মজিলো_প্রেম_সখার_সনে পর্ব-০৫

0
189

#মজিলো_প্রেম_সখার_সনে_০৫

গোধূলি বিকাল গুমোট পরিবেশ। রাস্তার ছেলেগুলো মাঠে ক্রিকেট খেলছে। ফিহারা এই বাড়িতে আসার দুইসপ্তাহ হয়ে গেছে। এরমধ্যে ফিহা জেনে গেছে। কেনো দাদু তার পিতা মাতার বিয়েটা মেনে নেয়নাই। ফিহার নানুভাইরা ছিলো বাংলাদেশি। কিন্তু বাংলাদেশ পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ফিহার নানুভাই পাকিস্তানের রা’জা’কার দের সাহায্য করেছিলেন। নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য এরুপ করেছিলেন। কিন্তু এটা তো দেশের সঙ্গে প্রতারণা। এরজন্য যুদ্ধের পর পরেই পাকিস্তান গমন করেছিলেন। ফিহার নানুভাই তার বাবা নিজ স্ত্রী এবং ফিহার আম্মাকে নিয়ে। দাদুভাই জানতে পারে তার ছোটছেলে রা’জা’কারের মেয়েকে বিয়ে করছে। এরজন্য মূলত বিয়েটা মেনে নেয়নি। আম্মাকে ডিভোর্স দিতে বলেছিলো দাদুভাই। কিন্তু বাবা দেয়নাই। কারণ বাবা খুব ভালোবাসে আম্মাকে। দাদু ভাইয়ের অবাধ্য ছেলে হওয়ার জন্য দাদুভাই তেজ্যপুত্র করেছিলো। বাবা সেই ক্ষোভ থেকে আমাকে দাদু বাড়ির বিষয়ে কিছু বলে নাই এতদিন । আম্মাকে কিছুই বলতে দেয়নাই। এতদিন থেকে আমাকে এভাবে মিথ্যার আড়ালে রেখেছিলো। সত্যিটা জেনে কষ্ট পাবো বলে।

ফিহা কথাগুলো ভাবতে ভাবতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। টুল থেকে উঠে ছাদের রেলিং ধরে দাড়ায়। এমন সময় একটি বল উড়ে আসে ছাঁদে ফিহার গানের নিচের চিফে আলতো লেগে পড়ে যায়। ফিহা আউচ বলে চিৎকার দেয়। এরপরে ছাঁদথেকে বলটি উঠিয়ে ছেলেগুলোকে বলে কার এত বড় সাহস আমাকে বল মেরেছে।

পাড়ার ছেলেগুলো রাস্তায় একদিকে সবাই দাড়িয়ে বলে আফা বলটা দেন। আর কখনো হবেনা।

ফিহা দাঁতের চোয়াল শক্ত করে বলে এই বলটি কে মেরেছে তাকে ছাঁদে পাঠাও। এতো বড় সাহস কার ফিহার শরীরে বল দিয়ে আঘাত করে। পিছন থেকে ছেলেটি মুখ ঘুড়িয়ে বলে আমি মেরেছি। সবুজ কালারের টিশার্ট, পড়নের জার্সি, হাতে ফিতা ঘড়ি, চোখে কালো সানগ্লাস। ছেলেটি ফিহাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। ছোটদের বলে এই শাফখাতদের বাসায় এই পরীটা কে রে? আমিতো এতক্ষণ মনে করেছিলাম ওই বি’চ্ছু ডিলনাসিন মনে হয়। তাই লুকিয়ে ছিলাম। ছোট বাচ্চাগুলো বললো এইটা শাফখাত ভাইয়ের ছোট চাচ্চুর মেয়ে পাকিস্তান থেকে এসেছে। ওয়াও পাকিস্তানি পরী বাংলাদেশে। তোদের বল লাগবে তাইনা। আমি নিয়ে আসতেছি।

ফিহা বাচ্চাগুলোকে বলে লাগবেনা তোদের দেখি কে দেয় বল। এইটা কি খেলার জায়গা বে’য়া’দপ গুলো যা এখান থেকে। ফিহা আবারো টুলে বসে পড়ে বীরবীর করে বলা শুরু করে আস্ত জ’ল্লা’দের মতো ছেলে একটা সে নাকি পাড়ার বাচ্চাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে। ব্যা’ডা খালি হাতে পায়ে লম্বা হয়েছে। বুদ্ধি হাটুর নিচেই রয়ে গেছে।

ডিলনাসিন এমন সময় ছাঁদে এসে বলে আপু তুমি এখানে। রুমে খুঁজলাম পেলাম না তাই ছাঁদে আসলাম।

তোর কোনো দরকার আছে যে, আমাকে খুঁজতেছিস?

আরে না আপু আমি ছাঁদে আসবো সঙ্গী পাচ্ছিলাম না বলে তোমাকে খুঁজা। কি ব্যাপার তোমার হাতে বল কেনো? মুখটার শ্রী এরকম করছো ক্যানো?

করছি কি আর স্বাদে এক ব্যাডা___

এক্সকিউজ মি। আমাকে ক্ষমা করবেন আসলে বলটা ভেবে মা’রি নাই। আমি যদি জানতাম এইখানে পরী রয়েছে কখনো বল মারতাম না। এটা বাচ্চাদের বলটা দিন নাহলে ওরা কেঁদে দিবে।

ডিলনাসিন ক্রাসকে সামনে থেকে দেখে উৎফুল্লতা নিয়ে বলে কোনো সমস্যা নাই বল তো। এই আপু লিটন কে বলটা দিয়ে দাও?

ডিলনাসিনের এমন কথা শুনে বেশখানিকটা বিস্মিত হয় ফিহা। মনে মনে বলে এই মেয়ের মাথা ঠিক আছে তো। এতো বড় ছেলের নাম ধরে ডাকছে? উল্টো ছেলেটাকে না শাসিয়ে আমাকে বল দিতে বলছে। পাগল হলো নাকি?

ম্যাডাম ক্ষমা তো চেয়েছি বলডা দিন। বাচ্চারা খেলবে।

ডিলনাসিন ফিহার হাত থেকে বলডা বাজপাখির মতো ছো দিয়ে লিটনের হাতে দিয়ে বলে, চা / কফি খাবে লিটন?

লিটন বলটা হাতে পেয়ে ডিলনাসিন কে বলে আমার কিচ্ছু লাগবে না। লিটন বামহাতের আঙুল দিয়ে নিজের চুলগুলো ঠিক করে সানগ্লাস টা খুলে বলে আবার দেখা হবে পরী। আমি আসি। এই বলে লিটন শিষ দিয়ে চলে যায়।

ডিলনাসিন ফিহাকে জড়িয়ে ধরে বলে আমার জীবন সার্থক আপু। সবটা হলো তোমার জন্য লিটনের আঙুলের স্পর্শ লেগেছে আমার তর্জনী আঙুলে। ফিহা খানিকটা বিরক্ত হয়ে ডিলনাসিন কে বললো এসব কি পাগলামো ডিলনাসিন? ছেলেটাকে তুই চিনিস এভাবে বলটা দিয়ে দিলি? জানিস অল্পের জন্য আমার গানের লতিটা ছিঁড়ে যায় নাই। আমিতো ছেলেটাকে ব’কা দিতাম। কিন্তু তোর ব্যবহারে আমি কিছু বলতে পারলাম না। আমাকে পরী বলা। ছেলেটাকে তুই জিনিস!

কি বলছো আপু চিনবো না ক্যান? আমার ক্রাসতো সে। পাশের ফ্ল্যাট টা দেখছো না । সে সেখানেই থাকে। শাফখাত ভাইয়ার বন্ধু। আমাদের বাড়িতে আগে রোজ রোজ আসতো। কিন্তু আমি যেদিন থেকে তাকে প্রপোজ করেছি আর আসেনা। আমাকে একটুয়ো ভালোবাসলো না সে।

ডিলনাসিনের কথা শুনে ফিহা বিহ্বল দৃষ্টি করে। তোর মাথা ঠিক আছে ছেলেটা একটা তালগাছ আর তুই কচুগাছ। তোদের একসঙ্গে যায়। ওর হাঁটুর বয়স তোর না। মানুষ শুনলে হাসবে। আমাকেই বলছিস আর না যেনো কাউকে না বলিস? ছেলেটা যদি আমাদের বাড়ির কাউকে বলে দেয় তোর কি হবে? একবারো ভেবে দেখেছিস? আর ১৬ বছর বয়সে মনে প্রেম জন্মায় কি করে? তাও আবার তালগাছের সঙ্গে।

আপু তুমিতো কাউকে ভালোবাসো না তাই ভালোবাসা জিনিসটা কি তুমি বুঝবে না? ভালোবাসায় বয়স কোনো বাধা মানেনা।

ডিলনাসিনের কথায় ফিহা রেগে যায়। দেখ ডিল আর কখনো এই ভালোবাসার কথা বলবি না তাহলে আমি বড়আব্বুকে সব বলে দিবো।

না আপু বাবা বা বাড়ির কাউকে বলিয়ো না। তাহলে আমাকে কচুকাটা করবে।
” মনে থাকে যেনো! ”

( ★ )

ফিরোজ নিজের রুমে কাজ করছিলো। গভীর মনোযোগ দিয়ে এমন সময় করিডোর দিয়ে পিটপিট পায়ে হেটে দরজায় নক করে। কে ভিতরে আসো? শাফখাত ভিতরে এসে বলে ভাইয়া তুমি কি ব্যাস্ত আছো? না, কিছু বলবি। জ্বি ভাইয়া। ফিরোজ নিজের ল্যাপটপ টা বন্ধ করে চেয়ার থেকে উঠে শাফখাতকে বলে, বল কি বলবি?

ভাইয়া তুমি আমার ভাই হওয়া সত্ত্বেও আমি কেনো তিহার কাছে বিষয়টা গোপন করেছি। তিহা আমাকে এই বিষয় নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো। আমি বিষয়টা এড়ানোর চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হয়েছি। এরপরে তিহাকে বলি তুমি আমাকে পরিচয় দিতে নিষেধ করছো? তিহা আবার এই কথা ফিহাকে বলে দিছে। ফিহা আজকে দুপুরবেলায় আমাকে ধরেছিলো। আমি বলেছি আমি কিছু জানিনা। আমাকে তুমি গোপন রাখতে বলেছো বলে গোপন রেখেছি। আমাকে এবার বলো তো কেনো তুমি তোমার পরিচয় গোপন রেখেছিলে?

শাফখাত তুই আমার দুই বছরের ছোট। সো আমাকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারিস, কিন্তু উত্তর টা হবে আমার ইচ্ছেয়। আমি এই বিষয় নিয়ে তোকে কিছু বলতে চাইনা। আর কোনো প্রশ্ন আছে তোর।

শাফখাত খানিকটা রেগে যায় ফিরোজের উপর। এরপরে মনে মনে বলে বেশি বাড়াবাড়ি করা যাবেনা। কারণ ফিরোজ সব জানে তিহা আর আমার সম্পর্কের ব্যাপারে বাড়িতে সব বলে দিলে আমার বিপদ বেড়ে যাবে। এই ভয়ে শাফখাত আর কিছু বলেনা।

শাফখাতকে চুপ থাকতে দেখে ফিরোজ শাফখাতের কাঁধ ধরে বলে চল খেয়ে আসি সবাই অপেক্ষা করছে।

( ★ )

স্যার আমি আপনার সঙ্গে ভার্সিটি যাবোনা। আগে যেভাবে রিকশা করে ভার্সিটি যেতাম ওইভাবেই যাবো। রিকশা করে ভার্সিটি যাওয়ার মজা আলাদা। যা গাড়িতে করে যেয়ে পাইনা। ফিহার এরুপ কথায় রেগে যায় ফিরোজ। এরপরে বলে খান বংশের মেয়েরা কখনো রিকশা দিয়ে পথ চলেনা। আগে কি করছো ভূলে যাও। এখন থেকে এই নিয়ম। দেখোনা ডিলনাসিন, পারিজাতকে প্রতিদিন কলেজে দিয়ে আসে শাফখাত। আবার নিয়েও আসে। তাছাড়া তুমি এমপির ভাতিজি হয়ে রিকশাতে চড়বে তোমার সম্মান কমে যাবেনা?

স্যার আগেতো এভাবে যেতাম। আমি এভাবেই পথ চলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আপনার সঙ্গে গেলে আমার বান্ধবীরা কটু কথা বলে।

তোমার কোন বান্ধবী কি বলে আমাকে একবার বলে দেখো। দেখি কার সাহস ফিহাকে নিয়ে কমেন্ট করে। জোড় করে ফিহাকে গাড়িতে তুলে ভার্সিটি রওনা হয় ফিরোজ। কি হলো ফিহা আজকে কিছু বলছো না কেনো? বলোনা তোমার কোন বান্ধবী কম্পপিলিমেন্ট রাখে আমার গাড়িতে গেলে।

শুধু কি বান্ধবীরাই রাখে। ভার্সিটির সব মেয়ের ক্রাস আপনি। ক্রাসের সঙ্গে একটা মেয়ে যাতায়াত করলে মানুষ নানান কথা বলবে স্বাভাবিক।

সবার ক্রাস আর কই হতে পারলাম। একজনের কাছে তো আমি এখনো ধলাবিলাই ছাড়া কিছু হতে পারলাম না। ফিহাকে চোখ মারে ফিরোজ।

ফিহা ফিরোজের চোখ মারা দেখে ভয়ে গুটিয়ে যায় নিমিষেই। মনে মনে বলে এই ধলাবিলাইয়ের মনে আসলে কি চলছে। সে আমাকে কি শুধুই বোন ভাবে নাকি অন্যকিছু। দিনদিন আচরণ গুলো কেমন জানি সন্দেহজনক।

ফিহা নামো ভার্সিটি চলে এসেছি। এই ফিহা কোন ভাবনার জগতে বিলীন হলে কথা শুনতে পাচ্ছোনা। ভার্সিটি চলে এসেছি। ফিরোজের এমন কথায় তড়িঘড়ি করে বলে ভার্সিটি চলে আসলাম। বলেই গাড়ি থেকে তড়িঘড়ি নেমে ক্যাম্পাসে পা ফেলে ফিহা।

চলবে,,,

®️রিয়া জান্নাত