#মনের_আড়ালে
Part_21
লেখনীতে – #Nusrat_Hossain
হাফসা বেগম ইশমিকে কর্কশ গলায় বলে উঠল
তোর বসরে বলছিলি বেতন বাড়ায়া দিতে ?তা কত টাকা বাড়াইল ?
হাফসা বেগমের কথা কানে আসতেই ইশমি শোয়া থেকে উঠে দাঁড়াল আর মায়ের দিকে ভীত দৃষ্টিতে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে জবাব দিল
– না ।
হাফসা বেগমের চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল ।তিনি কিছুক্ষণ সাপের মত ফোসফোস করে নিজেকে শান্ত করলেন তারপর কর্কশ গলায় বলে উঠল
– এত কম টাকায় সংসার চলব না ।আজকে বলিস নাই মাফ করলাম কিন্তু কালকে যদি তোর মুখ থেকে না শুনি তাইলে তোর মুখ-ই ভেঙে দিব আমি ।
ইশমির খুব রাগ হল হাফসা বেগমের কথা শুনে ।সে মুখ ফুঁটে বলল
অফিসটা আমার নানার না যে যখন মন চায় তখন টাকা চেয়ে বসব আর তারা আমায় টাকা দিয়ে দিবে।আমার পক্ষে সম্ভব না আপনার এই কথাটা রাখা ইশমি বলতে না বলতেই হাফসা বেগম ইশমির গালে ঠাস করে থাপ্পড় মেরে বসল।ইশমি গালে হাত দিয়ে স্থির দৃষ্টিতে তাকাল হাফসা বেগমের দিকে ।হাফসা বেগম ওকে শুধু থাপ্পড় মেরে-ই ক্ষ্যন্ত হলনা ইশমির গালদুটো শক্ত করে চেঁপে ধরে বলল তোর অনেক সাহস বাড়সে না ? আমার মুখের উপর কথা বলিস একদম মুখ ভেঙে দিব আমি তোর ।ইশমির চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে ।
তিথি রুমে ঢুকে হতভম্ব হয়ে গেল ।সে ত্বড়িতগতিতে হাফসা বেগমকে ইশমির থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল ।হাফসা বেগম তিথির দিকে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ইশমির গালদুটো আরো শক্ত করে চেঁপে ধরে বলল
কালকেই জানি আমি শুনতে পাই বেতন বাড়ায়া দিসে নাহলে তোর খুব খারাপ হবে এটা বলেই তিনি ইশমিকে ধাক্কা মেরে গটগট করে চলে গেলেন ।
ইশমি ব্যথায় গালে হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পরল ।সে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইল তারপর চোখটা মুছে ব্যগ থেকে বাকিসব টাকাগুলো বের করে হাতে নিয়ে হাফসা বেগমের রুমে ঢুকল ।হাফসা বেগম তখন বিছানায় বসে রাগে ফোসফোস করছিলেন সে কোনো বাকবিনিময় না করে টাকাগুলো বিছানায় ছুরে মেরে তেজী গলায় বলল
আপনি আর আমায় কোনোকিছুর জন্য কোনোরকম জোড় করবেন না আর করেও লাভ নেই আমি আর শুনবো না আপনার কথা বলেই হুড়হুড় করে চলে গেল ।
হাফসা বেগমের চোখ টাকাগুলো দেখে চকচক করে উঠল ।উনি আর একমুহূর্তও সময় বের না করে টাকাগুলো হাতে নিয়ে গুনতে লাগলেন ।
সকালে অভিক ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে বসল ।ডাইনিং টেবিলে তার পরিবারের সবাই উপস্থিত । সবাই এতক্ষণ তার জন্যই অপেক্ষা করছিল ।
রাফিয়া রহমান তার প্লেটে নাস্তা সার্ভ করতে করতে বলল
তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে বাবা ।
অভিকসহ সবাই রাফিয়া রহমানের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাল ।
আফরিন মুখ পানসে করে বলে উঠল ও আম্মু আমাকেও কিছু সারপ্রাইজ দাও । সবাই শুধু ভাইয়াকে-ই সারপ্রাইজ দাও তোমরা ।রাফিয়া রহমান মেয়ের কথায় মুচকি হেঁসে বললেন তোমার সময় হোক তোমাকেও এমন সারপ্রাইজ দিব ।
অভিক মায়ের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তার কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না ।
অভিকের চাচী রেহানা মুখ ফসকে বলে উঠল আজকে তো রিসা্ বলতেই রাফিয়া রহমান তাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে থামিয়ে দিলেন ।রায়হান চৌধুরী স্ত্রীর দিকে চোখ গরম করে তাকালেন।অভিকসহ সবাই এবার রেহানার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকাল ।তিনি জিবে ছোট করে কামড় দিয়ে হেঁসে বললেন না না কিছু না তোমরা সবাই নাস্তা করো আমি তো এমনি বলছিলাম আরকি ।
অভিক আর নাস্তা করতে পারলনা ।রিসার নাম শুনে বিরক্তিতে তার চোখমুখ কুঁচকে গেল ।সে অফিসের উদ্দেশ্য বের হয়ে গেল আজকে অফিসে মিটিং আছে একটা । তাকে তাড়াতাড়ি করে পৌঁছাতে হবে অফিসে।তার লেট হলে চলবেনা ।তাই সে চাইলেও ইশমিকে আজ সাথে নিয়ে অফিসে যেতে পারবেনা ।সে ইশমিকে একটা ম্যাসেজ করে পাঠিয়ে দিল তার জন্য যাতে অপেক্ষা না করে ।
ইশমি সকালে ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি করে কিছু মুখে দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্য বের হয়ে গেল ।আজকে তার লেট হয়ে গেছে ।সে সিএনজি থেকে নেমে অফিসে তাড়াহুড়ো করে ঢুকতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পরে যেতে নিল কিন্তু একজোড়া হাত তার কমোর ধরে ফেলল ।ইশমি চোখমুখ খিঁচে আছে ।সে চোখ খুলে দেখতে পেল একজন চব্বিশ বা পঁচিশ বছর বয়সি ছেলে তাকে ধরে রেখেছে ।সে নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়াল ।ছেলেটি তাকে মুচকি হেঁসে বলল
একটু আস্তে ধীরে যান ।আরেকটু হলে তো পরেই যেতেন ।আমি না ধরলে হয়ত আপনার কমোরটাই ভেঙে যেত বলেই ছেলেটা হোঁ হোঁ করে হেঁসে উঠল ।বাই দা ওয়ে আমি রুমান ।তুমি কি এই অফিসে চাকরি করো ?
ইশমি সৌজন্যমুলক হাঁসি দিয়ে বলল হ্যাঁ এই অফিসেই চাকরি করি আমি ।
রুমান বলল ওহ তাহলে তো ভালোই আমিও এই অফিসেই চাকরি করি ।এবার রুমান ইশমির উপর থেকে নিচ পর্যন্ত স্ক্যান করে বলল তোমার নামটা কি জানতে পারি মিস ?
ইশমির বিরক্ত লাগছে রুমান নামের ছেলেটাকে তারপরো মুখে হাঁসি ফুঁটিয়ে বলল
আমি ইশমি নুসাইবা বলেই আর একমুহূর্তও রুমানের সামনে না দাঁড়িয়ে লিফটে ঢুকে গেল ।রুমানও তাকে ফলো করে লিফটে ঢুকতে চাইল কিন্তু তার আগেই লিফট বন্ধ হয়ে গেল ।ইশমি লিফট থেকে বের হয়ে তার কাজের জায়গায় গেল কিন্তু গিয়েই অবাক হয়ে গেল প্রিন্টার মেশিনটা নেই সেখানে ।সে এদিকসেদিক খুঁজতে লাগল কিন্তু প্রিন্টার মেশিনটা নেই ।সে মুখ মলিন করে বসে রইল ।অমনি অফিসের পিওন এসে তাকে বলে উঠল
প্রিন্টার মেশিন অন্য জায়গায় শিফট করা হয়েছে আমার সাথে আসুন ।ইশমি পিওনের পিছু পিছু গিয়ে হতভম্ব হয়ে গেল
প্রিন্টার মেশিনটা একদম অভিকের কেবিনের বরাবর রাখা হয়েছে ।লোকটার মনে যে কি চলে সব তার ধারনার বাইরে ।সে একবার বিষ্মিত দৃষ্টিতে অভিকের কেবিনে উঁকিঝুঁকি মারল কিন্তু অভিক কে দেখতে পেলনা ।তাই সে নিজের কাজে মন দিল ।একটু পর জাহান তার সামনে এসে দাঁড়াল ।জাহান মিটমিট করে হাঁসছে তার দিকে তাকিয়ে ।ইশমি জাহানের দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
কি হয়েছে আপু ? হাঁসছো কেন ?
জাহান ঠোটে মুচকি হাঁসি রেখেই বলল
তুমি আর অভিক স্যার রিলেশনশিপে আছো তাই না ? ও মাই গড আমি তো বিশ্বাস-ই করতে পারছিলাম না অভিক স্যার তোমায় ভালোবাসে !
জাহান এবার উৎসুক হয়ে ইশমিকে জিজ্ঞেস করল কিভাবে কি হল ? মানে কিভাবে তোমরা প্রেমে পরলে ? আমার অনেক জানতে ইচ্ছে করছে ইশমি বলো না ? অভিক স্যার তোমায় কিভাবে প্রপোজ করল ?
ইশমি থতমত খেয়ে গেল ।সে কি বলবে ?
ইশমি কিছু বলতে যাবে আর অমনি অ্যাসিস্ট্যান্ট ওসমান এসে জাহানের দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকাল ।মেয়েটা কাজ না করে খালি সারা অফিস ঘুরে বেড়ায় ওসমান ভাবে ।ওসমান জাহানকে কিছু কড়া কথা বলতে যাবে আর অমনি জাহান সেখান থেকে নিজের জান বাঁচিয়ে দৌঁড়ে কোনোরকমে পালাল ।
ওসমান জাহানকে লক্ষ্য করে ইশমির দিকে আগের মতই হেঁসে চলে গেল ।
আর ইশমিও আবার নিজের কাজে মন দিল ।সে কাগজ প্রিন্ট করছে তো আবার একটু পর পর অভিকের কেবিনের দিকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে তাকাচ্ছে ।কিন্তু ফলস্বরুপ অভিক কে দেখতে পেল না ।ব্যর্থ হয়ে আবার নিজের কাজে মন দিচ্ছে ।তিনঘন্টা হতে চলল অভিকের ছায়াটাও সে দেখতে পায়নি এখন পর্যন্ত ।
হঠাৎ করে পেছন থেকে কেউ তার কমোরে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে তাকে টেনে নিয়ে চলতে শুরু করল ।আচমকা এমন হওয়ায় সে ভয় পেয়ে গেল । চমকে তাকাল অভিকের দিকে ।সে মনে মনে বকল খারাপ লোক একটা তাকে ভয়-ই পাইয়ে দিয়েছে ।অভিক ইশমিকে নিয়ে সোজা নিজের কেবিনে ঢুকল ।
অভিক কেবিনের দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে ইশমিকে নিয়ে কেবিনের কোণার দিকটায় গেল ।এখানে বাইরে থেকে কিছু দেখা যায় না ।অভিক ইশমির কমোর টেনে তার খুব কাছে নিয়ে এল ।ইশমি তার দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।অভিক ইশমির গালে ঠোটজোড়া লাগিয়ে ফিসফিস করে বলল
একটা জিনিস শেখাবো তোমায় ।
ইশমি তার দিকে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
কি ?
অভিক ইশমিকে টেনে চেয়ারে বসিয়ে দিল তারপর ল্যাপটপটা ইশমির সামনে রাখল ।অভিক ইশমির পেছনে ঝুকে ল্যাপটপ টা অন করে বলল ল্যাপটপ চালানো শিখাবো ভবিষ্যতে কাজে লাগবে ।ইশমি অভিকের দিকে ঘাঢ় বাকাঁ করে তাকাল তারপর আবার ল্যাপটপের দিকে তাকাল ।অভিক তাকে ল্যাপটপ চালানো শিখিয়ে দিচ্ছে কিন্তু সে এট্যানশন দিতে পারছে না কারন অভিক তার খুব কাছে ।অভিক ইশমির গালে নিজের গাল ঠেকিয়ে , তার দুইদিকে নিজের দুই হাত ল্যাপটপে দিয়ে একদম তার পেছন থেকে ঘেষে তাকে ল্যাপটপ চালানো শিখাচ্ছে।মাঝে মাঝে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে অভিকের ঠোটজোড়া ইশমির গালে স্পর্শ করছে ।অভিকের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলো তার নরম গালে বেধ করছে ।ইশমি ল্যাপটপ চালানো শিখা তো দূর উল্টো ঘোরে চলে যাচ্ছে ।তার নিশ্বাস দ্রুত উঠানামা করছে ।মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে । শরীরের লোমগুলো কাঁটা দিয়ে উঠছে তার ।তার মনে হল এক্ষুণি অভিকের কাছ থেকে দূরে সরা দরকার নাহলে এমন দমবন্ধ করা অনুভূতিতে সে মরেই যাবে।সে যে-ই না চেয়ার থেকে উঠতে যাবে অমনি কেবিনের ডোর খোলার শব্দ হল ।অভিক আর ইশমি বিষ্মিত দৃষ্টি নিয়ে ঘাঢ় বাঁকা করে পেছনে ফিরে তাকাল ।ইশমি দেখতে পেল তিনজন অচেনা মানুষকে ।তিনজন অচেনা মানুষগুলো তার আর অভিকের দিকে কেমন গোলগোল চোখ করে তাকিয়ে আছে ।
চলবে,
@Nusrat Hossain