মনের আড়ালে পর্ব-১৭

0
1251

#মনের_আড়ালে
Part_17
লেখনীতে – #Nusrat_Hossain

অভিক জানে না ছিনতাইকারীকে আদৌ ধরতে পারবে কিনা ? টাকা উদ্ধার করার কথাটা সে ইশমির মনের শান্তির জন্য বলেছে নাহলে দেখা যেত রাস্তায় বসে বসে ঐভাবেই কাঁদত মেয়েটা ।সে খুব ভালোভাবেই জানে ইশমির এখন টাকা কতটা প্রয়োজন ।সে গাড়ি চালাতে চালাতে আড়চোখে একবার ইশমির দিকে তাকাল ।চোখেমুখে একরাশ চিন্তা নিয়ে বসে আছে ইশমি।গাড়িটা অফিসের রাস্তা ছেড়ে অনেক দূর পর্যন্ত চলে গেছে ।কিন্তু ছিনতাইকারীর কোনো হুদিশ পায়নি তারা ।রাত নেমে গেছে ।অন্ধকারে ছেয়ে গেছে চারপাশ ।
ইশমি থমথমে গলায় বলে উঠল ফিরে চলুন অন্ধকার হয়ে গেছে ।

অভিক গাড়িটা থামিয়ে চারদিকে চোখ বুলিয়ে বলল গাড়িতে বসে খুঁজে পাবো না । আমাদের গাড়ি থেকে নেমে খুঁজতে হবে ।

ইশমি আগের মতই থমথমে গলায় বলল
ফিরে চলুন । আমার জন্য আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না ।

অভিক ইশমির দিকে ভ্রু কুচঁকে তাকিয়ে বলল ফিরে যাবো ?তাহলে আর কি গাড়ি ঘুরাই ।

ইশমি অভিকের কথা শুনে মনে মনে খুব ব্যথিত হল ।সে তো এমনি-ই অভিক কে কথাটা বলেছে ।অভিক তো জানে তার পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা আর টাকাটা যে এই মুহূর্তে তার কতটা প্রয়োজন সেটাও তো জানে সে ।
কতদিন হয়েছে বাসার কেউ ভালোমন্দ মুখে দিতে পারেনি ।ইশমির ভাবনার মাঝেই অভিক ইশমিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল

ভাবাভাবি শেষ হলে এবার গাড়ি থেকে নামা যাক এমনিতেই অনেক লেট হয়ে গেছে ।

ইশমি অভিকের দিকে চমকে তাকাল ।অভিক বলল এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই আমি তোমায় খুব ভালোভাবেই চিনি ।

ওরা গাড়ি থেকে নেমে পরল ।অভিক নিজের মুঠোফোনের টর্চটা অন করে নিয়ে ইশমির হাতটা শক্ত করে ধরে হাটতে লাগল ।
অভিক হাটতে হাটতে ইশমিকে জিজ্ঞেস করল ছিনতাইকারীর চেহারা দেখেছো ?

ইশমি বলল চেহারা দেখতে পাইনি ওরা দুইজন ছিল বাইকে করে এসেছিল , হেলমেট দিয়ে মুখ ডাকা ছিল ওদের ।এইজন্য ওদের চেহারা আমি দেখতে পাইনি ।

ওরা হাটতে হাটতে অনেক দূর পর্যন্ত চলে গেছে ।ওরা হাটা থামিয়ে দিল কারন সামনে বিশাল পাট ক্ষেত ।আশেপাশে কোনো জনমানবও নেই ।একটা পোকার আওয়াজও শোনা যাচ্ছে না ।জায়গাটা এতোটাই নিরব আর শুনশান ।

ইশমি ভয়জড়িত গলায় বলে উঠল
অভিক আমাদের ফিরে যাওয়া উচিত ।এই জায়গাটা ভালো মনে হচ্ছে না ।আশেপাশে তো কোনো মানুষও দেখা যাচ্ছে না ।চলুন ফিরে যাই ।

অভিক চারপাশ তাকিয়ে বলল
এখন বাজে মাত্র সাড়ে আটটা জায়গাটা এত শুনশান কেন ? আমারো মনে হচ্ছে এখানে থাকাটা আর ঠিক হবে না ।অভিক ইশমির দিকে তাকাল ইশমির চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট ।তাই সে ইশমির হাতটা আরো শক্ত করে ধরল তারপর উল্টো ঘুরে হাটতে লাগল ।ওরা হেটে যাচ্ছিল এমন সময় একটা লোক ওদের দিকে টর্চ লাইট মারল আর জিজ্ঞেস করল

আপনারা কারা ? এত রাতে এইখানে কি করতাসেন ?

অভিক সোজাসাপ্টা গলায় জবাব দিল আমাদের টাকা ছিনতাই হয়েছে তাই খুঁজতে খুঁজতে এখানে আসা ।

লোকটি ওদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল
আপনারা আর সামনে আগাইতে পারবেন না ।

অভিক আর ইশমি একসাথে জিজ্ঞেস করল কেন ?
অভিক বলল আমরা এই রাস্তা দিয়েই এসেছি ।এখন যেতে পারবো না কেন ?

লোকটি জবাব দিল ঐ রাস্তাটা ভালা না ।ঐ রাস্তায় গেলেই এই মুহূর্তে বিপদ লাশ হইয়া যাইবেন আপনারা ।রাত আটটা বা নয়টার দিকে ঐ রাস্তায় ডাকাত হামলা করে ।দুই দিন আগেও একজনের লাশ পাওয়া গেসে ।দেখতাসেন না কেমন শুনশান ? কোনো মানুষ নাই ।আমি কাজ থেকে ফিরতাসিলাম ভাগ্যিস আপনাদের দেখতে পাইলাম।অনেকক্ষণ ধরে আপনাদের দূর থেকে লক্ষ্য করতাসিলাম ।আপনারা ঐ রাস্তার দিকেই যাইতাসিলেন তাই আটকাইলাম জাইন্নাহুইন্না তো আর আমি কাউরে বিপদে ফালাইতে পারিনা ।এখন যদি আপনারা রাজি থাকেন তো আমার বাসায় আজকার রাতটা আপনারা কাটাইতে পারেন ।

অভিক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল আমাদের কোনো সমস্যা নেই ।যেহেতু রাস্তাটা ভালো না তাই শুধু শুধু নিজদের লাইফ রিস্ক নিতে চাই না ।আমরা আজকের রাতটা আপনার বাসাতেই থাকতে পারবো কোনো সমস্যা নেই ।অভিক আরো কিছু বলতে নিলেই

ইশমি উঁচু হয়ে অভিকের কানে ফিসফিস করে বলল আমায় বাড়ি ফিরতে হবে আমার থাকা সম্ভব না ।অভিক ইশমির দিকে চোখ গরম করে তাকাল ।ইশমি অভিকের রাগ দেখে দমে গেল ।

লোকটি বলে উঠল তাহলে চলেন আমার বাড়ি ।এই ক্ষেতটা পার হইলেই আরো কিছুটা দূরে গেলেই আমার বাড়ি ।

লোকটি সামনে হাটছে ।লোকটির পিছু পিছু অভিক আর ইশমি হাটছে ।দুইদিকে ধানক্ষেত আর মাঝখানে চিকন রাস্তা ।অভিক পেছনে , মাঝখানে ইশমি আর লোকটি সামনে হাটছে ।
রাস্তাটা যেন শেষ হচ্ছে না আর দুইদিকে পাটক্ষেত থাকার কারনে ইশমির গা আরো ছমছম করছে ।ইশমি ভাবছে এখন যদি পাটক্ষেতের ভেতর থেকে কোনো জন্তু বা জানোয়ার এসে ওদের উপর হামলা করে তখন কি হবে ?
ভাবতেই শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায় ।
অভিক হঠাৎ পেছন থেকে ইশমির কানে ফিসফিস করে উঠল ।ইশমি ভয় পেয়ে বুকে তিনবার থুথু দিল ।ইশমি অভিকের দিকে অস্ফুটভাবে বলল এভাবে ফিসফিস কেন করছেন ? আমায় ভয় পাইয়ে দিয়েছেন ।অভিক হাটতে হাটতে বাঁকা হেঁসে বলল

ভাবো তো ইশমি এখন যদি এই লোকটা পেতনি হয়ে যায় তাহলে কি হবে ? ধরো লোকটা হঠাৎ করে পেতনির রুপ ধারন করল এত বড় লাল রক্তমাখা জিব , বড় বড় রাক্ষুসীদের মত চোখ , রাক্ষুসীদের মত বড় বড় দাঁত বের করে তোমার সামনের দিকে ঘুরল তখন কি হবে ? আর তোমার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তোমার হাড্ডিগুড্ডি খাওয়ার জন্য ভেবে দেখো তো কি হবে ?

ইশমি অভিকের কথা শুনে দাঁড়িয়ে পরল ।ভয়ে ডোক গিলল সে ।অভিক কে ভীত গলায় বলল আপনি মাঝখানে আসুন আমি পেছনে যাবো ।অভিকের খুব হাসি পাচ্ছে সে হাসিটা চেঁপে রেখে সামনে আসল।ইশমি পেছনে হাটতে লাগল আর অভিক সামনে হাটতে লাগল ।পেছনে হাটতেও ইশমির খুব ভয় করছে ।মনে হচ্ছে ওর পিছু পিছু কেউ হাটছে ।ভয়ে পেছনে ফিরে তাকানোর সাহসও পাচ্ছে না ।অভিকের দুষ্টুমি থামলো না সে আবার ইশমিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল

ইশমি তুমি ঐ শাকচুন্নির কার্টুন টা দেখেছো ? আবার দা নান মুভি টা দেখেছিলে কি ভয়ংকর !ভুত হয়ে মানুষের শরীরের রক্ত চুষে খায় আবার মানুষের শরীরের গোশতও খেয়ে ফেলে কামড়ে কামড়ে অভিক রসিয়ে রসিয়ে দা নান মুভির কাহিনীটা বলতে শুরু করল । ইশমি পেছন থেকে ভীতিকন্ঠে অভিকের কমোর খামচে ধরে বলল চুপ করুন প্লিজ।আপনি পেছনে আসুন ,আর আমায় সামনে দিন ।অভিক আবার পেছনে আসল মনে মনে তার দম ফাটা হাঁসি পাচ্ছে ইশমিকে ভয় দেখিয়ে ।ইশমি নিজের হাতের মুঠোয় অভিকের এক হাত জড়িয়ে ধরে সামনে হাটতে লাগল ।অভিক কিছু বলল না বোজাই যাচ্ছে ইশমি ঠিক কতটা ভয় পেয়েছে ।
লোকটি ওদের থেকে অনেক দূরে চলে গেছে ।অভিক আর দুষ্টুমি করল না ইশমির সাথে ।ওরাও জোড়ে জোড়ে কদম চালাল লোকটির সাথে থাকার জন্য।
একসময় হাটতে হাটতে ক্ষেত টা পার হলো ওরা ।লোকটা ওদের একটা বাড়িতে নিয়ে গেল ।ওরা বাড়ির সামনে এসে দেখতে পেল একটা ছোট খাট টিনের ঘর ।বেশ পুরোনো ঘরটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে ।লোকটি ওদের ঘরে নিয়ে ঢুকল ।ঘরে তিনটা ছোট ছোট রুম ।লোকটি তার স্ত্রীর সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দিল ।লোকটির স্ত্রী ওদের দিকে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে লোকটিকে টেনে নিয়ে গেল ওদের থেকে
কিছুটা দূরে । কি যেন বলছে ভদ্রমহিলা তার স্বামীকে ?
তা অভিক আর ইশমির কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না ।
কিছুক্ষণ পর লোকটি আর তার স্ত্রী ওদের কাছে ফিরে এসে বলল

আপনারা তো স্বামী স্ত্রী তাই না ?

সাথে সাথে অভিক মাথা ঝুলিয়ে হ্যাঁ বোঝাল আর ইশমি মাথা নাড়িয়ে না বোঝাল ।
লোকটি আর তার স্ত্রী ওদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল ।
অভিক ইশমির দিকে একবার গরম চোখে তাকিয়ে সোজাসুজিভাবে বলে উঠল

আমরা বিবাহিত ।তিনমাস আগে আমাদের রেসিস্ট্রি করে বিয়ে হয়েছে তাই না ?বলেই অভিক ইশমির দিকে তাকাল ।

ইশমি থমথমে চেহারায় মাথা ঝুলিয়ে ওদেরকে হ্যাঁ বোঝাল ।

ওদের উত্তর শুনে লোকটি আর তার স্ত্রীর মুখে হাঁসি ফুটল ।তারা রাতের খাবার খেতে দিল ইশমি আর অভিক কে ।খাওয়া শেষে ভদ্রমহিলা ঘরের ছোট একটা রুমে ইশমি আর অভিক কে বিছানা করে দিল ঘুমানোর জন্য ।ইশমি ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে অভিকের দিকে ।অভিক ঠোট কামড়ে বসে আছে ঘরের কোণে কাঠের চেয়ারটায় ।তার চেহারায় কোনো চিন্তা নেই ।তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সবকিছু স্বাভাবিক । সত্যি সত্যি তারা দুজন স্বামী স্ত্রী ।

চলবে,
@Nusrat Hossain