপিং করতে যেতে হবে তোকে। আর আমার ড্রেস চয়েস করার দায়িত্ব কিন্তু মা তোকেই দিবে!

লিসেন প্রথমত আমি তোদের এসিস্ট্যান্ট না যে তোদের সাথে যাব৷ আর দ্বিতীয়ত তুই আমার ভালোবাসার মানুষকে (ও সরি সে তো এখন একটা বেইমান, প্রতারক) কেড়ে নিয়েছিস তার সাথেই তোর বিয়ে আর তুই ভাবলি কি করে যে আমি তোর বিয়ের ড্রেস চয়েস করে দিমু।

শুন আরু.. ও সরি আরিয়া তুই নিজেই কিন্তু আমার বিয়ের জন্য এক্সাইটেড ছিলি। আর একদিন তুই নিজেই বলছিলি আমার বিয়ের ড্রেস তুই চয়েজ করে দিবি। আর মা তার জন্যই তোকে দায়িত্ব দিবে। তার তুই বল আরিয়া তোর পেয়ারের ফুপিমণি কে কেমনে না করবি যে তুই আমার সাথে যাবি না।

দেখ এখন সব বদলে গেছে। সব কিছুতেই আমাকে নিয়ে টানাটানি করবি না। আর আমাকে নিয়ে তোর ভাবতে হবে না। আমি কী করব না করব সেটা আমার উপর ছেড়ে দে। যত্তসব আজাইরা পিপলস।

ফারিয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আরিয়া কল কেটে দিয়ে শাওয়ার নিতে চলে গেলো।

_______________💝

পরের দিন রাতে আরিয়া ঘুমাতে যাবে ঠিক যাবে ঠিক তখনি ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠলো। হাতে নিয়ে দেখলো আহিল মেসেজ করেছে। কাল কোথায় যাবে সেই লোকেশন দিয়ে বলল,, ১১ টায় বাসা থেকে বের হবি। তোকে আমরা পিকআপ করে নিব।

আরিয়া ”ওকে” লিখে ফোন ফ্লাইট মোড করে ঘুমিয়ে গেলো।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিল। রুমে এসে ছোঁয়া কে ফোন দিয়ে রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।

বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে আরিয়া। অপেক্ষা জিনিসটা তার একদম ভালো লাগে না। প্রায় ১০ মিনিট পর আহিল, ছোঁয়া আর অন্তু গাড়ি নিয়ে আসলো।

আরিয়া আহিল কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার সামনে এসে দাঁড়ালো শিশির।

#চলবে..!!