মনের আড়ালে পর্ব-২৭

0
1251

#মনের_আড়ালে
Part_27
লেখনীতে – #Nusrat_Hossain

বিয়ে পড়ানো শেষে ডিনার করে ড্রইংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে অভিক মাহিমদের সাথে ।সাদাত চৌধুরী , অনিতা আর তিথি ডিনার করেই চলে গেছে বাড়িতে ।ইশমি থমথমে মুখ নিয়ে রুমে বিছানায় পা ঘুটিয়ে বসে আছে ।মাইশা আর আফরিন তাকে সেই কখন রুমে রেখে গেছে ।তারা সবাই নিচে আড্ডা দিচ্ছে শুধু তাকে রুমে রেখে চলে গেছে ।তার ইচ্ছে করছে রুম থেকে বের হয়ে নিচে যেতে ।সে নিজের ইচ্ছেটা দমিয়ে রেখে বারান্দার দিকে গেল ।ইশমি ভাবছে আজকে কিভাবে অভিক তাকে বিয়ে করে নিল ।এই ছেলেটা এমন কেন ? এমন ঘাড়ত্যারা, রাগচটা ছেলে জীবনে দেখেনি ইশমি ।পরোক্ষণে ইশমি নিজেকে নিজে বলে উঠল এই রাগচটা ছেলেটাই আজকে থেকে তোর বর ।তোর নামের সাথে তার নাম সারা জীবনের জন্য জুড়ে গেছে এটা ভাবতেই ইশমির মনে শিহরন জেগে গেল ।তার বামপাশটা কেমন ধুকপুক ধুকধুক করছে ।সে অনেকক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল তারপর রুমে চলে এল ।ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে বসল ।হ্ঠাৎ দরজার বাহির থেকে সে আওয়াজ শুনতে পেল ।দরজার বাহির থেকে অভিক, আফরিন , মাইশার , কথার আওয়াজ আসছে ।
আফরিন বলছে টাকা দাও নাহলে রুমে ঢুকতে দিবনা ।
আফরিনের কথা শুনে ইশমি মনে মনে বলল হ্যাঁ হ্যাঁ আফরিন তোমার ভাইকে আজ রুমে ঢুকতে দিওনা ।
ওপাশ থেকে আর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না ।
অভিক রুমে ঢুকে ইশমির দিকে একপলক তাকাল ।তারপর পাঞ্জাবি টা খুলে ফেলল ।অভিক এক পা এক পা করে ইশমির দিকে এগিয়ে আসছে ।ইশমির কপাল বেয়ে চিকন ঘাম পরছে ।সে ভীতদৃষ্টিতে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিঁচু হয়ে রইল ।অভিক তার খুব কাছে আসল ।ইশমির গালটা আলতো হাতে স্পর্শ করল ।ইশমি চোখবুজে ফেলল ।সে অভিকের হাতটা খামচে ধরল ।ইশমির নিশ্বাস দ্রুত উঠানামা করছে ।ইশমির অবস্থা দেখে অভিক ঠোট কামড়ে হাসল ।অভিক ইশমিকে অগ্রাহ করে নিজের ফোনটা অন করে সেদিন ইশমির পাঠানো মেসেজটা ব্যাঙ্গ করে পড়তে লাগল ,

আপনি এবার খুব খুশি তো মি. অভিক ।এটাই তো চেয়েছিলেন আপনি ।শুধুমাত্র প্রতিশোধ নিতে এতবড় খেলা খেললেন আপনি অভিক ? ছিহ আমি কতটা বোকা আপনাকে কতটা বিশ্বাস করেছিলাম আর আপনি সব শেষ করে দিলেন ।শুধুমাত্র প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আমার সাথে এতদিন নাটক করলেন আর আমি চিনতে পারলাম না আপনার ভালো চেহারার আড়ালে থাকা মুখোশটা ।সব শেষ ।এই জীবনে আমি ইশমি আর কোনোদিনও আপনার মত একটা কুলাঙ্গার কে চেহারা দেখাবো না ।আজকে থেকে আপনি আপনার রাস্তায় আর আমি আমার রাস্তায় ।

অভিকের চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল ।ইশমি ভীত দৃষ্টিতে অভিকের দিকে চোখ মেলে তাকাল ।অভিক দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল কি ভেবেছো বিয়ের তালে পরে সব ভুলে গেছি ।
এখন আমায় তুই সাতদিনের হিসাব দিবি কুইক ।

ইশমিরও খুব রাগ হল ।তার অভিক কে বলতে ইচ্ছে করল তাহলে আপনিও আমায় সেদিনের হিসাব দিন কেন আমার মাকে অপমান করা হল তার হিসাব দিন ।ইশমি দেখল অভিক তার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।

সে ঢোক গিলে থমথমে গলায় বলতে লাগল যেদিন আমার মা আপনাদের বাসায় গিয়েছিল ঐদিন আপনি কই ছিলেন ?

অভিক স্বাভাবিক গলায় জবাব দিল চিটাগাং গিয়েছিলাম কাজের জন্য ।

ইশমি অভিকের দিকে বিষ্মিত চোখে তাকিয়ে বলল আপনার মা্ ইশমি কিছু বলার আগেই অভিক তাকে থামিয়ে বলে উঠল আমি জানি সব ।

ইশমি থমথমে গলায় বলল আমাদের সম্পর্কটা আপনার মা মানেনা অভিক ।উনি আমার মাকে খুব অপমান করেছে ।

অভিক টেবিলে একটা লাথি দিয়ে বলল তোর রিলেশন কার সাথে ছিল বল ? আমার সাথে নাকি আমার আম্মুর সাথে ?

ইশমি মিনমিনে গলায় বলল আপনার সাথে ।

অভিক রাগী গলায় বলল তাই সব দোষ আমার হয়ে গেল ।আমি কিছু জানলাম না , কিছু বুজলাম না সব দোষ আমার হয়ে গেল ।আমি তো আবার কুলাঙ্গার-ও হয়ে গেলাম।আর তোর মা-ও তো একদিন আমাদের অপমান করেছিল শুধু পার্থক্য এতটুকুই তোর মা একটু কম করেছে আর আমার মা একটু বেশি করেছে ।কত ফোন করার চেষ্ট করেছি জানিস ? নিজের ফোনটা পর্যন্ত বন্ধ করে রেখেছিস ।ভাবলাম রাগ কমে গেলে এমনিতেই যোগাযোগ করবি কিন্তু পরে যা শুনতে পেলাম তাতে আমার মাথায় আগুন ধরে গেল ।

ইশমি একটা ঢোক গিলে যেই না পা বাড়াতে যাবে অমনি অভিক চোখ গরম করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল খবরদার এক পাও নাড়াবিনা ।সাতদিনের হিসাব বাদ দিলাম ।এখন বল তুই কোন সাহসে ঐ গাঞ্জাখোরটাকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলি কুইক জবাব দিবি আমায়।

ইশমি থমথমে গলায় বলল মা বিয়ে ঠিক করেছে তার সাথে ।

অভিক সাথে সাথে ইশমির হাত মুচরে ধরে বলল কোন সাহসে আরেকজনের সাথে বিয়ে করতে রাজি হলি তুই ? তোর মুখ কই ছিল ? আমায় একটাবার ফোন করে জানাতে পারলিনা বলেই ইশমিকে ধাক্কা দিল ।অভিক রাগে সাপের মত ফোঁসফোঁস করছে আর বিরবির করে বলছে আমি না এলে কি হত আজ ?

ইশমি কান্নারত গলায় বলল আপনি আমায় তুই করে বলছেন আবার হাত মুচরে দিলেন ?

অভিক ইশমির দিকে ভ্রু কুঁচকে বলল হ্যাঁ তো ?

ইশমি এবার রাগী গলায় বলল বেশ করেছি ঐ লোকটাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি ।সে আপনার মত রাগচটা লোক না ।

অভিক ইশমির দিকে ক্ষীপ্ত দৃষ্টিতে তাকাল ।তারপর খুব দ্রুত ইশমির কমোর ঝাপটে ধরে ইশমিকে বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিল।ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটল যে ইশমি হতবিহ্বল হয়ে গেল ।অভিক ইশমির উপর ভর দিয়ে শুয়ে পরল ।ইশমির হাতদুটো বিছানার সাথে চেঁপে ধরে ঠোট দিয়ে ইশমির ঠোটদুটো চেঁপে ধরল ।সব রাগ ইশমির ঠোটের উপর প্রকাশ করছে অভিক ।ইশমি অভিক কে একটা ধাক্কা দিল ।অভিক নড়েচড়ে উঠল আবার যে-ই না ইশমির ঠোটের উপর ঝুকতে যাবে অমনি ইশমি হাত দিয়ে নিজের ঠোট ডেকে ফেলল ।অভিক শ্বাস নিতে নিতে ইশমির হাত শক্ত করে চেঁপে ধরে ঠোট থেকে হাত সরিয়ে দিল ।ইশমির সারামুখে অজস্র চুমু খেতে লাগল অভিক ।অস্থির হয়ে ইশমির পরনের শাড়ির কুচিটা খুলে শাড়িটা নিচে ছুড়ে ফেলে দিল ।ইশমির দিকে কিছুক্ষণ মোহনীয়দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল অভিক ।তারপর ইশমির গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল আর হাত দিয়ে ইশমির পেট বুলাতে লাগল ।ইশমি চোখ বুজে ফেলল ।প্রথমে অভিক রাগ নিয়ে কাছে আসলেও এখন অভিকের স্পর্শে কোনো রাগ নেই ।গভীর থেকে গভীর হতে লাগল অভিকের স্পর্শগুলো ।চাঁদটা একসময় লজ্জায় মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল ।ৌ

সকালে মুখে আলো পরতেই বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে এল ইশমির ।এমনিতেই রাতে ঘুম হয়নি ।সে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ চোখ টা ডলল ।তারপর অভিকের দিকে তাকাল ।অভিক তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে ।সে খুব সন্তর্পনে অভিকের হাতটা তার কমোর থেকে সরিয়ে দিল ।তারপর যে-ই না বিছানা থেকে উঠতে যাবে অমনি অভিক তাকে বিছানায় টান দিয়ে শুয়িয়ে দিয়ে তাকে আরো গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে তার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল ।কিছুক্ষন পর নিজে থেকেই ইশমিকে ছেড়ে দিল ।ইশমি ছাড়া পেয়ে শরীরে চাদর জড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল ।
কিন্তু গোসল সেরে সে বিপাকে পরে গেল ।কোনো কাপড় আনেনি সে সাথে করে ।কি করবে এখন সে ? সে ওয়াশরুমের দরজাটা একটু খুলে উঁকি মেরে দেখল অভিক এখনো উঁবু হয়ে শুয়ে আছে ।সে শরীরে টাওয়াল জড়িয়ে পা টিপে টিপে বের হল ওয়াশরুম থেকে ।যে-ই না সে আলমারির কাছটায় যাবে অমনি অভিক শোয়া থেকে উঠে বসল ।অভিক চোখমুখ কুঁচকে তার দিকে তাকাল ।ইশমি স্ট্যাচু হয়ে চোখ বড় বড় করে সেখানেই থমকে দাঁড়িয়ে রইল ।মনে মনে বলল যার কাছ থেকে পালাতে চাই সে-ই এখন কেমন ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে কেন আরেকটু পর ঘুম থেকে উঠলে কি হত ? অভিক কিছুক্ষণ ইশমির দিকে তাকিয়ে থাকল তারপর বিছানা থেকে উঠে আলমারিটা খুলে ইশমির জন্য বাসন্তি কালার শাড়ি ব্লাউজ , পেটিকোট বের করে ইশমির হাতে দিয়ে বলল পড়ে আসতে ।ইশমি ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে বের হল ওয়াশরুম থেকে। রুমে এসে শাড়ি পড়ার চেষ্টা করছে কিন্তু হচ্ছে না ।অভিক কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে মাইশাকে ফোন করে আসতে বলল ।তারপর সে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল ।

মাইশা এসে দরজা নক করল ।ইশমি শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে দরজাটা খুলে দিল।মাইশা ভেতরে ঢুকে মুচকি হেঁসে বলল দাও শাড়িটা দাও আমি পড়িয়ে দিচ্ছি ।ইশমি শাড়িটা মাইশার হাতে দিয়ে দিল ।ইশমি খেয়াল করল মাইশা ঠোটটিপে হাঁসছে ।

সে বলে উঠল আপু কি হয়েছে হাঁসছো কেন ?

মাইশা ফিঁক করে হেঁসে দিয়ে বলল ভাই আমার একেবারে তার চিহ্ন বসিয়ে দিয়েছ।

ইশমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গলায় হাত দিল ।

মাইশা বলে উঠল থাক থাক আর লজ্জা পেতে হবেনা ।ইশমির খুব অসস্তি হচ্ছে ।
মাইশা ইশমিকে শাড়িটা পড়িয়ে দিয়ে বলল আমি যাই তাহলে ।তুমি অভিকের সাথে পরে এসো ।আমরা অপেক্ষা করছি তোমাদের জন্য নাস্তার টেবিলে বলেই মাইশা আর দেরি না করে বের হয়ে গেল রুম থেকে ।

অভিক গোসল শেষে কমোরে তোয়ালে জড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হল ।ইশমি অভিক কে দেখে বারান্দায় চলে গেল ।অভিক টিশার্ট আর প্যান্ট পরে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে পেছন থেকে ইশমির কমোর শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ।ইশমি আবেশে চোখ বুঝে অভিকের কাধে মাথা এলিয়ে দিল ।অভিক ইশমির গলায় ছোট করে চুমু খেয়ে ইশমিকে নিয়ে নিচে নেমে গেল ।অভিক আর ইশমি নিচে নামতেই দেখতে পেল সবার মুখ গম্ভীর হয়ে আছে ।অভিক ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল কি ব্যাপার কি হয়েছে সবার ?

আবির থমথমে কন্ঠে বলে উঠল

ভাই রিশা সুইসাইড এটেম্পট করার চেষ্টা করেছে ।ও হসপিটালে ভর্তি ।

অভিক ভ্রু কুঁচকে বলল তো ?

আবির থমথমে গলাতেই বলে উঠল ওর পরিবার তোমার নামে কেস করেছে থানায় ।বাড়িতে পুলিশ এসেছে ।তোমায় এক্ষুণি যেতে বলেছে ।

চলবে,
@Nusrat Hossain