#গল্পঃ_ভিলেন
লেখিকাঃ আদিবা ইসলাম আঁখি
পর্বঃ ১৪
——————–★★————————
শুভ: এই মেয়েটা ও না সব সময় বেশি বকে রাবিশ….!
শুভ বক বক করতে লাগলো এসব পাত্তা না দিয়ে সব কিছু গুছিয়ে বের করে দিলাম!!… হঠাৎ চোখ পড়লো টেবিলে রাখা আমাদের বিয়ের ছবিটার উপর…
আমি: এই ছবিটা রাখবো নাকি নিয়ে যাবো…..(শুভর দিকে তাকিয়ে)
শুভ: দেখি,,,
আমার হাত থেকে ছবিটা নিলো,,,
শুভ: তোর আর আমার শুধু এই ছবিটাই আছে এটা রেখে কি হবে,,,
হঠাৎ শুভ ছবিরটা ছিড়ে টুকরো টুকরো করে নিয়ে ঝুড়িতে ফেলে দিলো!!… আমি হা করে তাকিয়ে শুভর কান্ড দেখতে লাগলাম…
শুভ: এখন দাড়িয়ে যে এই তো যাওয়ার জন্য উতলা ছিলি তো যা
কথার উওর টা না দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম….!
শুভ: কেনো বার বার আমার মনে এমন অস্তির লাগছে… শুভ কুল নিজেকে কন্টল কর প্লিজ…( মনে মনে )
___রাতে বিছানায় চুপচাপ বসে জানালার বাইরের দিকে অনমনে তাকিয়ে আছি তখনি আশা রুমে আসলো,,,,
আশা: ভাবি এখনো মন খারাপ করে বসো আছো,,,,
আমি: উহু!!.. বল কি বলবে
আশা: না মানে সকালে যা হলো কিন্তুু ভাবি সবাই যা বলুক আমি জানি আমার ভাইয়া কেমন!!
আমি: তোমার ভাইয়া কেমন নিচে থাকা সকলে দেখছে…
আশা: জানি না ও এমনটা কেনো করছে…
আমি: আচ্ছা আশা বাদ দাও এসব
আয়শা: কেনো করছে বুঝিস না… ভাইয়া এই মেয়েকে নয় নদী আপুকে ভালোবাসে নেহাত এই রকম থ্রার্টক্লাস মেয়েকে শায়েস্তা করার জন্য বিয়ে করেছিলো ওর কি যোগ্যতা আছে ভাইয়ার বউ হওয়া,,
আশা: আপু কি বলছো যাতা,,,,,
আয়শা: যা বলেছি ঠিক বলেছি,,,,
আমি: তোমার বলা শেষ হলে প্লিজজ লিভভ…
আয়শা: যত্তসব ড্রামাবাজ…
আশা: মানুষ হয়লো না আর,,,,
আয়শা চলে গেলো আমি বসা থেকে উঠে জানালা রিলিং ধরে দ্বারালাম….!
★★ এভাবে দুটো দিন কেঁটে গেলো…. আজ বাসায় ছোট করে এঞ্জেমেন্ট আয়োজন করা হয়েছে..
আশা: ভাবি রেডি হওনি এখন নিচে সবাই অপেক্ষা করছে তো,,,,
আমি: হচ্ছি তো,,,
আশা: কই রেডি হয়েছো !! ওয়েট আমি করে দিচ্ছি
আশা হালকা একটু সেঁজে নিচে নিয়ে আসলো,,,,,
মা: আসো ,,,,
আন্টি: বাহহ মাশআল্লাহ
আংকেল: আমার ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে,,,,
আন্টি: হুমমম…
আন্টি আমায় তুষার পাশে নিয়ে বসিয়ে দিলো,,,,আমি চারপাশে শুভকে খুঁজতে লাগলাম কিন্তুু কোথাও খুঁজে পেলাম না…..
তুষার: কাউকে খুঁজছো,,,,
আমি: উহু ( মাথা নাড়িয়ে)
একটু পর এঞ্জমেন্ট ও শুরু হয়ে গেলো শুভকে কোথাও দেখতেও পেলাম না,,,,,
আন্টি: কি হলো পড়াও,,,
মা: পড়াও ( ইশারা করে)
আমি: হুমমম…
চারপাশে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে তুষার হাতে আন্টি পড়িয়ে দিলাম সাথে সাথে চোখ বয়ে টপ পানি পড়লো,,,,,
তুষার: কি হলো আদিবা!!.. কোন প্রবলেম
আমি: না না চোখে কি যেনো পড়েছে দুমিনিট আসছি
তুষার: আদিবা
আমি: আসছি,,,,
দৌড়ে সোঁজা বারান্দায় এসে চোখ মুছতে লাগলাম হঠাৎ সামনে যা দেখলাম পুরো নিঃস্তব্দ হয়ে গেলাম….!শুভ আর নদী ছিঃ ছিঃ
হঠাৎ শুভ আমাকে দেখে সরে দাড়ালো,,,,
আমি: সরি সরি বুঝতে পারিনি..! ডিস্টার্ব করে ফেল্লাম
নদী: ইটিস ওকে আদিবা
শুভ: আদিবা যা ভাবছো তেমনটা নয়…
আমি: না না কি ভাববো ( মুচকি হেসে)
শুভ: আদিবা….
ওখান থেকে দৌড়ে চলে আসলাম…!
আমি: ওদের দুজনকে এক সাথে দেখে কেনো কষ্ট হচ্ছে আমার..! ওরা দুজনতো দুজনকে ভালোবাসে ওদের দেখেতো খুশি হওয়ার কথা কেনো এমন হচ্ছে… কেনো বার বার অনকন্টল হয়ে পড়ছি কেনো কেনো ( কাঁদতে কাঁদতে)
আশা: ভাবি কাঁদছো তুমি…
আমি: কই না তো ( চোখের পানি মুছতে মুছতে
আশা: আমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে না,,,,ভাবি নিজেকে শক্ত করো তুমিই তো বলো ভাইয়া আর তোমার ডিবোর্স হয়ে গেছে এখন থেকে তুষারই সব কিছু তাহলে এখন ওদের দুজনকে দেখে কষ্ট পাচ্ছো…
আমি: জানি না বার বার এমন কেনো হচ্ছে,,,,
আশা: কন্টল করো নিজেকে
আমি: হুমমম….. এবার থেকে নিজেকে কন্টল করবো
আশা: গুড,,,,এবার চলো সবাই অপেক্ষা করছে,,,,,
আমি: চলো,,,,,,
ওখান থেকে নিচে আসলাম..সবার সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম……
_____পরের দিন সকাল সকাল উঠে রেডি হয়ে আমি আর আশা চলে আসলাম তুষারের কথা মতো শপিং মলে……. গাড়ি থেকে নামড়েই তুষার এসে হাত ধরে নামিয়ে দিলো,,,
তুষার: এসো,,,,,
আমি: হুমমম
শপিং মলে ডুকে সিড়িতে পা দিবো তখনি তুষার হাতটা ধরলো,,,
তুষার: ডক্টর কি বলেছে এখন তোমার সাবধানে থাকতে’ উপরে যেতে হবে না আমরা নিচ থেকে কেনাকাটা করবো কেমন,,,,
আমি তুষার দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছি….
আমি: এই মানুষটা শুধু আমাকে নয় আমার নবজাতক শিশু যে কিনা অন্য কারো সন্তান জেনেও এতো যত্ন করে আগলাচ্ছে আর আমি এই মানুষটাকে ঠোকাচ্ছি উহু আজ এই মানুষটাকে সবটা বলে দিবো আর কোন মিথ্যা নয়,,,,,( অনমনে)
হঠাৎ লোকটা হাত ধরতেই ধ্যান ভাঙ্গলো….
তুষার: চলো,,,
আমি: আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই
তুষার: শুনবো তবে এখন নয় বাসায় গিয়ে কেমন!!! ( গালে হাত দিয়ে)
আমি: ওকে ( মুচকি হেসে)
তিনজনে মিলে শাড়ি দেখতে লাগলাম…! হঠাৎ তুষার একটা লাল বেনারসি এনে গায়ে জোরিয়ে দিলো,,,
তুষার: বাহহ
আশা: খুব সুন্দর বানাবে কিন্তুু
তুষার: সত্যি,,,,
আশা: একদম
তুষার: তোমার পছন্দ তো,,,,
আমি: আপনার যেটা ভালো লাগে নিয়ে নেন আমার কোন আপত্তি নেই,,,,,
তুষার: তাই বলে তোমার পছন্দ নাই নাকি
আমি: আছে তো,,,,সত্যি সুন্দর শাড়িটা…
তুষার: ওকে এটাই রাখলাম কেমন
আমি: হুমমম….
আশা আর তুষার শপিং করতে লাগলো আমি আনমনে দাড়িয়ে রয়লাম…..
একটু পর শপিং মল থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাড়ালাম তুষার গাড়িটা বের করতে লাগলো….
হঠাৎ কেউ একজন হাতটা ধরে ঝ্যাংটা টান মারলো ঠিক তখনি একটা কালো গাড়ি পাশ কাঁটিয়ে চলে গেলো….
তুষার: আদিবা!!.. তুমি ঠিক আছো তো,,,
আশা: ভাবি আর ইউ ওকে
আমি: হুম ঠিক আছি,,,,,আপনি এখানে
শুভ: এখানে না থাকলে তো এখনি মরতে যাচ্ছিলেন,,,,
তুষার: থ্যাংস গড তুই ছিলি না হলে কি হতো,,,,
আশা: আমরা তো রাস্তা থেকে অনেকটা দুরে দাড়ানো তাহলে গাড়িটা সোঁজা এদিকে কেনো আসলো,,,,
তুষার: রাইট,,,,,
শুভ: জানি না… ছাড় তোরা যা এসব বাদ দে যা হবার হয়ে গেছে,,,এখন থেকে সাবধানে চলবি…!
তুষার: হুমমম আসছি,,,,আদিবা এসো,,,,
শুভ: সাবধানে যাবি…..
আমি কিছুক্ষন শুভর দিকে তাকিয়ে থেকে গাড়িতে গিয়ে বসলাম,,,,,
তুষার: তুমি সত্যি ঠিক আছো তো,,,
আমি: হ্যাঁ লাগেনি তো কোথাও,,,
তুষার: যাক ভালো হলো,,,,,
আমি: শুভ কি আমায় ফলো করে..! যখন কোন সমস্যায় পড়বো ঠিক কোথায় থেকে যেনো চলে আসে.. উফফ কিছুই ভালোলাগছে না,,, ( মনে মনে ভাবতে লাগলাম)
তুষার: কি ভাবছো,,,,,
আমি: কিছু না একটু তাড়াতাড়ি চলেন মাথাটা যন্ত্র না করছে,,,,
তুষার: মাথা যন্ত্রনা সামনো ক্লিনিক তুমি বললে যেতে পারি
আমি: লাগবে না একটু রেস্ট নিলে হবে
তুষার: ওকে ফাইন,,,,,
তাড়াতাড়ি করে বাসায় চলে আসলাম…! রুমে এসে দরজা নক করে বালিশে মাথা রাখলাম,,,,,
আমি: কি চাই আমার থেকে শুভ কেনো এসব করছে….. আমায় তো ভালোবাসে না তাহলে কেনো বার বার আমাকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করছে কেনো কেনো,,,,,উফফফ কিছু ভাবতে পারছি না মাথা ফেঁটে যাচ্ছে,,,,,
বালিশ মাথায় চেপে ধরে কিছুক্ষন সুয়ে থাকলাম,,,,,,
রাত প্রায় সাড়ে ১১:০০ বাজে বিছানায় এপাস ওপাস করতে লাগলাম…. কিছুতেই ঘুম আসছে না বিছানা ছেড়ে পাইচারি করতে লাগলাম…. তবুও মনে ভিতর খুট খুট করতে লাগলো…..
রুম থেকে বের হয়ে সাদে চলে আসলাম….
সাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছি হঠাৎ বৃষ্টি পড়তে লাগলো,,,,
আমি: আকাশ পরিক্ষার তাহলে হঠাৎ বৃষ্টি কেমনে কি…..
আমি আবাক হয়ে দু হাত বাড়ালাম আনন্দের ঠেলায় লাফাতে লাগলাম “কারন আমার বৃষ্টি খুব খুব পছন্দ !!!…..
হঠাৎ সামনে দিকে তাকিয়ে দেখি সাদা শার্ট পড়া কেউ একজন এগিয়ে আসছে বৃষ্টির প্রবল এতো ছিলো যে সবকিছু ঝাঁপসা ঝাপঁসা লাগছে ঠিক মতো লোকটাকে দেখতেও পাচ্ছি না…..
( চলবে)