#মনের_আড়ালে
Part_15
লেখনীতে – #Nusrat_Hossain
ইশমি তুমি কি কাঁদছো ?
ইশমি মাথা তুলে জাহানের দিকে তাকাল ।সে ম্লান হেঁসে বলল না না আপু কাঁদবো কেন ?
জাহান বলল কান্নার চোটে তোমার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে , চোখ দিয় পানিও গড়িয়ে পরছে ।ঐ সময় অভিক স্যারের কেভিনে তোমায় যেতে দেখলাম কি হয়েছে অভিক স্যার কি বকেছে ? কিন্তু উনি তো কথা শোনানোর মত মানুষ না ।সবার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করে ।
ইশমি ত্বরিতগতিতে বলে উঠল না না আপু ওনি আমায় কিছুই বলেনি ।আমার মাথাটা খুব যন্ত্রনা করছে এইজন্য চোখ দিয়ে পানি পরছে ।
ওহ এই ব্যাপার ? চলো আমরা চা বা কফি টফি খাই তোমার মাথার যন্ত্রনা দূর হয়ে যাবে আর মাইন্ডও ফ্রেশ লাগবে ।
ওরা চা খেয়ে আবার নিজদের কাজে মন দিল ।ইশমি ভাবল অভিককে একটা ধন্যবাদ জানানো প্রয়োজন ।লাঞ্চ টাইমের পর অভিকের কেবিনে গিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে আসবে সে ।
লাঞ্চ টাইমের সময় হয়ে গেছে ।আজকে অভিক সব কাজ আগেই শেষ করে খুব দ্রুত কেবিন থেকে বের হয়ে ইশমির পেছনে এসে দাঁড়াল ।সে ইশমির পেছন থেকে বলে উঠল
চলুন ।
ইশমি ত্বরিতগতিতে পেছনে ফিরে অভিককে দেখতে পেল ।সে জিজ্ঞেস করল কোথায় যাবো ? ইতিমধ্যে জাহান , তিন্নি আর রিনাও লাঞ্চের জন্য ইশমির সামনে এসে হাজির হয়েছে ।তারা অবাক হয়ে গেল অভিককে ইশমির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ।অভিক তাদেকে বলল লাঞ্চের জন্য চলে যেতে । ওরা চলে যেতে নিলে অমনি ইশমি বলে উঠল
আমি ওদের সাথে যাবো ।ওরা থেমে গেল ।
অভিক ওদেরকে হাত দিয়ে ইশারা করল চলে যেতে ।ওরা চলে গেলে ইশমিও ওদের পিছু চলে যেতে নিলেই পেছন থেকে অভিক ইশমির হাত টাইট করে ধরে ফেলল আর তাকে টেনে নিয়ে লিফটে ঢুকে গেল ।ইশমি ভীত দৃষ্টিতে অভিক কে বলে উঠল
আমি ওদের সাথে দুপুরের খাবার খাবো ।
অভিক ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
আজকে আপনি আমার সাথে লাঞ্চ করবেন আর এ নিয়ে কোনো বাহানা শুনতে চাই না আপনার কাছ থেকে ।অগত্যা ইশমি হার মেনে নিল ।ভাবল অভিক তার জন্য এতকিছু করছে বিনিময় সে অভিকের কথা তো রাখতেই পারে ।তারা নিচে নেমে গেল ।অভিক গাড়ির ডোর খুলে ইশমিকে ভেতরে ঢুকতে বলল ।ইশমি চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করল
রেস্টুরেন্ট তো সামনেই আমরা কোথায় যাচ্ছি ?
অভিক একটা দীর্শ্বাস নিয়ে ইশমির হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিল ।ইশমি অবাক ।অভিক নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে ইশমিকে বলল
সিটবেল্ট লাগান ।
ইশমি সিটবেল্ট লাগাতে জানেনা তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছে সে সিটবেল্ট লাগানোর কিন্তু পারছে না ।অভিক ইশমির দিকে কিছুক্ষণ ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে রইল ।তারপর নিজেই ইশমির দিকে ঝুকে পরল সিটবেল্ট লাগানোর জন্য ।সিটবেল্ট লাগিয়ে যে-ই না ইশমির থেকে সরতে যাবে অমনি তার চোখ ইশমির চোখে পরে গেল ।সে ইশমির খুব কাছে ।ইশমি চোখমুখ খিঁচে বসে আছে ।তার ঠোটদুটো প্রায় ইশমির ঠোটদুটোতে ছুইছুই ।সে নিজেকে সামলে
নিয়ে নিজের সিটে গিয়ে বসল ।সে একটা বাঁকা হাঁসি দিয়ে বলল
চোখ খোলো ।কি ভেবেছিলে তোমার ঠোটে কিস করবো ?
আমি যে তোমার ঠোটে আর চুমু খাবো এই স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দাও ।
ইশমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল অভিকের কথা শুনে ।সে চমকে অভিকের দিকে তাকাল অভিক মিটমিট করে হাঁসছে ।সে রেগে তেড়ে গিয়ে অভিকের বাহুতে খামচি দিল ।অভিক অস্ফুটসুরে উঁহ বলে চিল্লিয়ে উঠল ।পরোক্ষনে নিজেকে সামলে আগের মত বাঁকা হাঁসি দিয়ে বলল
তোমার ঠোটে কিস করবো না দেখে এভাবে আমার উপর খামচি মেরে প্রতিশোধ নিলে ? ইশমি রেগে গিয়ে অভিকের বাহুতে এবার কিল মেরে বসল ।অভিক হোঁ হোঁ করে হেঁসে উঠল ।ইশমি এখন বুঝতে পারল অভিক তাকে রাগানোর চেষ্টা করছে ।সেও মিটমিট করে হেঁসে উঠল কিন্তু অভিক সেটা দেখতে পেল না ।অভিক এবার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল আমরা অন্য রেস্টুরেন্টে যাবো এটা বেশি দূর না কাছেই ।প্রায় সাত – আট মিনিট পর তারা রেস্টুরেন্টে পৌঁছে গেল ।ইশমি এবারও সিটবেল্ট নিয়ে টানাটানি করছে ।অভিক তা দেখে মিটমিট করে হেঁসে বলল
সব আমার চুমু খাওয়ার ধান্দা ।
ইশমি অভিকের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বলল
আপনি আবারো শুরু করলেন ।
অভিক বলল তুমি এভাবে সিটবেল্ট নিয়ে টানাটানি করতে থাকলে আমায় সারাজীবন গাড়িতে বসেই কাঁটিয়ে দিতে হবে ।তুমি হাত সরাও তো আমি তোমায় হেল্প করছি ।
ইশমি নাক ফুলিয়ে বলল আপনার সাহায্যের প্রয়োজন নেই আমি-ই পারবো ।ইশমি আরো কিছুক্ষণ টানাটানি করে সিটবেল্ট খুলতে সক্ষম হলো ।সে বিজয়ী হাঁসি দিয়ে অভিকের দিকে তাকাল ।অভিক ইশমির দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।সে এই প্রথম ইশমিকে হাঁসতে দেখল ।আগে কোনোদিন অভিক ইশমিকে হাঁসতে দেখেনি বরং ইশমির চেহারা অলওয়েজ ভার-ই দেখা যেত ।সে নিজেকে সামলে নিয়ে ঠেসমারা কন্ঠে বলল বিজয়ী মার্কা হাঁসি দিয়ে কোনো লাভ নেই এটা বাচ্চারাও পারে ।ইশমি নাক ফুলাতে ফুলাতে অস্ফুটভাবে বলল আপনি খারাপ তারপর গাড়ির ডোর খুলে নেমে পরলো ।অভিকও নেমে পরলো ।
তারা দুজনে রেস্টুরেন্টে ঢুকে সিড়িবেয়ে উপরে উঠল ।তারা কর্নারের একটা টেবিলে গিয়ে বসল ।ইশমি খেয়াল করল তাদের আশেপাশে কোনো মানুষ নেই তাই সে অভিক কে জিজ্ঞেস করল এখানে কোনো মানুষ নেই কেন ?
অভিক জবাবে বলল টেবিল আগেই বুক করে রেখেছিলাম । কিছু সময়ের জন্য আমি তাদেরকে টাকা দিয়ে রেখেছি যাতে আমাদের আশেপাশের টেবিলে কোনো মানুষ না বসে ।ইশমি কিছু বলল না চারপাশে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে ।চারপাশটা খুব সুন্দর ।দু’মিনিট পর ওয়েটার মেনু কার্ড নিয়ে আসলে অভিক বার্গার , চিকেন ফ্রাই , চিকেন নুডুলস , পিজ্জা , ফ্রাইড রাইস , লাচ্ছি অর্ডার করল ।অর্ডার নিয়ে ওয়েটার চলে গেল ।
ইশমি অভিকের দিকে চোখ ছোট ছোট করে বলল এত খাবার অর্ডার কেন করলেন ? এত খাবার কে খাবে ?
অভিক স্বাভাবিক কন্ঠে জবাব দিল তুমি খাবে ।
ইশমি খেয়াল করছে অভিক তাকে সেই কখন থেকে তুমি বলে সম্বোধন করছে ।
সে বলল আমি এত কিছু খেতে পারবো না ।অভিক কিছু বলল না ।কিছুক্ষণ পর খাবার আসলে অভিক ইশমির প্লেটে খাবার সার্ভ করে দিল আর নিজের প্লেটেও নিল ।অভিক খাওয়া শুরু করলেও ইশমি খেতে পারছে না ।তার এসব খেয়ে অভ্যাস নেই আর স্পুন দিয়েও সে খেতে পারে না অভিক কি সুন্দর করে স্পুন দিয়ে টুকটুক করে খাচ্ছে ।
অভিক ইশমিকে স্পুন দিয়ে খাবার নাড়তে দেখে বলল খাও এভাবে খাবার নাড়ছো কেন ?
ইশমি করুন চেহারা বানিয়ে অভিকের দিকে তাকাল
অভিক মনে হয় ইশমির না খাওয়ার বিষয়টা বুজতে পেরেছে তাই সে স্পুন রেখে হাত দিয়ে খাওয়া শুরু করল আর বলল এখন খাওয়া শুরু করো ।
ইশমিও হাত দিয়ে খাওয়া শুরু করল ।খেতে খেতে ইশমি খেয়াল করল অভিকের ঠোটের কোণে খাবার লেগে আছে ।
তাই সে অভিক কে হাতের আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বলল আপনার ঠোটের এইপাশে খাবার লেগে আছে পরিষ্কার করে নিন ।
অভিক স্বাভাবিক কন্ঠে বলল পরিষ্কার করে দাও ।
ইশমি বিষ্মিতকন্ঠে বলল আমি পরিষ্কার করে দেব ?
অভিক তার দিকে ভ্রু কুঁচকে বলল হ্যাঁ তো ? এমন ভাবে কথাটা বললে তুমি , যেন আমার ঠোটের পাশে খাবার পরিষ্কার করে দিলে-ই তুমি আমার বাচ্চার মা হয়ে যাবে !
ইশমি মনে মনে অভিক কে বকা দিয়ে বলল খারাপ লোক একটা খালি ঠেস মারা কথা বলে ।সে টিস্যু টা হাতে নিয়ে অভিকের দিকে একটু ঝুকে অভিকের ঠোটের কোণে লেগে থাকা খাবারটা পরিষ্কার করে দিল ।তারপর নিজের জায়গায় গিয়ে বসে আবার নাক ফুলিয়ে খাবার খেতে শুরু করল ।অভিকও খাওয়ায় মন দিল ।অভিক খাচ্ছে আর আড়চোখে ইশমির নাক ফুলানো চেহারার দিকে তাকাচ্ছে ।অভিক ঠোট কামড়ে হাসল ইশমির রাগী চেহারা দেখে ।
চলবে ,
@Nusrat Hossain