মনের আড়ালে পর্ব-১৯

0
1216

#মনের_আড়ালে
Part_19
লেখনীতে – #Nusrat_Hossain

ইশমি বাড়িতে ঢুকে দেখতে পেল সবাই এখনো ঘুমে ।সে খুব সন্তর্পনে নিজের রুমে ঢুকে দরজাটা আটকে দিল ।তিথি এখনো ঘুমে ।ইশমির আর তাকে জাগাতে ইচ্ছা করলনা ।সে জামাকাপড় নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেল গোসল করার জন্য ।গোসল শেষে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখল তিথি বসে আছে বিছানার উপর দুপা ঝুলিয়ে ।তাকে দেখে জিজ্ঞেস করল

কখন আসলি ?

ইশমি চুল মুছতে মুছতে বলল কিছুক্ষণ আগে ।তুমি ঘুমে ছিলে তাই আর জাগাইনি ।ইশমি মুচকি হেঁসে তিথির পাশে বসে বলল

আপু আমি কালকে রাতে আমার মনের সব অনুভূতির কথা অভিক কে জানিয়ে দিয়েছি ।

তিথি ইশমির দিকে বড় বড় চোখ করে তাকাল ।সে খুশিতে চিৎকার দিতে ভুলে গেছে ।সে ঠোটদুটো চেঁপে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইল ।তারপর ইশমিকে জিজ্ঞেস করল

অভিক কি বলল ?

ইশমি ঠোট কামড়ে বলল উনি সব সমস্যার সমাধান করবে বলেছে ।

তিথি বলল কিভাবে তোর ডাইনি মা মানবে ? নিজের মেয়ের ভালো জায়গায় বিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত তোর বিয়ে জীবনেও হতে দিবেনা ।

ইশমির চোখেমুখে কালো আধার ছেয়ে গেল ।সে মিনমিনে গলায় বলল

আপু আমি অনেক সাহস করে উনাকে নিজের মনের সব কথা জানিয়েছি ।আমার এত সাহস কোনোদিনও ছিলো না কিন্তু কালকে রাতে আমার কি হল জানি না ? নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি আমার মনের সব কথা তাকে বলে দিয়েছি ।আমি তাকে আর হারাতে পারবো না ।তাকে আর কষ্ট দিতে পারবোনা ।

তিথি ইশমির বাহুদ্বয় জড়িয়ে ধরে বলল এতদিনে কাজের কাজ করেছিস ।

ইশমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে মুচকি হেঁসে বলল টাকাগুলোও পেয়ে গেছি ।

তিথি বলল সত্যি !

ইশমি মাথা ঝুলিয়ে হ্যাঁ বোঝাল আর বলল অফিসের জন্য রেডি হতে হবে আমায় নাহলে অফিসে পৌঁছাতে লেট হয়ে যাবো ।ইশমি আর কথা না বাড়িয়ে রেডি হয়ে মুখে কিছু দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে এল অফিসের উদ্দেশ্য ।

সে রিকশা দিয়ে যাচ্ছিল আর অমনি একটা গাড়ি এসে থামল ।অভিক গাড়ি থেকে নেমে রিকশার ভাড়াটা দিয়ে ইশমিকে নামতে বলল ।ইশমি ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে অভিকের দিকে তাকিয়ে আছে ।ইশমি নামছে না দেখে অভিক তাকে টেনে নামাল তারপর গাড়িতে বসিয়ে দিল আর সে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে পরল ।অভিক ইশমির হাতের উল্টো পিঠে চুমু খেয়ে বলে উঠল

আজকে থেকে আমি প্রতিদিন এখানে গাড়ি নিয়ে ওয়েট করব তোমার জন্য তারপর আমরা একসাথে অফিসে যাবো ।

ইশমি অভিকের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল একসাথে অফিসে যাওয়াটা ঠিক হবে না ।তাছাড়া সবাই ভাববে কি !

অভিক ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল
আই ডোন্ট কেয়ার ।যা ইচ্ছে ভাবুক আর যা ইচ্ছে বলুক ।সে গাড়িটা স্টার্ট দিল ।
ইশমি আর কিছু বলল না ।অভিক অনেক ঘ্যাড়ত্যারা টাইপের সে জানে ।সে হাজারবার বললেও অভিক শুনবেনা ।নিজের মন মর্জি মতই চলে সে ।
অভিক অফিসের সামনে এসে গাড়িটা থামিয়ে দিল ।
অভিক আর ইশমি অফিসের ভেতরে গিয়ে লিফটে ঢুকে গেল ।আপাতত লিফটে কেউ নেই তারা দুজন ছাড়া ।অভিক ইশমির ঘা ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে ।অভিকের মনে এই মুহূর্তে একটা সুপ্ত ইচ্ছা জেগে উঠল ।সে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ইশমির কমোর জড়িয়ে ধরে তার খুব কাছে টেনে আনল ।যে-ই না ইশমির মুখের উপর ঝুকতে যাবে অমনি লিফট খুলে গেল ।
অভিক অসহায়চোখে ইশমির দিকে একবার আর একবার লিফটের ডোরের দিকে তাকাল ।ইশমি ঠোটের কোণের হাঁসিটা প্রস্তত করে লিফট থেকে বের হয়ে গেল ।অভিক অসহায়মুখে লিফট থেকে বের হয়ে নিজের কেবিনে গেল ।

ইশমি আগের মতই নিজের কাজে মন দিল ।
এদিকে অভিক নিজের কাজে মন দিতে পারছেনা ।একটু পর পর ফাইল ঘাটাঘাটি করছে আবার দেখা যাচ্চ্ছে ফাইল বন্ধ করে টেবিলের একপাশে রেখে দিচ্ছে ।সে ইশমিকে ডেকে পাঠাল নিজের কেবিনে ।ইশমি কেবিনের সামনে এসে ডোর নক করল ।অভিক মুচকি হেসে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ডোরের সামনে গেল তারপর ডোরটা খুলে ইশমির হাত ধরে টেনে কেবিনের ভেতরে আনল । ডোরটা বন্ধ করে দিয়েই ইশমিকে শক্ত করে ঝাপটে ধরল ।ইশমি ভ্রু কুঁচকাল ।সে মিনমিনে গলায় বলল

কেউ এসে পরবে ছাড়ুন প্লিজ ।অভিক ইশমির কথা কানেও নিল না ।

ইশমি বলে উঠল আপনি কিন্তু আপনার রুলস ব্রেক করছেন ।

অভিক ইশমিকে জড়িয়ে ধরা রাখা অবস্থাতেই বলল ফা* ইউর রুলস ।আমি এখানে কাজে মন দিতে পারছিনা তোমার জন্য ।আর তুমি রুলস নিয়ে পরে আছো বলতে না বলতেই ইশমি রাগে অভিকের পিঠে খামচি মারল ।অভিক মাঝেমধ্যে অনেক স্লাং ইউজ করে ।তার খুব রাগ হয় ।সে আগেও ভার্সিটি থাকতে এই বিষয়ে কিছু বলতে নিলেই অভিক সব সময়ের মত ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখিয়ে বলবে অভ্যাস হয়ে গেছে ।তাই সে আর এখন কিছুই বলেনা অভিক কে ।

অভিক ইশমিকে ছেড়ে দিয়ে ইশমির গালে টুপ করে চুমু দিয়ে টেবিলের উপর থেকে একটা প্যাকেট নিয়ে ইশমির হাতে দিল ।ইশমি প্যাকেট টা হাতে নিয়ে অভিক কে জিজ্ঞেস করল

এটা কি ?

অভিক নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল খুলে দেখ ।

ইশমি একবার অভিকের দিকে তাকিয়ে প্যাকেট টা খুলল ।প্যাকেট টা খুলে সে অবাকের চরম পর্যায় ।সে মুখ টা করুন করে অভিক কে বলল আমি এটা নিতে পারবো না ।

অভিক ইশমির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল ।সে তেজী গলায় বলল

তাহলে প্রেম করব কিভাবে রাতে ?মাঝেমধ্যে দেখতে ইচ্ছে হলে তোমায় দেখব কিভাবে ?

ইশমি মুখ পানসে করে বলল আইফোন এলিভেন অনেক দাম এটার ।আমি এটা রাখতে পারবো না প্লিজ অভিক ।ইশমি নাক ফুলিয়ে বলল আপনি যদি এটা নিয়ে এখন বাড়াবাড়ি করেন , তো আর আমি কোনোদিন আপনার সাথে কথাই বলব না ।

অভিক ভ্রুযুগল করে বলল আমায় ভয় দেখাও ? এইটুকুন মেয়ে আমায় ভয় দেখায় !তোমার হাত পা না ভেঙ্গে দিব আমি আমার সাথে কথা বলা অফ করলে ।
তোমার সাথে হুটহাট কথা বলতে ইচ্ছে করলে কথা বলল কিভাবে ?ফোনের কি প্রয়োজন নেই তোমার ?

ইশমি মুচকি হেসে বলল আজকে একটা ফোন কিনে নিব নিজের সাধ্যমতো ।
অভিক আর ইশমিকে জোড় করলো না । ইশমি বলে উঠল

তাহলে আমি যাই এখন ।কাগজ প্রিন্ট করতে হবে ।অভিক ইশমির হাতদুটো ধরে বলল লাঞ্চ টাইমে একসাথে লাঞ্চ করবো আমরা ।

ইশমি বলে উঠল কিন্তু !

অভিক নির্লিপ্তভঙ্গিতে বলল কোনো কিন্তু না ।আমরা প্রতিদিন একসাথেই লাঞ্চ করব আজকে থেকে ।এখন যাও ।
ইশমি আর কিছু বলল না ।সে চলে যেতে নিলেই অভিক বলল

শোন ।

ইশমি ঘুরে তাকাল অভিকের দিকে ।আর অমনি অভিক টুপ করে ইশমির গালে চুমু খেয়ে ঠোট কামড়ে মুচকি হেঁসে বলল যাও ।
ইশমি অভিকের দিকে রাগী দৃষ্টিতে একপলক চেয়ে বের হয়ে গেল কেবিন থেকে ।

লাঞ্চ টাইমের সময় হয়ে গেছে ।অভিক কেবিন থেকে বেরিয়ে ইশমিকে সাথে নিয়ে সোজা পাশের রেস্টুরেন্ট টাতেই ঢুকল ।অফিসের সব স্টাফরা লাঞ্চ টাইমে এই রেস্টুরেন্টটা তেই লাঞ্চ করে ।সব স্টাফরা তাদের দিকে ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে ।ইশমি তার হাত ধরে রাখা অভিকের হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করল কিন্তু পারল না ।উল্টো অভিক তার হাত ধরে টেনে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিল আর সে ইশমির পাশের চেয়ারটাতে বসে ওয়েটারকে ডেকে খাবার অর্ডার করল ।
অফিসের সব স্টাফরাসহ তিন্নি , জাহান ,আর রিনা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অভিক আর ইশমির দিকে ।তারা খাবার না খেয়ে ওদের দিকেই ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে ।আর এদিকে ইশমির খুব অসস্তি হচ্ছে ।কিন্তু অভিক ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখিয়ে তার সাথে সেটে বসে আছে ।কিছুক্ষণের মধ্যে খাবার এসে পরলে অভিক তাকে খাবার সার্ভ করে দিল আর নিজেও নিল ।অভিক খাওয়ার মাঝেমাঝে ইশমির ঠোটে লেগে থাকা খাবার নিজের হাত দিয়ে মুছে দিচ্ছে ।ইশমি অভিকের কমোরে চিমটি কেটে দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল

এটা কি হচ্ছে ?

অভিক ইশমির কানের সামনে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল ওরা দেখুক জানুক আমরা প্রেম করছি ।
ইশমি চোখ বড় বড় করে তাকাল অভিকের দিকে ।
লাঞ্চটাইম শেষে আবার নিজেদের কাজে মন দিল তারা ।
অভিক কিছুক্ষণ পর কেবিনে জমিয়ে রাখা ফাইলগুলো গুছিয়ে ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে গাড়ির চাবিটা হাতের আঙ্গুলে ঘুরাতে ঘুরাতে কেবিন থেকে বেরিয়ে ইশমির সামনে এসে দাঁড়াল ।তারপর কোনরকম বাকবিনিময় না করেই ইশমির হ্যান্ডব্যাগ টা হাতে নিয়ে চলতে শুরু করল ।ইশমি হতবাক অভিকের কর্মকান্ডে ।সে কিছু বলার আগেই অভিক পেছনে ফিরে তাকে তার পিছু পিছু আসার জন্য ইশারা করল ।
ইশমি আর কিছু না বলে অভিকের পিছু পিছু চলে গেল ।তার কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না ।ইশমি দ্রুত পায়ে হেঁটে অভিকের সামনে এসে জিজ্ঞেস করল

অফিস আওয়ার তো শেষ হয়নি এখনো ।আমরা কোথায় যাচ্ছি ? অভিক ইশমির প্রশ্নের কোনো জবাব দিল না সে ইশমির কমোরে এক হাতে জড়িয়ে ধরে ইশমিকে নিয়ে লিফটে ঢুকে গেল ।
অগত্যা ইশমি চুপচাপ রইল ।
তারা নিচে নেমে এসে দেখতে পেল সাদাত চৌধুরিকে ।সাদাত চৌধুরীকে দেখে ইশমি অভিকের পিছে ঘুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে রইল ।ইশমির সাদাত চৌধুরীর সামনে খুব অসস্তি হচ্ছে আর ভয়ও করছে ।আর এদিকে অভিকটা তার হাত শক্ত করে ধরে আছে ।সে অভিক কে খুব বকল মনে মনে ।

অভিক বাবাকে বলে উঠল
আমি এক জায়গায় যাচ্ছি বাবা ।তুমি সামলাও এদিকটা আজকের জন্য ।

সাদাত চৌধুরী ছেলের কথায় কিছু বলল না ।শুধু মুচকি হাঁসল ।

অভিক ইশমিকে নিয়ে গাড়িতে বসল আর গাড়ি স্টার্ট দিল।
ইশমি আর না পেরে অভিক কে মিনমিনে গলায় আবার জিজ্ঞেস করল

আমরা যাচ্ছি কোথায় ?একটু বলবেন প্লিজ !

অভিক ঠোট কামড়ে মুচকি হেঁসে বলল
সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য ।বলা যাবেনা গেলেই দেখতে পাবে ।
অগত্যা ইশমি আর কিছু বললনা ।চুপচাপ সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে বসে রইল ।

হঠাৎ করে আকাশ গুড়ুম গুড়ুম করতে শুরু করল ।ইশমি চোখ খুলে চমকে তাকাল ।মুহুর্তেই আকাশটা কালো অন্ধকারে ছেয়ে গেছে ।সে অভিক কে বলল

শুনুন বৃষ্টি হবে মনে হয় আমাদের ফিরে যাওয়া উচিৎ ।অভিক ইশমির কথা কানে নিল না সে তারমত ড্রাইভ করতে করতে দুষ্টু হাঁসি দিয়ে বলল

ভালোই তো হবে একটা রোমান্টিক ডেট হয়ে যাবে আমাদের । উফফফ আই কান্ট ওয়েট এনিমোর ।

ইশমি রাগে অভিকের বাহুতে ধুম করে কিল মেরে বসল ।

চলবে,
@Nusrat Hossain