#মনের_আড়ালে
Part_22
লেখনীতে – #Nusrat_Hossain
অভিক ঘাড় বাঁকা করে দেখল তার চাচাত ভাই আবির , রিশা আর একটা মেয়ে সম্ভবত রিশার কোনো কাজিন বা ফ্রেন্ড হবে।অভিক সোজা হয়ে দাঁড়াতেই রিশা হুড়মুড়িয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল “অভিক কেমন আছো ডিয়ার ?” ইশমি অভিক আর মেয়েটির দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে ।অভিকের চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল সে ধাক্কা মেরে রিশাকে নিজের থেকে সরিয়ে দিল ।আর তার চাচাতো ভাই আবিরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল ।আবির তাকে চোখ দিয়ে ইশারা করল শান্ত হতে ।ইশমির মনে হল এখান থেকে তার যাওয়া প্রয়োজন ।অ তাই সে অভিকের দিকে একপলক তাকিয়ে গুটিগুটি পায়ে সেখান থেকে বের হয়ে গেল ।তখনি সাদাত চৌধুরী অভিকের কেবিনে ঢুকলেন ।তিনি ভেতরে ঢুকে দেখতে পেলেন ছেলে খুব রেগে আছে ।তিনি রিশার দিকে একপলক তাকিয়ে সবাইকে চলে যেতে বললেন । তিনি অভিকের সাথে একান্তে কথা বলতে চান।সবাই বের হয়ে গেলে সাদাত চৌধুরি কেবিনের দরজাটা চাঁপিয়ে ছেলেকে বললেন
শান্ত হয়ে বসো তো তুমি তোমার সাথে কথা আছে ।
অভিক বাবার কথায় চেয়ারে বসল আর সাদাত চৌধুরিও চেয়ারে বসে বলতে শুরু করলেন
রিশা এই অফিসে চাকরি করতে চায় অভিক । এমনকি তোমার মাও চায় রিশা এই অফিসে চাকরি করুক তাই সে রিশার হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়েছে ।
অভিক দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল কেনো ওর বাবার অফিস আছে না ? সেখানে চাকরি করুক আমাদের অফিসে কি ?
সাদাত চৌধুরি ছেলের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন তুমি রিশাকে একটু কষ্ট করে টলারেট করে নাও এই অফিসে ।
অভিক আগের মতই রাগে ফোসফোস করতে করতে বলল , না ।
সাদাত চৌধুরি একটু দম নিয়ে বললেন এখন যদি তুমি রিশাকে এই অফিসে চাকরি না দাও তোমার মা আরো উঠেপড়ে লাগবে তোমার আর রিশার বিয়ে দিতে ।তুমি তো জানো-ই তোমার মাকে ।
অভিক ভাবছে বাবা ঠিক-ই বলছে তার আম্মু অনেক জিদ্দি টাইপের মানুষ ।সত্যি সত্যি উনি এমনটা করতে পারে ।সে কিছুক্ষণ ভেবে বলল ঠিক আছে এই অফিসে চাকরি করুক কিন্তু ও যেন আমার থেকে দূরে থাকে নাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না ।
সাদাত চৌধুরি মুচকি হাঁসলেন ছেলের কথায় ।
লাঞ্চ টাইমে সাদাত চৌধুরি , রিশা আর তার ফ্রেন্ড , আবির আর অভিক এক টেবিলে লাঞ্চ করতে বসেছে ।অভিক অবশ্য প্রথমে রিশার সাথে একই টেবিলে লাঞ্চ করতে রাজী ছিল না কিন্তু ভাই আর বাবার জোড়াজুড়িতে একই টেবিলে লাঞ্চ করতে বসেছে ।অভিক রেস্টুরেন্টের চারদিক তাকিয়ে ইশমিকে খুঁজছে কিন্তু মেয়েটাকে কোথাও দেখতে পেলনা ।
জাহান , তিন্নি আর রিয়া রেস্টুরেন্টে ঢুকলে অভিক তাদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করল ইশমিকে দেখেছে কিনা ? কিন্তু অভিক কে হতাশ হতে হল ওরা কেউ ইশমিকে দেখতে পায়নি ।অভিক আর লাঞ্চ করতে পারল না তার এক্ষুণি ইশমিকে দেখা চাই ।তার মনে হচ্ছে ঐ ঘটনার জন্য ইশমি তার উপর অভিমান করে বসে আছে ।অভিক লাঞ্চ না করে অফিসে চলে গেল ।সে সারা অফিস তন্নতন্ন করে খুঁজছে ইশমিকে । শেষে ফোর্থ ফ্লোরের এক কোণায় সে ইশমিকে দেখতে পেল ।ইশমি এক কোণায় মাথা নিচু করে বসে আছে ।
অভিক তার সামনে গিয়ে তার পাশে বসে পরল ।ইশমি একপলক অভিকের দিকে তাকিয়ে আবার নিচে তাকাল ।অভিক আলগোছে ইশমির হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল
আমি তোমায় সারা অফিস খুঁজে বেরাচ্ছি আর তুমি এখানে বসে আছো ?
ইশমি কিছু বলল না তার চোখ আগের মতই ফ্লোরে স্থির ।
অভিক হাতের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে ইশমির গালে বুলাতে লাগল তারপর ইশমির মুখটা তার দিকে ঘুরিয়ে বলল
আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তোমার ?
ইশমি মাথা নাড়িয়ে বলল , না তেমন কিছু না ।
অভিক বলল তাহলে আজকে লাঞ্চ করলেনা কেন ? এখানে চুপচাপ বসে আছো কেন ?
ইশমি থমথমে গলায় জবাব দিল
খেতে ইচ্ছে করেনি ।
অভিক বলল চলো আমরা একসাথে খাবার খাবো ।অভিক ইশমিকে হাত ধরে উঠাতে নিলেই ইশমি বলে উঠল
আমার ইচ্ছে করছেনা আপনি খেয়ে নিন ।
অভিক ইশমির দিকে চোখ গরম করে তাকাল ।অগত্যা ইশমিকে অভিকের সাথে যেতে হল ।
অভিক ইশমিকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকল ইশমির হাতে হাত রেখে ।
রেস্টুরেন্টে তখনো সাদাত চৌধুরি , আবির আর রিশারা বসে ছিল ।রিশা অভিকের সাথে একটি মেয়েকে দেখতে পেয়ে ভ্রু কুঁচকাল আর সাদাত চৌধুরিকে জিজ্ঞেস করল
এই মেয়েটা কে আঙ্কেল ?
সাদাত চৌধুরি কিছু বলার আগেই আবির দাঁত কেলিয়ে বলে উঠল
উনি আমাদের ভাবি আর ব্রো-র লাইফলাইন ইশমি নু-সাই-ভা আবির কিছুটা টান দিয়ে বলল ।আবির আর এক মুহুর্ত দেরি না করে অভিকদের টেবিলে গিয়ে বসল ।রিশার দৃষ্টি এখনো টেবিলের উপর অভিকের হাতের মুঠোয় থাকা ইশমির হাতের দিকে ।
রিশার কেন যেন সহ্য হলো না অভিকের সাথে ইশমিকে দেখে ।তার কান্না পাচ্ছে খুব । সে অভিক কে খুব ভালোবাসে । সেই ছোটবেলা থেকে অভিকের প্রতি তার ভালোলাগা ।এত সহজেই নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য কারোর হতে দিবে সে ? কোনোদিন-ও না । তাছাড়া আফিয়া রহমান নিজে তাকে কথা দিয়েছে অভিক শুধু তার-ই হবে যত যাই হোক ।সে ঠোটে মেকি হাঁসি ঝুলিয়ে টেবিল ছেড়ে অভিকদের টেবিলে গেল তারপর অভিকের অপর পাশের চেয়ারটাতে বসল ।
অভিক রিশাকে দেখে ভ্রু কুঁচকাল ।রিশা মেকি হাসি দিয়ে বলল
সর্যি অভিক ঐ সময় নিজের আবেগকে কন্ট্রোল করতে পারিনি ।তোমায় অনেক দিন পর দেখেছি তো তাই জড়িয়ে ধরেছিলাম ।যতদিন লন্ডনে ছিলাম প্রতিটাদিন তোমায় খুব মিস করেছি ।তাই নিজের আবেগটাকে ধরে রাখতে পারিনি ।
অভিক রিশার কথার প্রতুত্তরে কিছু বলল না চুপচাপ খেতে লাগল ।ইশমির খুব অসস্তি হচ্ছে ।রিশা নামের মেয়েটা তার দিকে কেমন চোখ পাকড়িয়ে তাকিয়ে আছে ।এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন মনে হয় তাকে আগুনে পুড়িয়ে ভষ্ম করে দিবে ।
লাঞ্চ শেষে অভিক নিজের কেবিনে চলে গেল ।সাদাত চৌধুরি , আবির আর রিশার ফ্রেন্ড চলে গেছে লাঞ্চের পর ।শুধু রিশা আছে তাতে তার কি ? সে শুধু নিজের কাজ আর ইশমির দিকে মন দিবে ।ইশমির দিকে চোখ পরতেই তার মুখে এক চিলতে হাঁসি ফুটে উঠল ।মেয়েটা সেই কখন থেকে মুখ থমথমে করে আছে ।
তার মনে হল ইশমি কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত ।অভিক চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে ইশমির সামনে এসে দাঁড়াল আর ইশমিকে উদ্দেশ্য করে বলল
এক কাপ কফি নিয়ে এসো তো আমার কেবিনে ।মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে আমার।আমি অপেক্ষা করছি তোমার জন্য , না মানে কফির জন্য ।
ইশমি অভিকের দিকে না তাকিয়ে কাগজ প্রিন্ট করতে করতে বলল
আপনি যান আমি কফি নিয়ে আসছি ।
অভিক ইশমির দিকে ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে নিজের কেবিনে চলে গেল ।
ইশমি কফি হাতে নিয়ে কেবিনের ডোরে নক করল ।সে ডোর নক করতে না করতেই অভিক ডোর খুলে ইশমির হাত থেকে কফিটা টেবিলে রেখে ইশমিকে টেনে কেবিনের কোণার দিকটায় নিয়ে গেল ।অভিক ইশমির দুগালে হাত দিয়ে স্পর্শ করে বলল
এখন বল তোমার কি হয়েছে ? আমি জানতে চাই কুইক ।
ইশমি অভিকের দিকে চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে বলল
আপনার না মাথা ঝিমঝিম করছে ? কফিটা খেয়ে নিন নাহলে ঠান্ডা হয়ে যাবে ।খেতে ভালো লাগবে না তখন ।
অভিক একটু দম নিয়ে ঠোট কামড়ে ধমকে বলল কফির মায়রে বাপ ।আমি যা জানতে চাচ্ছি তার উত্তর দাও আগে ।
ইশমি কিছু বলল না ।কি বলবে সে ? সে কি বলবে অফিসের সবাই বলাবলি করছে আপনার সাথে রিশা মেয়েটার বিয়ে হবে ক’দিন পর !
অভিক ইশমির মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল কি হল উত্তর দাও ?
অভিক পরোক্ষণে ঠোট কামড়ে হেঁসে বলল আর ইউ জেলাস রিশাকে দেখে হুম হুম ? রিশা আমায় হাগ করেছিল দেখে জেলাস ফিল করছো তুমি বলেই হোঁ হোঁ করে হেঁসে উঠল অভিক ।
ইশমি ত্বড়িৎগতিতে অভিকের দিকে চোখ গরম করে তাকাল ।পরোক্ষনে ঠোট টিপে হেঁসে বলল আমার বয়েই গেছে জেলাস হতে ।আমি জেলাস হতে যাবো কেনো ? কার জন্য হতে যাবো জেলাস ?
অভিক একটানে ইশমিকে দেয়ালে চেঁপে ধরে ইশমির আঙ্গুলে নিজের আঙ্গুলগুলো গুঁজে ইশমির আরো কাছে এসে বলল কি বললে তুমি ? তোমার সাহস থাকলে আবার বলো তো ।যে-ই না ইশমি কিছু বলতে যাবে অমনি রিশা অভিকের কেবিনে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে গেল ।
অভিক রিশাকে দেখে ইশমিকে ছেড়ে দিল ।রিশা ইশমির দিকে কিছুক্ষণ চোখ গরম করে তাকিয়ে থেকে বলল
সর্যি অভিক তোমায় ডিস্টার্ব করার জন্য ।তারপর হাতের ফাইলটা অভিক কে দেখিয়ে বলল আমি এই ফাইলটার কিছু-ই বুজতে পারছিনা ।তুমি আমায় একটু হেল্প করবে প্লিজ।
অভিক কিছুক্ষণ চোখবুজে নিজেকে শান্ত করে নিল ।তারপর নিজের চেয়ারে গিয়ে বসল ।রিশাও চেয়ারে বসে পরল ।ইশমি কফির কাপটা হাতে নিয়ে অভিক আর রিশার দিকে একপলক তাকিয়ে বের হয়ে গেল কেবিন থেকে ।
অফিস আওয়ার শেষে অভিক ইশমিকে নিয়ে যে-ই না গাড়িতে বসতে যাবে অমনি রিশা তাদের সামনে এসে উদাস চেহারা বানিয়ে বলল অভিক আমায় বাড়িতে পৌঁছে দিবে প্লিজ ।আসলে একটুপর সন্ধ্যা হয়ে যাবে আর আমি এখানে দাঁড়িয়ে থেকে গাড়ির জন্য ওয়েট করতে পারব না ।তারপর রিশা ইশমির দিকে তাকিয়ে বলল আমি উবারে কল করছি ।উবার এসে বরং ইশমিকে নিয়ে যাবে।
অভিক পকেট থেকে ফোনটা বের করে রিশার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল আমি উবারে কল করছি ।উবার এসে বরং তোমায় বাড়িতে পৌঁছে দিবে ।
রিশার চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল ।সে ক্রোধান্বিত চেহারা নিয়ে তাকাল ইশমির দিকে ।সে আর একমুহূর্তও দেরি না করে ক্রুব্ধ হয়ে ইশমিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল মাঝ রোডে ।
চলবে,
@Nusrat Hossain