মনের আড়ালে পর্ব-১০

0
1396

#মনের_আড়ালে
Part_10
লেখনীতে – #Nusrat_Hossain

—- তুমি রিশার সাথে মিট করোনি অভিক ?

—– ঐ মেয়ে আসেনি আম্মু অভিক মিথ্যে বলল । ও তো দেখা করতে-ই যায়নি
রিশা মেয়েটার সাথে।

রাফিয়া বেগম ছেলেকে আর কিছু বললেন না বের হয়ে গেলেন ছেলের রুম থেকে ।

মা যাওয়ার পর অভিক ফোন হাতে নিয়ে ইশমির নাম্বারে কল করল কিন্তু ইশমি ফোন রিসিভ করল না ।সে আরো কয়েকবার কল করল কিন্তু ফোন রিসিভ হল না উল্টো তার নাম্বারে ব্লক করে দিল ।সে ইশমির আইডিতে মেসেজ করতে থাকল ফেইসবুক থেকেও ইশমি তাকে ব্লক করে দিল ।সে ইশমির হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ করল সেখানেও ইশমি সাথে সাথে তাকে ব্লক করে দিল ।সে আরো উম্মাদ হয়ে গেল যেন ! উদ্ভ্রান্তের মত ফোন থেকে গ্রামীন সিম টা বের করে রবি সিম ভরল তারপর এই নাম্বার থেকে ইশমিকে ফোন করতে থাকল দেখা যায় এই নাম্বারেও তাকে ইশমি ব্লক করে দিল ।সে একবার ভাবল এক্ষুণি সে ইশমির বাড়ির সামনে যাবে পরোক্ষণে ভাবল রাতটা পার হোক তারপর যাবে ।সারারাত অভিক দু চোখের পাতা এক করতে পারল না এক প্রকার রাতটা তার উশখুশ করতে করতেই চলে গেল ।সকালে কোনো রকম আলো ফুটতেই সে বের হয়ে গেল গাড়ি নিয়ে ইশমিদের বাড়ির উদ্দেশ্য ।অভিক বুঝতে পারছে সে কালকে ঠিক কত বড় ভুল করে ফেলেছে তাকে হয়ত এরজন্য অনেক বড় মাশুল দিতে হবে ।ইশমিকে হারিয়ে ফেলবে না তো ? কিভাবে পারবে সে ইশমিকে না দেখে থাকতে ? সে বাঁচতে পারবে না ইশমিকে ছাড়া ।এই জীবনে সে মন প্রান উজার করে শুধু একজনকেই ভালোবাসে আর এই একজনকে ছাড়া বাঁচা অসম্ভব ।কালকে যখন ইশমিকে একটা ছেলের সাথে বসে থাকতে দেখল তখন তার মাথায় শুধু একটা ভাবনা-ই এসেছে ইশমি এই ছেলেটাকে ভালোবাসে ।তাই হয়ত তাকে বারবার রিজেক্ট করে দিচ্ছে আর সে ঠিক ভুল যাচাই না করেই ইশমির গলা চেঁপে ধরল এখন সে বুঝতে পারছে রাগে ক্ষোভে কত বড় ভুল করে ফেলেছে ।সে তো আগে এমন ছিল না একটা পিঁপড়াকেও তো সে কোনোদিন ব্যাথা দেয়নি তাহলে সে দিনদিন কেন উম্মাদ হয়ে যাচ্ছে নিজেকেই নিজে মনে ধিক্কার জানাল।সে দরকার পরলে নিজের চিকিৎসা করাবে তারপরও ইশমিকে তার লাইফ থেকে হারাতে দিবে না এসব ভাবতে ভাবতেই অভিক ইশমিদের বাড়ির সামনে পৌঁছে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল রাস্তার পাশে ।ততক্ষণে সকাল হয়ে গেছে লোকজন বের হতে শুরু করে দিয়েছে ।বেলা যত হচ্ছে মানুষের চলাচল ও তত বাড়ছে ।কেউ কেউ কেউ তার দিকে ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে থেকে আবার নিজেদের কাজে মন দিচ্ছে ।সকাল গড়িয়ে বিকেল হতে শুরু করল সে ইশমির ছায়াটা পর্যন্ত দেখতে পেল না ।এমনকি ইশমির পরিবারের অন্য কাউকে পর্যন্ত দেখতে দেখতে পেল না ।সে আর না পেরে ইশমিদের বাড়ির দরজার সামনে গিয়ে কলিংবেল বাজাল ।কেউ দরজা খুলল না ।সে আরো কয়েকবার কলিংবেল বাজাল ।কিছুক্ষণ পর ইশমির বাবা এসে দরজা খুলে দিল ।
সে ইশমির বাবাকে দেখে বলে উঠল

আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল ।ইশমিকে একটু ডেকে দিন ।

আয়নাল হোসেন অভিকের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল ইশমি বাড়ি নেই আপনি এখন আসতে পারেন বলেই দরজা টা আটকিয়ে দিতে চাইল কিন্তু অভিক দরজা ধরে ফেলল আর বলল

প্লিজ আঙ্কেল আমায় একবার ইশমির সাথে দেখা করিয়ে দিন আমি আপনার পায়ে পরছি ।

আয়নাল হোসেন বিরক্ত হয়ে রাগীকন্ঠে বললেন বললাম তো ইশমি নেই আপনি এখন যান দয়া করে আমার বাড়ি থেকে বলেই দরজাটা ঠাস করে অভিকের মুখের উপর লাগিয়ে দিল ।অভিকের চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে ।সে নিজের ঠোট দুটো চেঁপে আবার আগের জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে রইল ।এত অসহায় সে আজ পর্যন্ত জীবনেও হয়নি ।প্রেম এত কেন পোড়ায় ? আগে জানলে সে ঐ বর্ষনের দিনটায় কোনো দিনও নিজে আগবাড়িয়ে ইশমিকে নিজের গাড়ি দিয়ে বাসায় পৌঁছিয়ে দিতে চাইত না ।তাহলে কারো প্রেমে পড়ার মত জগন্য ভুল হয়ত তাকে দিয়ে হত না ।বিকাল গড়িয়ে রাত হতে চলল অভিক এখনো থম মেরে ইশমির বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে আছে ।একমনে ইশমির বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে ।বাহির থেকে তাকে শান্ত দেখালেও ভিতরটা তার চিৎকার করে কাঁদছে ।একবার সে পকেট থেকে ফোন টা বের করে ইশমির নাম্বারে কল করল কিন্তু কোনো লাভ হল না নাম্বার এখোনো ব্লক করা ।তার মা বাবা প্রত্যেকে অনবরত তাকে কল দিয়েই যাচ্ছে সে রিসিভ করল না ফোনটা বন্ধ করে রাখল ।রাত গভীর হচ্ছে ।সে গাড়ির ভেতর ঢুকে বসে রইল আর অপেক্ষা করতে লাগল সকাল হওয়ার ।কিন্তু রাত যেনো ফুরুচ্ছে না তার ।চারদিকে ঝি ঝি পোকার ডাক তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে ।
একটু পর পর গাড়ি থেকে বের হচ্ছে আবার গাড়িতে ঢুকছে ।আবার দেখা যাচ্ছে ফোনটা অন করে ইশমির নাম্বারে কল করছে আবার ফোনটা অফ করে দিয়ে গাড়ির এক পাশে ছুড়ে মারছে ।এরকম করতে করতে অভিকের এই দীর্ঘময় রাতটা কেঁটে গেল ।আবারো ভোর হল সকাল হল ।সব সকালের মত মানুষের যাতায়াত শুরু হল ।অভিক থম মেরে সেই আগের জায়গায় ইশমির বাড়ির সামনেই গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।আগের দিন অভিক কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পাড়ার মানুষজন এতোটা পাত্তা না দিলেও আজকে কিছু কিছু লোক কৌতুহল হয়ে অভিকের কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থেকে অভিক কে দেখছে ।অভিকের চোখ মুখ না ঘুমানোর ফলে লাল হয়ে আছে ।

মাহিম জানত অভিক কে এখন ইশমির বাড়ির সামনেই পাওয়া যাবে ।তাই সে সকাল সকাল ইশমির বাড়ির সামনে এসে হাজির ।মাহিম অভিকের সামনে গিয়ে অভিকের হাত ধরে বলল

অভিক বাড়ি চল ।তোর বাড়িতে সবাই চিন্তা করছে ।পাগল হোস না সারারাত কিভাবে তুই এইখানে পার করলি ?যাইহোক এখন বাড়ি চল ।আন্টি , আঙ্কেল কে আর জ্বালাস না ।একটা মেয়ের কারনে পুরো দিন দুনিয়া শেষ করে দিলি ।তুই ত এমন ছিলি না অভিক আমাদের সবার আদর্শ ছিলি তুই এভাবে একটা মেয়ের কারনে নিজেকে কেন শেষ করে দিচ্ছিস ।এই মেয়েরে ভুলে যা এর থেকে সুন্দর মেয়ে তোর জন্য পরে আছে ।

অভিক উল্টো থম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে বলল তুই বাড়ি ফিরে যা আমি ওর সাথে কথা না বলে কোথাও যাবো না ।

হাফসা বেগমের চোখে পরে গেল অভিক কে আর সে চিনতেও পেরে গেল । এই ছেলেটাই নিজের মা বাবাকে নিয়ে ইশমির জন্য তিনমাস আগে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল আর তিনি-ই তো মুখের উপর ঐ দিন তাদেরকে না করে দিয়ে বলেছিল ইশমি বিয়ের জন্য রাজী না , ইশমি বিয়ে করবে না ।কিন্তু এই ছেলেটা এতদিন পর তাদের বাড়ির সামনে কি করছে ?হাফসা বেগমের মনে ভয় ঢুকে গেল এই ছেলের মতিগতি তার ঠিক লাগছে না আবার ইশমিকে বিয়ে করতে চাইছে নাকি তাহলে তার স্বর্ন গয়না , টাকা কড়ি যা আছে সব ইশমির বাবা ইশমির বিয়ের সময় দিয়ে দিবে ইশমিকে ।উনি মনে মনে কিছু একটা ফন্দি এটে নিয়ে পাড়ার কয়েকটা ছেলেকে ফোন নিয়ে জানাল অভিক কে শায়েস্তা করার জন্য ।তারপর বাড়ির দরজা লাগিয়ে দিল ।

পাড়ার ছেলেগুলো অভিকের সামনে এসে দাঁড়াল ।এদের মধ্যে কয়েকজনের হাতে হকি স্টিক ।মাহিম অভিক কে সেখান থেকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না ।অভিক ছেলেগুলোকে পাত্তা না দিয়ে ইশমির বাড়ির দিকেই তাকিয়ে রইল ।একজন এসে মাহিমকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে অভিকের কলার ধরে মুখে একটা ঘুষি মেরে বলল আমাদের পাড়ায় এসে আমাদের মেয়েকেই উত্তক্ত করা এই বলে আবারো ঘুষি মারল।দেখা যায় অভিকের কোনো নড়ন চড়ন নেই ।আগের মতই ঘাড়ত্যাড়ার মত ইশমির বাড়ির দিকে-ই তাকিয়ে আছে ।এবার ছেলেগুলোর খুব রাগ হল ।দুইজন মাহিমকে আটকে ধরে রাখল আর বাকি বারোজন অভিক কে নিচে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে ইচ্ছা মত হকি স্টিক দিয়ে মারতে লাগল ।দুইজন অভিকের পায়ে আঘাত করতে লাগল আর বাকি দুইজন অভিকের শরীরে আঘাত করতে লাগল ।একজন পা দিয়ে অভিকের মুখে চেঁপে ধরল ।অভিকের শরীরে কোনো শক্তি নেই ওদেরকে থামানোর দুইদিন খাওয়া , ঘুম সব বাদ দিয়ে থাকার কারনে হয়ত ।মাহিম চিৎকার করে কেঁদে বলছে ওকে মারবেন না কিন্তু কেউ শুনল না মারতেই থাকল ।পাড়ার কয়েকজন মানুষ এদেরকে ঘিরে আছে আর বলাবলি করছে একদম ঠিক হয়েছে ।এই ছেলেকে দেখছি দুইদিন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে ।যে পর্যন্ত অভিক জ্ঞান হারাল না ঐ পর্যন্ত ওরা মারতেই থাকল ।অভিক জ্ঞান হারানোর পর ওরা অভিকের মুখে প্রত্যেকে লাথি মেরে চলে গেল ।মাহিম ছাড়া পেয়ে অভিক কে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল ।সে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে অভিক কে হসপিটালে নিয়ে চলে গেল ।

চলবে,
@Nusrat Hossain