ভিলেন পর্ব-০৯

0
594

#গল্পঃ_ভিলেন

লেখিকাঃ আদিবা ইসলাম আঁখি

পর্বঃ ০৯

——————–★★———————–

আমি: শুভ ছাড়ুন লাগছে আমার প্লিজজজজ ( কেঁদে কেঁদে)

শুভ জোরে ধাক্কা দিতেই ফ্লোরে বসে পড়লাম,,,,আলতো করে ঠোঁটে হাত ছুয়ে দিতেই ব্যাথায় কেঁদে উঠলাম,,,,তখনি শুভ এসে আমার পাশে বসে বলতে লাগলো,,,,

শুভ: মনে পড়ে ২০১৮ সালের কলেজ লাইফে সেই তুষার কথা,,,,,

শুভর মুখে তুষারের কথা শুনে আবাক হয়ে শুভর দিকে তাকালাম,,

আমি: তুষার,,,,,

শুভ: হুমমম তুষার মনে পড়ছে নিশ্চয়,,,,আজ শুধু তোর জন্য ছেলেটা হসপিটালে বেডে পড়ে আছে,,,,,

আমি: আমার জন্য ( আবাক হয়ে)

শুভ: হুমম তোর জন্য,,,,আয় চল

আমি: কোথায়,,,,

হঠাৎ শুভ আমার হাতটা ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসলো,,

আমি: কি করছেন ছাড়ুন,,,

শুভ কোন কথা শুনলো না সোঁজা গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে ফুলস্প্রিডে ড্রাইভ করতে লাগলো,,,,চোখ বন্ধ করে আল্লাহকে ডাকছিলাম আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম তুষার সাথে উনার কি সম্পর্ক কে হয় উনার,,,,,
হঠাৎ গাড়িটা প্রাইভিট ক্লিনিক সামনে দাড়ালো শুভ গাড়ি থেকে নেমে আমার হাতটা ধরে টানতে টানতে ৩৩২ কেবিনে ডুকে পড়লো,,,, কেবিনে ডুকে বেডে থাকা ছেলেটাকে দেখে বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠলো !!….

আমি: ইনি তো,,,,(শুভর দিকে তাকিয়ে )

শুভ: হুমম ও তুষার,,,,

আমি: উনি এখানে কি হয়ছে,,,

শুভ: কি হয়েছে নাটক তাই না,,,,

আমি: শুভ আপনি বিশ্বাস করুন আমি কিছু জানি না ,,,

শুভ: জানিস না তাই না,,,,,,

শুভ আমার হাতটা ধরে বাইরে নিয়ে আসলো,,,,,

আমি: শুভ প্লিজজ বিশ্বাস করেন আমায়,,,,

শুভ: বিশ্বাস তোকে হাউ ফানি,,,,( হেসে হেসে) আজ আমার কলিজ্বার বন্ধুটা তোর জন্য এমন অবস্থা,,,,,
যখন আমার বন্ধু তোর জন্য নিজের অস্তিত ভুলে গিয়ে সারাদিন তোর পিছনে পড়ে থাকতো! তার প্রতিটা অনুভুতি তে শুধু তুই ছিলি বড্ড ভালোবেসে ছিলো কিন্তুু তুই এতটাই অহংকারি ছিলো যে রোজ তুষারকে ইগনোর করতি এভাবে তুই তো পুরো কলেজে তুষারকে হাসির পাএ বানিয়ে ছেরে ছিলি যেখানে তুষার কে সবাই মাথায় তুলে রাখতো,,,,,,কিন্তুু এটুকু করেও থামিস নি ছেলেটা যেদিন তোকে পুরো ক্যাম্পাসের ছেলে মেয়ের সামনে প্রপোজ করেছিলো ঠিক সেই দিন রাতে তুই আর তোর আব্বু মিঃ সাঈদ মিলে তুষারকে এতোটা মেরে আহত করেছিলি যে গত ২ বছরে ছেলেটার কোন সেন্স ছিলো না কিন্তুু আল্লাহ অসীম দোয়ায় আজ তুষার অনেকটা ভালো কিন্তুু শুধু তুই ই তুষারের জীবন থেকে গত ৩ বছর কেড়ে নিছিস….
শুভ এটুকু বলে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে কপালে হাত দিলো,,,,

আমি: কিহহ বলছেন এসব (চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে)

শুভ: ঠিকক বলছি,,,, সেই দিন থেকে বন্ধুকে প্রমিজ করেছিলাম তোকে সহ তোর বাবা কে উচিত শিক্ষা দিবো,,,,,,ভেবেছিলাম বিয়ে করেই তোকে উচিত শিক্ষাটা দিবো কিন্তুু তোর এত বাচ্চামু গুলো দেখে তোর উপর কেনো জানি না মায়া চলে আসছিলো কিন্তুু আমাদের রিসেপ্সনে যখন তুষারকে দেখি তখন তোর প্রতি প্রতিশোধটার আগুন দাও দাও করে জ্বলে উঠলো,,,,,

আমি: শুভভ

শুভ: এই তোর মুখে আমার নামটা একদম নিবি না,,,,

আমি: বিশ্বাস করেন তুষার এমন অবস্থা আমি সত্যি জানতাম না,,,

শুভ: সেট আপ,,,,,,

আমি: বিশ্বাস করেন,,,

শুভ: বিশ্বাস তোকে,,,,,,

শুভ হেসে হেসে হসপিটাল থেকে বাইরে চলে আসলো আমিও পিছন পিছন আসলাম শুভ গিয়ে গাড়িতে বসলো,,,,,

শুভ: ১ঘন্টা ভিতরে বাসায় যেনো তোকে দেখতে পাই

আমি: কিহহ ১ ঘন্টা এখান থেকে কেমনে যাবো,,,

শুভ: ঠিকক ১ ঘন্টা,,,,,

আমি: শুভ প্লিজজ শুনেন,,,

শুভ: যদি ঠিক সময়ে না পৌছাস কালই তোরে বাসায় দিয়ে আসবো তারপর দেখবো তোর বাবার এতো সম্মান কই যায়,,,,,মাইন্ড ইটট,,,,

আমি: শুভ প্লিজ প্লিজ এমনটা করবেন না আব্বু হার্টে প্রবলেম মেরেই যাবে,,,,

শুভ: I don’t care,,,,

আমি: আমার কথাটা একটু শুনুন কোথাও হয়তো ভুল বোঝাবোঝি হচ্ছে প্লিজজ শুভ একটু শুনুন,,,

হঠাৎ চোখের সামনে গাড়িটা দ্রুত গতি ছাড়লো,,,তাড়াতাড়ি করে ছুটতে লাগলাম একটু পর হাঁফিয়ে গেলাম মাঝরাস্তায় হাঁটুর উপর হাত রেখে দাড়িয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখি চারপাশ নিরীবি কেউ নেই মনে ভিতর ধুক ধুক করে উঠলো,,,,

আমি: হে আল্লাহ রক্ষা করো আমায়,,,( কাঁদতে কাঁদতে)

হাঁপাতে হাঁপাতে চলে আসলাম বাসায়,,,,তাড়াতাড়ি করে রুমে ডুকে দেখি শুভ সোফায় বসে আছে আমারে দেখে বসা থেকে উঠে এসে সামনে দাড়ালো,,,

শুভ: ১৪ মিনিট লেট,,,,( ঘড়ি দেখিয়ে)

আমি: শুভ ( হাঁফাতে লাগলাম)

তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে পানির জগ টা হাতে নিয়ে পানি গ্লাসে ঠালতেই শুভ এসে গ্লাসটা হাত থেকে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো,,

আমি: শুভভভভভ

শুভ: আওয়াজ নিচে,,,,( ধমক দিয়ে)

আমি: আমার খুব তৃষ্ণা পেয়েছে প্লিজজ একটু,,,,(অসহায় ভাবে তাকিয়ে)

শুভ: তুই সারা রাত পানি না খেয়ে থাকবি,,,

আমি: মরেই যাবো প্লিজ একটু

শুভ: একটু্ও না বলছি তো,,,

আমি: প্লিজজজ

শুভ: লেট করেছিস এই তার শাস্তি,,,, আর শোন সকালে উঠে পাপা রে বলবি আমরা হানিমুন যাচ্ছি না যদি না বলিস তাহলে সোঁজা বাপের বাড়ি গিয়ে পৌছে দিয়ে আসবো,,,

আমি: না না আমি বলবো বাবাকে প্রমিজ,,,একটু পানি খাই প্লিজজ ( কাঁদো কাঁদো হয়ে)

শুভ: একটুও না,,,,আমায় এক কথা বলে বলে মাথা খাবি না তাহলে কিন্তুু

আমি: থাক খাবো,,,,,,

শুভ গিয়ে বিছানায় সুয়ে পড়লো সাথে সাথে লাইট অফ করে দিলো,,,,
আমি গিয়ে সোফায় বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম,,,,,

সারা রাত দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি,,,,

সকালে উঠে লক্ষি বউয়ের মতো চা বানিয়ে সবাইকে দিলাম,,,

মা: বউমা তোমার ঠোঁটে কি হয়েছে

আমি কিছু বলতে যাবো তখনি শুভ বলে উঠলো,,,,

শুভ: ওয়াসরুমে পড়ে গিয়ে মেবি কেঁটে গেছে,,,

মা: কিহহ কখন হলো,,,মেডিসিন লাগাও নি

আমি: লাগাতে হবে না মা তেমন কিছু হয়নি

মা: তেমন কিছু না মানে কত খানি কেঁটে গেছে,,,

শুভ: বললাম ঔধুধ লাগিয়ে দেই শুনলেন না দাড়ান আমি ঔষুধ বক্স এনে লাগিয়ে দেই,,,

আমি: লাগবে না থাক,,,

শুভ: চুপপ করে বসেন তো,,,

শুভ গিয়ে ঔষুধ বক্সটা এনে আমায় বসিয়ে ঔষুধ লাগিয়ে দিতে লাগলো,,,

আমিঃ আহহহহ ( চোখ বন্ধ করে)

শুভ: বলেছিলাম না সকালে উঠে পাপাকে হানিমুন ব্যপারটা বলতে ( কানে ফিস ফিস করে বললো)

আমি: বলছি তো লাগছে প্লিজ,,,

শুভ: গুড!!!… বল,,,,
হয়ে গেলো দেখবেন আর ব্যাথা করবে না ( জোরে জোরে)

মা: ভালো করছিস জোর করে লাগিয়ে দিয়ে একদম অবুঝ মেয়ে নিজের কষ্ট চেপে রাখে,,,,

শুভ: আম্মু তুমি ভেবো না তো এতো সব ঠিক হয়ে যাবে কি বলেন

আমি: হুমমম ( মুচকি হেসে)

আশা: ভাইয়া বউকে কত কেয়ার করে দেখছো আম্মু

মা; হুমম দেখছি তো,,,

আশা: ইসসসস এমন একটা বর যেনো আমার কপালে জুটে,,,,

আমি: তাই ( হেসে দিয়ে)

আশা: হুমম ভাবি,,,,,

আমি: বাবা আপনাকে কিছু বলবো

বাবা: হ্যাঁ বউমা বলো,,,( পেপার পড়ছে)

আমি: বাবা আমি হানিমুনে যেতে পারবো না

বাবা: কেনো

মা: কোন সমস্যা বউমা

আমি: না মা আসলে আমার শরীরটা তেমন ঠিক নেই

বাবা: সে কি শুভ ডক্টর দেখাও নি বউমাকে

আমি: না না বাবা তার প্রয়োজন নেই,,,,,

বাবা: না তোমায় দেখেও কেমন যেনো লাগলো শুভ সন্ধায় বউমাকে নিয়ে একবার হসপিটাল থেকে ঘুরে আসবে কেমন

আমি: তার দরকার নাই বাবা প্লিজ অযথা টেনশন করবেন না

বাবা: আচ্ছা ঠিক আছে তোমারর যেমনটা ইচ্ছে,,,

আমি: হুমম,,,,বাবা হানিমুন টা ব্যাপার

বাবা: আচ্ছা সমস্যা নাই তুমি যখন যেতে চাচ্ছো না তাহলে থাক পড়ে না হয় যেও কেমন

আমি: থ্যাংক বাবা,,,,,

বাবা: হুমমম,,,,

শুভ দিকে তাকিয়ে দেখি বেশ খুশি আমিও একটু সস্তি পেলাম,,,,,

একটু পর শুভ অফিসে চলে গেলো,,,,,,,,,

____বিকালের দিকে রেডি হয়ে বাসার গাড়ি নিয়ে সোঁজা চলে আসলাম ক্লিনিকে,,,,চারপাশে খুঁজে খুঁজে ৩৩২নং কেবিনে ডুকে দেখি তুষার সুয়ে আছে সাথে একটা নার্স দাড়িয়ে আছে!!!..
আমায় দেখে তুষার ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো সাথে সাথে উঠে বসলো,,,,

তুষার: মন-জোনাকি তুমি,,,,

আমি: আসবো ভিতরে,,,,,

তুষার: আরে এসো এসো,,,

নার্স: কিন্তুু স্যার শুভ স্যার বলে দিছে যেনো কেউ আপনার কেবিনে না আসে,,,

তুষার: আরে ও আমার খুব আপনজন

নার্স: ওকে,,,,,আমি একটু আসছি সাবধানে থাকবেন,,,

তুষার: হুমমমম,,,

নার্স চলে গেলো আমি গিয়ে তুষারের পাশে বসলাম,,,,,

আমি: আপনি এখন কেমন আছেন,,,,

তুষার: খুব ভালো তোমাকে দেখে তো একদম ভালো হয়ে গেছি,,,

আমি: ওহহ আচ্ছা,,,,

তুষার: তুমি হঠাৎ এখানে কেমনে,,,

আমি: জানতে পারলাম আপনি নাকি হসপিটালে,,

তুষার: ওহহ,,,,,ভালো করেছো,,,,

আমি: একটা কথা বলবো ,,

তুষার: বলো,,,

আমি: আপনার এই অবস্থা জন্য আমি রিয়েলি সরি,,,,

তুষার: এমা তুমি কেনো সরি বলছো

আমি: আমি এসব কিছু সত্যি জানতাম ই না হয়তো আব্বু রাগের বসে এসব করে বসছে তার জন্য রিয়েলি সরি,,,( হাত জোর করে)

তুষার: আরে বোকা মেয়ে সরি কেনো বলছো যা হবার হয়ে গেছে,,,,,

আমি: হুমম আমার জন্য আপনার এতো গুলো বছর নষ্ট হলো,,,,চাইলেও আমি ফিরে দিতে পারবো না

তুষার: এতো গুলো বছর নষ্ট হয়েছে তো কি হয়ছে আগামী দিন গুলো তো আছেই,,,,

আমি: হুমমম আমি চাই আপনি সুস্থ হয়ে আবার আগের মতো হয়ে যান,,

তুষার: হুমমমম ইনশাআল্লাহ,,,,
একটা কথা বলবো রাখবে তো,,,,?

আমি: হ্যাঁ বলেন রাখার চেষ্টা টুকু করবো বাকিটা আল্লাহ ভরসা,,

তুষার এসে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বলতে লাগলো,,,

তুষার: বিয়ে করবে আমায়,,,,,,

___ তুষারের কথা শুনে হাতটা সরিয়ে দিয়ে বসা থেকে উঠে ফাঁকে গিয়ে দাড়ালাম হঠাৎ তখনি শুভ কেবিনে ডুকলো!!!…
আমি শুভর দিকে অসহায় ভাবে তাকালাম,,,,,

হঠাৎ শুভ যা বলে বসলো পায়ের নিচে থেকে যেনো মাটি সরে গেলো,,,,,,,!!!…

( চলবে)