ভিলেন পর্ব-০৮

0
599

#গল্পঃ_ভিলেন

লেখিকাঃ আদিবা ইসলাম আঁখি

পর্বঃ ০৮

——————–★★———————–

আমি: যখন উনি আমায় স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবে না তাহলে কেনো বিয়ে করলো আমায়!! এই লোকটার মাথায় কি চলছে’ না মনটা এমন অস্তি কেনো হচ্ছে…..

সোফা থেকে উঠে সোঁজা সাদে এসে দোলনাতে বসে পড়লাম,,,,

আমি: কেনো এমন লাগছে আমার,,,তবে কি আমি লোকটার মায়া জালে ফেঁসে গেছি উফফ কিছু ভালোলাগছে না,,,,

বসা থেকে উঠে সাদের রেলিং ধরে দাড়ালাম হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন কাঁধে হাত রাখতেই ছিটকে উঠলাম পিছন ফিরে দেখি আম্মু,,,,,

আমি: ওহহ তুমি ( বুকে হাত দিয়ে)

আম্মু: তুই এখানে ঘুমাস নি,,,,

আমি: ঘুম আসছে না!! তুমি ঘুমাও নি কেনো

আম্মু: পানির জন্য নিচে আসতে দেখি তোর রুমের দরজা খোলা উকি দিয়ে দেখি শুভ ঘুমাচ্ছে তুই নেই তাই খুঁজতে খুঁজতে এখানে আসলাম,,,,

আমি: ওহহহ আচ্ছা,,,,,

আম্মু: কি হয়ছে সোনা

আমি: আম্মু তুমিও না কিছু হয়নি ছাড় তো,,,

আম্মু: মায়ের চোখে ফাঁকি দিচ্ছিস বল না সোনা,,,,

আমি: আম্মু বলছি তো কিছু হয়নি অযথা টেনশন করো না,,,

বিরক্ত নিয়ে দোলনায় গিয়ে বসলাম আম্মুও গিয়ে পাশে বসলো,,,

আম্মু: আমার দিকে তাকা তো,,,

__আম্মুর দিকে তাকাতেই আম্মু আমার গাল দুটো তার হাতের মুঠে নিয়ে বলতে লাগলো,,,

আম্মু: শুভকে খুব ভালোবাসিস তাই না সোনা

আমি: না আম্মু তেমন নয়,,,

আম্মু: জানি আমি তোর চোখে স্পর্স্ট দেখা যাচ্ছে তুই শুভ কে কতটা ভালোবেসে ফেলছিস,,,,,

আম্মু কথা শুনে খুব শক্ত করে আম্মু কে জোরিয়ে ধরলাম!!!…

আমি: জানি না ভালোবাসি কিনা তবে তার মায়ার জালে আটকে গেছি!! উনার চোখের দিকে তাকালে যেনো পৃথিবীর সব কিছু ভুলে যায় আম্মু উনার মুখে একটা মায়া আছে যেটা বার বার আমায় তার কাছে নিয়ে যায় ( কাঁদো কাঁদো হয়ে)

আম্মু: পাগলি মেয়ে একদম কান্না নয়,,,,,,নতুন বিয়ে হয়েছে তার উপর হুট করে একটু সময় দে শুভকে আমার বিশ্বাস সব ঠিক হবে যাবে

আমি: কি করে বলবো তোমায় কাল থেকে লোকটা অদ্ভুত বিহেব করছে জানি না কেনো করছে আমার দোষটা কি ( মনে মনে)

আম্মু: আদিবা,,

আমি: হ্যাঁ আস্মু

আম্মু: একটু সময় দে শুভরে সব ঠিক হবে এতো ভাবিস না কেমন,,,,

আমি: হুমম আমিও চাই সব যেনো ঠিক থাকে,,,,

আম্মু: হুমম সব ঠিক হবে,,,,,

আমি আম্মুর বুকে মাথা রেখে সস্তিতে নিশ্বাস নিলাম,,,,,

পরের দিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখি শুভ রুমে নেই বেশ আবাক হলাম এত সকাল সকাল কই গেলো তাড়াহুরু করে ওয়াসরুমে সহ বেলকুনিতে খুঁজলাম পেলাম দৌড়ে নিচে নামতেই আহিরা সাথে ধাক্কা খেলাম,,,,

আমি: দেখো চলতে পারিস না ( রাগান্বিত হয়ে)

আহিরা: তুমিই তো তাড়াতাড়ি করে নামতে ছিলা,,,,

আমি: শুধু তর্ক সর,,,,

আহিরা: আজব তো,,,,আপুর আবার কি হলো,,,

__নিচে এসে দেখি শুভ আর সোহম কে টেবিলে বসিয়ে জমাই ভজন করানো হচ্ছে,,,,,

আম্মু: আদিবা ওখানে দাড়িয়ে কেন আয়,,,

আমি: হুমমম,,,,

আমায় দেখে শুভ বলে উঠলো,,,

শুভ: বিকালে অফিস থেকে ফেরার পথে এসে নিয়ে যাবো রেডি থাকবেন,,,,

আম্মু: সে কি আজই যাবে নাকি

শুভ: আম্মু বলে দিছে আজকেই যেনো ফিরে যায়,,,

আম্মু: কিন্তুু

আমি: আস্মু আবার আসবো মন খারাপ করো না,,,..

আম্মু: হুমমম,,,,

একটু পর শুভ চলে গেলো,,,,,,,

সারাটা দিন বেলকুনিতে বসে কাঁটিয়ে দিলাম,,,,,

সন্ধার দিকে শুভ এসে নিয়ে চলে আসলো,,,,,
রাত প্রায় ৯:৩০ বাঁজে রুমে বসে আছি তখনি রুমে মা আসলো,,,

মা: বউমা মন খারাপ নাকি,,,,

আমি: মা আপনি আসুন না ভিতরে

মা: হুমমম,,,,মন খারাপ নাকি বাসায় আসার পর একটা কথাও বলো নি তো তাই

আমি: না মা আসলে বাসার সবার জন্য মন খারাপ লাগছে

মা: পাগলি মেয়ে মন খারাপ করো না!!! কিছুদিন যাক শুভকে বলবো তোমায় নিয়ে ঘুরে আসতে কেমন

আমি: হুমমম,,,,মা একটা কথা জিগাঞ্জা করবো,,,,

মা: হ্যাঁ বলো,,,,

আমি: না মানে হঠাৎ করে আমি আপনাদের বাসায় বউ হয়ে আসলাম আপনি কি সত্যি আমায় নিজের বউমা হিসেবে মেনে নিতে পেরেছেন!!!

মা: আরে বউমা কি বলছো এসব

আমি: দেখুন মা আমি জানি হঠাৎ করে আপনাদের বউমা হয়ে আসলাম!!.. আমি এটাও জানি আমার থেকে ভালো মেয়ে আপনারা আপনার ছেলের জন্য পেতেন,,,,

মা: কিন্তুু আমার ছেলে তো তোমাকে বিয়ে করার জন্য পাগল ছিলো,,,,( গালে হাত দিয়ে)

হঠাৎ মা মুখে এমন কথা শুনার একদম প্রস্তুুত ছিলাম না,,,,,,

মা: সত্যি বলতে অনেক দিন আগে থেকে শুভ তোমার শশুড় মশাইয়ের কাছে তোমার সাথে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর প্রেশার দিচ্ছি কিন্তুু যখন তোমার শশুড়মশাই বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে গেলেন তখনি জানতে পারলো তোমার অন্য কোথাও বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তাই তিনি পিছুটান দিলো,,,কিন্তুু নিয়ত দেখো ঠিক তোমাদের এক করে দিলো,,,,

আমি আবাক হয়ে মা কথা গুলো শুনছি,,,,,যদি এমনটা হয় তাহলে উনি কেনো এমনটা করছে?

মা: কি হলো মনে হচ্ছে আবাক হলে,,

আমি: না মানে মা

মা: পাগলি মেয়ে এসব বাদ দাও,,,নতুন সংসার একটু তো গুছিয়ে নেওয়ার জন্য সময় লাগবে তবে টেনশন করো না আমি আছি আশা আছে চেষ্টা করবো তোমায় হেল্প করতে,,,,,তবে আমায় একটা কথা দিতে হবে আজ তোমায়,,,

আমি: হ্যাঁ মা বলুন,,,

মা: যায় হয়ে যাক না কেনো আমার ছেলেটাকে কখন কষ্ট দিও না ছেলেটা বড্ড ছেলে মানুষি,,,,

আমি: কথা দিচ্ছি মা আপনার ছেলেকে ভালো রাখবো,,,,

মা: লক্ষি মেয়ে দীর্ঘজীবি হও,,,,

আমি: হুমম দোয়া করবেন মা,,,

মা: অবশ্যয়,,,,

মা আমার হাতটা উপর হাত রেখে ভরসা দিলো,,,,,,,,,

আমি: জানি না কি কারনে আপনি আমার সাথে এমন ব্যবহার করছেন তবে আমিও আদিবা আজ নিজেই নিজে প্রতিজ্ঞা করলাম আমি আপনাকে আমার ভালোবাসা দিয়ে নিজের করে নিবো সকল বাঁধা পেরিয়ে আপনাকে আমার মায়া জালে আটকাবো ( মনে মনে)!!!!!………..

★★ এভাবে কেঁটে গেলো কিছুদিন,,,,
___আজ বাসায় ছোট করে আয়োজন করা হয়েছে আয়শাকে ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে,,,,,

মা: বউমা একটু রেস্ট নাও রহিমা তো আছে সামলে নিবে,,,

আমি: মা আপনি গিয়ে বসেন আর একটু হয়ে যাবে,,,,,

মা: পাগলি মেয়েটা কে আমার বোঝানোর ক্ষমতা নেই,,,

বাবাঃ যা বলেছো সেই সকাল থেকেই মেয়েটা খেঁটে যাচ্ছে তাও নাকি তার জন্য যে নাকি তাকে দুচোখে দেখতে পারে না,,,,,

আমি: বাবা প্লিজ আজ অনন্ত এভাবে বলো না,,,

বাবা: বলতে তো চাই না মুখে এসে যায়,,,,

শুভ: পাপা উনারা এসে গেছে,,,,

বাইরে দিকে তাকিয়ে দেখি ছেলে পক্ষ সবাই এসে গেছে,,,,,, সবাইকে বসতে দিলো রহিমা সবাইরে নাস্তা দিলো,,,,,,

একটু পর আয়শা একটা বেগুনি শাড়ি পড়ে হালকা সেঁজে নিচে আসলো আমি গিয়ে আয়শাকে নিয়ে ছেলেটার পাশে বসালাম,,,,,
ছেলে পক্ষে সবার আয়শাকে পছন্দ হলো,,,,, সবাই বিয়ের কথা নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো,,,,

একটু পর…..!

আন্টি: এইটা নিশ্চয় শুভর বউ

মা: হ্যাঁ ভাবি আমার বউমা,,,,

আন্টি: ভারি লক্ষী,,,,,

আমি গিয়ে আন্টিরে সালাম করতেই বুকে নিয়ে গালে হাত দিয়ে দোয়া করলো,,,,

সন্ধার দিকে সবাই চলে গেলো,,,,শুভ আর আমি রুমে যেতেই বাবা ডাক দিলো

বাবা:বিয়ে পর তো তোমাদের তেমন করে কোথাও যাওয়া হয়নি তাই তোদের না জানিয়ে পরশু দিন তোদের জন্য দুটো টিকিট কেঁটেছি আমরা চাই তোমরা দুজন আয়শার বিয়ের আগেই হানিমুনটা শেষ কর

আমি: হানিমুন ( কপাল ভাঁজ করে)

শুভ: ওয়াটটটট!!!

বাবা: এই নাও টিকিট,,,,,

শুভ: পাপা আমরা কোথাও যাচ্ছি না ওকে

বাবা: শুভ আমি বলছি তার মানে যাবে

শুভ: কিন্তুু পাপা,,,,

বাবা: শুভভভভ,,,,

শুভ রেগে হন হন করে উপরে চলে গেলো,,,,,,,

বাবা: নাও টিকিট দুটো,,,

আমি: হুম,,,

টিকিট দুটো হাতে নিতেই মা এসে বলতে লাগলো,,,

মা: অনেক দিন তো হলো এবার তো নাতিপুতির মুখ দেখবো নাকি বউমা এবার কিন্তুু ঘুরে আসার পর সুখবরটা চাই,,,,,,,

বাবা: একদম তাই বাঁচবো আর কইদিন বউমা এবার সুখবরটা চাই কিন্তুু,,,

__আমি বেশ লজ্জা পেয়ে দৌড়ে উপরে চলে আসলাম,,,,

মা: পাগলি একটাই,,,,,

বাবা: যা বলেছো,,,,

রুমে এসে দেখি শুভ বিছানায় মাথা নিচু করে বসে আছে গুটি গুটি পায়ে শুভর পাশে বসতেই শুভ আমার দিকে তাকালো,,,,,

শুভ: পাপাকে কাল বলবেন আমরা যাচ্ছি না হানিমুন,,,,,,

আমি: আমি তো যাচ্ছি ( মিটি মিটি হেসে)

শুভ: ওয়াট,,,,

আমি: প্লিজ চলেন না যায়,,,এই শুনেন না মা বলছিলো,,,

শুভ: কি বলছিলো শুনি,,, ( রেগে)

আমি: ইয়ে মানে নাতিপুতি দেখতে চাচ্ছে,,,,

আমার কথাটা শুনে শুভ এক লাফে বিছানা থেকে উঠে ফ্লোরে দাড়ালো,,,,

আমি: ভালো হবে না আমাদের একটা বেবি হলে কি বলেন ( লজ্জায় লাল হয়ে)

শুভ: বেবি না বেবি ( দাঁতে দাঁত চেপে)

আমি: হুমম বেবি ছোট ছোট দুটো হাত দুটো পা উফ কত কিউট এই শুনেন না আমরা বেবি নিবো,,,

শুভ কিছুক্ষন পাইচারি করতে লাগলো,,,,,,

আমি: প্লিজজজ শুভ

হঠাৎ শুভ আমার গালটা চেপে ধরে হাতটা মুচরে ধরলো

আমি: আহহহহহ! কি করছেন লাগছে তো,,,

শুভ: লাগছে তাই না,,,,,,

শুভর দিকে তাকিয়ে দেখি শরীর কাঁপছে চোখে রক্ত জমে গেছে ভিষন ভয় পেলাম,,,,

আমি: শুভ!!!… প্লিজ ছাড়েন ভুল হয়ে গেছে,,,,,

শুভ: ভুল তাই না,,,,

শুভ আমায় ছেড়ে দিয়ে জোরে ধাক্কা দিতেই সোঁজা টেবিলের উপর হামি দিয়ে পড়লাম শুভ গিয়ে হাতটা পিছন দিকে মুচরে ধরতেই ক্রুকরে উঠলাম,,,,

মাথাটা তুলতেই পাশে আয়নার দিকে তাকাতেই আবাক হলাম ঠোঁট কেঁটে রক্ত বের হচ্ছে শুভ সে দিকে কোন পাত্তা নেই,,,,

শুভ: তুই কেনো বুঝিস না আমি তোকে বিন্দু মাএও ভালোবাসি না,,,,,
আমি শুধু মাএ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তোকে বিয়ে করেছি “” শুধু প্রতিশোধ,,,,,

আমি: কিহহহ,,,,,

শুভ আমার হাত ছেড়ে শক্ত করে গাল চেঁপে ধরতেই ব্যাথায় কান্না করে দিলাম,,,,,,

(চলবে)