মনের আড়ালে পর্ব-২৬

0
1183

#মনের_আড়ালে
Part_26
লেখনীতে – #Nusrat_Hossain

ইশমি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল

অ্ অভিক ।

অভিক ইশমির দিকে ক্ষীপ্ত চেহারায় তাকিয়ে বলল বিয়ে করবি ইশমি বিয়ে ?তোকে বিয়ে করাচ্ছি আমি দেখ বলেই সাপের মত ফোঁসফোঁস করতে করতে ইশমির গাঁ-এর গহনাগুলো টেনে টেনে খুলতে লাগল ।যখনি হাফসা বেগমসহ বাড়ির পুরুষরা অভিক কে বাধা দিতে যাবে অমনি হুড়মুড়িয়ে আরো কতগুলো ছেলে ঢুকল ।প্রত্যেকের হাতে হকিস্টিক ।বাড়ির পুরুষরা ভয়ে আর অভিক কে থামাতে এলনা ।এদিকে তিথি আর অনিতা খুব খুশী অভিক কে দেখে ।ওরা একটা শান্তির নিশ্বাস ছাড়ল ।আদনান ক্ষীপ্ত হয়ে যখনি বসা থেকে উঠতে যাবে অমনি অভিক পকেট থেকে গানস্ টা বের করে আদনানের দিকে তাক করে রাগীগলায় বলল একদম চুপ করে বসে থাক নাহলে একদম …. অভিক আর বলল না ইশমির দিকে ধ্যান দিল ।ইশমির গলা শুকিয়ে গেল গানস্ দেখে ।সে একটা ঢোক গিলল ।গহনা প্রায় সব খোলা শেষ এখন নাকের নোলকটা আছে ।
অভিক যখনি ইশমির নাকের নোলকটা টান দিয়ে খুলতে যাবে ইশমি অভিকের হাতটা ধরে ফেলল ।ইশমি অভিকের দিকে করুন চেহারায় তাকিয়ে আছে ।অভিক ইশমির করুন চেহারা অগ্রাহ করে নাকের নোলকটা একটানে খুলে ফেলল ।ইশমি ব্যথায় আহহহ মাগো বলে চিৎকার দিল ।ইশমির নাক দিয়ে টপটপ করে রক্ত পরছে ।অভিক কোনো বাকবিনিময় না করে ইশমির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে চাইলে ইশমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইল ।

ইশমি ভাঙা গলায় বলল হাত ছাড়ুন আমার ।আমি কোথাও যাবনা ।

আদনান এবার সাহস পেয়ে তেজী গলায় বলে উঠল আমি পুলিশে দিব আপনাকে ।এভাবে বিয়ের কনেকে আপনি উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারেন না ।আদনানের সাথে সাথে বাড়ির পুরুষগুলো তাল মিলাল তারা ফোন করে পুলিশকে আসতে বলল।

ছেলেগুলো হকিস্টিক নিয়ে তেড়ে আদনানের দিকে আগাতে গেলে অভিক তাদের বাধা দিল আর আদনানকে দাঁত দাঁত চেঁপে বলল ডাক তোর পুলিশকে দেখি কি করে আমার বলেই ঠোট কামড়ে হাঁসল । ইশমি অভিকের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য মোচড়ামুচড়ি করলে অভিক ইশমির হাতটা আরো শক্ত করে ধরল ।

কিছুক্ষণ পর পুলিশ-ও এসে পড়ল ।পুলিশ আসলে আদনান ক্ষীপ্ত হয়ে বলল

অফিসার আমার বউকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ।

অভিক কিছু বলার আগেই অফিসার আদনানকে জিজ্ঞেস করল , এই মেয়েটির সাথে বিয়ে হয়ে গেছে আপনার ?

আদনান থমথমে গলায় বলল না বিয়ে হয়নি কিন্তু হবে একটু পর কাজী আসলেই ।

অফিসার বিরবির করে বলল কাজী আসলে তো বিয়ে হবে !

আদনান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল কি বললেন ?

অফিসার নিজেকে সামলে আদনানকে আর বাড়ির পুরুষদের বিরক্তগলায় বলল

দূর মিয়ারা শুধু শুধু ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করলেন কেন আমাদের আজব।বলেই অফিসারসহ পুলিশরা বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল ।অফিসার যাওয়ার আগে অভিক কে চোখ মেরে চলে গেল ।অভিক একটা বাঁকা হাসি দিল ।ইশমি ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে অভিকের দিকে তাকিয়ে আছে ।অভিক আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ইশমিকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল ।আদনান বাধা দিতে আসতে চাইলে ছেলেগুলো আদনানের চেহারায় হকিস্টিক চেঁপে ধরল ।আদনান ঢোক গিলে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল আর এক পা-ও আগাতে পারলনা ।

অভিক ইশমিকে টেনে বাড়ির বাইরে নিয়ে এল ।রাস্তায় তাদের জন্য দুটো গাড়ি অপেক্ষা করছে ।অভিক আর ইশমিকে দেখে মাহিম আর আবির দাঁত কেলিয়ে হাসল ।মাহিম হেঁসে বলল

একদম উঠিয়ে নিয়ে এলি বাহ বাহ ।তোর থেকে শিখে রাখলাম ভবিষ্যতে কাজে লাগাব ।

অভিক বিনিময়ে মুচকি হাঁসল আর বলল আর দেরি করা যাবেনা ।তোরা গাড়িতে গিয়ে বস আমরা ঐ গাড়ি দিয়ে আসছি ।

ইশমি কান্নারত গলায় বলল আমি কোথাও যাবনা ।ছাড়ুন আমায় ।

অভিক ইশমির কথা অগ্রাহ করে ইশমির বাহুটা শক্ত করে চেঁপে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসাল আর সে-ও ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ল।ইশমি দেখতে পেল পেছনে আরো দুটো মেয়ে বসে আছে ।একটা তার বয়সি আর একটা তার থেকে বড় হবে চার-পাঁচ বছরের ।তার সমবয়সি মেয়েটি তাকে মুচকি হেঁসে বলে উঠল

হাই ভাবি ।আমি অভিক ভাইয়ার ছোট বোন তোমার একমাত্র ননদ আফরিন ।

পাশের মেয়েটিও মুচকি হেঁসে বলল আর
আমি হলাম মাইশা ।অভিকের ভাবী প্লাস বন্ধুও । আমি আর অভিক একই ক্লাসে পড়াশোনা করেছি ছোটবেলা থেকে।পরোক্ষণে মাইশা রাগী গলায় ইশমিকে বলে উঠল তোমার তো খুব সাহস আমাদের অভিক কে ছেড়ে আরেকজনকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলে তুমি ।

মাইশার কথা শুনে অভিক ব্যঙ্গ করে বলল তাও আবার একছেলের বাপকে আবার গাঞ্জাখোর-ও ।

ইশমি অভিকের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে তেজীগলায় বলল
কোনো চিটারকে বিয়ে করার চেয়ে একছেলের বাপকে এর থেকে বিয়ে করা ভালো ।
অভিক ইশমির কথা শুনে রাগে গানস্ টা ইশমির গলার কিছুটা নিচে তাক করে দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল একদম খুন করে দিব ।কি পেয়েছিস তুই যখন মন চাইল আসবি আর যখন মন চাইল চলে যাবি ।এত সহজ অভিক কে নিয়ে খেলা ?
ইশমি ভয়ে ঢোক গিলল ।ইশমি ভয়ে গুটিশুটি মেরে বসল ।আফরিন-ও ভয় পেয়ে গেল সে জানে তার ভাইয়ের রাগ উঠে গেলে মাথা ঠিক থাকেনা ।

মাইশা অভিক কে ধমকে বলল কি হচ্ছে অভিক ।মেয়েটাকে ভয় দেখাস না ।গাড়ি স্টার্ট দে দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের ।

অভিক দাঁতে দাঁত চেপে বলল ভয় দেখাইনি আমি কাউকে ।অভিক সাপের মত কিছুক্ষণ ফোঁসফোঁস করে নিজেকে শান্ত করে নিয়ে গাড়িটা স্টার্ট দিল ।অভিক গাড়ি স্টার্ট দেয়ার পর আর কেউ কোনো কথা বলল না ।অভিক গাড়ি চালাতে চালাতে আড়চোখে ইশমির দিকে তাকাল ।ইশমির চোখের কোণবেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে ।অভিক মনে মনে তাচ্ছল্য স্বরে বলল গাঞ্জাখোরটাকে বিয়ে করতে পারেনি দেখে কি দুঃখ কেঁদেকেটে একেবারে বুক ভাসিয়ে ফেলছে।তার ইচ্ছে করছে ইশমিকে শুন্য তুলে আছাড় মারতে ।অভিক ঠোটদুটো চেঁপে নিজের রাগটাকে শান্ত করছে ।

প্রায় আধঘন্টা পর অভিক সেই বাড়িটার সামনে গাড়িটা থামাল ।গাড়ি থেকে মাইশা আর আফরিন নেমে পরল ।অভিক ইশমিকে গাড়ি থেকে টেনে নামাল ।মাহিমরা কিছুক্ষণ আগেই এসেছে ।মাহিমদের সাথে তিথি আর অনিতা-ও এসেছে ।

অভিক মাহিমদের কাছে এসে বলল
সব ব্যবস্থা করা হয়েছে ?

মাহিম বলল আটটার মধ্যে কাজী এসে পরবে । এই দুইঘন্টার মধ্যে তোরা রেডি হয়েনে ।
পরোক্ষণে মাহিম একটু দুষ্টুমি স্বরে বাঁকা হেসে তিথির দিকে তাকিয়ে বলল ভাবছি কাজী আসলে তোর সাথে আমিও বিয়ে্টা করে ফেলব ।তিথি রাগী চোখে মাহিমের দিকে তাকাল ।

আবিরও মাহিমের সাথে তালা মিলাল ।সে দাঁত কেলিয়ে অনিতার দিকে তাকিয়ে বলল ভাই আমি-ও ভাবছি কাজী আসলে বিয়ে করে নিব ।চেহারায় দুঃখী দুঃখী ভাব করে বলল আর কতকাল এভাবে সিংগেল লাইফ কাটাবো বলতো তাই ভাবছি কাজী আসলে আমিও বিয়েটা করেই ফেলি বলেই অনিতাকে চোখ মারল ।অনিতা আবিরের দিকে চোখ বড়বড় করে তাকাল ।

মিনহাজ বলে উঠল ভাগ্যিস আমি বিয়ে করে নিয়েছিলাম নাহলে আজ আমারও বিয়ে করতে ইচ্ছে হত ।মাইশা চোখ রাঙিয়ে তাকাল মিনহাজের দিকে ।মিনহাজ একটা ঢোক গিলল মাইশার চেহারা দেখে ।

অভিক ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আবির আর মাহিমের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল সবাই ভেতরে চল ।

ওরা সবাই বাড়িটাতে ঢুকল ।আফরিন, মাইশা , তিথি আর অনিতা ইশমিকে নিয়ে একটি রুমে ঢুকল ।
আফরিন , তিথি , মাইশা , আর অনিতা ইশমিকে সাজাতে লেগে গেল ।ইশমির পরনে শাড়িটা খুলে অভিকের দেওয়া শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে মাইশা ইশমিকে । ইশমির খুব অস্থির লাগছে ।ইশমি আমতা আমতা করে বলল

আপু আমি অভিকের সাথে একটু কথা বলতে চাই ।আমায় একটু কথা বলিয়ে দিন ।ইশমির গলা কাঁপছে ।তার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু গড়িয়ে পরছে ।

মাইশা নরমগলায় ইশমিকে বলল এই বোকা মেয়ে কাঁদছো কেন ?অভিক রেডি হচ্ছে এখন কথা বলা সম্ভব না ।দেখো ইশমি অভিক তোমায় খুব ভালোবাসে ।শুধু শুধু চোখের পানি ফেলে এই সুন্দর সময়টাকে নষ্ট করো না ।এই সময়টাকে এঞ্জয় করো ।বিয়ে তো একবার-ই হয় ।

ইশমি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল আপু আপনারা বুজবেন না আমার কষ্ট টা ।
মাইশা একটা তপ্ত শ্বাস ছাড়ল ।

তিথি ইশমির চুলগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে দিচ্ছে ।অনিতা ইশমি শাড়ির কুচিগুলো ঠিক করে দিচ্ছে আর মাইশা ইশমিকে সিম্পল ভাবে সাজিয়ে দিচ্ছে ।কারণ ভারী সাজ অভিক একদম-ই পছন্দ করে না ।আফরিন বসে বসে দেখছে ইশমির সাজ ।মাঝেমাঝে এটা ওটা মাইশাকে এগিয়ে দিচ্ছে ।

সাজ কম্পিলিট হলে ওরা ইশমিকে আয়নার সামনে বসিয়ে দিল ।খুব সুন্দর লাগছে ইশমিকে হালকা সাজে ।ইশমি আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ।এখন শুধু গহনা পড়ানো বাকি ।মাইশা আর দেরি না করে অভিকের আনা গহনাগুলো-ও পড়িয়ে দিল ।
রাত আট টা বাজতে আরো পনেরোমিনিট বাকি ।ওরা সবাই ইশমিকে নিয়ে নিচে নামল ।অভিক রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে বসে ছিল মাহিমদের সাথে ।ইশমিকে নিচে নামতে দেখে সে দাঁড়িয়ে পরল ।ইশমিকে অপ্সরীর মত লাগছে ।ইশমির পরনে লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ি । গোলগাল মুখে হালকা সাজ আর বড়বড় চোখে মোটা করে কাজল দেওয়া ।ঠোটে গাঢ় করে লাল টুকটুকে লিপস্টিক দেওয়া ।অভিক ইশমিকে দেখে হার্ট বিট মিস করে ফেলল ।

মাইশা অভিক কে মুচকি হেঁসে বলল অভিক তুই যেভাবে চেয়েছিস ঠিক সেভাবেই সাজিয়েছি তোর বউকে দেখ তো কেমন লাগছে ?

অভিক কিছু বলার আগেই আবির বলে উঠল ভাবীকে পরীর থেকেও বেশি সুন্দর লাগছে ।

কাজী দশমিনিট আগেই এসে পড়েছে ।অভিকের পাশে ইশমিকে বসানো হল ।ইশমি আড়চোখে অভিকের দিকে তাকাল ।ঘি কালার পাঞ্জাবি , চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা সাথে ঠোটে মুচকি হাঁসি তো আছেই ।অভিক কে মাশাল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে ।অভিক এবার ইশমির দিকে তাকাল ।ইশমি চমকে অন্যদিকে তাকাল ।অভিক ঠোট কামড়ে হেঁসে ইশমির হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে নিজের আঙ্গুলগুলো ঢুকাল শক্ত করে ধরল ইশমির হাত ।কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিয়েছে ।
সাদাত চৌধুরি এসে ছেলের পাশে বসে বললেন ছেলের বিয়েতে বাবা থাকবেনা তা কখনো হয় নাকি ?

অভিক বাবার কথায় হাঁসল ।সে কোনোদিনও চায়নি বিয়েটা এভাবে করতে পরিবার নিয়েই বিয়েটা করতে চেয়েছিল কিন্তু হল না ।কিন্তু বাবার সাপোর্ট পেয়ে সে খুব খুশি হল ।

কাজী অভিক কে কবুল বলতে বললে অভিক এক সেকেন্ড-ও দেরি না করে বলল কবুল কবুল কবুল ।আবির কৌতুক স্বরে বলে উঠল ভাই একটু রয়ে সয়ে ।সবাই হোঁ হোঁ করে হেঁসে উঠল ।ইশমিরও খুব হাঁসি পেয়ে গেল কিন্তু সে হাঁসল না ।

এবার কাজী ইশমিকে কবুল বলতে বললে ইশমি বলল না ।উল্টো গোঁ ধরে বসে রইল ।অভিক ইশমির দিকে চোখ গরম করে তাকাল কিন্তু আশ্চর্য হল অভিক , ইশমি তারপরো মুখ খুলল না ।অভিক সাপের মত ফোঁসফোঁস করতে করতে পকেট থেকে গানস্ টা বের করে উপরের দিকে তাক করে ধুম করে গুলি চালাল ।কিছু মুহূর্তের জন্য সবার আত্মাটা কেঁপে উঠল ।ইশমি ভয়ে চোখমুখ খিঁচে গড়গড় করে বলে দিল কবুল ।

রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে বিয়ে সম্পন্ন হল ইশমি আর অভিকের ।

চলবে,
@Nusrat Hossain