মনের আড়ালে পর্ব-১২

0
1307

#মনের_আড়ালে
Part_12
লেখনীতে – #Nusrat_Hossain

দেখতে দেখতে পুরো ছয়টা মাস কেঁটে গেছে ।সময় কারো জন্য থেমে থাকে না ।এই ছয় মাসে অনেক কিছুই বদলে গেছে ।বদলে গেছে সবার জীবন , বদলে গেছে তাদের পথ চলার ধরন ।

___________________

—— ম্যানেজার সাহেব আজকেই আপনি নিজে গিয়ে কথা বলবেন আর আপনাকে যা যা বললাম তাই ওনাদেরকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলবেন ।আমি কালকেই মেয়েটাকে আমাদের অফিসে দেখতে চাই ।বুজতে পেরেছেন তো কি বললাম ?

——– জ্বি স্যার আপনি কোনো চিন্তা করবেন না আমি আজকেই মেয়েটার বাসায় যাবো আর আপনি যা যা বলতে বলেছেন তাদেরকে আমি ঠিক সেভাবেই বুঝাব ।আর আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি কালকেই মেয়েটা অফিসে পা রাখবে ইনশাআল্লাহ এটা আমার বিশ্বাস কারন আপনার কথামত আমি যতটুকু খোঁজ নিয়েছি ঐ পরিবারটার অবস্থা ভালো চলছে না গত দু’মাস ধরে টাকার খুব প্রয়োজন তাদের আর এই টাকার প্রয়োজনে-ই মেয়েটা আমাদের অফার গ্রহন করতে বাধ্য ।

তাহলে আর দেরি কিসের হামিদ সাহেব আপনি এক্ষুণি রওনা দিন মেয়েটার বাসায় ।

ঠিক আছে স্যার আপনি কোনো চিন্তা করবেন না আমি ভালো খবর নিয়ে-ই আসবো বলেই মুঁচকি হেঁসে বিধায় জানালেন অভিকের বাবা সাদাত চৌধুরির কাছ থেকে ।

সাদাত চৌধুরি ম্যানেজারের সাথে কথা শেষ করে নিজের স্টাডি রুম থেকে বেরিয়ে বাড়ির বাইরে এলেন । সুইমিংপুলটার সামনে এসেই দেখতে পেলেন অভিক সুইমিংপুলের পানিতে পা ডুবিয়ে একমনে কি যেন ভাবছে ? যার কারনে অভিক এখনো ওনার অস্তিত্ব টের পায়নি ।দেড় মাস হল ছেলেকে সিংগাপুর থেকে চিকিৎসা করিয়ে দেশে ফিরেছেন ।ছেলের কষ্টে , ব্যাথায় কত রাত তাদের সেখানে নির্ঘুম কেঁটেছে তার হিসেব নেই ।এখন ছেলেটা অনেকটাই সুস্থ আল্লাহর রহমতে । আশ্চর্য জনক হলেও এটাই সত্যি যে অভিক নিজ উদ্যেগেই নিজের শারীরিক আর মানসিক অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা করিয়েছে ।নিয়মিত ওষুধ সেবন করেছে যাতে সে খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যায় আর হলো-ও তাই সে চার মাসের মধ্যেই অনেকটা সুস্থ হয়ে গেল মানসিক আর শারীরিক দুইভাবেই ।দেশে ফিরে এসেই অভিক নিজে অফিসের দায়িত্ব নিয়েছে ।এখন অফিস সে-ই সামলাচ্ছে ।কিন্তু তিনি খুব ভালোভাবে-ই জানেন ছেলেটা বাহির থেকে যতটা নিজেকে সুস্থ আর হাসি খুশি রাখে ভেতরে তার থেকেও বেশি কষ্ট পাচ্ছে সেই একটা কারনেই ।কিন্তু আর না এবার উনি নিজে ছেলেকে ভালো রাখার জন্য যা যা করতে হয় সব করবেন ।তিনি ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে ছেলের পাশে বসে পরলেন আর ছেলের ঘাড়ে হাত রেখে মুচকি হেসে বললেন

অভিক বাবা আমার তুমি চিন্তা করো না খুব দ্রুত তোমার ভালো থাকার চাবি তোমার হাতে এসে পরবে আর তোমায় কষ্ট পেতে হবে না ।

অভিক বাবার কথা শুনে নিজের বেখেয়ালি ভাবনা থেকে বেরিয়ে এল ।আর বাবার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বাবার ভাবসাব বোঝার চেষ্টা করে শান্তগলায় বলে উঠল বাবা আমি আগেই বলেছি আমি কোনো বিয়ে টিয়ে করতে পারবো না তুমি যদি আমায় কোনো বিয়ের ইঙ্গিত দিয়ে থাকো তাহলে সেটা ভুলে যাও কারন সেটা কোনোদিনও সম্ভব না ।আম্মুও দুদিন ধরে বিয়ে বিয়ে করে আমার কান ধরিয়ে ফেলছে ।

ছেলের কথায় সাদাত চৌধুরি হেঁসে বলল তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো আমি তোমায় কোনোদিন তোমার মায়ের মত বিয়ের জন্য জোড় করব না ।কিন্তু তোমার জন্য কালকে একটা বিশাল সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে অভিক ।
অভিক বাবার কথায় মেকি হেঁসে আবারো সুইমিংপুলের সচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে রইল ।তার জীবনটা বিষাদে পরিনত হয়েছে ।এখন আর আগের মত আনন্দ অনুভূতি কিছুই হয় না ।
_________________

বসে বসে খালি গিলেই যাচ্ছে আর এখানে যে চাল , ডাল সব শেষ তার কোনো খেয়াল আছে হাফসা বেগম চিৎকার করে বলল কথাগুলো ।মাত্রই ইশমি দুপুরের খাবার খেতে বসেছিল টেবিলে , মায়ের চিৎকার শুনে আর খেতে পারল না । সে খুব ভালোভাবেই জানে কথাগুলো তাকেই উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে ।ভাতের প্লেট টা ডাকা দিয়ে রেখে নিজের রুমে চলে এল ।এই ছয় মাসে তাদের জীবনটা পুরোপুরি বদলে গেছে ।তিন মাস আগে আহিবার ন্যুড পিকগুলো ইন্টারনেটে বাজেভাবে ছড়িয়ে পরে । আয়নাল হোসেন এমনিতেই হার্টের রুগী ছিলেন ছোট মেয়ের এই অবনতি , বাহিরের লোকের কটুকথা তিনি সহ্য করতে না পেরে হার্ট এট্যাক করে মারা যান ।এই পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী আয়নাল হোসেন-ই ছিলেন ।তিনি চাকরি করে যে টাকা গুলো জমিয়ে রেখেছিলেন তা তিনি মারা যাবার পর একটা মাস সেই টাকা দিয়েই সংসারটা কোনোরকমভাবে চালিয়েছে ।কিন্তু এখন চাল আছে তো ডাল নেই , ডাল আছে তো চাল নেই ।

কি ব্যাপার তুই না এইমাত্র খেতে গেলি ? না খেয়েই এসে পরলি যে খাস নি ?তিথি ইশমিকে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল ।

ইশমি থমথমে গলায় বলল খিদে নেই আমার ।

তিথি তেজী গলায় বলল সবাই তো দুইমুঠ করে হলেও খেয়েছে তুই কেন খাসনি দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল ।ঐ মহিলা আবার চিল্লাচিল্লি করেছে তাই না তুই খাবার খেতে বসলে-ই মহিলার গলা বেড়ে যায় ।নিজের মেয়ে যে এত বড় আকাম টা করল তারপরও বজ্জাত মহিলার শিক্ষা হয়নাই ।

ইশমি বিরক্তভঙ্গিতে বলল চুপ করো তো আপু বললাম তো আমার খিদে নেই ..ইশমি আরো কিছু বলতে যাবে অমনি কলিংবেল টা বেজে উঠল ।ইশমি গিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে দেখতে পেল একজন অচেনা মধ্যবয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে আছে সে সালাম দিল আর লোকটিকে ভেতরে আসতে বলল ।
লোকটি ভেতরে ঢুকে ড্রয়িংরুমের সোফাটায় বসে ইশমিকে আদেশের সুরে বলল

তোমার মা আর বাকি সবাইকে ডেকে নিয়ে এসো ।

ইশমি গিয়ে সবাইকে ডেকে নিয়ে আসল ।

হাফসা বেগম অচেনা লোকটিকে দেখে চোখ ছোট ছোট করে বলে উঠল কে আপনি ? আপনারে তো আগে দেখিনাই কোনোদিন ।

লোকটি বলে উঠল আপনারা বসুন তারপর বলছি ।
ইশমি আর হাফসা বেগম বসে পরল ।ইতিমধ্যে বাসার বাকি সদস্যগুলোও এসে ইশমি আর হাফসা বেগমের পাশে বসে পরল ।তাদের কারো-ই বোধগম্য হচ্ছে না লোকটি কে ?

লোকটি এবার ইশমির হাতে লেটার টা দিয়ে বলল তোমাদের অনেক অভাব অনটন চলছে তাই না ?

ইশমি মাথা ঝুলিয়ে হ্যাঁ বোঝাল ।

লোকটি বলল তুমি চাইলে আমাদের অফিসে চাকরি করতে পারো ।

হাফসা বেগমের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল ।তিনি ত্বরিতগতিতে বলে উঠল ও চাকরি করবে আপনাদের অফিসে ।ওর কাছে জিজ্ঞেস করার কি আছে ? আমি মা আমি পারমিশন দিয়ে দিলাম ও চাকরি করবে ।ও সব কাজ পারে রান্না থেকে শুরু করে সব কাজ ।

লোকটি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল হাফসা বেগমের কথা শুনে অফিসে নাকি রান্না করবে ? তবে মনে মনে খুব খুশিও হল রাজি হয়ে যাওয়াতে ।

ইশমি অস্ফুটভাবে বলে উঠল কিন্তু আমি তো মাত্র এইচ এস সি পাস ।হাফসা বেগম ইশমির দিকে চোখ গরম করে তাকাল ।

লোকটি বলল সমস্যা নেই আমাদের স্যার নিজ থেকে তোমাকে চাকরি অফার করেছে ।তোমায় ওসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না ।অফিসে কাজ করার মত ছোট ছোট কাজও রয়েছে তোমাকে ওসব ছোট কাজই করতে দেওয়া হবে ।

ইশমি মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে লোকটাকে বলল আমি পারবো ।

লোকটি খুশিমনে বলে উঠল লেটারে ঠিকানা দেওয়া আছে অফিসের ।তুমি কিন্তু কালকে থেকেই উপস্থিত থেকো ।

ইশমি কিছু বলার আগেই হাফসা বেগম বলে উঠল হ্যাঁ হ্যাঁ ও কালকে থেকেই যাবে ।একদিনও মিস দিবেনা ।

লোকটি খুশিমনে ইশমিদের বাড়ি থেকে বের হয়ে সাদাত চৌধুরিকে ফোন করে জানাল তার অতি কাঙ্ক্ষিত খবরটা ।

_________________

সকাল নয়টায় ইশমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হতে হতে তিথিকে বলল

আপু কেউ হঠাৎ করে এসেই আমাকে তাদের অফিসে চাকরি করার অফার দিল আমি কিছুই বুজতে পারছিনা ।আর উনি কিভাবে জানল আমাদের অবস্থা ?কেমন জানি লাগছে ব্যাপারটা আমার ।

তিথি বিছানায় পা ঝুলাতে ঝুলাতে বলল একবার গিয়েই দেখনা কি হয় ।আমার আফসোস হয় আমি কেন মন দিয়ে পড়াশোনা টা করলাম না তাহলে আমিও একটা না একটা কাজ করে সংসারটাকে চালাতে পারতাম।এখন সব চাঁপ শুধু তোর উপর দিয়েই যাচ্ছে ।

ইশমি কিছু বলল না রেডি হয়ে রুম থেকে বের হতে নিলেই তিথি বলে উঠল সাবধানে যাস ।

ইশমি মাথা ঝুলিয়ে হ্যাঁ বোঝাল ।তারপর মায়ের কাছ থেকে বিধায় নিয়ে বের হয়ে গেল অফিসের উদ্দেশ্য ।

ঠিকানা অনুযায়ী রিকশা টা থামল অফিসের সামনে ।ইশমি রিকশা থেকে নেমে মাথাটা উঁচু করে তাকাল ।বিশাল বড় অফিস সে ভাবতে লাগল এইখানে কিভাবে সে চাকরি পেল ? তার খুব ভয় করছে এত মানুষের মাঝে সে কিভাবে কাজ করবে ।সে নিজে একটা ঘরকুনো মেয়ে কোনোদিন নিজ বাড়ি ছেড়ে অচেনা জায়গায় কোথাও একমিনিটের জন্যও থাকেনি এইখানে কিভাবে কাজ করবে সারাদিন এত লোকের মাঝে ?
সে মনে এক বালতি ভয় নিয়ে অফিসের ভেতরে ঢুকল কিন্তু সে খুব অবাক হল তাকে দেখেই একজন লোক বলে উঠল

ম্যাম আপনি ফোর্থ ফ্লোরে যান । আমাদের এমডি স্যারের কেবিন সেখানেই , উনিই আপনাকে বলে দিবে আপনাকে কি কাজ করতে হবে ।

ইশমি লোকটির কথা অনুযায়ী ফোর্থ ফ্লোরে এল ।সে ভয়ে ভয়ে কেবিনের সামনে এল আর কেবিনের ডোর খুলে যে-ই না বলল মে আই কাম ইন অমনি তার চোখ বড়বড় হয়ে গেল ।সে স্তব্ধ হয়ে অস্ফুটসুরে বলে উঠল অভিক ।

অভিক ফাইল হাতাহাতি করছিল ডোর খোলার শব্দ পেয়ে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল ।তার হার্ট খুব দ্রুত ডিপডিপ করছে ।তার কপাল বেয়ে চিকন ঘাম পরছে ।সে দ্রুত এসির পাওয়ারটা বাড়িয়ে দিল ।তার চোখ যেন বিশ্বাস করতে পারছে না ।যাকে একটা সময় পাগলের মত ভালোবাসত দীর্ঘ ছয়টা মাস পর সেই মেয়েটা তার চোখের সামনে ।কেন এসেছে ইশমি ? এতদিন পর তার কাছে কেন এল ? যাকে এত ঘৃনা করে তার কাছে কি কারনে আসল ? নিজেকে সামলে নিয়ে অস্ফুটসুরে বলল কাম ইন ।ইশমি এক পা এক পা করে এসে সামনে দাঁড়াল ।অভিকের চোখ এখনো ইশমিতে স্থির ।আগে থেকে অনেক শুকিয়ে গেছে ।চোখের নিচে কালি পরে গেছে ।আগের মত চেহারাটায় আর সুশ্রী নেই ।কই আগে তো এমন দেখতে ছিলো না মেয়েটা ।সে ভাবল মেয়েটা কি খায় না ঠিকমত এই অবস্থা কেন তার ?

ইশমি অপলক চোখে অভিকের দিকে তাকিয়ে আছে ।সে কোনোদিন ভাবতে পারেনি অভিকের সাথে আর কোনোদিন তার দেখা হবে ? চেহারাটা আগের চেয়ে আরো উজ্জল হয়েছে ,গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়িও গজিয়েছে ।পরনে কালো টিশার্ট , কালো ব্লেজার , কালো ডেনিম প্যান্ট লোকটাকে আগের মতই সুদর্শন লাগছে ।পরোক্ষনে তার ভাবনায় এল এই অফিসটা অভিকের তার মানে তাকে অভিকের অফিসে চাকরি করতে হবে ভাবতেই তার কলিজা ধক করে উঠল ।কিন্তু কাজটা তার খুব প্রয়োজন ।তাকে যেভাবেই হোক অভিকের সামনে শক্ত থাকতে হবে ।নরম হয়ে পরলে চলবে না ।

সাদাত চৌধুরী ছেলের কেবিনে ঢুকে দেখতে পেলেন দুজনে একে অপরের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে আছে ।তিনি মনে মনে খুব খুশি হলেন ।তিনি ওদের ঘোর কাটানোর জন্য দুইতিনবার কাশি দিলেন দেখা গেল তারপরও ওদের ঘোর কাটল না ।তিনি এবার টেবিলে হাত দিয়ে দুই তিনবার ঠকঠক শব্দ করলেন ।এবার দুজনেরই হুশ ফিরে এল ।দুজনেই উশখুশ করতে লাগল ।

অভিক বাবার হাত ধরে কেবিনের বাইরে নিয়ে গিয়ে বলল

বাবা এসব কি ?

সাদাত চৌধুরী মুচকি হেঁসে বলল তোমার ভালো থাকার চাবি ।কেমন লাগল সারপ্রাইজ টা ?

অভিক থমথমে গলায় বলল বাবা কি দরকার ছিল ? আমি তো ভালোই ছিলাম ।

সাদাত হোসেন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন মেয়েটাকে আমি দুটো কারনে আমাদের অফিসে চাকরি করার অফার করেছি ।প্রথম কারনটা আমি এখন বলব না তুমি নিজেই একদিন বুঝতে পারবে ।
আর দ্বিতীয় কারন টা হল , খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলাম মেয়েটার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না তাই আমি নিজে ম্যানেজারকে দিয়ে আমাদের অফিসে চাকরি করার অফার দিয়েছি ।

অভিক চমকে জিজ্ঞেস করল অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না মানে ?

সাদাত চৌধুরি থমথমে গলায় বললেন ওকেই জিজ্ঞেস কর ।তোমার সামনেই তো আছে ।

অভিক আবার কেবিনে গিয়ে বসল ।মেয়েটা এখনো দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে ।অভিক তাকে বসতে বলল ।ইশমি অভিকের দিকে একপলক তাকিয়ে বসল ।অভিক ভাবছে কি দিয়ে কথা শুরু করবে ? কিছুক্ষণ চুপ থেকে টেবিলে দুইহাতের উল্টো পিঠে থুতনিতে ভর দিয়ে বলল

আপনাকে কি কাজ দিবো আমি ? আপনি তো এইচ এস সি পাশ মাত্র ।

সে কিছুক্ষণ ভেবে ইশমিকে বলে উঠল আপনি আজকে থেকে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র , ডকুমেন্ট প্রিন্ট করবেন ।এটা অনেক সহজ একটা কাজ ।আমি একজন কর্মীকে বলে দিব আপনাকে যেন সব শিখিয়ে দেয় ।আপনি সব শিখে নিবেন কিভাবে কি করতে হয় ।

ইশমি মাথা নাড়িয়ে অভিক কে হ্যাঁ বোঝালো ।

পড়াশোনা কেমন চলছে আপনার ?

ইশমি মাথা নিচু করে জবাব দিল তিনমাস আগেই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছি ।

অভিক চমকে বলল হোয়াট !কিন্তু কেন ?সে ভেবেছিল ইশমি চাকরিও করবে আবার পড়াশোনাও করবে ।

ইশমি নিচু হওয়া অবস্থাতেই থমথমে গলায় জবাব দিল
তিনমাস হয়েছে বাবা গত হয়ে হয়েছেন ।বাবা মারা যাবার পর একমাস কোনোমত টেনেটুনে সংসারটা চলেছে ।কিন্তু এখন আর চলছে না ।একবেলা চাল যোগাড় করতেই হিমশিম লেগে যায় ।একবেলা খাওয়া হয় তো , আরেকবেলা কারো খাওয়া-ই হয়না আর পড়াশোনা করার কথা ভাবাতো বিলাসিতা ।একমাস ধরে দুটো টিউশনি করছি ।

অভিক ঠোটদুটো চেঁপে নিজের চোখের পানিটা আটকে রাখার চেষ্টা করছে মেয়েটা কত অকপটে সব বলে দিল তাকে ।ভাগ্যিস নিঁচু হয়ে আছে নাহলে তার চোখের পানিটা দেখতে পেয়ে যেত ।

সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল পড়াশোনা আবার নতুন করে শুরু করতে হবে এবং আজকে থেকেই শুরু করতে হবে ।

ইশমি মাথা উঁচু করে বলল পড়াশোনা করলে কাজ করব কিভাবে ?

অভিক অকপটে বলল এখনকার মেয়েরা ঘরও সামলায় আবার বাইরের কাজও সামলায় আবার পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছে ।ওরা যেভাবে পারে আপনিও পারবেন ।আমাদের অফিসে এমন অনেক মেয়ে আছে যারা পড়াশোনাও করছে আবার চাকরিও করছে ।

ইশমি ত্বরিতগতিতে বলে উঠল আমি পারবো না ।অনেক দেরি হয়ে গেছে ।

অভিকের খুব রাগ হল ইশমির উপর তার বলতে ইচ্ছা হল তাহলে কি সারাজীবন প্রিন্টারের কাজ করার ইচ্ছা আছে নাকি একটা আট বছরের বাচ্চাটাও তো প্রিন্টারের কাজ করতে পারে ।সে মনে মনে ভাবল
পড়াশোনা না করলে মেয়েটার ভবিষ্যৎ অন্ধকার কিছু একটা করতে হবে তাকে।

অভিক বলল আগের বইগুলো আছে না ?আজকে থেকেই… অভিক কিছু বলার আগেই ইশমি বলে উঠল

ক’দিন আগে মা সব বই বেচে দিয়ে দিয়েছে ।

অভিক ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল ইশমির কথা শুনে ।

চলবে,
@Nusrat Hossain