মনোভূমির ছায়া পর্ব-১৩+১৪+১৫

0
65

#মনোভূমির_ছায়া
পর্ব ১৩
লেখনী – #মাহীরা_ফারহীন

লিজা

লাউড স্পিকারে লানা ডেল রেয়ের “ব্লু জিনস” গানটা চলছে। কামরায় সব গোছান থাকা সত্ত্বেও সবকিছুই যেন এলোমেলো ঠেকে। দরজা খোলাই ছিলো। লিজা বিছানায় পায়ের ওপর পা তুলে বেসেছিল। দৃষ্টি মোবাইলে নিবদ্ধ।
ইভান ক্লান্ত ভঙ্গিতে ভেতরে ঢুকলো। ক্রিম রঙের একটা টিশার্ট গায়ে। সিঙ্গেল চেয়ারটায় ধপ করে বসল,
‘শোন। তোর সাথে কিছু কথা আছে।’

‘হুম। বলো।’

‘তুই আজকাল যা যা করে বেড়াচ্ছিস সেসব কিন্তু মোটেও সুবিধার ঠেকছে না আমার কাছে।’

‘আমার করা কোন কাজটা এমনিতেও বা তোমার পছন্দ হয়?’
মোবাইল ক্রিন থেকে চোখ না সরিয়ে তিক্ত কন্ঠে বলল লিজা। লাউডস্পিকারের সাউন্ড কমিয়ে দিল।

‘বাহ তো যারতার ফিউনেরালে গিয়ে তুই গান করে বেড়াবি সেটা খুব ভালো? তুই কী আদৌও এসব করার আগে ভাবিস এর পরিপ্রেক্ষিতে কী ঘটতে পারে?’ তীব্র কন্ঠে বলল ইভান।

‘তুমি আমাকে ভাব টা কী? আমি ভালো করেই জানি কিসের জন্য কী ঘটতে পারে। এসবের সঙ্গে জড়াতে তোমাকে কেউ বলেনি৷ নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে যে ঝামেলায় তুমি জড়িয়েছ সেটার দায় আমার না।’

‘লিজা আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না তুই কী করার চেষ্টা করছিস। দয়া করে এসব বন্ধ কর।’

‘ভাই তুমি যদি কিছু না করে থাকো তাহলে আমার কোন কিছু করা না করার সঙ্গে তোমার কোন সম্পর্ক থাকার কথা না। এখন তুমি সত্যিই কিছু করে থাকলে আমার কিছু বলার নেই।’

‘লিজা! তুই আমাকে কতটা নিচু ভাবিস!? সবার সাথে সাথে এই ঘটনা তুইও বিশ্বাস করিস? আশ্চর্য!।

‘যতটা তুমি হতে চাও। আর আমি ভুল কিছুই বলিনি। আমি সেটাই বলছি যেটা সকলে বলছে।’ ড্যাম কেয়ার ভঙ্গিতে উত্তর দিল।

‘ঠিক আছে খুব ভালো কথা! আমার নিজের বোনই আমাকে বিশ্বাস করে না তো মানুষের কাছ থেকে কী আশা করব?’ বলে বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

লিজা দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্পিকারটা বন্ধ করল। ইভানের দিকে ঘুরে বসে বলল, ‘কেন নতুন করে বুঝি কেউ তোমাকে জেরা করেছে?’

‘আমাকে কেউ জেরা করেনি। বরং মানুষের মনে সন্দেহ জাগছে তোকে নিয়ে।’

‘আমাকে?’ ভ্রু সুচালো হলো লিজার।

‘হুম।’ ছোট করে বলল ইভান।

লিজা চিন্তিত কন্ঠে বলল, ‘মানে আমি আবার কী করেছি? আমাকে কেন কারো সন্দেহ হবে?’

‘জানি না।’

‘আসলে হয়েছে টা কী?’

‘না আসলে সন্দেহ তোকে আমাকে দুজনকে নিয়েই জাগছে। একটা কথা বল বেঁচে থাকতে তো ওর দিকে তাকিয়েও দেখতি না। তাহলে ম*রে যাওয়ার পর এত দরদ কোথা থেকে আসল? কেন ওর ফিউনেরালে গিয়েছিলি? আর গিয়েছিলিই যখন গান করতে কে বলেছিল তোকে?’
লিজা চুপ করে থাকল। কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করল কামরায়। ইভানই পুনরায় নিরবতা ভাঙল,
‘আচ্ছা সত্যি করে বলতো তুই কী সত্যি সত্যি এটা বিশ্বাস করিস যে টনি তোর ওপর চিট করেনি?

লিজার নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। ঝাঁঝ ভরা কন্ঠে বলল, ‘কী আশ্চর্য তো! এই কথা কোথা থেকে আসছে? যে চলে গিয়েছে তার সম্পর্কে আমি আর কিছু বলতে চাই না।’ বলে থামল। তারপর একটু বিরতি দিয়ে কিছুটা শান্ত কন্ঠে বলল, ‘এমিলির জন্মদিন আসছে সামনে। আমাকে সেটা অবশ্যই এটেন্ড করতে হবে।’

‘তো করবি।’

‘না তোমরা তো সহজ ব্যাপারকে সহজ থাকতে দাও না।’

‘মানে কী? কোথায় হচ্ছে জন্মদিনটা?’

‘এখনো ও নিশ্চিত না তবে ব্রেন্টউডে হতে পারে।’,

‘ওটা আরেকটা শহর লিজা। মানছি ব্রেন্টউড অনেক কাছে কিন্তু তবুও মা কখনোও রাজি হবে না।’

‘জানি তো। দুনিয়া শুদ্ধ সবাই সবকিছুই করে বেড়াচ্ছে কিন্তু সকল সমস্যা এসে দাঁড়ায় আমাদের বাড়িতে? কারোও সমস্যা নেই কিন্তু কার সমস্যা? লিজার মায়ের সমস্যা!’ নিজেকে উপহাশ করে হাসল লিজা।

ইভান দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘লিজা দুনিয়ার সবাই পাহাড় থেকে লাফ দিলে তো আর আমরা তোকে গাধার মতো ওদের সাথে সাথে পাহাড় থেকে লাফ দিতে দেব না তাই না? এবং আমরা পিওর আমেরিকান নই। আমাদের নিজস্ব একটা সংস্কৃতি আছে। তার আচার আচরণ আছে। আচ্ছা সেগুলোও বাদ দিলে ধর্মীয় রীতিনীতিও আছে। মা তোর খারাপ চায় না। জাস্ট চায় তুই যেন হাতের বাইরে না চলে যাস।’ বলে কামরা থেকে বেরিয়ে গেল। যাওয়ার সময় দরজা টা হা করে খুলে রেখে গেল।

‘এ্যই দরজাটা বন্ধ করে যাও।’ উচ্চস্বরে বলল লিজা। কিন্তু ইভান ফিরে এলো না।

লিজা মুখ গোঁজ করে বসে রইল। বেশিক্ষণ একা বসে থাকা হলো না অবশ্য। ভাবনারা পেয়ে বসল ওকে,

‍‍ {—-|—-}

‘মা দিবে না যেতে। জানোই যখন তাহলে বলছো কেন?’

‘তাহলে আমরা সেখানে যাব না।’ বলল টনি।

‘জাস্ট আমার জন্য যাওয়াই হবে না? এটা কেমন কথা?’

টনি হাসল। লিজার সামনা সামনি বসে ছিল। ওর হাত দুটো ধরে বলল, ‘তুমি অনেক লাকি লিজা। তোমার একজন মা আছে যে কোন চাকরির চিন্তা করে না। যে চিন্তা করে না সে অমুক মিটিং জয়েন না করলে কী হবে? যে চিন্তা করে না অমুক বিজনেসম্যানের সঙ্গে দেখা না হলে কী হবে। বরং যে চিন্তা করে তার ছেলেমেয়ে ঠিক আছে কিনা। যে চিন্তা করে ছেলেমেয়েরা খাওয়া দাওয়া করেছে কিনা। সেই মাকে কষ্ট দিও না। সে তোমাকে বেঁধে রাখতে চায় না। সে তোমাকে নিরাপদে রাখতে চায়। একটা গন্ডির মধ্যে থাকা মানে বন্দি হয়ে থাকা নয় বরং নিজের সম্মান নিয়ে, নিজের মর্যাদা নিয়ে স্বাধীন ভাবে থাকা।’

লিজা চুপ করে মাথা নত করে রইল। কিছুক্ষণ পর বলল,
‘জানি। আমি আমার মাকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু একটা জিনিস দেখো সকলে যেখানে কোন জায়গায় যেতে এলাউড, কোন কাজ করতে এলাউড সেখানে আমার জন্য সেগুলো নিষিদ্ধ হওয়ায় আমার ফ্রেন্ডরা আমাকে কী….টনি ওর কথা কে*টে দিয়ে বলল, ‘আরে আরে দেখো তো মেয়ের কথা! ফ্রেন্ড কেন সকলেই এই দুনিয়ায় ক্ষণস্থায়ী। এবং এর মধ্যে সবচাইতে বেশি ক্ষণস্থায়ী যদি কিছু হতে পারে তা হলো বন্ধুরা। আজ আছে কাল নেই। এবং তুমি মানুষ কী বলল বা কী ভাবলো তাতে কেন কান দেবে। তোমার জীবন কী ওরা জিইয়ে দেবে? দেবে না তো।’

লিজার চোখে পানি টলমল করছে। জানে না এর কারণ। টনি হঠাৎ নিজের ব্যাগ হাতড়ে একটা প্যাকেট বের করল। প্যাকেটটা লিজার দিকে এগিয়ে দিতেই লিজা অবাক হয়ে সেটা হাতে নিলো। প্যাকেটটা খুলে সেখান থেকে একটা মোমবাতি বেরিয়ে এলো। কাঁচের গ্লাসে মোড়া। ওপরে লেখা ‘হোমসিক’। এটা দেখে হঠাৎ লিজার হৃদয় চিনচিনে ব্যাথায় মোচড় দিয়ে উঠল। উদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে গেল শিরদাঁড়া বেয়ে। টনির দিকে তাকিয়ে আপনাআপনি ঠোঁটের কোণ প্রসারিত হয়ে গেল। টনি ওর কাঁধ জড়িয়ে ধরে প্রফুল্ল কন্ঠে বলল, ‘এবার চোখ মুখ মুছো তো। আর কান্নাকাটি, মন খারাপ করা নয়। আমরা ওখানে না গিয়েও ওদের চাইতে বেশি ভালো থাকতে পারি।’

{—-|—-}

স্মৃতির পাতাগুলো ঘাটলেই মনের আকাশ মেঘলা হয়ে ওঠে। সুন্দর স্বপ্নময় স্মৃতি গুলোও আর সুন্দর নেই৷ একটা কথা আছে না, ‘যার শেষ ভালো তার সব ভালো’ তারই বিপরীত টা ঠিক ঘটেছে লিজার ক্ষেত্রে। টনি বেঁচে থাকতেও যেমন এর শেষটা সুন্দর ছিলো না। আর সে মা*রা যেতেও এর শেষটা আরোও বেশি খারাপ হয়ে গিয়েছে। সেলফে রাখা সেই মোমবাতিটির দিকে টলমল চোখে তাকাল লিজা৷ ভাবল,
‘আমি চাই না। আমি হতে চাই না সেরকম যেরকম তুমি চেয়েছিলে। যতই যুক্তি দেখিয়ে থাক। জানি বন্ধুরা ক্ষণস্থায়ী। জানি হয়তো আমি এদিক দিয়ে সত্যিই ভাগ্যবতি যে আমার মায়ের মতো একজন মা পেয়েছি। তবুও আমার মনোভাব পাল্টাবে না। হয়তো পাল্টাতে পারতো, না না আসলেই অনেকটা পাল্টিয়ে ছিল ঠিকই। কিন্তু সেই মানুষটার কথায় কেন আমি আমল করব যার নিজেরই নৈতিকতার ঠিক নেই। যার চরিত্রেরও ঠিক নেই সে আমাকে কী জ্ঞান দেবে। কেন সে আমাকে ঠকাতে গেল। না সত্যিই আমাকে টনির ভালোই লাগতো না কারণ আমি তো অসহ্য। এইজন্যেই তো আমাকে পাল্টাতে চেয়েছিল। কিন্তু এতে ওর কী স্বার্থ ছিলো? আমাকে ভালো না লাগলে আমার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতো না। কিন্তু কেন আমার ইমোশন নিয়ে খেলল!?’

—————————

কদাচিৎ প্রায় নিষ্প্রভ হয়ে ওঠে বাড়িটা। কেউ যে এখানে বাস করে তা বোঝা শক্ত। আবার বাহিরের থেকে ভেতরের দিকটা চোখে পরে না বললেই চলে। সোরগোল হবে কিভাবে বাড়ির বাসিন্দারা যদি বাড়িই না থাকে?

এমিলি মুখে বিষন্ন ভাব ঝুলিয়ে মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে আছে সোফার পাশে। কেউ কোন কথা বলছে না। ভাড়ি বৃষ্টি হচ্ছে বাড়ির বাহিরে। গুমট একটা ভাব আঁকড়ে ধরেছে ঘরটাকে।
কাঁচের স্লাইড ডোর বেয়ে পানির ধারা নেমে যাচ্ছে। ঘরের সবগুলো বাতি জ্বালানো। মাঝে মাঝে মৃদুস্বরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সোফায় বসে আছেন মিস্টার পিট গ্রেউড এবং আমান্ডা গ্রেউড। মাঝেমধ্যে এমিলির চোখ ভিজে আবছা হয়ে আসছে। আবারও ধীরে ধীরে নোনা জলগুলো চোখের অতলেই হারিয়ে যাচ্ছে।
মি.গ্রেউড বলছেন, ‘তোমার ভাই বেঁচে থাকলে ও না হয় এসব জিনিস নিয়ে আজাইরা মাথা ঘামাত। আমাদের কী এত সময় আছে? তোমার আক্কেল জ্ঞান বলে কিছু নেই?’

এনিলি নিথর দাঁড়িয়ে রইল শুধু৷ কেয়ারটেকার মিস ম্যারিও এমিলির পেছনে দাঁড়িয়ে। উনি স্নেহময় দৃষ্টিতে এমিলির দিকে তাকিয়ে আছেন। মিসেস আমান্ডা বললেন, ‘দেখো এমিলি এতে মন খারাপ করার কিছুই নেই। তুমি জানো যে আমরা কত ব্যস্ত থাকি। এমনিতেও এসব অ্যার‌্যাঞ্জ করার সময় বা সুযোগ কোনটাই আমাদের হবে না। তাছাড়া অক্টোবরের তিন তারিখে আমরা লন্ডনে থাকব। এসব কীভাবে করব তুমিই বলো?’

এমিলি নিস্পৃহ কন্ঠে বলল, ‘বুঝেছি। কিছু করা লাগবে না।’

‘দেখেছ কীভাবে বলল কথাটা যেন আমরা কিছুই করি না ওর জন্য। কী অকৃতজ্ঞ একটা মেয়ে! তুমি তো কখনোও বুঝবে না আমাদের টাকার মূল্য। এই যে এত আরামে মুখের ওপর সবকিছু পেয়ে যাচ্ছ সেটা এমনি এমনি হচ্ছে না। তোমার মা আর আমার দিন রাত পরিশ্রমের ফল এসব৷ যখন যেখানে ইচ্ছা টাকা উড়াচ্ছ! এত দামি একটা গাড়ি কিনে দেওয়া হয়েছে। এত ভালো একটা স্কুলে পড়ানো হচ্ছে। আর কী চাও তুমি?’ ঝাঁঝাল বললেন মি.গ্রেউড।

এমিলির থুতনি কুঞ্চিত হয়ে এসেছে। চোখে জল টলমল করতে লাগলো। ধরা গলায় মৃদুস্বরে বলল, ‘বাবা টাকা দিয়ে আমার যত্ন করার জন্য চাইলে তুমি দশটা চাকরও রাখতে পারো। আমার মুখের ওপর সব তুলে দেবে তারা। কিন্তু তারা কখনোই তোমাদের স্থান নিতে পারবে না।’
মি. গ্রেউড হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। আমান্ডা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

‘এর মানে আমরা যে দিনরাত খাটছি তোমার ভালো ভবিষ্যতের জন্য এসব কিছুই না? তুমি কোন কিছুতেই সন্তুষ্ট হও না কেন!?’ প্রায় হুংকার দিয়ে মি. গ্রেউড।
এমিলি আর কিছু বলল না।

মিসেস গ্রেউড শান্ত কন্ঠে বললেন,
‘পিট শান্ত হও।’ বলে এমিলির দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকালেন। বললেন, ‘এমিলি কথা বাড়াচ্ছ কেন? আমরা যে কাজ শেষে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে বাড়ি ফিরে আসি শুধু মাত্র তুমি একা থাকো বলে। আমরা যে গত বছর এত ধুমধামে তোমার জন্মদিন পালন করলাম। আমরা যে তোমাদের ক্লাব পিকনিকে পর্যন্ত গেলাম সেসব দেখো না? আমাদের শত ব্যস্ততার মাঝেও আমরা এসবের জন্য সময় বের করেছি। এ বছর সময়ের অভাবে সম্ভব হচ্ছে না।’

এমিলির চোখের দোর পেরিয়ে গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পরল। বুকের ভেতর হৃদয়টা যেন কেউ বারংবার খামচে ধরছে। থুতনিটা প্রায় বুকের সঙ্গে লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু না বলেই এমিলি হাঁটা দিলো সিঁড়ি ঘরের দিকে। মিস ম্যারি এতক্ষণ নিশ্চুপ ছিলেন। এখন বলে উঠলেন, ‘ম্যাডাম আপনাদের মনের অবস্থা যেমন খারাপ ঠিক ততটাই খারাপ মেয়েটার মনের অবস্থা। আপনারা তো কাজে ব্যস্ত হয়ে বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকেন। বাড়িতে একা থাকে ও৷ আগে ওর সঙ্গি ছিল টনি। এখন সে আর নেই। মেয়েটার কেমন লাগে একবার ভেবে দেখেছেন?’ বলে থামলেন।

এমিলি সিঁড়ির গোড়ায় গিয়ে থেমে গেল। মিস ম্যারির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। মিস ম্যারি বলে গেলেন, ‘ও তেমন কিছুই চায়নি। আপনাদের ওর জন্মদিনে উপস্থিত থাকতে হবে সেটাও বলেনি৷ শুধু চেয়েছে টনি যেই প্ল্যানটা করেছিল সেটা যেন বাস্তবায়িত হয়। আপনাদের যদি তাও সময় না হয় আমাকে অনুমতি দিলে আমি ব্যবস্থা করব। ব্রেন্টউডের বাংলোতেও আমি ফোন করে কথা বলবো।’

মিস ম্যারি থেমে যাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ ওনারা কিছু বললেন না। অবশেষে মি.গ্রেউড বললেন, ‘ঠিক আছে। যদি পারো করতে, করো যা ইচ্ছা।’

কথাটা কর্ণগোচর হতেই এমিলি সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেল। মিস্টার এবং মিসেস গ্রেউড উঠে দাঁড়ালেন চলে যাবার তরে। মিস ম্যারি বললেন, ‘আরেকটা কথা না বললেই নয়। জানি ছোট মুখে বড় কথা। কিন্তু অতিরিক্ত আদর যত্ন ভালোবাসা দেওয়ার পরও এক সন্তান হারিয়েছেন। এখন এই মেয়েটাকে অবহেলা করে হারিয়েন না।’ বলে আর থামলেন না উনি। চলে গেলেন।

মি.গ্রেউড ভ্রূক্ষেপ না করে চলে গেলেন। কিন্তু মিসেস আমান্ডা দাঁড়িয়ে রইলেন। তার স্বচ্ছ নীল চোখে উদাসীনতা।

এমিলি নিজের কামরায় এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে মেঝেতে ধপ করে বসে পরল। বিছানায় হেলান দিল। চোখ দিয়ে অনবরত নোনাজলের ধারা নেমে যাচ্ছে। ভাবছে,
‘তোমরা কাজ শেষে তাড়াহুড়ো করে বাড়ি ফিরতে টনি বাড়িতে একা থাকতো বলে। আমি কখনো বাড়িতে ছিলামও কিনা সেটা নিয়ে তোমরা মাথা ঘামাওনি। কখনো জিজ্ঞেসও করোনি আমি কোথায় ছিলাম, কেমন ছিলাম, খেয়েছিলাম কিনা। গতবছর তোমরা ধুমধামে আমার জন্মদিন পালন করেছিলা টনি জেদ করেছিল বলে। তোমরা আমার ক্লাব পিকনিকে গিয়েছিলা, আরেকজন পরিচিত বিজনেসম্যান তার ছেলেমেয়েদের সাথে গিয়েছিল এবং তোমাদের যেতে অনুরোধ করেছিল বলে। হাতে গোনা যা যা তোমরা করেছো তার কোনটাই আদোও তে আমার জন্য করা হয়নি। টনির স্থানে যদি আমি মা*রা যেতাম তাহলে বোধহয় তোমরা প্রাণে বেঁচে যেতে৷ কেন আমি মা*রা গেলাম না? কেন? না, না আসলে মাঝে মাঝে মনে হয় ভাইয়া দুনিয়া থেকে চলে গিয়ে শান্তিই পেয়েছে। আর কত লড়াই করত আমার জন্য? ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল হয়তো। নিজের জীবনেও তো কম কষ্ট পায়নি। মনে হয় যেন ভালোই হয়েছে ভাইয়া নেই। চলে গিয়েছে না ফেরার দেশে। কিন্তু ভাইয়া তো অনেক ভালো মানুষ ছিল। বাবা-মায়ের পার্ফেক্ট ছেলে ছিলো। সে কী এভাবে খু*ন হয়ে যাওয়া ডিজার্ভ করে? করে না তো? ডিজার্ভ করি আমি!’

ইনশাআল্লাহ চলবে।

#মনোভূমির_ছায়া
পর্ব – ১৪
লেখনী – #মাহীরা_ফারহীন

‘অমিত আমাকে সাত নম্বরটা দিতেই হবে।’

‘না আমি দিব না।’

‘আরেহ আশ্চর্য! টনির প্র্যাক্টিক্যালে ওটা নেই। সব তো চাচ্ছি না। শুধু সাত নম্বরটা।’

‘নিনা প্র্যাক্টিক্যালের জন্য আমার পেছনেই কেন পরে থাকিস?’

‘আচ্ছা তাই? তুই না সবসময় অভিযোগ করিস তোর ভাগ্য কত খারাপ যে আমার মতো একজন ফ্রেন্ড পেয়েছিস যে তোকে বেস্ট ফ্রেন্ড বলে মুখে শিকারও করে না। তাহলে এখন কী বলবি? তুই আমার ফ্রেন্ড বলে তোর কাছে চাচ্ছি আর তুই দিতেই চাচ্ছিস না।’
অমিত অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল,
‘তুই সবসময় বেস্ট ফ্রেন্ড কার্ড বের করে আমাকে ব্লেকমেইল করিস।’

‘আরে আমিই তো দিতে পারি৷ তুমি কী আমাকে একেবারে বাতিলই করে দিয়েছ?’ নিনার সামনের সিট থেকে বলল ইভান। ওকে সাধারণত সামনে রেখেই নিনা ও অমিত ঝগড়ায় ব্যস্ত থাকে। কাজেই ওদের কথার অধিকাংশই ইভানের কানে যায়।

‘হ্যা হ্যা দেখ তোকে সাহায্য করনে ওয়ালা মানুষের অভাব নেই।’ টিটকারির সুরে বলল অমিত।

নিনা ইভানের দিকে তাকাল, ‘আমাকে প্র্যাকটিকেল গুলো না দিতে পারার আফসোসটা বোধহয় থেকেই গিয়েছিল।’

‘আফসোস কিসের? অমিত দিতে চাচ্ছে না বলে বললাম।’ মুচকি হেসে বলল ও।

‘আচ্ছা দিও।’ বলে লম্বা শ্বাস ফেললো নিনা।

তখনই মি.ফিলিক্স ক্লাসে ঢুকলেন। সকল হৈ-হুল্লোড় কমে এলেও বন্ধ হলো না। উনি লিটারেচার বই খুলে প্রস্তুত হলেন “দ্যা এপোলজি অফ সক্রেটিস” পড়ানোর জন্য। পেছনের দিকে বেঞ্চের কয়েকজন খাওয়াদাওয়া করতে ব্যস্ত। তারা বোধহয় ক্লাসে স্যারের আগমন লক্ষ্যই করেনি। মি.ফিলিক্স ও উদ্দেশ্য করে বললেন,
‘জর্জ, ম্যাক্সিন, দিলিপ এই যে তোমরা? বলো “দ্যা এপোলজি অফ সক্রেটিস” কার লেখা?’

ওদের হতভম্ব দেখাল। ওদের মধ্যে জর্জ বলল,
‘সক্রেটিস এর।’ ক্লাসের সকলে হেসে উঠল।

কেউ একজন উপহাস করে বলল,
‘ব্রো এটা সক্রেটিস কিভাবে এন্ড কেমনে ম*রসে ওইটার ঘটনা।’

‘ও গেজ ওয়াট? জর্জি বলতে চাচ্ছে সক্রেটিসের ভুত এসে লিখে দিয়ে গেসে।’ আরেকজন কথাটা বলতেই সকলে আবারও হাসিতে ফেটে পরল।

‘ওকে ওকে ইটস ইনাফ।’ শান্ত কন্ঠে বললেন মি.ফিলিক্স।

সকলকে নিশ্চুপ হওয়ার সুযোগ দিয়ে কিছুক্ষণ পর বললেন,
‘এটা প্লেটোর লিখা। “দ্যা এপোলজি অফ সক্রেটিস” এ প্লেটো মূলত তার মৃ*ত গুরু সক্রেটিসের অন্যায় ভাবে মৃ*ত্যুর ঘটনা এবং সক্রেটিসের সত্যতা তুলে ধরেছে। সক্রেটিস তার স্টেটের দেবতাদের মানতে অস্বীকার করেছিল। সেসময় এথেন্সের অথরিটি তার বিরুদ্ধে নাস্তি*কতা, অস*ভ্যতা এবং দুর্নী*তির অভিযোগ তুলেছিল। সেসময় তাদের দেবতাদের প্রকাশ্যে অস্বীকার করাটা একটা দন্ডনিয় অপরাধ ছিল। এথেন্সের যুবকরা তার দুর্নী*তি ও মিথ্যাচারের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে যখন শুনানিতে অভিযোগ করা হয় তখন সক্রেটিস নিজে থেকে, ‘মৃ*ত্যু দন্ডের আর্জি করে।’

‘কেন ভাই এর ম*রার এতো শখ কেন ছিলো?’ একজন ছাত্রী বলে উঠল।

‘গ্রেটেন ভাষা ঠিক করো।’

‘আমি কোন গা*লি তো দেইনি। আজব।’ বিরক্ত কন্ঠে বলল গ্রেটেন।

মি.ফিলিক্স পুনরায় পড়ায় মনোযোগ দিলেন,
‘সে কোন অবস্থাতেই নিজের ইচ্ছা এবং বাস্তববাদী মনোভাবের বিরুদ্ধে যাবে না বলেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
নিজের সত্যতার প্রমাণ করতে চেয়েছিল বলেই মৃ*ত্যুর পথ বেছে নিয়েছিল। তবে ব্যাপারটা এমন ছিল না যে সে নিজে মৃ*ত্যু না বেছে নিলেও সে বেঁচে যেত। অবশেষে তাকে মৃ*ত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হতো তাই সে নিজে থেকেই স্বইচ্ছায়, সম্মানের সঙ্গে মৃ*ত্যু দন্ড মেনে নেয়। যদিও এটা শোনা যায়, জেলে বন্দি থাকাকালীন তাকে পালিয়ে সাহায্য করতে চেয়েছিল তার কিছু অনুসারী তবে সে সেগুলো অগ্রাহ্য করে। অবশেষে তাকে হেমলকের বি*ষ দেওয়া হলে সে তা নিজ ইচ্ছায় পান করে মৃ*ত্যুর কোলে ঢোলে পরে।’ বলে শেষ করলেন। এতক্ষণ সকলে যা একটু মনোযোগ জমা করেছিল স্যারের দিকে সেসব আবার উবে গেল। সকলেই মাত্র শোনা কাহিনি নিয়ে উপহাস মুলক কথাবার্তা শুরু করল। নিনা গালে হাত দিয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে আছে। “দ্যা এপোলোজি” আগেই একবার পড়ে ফেলেছিল কিন্তু তখন কিছুই মনে হয়নি। কিন্তু এখন একটা জিনিস মাথায় খেলে গেল অথবা বলা যায় তাৎকালীয় ভাবেই মাথায় ভাবনাটা এলো,
“দুজনেই হেমলকের বি*ষে মা*রা গিয়েছে। কিন্তু সক্রেটিসের মৃ*ত্যু অবধারিত ছিল। যদিও সক্রেটিস নিজে থেকেই সেটা গ্রহণ করে নিয়েছিল পিন্তু টনি? যদিও টনির পরিবার মনে করে সে আ*ত্মহ*ত্যা করেছে। কিন্তু যদি সত্যি তাই হয়ে থাকে কেন ইভানের ব্রেসলেট ভে*ঙে পরে থাকবে ওর কামরায়? কেন ওর প্রিয় গিটারের স্ট্রিং গুলো কা*টা থাকবে? কেনোই বা সিসিটিভি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ থাকবে? সক্রেটিস নিজের সত্যতা প্রমাণ করতে মা*রা গিয়েছিল। টনির কী কারণ থাকতে পারে ম*রে যেতে চাওয়ার? কোন কিছুই একে অপরের সাথে মিলছে না! অনেক গুলো প্রশ্ন কিন্তু একটারও উত্তর নেই।’ বলে হতাশ ভাবে ডেস্কে মাথা থেকাল।

ক্লাস শেষে সকলে একে একে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল। নিনা ও অমিত লকার করিডরে গিয়ে পৌঁছলো। কোলাহলে জর্জরিত গোটা হল। মাছির মতো ভো ভো করে দলে দলে ছাত্রছাত্রীরা আসা যাওয়া করছে। নিনা লকারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলছে, ‘জানি না। এ্যাভরিল এখনো কিছু বলেনি ওর পরিবার সম্পর্কে। যদিও ওকে নিয়ে আমার কোন নেগেটিভ ফিলিং আসেনি তাও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছি না।’

‘নিনা এট লিস্ট আমি তোকে যেই এডভাইস দিতে পারি সেটা হলো, এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝাড় তো। এ্যাভরিল কে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি। মেয়েটা অনেক ভালো আর মিশুক। অন্তত ওর মধ্যে স*ন্দেহজনক কিছু থাকার প্রশ্নই ওঠে না। স্কুলের বেশির ভাগ গন্ডোগল সম্পর্কে যেমন ও জানতেও পারে না তেমনি নিজে থাকেও না এসবের মাঝে।’
বলে নিজের লকারটা খুললো অমিত। নিনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘তাই যেন হয়। আচ্ছা আরেকটা কথ….বলতে না বলতেই অমিতের বিস্ফারিত চেহারায় চোখ পরল। নিজের লকারের মধ্যে কিছু একটা দেখে এমন প্রতিক্রিয়া হয়েছে ওর৷ নিনা কৌতুহলী হয়ে সোজা হয়ে অমিতের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, ‘কী হয়েছে?’
অমিত একটা চিরকুট এগিয়ে দিল। নিনা সেটা হাতে নিয়ে পড়ল,

‘অন্যের গোলের প্যাঁচ ছাড়াতে গিয়ে নিজের জীবনে না প্যাঁচ লেগে যায়। সাবধান!’

নিনা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল লেখাটার দিকে৷ হাতে লেখা নয়। খবরের কাগজ থেকে শব্দ কেটে আঠা দিয়ে বসানো হয়েছে। বলল, ‘আর কিছু ছিলো না?’

‘এটা একটা ম্যাগনেট দিয়ে লাগানো ছিল। আর কিছু ছিল না।’ লকারে বইয়ের ওপর পরে থাকা একটা ম্যাগনেটের দিকে ইশারা করে বলল অমিত। নিনা ম্যাগনেটটা হাতে তুলে নিল। হঠাৎ দেখলে মাকড়সার জালের মতো মনে হবে। তবে ভালো করে দেখলে বোঝা যাবে একটি প্রজাতি যার পাখা দুটো ঠিক মাকড়সার জালের মতো। অত্যন্ত পরিচিত ঠেকলো সেটা। কোথায় যেন দেখেছে নিনা। জিজ্ঞেস করল,
‘তোর লকার খুললো কিভাবে?’

অমিতের চেহারায় বিচলিত ভাব ছেয়ে গেল। অপ্রস্তুত গলায় বলল, ‘আমার লকার বন্ধই তো করি না কারণ চাবি হারিয়ে গিয়েছে। আর এমনিতেও তেমন জরুরি কিছু থাকে না তো।’ নিজের সমর্থনে বলল। নিনা এমন ভাবে অমিতের দিকে তাকাল যেন, ওর মতো বদ্ধ উন্মাদ পৃথিবীতে আরেকটি নেই।

অমিত দীর্ঘশ্বাস ফেললো,
‘প্লিজ ওটা ছাড় না। মূল কথা হলো কেউ আমাকে স*ন্দেহ করছে!’

‘আমার খবর হয়তো পায়নি এখন। কিন্তু কোন না কোন ভাবে সাস*পেক্ট তোকে স*ন্দেহ করেছে। ব্যাপারটা কিন্তু ঠিক না। আমাদের আরোও সাবধান হওয়া উচিৎ ছিল।’ চিন্তিত কন্ঠে বলল নিনা।

‘এক মিনিট! নিনা তোর লকারটা দেখ তো।’

নিনা সাথে সাথে নিজের লকারের সামনে গিয়ে চাবি ঢোকাল। তবে লকার খুলে ওর জিনিসপত্র ব্যতিত আর কিছুই পাওয়া গেল না। নিনার কপালে গভীর ভাজ। বলল, ‘অমিত এই ম্যাগনেটটা আমি ইদানিংকালেই কোথাও দেখেছি৷ কিন্তু জায়গাটা যেন পেটে আসছে মুখে আসছে না!’

‘শান্ত হ। আপাতত তোকে কেউ অন্তত স*ন্দেহ করেনি সেটাই অনেক। আর ম্যাগনেটের কথাটাও মনে পরে যাবে যদি সত্যিই এটাই দেখে থাকিস।’

‘আমি ম্যাগনেট আর চিরকুটটা আমার কাছে রাখছি। আর তুই সাবধানে থাক।’ চিন্তিত কন্ঠে বলল নিনা।

‘সেটা আর বলতে হয়?’

এরপর একে একে ক্লাস হলো। প্রতিটি ক্লাসে বসেই নিনার মাথায় ঘুরপাক খেয়ে গেল সেই ম্যাগনেটটার কথা। অবশেষে লাঞ্চ টাইম শুরু হলো। নিনা ভাবনায় বুদ হয়ে হেঁটে চলেছে। ক্যাফেটেরিয়ায় পৌছুতে কিছুটা দেরি হয়ে গেল। প্রায় সকল টেবিলই ভরা। অন্য কারো সঙ্গে না বসে একা বসতে ইচ্ছে করল। একা বসে চিন্তা করলে হয়তো মনে পরেও যেতে পারে। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখা গেল ইভানদের টেবিল বাদে কোন টেবিল একেবারে ফাঁকা। ইভানদের টেবিল আজ একেবারে ফাঁকা। টেবিলের বাসিন্দারা আজ কোথায় কে জানে? নিনা সেখানে গিয়ে বসল।

ইভান নিজের ব্যাগ লকারে রেখে ক্যাফেটেরিয়ায় এসে ঢুকেছে। আজ ওর বন্ধুবান্ধবদের আসে পাশে দেখা গেল না। আ্যলেক্স তো স্কুলেই আসেনি। ক্যাফেটেরিয়ায় ঢুকেই ইভান ভ্রু উঁচু করে নিজের টেবিলের দিকে তাকাল। সেখানে নিনাকে আবিষ্কার করে মুচকি হাসল। ভাবল,
‘বাহ আমার টেবিলে নিনা! যাক ট্র্যাকে ফিরেছে মেয়েটা।’
বেশ হেলে দুলে নিজের টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
শুধু দাঁড়ালই না বরং সুন্দর করে নিনার সামনাসামনি বসেও পরল।
নিনার চুল আজ ঢিলে করে বেনি করা। পিত রঙের একটা টপ করে আছে। মুখে সবসময়ের মতোই লেগে আছে বিরক্তির ছাপ। যদিও সেটা আরোও ভালো ভাবে ফুটে উঠল ইভানের উপস্থিতিতে। ইভান মুচকি হাসি ধরে রেখে বলল,
‘হেই ডার্লিং!’

নিনা চোখের মণি ঘোরাল,
‘কী?’

‘কী মানে?’

‘আজকাল দেখি তুমি আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করছো?’

‘তুমি যে কয়েকদিন আমাকে বিরক্ত করলা সেটা রিটার্ন করতে হবে না? তাছাড়া সেটা কারণ নয় এখানে বসার৷ এটা আমারই টেবিল।’

‘ওহ টেবিলটা তুমি বাসা থেকে এনেছো?’

‘বাসা থেকে আনা লাগে না। বছরের পর বছর ধরে আমি এখানেই বসছি। স্বাভাবিকভাবেই এটাকে আমার টেবিল বলতেই পারি। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে এখানে আর কেউ বসতে পারবে না। এই যেমন তুমি বসলে। তোমাকে কী উঠিয়ে দিচ্ছি আমি?’

‘তো? আজ তোমার বন্ধু মহল ভ্যাকেশনে গিয়েছে বুঝি?’

‘অনেকটা তাই।’

‘ওহ তো এইজন্যে আমাকে এ্যালটারনেটিভ হিসেবে বেছে নিয়েছো।’

‘এ্যালটারনেটিভ হওয়াটা কেমন কথা? তোমার সাথে তো আমার আবার বিশেষ ধরনের সম্পর্ক রয়েছে।’

‘বিশেষ সম্পর্ক বলতে?’

‘এই যে আমাদের সম্পর্ক কোন কাতারেই পরে না। না বন্ধুত্ব না শত্রুতা, না অন্য কিছু। তবে আমাদের মধ্যে একটা না একটা সংযোগ তো অবশ্যই আছে।’

‘তোমার কাছে প্রতিটা সম্পর্ককেই কেন হয় বন্ধুত্ব নাহয় শত্রুতার দিকে গড়াতে হবে?’

‘কে বললো এ কথা? আমি কথাটা বললাম কারণ আপাতত একে কোন নির্দিষ্ট শ্রেণিতে ফেলা যাচ্ছে না। অবশ্য তুমি চাইলে ব্যাপারটা নিয়ে আমরা ভেবে দেখতে পারি।’

‘কোন ব্যাপার?’ ভ্রু সূঁচালো হলো নিনার।

‘আই মিন আমাদের সম্পর্কের নাম দেওয়ার কিন্তু খুব ভালোই একটা অপশন আছে। আমি তোমাকে অফিসিয়ালি ডার্লিং ডাকতে পারব তখন।’

‘আর অফিসিয়াল হওয়ার কিছু নেই। তুমি আমাকে আনঅফিশিয়ালি ডার্লিং ডেকেই কম বিরক্ত করো না। আবার আসছো অফিশিয়াল হতে।’ বলে বিরক্তি নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ইভান মুচকি হাসল। কিছুক্ষণ ওরা দুজনেই নিরবে একে অপরের দিকে চেয়ে থাকল।

‘যাই হোক এখন বলো আমার সাথে লাঞ্চ করতে বসার কারণটা কী?’ অবশেষে নিরবতা ভাঙলো নিনা।

‘কোন কারণ নেই।’

‘মানে কী কোন কারণ ছাড়া এমনি এমনি আমরা একসাথে বসে আছি?’

হঠাৎ করেই ইভান বিরক্ত হয়ে উঠল। মুখের নরম, আমুদে ভাবটা হারিয়ে গেল।
‘কী আশ্চর্য তো! তোমার কেন সবকিছুর জন্য একটা কারণ প্রয়োজন? জানি তুমি প্রথমে হয়তো আমার সাথে জড়িয়েছিলে কোন একটা কারণেই। কিন্তু কেন আমাদের সবকিছুর জন্যেই একটা কারণ প্রয়োজন?’

‘কিন্তু কোন কারণ ছাড়া আমরা একসাথে বসবো কেন?’

‘আমরা একসাথে বসলে সমস্যাটাই বা কী?’

নিনা কিছু বলার পূর্বেই ইভান অভিমানী কন্ঠে পুনরায় বলল,
‘নাহ আসলে আমি এসে তোমার সাথে বসেছি সেটা বোধহয় তোমার সত্যিই ভালো লাগেনি।’ কথাটা কিছুটা তিক্ততার সঙ্গে বলে উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছিল তখনই নিনা ঝট করে টেবিলের ওপর রাখা ইভানের হাতটা ধরে ফেললো। বলল,
‘থামো হনহনিয়ে চলে যাচ্ছো কোথায়? আমি কী বলেছি তোমার সাথে বসাটা আমার ভালো লাগোনি?’

‘এতক্ষণ যাবৎ এতকিছু বলার পর আবার এই কথার কোন মূল্য আছ?’ তীব্র স্বরে বলল।
নিনাও উঠে দাঁড়াল। ইভানের হাতটা ভালোভাবে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
‘তুমি খুব খারাপ। মাঝেমাঝে অল্পতেই অভিমান করে বসো।
আমি শুধু একসাথে বসার কারণটা ক্লিয়ার করছিলাম। তার মানে তো এটা নয় যে তোমার সঙ্গ আমার ভালো লাগে না।
তুমি এসেছ হয়তো নিজের ইচ্ছায় কিন্তু যাবে আমার ইচ্ছায়। বসো।’ বলে ওর হাতটা ছেড়ে দিল। ইভান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসল। বলল,
‘তো মানছো যে ভালো লাগে?’

‘কী ভালো লাগে?’

‘আমার সঙ্গ।’
নিনা বিচলিত হলো। হয়তো একটু আধটু গোলাপি ছোঁয়া লাগলো গালে। হতাশ ভাবে বলল,
‘ধুরো!।’
ইভান দুষ্টু হাসলো। কিছুক্ষণ ওরা দুজনেই নিশ্চুপ রইল।
অবশেষে নিনা নিরবতা ভে*ঙে বলল,
‘যাই হোক তুমি আমার মধ্যে পেয়েছোটা কী?’

‘অদ্ভুত আচরণ।’

‘কী?!’

‘প্রথমে আমার চারিপাশে ঘুরঘুর করলে নিজে থেকে অথচ ব্যবহারটা এমন ছিলো যে আমাকে দেখতেই পারো না। কী অসহ্যকর মানুষই না মনে হতো আমাকে। এরপর সেই তুমিই যে আমাকে দেখতে পারো না সে, আমার কী একটু অভিমান ভা*ঙ্গাতে আবার মাফও চাইলা। মাঝে কিছুটা সময় ভালো ব্যবহার করলা। তবে হঠাৎ আবারও কেন জানি আমি তোমার অপছন্দের পাত্র হয়ে গেলাম। বুঝলাম না এই অদ্ভুত ট্রিটমেন্ট পাওয়ার মতো কী অপরাধ করেছি আমি?’ কথাটা বলে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে ঠিক নিনার চোখে চোখ রাখল। হৃদয়ের ঢেউ হঠাৎ অশান্ত হয়ে উঠল। একটু নড়েচড়ে বসল নিনা। ইভানের দৃষ্টির সঙ্গে খুব বেশিক্ষণ তাল রাখতে পারল না এবার। শেষে অন্য দিকে নয়ন ফিরিয়ে অপ্রস্তুত কন্ঠে বলল,
‘সবকিছুর কারণ থাকে না ইভান।’

ইভান দাম্ভিক হাসল। বলল, ‘সি? সবকিছুর কারণ থাকে না।’ নিনা কিছু বলল না। নিজের কথায় নিজেই বিচলিত হলো। ইভান ওর দিকে অনিমেষ তাকিয়ে আছে।

দূরে অনেক টেবিলের ভিরের মাঝে এমিলি, লিজা ও আরেকটি মেয়েকে আসতে দেখা গেল। ওরা হাসতে হাসতে হাঁটছিল। নিনা কেন জানি খুব গভীর মনোযোগ ঢেলে ওদের দিকে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ করেই যেন হারিয়ে যাওয়া কোন মূল্যবান রত্নের টুকরো চোখের সামনে ভেসে উঠল। বেশ খানিকটা চমকে উঠল। ভাবল, ‘ঠিক ওইরকমই ম্যাগনেট ছিলো ওর ওখানে। না শুধু গ্রেউড বাড়িতে বরং সেই…সেই ফ্রিজ ম্যাগনেটের ফ্রেমে ছিল ওটা। তাহলে এর অর্থ কী দাঁড়াচ্ছে? এমিলি অমিত কে থ্রেট দিয়েছে? এমিলিই কেন? যদিও ওকে আমার খুব ভালো যে লাগে তা নয় তবে ওতো আর যাই হোক নিজের বোন। যদিও তো এমনিতে ওকে আমিও সন্দে*হভাজন দের তালিকা থেকে বাদ দেইনি৷ আর অমি……
‘নিনা হঠাৎ ভুলে গেলে যে আমিও বসে আছি এখানে?’হঠাৎ বলে উঠল ইভান। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ও।

নিনা ভাবনার জাল থেকে বেরিয়ে এল। বলল, ‘না।’
তখনই অমিত এসে দাঁড়াল নিনার পাশে। বলল,
‘নিনা একটু আয়। কথা আছে।’

ওকে দেখেই ইভানের বিরক্তি পুনরায় ফিরে এলো। ভাবল,
‘ওফ এক সেকেন্ড শান্তিতে বসতেই পারি না ওর সাথে। মাঝখান থেকে কাবাব মে হাড্ডি হওয়ার জন্য হাজির হওয়াই লাগে।’ ভাবতে ভাবতেই বলল
‘কী কথা?’

অমিত হাসল, ‘তোমার জেনে কী কাজ?’
ইভানকে অবাক করে দিয়ে নিনা লাফ দিয়ে উঠল। ওর যে ম্যাগনেটের কথাটাও বলতে হবে অমিতকে। বলল, ‘হ্যা চল। শুনছি।’

‘এ্যই দাঁড়াও। পরে বললেও তো হয়। তোমার এখনই ওকে বলতে হবে? আজব!’

‘বুঝলাম না এখনই বললে কী সমস্যা?’ বলল অমিত।
নিনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইভানের কী তাকাল। বলল, ‘তুমি কী আমাকে কিছু বলবা ইভান?’

ইভান চুপ হয়ে গেল। বড্ড অপমানিত বোধ হলো। কী আশ্চর্য না? নিনা যখন লাঞ্চ টাইমে ইভানের সাথে বসেছে তখন অতটুকু সময়ের জন্য ইভানের কাছে কমিটেড থাকার কথা। তা নয় কোথায় অমিত এসে কী বলবে না বলবে তাতেই বিনাবাক্যে সুর সুর করে উঠে চলে যাচ্ছে। যেন চলে যাওয়ার বাহানাই খুঁজছিল। ইভান আর একটা কথাও বলল না। শুধু না সূচক মাথা ঝাঁকাল।

নিনা ভ্রু কুঁচকে তাকাল। কেমন জানি গম্ভীর হয়ে গেল ইভান। ওরা হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেল। নিনা আবার পেছনে ঘার ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখল ইভান উঠে গিয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে পেছনের জানালাগুলোর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ইভান বেশ দূর থেকে নিনার দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবল,
‘সত্যিই আমি বুঝি না কেন আমার পেছনে কয়েকদিন আঠার মতো লেগে ছিল নিনা। আর আমি? আমার কারো সাথে সাথে ঘুরেও বা কী লাভ যদি অপর মানুষটা ক্রমাগত বিরক্ত হয়। আমি তোমার আশেপাশে আর ঘেঁষছি না নিনা মালিক। তোমার যত কথা তোমার ফ্রেন্ডের সাথেই বলো।’
নিনাও ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল। ওকে দেখতে কিউট লাগলো। হঠাৎ এটা ভাবতেই নিনা হালকা হাসল।
সামনে অমিতের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আজব একটা ছেলে!’

‘আজব কী ভাই! ও সিম্পলি জেলাস।’
নিনা উপহাস মুলক হাসল। বলল, ‘কী নিয়ে জেলাস? আমাকে? অসম্ভব।’

‘কী আজব? দেখলি না তোকে নিয়ে আসাতে কী রকম ক্ষেপে গেল। আমার তো মনে হচ্ছিল এই বুঝি দিল আমাকে এক হাত।’

‘ধ্যাৎ! বাজে কথা। আগে তুই কী বলতে চাচ্ছিলি সেটা বল।’

‘ওহ হ্যা শুন এমিলি আমাকে ওর বাসায় ডেকেছে।’

‘কী? তোকে কেন ডাকবে? তোর ওখানে কী কাজ?’

‘আরে আগামীকাল অনেককেই ওর বাসায় ডেকেছে। ইভেন তোর কথাও বলছিল।’

‘আমাকেও? কিন্তু কেন? কিছু আছে কাল?’

‘না। জানি না কেন ডাকছে। কিন্তু আমার কাছে ব্যাপারটা ভালো ঠেকছে না।’

‘আমার কাছেও না। আমার মনে হয় এটা একটা ফাঁ*দ।’ চিন্তিত কন্ঠে বলল নিনা।

অমিত মাথা উঁচু করে সিলিংয়ের দিকে তাকাল। ওরা খাবার রাখার বারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
‘হতে পারে। যেহেতু আমাকে কেউ স*ন্দেহ করছে ইতোমধ্যেই। কিন্তু এমিলি কিভাবে….নিনা ওকে থামিয়ে বলল, ‘স*ন্দেহটা এমিলিই করছে তাই হয়তো।’

‘এমিলি করছে মানে? তুই এত নিশ্চিত হচ্ছিস কিভাবে?’

নিনা বারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে অনেকটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘কারণ আমার মনে পরেছে ম্যাগনেটটা কোথায় দেখেছিলাম। গ্রেউড হাউজে। একটা ম্যাগনেট কালেক্টর ফ্রেমের মধ্যে ছিল ইফ আই এম নোট রঙ।’

‘সত্যি!?’ অবাক স্বরে বলল অমিত। একটু বিরতি দিয়ে আবার বলল, ‘তাহলে তো নিশ্চিত ভাবে ও আমাকে স*ন্দেহ করেছে বলেই ফাঁ*দ পেতে আমাকে ডেকেছে।’

‘তুই যা।’

‘মানে কী? ওই যদি কাজটা করে থাকে তাহলে এটা পরিষ্কার ভাবে ফাঁ*দ। কারণ ওর সাথে আমার কখনো সেভাবে কথাও হয়েছে কিনা স*ন্দেহ। এমনি এমনি হঠাৎ ও আমাকে ওর বাসায় ডাকতে যাবে কেন?’

‘জানি না। কিন্তু তুই যা। এবং ভাগ্য করে যদি আমাকেও ডাকে আমি যাব। এবং তুই ওখানে গিয়ে জাস্ট চুপচাপ স্বাভাবিক থাকবি। তোকে কিছু খোজাখুজি বা নজর রাখতে হবে না। ও তোর ওপর নজর রাখবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাকে মনে হয় না ওর স*ন্দেহ হয়েছে। কাজেই আমি গেলে ওর খেয়াল আমার দিকে নয় তোর দিকে থাকবে।’

অমিতের সঙ্গে কথা শেষে ওরা ক্যাফেটেরিয়া থেকে বেরিয়ে গেল। লাঞ্চ শেষ। বেরোনোর পূর্বে একবার এদিকওদিক চোখ বুলালো নিনা। কোথাও ইভানকে দেখা গেল না। এমনিতেও অনেকেই বেরিয়ে গেয়েছে। নিনা লকারের কাছে গেল আবারও ব্যাগটা নিতে। এমিলি, লিজা ও আরেকটি মেয়ে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছিল। মেয়েটির গথিক পোশাকাশাক। কালো চুল অর্ধেক গাঢ় বেগুনি রঙ করা।
নিনাকে দেখেই থেমে গেল ওরা। এমিলি এগিয়ে এলো। মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল,
‘নিনা আগামীকাল আমার ফ্রেন্ডসহ অনেক ক্লাসমেটদের এবং কয়েকজন সিনিয়রদের বাসায় ইনভাইট করেছি। তুমিও এসো।’

‘বিশেষ কিছু?’

‘না বিশেষ বলতে কিছুই না। এমনিই। প্রায়ই বাসায় অনেকে পার্টি রাখে জানোই তো। কিন্তু বাবা মা আমাকে অত বড় করে সন্ধ্যার পর পার্টি রাখার অনুমতি দেন না। কাজেই আমি বিকেলে দিনের আলোয় অল্পের মধ্যে এসব সের….কথার মাঝে হঠাৎ হারিন ওদের মাঝে এসে দাঁড়াল।
যেন কেউ যে কথা বলছে সেটা ওর চোখেই পরেনি। ওদের কোন রকম পাত্তা না দিয়ে নিনার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘তোমাকে স্টিফেন স্যার ডাকছেন।’
হঠাৎ ওর উপস্থিতিতে নিনা কিছুটা হতবাক হয়ে গিয়েছিল। শুধু মাথা ঝাঁকাল। এমিলি সুযোগ বুঝে হারিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘হেই তোমার সাথে যেহেতু দেখা হয়েই গেল তাই তোমাকেও বলছি আগামীকাল আমার বাসায় এসো। আফটারনুন পার্টি।’

‘কেন?’ জিজ্ঞেস করল হারিন। ওর কন্ঠ যেন প্রথম শুনলো নিনা। অথচ আগেও শুনেছিল। তখন এমনটা লাগেনি৷ এখন অত্যন্ত চিকন ও নমনীয় শোনাল। কন্ঠে কড়া কোরিয়ান টান।
‘কেন আবার জানো না মাঝেসাঝে যে আমার বাসায় পার্টি দেই?’
লিজা পাশ থেকে এমিলির হাতে গুতা দিল। ফিসফিসিয়ে বলল, ‘ওকে তোর বলাই লাগতো?’

‘আহা’ বলে ওকে থামিয়ে দিল এমিলি। নিনা সহ বাকিরাও হারিনের দিকে তাকিয়ে আছে৷
‘কখন প্রোগ্রাম?’

‘বিকেল চারটায়।’

‘ঠিক আছে দেখি।’ বলেই ঘুরে চলে গেল।

‘ওফ ভাব দেখলে গা জ্ব*লে যায়।’ মুখ বাঁকা করে বলল লিজা। ওদের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা বলল, ‘ওকে দেখে তোর এত গায়ে লাগে কেন লিজা?’
লিজা বিরক্তি ভরা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এমিলি এখনো নিনার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
‘আচ্ছা আসব।’ হালকা হেসে বলল নিনা। এমিলির মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ওরা হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল।

ইনশাআল্লাহ চলবে।

#মনোভূমির_ছায়া
পর্ব – ১৫
লেখনী – #মাহীরা_ফারহীন

‘আমার বাবা-মা কেউ নেই। আমি ছোট থাকতেই মা*রা যান ওনারা। তখন থেকে চাচা চাচির তত্ত্বাবধানে ছিলাম আমি এবং আমার ছোট বোন। প্রথম কিছুদিন কিভাবে কেটেছে আমার মনে নেই কিন্তু যখন থেকে আমার মনে পরে পরিষ্কার ভাবে তখন থেকেই আমি ছিলাম ওদের বাড়ির চাকর এবং আমার বোন ছিল অনেকটা ওদের মেয়ের মতো। এতে আমার অবশ্য কোন সমস্যা ছিল না যতদিন ও খুশি আছে। কিন্তু আমার বাবার সম্পত্তি, সেইসব আমার চাচা লুফে নেয়। আমাকে নিঃস্ব করে দিয়ে একদিন আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন ওনারা।’ টানা বলে যাওয়ার পর বিরতি নিল এ্যাভরিল।

নিনা জিজ্ঞেস করল, ‘তারপর এতদিন কোথায় ছিলা?’

‘আমাকে ওরা যখন বাড়ি থেকে বের করে তখন আমি আরেকটু বড় হয়েছি। ওরা আমাকে জুলসের বাসায় রেখে আসেন। জুলস আমার মায়ের বান্ধবী ছিলো। দুবছর সেখানে থাকার পর আমি থানায় চাচা চাচির নামে ফাইল করি আমার ভাগের প্রোপার্টির জন্য। যেহেতু আমি আন্ডার এজ ছিলাম তাই এমনিতেই প্রোপার্টি তো আমার নামে পেতাম না। নির্দিষ্ট বয়স হওয়া পর্যন্ত অভিভাবকের তত্তাবধানেই তা থাকবে। সেই অনুযায়ী আমার দায়ভারও তাদের ওপর থাকবে। আমি মূলত সেটা নিয়েই কমপ্লেইন করি। আমার বয়স তখন আরো কম ছিল তাই ঝামেলা এড়াতে বুঝিয়ে বাজিয়ে আবারও ওদের বাড়িতে ঠায় দিলেন তারা। শর্ত দিলেন এরপর কখনো এমন কোন পদক্ষেপ নিলে আমাকে আমার বোন সহ ঘর থেকে বের করে দিবেন। যদিও আমি কমপ্লেইন করলে হয়তো ওদের করার কিছু থাকতো না কিন্তু আমারো তো বয়স কম ছিল। আমি অত প্যাঁচ গোছ বুঝি নাই। আমি আমার বোনের সাথে থাকতে পেরেই খুশি ছিলাম। কিন্তু সেটা বেশি দিন টিকলো না।’

‘ওরা আবার তোমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে?’

‘হ্যা।’

‘তাহলে তুমি কোন স্টেপ নিবা না? আর এভাবে কত দিন চলবে? আমি বাবাকে বলছি তোমার কোন চিন্তা….নিনাকে মাঝপথে থামিয়ে দিল এ্যাভরিল। বলল,
‘ওহ প্লিজ নিনা। আমি আর ওদের সাথে কোন লড়াইয়ে নামতে চাই না। ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি৷ এসবের মাঝে ফেঁসে আমার একটা ইয়ার গ্যাপও গিয়েছে নাহলে এ বছর আমি অনার্সে থাকতাম।’ উদাসীন কন্ঠে বলল ও। ওর একদম স্ট্রেইট সিল্কি চুলগুলো টানটান করে পোনিটেল করা। ফ্র্যাকল ভরা মুখটায় উদাসীনতার মেঘ জমেছে।

‘তোমার পুরো নাম কী?’ জিজ্ঞেস করল নিনা।

‘কক্স। এ্যাভরিল কক্স আমার নাম।’

বন্ধ স্লাইডিং ডোরের কাঁচে চোখ রাখল। বাহিরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে৷ ক্ষণে ক্ষণে বিদুৎ ক্ষিপ্র ভাবে গর্জে উঠছে। কাঁচের স্লাইডিং ডোরের গায়ে পানির সরু ধারা নেমে গিয়েছে। ভেতর থেকে সব আবছা দেখায়। নিনা সামনের চেয়ারে গরম কফি হাতে বসে আছে। আধুনিক বিদুৎ চালিত ফায়ারপ্লেসে কৃত্রিম আগুন জ্বলছে। যদিও তাপ সমান তালে ঠিকই দিচ্ছে। নিনা একটু সামনে ঝুঁকে এ্যাভরিলের হাতে হাত রাখল। নিজের ছায়ার উষ্ণ উপস্থিতি জানিয়ে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইল। তারপর বলল, ‘হয়তো এখানে তোমাকে সাহায্য করার সামর্থ্য আমার নেই কিন্তু….ওকে মাঝপথে থামিয়ে দিল এ্যাভরিল। বলল, ‘আরে কী কথা এসব? তুমি আমাকে সবচাইতে বড় সাহায্যটা করেছ। নাহলে ওই ঝড়বৃষ্টির রাতে একা একা আমি কোথায় যেতাম? কী করতাম?’

বলতে বলতে স্বর কেঁপে উঠল। চোখের কোণ চিকচিক করে উঠল। নিনা ঝট করে উঠে দাঁড়াল। ছুটে গিয়ে ফ্রিজ থেকে কিছু একটা নিয়েই আবার ফিরে আসল। এ্যাভরিলের হাতে একটা ক্যাডবেরি বাবল ড্যাইরি মিল্ক ধরিয়ে দিয়ে হালকা হেসে বলল,
‘এই কান্নাকাটি বন্ধ করো তো। চকলেট খাও। আর মনে রাখো আমাদের বয়স এখন অনেক কম। হয়তো তোমার জীবন অন্যদের চাইতে অনেক জটিল। কিন্তু এর মাঝেও মন খুলে বাঁচা যায়। আমি জানি তোমার কষ্ট হবে কিন্তু অন্তত তোমার বোনের নিরাপত্তা অথবা ভালো ভাবে বাঁচা নিয়ে চিন্তিত হতে হবে না। কারণ সেটা তোমার চাচা চাচি নিঃসন্দেহে নিশ্চিত করবেন।’

এ্যাভরিল চোখ মুখে হালকা হেসে চকলেটটা হাতে নিল। ঠিক তখনই কোথাও ক্যাডবেরি চকলেটের গানটা বাজতে আরাম্ভ করল। এ্যাভরিল হেসে উঠল,
‘কি হে? আমরা কী ক্যাডবেরির এ্যাডভার্টাইজমেন্ট করছি নাকি?’

নিনাও হাসল। টেবিলের ওপর থেকে নিজের ফোনটা হাতে নিল।

‘বাপ রে বাপ এটাও কেউ রিংটোন দিয়ে রাখতে পারে ভাবা যায় না। তাও আবার বাজার টাইমিং কী!’ বলে আবারও হাসল এ্যাভরিল। নিনা হাসি মুখে ফোনটা রিসিভ করল। ওপাশ থেকে অমিত বলল, ‘হ্যালো?’

‘হ্যালো। হ্যা বল।’

‘তুই কখন আসছিস?’

‘আসব একটু পরে।’

‘আমি কিন্তু পৌঁছে গিয়েছি। তাড়াতাড়ি আয় না। আমার এই এদের মাঝে একা একা ভালো লাগে না।’

‘আচ্ছা আচ্ছা। তোকে তো আর কেউ ধরে নিয়ে যাবে না। থাক। আসবো তো।’ বলেই বিদায় নিয়ে রেখে দিল।

‘কে অমিত?’ চকলেট এক কা*মড় বসিয়ে জিজ্ঞেস করল এ্যাভরিল।

‘হুম’ বলে মাথা ঝাঁকাল নিনা।

‘এই ভারি বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাচ্ছো?’

‘এমিলির বাসায়।’

‘ওহ আচ্ছা। আবারও আফটারনুন পার্টি দিয়েছে। তাই না?’

‘হ্যা। তবে দেখতো কেমন বৃষ্টি হচ্ছে। থামাথামির নামই নেই। এর মধ্যে তুমি বাসায় একা থাকবে সেটা ভালো লাগে নাকি। তুমিও চলো আমার সাথে।’

‘ইশ না না। সেটা ভালো দেখায় না। আমাকে তো ওরা ডাকেনি।’

‘তো কী হয়েছে? কে এত ধার ধরে এসবের বলো?’

‘আমার…একটু অস্বস্তি হয়।’ ইতস্তত চিত্তে বলল এ্যাভরিল।

‘কিন্তু এ্যাভরিল এখানকার তো এমনই নিয়ম। জানোই তো। প্রতিমাসেই, কখনো কখনো প্রতি সপ্তাহেই যারা এসব পার্টির দেয় তাদের কোন ঠিকঠিকানা থাকে না। কে আসছে, কে যাচ্ছে। কোথায় কী হচ্ছে কারো হুঁশই থাকে না। তাই অত ভেবো না। চলো তো। আমি তৈরি হতে যাচ্ছি। তুমিও তৈরি হয়ে নাও।’

‘কিন্তু বৃষ্টি তো থামছে না।’

‘আহা গাড়ি নিয়ে যাব। আচ্ছা আমি গেলাম তৈরি হতে।’

নিনা বসা হতে উঠে দাঁড়াল। ব্যস্ত পায় সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। এ্যাভরিল আবছা কাঁচের পাল্লাগুলোর দিকে উদাসীন চোখে তাকাল।

—————————-

কাঠের সিঁড়িতে ধুপধাপ শব্দ তুলে নেমে এলো লিজা। মাথার ওপর থেকে টান টান করে দুই ফ্রেঞ্চ বেনি করেছে। ওপরে টিয়ে রঙা মক নেক ক্রপ টপ এবং সাদা ক্যাপ্রি প্যান্টস পরেছে। এক হাতে বোহেমিয়ান ব্রেসলেট। মিসেস মায়মুনা এবং মি.দানির সোফায় বসে চা খাচ্ছেন। ইভান ওখানেই বসে পিএসফাইভে গেম খেলছে। লিজাকে দেখা মাত্রই লিভিং রুমে বিরাজমান সুন্দর সুমিষ্ট আবহাওয়াটা যেন প্রবল ঝড়ের রুপ ধারণ করল। মিসেস দানির প্রায় গর্জে উঠে বললেন,
‘আস্তাগফিরুল্লা! লিজা তুই এসব কী ধরনের জামা কাপর পরেছিস!’
ইভান এমনই চমকে উঠল যে ওর গেমের গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রোড সাইতে সজোরে ঢা*ক্কা খেল। মি.দানির চা সিপ করতে গিয়ে বিষম খেলেন। লিজা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মিসেস দানির বললেন,
‘লিজা এমন কাপর পরে তুই বাড়ির বাইরে এক পাও রাখবি না!’

‘কিন্তু মা এটায় সমস্যা টা কী? ফুল হাতা টপ পরেছি তো।’

‘কী আশ্চর্য কথা বার্তা! ফুল হাতা হলেও কী? তোর এই টপটা কী টাইট ফিটিং। আর তোর প্যান্ট এরকম হাঁটু পর্যন্ত উঠে আছে কেন?’

‘মা এটাকে ক্যাপ্রি প্যান্ট বলে। এটা এরকমই। আর আমার টপ….মি.দানির শান্ত কন্ঠে বললেন, ‘লিজা তর্ক করছ কেন? তোমার মা যা বলছে তাই শুনো। আসলেই এটাকে শালীন পোশাক বলে না।’

‘মানে? মা আমার ফ্রেন্ডরাও তো পরে আসে। ওহ ওহ হ্যা তুমি তো আবার বলবা ওরা তো বি*ধর্মী। তাহলে সিয়ারার কথাই বলি৷ ও তো আমার কাজিন। ও তো নর্মালি এমন জামা পরে। কোই চাচি তো ওকে কিছু বলে না।’

‘লিজা ওটা ওদের ব্যর্থতা যে ওরা ওদের ছেলেমেয়ে দের শালীনতা শেখাচ্ছে না। আমরা তো আর মানুষের পথ অনুসরণ করে চলব না। তুই জানিস যে দেশে যখন তোর খালা মামারা তোর এরকম উশৃংখল ছবি দেখে তখন কী বলে? তখন প্রশ্নটা ওঠে আমার দিকে যে আমি আমার মেয়েকে শালীনতা শেখাচ্ছি না।’ তিক্ততার সঙ্গে বললেন মিসেস দানির।

‘মা…..’লিজাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে ইভান বলল,
‘লিজা তোর সমস্যা টা কী মায়ের কথা শুনতে?’

‘আর কোথায় যাচ্ছিস তুই এইসব সং সেজে?’

‘এমিলির বাসায়।’ মুখ গোঁজ করে উত্তর দিল লিজা।

‘ওহ এমিলি তো বাসায় পার্টি দিয়েছে।’ বলল ইভান। লিজা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাল ইভানের দিকে।

‘শোন লিজা ইভানের দিকে এমন চোখ গরম করে কাজ নেই। তুই হয় তোর মায়ের কথা শুনে এই কাপর পাল্টিয়ে আয়। নয়তো বাসায় থাক।’ কড়া ভাবে বললেন মি.দানির।

‘কিন্তু বাবা আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। আর….

‘এক মিনিট আমি তো বলিনি তুই এসব পার্টি ফার্টি তে যেতে পারবি।’ বললেন মিসেস দানির।

‘কী!?’ হতবাক কন্ঠে বলল লিজা।

‘তোর ভাইকে দেখ। সে তো যাচ্ছে না এসব পার্টিতে।’

‘আল্লাহ! মা কারণ ওখানে বেশির ভাগ সব আমার ইয়ারের ছেলেমেয়েরা থাকবে। ভাইয়া তো সিনিয়ার৷’

‘আমি জানি না এসব। আমি তোকে একা ওখানে যেতে দেব না। ইভান যদি যেতে চায় তাহলে তুই যাবি। আর আগে গিয়ে একটা শালীন কাপড় পরে আয়। যা।’

‘না মা আমি আগেই বলে দিচ্ছি আমি এসব পার্টি তে যাব না।’ বিরক্ত কন্ঠে বলল ইভান। আবারও গেম খেলায় মনোযোগ দিল।

লিজা গোমড়ামুখে দাঁড়িয়ে থাকল কিছুক্ষণ। এরপর ওপরে নিজের কামরায় চলে গেল। কিছুক্ষণ পর হাঁটু পর্যন্ত লম্বা একটা ঢিলেঢালা আসমানী রঙা সিফট ড্রেস ও সাধারণ জিনস পরে নিচে নামল। গলায় একটা সাদা স্কার্ফ ঝুলিয়েছে। ইভান এখানে বসে নেই। নিজের কামরায় চলে গিয়েছে। মিসেস দানির বললেন, ‘তাও কেমন জানি। যাই হোক ইভান যেতে রাজি না। কাজেই তোরও যাওয়া হবে না।’

‘ধ্যাৎ মা এটা এমিলির বাড়ি। এমিলি! ওখানে যেতেও কী সমস্যা? আর এখনো বিকেল বেলা রয়েছে।’

‘তারপরেও আমি জানি তো এখানকার এসব পার্টিতে কী হয়। এমনি তো আর যেতে দিতে চাই না। আর আমার কথাই শেষ কথা।’
লিজা গজগজ করতে করতে কাঠের মেঝেতে তীব্র ঠক ঠক
শব্দ তুলে ইভানের কামরার দিকে এগিয়ে গেলো। ইভান নিজের ল্যাপটপ খুলে বসেছে। লিজা ঝড়েরবেগে কামরায় ঢুকেই বলল, ‘ভাইয়া তোমার কী আমার শান্তি সহ্য হয় না? কেন গো ধরে বসে আছ? একটু যেতে কী হয়?’

‘আরে আজব তো! ওখানে সব তোর বন্ধু বান্ধব। আমি গিয়ে করব টা কী?’

‘ফাইন তোমার যাওয়ার দরকার নেই। কিছুদূর পর্যন্ত তো চলো। পার্টিতে যে যেতেই হবে সেরকমটা তো নয়।’

‘ভাই আমি সোজা কথায় এখন বাসা থেকেই বের হতে চাই না। পার্টি তে যাব না ঠিক আছে কিন্তু বাসায়ও তো আসতে পারব না। এদিক সেদিক ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়াতে হবে।’

‘কি কথা! বাহ! এমনি তো সারাদিন ভবঘুরের মতোই ঘুরে বেড়াও। তখন অনেক ভাল্লাগে। আর আমার জন্য কিছু করতে গেলেই গা জ্ব*লে। তাছাড়া ওখানে তোমারও তো কয়েকটা ব্যাচ মেট থাকবে।’

‘তো? সব ব্যাচমেটই কী বন্ধু হয়?’

‘না মানে বলছি একদম একা তো থাকতে হবে না। অরল্যান্ডো আসবে, ওমানা, কাইলি, ম্যাট, ডেনভার, হারিন, অমিত, নিনা…..এতটুকু বলতেই ওকে থামিয়ে দিয়ে ইভান বলল, ‘নিনাও আসবে?’

‘হ্যা।’

‘ওকে দেখে তো মনে হয় না এসব পার্টি ফার্টিতে ও আসে।’

‘আরে ধুর সেসব ওর ব্যাপার। এখন তুমি আর কতক্ষণ জেদ করবা?’

ইভানের মনে পরল আগের দিনের ঘটনা টা। নিনার আশেপাশে থাকতে আগ্রহী নয় ও। শান্ত কন্ঠে বলল,
‘কেন জোর করছিস? তুই কী কম পার্টি তে গিয়েছিস? একটায় না গেলে কী হয়?’

‘ভাইয়া!’ বলে লিজা জুলজুল দৃষ্টিতে তাকাল। ইভান দীর্ঘশ্বাস ফেললো,
‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

লিজা আনন্দে লাফিয়ে উঠল। এবং কামরা থেকে বেরিয়ে গেল।’

—————————-

বেশ কিছুক্ষণ হয়েছে বৃষ্টি থেমেছে। সারাদিন বাদে অবশেষে সূর্যের মুখ দর্শন করেছে ধরা। রাস্তাঘাট সব পানিতে ভেজা। ঠান্ডা ঝিরিঝিরি বাতাস বয়ে চলেছে। নিনা গ্রেউড বাড়ির ড্রাইভওয়েতে গাড়ি থামিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। এখন ওরা ডানের বাগানে দাঁড়িয়ে আছে। এ্যাভরিল ওর সাথে আসাতে এমিলি আরোও এক ঝুড়ি বেশি উচ্ছ্বাসের সঙ্গে ওদের ওয়েলকাম করেছে। প্রায় বিশ একুশ জন ছেলেমেয়ে হইচই করতে করতে সারা বাড়ি জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অমিত অনেকক্ষণ যাবৎ এখানে এসে বসে আছে। ওরা বাগানে তিন আসন বিশিষ্ট চেয়ারে বসে ছিল। বৃষ্টি ভেজা ঝকঝকে হলদে টিয়ে ঘাস গুলো ঝলমল করছে। এখন বাতাসে মাটি ভেজা গন্ধ ম ম করছে। বাগানে খুব বেশি কেউ নেই। বেশির ভাগ সকলে বাড়ির ভেতরে। উচ্চস্বরে মিউজিক বাজছে ভেতরে।

‘তোদের আসতে এত দেরি হলো কেন?’ জিজ্ঞেস করল অমিত।

‘আরেহ অত আগে আগেও বা এসে কী করতাম।’ বলল নিনা।

‘ বাই দ্যা ওয়ে দেখেছিস ড্রাইভওয়েতে গাড়ির ভির লেগে গিয়েছে।’ বলল অমিত।

‘হুম তাই তো দেখলাম। বের হওয়ার সময় বড় মুশকিলে পরতে হবে।’ বলল নিনা।

এ্যাভরিল বলল, ‘বাই দ্যা ওয়ে তোমাদের দেখে মনে হয়নি তোমরা বেস্ট ফ্রেন্ড হতে পার।’

‘ভাই এটা নিয়ে সবাই কেন এত অবাক হয় বুঝি না।’ বিরক্ত কন্ঠে বলল অমিত। নিনা হালকা হাসল।

‘হয়তো অপজিট এট্রাক্টস হয় বলেই তোমরা উত্তর ও দক্ষিণ মেরু হওয়া সত্বেও ভালো ফ্রেন্ড।’

‘আর তোমার ব্যাপারটাও অদ্ভুত। নিনা কাউকে এত তাড়াতাড়ি বিশ্বাস করে না।’

‘ওফ বিশ্বাস আর সম্পর্ক ছাড়া কী আর কোন টপিক নাই?’ বলে উঠে দাঁড়াল নিনা। এ্যাভরিল বলল, ‘আরে উঠে যাচ্ছ কেন? আমরা এমন কিছুও বলিনি।’

‘না না সেজন্যে নয়। আমি পেছনের বাগানটা দেখতে চাই৷ তাই যাচ্ছি।’

‘সমস্যা নাই ও যাক।’ বলল অমিত। ওদের দুজনকে রেখে দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল নিনা। ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। বাতাসের প্রাবল্য বেড়েছে। ডান দিকে বাগানটা সম্পূর্ণ পরিষ্কার। বড় দুটো গাছ ছাড়া আর কোন গাছ নেই। পেছনের দিকে সারি সারি ফুল গাছ। বিভিন্ন ধরনের ঝাড়ও দেখা গেল। নিনা ভিন্ন আর কেউ নেই এখানে। আরেকটু সামনে এগোতেই পরিচিত একটি কন্ঠ কানে এলো। বলছে,
‘আমি একটু পর আসছি।’ দেখল ইভান হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে আসছে এদিকে। হঠাৎ নিজের সেল ফোনটা বের করে হাতে নিল। মোবাইলে ডুবে গিয়ে আবার পেছনে ঘুরে যেদিক থেকে আসছিল ওদিকেই ফিরে যাচ্ছিল। ওর এহেন কান্ডে অবাক হলো নিনা। কিছু না ভেবেই দ্রুত গতিতে হেঁটে গিয়ে ওর পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘তুমি আমাকে ইগনোর করছ?’

‘উম’হু।’ মোবাইল থেকে দৃষ্টি না সরিয়ে বলল ইভান।

নিনা ভ্রু কুঁচকে তাকাল। ইভানের বেপরোয়া আচরণ মোটেও ভালো লাগলো না। ও জানতো ইভান আশেপাশে আসলে বিরক্ত লাগে কিন্তু মানুষটা ওকে এড়িয়ে চললেও যে খারাপ লাগে সেই ব্যাপারটা সত্যি ওকে অবাক করছে আজকাল।
নিনা ইভানের মোবাইলটা ছো মেরে কেঁড়ে নিয়ে কঠোরভাবে বলল, ‘ইভান? আমার দিকে তাকাচ্ছ না কেন?’

‘হুম ইন্টারেস্টিং কোয়শ্চন! কেন তাকাব আমি তোমার দিকে? তোমার দিকে তাকানোর তো কোন কারণ নেই।
সবকিছুর একটা কারণ থাকতে হয় এটাই তো তুমি বলো তাই না?’

নিনা চোখ সরু করল। বুঝতে চেষ্টা করল আবার কী রাগিয়ে দিয়েছে ইভানকে। ইভান গম্ভীর স্বরে বলল,
‘আমার মোবাইলটা দাও।’

‘না দিব না। প্রথমে আমার কথার উত্তর দাও।’

‘দিলাম তো উত্তর।’

‘ইভান ওটা আমার কথা ছিল। কিন্তু তুমি না বলেছিলে যে সবকিছুর জন্য কোন কারণ লাগে না?’

‘তোমার তো সেসব পছন্দ না। হঠাৎ আমার কথায় এত প্রভাবিত হওয়ার তো কোন মানে হয় না।’

‘তোমার মনে হয় না তুমি যে আমাকে উল্টা পাল্টা আচরণ করার খেতাব দিয়েছো সেটা তোমার সাথেও মানায়?’

‘ওহ তাই নাকি? এট লিস্ট আমার কাজ কর্মের পেছনে একটা কারণ থাকে। অকারণে আমি তোমার মতো উল্টা পাল্টা আচরণ করি না।’

‘আর এখন এমন আচরণ করার কারণটা কী?’

‘আচ্ছা তুমি আমার পিছনেই বা লেগে আছ কেন? কালকে আমার সাথে এক টেবিলে বসা নিয়েই যত আপত্তি করলা। তারপর আমি তোমার সাথে কথা বলি আর না বলি তাতে তোমার কী যায় আসে?’

নিনা নিশ্চুপ রইল। ইভানের ধূসর চোখে শীতলতার ছাপ। ওর চেহারায় এমন একটা ভাব যেন নিনার সাথে কথা বলার চেয়ে বিরক্তিকর ব্যাপার পৃথিবীতে আরেকটা নেই। হঠাৎ অদ্ভুত এক ক্লেশপূর্ণ হাওয়া ওর মনে দোলা দিয়ে গেল। এক গভীর অনুশোচনা বোধে আক্রান্ত হলো ও। এই বিরক্ত নিয়েই তো সকলের সাথে কথা বলে ও। কত জন কে অহেতুক তিক্ত কথা শুনিয়ে দেয়। অপ্রিয় সব কথা মুখের ওপর বলে দেয়। কখনো মনে হয়নি তাদের কেমন লাগে। আজ বুঝতে পারছে। খুব ভালো ভাবেই। নিনার নিরবতা ভা*ঙার কোন নাম গন্ধ নেই দেখে ইভান নিজের মোবাইলটা নেয়ার জন্য হাত বাড়াতেই নিনা নিজের হাত সরিয়ে নিল। শান্ত ভাবে বলল,
‘আমি কাল হঠাৎ উঠে গিয়েছিলাম বলে রাগ করেছো? আমি…আই মিন আমার একটা জরুরি কথা অমিতকে বলার ছিল।’

‘অবশ্যই। কথা বলতে ইচ্ছা করলে বলবা না?’ ওর কন্ঠে স্পষ্ট বিদ্রুপ মিশে ছিল।

‘না দেখো জানি তখনই যে তাড়াহুড়ো করে বলতে হতো তেমনটা নয়। কিন্তু আমি তখন অত কিছু ভাবিনি। আর তুমিও যে আমার জাস্ট উঠে যাওয়াতে এতটা রিয়্যাক্ট করবা সেটাও ভাবিনি।’

‘যাই হোক। আমার মোবাইল ফেরত দাও।’ এখনো ওর গম্ভীর ভাবটা বজিয়ে রেখেই বলল।

নিনা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কথাটা এড়িয়ে গিয়ে টিটকারি মাখা স্বরে বলল,
‘বাই দ্যা ওয়ে ইভান তোমার না গ্রেউড বাড়ি ভালো লাগে না?’
ইভান দাম্ভিক হাসল। বলল, ‘আর সাম টাইমস আমি এটা বুঝি না তোমার এই বাড়ির সঙ্গে কী এমন টান? কয়েকদিন পর পরই এখানে এসে হাজির হও?’

‘দুএকবার এসেছি মাত্র। টানের কী আছে?’

‘দু একবার? এই নিয়ে গত একসপ্তাহে তিনবার এসেছ।’

নিনার মুখের হাসিহাসি ভাবটা নিমিষেই মুছে গেল। বলল,
‘কোন তিনবার?’

‘টনির ফিউনেরাল, প্র্যাকটিক্যাল খাতা নেওয়া আর আজ।’

নিনা কিছু বলল না। টনির ফিউনেরালে আসাটা যে লিজা খেয়াল করেছিল তাতে কোন স*ন্দেহ নেই। নাহলে ইভান এটা জানতো না।

‘আচ্ছা তুমি টনির ফিউনেরালে কেন এসেছিলা?’ কথাটা বলতেই নিনা কিছুটা পেছনে সরে দাঁড়াল। এবং সাথে সাথে পায়ে কিছু একটা খোঁ*চা খেল। চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল ততক্ষণাৎ। হাঁটু গেঁড়ে বসল। খোঁ*চা লাগা স্থানটা বড্ড জ্বা*লাপো*ড়া করতে আরম্ভ করল। ইভানও হাঁটু গেঁড়ে বসে উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘কী হলো? লাগল কিভাবে?’ বলেই পাশের ঝাড়টির দিকে চোখ পরল। চমকে উঠে বলল, ‘আরেহ! এটা তো হেমলক!
নিনা দূরে সরে আসো।’

নিনা উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা দূরে সরে আসল। হেমলকের ঝাড়টা কাঁ*টাযুক্ত। নিনার পায়ের পাতায় যেখানে আঁ*চড় লেগেছে সেখানে লাল হয়ে গিয়েছে। ইভান বলল,
‘ইশ একটু খেয়াল করবা না। আর এই বাড়ির কারোর কী আক্কেল জ্ঞান নেই! এমন বি*ষাক্ত গাছ কেউ বাগানে রাখে!?’

ভিষণ জ্বা*লায় নিনা কিছু ভাবতে পারছে না। প্রথমে মনে হলো হাঁটতেও পারবে না। ইভান দুহাতে ওর কাঁধ ধরে আছে। বলল, ‘হাঁটতে পারবা তো? নাকি কোলে তুলে…কথা শেষ না হতেই নিনা আঁতকে উঠে বলল,
‘না,না পাগল হয়েছো। পারব পারব।’ বলেই ধীরে ধীরে হেঁটে এগিয়ে গেল ডান দিকে৷ ইভান ওকে ধরে পাশে পাশে আসছে। ওরা ডানে ড্রাইভওয়ের দিকে বের হতেই মিসেস ম্যারিকে একটা ট্রে হাতে নিয়ে যেতে দেখা গেল। ইভান এগিয়ে গিয়ে ওনাকে থামিয়ে বলল, ‘মিসেস ম্যারি হাইড্রোকর্টিসোন আছে? থাকলে তাড়াতাড়ি আনুন প্লিজ।’

‘কেন? কার কী হয়েছে?’

‘নিনার পায়ে বি*ষাক্ত গাছের আঁ*চড় লেগেছে। আপনি একটু তাড়াতাড়ি করুণ।’

উনি মাথা ঝাঁকিয়ে দ্রুত গতিতে ভেতরে চলে গেলেন। কয়েক মিনিটের মাথায় হাইড্রোকর্টিসোন নিয়ে ফিরে এলেন। ড্রাইভওয়ের পাশে একটা সাদা ফোল্ডিং চেয়ার রাখা ছিল। নিনা সেটায় বসেছে৷ মিসেস ম্যারি বললেন, ‘আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।’

‘না আমি দিচ্ছি।’ বলে হাঁটু গেঁড়ে বসল ইভান। ক্রিমটা পায়ের লাল হয়ে ফুলে ওঠা স্থানে লাগিয়ে দিয়ে ঝাঁঝ ভরা কন্ঠে বলল, ‘আর এদের কী কোন আক্কেল জ্ঞান বলতে কিছু নেই! বাড়ির বাগানে কেউ এই বি*ষাক্ত গাছ লাগায়?’

‘কোন গাছ?’ জিজ্ঞেস করলেন মিসেস ম্যারি।

‘হেমলক। সাদা ঝিরিঝিরি ফুল ওয়ালা যেই ঝাড়টা।’

‘ওহ ওটা বি*ষাক্ত?’ বিস্ময় কন্ঠে বললেন উনি।’

‘বাগান তো বেশ পরিষ্কার দেখলাম। তাহলে এত বড় বি*ষাক্ত ঝাড়টা চোখে পরল না?’ বলল নিনা।

‘এগুলো তো মালি পরিষ্কার করে। যদিও তার দায়িত্ব আমার ওপর। কিন্তু এই গাছটা তো রাখতে বলেছিল।’

‘কে বলেছিল?’

‘স্যার। মানে টনি।’ ভেতর থেকে মিসেস ম্যারির ডাক পরতেই উনি বললেন, ‘
আচ্ছা আমি একটু আসছি। কিছু লাগলে আমাকে বলো।’ বলে ভেতরে চলে গেলেন৷ ইভান টিটকারির সুরে বলল, ‘পাগল আর কাকে বলে? নিজের বাগানে বি*ষাক্ত গাছ লাগিয়ে রেখেছে। গিয়ে দেখ কেউ ওকে খু*ন করেনি। নিজেই হয়তো ভুলবশত হেমলক খেয়ে ফেলে মা*রা গিয়েছে।’

নিনা কিছুই বললো না। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইল। তারপর জিজ্ঞেস করল, ‘লিজার হাতেও হেমলকের আঁ*চড় লেগেছিল তাই না?’
ইভান সোজা হয়ে দাঁড়াল। বলল, ‘লেগেছিল।’

‘ও বলেছিল তোমার আনা একটা বি*ষাক্ত ফুল ধরার কারণে ওটা হয়েছে। কিন্তু ওটা হেমলকের ইনফেকশন ছিল। তুমি জেনে শুনে হেমলক কেন আনতে গিয়েছিলা?’

ইভান মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। জিজ্ঞেস করল,
‘ও এটা বলেছিল?’

‘অবশ্যই। চাইলে ওকে জিজ্ঞেস করতে পারো।’

‘না তার দরকার নেই।’ বলে কিছু একটা ভাবল ইভান। কপালে গভীর ভাজ।

‘কী হলো?’

‘হ্যা আমিই এনেছিলাম। জানতাম না তখন যে হেমলক এতটা বি*ষাক্ত একটা গাছ।’ অন্য দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ ইতস্তত করে বলল ইভান। নিনা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকল। ভাবল, ‘ওকে আমার অবিশ্বাস করা উচিৎ নয়। কিন্তু বিশ্বাস করতেও মন সায় দেয় না। কী মুশকিল। কিন্তু যে কথাটা নিজের মুখে স্বীকার করল সেটাও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
ও বড়ই য*ন্ত্রণা দিচ্ছে আমায়।’

ইনশাআল্লাহ চলবে।