ভ্যাম্পেয়ার রাজ্য পর্ব-০১

0
597

#ভ্যাম্পেয়ার_রাজ্য
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা
#পর্বঃ সূচনা

রাতের অন্ধকারে জঙ্গলের ভেতর দুই ব্যক্তি বাতাসের বেগে ছুটে বেড়াচ্ছে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। কেউ একজন হতবাক হয়ে চেয়ে থাকে তাদের ছুটে যাওয়ার পানে। এতো রাতে এই নিশ্চুপ জঙ্গলে নিশ্চই কোনো জন্তু-জানোয়ার ছাড়া আর কেউ থাকবে না ভাবতেই লোকটার শরীর শিরশিরিয়ে উঠলো। ক্লাব থেকে মাতাল অবস্থায় বেরিয়ে ঢুলতে ঢুলতে এখানে ঢুকেছে কিন্তু এই ছুটন্ত কিছু একটা দেখে সে দাঁড়িয়ে পড়লো। বাতাসের বেগে কেউ ছুটছে। কে সে ? লোকটার হাত পা কাঁপা শুরু করে। তার জানা মতে জন্তু-জানোয়ারও এতো দ্রুত দৌঁড়ায় না। লোকটা কাঁপতে কাঁপতে পিছন ঘুরে দাঁড়ায়। তার সামনে দুজন ব্যাক্তি অবস্থান করছে। অন্ধকার রাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তাদের নীল দুই চোখ জোড়া আর দুইপাশে দুটো বড় বড় দাঁত। লোকটা এরকম অদ্ভুত প্রাণী দেখে চিৎকার করে উঠলো। দুই ব্যাক্তি লোকটার দুই পাশে, ঘাড়ে নিজেদের ধারালো দাঁত গুলো বসিয়ে দিলো। মুহূর্তের লোকটা চুপ হয়ে যায়। চোখ, মুখ উল্টিয়ে মাটিতে মৃত অবস্থায় পরে যায় কিছুক্ষণের মধ্যে।
দুজন ভ্যাম্পেয়ার মুখের রক্ত মুছে নেয়। একে অপরের দিকে তাকিয়ে সাধারণ রূপে ফিরে আসে। শুভ্র বাঁকা হাসলো।
” আজকের শিকারটা দরকার ছিলো।” শায়ান মুখ উল্টিয়ে বলে
” তবে এর রক্ত খুবই বাজে লাগছে আমার কাছে।”
শুভ্র বিরক্ত চাহনিতে তাকায়। শায়ান চুপ করে গেলেও মুখটা লটকিয়ে রাখে। বেচারার কাছে টেস্টটা খুবই খারাপ লেগেছে। শুভ্র গম্ভীর গলায় বললো
” তোর দৌঁড় প্রতিযোগীতা শেষ হলে এবার বাড়িতে চল!” শুভ্র কথা শেষ করেই বাতাসের বেগে চলে গেলো। শায়ানও ছুটে যায় গাড়ির কাছে।

ভ্যাম্পেয়ার রাজ্যে আজ খুশির বন্যা বসেছে। বাড়িতে নতুন মেহমান আসছে যে ! শুধু দুজন ব্যক্তির কানে এখনও এই কথা পৌঁছেনি। কোথায় আছে সেই দুই মহা ব্যক্তি কেউ জানে না আপাতত।
ভ্যাম্পেয়ার রাজ্যের কিং সিদ্ধার্থ হেল্ড তার কুইন দিদার হেল্ডকে খুবই আনন্দিত গলায় বললো
” আমাদের একমাত্র রাজকন্যার বড় মেয়ে আসছ। আমার কতোটা খুশি লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না তোমাকে কুইন।”
কুইন দিদার মুখ ভর্তি হাসি দিয়ে বললো
” খুশি আমারও কম হচ্ছে ? এতোবছর আমাদের মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। তাদের প্রাপ্য শাস্তির অবসান ঘটলেই তাদের দেখা পাবো ভেবেছিলাম কিন্তু এর আগেই যে আমাদের নাতনিকে দেখার সৌভাগ্য হবে তা তো কল্পনা করিনি আমি। একবার আসতে দাও আমাদের নাতনিকে তাকে ননির পুতুলের ন্যায় সাজিয়ে রাখবো।”
সিদ্ধার্থ হেল্ড আর দিদার হেল্ড কথা বলতে বলতে তাদের রুমের গেলো। রাজ্যের দুই ছেলে সৈকত হেল্ড আর সিদার হেল্ড বাড়ির সব কিছু দেখা শোনায় লেগে পরেছে আর তাদের স্ত্রীরাও তাদের কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়।
ভ্যাম্পেয়ার রাজ্যের কিং এর একমাত্র মেয়ে। যে কিনা সবার চোখের মণি ছিলো আজ তার মেয়ে আসছে ভাবতেই তাদের খুশির পরিমাণ আকাশ ছুঁই ছুঁই।

শুভ্র আর শায়ান বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই পা জোড়া থামিয়ে নেয়। শায়ান বাড়িতে চোখ বুলিয়ে অবাক হয়ে বললো
” বাড়ির এই হাল কেনো ? এটা আমাদের বাড়ি তো? নাকি ভুল বাড়িতে চলে এসেছি ?” শুভ্র ভ্রু কুঁচকে আশেপাশে তাকালো। শুভ্র নিজেও বাড়িটা চিনে উঠতে পারছে না।
শুভ্র আর শায়ানকে দেখে শুভ্রর মা রিনা এগিয়ে আসলো। রিনা কিছু বলার আগেই শুভ্র জিজ্ঞেস করে বসে
” আম্মু বাড়ির এই অবস্থা করেছে কে ? এটা দেখে তো মনে হচ্ছে না কোনো ভ্যাম্পেয়ার রাজ্য !” রিনা হাসি মুখে বললো
” বাড়িতে একজন স্পেশাল গেস্ট আসছে তাই এইসব কিছু। কিং আর কুইনের আদেশ। আমাদের পরিচয় যেনো কোনোভাবে প্রকাশ না পায়। তাই এসব কিছু।”
শুভ্র বিরক্তি নিয়ে সোফাতে বসে বললো
” কি এমন গেস্ট আসছে যে তার জন্য আমাদের পরিচয় লুকিয়ে রাখতে হবে ? আর আমাদের প্রত্যেকটা গেস্টের জন্য তো আমরা আমাদের গেস্ট হাউজের বাড়িটাই ইউজ করি তাহলে আজ এখানে কেনো?” শায়ান পাশে বসে সায় দিয়ে বললো
” হ্যা, বড়আম্মি শুভ্র তো ঠিকই বলেছে। আমার একদমই ভালো লাগছে না এই সাজ। চলো ওই বাড়িতে যাই।” রিনা গম্ভীর গলায় বললো
” দুজন ছোট ছোটর মতো থাকো। কখন কি আর কেনো করতে হবে সেটা আমরা বুঝে নেবো। আর কিং আর কুইন এর আদেশ অমান্য করার মতো সাহস নেই আর এর দরকার আছে বলে প্রয়োজনবোধ করছি না আমরা। তোমরা জাস্ট কয়েকদিন মানুষের মতো আচরণ করবে আর কিছুই করতে হবে না তোমাদের। আর ব্লাড ড্রিংক করা কয়েকদিনের জন্য বন্ধ এটাও বলা হয়েছে।”
রিনা তার কথা শেষ করে কাজে চলে যায়। শুভ্র আর শায়ান হ্যাং হয়ে বসে রয়েছে। ব্লাড পান না করে থাকতে হবে ? শুভ্র রেগে বোম হয়ে যায়। ব্লাড না পেয়ে গেস্টকেই না খেয়ে ফেলে তারা!

______________

সকালের কাজ শেষ করে প্রিশার রুমে আসলো শ্রেয়া। রুমের জানলা গুলোর পর্দা সরিয়ে দেয়। রোদের তির্যক প্রিশার চোখে মুখে উপচে পড়লেও প্রিশার ব্ল্যাংকেট দিয়ে মুখ ঢেকে ঘুমিয়ে পরে। শ্রেয়া আলতো হেসে প্রিশার কাছে গিয়ে ডাকলো
” প্রিশা ? প্রিশা তাড়াতাড়ি উঠো ! তোমার পাপা ডাকছে তোমাকে, প্রিশা !”
প্রিশা বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো। হাই দিতে দিতে মুখ তেতো করে বললো
” এতো সকালে কেউ ডাকে মাম্মি ? এখন আমার কলেজ বন্ধ জানো না ? আমাকে একটুও ঘুমাতে দাও না তুমি।” শ্রেয়া প্রিশাকে টেনে উঠাতে উঠাতে বললো
” তোমার সারাদিন পড়ে পড়ে ঘুমালেও ঘুম শেষ হবে না। তুমি যে আজ তোমাদের গ্রেন্ডমাদার এর বাড়িতে যাচ্ছো সেই কথা কি মনে আছে নাকি ভুলে বসে রয়েছো ?” প্রিশার চোখ বড়বড় হয়ে যায়। সে তো ভুলেই বসেছিলো আজ কোথাও যাচ্ছে যে। প্রিশা ছুটে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো।শ্রেয়া প্রিশার লাগেজ খুলে দেখতে থাকে সব কিছু ঠিকভাবে নিয়েছে কিনা। লাগেজ দেখতে দেখতে গতকালের ঘটনা ভাবতে থাকে।

গতকাল……..
বাইরে থেকে ফিরেই এক হাতে সোফার উপর ব্যাগ ছুড়ে রান্নাঘরে দৌঁড়ে গিয়ে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে জেদি স্বরে কিছুটা জোড়েই বলে উঠেছিলো
” মাম্মি আমি কালকেই আমার নানা, নানীর কাছে যেতে এবং তাদের সঙ্গে দেখা করতে চাই আমি।” মেয়ের আকস্মিক কথা কর্ণপাত হতেই শ্রেয়ার হাত থেকে পরিষ্কার করতে থাকা কাচের গ্লাসটা ফ্লোরে পড়ে মুহূর্তের মাঝে চূর্ণবিচূর্ণে পরিণত হলো।
শ্রেয়া ভাঙ্গা গ্লাসের দিকে একবার তাকিয়ে ঢোক গিলে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো
” কোথায় যাবে তুমি ?”
প্রিশা ভ্রু কুঁচকে একবার ভাঙা গ্লাসের দিকে তাকিয়ে পরমুহূর্তে বিরক্তের সঙ্গে বললো
” শুনতেই পাওনি তুমি ? আমি আমার গ্রেন্ডমাদার এর বাড়িতে যেতে চাই। মাম্মি আমি আগেই বলে রাখছি এবার কিন্তু তুমি আমাকে বাধা দিতে পারবে না। আমি যাচ্ছি মানে যাচ্ছি।”

শ্রেয়ার চোখে মুখে ভয়ের আশংকা দেখতে পাওয়া গেলো। শ্রেয়া তটস্থ পায়ে দ্রুত কিচেন পরিত্যাগ করলো। প্রিশা ভ্রু কুঁচকে মায়ের উদ্ভট আচরণ দেখতে থাকে। শ্রেয়ার চোখে মুখে ভয়ের চিহ্ন দেখতে পেয়ে প্রিশা কিছুটা চিন্তিত হয় এবং রাগান্বিত হলো।
শ্রেয়া লিভিং রুমের ল্যান্ডলাইন থেকে প্রান্ত রহমানের অফিসে ফোন লাগায়। কিছুক্ষণ পর রিসিভ হতেই শ্রেয়া উতলা কন্ঠে বলে উঠে
” কোথায় আপনি তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসুন।” প্রান্ত চিন্তিত হয়ে পরে কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করলো না। শুধু উত্তরে বললো
” ঠিকাছে আসছি।”

নওমি তার আপুর রুমে ঢুকে চোখ বুলালো। প্রিশাকে দেখতে না পেলেও বেডের উপরে প্রিশার ব্যাগটা দেখে পাঁচ বছরের নওমি বেডের উপর উঠে ব্যাগ হাতরে প্রিশার ফোনটা বের করলো। নিজের হাতে থাকা ফোন পাশে রেখে নওমি প্রিশার ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এরমাঝে ওয়াসরুম থেকে প্রিশা বের হয় কিন্তু নওমির খেয়ালও নেই। প্রিশা নওমিকে দেখে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো তার সামনে তারপর রাগি গলায় বললো
” তুই আবারও আমার ফোন ধরেছিস ? তোকে না আমার ফোন ধরতে নিষেধ করেছি ? নিজের ফোন রেখে আমারটায় কেনো হাত দিস ?”
নওমি ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো
” আই ডোন্ট লাইক দিজ ফোন। আই লাভ ইউর ফোন ” প্রিশা মুখটা কুঁচকে পানসে করে বললো
” আমার ফোনে আছেটা কি ? যাই হোক শোন বোনু, আম্মুর কাছে গিয়ে বায়না করে বলবি আমরা কালকে গ্রেন্ডমাদার এর বাড়িতে যাবো আর বলবি আপি যাওয়ার জন্য প্যাকিং শুরু করে দিয়েছে ওকে ?”

নওমি মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো আপুর কথায়। নওমি ফোন রেখে দৌঁড়ে মায়ের রুমে ছুটে যায়।
মায়ের হাত ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বললো
” মাম্মি উই ওয়ান্ট টু মিট আওয়ার গ্রেন্ডমাদার এন্ড আপি প্যাকিং হার লাগেজ টু গো দেয়ার।”
শ্রেয়া চোখ বড়বড় করে তাকালো মেয়ের দিকে। নওমি ভাবলো মা তাকে এখন রাম ধোলাই দেবে বাংলায় কথা না বলার জন্য তাই কিছুটা ভয় পেলো।
কিন্তু শ্রেয়া কিছু না বলেই চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায়। নওমি মায়ের পাশে বসে বসে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

কিছুক্ষণ সময় যাওয়ার পর কলিংবেলের শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। শ্রেয়ার আগেই নওমি দৌঁড়ে যায় দরজার কাছে। যদিও খুলতে পারবে না ডোর কিন্তু দাঁড়িয়ে রইলো কে এসেছে দেখার জন্য। শ্রেয়া দরজা খুললে বাবাকে দেখতে পেয়ে নওমি খুশিতে পাড়লে লাফিয়ে বাবার গলায় উঠে পড়ে। প্রান্ত হেসে মেয়েকে কোলে নিয়ে ভেতরে আসলো। শ্রেয়া প্রান্তর উদ্দেশ্যে বললো
” তাড়াতাড়ি রুমে আসুন।” প্রান্ত মেয়েকে চকলেট দিয়ে বললো
” যাও বেবি আপুর কাছে যাও। আমরা এক সঙ্গে লাঞ্চ করবো।” নওমি মাথা নেড়ে প্রিশার রুমে ছুটে গেলো।

রুমে এসে এসির বাতাসে বসতেই শ্রেয়া আতংকিত গলায় বললো
” আপনার মেয়েকে এবার সামলানো মুশকিল হয়ে পরছে। প্রিশা আমার মা,বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য উতলা হয়ে গিয়েছে। প্যাকিং ও শুরু করে দিয়েছে।”
প্রান্ত পানি পান করছিলো কিন্তু উক্ত কথাটা শুনে গলায় পানি আটকে গেলো। প্রান্ত কোনো রকমে পানি গিলে জিজ্ঞেস করলো
” তুমি কিছু বলেছো মেয়েকে ?”

শ্রেয়া দু প্রান্তে মাথা নেড়ে না জানালো। প্রান্ত শান্ত গলায় বললো
” তাহলে যেতে দাও। তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করো। কতো বছর আর সব লুকিয়ে রাখবে ?”
শ্রেয়া হতাশ গলায় বললো
” সব কিছু জেনে বুঝেও এই কথা বলছো ? তুমি জানো তো সেখানে গেলে প্রিশার সাথে অনেক কিছুই হতে পারে। সেটা কোনো সাধারণ রাজ্য না সেটা একটা ভ্যাম্পেয়ার রাজ্য। আর আমাদের সব সত্য প্রিশা জেনে গেলে কি হবে আমরা কেউ জানি না। তারমধ্যে সব বড় ক্ষতিকর দিক হচ্ছে জন্মের পর থেকে প্রিশার হার্ট দুর্বল। সব জানার পর আমার মেয়ের কিছু হয়ে গেলে?”

প্রান্ত দীর্ঘনিশ্বাস নিয়ে শ্রেয়ার দিকে ঘুরে বসে শ্রেয়ার হাত জোড়া নুজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো
” ৩মাস পর আমাদের মেয়ের ১৮ বছর পূর্ণ হবে তখন সবকিছু পরিবর্তন হবে। প্রিশা নিজেই সব জানতে পারবে। তখন নিজে জানতে পেরে কষ্টও পেতে পারে তারচেয়ে ধীরে ধীরে এখন থেকে জানতে পারা ভালো। আর তোমার বাড়ির সবাই ভ্যাম্পেয়ার কিন্তু তাদের রাজ্যের রাজকন্যার অংশকে কিছু হতে দেবে সেটা আমরা ভালো করেই জানি। তুমি যোগাযোগ করো তাদের সাথে। এতোবছর সব লুকিয়ে রেখেছি আমরা কিন্তু আর লুকাবো না। এবার প্রিশাকে সত্যের দিকে ঠেলে দেবো।” শ্রেয়া কিছু না বলে শুধু নিশ্বাস ফেললো।

লাঞ্চ টাইম হতেই সবাই টেবিলে এসে বসে। প্রান্ত খাবার খেতে খেতে বড় মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো
” প্রিশা কি শুনলাম ? তুমি নাকি তোমার গ্রেন্ডমাদার এর কাছে যেতে চাইছো ?” প্রিশা মুখ গোমড়া করে বললো
” হ্যা পাপা আমি এবার যাবোই যাবো। প্রত্যেক summer vocation আমি নানা,নানির কাছে যেতে চাই কিন্তু তোমরা আমাকে বাংলাদেশে দাদা আর দাদিমনির কাছে নিয়ে যাও। এবার যদি আমাকে যেতে না দেওয়া হয় তাহলে আমি পালিয়ে যাবো কয়েকদিন আগের মতো।”
শ্রেয়া আর প্রান্ত একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। দুজনেরই জানা প্রিশা কতোটা জেদি। গম্ভীর, শান্ত স্বভাবের হলেও জেদটা মাঝে মাঝে তাকে বিগড়ে দিতে ওস্তাদ। কয়েকদিন আগেও তাকে কলেজের ট্যুরে যেতে না দেওয়ায় বাড়িতে কাউকে না জানিয়ে লন্ডনের কোনো এক জায়গায় ঘাপটি মেরে বসেছিলো। তারপর কয়েকদিন কেটে যেতেই নিজেই ফিরে আসে প্রিশা। কোনো ক্ষতি না হলেও তাদের চিন্তায় আধমরা বানিয়ে ফেলে বারবার।
প্রান্ত মুখে হাসি নিয়ে বললো
” এবার তোমাকে বাধা দেবো না আমরা।”

প্রিশার চোখ মুখ জ্বলজ্বল করে উঠে। খুশি হয়ে বললো
” রিয়েলি পাপা ? থ্যাংক ইউ সো মাচ। লাভ ইউ পাপা।” প্রান্ত মুচকি হাসি দিলো।
নওমি খেতে খেতে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো
” আই অলসো ওয়ান্ট টু গো উইথ আপি।” শ্রেয়া চোখ রাঙিয়ে বললো
” কোথাও যাওয়া হবে না তোমার। কথায় কথায় ইংলিশ বলো কেনো ? লন্ডন থাকো বলে কি ইংলিশই বলতে হবে সবসময় ? বাসায় থাকলে বাংলায় কথা বলতে হবে কতোবার শেখাবো ?”
নওমি মন খারাপ করে বললো
” বাট আই ক্যান্ট স্পিক বাংলা প্রোপারলি। পাপা ! প্লিজ টেল সামথিং।” প্রিশা আহ্লাদী হয়ে বোনকে একহাতে জড়িয়ে নেয় পাশের চেয়ার থেকেই। প্রান্ত আলতো হেসে শ্রেয়ার উদ্দেশ্যে বললো
” ছাড়ো না ! যেভাবে পারবে সেভাবেই তো কথা বলবে।” শ্রেয়া মুখ বাকিয়ে খেতে থাকে। প্রান্ত শ্রেয়াকে দেখে হাসলো। লাঞ্চ করে প্রান্ত আবারও অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

প্রান্ত রহমান এবং তার স্ত্রী শ্রেয়া। প্রিশা তাদের বড় মেয়ে, নওমি তাদের ছোট মেয়ে। লন্ডনের এক বাড়িতেই এই চার সদস্যের বসবাস। প্রান্ত একটা অফিসের ম্যানেজার পদে চাকরি করছে আর শ্রেয়া ভার্সিটির প্রফেসর। প্রিশা কলেজের স্টুডেন্ট।
রাত হতেই প্রিশা তার সব ড্রেস বের করে প্যাকিং করায় ব্যস্ত আর নওমি বসে বসে প্রিশার ফোন ঘাটছে যদিও তার খুবই মন খারাপ। এই চার সদস্যের মধ্যে নওমি বাংলা ভাষায় কথা বলায় একদমই কাঁচা। সে বাংলা বুঝতে পারলেও বাংলা একদমই বলতে পারে না। আপি চলে যাবে বলে তার এখন মন খারাপ।

শ্রেয়া ভাবনার ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে প্রিশার ওয়াসরুমের দরজা খোলার শব্দে। প্রিশা উল্টো পাল্টা দৌঁড় লাগায় পাপার কাছে যাওয়ার জন্য।
প্রিশা পাপাকে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে বসে নিউজ পেপার পড়তে দেখে আর পাশে নওমি বসে বসে খাচ্ছে। সামনের চেয়ারে বসে ব্রেকফাস্ট খাওয়া শুরু করে বললো
” পাপা আমাকে কখন নিয়ে যাবে ? আচ্ছা গ্রেন্ডমাদার এর বাড়ি কোথায় ?”
প্রান্ত নিউজ পেপার হাত থেকে রাখে প্রিশার দিকে তাকিয়ে বললো
” গেলেই দেখতে পারবে। আর তোমাকে আমি নিয়ে যাচ্ছি না। তোমার গ্রেন্ডমাদার গাড়ি পাঠাবে সেই গাড়িতে যাচ্ছো তুমি।” প্রিশা খেতে খেতে বললো
” কিন্তু সে যদি আমাকে ভুল রাস্তায় নিয়ে যায় তখন কি হবে ? তাই বলছি তোমরাও আমার সাথে চলো।” প্রান্ত আর নওমি একে অপরের দিকে তাকালো। নওমি কিটকিট করে হেসে দেয়। প্রান্ত চিন্তিত হয়ে বললো
” ড্রাইভার তোমাকে ভুল রাস্তায় নিয়ে যাবে না। আমার তো ভয় হয় তুমি যদি ড্রাইভারকে ভুল রাস্তায় নিয়ে যাও ?” প্রিশা মুখ ফুলিয়ে তাকালো। শ্রেয়া প্রান্তর পাশে বসে কনুই দিয়ে গুঁতো দিয়ে কিছু ইশারা করলো। প্রিশা দেখেও কিছু বললো না। প্রান্ত সিরিয়াস হয়ে প্রিশার উদ্দেশ্যে শান্ত গলায় বলে
” মামনি কিছু কথা মনে রাখবে।
সেখানে গিয়ে অনেক কিছুর মুখোমুখি হতে পারো তুমি। কিন্তু যাই হয়ে যাক না কেনো ভয় পাবে না। নিজেকে শক্ত রাখবে। আর কাউকে ভুল বুঝবে না। যতোদ্রুত সম্ভব ফিরে আসবে। আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। তোমার গ্রেন্ডমাদার এর বাড়িতে অনেক মানুষ রয়েছে। সবার সাথে মিলেমিশে সভ্যতার সঙ্গে থাকবে।
আর সেখানে গিয়ে তুমি নিজের রুমে বসেই আমাদের সাথে কন্টাক্ট করতে পারবে অন্য কোথাও নয়।”
প্রিশা অবাক হয় কিছুটা প্রান্তর কথা শুনে। তাও কিছু জিজ্ঞেস না করে শুধু সায় জানায়।

চলবে………..