মনের আড়ালে পর্ব-১৬

0
1235

#মনের_আড়ালে
Part_16
লেখনীতে-#Nusrat_Hossain

অভিক আর ইশমি লাঞ্চ শেষ করে রেস্টুরেন্ট থেকে অফিসে ফিরে আসল ।রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরে আসার সময়ও অভিক ইশমির সাথে খুনশুটিতে মেতে ছিল ।অফিসে ফিরে আবার যে যার কাজে মন দিল ।ইশমি কাগজ প্রিন্ট করছিল আর অভিক আর তার খুনশুটি কথাগুলো ভেবে মিটমিট করে হাঁসছিল ।না চাইতেও তার #মনের_আড়ালে থাকা সুপ্ত অনুভূতিটা বারবার উঁকি মারছে ।এমন সময় জাহান , তিন্নি আর রিনা এসে দাঁড়াল ইশমির সামনে ।ইশমি তাদের দিকে ভ্রুযুগল করে তাকাল ।
জাহান বলে উঠল

ইশমি স্যার তোমায় তখন কোথায় নিয়ে গিয়েছিল ?

ইশমি অকপটে জবাব দিল রেস্টুরেন্টে নিয়েগিয়েছিল আপু ।

জাহান কিছু বলার আগেই তিন্নি বলে উঠল তোমরা কি পূর্বপরিচিত ?

ইশমি বলল উনি আমার ভার্সিটির টিচার ছিলেন তিনি ।

জাহান মুচকি হেঁসে বলল ওহ আচ্ছা ।আমরা বোধহয় তোমার কাজে ডিস্টার্ব করে ফেললাম বোন দুঃখিত ।জানতে খুব ইচ্ছা হয়েছিল তাই জিজ্ঞেস করলাম ।

ইশমি বিনিময় মুচকি হেঁসে বলল না না আপু ঠিক আছে আমি কোনো ডিস্টার্ব ফিল করিনি ।
তখনি ওদের সামনে অ্যাসিস্ট্যান্ট ওসমান এসে দাঁড়াল আর জাহানকে উদ্দেশ্য করে ধমকে বলে উঠল

কাজ না করে খালি পুরো অফিস ঘুরোঘুরি করা আর সবার কাজে ডিস্টার্ব করা ।যাও নিজেদের ডেস্কে যাও বলছি ।নাহলে স্যারকে বলে চাকরি নট করে দিবো ।
জাহান ওসমানের ধমক শুনে মনে মনে খুব ব্যাথিত হল ।
জাহান , তিন্নি আর রিনা ধমক খেয়ে চলে গেল ।ওরা যাওয়ার পর ওসমান ইশমির দিকে তাকিয়ে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হেঁসে চলে গেল ।ইশমি ওসমানের যাওয়ার দিকে ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে রইল ।তারপর ইশমি কাজ রেখে অভিকের কেবিনে যাওয়ার জন্য প্রস্তত হল টাকাটা ফেরত দেওয়ার জন্য ।সে টাকাটা ঐ সময় ফেরত দিতে ভুলেই গিয়েছিল । রেস্টুরেন্টে মনে পরেছিল কিন্তু রেস্টুরেন্টে তো আর টাকাটা ফেরত দেওয়া যায় না !অভিক যদি আবার রেগেটেগে যায় ।তাই অফিসে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষা করছিল ।অফিসে ফিরে এসে অভিক কাজে ব্যস্ত ছিল তাই ইশমি তখন কেবিনে ঢুকতে পারেনি । অফিস আওয়ার শেষ হওয়ার আগেই অভিক কে টাকাটা ফেরত দিতে হবে ইশমি ভাবল ।

ইশমি টাকার খামটা হাতে নিয়ে অভিকের কেবিনের সামনে এসে ডোর নক করল ।তার খুব ভয় হচ্ছে ।অভিক কি রিয়েক্ট দিবে আল্লাহ জানে ।অভিক তাকে ভেতরে আসার জন্য পারমিশন দিয়েই বলে উঠল সর‍্যি তখন বিজি ছিলাম তাই তোমার সাথে কথা বলা হয়নি ।ইশমি গুটিগুটি পায়ে টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াল আর টাকার খামটা টেবিলে রাখল ।অভিক ভ্রু কুঁচকে টাকার খামের দিকে তাকিয়ে ইশমিকে জিজ্ঞেস করল

কি এটা ???

ইশমি সোজাসাপ্টা জবাব দিল আমি টাকাটা নিতে পারবো না ।

অভিক শান্তকন্ঠে জিজ্ঞেস করল কেনো ? না নেওয়ার কারনটা কি জানতে পারি ?

ইশমি বলল এত টাকা কোনো অফিস থেকে এডভান্স দেওয়া হয় না ?

অভিকের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল ।ইশমি ভয় পেয়ে গেল অভিকের রাগী চেহারা দেখে ।অভিক একজন ছেলে স্টাফকে ডেকে পাঠাল ।দু’মিনিট পর ছেলে স্টাফটি ডোর নক করে কেবিনে ঢুকলে সে শান্তকন্ঠে জিজ্ঞেস করল

আপনি যখন এই অফিসে নতুন চাকরি পেয়েছিলেন তখন আপনাকে কত টাকা এডভান্স দেওয়া হয়েছিল ?

ছেলে স্টাফটি সোজাসাপ্টা জবাব দিল পঞ্চাশ হাজার টাকা স্যার ।অভিক ছেলেটিকে ইশারা দিয়ে চলে যেতে বলল ।ছেলেটি চলে গেলে অভিক ক্রোধদৃষ্টি নিয়ে ইশমির দিকে তাকিয়ে বলল এবার বলুন কি বলবেন ? ইশমি নিঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।চেহারায় ভয় স্পষ্ট ।তার রাগ নিমিষেই উধাও হয়ে গেল ।অভিক টেবিল থেকে খামটা হাতে নিয়ে ইশমির দিকে এগিয়ে দিল ।ইশমি তখনো চুপচাপ নিঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ।

অভিক বলল আপনার এটা কেন মনে হল আমি নিজের ব্যক্তিগত কারনে আপনাকে টাকা দিবো ? অফিসে কারো সাথে আমি নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্ক রাখিনা আর ব্যক্তিগত সম্পর্কের জেরে তাদের হেল্পও করিনা এটা আমার নিয়মে নেই ।আর আপনি তো্ অভিক আর কিছু বলতে পারল না ।সে চুপ হয়ে গেল ।
ইশমি লজ্জায় মরে যাচ্ছে ।নিজেকে মনে মনে একশো একটা গালাগাল দিচ্ছে ।তার মাথায় আসলো কিভাবে অভিক তাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে ।তার এখন লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে ।সে ভাবল এখান থেকে যাওয়া প্রয়োজন নাহলে আজ লজ্জায় মরে-ই যাবে ।অভিক খামটা আবার ইশমির দিকে এগিয়ে দিল ।ইশমি কাঁপা কাঁপা হাতে খামটা হাতে নিয়ে অভিকের কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে বের হয়ে গেল কেবিন থেকে ।

ইশমি যাওয়ার পর অভিক চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুজল ।সে মিথ্যে কথা বলেছে ইশমিকে । অফিস থেকে কোনো এডভান্স দেওয়া হয়না ।শুধু তাদেরকে-ই দেওয়া হয় যাদের আর্থিক সমস্যা বা বিভিন্নরকম সমস্যা আছে ।কিন্তু সে ইশমিকে অতসব ভেবে টাকা দেয়নি ।ভালোবাসার মানুষটার কষ্ট কেউ সহ্য করতে পারেনা সেও পারেনি সহ্য করতে ।একমাত্র আল্লাহ আর সে-ই জানে তার ইশমির প্রতি অনুভূতি , ভালোবাসা কিছুই মিথ্যা ছিল না ।শুধু ভাগ্য সহায় ছিল না তার ।ভালোবাসে এখনো সে মেয়েটাকে #মনের_আড়াল থেকে ।

ইশমি কাজে মন দিতে পারছে না অভিকের কথাগুলো বারবার কানে বাজছে ।সে খুব লজ্জিত নিজের ভুলভাল ভাবনায় ।
অফিস আওয়ার শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ইশমি অভিকের কেবিনে আসল বইগুলো নেওয়ার জন্য আর অভিক কে ধন্যবাদ জানানোর জন্য।অভিক তাকে বইগুলো দিয়ে আবারো কালকের কথাগুলো রিপিট করল আগ্রহ নিয়ে পড়াশোনা করতে এবং আজ থেকেই পড়তে বসতে ।ইশমি মাথা ঝুলিয়ে অভিক কে হ্যাঁ বোঝাল আর তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বের হয়ে গেল কেবিন থেকে ।

অফিস আওয়ার শেষ অভিক এখনো নিজের কেবিনে বসে ফাইল ঘাটাঘাটি করছে ।সে ফাইলগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করে খুব দ্রুত নিজের কেবিন থেকে বের হয়ে এল ।অফিসের প্রায় সবাই চলে গেছে দুই একজন ছাড়া ।সে প্রিন্টার মেশিনের সামনে এসে দেখল ইশমি নেই বের হয়ে গেছে অফিস থেকে সে ভাবল।
অভিকও অফিস থেকে বের হয়ে গেল ।একটু পরই আযান দিয়ে দিবে ।পশ্চিমে সূর্যটা লাল রক্তিম আভা ধারন করেছে ।সে গাড়ি স্টার্ট দিল নিজের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্য ।মাঝরাস্তায় খুব জ্যামের কারনে গাড়িটা থামাতে হল তাকে ।কিন্তু গাড়ির উইন্ডোর ডান দিকে তাকাতেই তার বুক ধক করে উঠল ।ইশমি রাস্তার কিনারে বসে আছে ।তার মনে হল ইশমি কাঁদছে ।সে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে গাড়ি থেকে নেমে ইশমির কাছে চলে গেল ।
সে যা ভেবেছিল তা-ই ঠিক ইশমি মাথা নিঁচু করে কাঁদছে ।পাশে বইগুলো এলোমেলোভাবে পরে আছে ।
অভিক ইশমির সামনে হাটুগেড়ে বসল আর তাকে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে ?
ইশমি মাথা তুলে অভিকের দিকে একপলক তাকিয়ে সাথে সাথে অভিক কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল ।
অভিক ইশমির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করল

কি হয়েছে কাঁদছো কেন ?

ইশমির কান্নার মাত্রা যেন আরো বেড়ে গেল ।অভিক আবারো তাকে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে ? ইশমি ফুঁপিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল

ছ্ ছিনতাইকারী ।ছিনতাইকারী আমার ব্যাগ টেনে নিয়ে গেছে ব্যাগে টাকাগুলো ছিল বলেই হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠল ।অভিক চেঁচিয়ে বলল হোয়াট ! সে ইশমির মাথাটা আলতো করে নিজের বুক থেকে সরিয়ে নিল তারপর দু হাত দিয়ে ইশমির গালদুটো ধরে মুখটা উঁচু করে তার চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলল

মাত্র এই কয়টা টাকার জন্য এভাবে কাঁদতে হয় হুম ?

ইশমি করুন চেহারা নিয়ে তাকাল অভিকের দিকে ।তাতে অভিক যা বুজার বুজে গেল ।সে বলল

কান্না থামাও ।কতক্ষণ আগে নিয়ে গেছে আর কোনদিকে গেছে ?

ইশমি চোখ মুছে ভাঙা ভাঙা গলায় জবাব দিল কিছুক্ষণ আগে।হাত দিয়ে ইশারা করে বলল এদিক দিয়ে ।

অভিক বইগুলো গুছিয়ে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে পরল আর ইশমিকে বলল

চলো ।

ইশমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে উদাসমুখে অভিক কে জিজ্ঞেস করল কোথায় যাবো ?

অভিক ইশমির কথার জবাব না দিয়ে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিল তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল

টাকাগুলো উদ্ধার করবো ।

অভিকের কথা শুনে ইশমি একটা আশার আলো খুঁজে পেল ।

চলবে,
@Nusrat Hossain