মনের আড়ালে পর্ব-২৫ + বোনাস পর্ব

0
1173

#মনের_আড়ালে
Part – 25
লেখনীতে – #Nusrat_Hossain

— অভিক আমি মন থেকে একদম-ই চাইনা ঐ মহিলা আমাদের বাড়িতে পা রাখুক ।তারপরো তুমি যখন এতকরে বলছ তাই আমি মেনে নিলাম ।আমি বাধা দিবনা ঐ মহিলা আসুক আফিয়া রহমান মুচকি হেঁসে বললেন ।

—- অভিক মনে মনে খুব খুশি হল মাকে রাজি করাতে পেরে ।সে ভেবেছিল মাকে রাজি করাতে তাকে খুব বেগ পেতে হবে ।সে ঠোটে হাঁসি রেখে বলল থ্যাংক ইউ সো মাচ আম্মু আমার কথাটা রাখার জন্য ।
অভিক মায়ের রুম থেকে হাঁসিমুখে বেরিয়ে এল ।
কালকে ফ্রাইডে অফিস অফ ।অভিক বিছানায় ধাপাস করে শুয়ে পড়ল ।ফোনটা হাতে নিয়ে গ্যালারিতে ঢুকল ।ইশমির হাসিমাখা একটি ছবিতে অসংখ্যবার চুমু খেতে লাগল ।আজকের রাতটা পার হলেই কালকে বিকেলে হাফসা বেগম আসবে তাদের বাড়িতে ।একবার তার মায়ের রাগটা পানি হয়ে গেলেই আর কোনো সমস্যা হবেনা ইশমিকে নিজের করে নিতে ।অভিক মোবাইলটা বুকের সাথে চেঁপে ধরে ঘুমের দেশে পাড়ি জমাল ।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই অভিক কে রেডি হতে হচ্ছে চিটাগাং এ যাওয়ার জন্য ।তাদের জমি নিয়ে কি ঝামেলা নাকি চলছে ।এখন তাকে যেতে হবে সব সামলানোর জন্য ।সে যদিও যেতে চাইছেনা কারন আজকে ইশমির মা আসবে এখানে থাকাটা তার খুব প্রয়োজন ছিল কিন্তু তাকে চিটাগাং-ই যেতে হবে কিছু করার নেই । বাড়ি ফিরতেও রাত হয়ে যাবে তার ।অভিক আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাতদিয়ে চুলগুলো ব্রাশ করতে করতে ভাবছে ।তারপর রুম থেকে বের হয়ে বাবা আর মাকে বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল চিটাগাং এর উদ্দেশ্য ।আর বাড়ি থেকে বের হবার আগে মাকে বারবার বলে যায় হাফসা বেগমের খাতির যত্নের যেন কোনো কমতি না হয় ।আফিয়া রহমান-ও ছেলেকে মুচকি হেঁসে আশ্বস্ত করে বলেছেন তুমি চিন্তা করোনা বাবা ।হাফসা বেগমের খাতির যত্নের কোনো কমতি হবেনা ।ব্যস মায়ের এই একটা কথাতেই অভিক খুব খুশি হয়ে গেল । তাই সে অনেকটা চিন্তামুক্ত হয়ে-ই চিটাগাং এর উদ্দেশ্য রওনা হয়ে গেল ।
____________________

—- তুমি কি কোথাও যাচ্ছ মা ?

—- হাফসা বেগম নির্লিপ্ত গলায় বলল অভিকদের বাসায় যাচ্ছি ।

—– ইশমি চমকে বলল কেন ?

—– তোর আর অভিকের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছি আর ওদের কাছে ক্ষমাও চাইতে যাচ্ছি ।

—– ইশমি থমথমে গলায় বলল ওরা যদি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ?কি দরকার মা ওখানে যাওয়ার ।যেতে হবেনা তোমার সেখানে ।

হাফসা বেগম বললেন দূর কিছু হবেনা ।তুই শুধু শুধু চিন্তা করিস নাতো !আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে বের হতে হবে আমায় এই বলে হাফসা বেগম বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন অভিকদের বাড়ির উদ্দেশ্য ।

এদিকে ইশমি খুব চিন্তায় আছে অভিকদের বাড়ির লোক যদি মায়ের সাথে কোনোরকম খারাপ ব্যবহার করে তো ? সে নিজেকে কোনোদিনও ক্ষমা করতে পারবেনা ।ইশমি ভাবে তার মা যে অভিকদের বাসায় যাবে তা অভিক নিশ্চয় জানে কালকেই তো অভিক আর তার মায়ের কথা হল ।ইশমি অভিক কে কল করল কিন্তু অভিকের ফোন সুইচ অফ বলছে ।ইশমি ভাবল হয়ত অভিক ব্যস্ত আছে তাই হয়ত ফোন বন্ধ করে রেখেছে আর অভিক যখন বাড়িতে-ই আছে তাহলে সে-ই মায়ের খেয়াল রাখবে ।অভিকের উপর তার এই বিশ্বাসটা আছে ।
__________________

——– আপনার সাহস কিভাবে হল আমার বাড়িতে আসার আফিয়া রহমান ক্ষিপ্ত হয়ে বলল ?

হাফসা বেগম বুজতে পারছে না কি বলবে তার সামনে অভিকদের পুরো পরিবার বসে আছে শুধু অভিক নেই ।

হাফসা বেগমের কোনো উত্তর না পেয়ে আফিয়া রহমান আবারো বলে উঠলেন কি হল উত্তর দিন ?

হাফসা বেগম ঠোট ভিজিয়ে বলতে শুরু করলেন আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি আর্ হাফসা বেগম আরো কিছু বলতে নিলেই আফিয়া রহমান তাকে থামিয়ে বলল

কিসের ক্ষমা ? আপনি কোন মুখ নিয়ে এই বাড়িতে পা রাখলেন ।লোভ সামলাতে পারছেন না তাইনা ? আপনি আর আপনার মেয়ে আমার ছেলেটার মাথা খারাপ করে দিয়েছেন ।ছেলে পটিয়ে টাকা কামানোর দান্ধায় নেমেছেন আপনারা মা মেয়ে মিলে ।লোভী মহিলা কোথাকার !
সাদাত চৌধুরি আফিয়া রহমানকে চাপাস্বরে বলে উঠল কি বলছ কি এসব তুমি ?

আফিয়া রহমান তেজীগলায় বলল চুপ করো তুমি ।আমার কথার মাঝখানে যেন কেউ কথা না বলে এই মহিলার সাহস কিভাবে হয় আমার বাড়িতে আসা ? কোনমুখে আসল এতটাকার লোভ মা মেয়ের ? ভেবেছেন মেয়েকে আমার ছেলের পেছনে লেলিয়ে দিয়ে পার পেয়ে যাবেন ? ভেবেছেন আমাদের কাছে ভেজা বিড়াল হয়ে ক্ষমা চাইলেই আমি নাঁচতে নাঁচতে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যাবো? আমি কখনো তা হতে দিব না ।আর কোনোদিনও আপনার মেয়েকে যেন আমার ছেলের আশেপাশে না দেখি নাহলে আপনাদের দুই মা মেয়েকে আমি জেলে বড়ে দিব ।এক্ষুনি বের হয়ে যান আমার বাড়ি থেকে আপনি নাহলে গার্ড এসে গাঢ়ধাক্কা দিয়ে বের করবে আপনাকে ।

হাফসা বেগমের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে ।তিনি নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে আফিয়া রহমানকে কিছু বলতে নিলেই আফিয়া রহমান চিৎকার করে গার্ড কে ডাকলেন ।গার্ড আসলে আদেশের স্বরে বলে উঠলেন হাফসা বেগমকে বাড়ি থেকে বের করতে ।
গার্ডও তাই করল হাফসা বেগমকে ধাক্কা মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিল ।
সাদাত চৌধুরিসহ সবার মুখ থমথমে হয়ে আছে ।আফিয়া রহমানের ঠোটে বাঁকা হাঁসি ফুটে উঠল হাফসা বেগমকে হেনস্তা করতে পেরে।অনেক আগের প্রতিশোধ টা নিতে পেরে তিনি বেজায় খুশী ।
________________

হাফসা বেগম বাড়িতে ফিরে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ল।উনি চিৎকার করে কাঁদতে পারছেন না বুকের ভেতরটা কেমন ভারী হয়ে যাচ্ছে উনার ।ইশমি মা এসেছে শুনে নিজের রুম থেকে বের হয়ে মায়ের রুমে আসল ।মাকে এভাবে দেখে তার কলিজা মোচর দিয়ে উঠল ।সে তাড়াতাড়ি গিয়ে মায়ের পাশে বসে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল

—– কি হয়েছে মা ? তোমার এই অবস্থা কেন ?

—- হাফসা বেগম ছলছল চোখ নিয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন ।এতে ইশমি যা বোঝার বুঝে গেল ।

——- হাফসা বেগম ভারী গলায় বলে উঠল আমাদের নাকি টাকার লোভ ।আমরা নাকি তোকে লেলিয়ে দিয়েছি অভিকের্ তিনি আর বলতে পারলেন না ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন ।ইশমির চোখের কোণ বেয়ে পানি পরছে ।
হাফসা বেগম কিছুক্ষণ পর চোখ মুছে বলল তুই অভিক কে ভুলে যা ইশমি।আমাদের সাথে যায় না ওদের ।তাছাড়া ওর মা কোনোদিনও তোকে মেনে নিবেনা ।

ইশমি থমথমে দৃষ্টি নিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করল অভিক কই ছিল ?

হাফসা বেগম ভাঙা গলায় বলল ওরে দেখতে পাইনি আমি ।ও ছিল না সেখানে ।

ইশমি আবারো থমথমে গলায় বলে উঠল তুমি ওর বাসায় যাবা সেটা অভিক জানত তাইনা ?

হাফসা বেগম জবাব দিল হুম কালকেই তো কথা বললাম অফিসে গিয়ে ।

ইশমি চোখমুখ শক্ত করে মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে এল ।বিছানার উপর থেকে ফোনটা নিয়ে অভিককে মেসেজ করল,

আপনি এবার খুব খুশি তো মি. অভিক ।এটাই তো চেয়েছিলেন আপনি ।শুধুমাত্র প্রতিশোধ নিতে এতবড় খেলা খেললেন আপনি অভিক ? ছিহ আমি কতটা বোকা আপনাকে কতটা বিশ্বাস করেছিলাম আর আপনি সব শেষ করে দিলেন ।শুধুমাত্র প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আমার সাথে এতদিন নাটক করলেন আর আমি চিনতে পারলাম না আপনার ভালো চেহারার আড়ালে থাকা মুখোশটা ।সব শেষ ।এই জীবনে আমি ইশমি আর কোনোদিনও আপনার মত একটা কুলাঙ্গার কে চেহারা দেখাবো না ।আজকে থেকে আপনি আপনার রাস্তায় আর আমি আমার রাস্তায় ।

মেসেজটা অভিকের নাম্বারে সেন্ড করেই ইশমি হু হু করে কেঁদে উঠল ।কিভাবে একটা মানুষ এত নিঁখুতভাবে অভিনয় করতে পারল সেটা সে অভিক কে না দেখলে জানতে পারতনা ।মানুষ এতটা খারাপ কিভাবে হয় আল্লাহ কিভাবে ?
শেষ সব শেষ ইশমি ভাবে ।

ইশমি চোখমুখ মুছে বলল এই জীবনে কোনোদিন আমি আর আপনার সামনে আসবো না কোনোদিন-ও না ।খুব খারাপ আপনি অভিক খুব খারাপ ।

চলবে,
@Nusrat Hossain

#মনের_আড়ালে
Part_25(বোনাস পর্ব )
লেখনীতে – #Nusrat_Hossain

দশদিন পর ।দেখতে দেখতে জীবন থেকে আরো দশটা দিন চলে গেল ।সময় তো আর কারো জন্য থেমে নেই ।সময় তার নিজ গতিতে-ই চলে ।শুধু মানুষগুলো কেবল সময়ের সাথে পাল্টে যায় ।প্রিয় মানুষগুলো হয়ে উঠে অপ্রিয় ।দিন যত যায় তাদের প্রতি #মনের_আড়ালে থাকা অনুভূতিগুলোও ধীরে ধীরে ঘৃনার রুপ ধারন করে ।
ইশমি রুমের জানালায় মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে ।কাল তার বিয়ে ।ধীরে ধীরে দূর দূরান্তর থেকে আত্বীয়স্বজনরা বাড়িতে আসতে শুরু করে দিয়েছে ।আর তার মায়ের বড় বোন মালিহা তো আত্বীয়স্বজন নিয়ে সেই সাতদিন আগেই এসে পড়েছে কারন মালিহার ছেলে আদনানের সাথেই তার বিয়ে হবে কাল ।গায়ে হলুদ , বিয়ের অনুষ্ঠান ইশমিদের বাড়িতেই হবে সব ।

মূলত সাতদিন আগে মালিহা নিজেই ছোট বোনের কাছে ইশমি আর তার ছেলের বিয়ের প্রস্তাব দেন ।প্রথমে হাফসা বেগম রাজী হতে চাইছিল না কারন আদনানের আগে একবার বিয়ে হয়েছে আবার সেই ঘরে একটা একবছরের ছেলেও আছে ।বৌ একছর আগেই আরেকজনের হাত ধরে পালিয়ে গেছে আদনান কে ছেড়ে ।এসব ভেবে হাফসা বেগম রাজি হয়নি প্রথমে কিন্তু মালিহা হাফসা বেগমকে বোঝায় বলে কে বিয়ে করবে ইশমিকে ? এরকম একটা পরিবারের মেয়েকে কোনো ছেলে বিয়ে করতে চাইবে নাকি ? কয়দিন আগে তোর ছোট মেয়ে আত্মহত্যা করে মরেছে সবাই জানে কেন মরেছে আহিবা ।কোনো পরিবার জেনেশুনে চাইবেনা এরকম একটা পরিবারের মেয়েকে বৌ করতে ।তোর মেয়ের ভাগ্য ভালো আমার আদনান নিজে ইশমিকে বিয়ে করতে চেয়েছে ।শুন হাফসা আর কথা বাড়াস না রাজি হয়ে যা ।রাজরানীর মত করে রাখব ইশমিকে আমি ।কোনো অভাব হবেনা ইশমির আর আমার আদনানও বলেছে প্রতিমাসে তোদের সংসারের খরচ দিবে ।আজকে যদি তুই আদনানকে মেয়ের জামাই করতে রাজি না হোস পরে তুই খুব পস্তাবি ।মেয়ে যখন বুড়ি হয়ে যাবে কিন্তু বিয়ে হবেনা তখন তুই বুজবি কত জ্বালা ।
বোনের কথায় হাফসা বেগমও গলে গেলেন নিমিষে ।তিনি রাজি হয়ে গেলেন মেয়েকে আদনানের কাছে বিয়ে দেওয়ার জন্য ।বোন রাজি হয়ে যাওয়াতে মালিহা আর দেরি করলনা তার নিকটআত্বীয় স্বজনদের কে নিয়ে হাফসা বেগমের বাড়ি এসে পরলেন আর বিয়ের কথাও পাকাপাকি করে ফেললেন ।বিয়ের ডেট ফালালেন সাতদিন পর ।মালিহা ছেলের বউ নিজের বাড়ি নিতে আর দেরি করতে চায় না ।তাই খুব তাড়াতাড়ি বিয়ের ডেট ফালাল ।বিয়েতে বেশি মানুষ থাকবেনা আত্বীয়স্বজন আর ইশমিদের কাছের পাড়াপ্রতিবেশী ছাড়া ।

কমোরে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ইশমি চমকে উঠল ।সে চমকে পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখল আদনান তার ছেলেকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।আদনান নিজের বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাঁসছে আর তার দিকে কেমন লোভী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।
আদনান ইশমির খুব কাছে এসে কানে ফিসফিস করে বলল আর মাত্র একটা রাত আহ তারপর থাক আর বললাম না সেটা কালকে রাতেই তোকে বোজাব আমি ইশমি ।
ইশমি মাথা নিঁচু করে চোখমুখ খিঁচে আছে ।আদনান ছেলেকে ইশমির কোলে দিতে দিতে বলল

যাও বাবা মায়ের কাছে যাও এটা তোমার নতুন মা ।ছেলেকে ইশমির কোলে দিয়ে আদনান শিষ বাজাতে বাজাতে বের হয়ে গেল রুম থেকে ।

ইশমির চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পরছে ।সে বাবুকে নিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পরল ।

—- বাহ বাহ বিয়ের আগেই হবু জামাইয়ের ছেলের জন্য কত দরদ একদম কোলে নিয়ে বসে আছে আহ কত সুন্দর !একদম কলিজাটা জুড়ায়া গেলোরে ইশমি আমার অনিতা দাঁতে দাঁত চেঁপে কথাটা বলল ।

ইশমি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল অনিতা আর তিথি দাঁড়িয়ে আছে ।অনিতা আর তিথির চেহারা রাগে লাল হয়ে আছে ।তারা ইশমির সামনে এসে দাঁড়াল ।

অনিতার সাথে সাথে তিথিও তাল মিলিয়ে বলল

ওরে বোঝা অনিতা ।এখোনো সময় আছে অভিক কে সব ফোন দিয়ে জানাতে বল ।এই আদনান কিন্তু ভালো না জীবনটা শেষ করে দিবে ওর । আগের বউ আদনানের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আরেকজনের সাথে পালিয়ে গেছে ।

অনিতা ইশমির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল তোর ফোনটা দে দেখি আমি অভিক ভাইকে সব জানাচ্ছি ।অভিক ভাই জানলে আর বসে থাকতে পারবেনা ঠিক তোকে এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে ।

ইশমি নির্লিপ্ত গলায় বলল তাকে কিছু জানাতে হবেনা ।কেউ না আমি তার ।সব শেষ আমাদের মধ্যে আনিতা ।তোরা আর আমায় এই ব্যাপার নিয়ে জোড় করিস না ।

তিথি ধমকে বলল একটা থাপ্পড় মারব তুই আদনান ভাইকে চিনিস না সে একটা আস্ত গুন্ডা রাস্তায় মারামারি করে বেড়ায় ।ড্রাগ চিনিস ড্রাগ সে ড্রাগ নেয় ।

তিথি আর অনিতা এত বুজানোর পরও ইশমি নিজের সিদ্বান্ত থেকে নড়ল না ।
তিথি আর অনিতা ব্যর্থ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল ।

রাতে ইশমি আর আদনানের একসাথে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা হল ।ছাদে প্যান্ডেল করা হয়েছে ।দুজনকে একসাথে বসিয়ে আত্বীয়স্বজন পাড়াপ্রতিবেশীরা তাদের মুখে হলুদ মাখিয়ে দিল ।হলুদ দেওয়া শেষে খাওয়াদাওয়ার পর্ব চলছে ।ইশমির আর ভালো লাগছেনা অস্থির লাগছে সে ছাদ থেকে নেমে এসে নিজের রুমে চলে এল ।ওয়াশরুমে গিয়ে হু হু করে কেঁদে উঠল ।এতক্ষণ অনেক কষ্টে নিজের কান্নাটাকে সে আটকে রেখেছিল । কিছুক্ষণ কেঁদে হালকা হয়ে গায়ে হলুদের শাড়িটা খুলে একটা সুতি থ্রিপিছ পরে নিল ।মুখটা ভালোভাবে পরিষ্কার করে সে ওয়ারড্রব থেকে ফোনটা বের করল ।দশদিন আগে ফোনটা বন্ধ করে ফেলে রেখেছিল ওয়ারড্রবে ।সে একবার ভাবল ফোনটা চালু করবে কি না পরোক্ষণে আবার কি যেন ভেবে বন্ধ ফোনটা আবার ওয়ারড্রবে রেখে দিল ।তারপর বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে পড়ল ।তার মনে প্রশ্ন আসল অভিক কি জানে তার বিয়ে ? পরোক্ষনে নিজেই নিজেকে বলল ও জানলেই বা কি আর না জানলেই বা কি ? ও কেউ না ।ও একটা নিঁখুত অভিনেতা , একটা চিটার , একটা কুলাঙ্গার । ওর জন্য আমার এই মনে আর কোনো জায়গা নেই ।নেই নেই নেই ।
আরমাত্র একটা রাত তারপর-ই সে অন্যকারো হয়ে যাবে একেবারের জন্য ।

রাত পেরিয়ে সকাল হলো ।পুরো বাড়িটা বাচ্চাদের আর আত্বীয়স্বজনের কোলাহলে মেতে আছে ।সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত ।সকালে পাড়ার মহিলারা আর ইশমির ফুপি , খালারা ইশমিকে গোসল করিয়ে দিল বিয়ের নিয়ম অনুযায়ী ।তারপর তাকে পার্লারে নিয়ে যাওয়া হল সাথে অনিতা আর তিথিও গেল ।তাদের মনে কোনো আনন্দ নেই এই বিয়ে নিয়ে ।তারা ইশমির পাশেপাশে থেকে একটুপর পর তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে ।কিন্তু কে শুনে কার কথা ।ইশমি নিজের সিদ্বান্তেই অটল ।

ইশমি পার্লার থেকে ফিরলে তাকে আর আদনানকে একসাথে হলরুমের সোফায় বসানো হল ।তাদের পাশের সোফায় হাফসা বেগম , মালিহা , রানী আর অন্যান্যা আত্বীয়স্বজনরাও বসল ।বিয়ে শেষে সবাই একসাথে খেতে বসবে ।তিথি আর আনিতা মুখ পানসে করে হলরুমের এক কোণায় বসে আছে ।একটু পর কাজী আসবে তারপর-ই বিয়ে ।আদনান বর বেশে ইশমির পাশে বসে আছে ।আর একটুপর পর ইশমির দিকে লোভী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে ।আজকে ইশমিকে খুব সুন্দর লাগছে ।লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ি আর গাঁ ভর্তি গহনা তার সাথে ভারী সাজ ইশমিকে পরীর মত লাগছে ।ইশমি চোখের পানিটা প্রানপনে আটকে রাখার চেষ্টা করছে একটু পর কাজী আসলেই বিয়ে হয়ে যাবে ।তার নাম আদনানের নামের সাথে জড়িয়ে যাবে একেবারের জন্য ।বারবার অভিকের চেহারাটা চোখের সামনে ভাসছে অভিকের কথাগুলো , আর ঐদিন অভিকের সাথে তার অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো ।কিভাবে পারবে সে অভিকের দেওয়া স্পর্শগুলোকে ভুলতে? কিভাবে পারবে সে অভিক কে ভুলতে ? চোখের পানিটা সে আর আটকে রাখতে পারলনা ।ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল ।কেউ কেউ তাকে সান্তনা দিতে লাগল ।হাফসা বেগম মেয়ের পিঠে হাত বুলাতে লাগলেন উনার চোখেও পানি।পাশ থেকে আদনান ইশমির হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিল ।ইশমি সবার আলগোছে হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করল কিন্ত পারল না ।ঠিক তখনি কেউ হুড়মুড়িয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে সোজা আদনানের মুখ বরাবর ধুমমম করে পরপর কয়েকটা ঘুষি মেরে বসল ।আদনানের হাতের মুঠোয় থাকা ইশমির হাতটার দিকে কিছুক্ষণ ক্ষীপ্তচোখে তাকিয়ে থেকে খামচি মেরে ধরল ইশমির হাতটা ।সবাই হতভম্ব।

চলবে,
@Nusrat Hossain