মনোভূমির ছায়া পর্ব-৫+৬

0
69

#মনোভূমির_ছায়া
পর্ব – ৫
লেখা – #মাহীরা_ফারহীন

কলিং বেলের টিং টিং শব্দ ভেসে এলো। নিনা লাফ দিয়ে উঠল। নিজের বিছানা ছেড়ে কামরা হতে বেরিয়ে গেল। ছুটে গিয়ে মূল দরজা খুলে দিলো। ওপাশে মি.মালিক দাঁড়িয়ে।
ফাতেমা আপাও লিভিং রুমে এসে দাঁড়ালেন। উনি নিনার দেখাশোনার কাজে নিয়জিত। মি.মালিককে বড্ড ক্লান্ত দেখাচ্ছে। তবুও তিনি মুখে এক রাশ হাসি টেনে ভেতরে ঢুকলেন। বললেন, ‘মা কখন এসেছিস বাসায়?’

‘এইতো ঘন্টাখানেক আগে।’

‘খাওয়াদাওয়া করেছিস?’

‘দুপুরে স্কুলেই লাঞ্চ করেছিলাম এরপর বাসায় এসে আর খাইনি।’

‘এখনো খাইসনি!?’

‘না ফ্রেস হয়ে নাও। তোমার সাথে খাব।’
মি.মালিক মুচকি হেসে নিজের কামরায় চলে গেলেন। নিনা ছুটে গিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলো। ফাতিমা আপা দুপুরেই খাবার বানিয়ে রেখেছেন। ওনার ভাজ পরা চেহারায় মমতার ছোঁয়া। স্নেহভরা দৃষ্টি। নিনা ওনাকে দেখে বলল,
‘আপনাকে আর অপেক্ষা করতে হবে না। দেখেন তো কত দেরি হয়ে গেলো। আমার কথা তো শুনবেনই না।’

‘ঠিক আছে ঠিক আছে। আমি থাকতে তুমি একা থাকবে এটা কোন কথা না৷ যাই হোক আমি বেরোই কেমন?’
নিনা মুচকি হেসে সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল। উনি ওনার ব্যাগ
তুলে নিলেন। ধীরে ধীরে হেঁটে দরজার কাছে গেলেন। নিনা দরজা খুলে দাঁড়াল। হাসি মুখে বলল,
‘সাবধানে যাবেন। আসসালামু ওয়ালাইকুম।’ উনি সালামের উত্তর দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলেন। নিনা দরজা বন্ধ করে দিল। মাঝেমাঝে কোন কাজে আঁটকে পরে রাতে বাসায়ও ফিরতে পারেন না মি.মালিক তখন ফাতিমা আপাই নিনার সঙ্গ দেন। আজও যেমন ওনার আসতে দেরি হওয়াতে বাড়ি না ফিরে এখানেই বসেছিলেন। রাতে তাপমাত্রা কিছুটা নেমে যাওয়ায় সারা ঘরে এখন শীতল পরিবেশ। খোলা জানালা গুলো থেকে বাতাস এসে পর্দায় ঝাপটা দিচ্ছে। ডাইনিং এবং মি.মালিকের কামরা ছাড়া বাকি ঘরগুলোর আলো নেভানো। ডাইনিংয়ের হলদে আলোর ম্লান ছটা পরছে অন্ধকার করিডরে। নিনা ফ্রিজ থেকে খাবার গুলো বের করে গরম করল একে একে। তারপর টেবিলে পরিবেশন করতে করতেই মি.মালিক এসে ঢুকলেন ডাইনিং এ। তিনি একটা চেয়াড় টেনে নিয়ে বসলেন। লিভিংরুমে শুধু মাত্র হলদে আলো ছড়িয়ে একটি ল্যাম্প দাঁড়িয়ে। নিনাও একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসল। গরম ভাত এবং তরকারি থেকে ধোঁয়া উড়ছে। বাবার সাথে কথা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে বসে ছিলো সে। উনি বসতেই নিনা বলতে শুরু করল, ‘বাবা আগামীকাল টনির ফিউনেরাল। দুপুরে স্কুলের পর।’

‘তাহলে তুই যা। সমস্যা তো নেই কোন।’ বলে থামলেন। মুখে এক লোকমা খাবার পুরলেন। নিনা বলল, ‘আচ্ছা টনির ফরেন*সিক রিপো*র্টটা দিবে কবে?’

‘ওহ হ্যা ওর ফরেন*সিক রি*পোর্ট টা আজই দিয়েছে। ওর ব*ডিতে হেমল*কের বি*ষ পাওয়া গেছে।’

‘হেম*লক?’ কথাটা বিড়বিড় করে বলে কিছু একটা ভাবলো নিনা। তারপর জিজ্ঞেস করল,
‘টনির ব*ডি কী নিয়ে যাওয়া হয়েছে?’

‘হ্যা এখন হিম*ঘরে আছে। আগামীকাল অন্তে*ষ্টিক্রিয়া।’
নিনা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। যেই টনিকে ফোন দিলেই সে প্রফুল্ল কন্ঠে গ্রিট করে কথা বলতো। সকলের সাথে নরম ব্যবহার করতো সে আজ সেই অন্ধকার, ঠান্ডা হিম*ঘরে পরে আছে। ভাবতেই নিনার শিরদাঁড়া শিরশির করে উঠল। বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। নিনা আবারও প্রশ্ন করল,
‘আচ্ছা বি*ষটা কিভাবে শরীরে প্রবেশ করেছিল?’

‘শেইকের সঙ্গে। স্ট্রবেরি শেইক।’

‘ওয়াট? শেইক!।’ ভ্রু কুঞ্চিত করল নিনা।

‘হ্যা ও দুপুরের পর থেকে সেই স্ট্রবেরি শেইক ছাড়া তেমন কিছু খায়নি।’

‘আর হ্যা আরেকটা জিনিস বলা হয়নি। রি*পোর্ট অনুযায়ী টনি সেদিন রাত নয়টা থেকে এগারোটার মধ্যেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যা*গ করেছিল।’

‘আর ফি*ঙ্গার প্রি*ন্টের রি*পোর্ট গুলো?’

‘সিসিটিভিতে স্বাভাবিক ভাবেই শুধু টনি এবং লুনার আঙ্গুলের ছাপ।’

নিনা অন্যমনস্ক ভাবে আলতো করে মাথা নাড়ল। এরপর কিছুক্ষণ দুজনেই খাওয়ায় ব্যস্ত থাকল। সারা ঘরে নিরবতা ছেয়ে গেল। শুধু ডাইনিং এ টুং টাং চামচ নাড়ার শব্দ ছাড়া। নিনা পুরোটা সময় বিষন্ন দৃষ্টিতে মাথা নত করে খাওয়ায় মনোযোগী রইল। খাওয়া শেষ করে মি.মালিক বললেন, ‘মিসেস ইউয়ানকে আমি আগেই তোর কথা জানিয়ে রেখেছি। উনি যেকোনো দরকারে তোকে সাহায্য করার চেষ্টা করবেন।’
নিনা মুখ তুলে চাইল। ভাবল, ‘ওহ এইজন্য আজ বিনাবাক্যে আমাকে খাম দিয়ে আসার দায়িত্বটা দিয়ে দিয়েছিলেন।’

‘তুই অন্য কাউকে বলিসনি তো এসব?’

‘না শুধু অমিতকে বলেছি।’

‘অমিত! আরেহ ওর পেটে কোন কথা থাকে?’

‘থাকে বাবা। দুনিয়ার আবোলতাবোল বকলেও কাজের কথা পেটে বোমা মারলেও বের হয় না। সে বিষয় তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।’

নিনা উঠে এঁটো থালাগুলো তুলে নিল। রান্নাঘরের বারের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। মি.মালিক উঠে এসে হাত ধুয়ে বললেন, ‘তোমার কথা মতো ইভানের জিজ্ঞাসাবাদের রেকর্ডিং এনেছি।’ নিনা চকিতে ঘুরে দাঁড়াল। আগ্রহী হয়ে উঠেছে দৃষ্টি।
‘সন্ধ্যা মি.দানিরের সঙ্গে থানায় এসেছিল স্টেট*মেন্ট দিতে।’ বলে মি.মালিক নিজের কামরার দিকে চলে গেলেন। ক্ষণকাল পর একটা পেনড্রাইভ হাতে ফিরে এলেন। নিনা সেটা হাতে পেয়েই এমন অদ্ভুত এক সন্তুষ্টি বোধ অনুভব করল যেন রহস্যটারই সমাধান হয়ে গিয়েছে। সেটা নিয়ে সাথে সাথে নিজের কামরায় চলে এলো। পেন ড্রাইভের ভেতরে থাকা রেকর্ডিং ফাইলটি পর্যন্ত পৌঁছতে নিজের ল্যাপটপ খুলে ইউএসবিটা সংযোগ করতে যতটুকু সময় লাগলো আরকি। ঘরের বাতি নেভানো। বিছানায় রাখা ল্যাপটপের ম্লান আলোর সামনে বসে অদ্ভুত এক শিহরণ খেলে গেল শিরদাঁড়ায়। ইভান জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাড়িও চলে গিয়েছে। বাবাও তেমন সন্দেহজনক মনে হওয়ার মতো কোন কিছুর কথা তোলেননি। তবুও নিনা নিজে একবার শুনতে চায় ইভানের এই বিষয়গুলোর ওপর কী মতামত। জিজ্ঞাসাবাদ মি.মালিক নিজে করেননি। করেছে ওনার সহকারী। নিনা রেকর্ডিং টা চালু করে দিল,
– গুড ইভেনিং মিস্টার দানির।
– গুড ইভেনিং স্যার।
– আমি তোমাকে টনি গ্রেউড মা*র্ডার কে*স সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন করব। তুমি কী সততার সঙ্গে আমার প্রশ্নের উত্তর দেবে?
– জ্বী স্যার।
– ওকে।
– টনি কে তুমি কবে থেকে চেনো?
– ফিফথ গ্রেড থেকে।
– প্রথম থেকেই কী তোমাদের সম্পর্কে তিক্ততা ছিল?
– ঠিক সেরকম নয়।
– টনির মৃ*ত্যুর পূর্বে তোমার সাথে কী ওর কোন ঝামেলা হয়েছিল?
– হ্যা হয়েছিল।
– ঠিক কী হয়েছিল?
– আমাদের মধ্যে হাতা*হাতি হয়েছিল।
– কেন?
– একটা ব্যক্তিগত বিষয়ে তর্ক থেকে জিনিসটা বারাবাড়ি পর্যায় পৌঁছে যায়।
– কী নিয়ে?
– আরেকবার বলছি ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে।
এরপর কিছুক্ষণ মৌনতা। তারপর আবার প্রশ্ন করা হলো,
– এগারো তারিখ সারাদিনে তুমি একবারও গ্রেউড বাড়ি গিয়েছিলা?
– হ্যা গিয়েছিলাম।’ ইভানের প্রশান্তময় কন্ঠ।
– কখন?
– এই আটটার পরপরই।
– কেনো গিয়েছিলে?
– একটা স্কুল প্রোজেক্টের কাজে।
– এর আগে কখনো ওর বাড়ি গিয়েছিলা?
– হ্যা গিয়েছিলাম।
– কবে?
– কয়েকবছর আগে হবে।
এরপর কিছুক্ষণ মৌনতা। তারপর আবারও প্রশ্ন করা হলো,
– তোমার সাথে টনির সম্পর্কটা কেমন ছিলো?
– আমাদের কোন সম্পর্ক ছিলো না।
– সম্পর্ক না থাকলে প্রোজেক্ট কিভাবে একসাথে করো?
– সেই সম্পর্ক অনুসন্ধান করতে গেলে বলতে হয় হ্যা আমরা ক্লাসমেট ছিলাম। এছাড়া আর কিছুই না।
– তুমি সেদিন বাসায় ফিরে আসার পর কী কী করেছো?
– বাসায় ফিরে প্রোজেক্ট নিয়েই কাজ করছিলাম। বাবাও আমাকে সাহায্য করছিলেন। এরপর খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পরেছিলাম।
– সেদিন তুমি স্কুল গিয়েছিলা?
– না।
– কেন?
– প্রজেক্ট যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করতে চেয়েছিলাম। তাই বাসায় বসেই কাজ করছিলাম।
এরপর পুনরায় নিরবতা। কিছু খুটখাট শব্দ হলো। এবং জিজ্ঞেস করা হলো,
– এটা চিনতে পারছো?
– জ্বি হ্যা। আমার ব্রেসলেট এটা।
– জানো কোথায় পাওয়া গিয়েছিল এটা? টনির ব*ডির পাশেই পরেছিল।
– তো?
– আমরা জানতে চাচ্ছি এটা সেখানে কিভাবে পৌঁছেছিল?
– আমি..জানি না।’ নিনা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলো। এই প্রথমবার ইভানের গলা সামান্য কাঁপলো। সে আবারও বলল,
– ‘এটা আমি সেদিন বিকেলের পর থেকে খুঁজে পাইনি। আমার কোনও ধারণা নেই এটা ওখানে কিভাবে পৌঁছেছে।’
– তোমার কাউকে কোন প্রকার স*ন্দেহ হয়?’
কিছুক্ষণ নিরবতা। তারপর উত্তর দিল ইভান,
– না।
– ঠিক আছে। তুৃমি এখন যেতে পারো। তখনই রেকর্ডং টা শেষ হয়ে গেল। কামরায় দীর্ঘমেয়াদী নিরবতা নেমে এলো।
নিনার বুক চিরে লম্বা শ্বাস বেরলো। বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বুজল, ‘ঘটনাগুলো খুবই জটিল। কেউ বলতে পারে না কার সামনের বর্ণিল খোলসের ভেতর কতটা অন্ধকার লুকিয়ে আছে।’
.
.
.
.
ধূসর কালো রঙা এক জোড়া জুনকো পাখি নেচে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে সরু এক ডালে। গাছের পাতারা যেন বাতাসের তরে মনের সুখে নৃত্য আরম্ভ করেছে। ঠিক তখনই শক্ত কোন বস্তু শাঁই শাঁই করে উড়ে এসে গাছের সরু ডালটিতে ঢা*ক্কা খেয়েই নিচে পরে গেল। পাখি দুটো ঘাবড়ে উঠে ধড়ফড়িয়ে উড়ে গেল। ডালটির জানালা থেকে কয়েকজন ছাত্রছাত্রী উঁকি দিল। অনেকেই হাসাহাসি করছে পরে যাওয়া খাতাটির দূর্ভাগ্যের ওপর। নিনা বিরক্ত হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সকলকে পেরিয়ে হেঁটে আসছে। খাতা নিয়ে ছোড়াছুড়ির বিষয়টি নিয়ে তেমন মাথা ঘামাতে চাইল না। সোজা ক্লাসে প্রবেশ করল।
দেয়ালের পাশ থেকে সরে মাঝের দিকে একটি সিটে বসল। সাধারণত ক্লাসের কোণায় বা একদিকেই বসাটা পছন্দ করে ও। তবে এখন মাঝে বসাটা অধিক সুবিধাজনক বলেই মনে হলো। তবে সিটে বসতে না বসতেই একটা মেয়ে ওর পাশে ভোজবাজির মতো উদয় হলো। মেয়েটার লম্বা সোনালী চুল। পরিপাটি পোশাক। চেহারায় মেক-আপের ব্যবহার স্পষ্ট। ধূর্ত দৃষ্টি। মেয়েটা বাঁকা হেসে বলল, ‘আহা তুমি বোধহয় জানো না তুমি কার সিটে বসেছ?’
নিনা নির্বিকার হয়ে বলল, ‘কার সিটে বসেছি? কোন গাধার সিট নয় তো এটা?’
ক্লাসে ওদের কথা ছাড়া আর কোন শব্দ হচ্ছে না। সকলেই কথা থামিয়ে আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওদের ঘিরে।
মেয়েটার বাঁকা হাসি মুছে গেল। নিমিষেই অগ্নি শিখা নেচে উঠল চোখে। বলল, ‘এটা আমার সিট! আর তোমার সাহস তো কম না আমার সাথে এভাবে কথা বলো!’

নিনা বিদ্রুপ করে হাসল, ‘আ’হা! থ্যাঙ্কিউ সো মাচ! আমি জানি আমার সাহস প্রয়োজনের থেকে একটু বেশিই।’ বলে থামল। তারপর শান্ত ভাবে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ কাল তো দেখলাম সামনের সিটে ছিলে তুমি আর আজ এটা তোমার সিট হয় গেল?’

‘হ্যা যেটায় আমি বসতে চাব সেটাই আমার সিট।’ দাঁতে দাঁত চেপে বলল মেয়েটা।

‘তাই নাকি? তাহলে বাসা থেকে একটা চেয়ার আনলেই তো পারতে। পারতে না? ভেলভেটের গদি বসানো, ভারি নকশার কাজ করানো।’ কেউ কেউ মৃদু হেসে উঠল। মেয়েটা জলন্ত দৃষ্টিতে চারিদিকে চোখ বুলাতেই সকলের হাসি থেমে গেল। তখনই ইভান ক্লাসে প্রবেশ করল। ঢুকে দু কদম এগোতেই থমকে গেল ওদের দেখে। ভ্রু কুঁচকে তাকাল। তারপর এগিয়ে এসে নিনার সামনের সিটে ব্যাগ রাখল। গাঢ় কন্ঠে বলল, ‘এখানে কী হচ্ছে?’
মেয়েটা প্রায় সঙ্গে সঙ্গে নরম কন্ঠে বলল, ‘ইভান এই মেয়েটা আমার সিট নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া বাধাচ্ছে। প্লিজ ওকে বলো আমার সিট ছাড়তে।’ ইভান নিনার দিকে তাকাল। নিনা বুকে হাত বেঁধে এক দৃষ্টিতে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।
ইভান বিরক্ত কন্ঠে বলল, ‘ব্রিটনি তুমি কোন সিট কিনে নাওনি এটা মনে রেখো। আর এসব বিষয় নিয়ে আমাকে বিরক্ত করবা না!’ বলে নিজের সিটে বসে পরল। ব্রিটনি পুনরায় নিনার দিকে ঘুরে দাঁড়াল। এবার নিনার বাহু খা*মচে ধরে বলল, ‘এখনো ভালো ভাবে বলছি মেয়ে, এখান থেকে সরে যাও।’
ব্রিটনি অত্যন্ত সরু কর্নেইল স্টিলেটো পরেছিল। নিনার পায়ে ছিলো ভারি শক্ত প্লাটফর্ম সু। সেই জুতো পরা পায়ে ব্রিটনির সরু হিলে সজোড়ে লাথি দিতেই ও ফস্কে গেল। মট করে একটা শব্দ হলো। হিলটা বোধহয় ভেঙ্গেই গিয়েছে। ব্রিটনি তাল সামলাতে ব্যর্থ হয়ে মেঝেতে পরে গেল। ততক্ষণাৎ সকলে হতভম্ব হলেও পর মুহূর্তে হাসির রোল পরে গেল ক্লাস জুড়ে। নিনা নির্বিকার ভাবে নিজের সিটে বসল যেন কিছুই হয়নি। ছাত্রদের মধ্যে থেকে একজন এগিয়ে এলো সাহায্যের জন্য তবে ব্রিটনির চেহারা রাগে লাল হয়ে আছে। ছেলেটাকে প্রায় ঢা*ক্কা মে*রে সরিয়ে দিল। সে কোন রকমে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের হিল দুটো হাতে নিয়ে নিল। খালি পায় পরিহিত অবস্থায় ক্লাস থেকে ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল। এখনো সকলের মাঝে হাসাহাসি ও কানাঘুষো চলছে। ইভান পেছনে ঘুরে চাইল। ওর মুখে হাসির লেস মাত্র নেই। তীব্রভাবে বলল,
‘তুমি যা করলে সেটা একদম ঠিক হয়নি।’

‘কী ঠিক হয়নি?’ জিজ্ঞেস করল নিনা যেন কিছুই বুঝতে পারছে না।

‘এখানে অলরেডি কম ঝামেলা বাঁধে না এন্ড বাঁধানোরও মানুষ কম নেই। কেউ আরেকটা নতুন ট্রাবলমেকার চায় না।’

‘ওহ তাই নাকি? ঝামেলা তোমরা আমার সাথে গায়ে পরে বাধাচ্ছ। আমি কারো সাথে ঝামেলা করতে যাচ্ছি না। আর আমি যতদূর জানি তুমি তো নিজেই মানুষকে কম প্যারা দাও না।’

‘আমি কী করি না করি সেটা নিয়ে তোমাকে মাথা ঘামাতে হবে না।’

‘তাহলে আমি কী করি না করি সেটা নিয়েও তোমাকে মাথা ঘামাতে হবে না। আর আরেকটা কথা। পার্থক্য টা বোঝ। তোমরা যেটা করো সেটা অন্যায় আর আমি যেটা করলাম সেটা অন্যায়ের প্রতিবাদ।’

ইভান শীতল দৃষ্টি মেলে চেয়ে থাকল। তখনই টিচার প্রবেশ করলেন ক্লাসে। সকল কলরব নিমিষেই থেমে গেল। ইভানও সোজা হয়ে সামনে ঘুরে বসল। নিনা মাথায় হাত দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সময় বয়ে চললো। মি.ফিলিক্স আবারও “দ্যা ট্যামিং অফ দ্যা শ্রু” পড়াতে শুরু করেছেন। নিনার বিরক্তি শুধু বেড়েই চলেছে। তার কারণও রয়েছে বটে। ওর পূর্বের স্কুলে এই গল্প অনেক দিন আগেই শেষ করে এসেছে। ভাবছে, ‘এইখানে কী সবই এত ধীরে ধীরে চলে। এক জিনিস নিয়ে আর কয়দিন পরে থাকে?’ ভাবতে ভাবতেই জানালার দিকে তাকাল। হঠাৎ চোখ আটকে গেল একটা মেয়ের ওপর। মেয়েটা এক দৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল। নিনা তাকাতেই ধীরে ধীরে দৃষ্টি সরিয়ে নিল। নিনার ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত হলো। মেয়েটার ছোট চোখ দুটো টান টান। স্বচ্ছ কাঁচের মতো ফরসা ত্বক। ছোট কপাল। মেয়েটা কোরিয়ান হবে এ বিষয় নিনার কোন সন্দেহ রইল না। ক্লাস যখন প্রায় শেষ হতে চললো তখন ক্যামিস্ট্রি টিচার মিস ইনস্তিকার দরজায় এসে দাঁড়ালেন। মি.ফিলিক্স মাথা নেড়ে আসার অনুমতি দিতেই ভেতরে প্রবেশ করলেন। তার চোয়াল শক্ত। দৃষ্টি স্থির। তিনি সকলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে একটা ছোট চিরকুট উঁচু করে তুলে ধরলেন। প্রায় হুংকার দিয়ে বললেন,
‘এটা কার?’
সকলেই চোখ ছোট করে চিরকুটটা দেখার চেষ্টায় মেতে উঠল। নিনার কাগজের টুকরোটা দেখে চেনা মনে হলো। ক্লাসে সকলের মাঝে ফিসফাস শুরু হয়ে গেল। তবে কেউই কোন উত্তর দিতে পারল না।মিস ইনস্তিকার আবারও কঠিন স্বরে বললেন, ‘এটা স্টাফরুমে পাওয়া গিয়েছিল। গতকাল কেউ তো স্টাফ রুম বন্ধ থাকার পরও সেখানে গিয়ে ঢুকেছিল।’ বলে একটু থামলেন। রাগে ওনার নাক লাল হয়ে উঠেছে। মি.ফিলিক্স বললেন, ‘কাগজটা তো ক্লাস রুটিনের। তার মানে কোন নতুন শিক্ষার্থীর কান্ড এটা।’
মিস ইনস্তিকার আবারও জিজ্ঞেস করলেন, ‘কে ঢুকেছিল স্টাফরুমে? কার কাগজ এটা?’
‘আমি।’ ইভান উচ্চস্বরে বলল। সকলেই চোখ ছানাবড়া করে ক্লাসের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে থাকা ইভানের দিকে দৃষ্টি ফেরাল। মিস ইনস্তিকারের কপাল কুঁচকালো। তিনি বললেন,
‘তুমি আমার সাথে মজা করছো ইভান! তুমি কী এই স্কুলে নতুন এসেছো যে এই কাগজ তোমার হবে?’

‘না এটা আমার নয় কিন্তু স্টাফ রুমে ঢুকেছিলাম আমি।’

‘এবং আমিও। কাগজটা আমার।’ বলল নিনা। এবার সকলে ইভানকে ছেড়ে নিনার দিকে আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকাল। রজার বাঁকা হেসে বলল, ‘আমার তো আগেই মনে হয়েছিল এই মেয়ে ঝামেলা করবে।’

মিসেস ইনস্তিকার বললেন, ‘মানে কী এসবের? ইভান তুমি এমন একটা কাজ কিভাবে করলে? আর তুমি।’ বলে নিনার দিকে দৃষ্টি ফেরালেন, ‘আর তুমি! প্রথম দিনই স্কুলে এসে তোমার এই নমুনা? তোমরা দুইজনই চলো আমার সাথে। এখুনি!’ বলে পেছনে ঘুরে গটগট করে বাইরে বেরিয়ে গেলেন। হাতে থাকা কলমটা ঠাস করে ডেস্কে ফেললো ইভান। একটা ছেলে বলল,
‘ওয়াট দ্যা হেল ব্রো? কেন তুই বলতে…..

‘ড্যা*ম! সাট আপ!’ ঝাঁঝ ভরা কন্ঠে ওকে ধমক দিয়ে নিজের ব্যাগ কাধে তুলে ঝড়েরবেগে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে গেল। নিনাকেও কেউ কিছু বলার সুযোগ পাওয়ার আগেই সেও বেরিয়ে গেল। গটগট করে হেঁটে চলেছে নির্বিকার চিত্তে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে নার্ভাসনেস গ্রাস করছে ওকে। ভিড় ঠেলে করিডোর ধরে যাওয়ার পথে অমিতের সামনে পড়ে গেল। অমিত হাসি মুখে ওর সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
‘হেই! গুড মর্নিং।’
নিনা কিছুই বলল না। অমিত এবার ভ্রু কুঁচকে তাকাল। শুধালো,
‘এ্যই কী হয়েছে তোর? মন মেজাজ এমন চাঙ্গে উঠে আছে কেন?’
‘মিস ইনস্তিকার আমাকে ওনার অফিসে ডেকেছেন।’ গম্ভীর ভাবে বলল।
‘ওয়াট! মিস ইনস্তিকার? আবার তুই কী করেছিস? গড!’ অমিতের চেহারায় উদ্বিগ্ন ভাব ফুটে উঠল।
নিনা একতলার স্টাফ রুমের করিডোরে পৌঁছে থেমে বলল,
‘আগে ওনার ক্লাস হজম করে আসি। তারপর বলবো। তুই ক্যাফেটেরিয়ায় থাকিস কিন্তু। তোকে খুঁজতে গিয়ে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।’
‘ওফ ফাইন।… আচ্ছা গুড লাক।’ ইতস্তত কন্ঠে বলল অমিত। নিনা ঘুরে হাঁটা ধরল। স্টাফ রুমের কাঁচের ঘোলা দরজা ঢাক্কা দিয়ে ভেতরে উঁকি দিল।
‘কাম ইন।’ গম্ভীর ভারি কন্ঠে মিস ইনস্তিকার অনুমতি দিলেন। ইভানও ভেতরে বড় টেবিলের সামনে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে। নিনা ভেতরে ঢুকে ইভান থেকে কয়েক হাত দূরে দাঁড়াল। মিস ইনস্তিকার বললেন,
‘আমার সময় এত ফালতু না যে সারাদিন তোমার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকব।’
‘আই এম সরি ম্যাম।’ যতটা সম্ভব নরম কন্ঠে বলল নিনা।
উনি নিনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
‘এখন বলো তুমি কী অকাম করতে স্টাফ রুমে ঢুকেছিলা?’

নিনা কিছু বলার পূর্বেই ইভান বলল, ‘আমিই প্রথমে ঢুকেছিলাম। নিনা আমাকে দেখে সেখান থেকে বের করে আনার জন্য গিয়েছিল। দোষটা ওর নয় আমারই ছিলো।’
‘এটা কী সত্যি?’
নিনা আলতো করে মাথা নাড়ল। মিসেস ইনস্তিকার এবার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। ইভানের দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘তোমাকে আমি সবচেরে ভদ্র এবং ভালো ছেলে হিসেবে জানতাম ইভান। তোমার কাছ থেকে এটা আশা করিনি।
যাই হোক ইভান, গোটা বাস্কেটবল কোর্টটা তুমি পরিষ্কার করবে এটা তোমার শাস্তি।’
এতটুকু বলে উনি কিছুক্ষণ মৌনতা পালন করে নিনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
‘আর তোমাকে আমি সাবধান করছি যেন এমন কিছু সামনে না হয়।’
নিনা বলে উঠল, ‘না মিস ইনস্তিকার। আমাকেও শাস্তি দিন।
দোষ আমারও ছিলো।’
ওনার কপালে ভাজ পরল। বললেন, ‘কেন? গায়ে পরে শাস্তি পেতে চাচ্ছ কেনো?’
ইভান বিরক্ত দৃষ্টিতে নিনার দিকে আড় চোখে চাইল।
নিনা সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করল না। গাঢ় কন্ঠে বলল,
‘আমি জানি আমি নিয়ম ভেঙেছি এবং শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি হবে না।’
মিস ইনস্তিকার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বললেন, ‘একই কাজ, একই সময়, একই দিনে। ডিসমিস।’ বলে এমন ভাবে হাত নাড়লেন যেন মাছি তাড়াচ্ছেন। ইভান ও নিনা একই সময় দরজা খুলতে গিয়ে ঢাক্কা খেল। ফলে ইভান দাঁড়িয়ে গেল এবং নিনা প্রথমে বের হল। ভাবছে, ‘দুই দিনেই বোধহয় খুব বেশিই এ্যাটেনশন আমার দিকে এসে পরেছে। এটা ঠিক না।
আমাকে আরোও সাবধান হতে হবে।’
ও প্রায় ভুলেই গিয়েছিল ইভান ওর সাথে আছে যতক্ষণ না পর্যন্ত সে ওর পথ আঁটকে দাঁড়াল। নিনা অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাল। এখন ইভানের মধ্যে সামান্য তম নমনীয়তার লেশমাত্র নেই। ওর মুখভঙ্গিতে প্রকাশ পাচ্ছে বেজায় বিরক্তি এবং ক্রোধ।
‘সমস্যা টা কী?’ নিনাই প্রথমে জিজ্ঞেস করল।

‘সেটাই তো! তোমার সমস্যা টা কী? তোমার জন্য আমার সব গুডিল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে!’

‘ওয়েল আমি সিম্পলি কিছুই করি নি। তোমার কোন কিছু নষ্ট হয়ে থাকলে সেটা তোমার দোষ।’

‘ইউ নো ওয়াট আমি যেমন আমি বছরের পর বছর তেমনই ছিলাম। কখনো মা অথবা কোন টিচার আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করার অবকাশ পায়নি। আর তুমি এসেই সেসবে ঝামেলা করছ।’

‘আশ্চর্য! তুমি যা ইচ্ছা করবা আর সেটা ধরা পরলে আমার দোষ? কোথাকার লজিক এটা?’ বেশ জোরে বলল কথাটা। খালি করিডোরে প্রতিধ্বনিত হলো নিনার কথাগুলো।

‘ওহ ওয়েট আমার পদ্ধতি ভুল হতে পারে বাট আমার প্রতিটা কাজের পেছনে একটা রিজন আছে। যেটা জানো না সেটা নিয়ে নাক গলাবা না। আমাকে বাধ্য করো না তোমার লাইফটা হেল বানাতে।’ দাঁতে দাঁত চেপে বলল ইভান। রাগে সারা মুখ লালচে আভায় ছেয়ে গিয়েছে।

‘রিয়েলি! ক্যান ইউ ডু ইট?’ টিটকারির সুরে বলল নিনা। ইভান কিছু বলার পূর্বেই আবার বলল,
‘তুমি কাউকে জ্বালিও না আমিও তোমাকে ঝামেলায় ফেলার কোন সুযোগ পাব না।’
ইভান অন্তত এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে ছিল এতক্ষণ। এখন সামনে এগিয়ে এসে একদম নিনার সাথে গা ঘেঁষে দাঁড়াল। নিনা এক ইঞ্চিও পেছনে সরল না। নিজের স্থানে অটল দাঁড়িয়ে রইল। তবে ভেতরে ভেতরে হৃদযন্ত্র ধুকধুক করে বাজতে লাগলো। ইভান শীতল কন্ঠে বলল,
‘আমাকে থ্রেট দিচ্ছ? তুমি আমাকে এখনো চেনো না নিনা। আমার সম্পর্কে কিছুই জানো না। শেষ বার ওয়ার্নিং দিলাম আমার পেছনে লাগা বন্ধ করে দাও কারণ যদি আমি তোমার পেছনে লাগি, এর কোন শেষ নেই!।’ বলেই দূরে সরে গেল। ঘুরে দাঁড়িয়ে গটগট করে হেঁটে চলে গেল। নিনা হঠাৎ বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতেই বুঝল এতক্ষণ বোধহয় নিঃশ্বাস বন্ধ করে ছিলো। সম্পূর্ণ করিডোরে ও একা দাঁড়িয়ে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবল, ‘ও আসলে মানুষকে জ্বালা যন্ত্রণা দেওয়া বলতে কী বুঝায় এটা জানতে হবে। বাট আমার কাজটা হচ্ছে না। ওর সাথে যদি আমার এভাবে ঝগড়াঝাটি লেগে থাকে তাহলে ওর সাথে না পারব থাকতে না পারব কোন তথ্য বের করতে। তবে কাজটা অসম্ভব মনে হচ্ছে।’

ক্যাফেটেরিয়ায় পৌঁছেই সবার আগে অমিতকে চোখে পরল। দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল সে।
‘কী হচ্ছে টা কী আমাকে বলবি? নতুন আসছিস তুই আর আমার মনে হচ্ছে আমিই নতুন এখানে, যে কিছুই জানে না।’

‘আরেহ চল বসি। বলছি কী হয়েছে।’ নিনার কন্ঠ ক্লান্ত শোনাল।

ওরা একটা টেবিলে সামনাসামনি বসল। এই সময় ক্যাফেটেরিয়া তুলনামূলক খালি। অসংখ্য চেয়ার টেবিল রাখা। বড় হলে অল্প কিছু ছাত্রছাত্রী এদিকওদিক বসে আছে। নিনা অমিতকে গোটা ঘটনাটার আদ্যোপান্ত খুলে বলতে আরম্ভ করল।

‘ওফ গস এত মানুষ থাকতে তুই ইভানকে কেন ঘাটাচ্ছিস? ওর থেকে দূরে থাকাটাই ভালো।’

‘আমি কী শখ করে ওর সাথে লাগতে যাচ্ছি নাকি? দু*র্ঘটনা বশত ওর সাথেই বারবার জড়িয়েই যাচ্ছি। তাছাড়া আমার প্রথম স*ন্দেহ ওরই ওপর।’

‘দেখ তুই ব্যাপারটা বুঝিসনি আসলে ও কেমন। একটা ঘটনা শোন। একবার আমি ওই অ্যালেক্স কে ইডিয়ট বলেছিলাম। মনাে আমাদের একটু তর্কাতর্কি হয়েছিল আরকি। তারপর কী হয়েছে জানিস? টানা এক সপ্তাহ আমি আমার সাইকেল চালাতে পারি নি। যত বার সারিয়ে আনি ততবার চাকা ফুটো করে দেয়। আমার স্কুল ব্যাগকে আমার লকারের দরজার ওপর সুপার গ্লু দিয়ে আঁটকে রেখেছিল ফলে নতুন আরেকটা ব্যাগ কিনতে হয়। পাশাপাশি স্পোর্টসের সময় ওরা আমার সানস্ক্রিনে কিছু মিশিয়ে দিয়েছিল ফলে সারাটা রাস্তা আমি সারা শরীর চুলকাতে চুলকাতে বাড়ি ফিরেছি।’

‘ওয়াট দ্যা হেল! জাস্ট বিকজ তুই ওর ইডিয়ট ফ্রেন্ডকে ইডিয়ট বলেছিস তাই? দিস ইজ ইনসেইন!’ নিনা বিস্মিত কন্ঠে বলল।

‘জানি। এগুলো মোটামুটি এক সপ্তাহ মতো চলেছিল তারপর আমি সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে ওকে সরি বলে একটু ইনিবিনি করেছি এন্ড গেজ ওয়াট? ইভান নিজে আমাকে ওর টেবিলে বসে লাঞ্চ করার প্রস্তাব দেয় এন্ড মাফও চায় এত জ্বালানোর জন্য।’

‘ও খুবই টুইস্টেড বাট আমি কীই বা করতে পারি? আমাকে জানতেই হবে ওর সম্পর্কে। ও আসলেও দো*ষি না নি*র্দোষ।’ হতাশ ভাবে বলল নিনা।

অমিত কিছু একটা ভাবল। হঠাৎ ওর মুখমণ্ডলে চাঞ্চল্যের ঝিলিক দিয়ে উঠল। বলল,
‘নিনা শোন। একটা আইডিয়া দেই। ওই এখনই যেমন বললাম, যে ইভান, যারা ওর ক্লোজ তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করে। তাদের কাছে ও এঞ্জেল। এক কাজ কর দয়া করে তোর বিরক্তি এন্ড রুড বিহেভিয়ার কে পাশে রেখে ওর সাথে এমন ব্যবহার কর যেন তুই ওকে পছন্দ করিস।’

‘ওয়াট! অসম্ভব! আমি ওকে পছন্দ করি না।’

‘আরেহ ভাই আমি বলছি পছন্দ করার নাটক কর। আসলেই পছন্দ করলে সেটা তো আরোও ভালো বাট….

‘কোন ভালো না। এটা আমার জন্য খুব কঠিন হবে। আমি যা মনে অনুভব করি তাই সামনে প্রকাশ করি। এভাবে ওকে পছন্দ করার নাটক করাটা কীভাবে সম্ভব?’

‘ওটা তুই দেখে নে। আমি তো শুধু একটা আইডিয়া দিলাম। তবে এটা যদি তুই করতে পারিস, আই মিন যদি ভালোয় ভালোয় ইভানও তোকে পছন্দ করে, বিশ্বাস করতে পারে তাহলে ওর সম্পর্কে এবং ওর মুখ থেকে তথ্য বের করাটা সবচেয়ে সহজ হবে।’

নিনা কিছু বলল না। কিন্তু চিন্তিত ভঙ্গিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকল।

ইনশাআল্লাহ চলবে।

#মনোভূমির_ছায়া
পর্ব – ৬
লেখনী – #মাহীরা_ফারহীন

দুধ সাদা ট্রিপ্লেক্স বাড়ি। সামনের কিছুটা জায়গাজুড়ে টিয়ে রঙের ঘাস লাগানো। বাউন্ডারি দেওয়াল দিয়ে ঘেরা গোটা বাড়িটা। বড় সাদা গেইটটা হাট করে খোলা। একে একে ছেলে মেয়েরা আসছে। গ্রেউড বাড়ির আত্মীয় স্বজনরা এসে জমা হচ্ছে। বাড়ির পেছনের বাগানে সকলের বসার আয়োজন করা হয়েছে৷ সকল আসন গুলোর সামনে কালো কাঠের কফিনটা রাখা আছে৷ ফুলের তোরা দিয়ে আচ্ছাদিত কফিনের চারিপাশটা। সকলে মৃদুস্বরে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। একদিকে দাঁড়িয়ে থাকা জ্যাকারেন্ডা গাছের সাথে লেগে দাঁড়িয়েছে নিনা। হালকা বেগুনি ফুলে ছেয়ে আছে প্রতিটা ডাল। ঝলমলে রোদ ছাপিয়ে ঠান্ডা ফুরফুরে বাতাস গাছের ফাঁক গলে বয়ে যাচ্ছে। কী শান্ত প্রকৃতি! মনে প্রশান্তি এনে দেয়। তবে সামনে কাঠের বাক্সে পরে থাকা মৃ*ত মানুষটির স্মৃতি গুলো ভায়োলিনের কারুণিক সুরের মতো বাজছে কোথাও। সুক্ষ্ণ অনুভূতি, স্মৃতি, বন্ধুত্বের টানের এক চিনচিনে ব্যাথা বুকের ভেতর উদ্বেল ঢেউয়ের মতো এসে আঁছড়ে পরছে। অনেক যে কষ্ট হচ্ছে তেমনটা নয়। তবে অস্থিরতা আষ্টেপৃষ্ঠে ধরছে। এই অচেনা বাড়িতে, অদ্ভুত এক উদ্দেশ্যে উপস্থিত হওয়ায় বড়ই নার্ভাস লাগছে।
প্রকৃতির এই সৌন্দর্য, প্রশান্তি, মাধুর্য আর কিছুই নিনার মনের অস্থিরতা কাটাতে পারছে না। ভাবছে, ‘গত মাসেই শেষ কথা হয়েছিল। ঠিকই তো ছিল সব। কে জানতো এমন একটা দিন আসবে আমি আর ও সামনাসামনি থাকবো কিন্তু জীবন্ত ও মৃ*ত হিসেবে?’ হঠাৎ ঠিক শেষ কথা হওয়ার মুহূর্তটির স্মৃতি মানসপটে ভেসে উঠল।

“সময়টা ছিল মধ্যাহ্ন-বেলা। ফ্রুট সপে কাজে ব্যস্ত আমি। বেশ কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ক্রেতার বেশে সেখানে এসে হাজির হয় টনি। আগেও আসত। প্রতিদিন। তবে বিক্রেতা হিসেবে। একই সাথে কাজ করতাম আমরা। সেখান থেকেই বন্ধুত্ব। মাসখানেকের ব্যবধানে কাজটা ছেড়ে দিল তবে আমাদের বন্ধুত্বটা রয়ে গেল। ওর বাবা-মায়ের ধন দৌলতের কোন অভাব ছিলো না। ছিলো না কোন কাজের চাপ। নিজে থেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছিল একবার বিলাসিতার খোলস থেকে বেরিয়ে পৃথিবীর প্রকৃত রুপ দেখতে। সেদিন কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বলেছিল, ‘গুড আফটারনুন!’
‘গুড আফটারনুন! এত দিন পর কী মনে করে?’ পুলকিত হয়ে বলেছিলাম।

‘জানো না এই সপটা আমার কত পছন্দ? এমনি আসতে পারি না?’

‘আবশ্যই পারো। কী নিতে চাও বলো?’

‘যার বদৌলতে তুমি আমাকে গরু আখ্যান দিয়েছো।’

‘ইশ ওই তিতা ঘাসের জুস?’ মুখ বাঁকা করে বললাম।
ও মুচকি হেসে মাথা নাড়ল। ঘাসের জুস কিছুক্ষণ পূর্বেই তাজা তাজা তৈরি করেছিলাম। সেটা বোতলে ভরতে ব্যস্ত হলাম।
‘তো আজকাল নতুন কিছু?’ জিজ্ঞেস করল ও।

‘নাহ, আমার লাইফ সবসময়ের মতো বোরিং ভাবেই চলছে। আর তোমার?’ জিজ্ঞেস করলাম আমি।

‘আমার, উম কী আর বলবো এটা ওটা তো লেগেই থাকে।’ ইতস্তত করে বলল।

‘কী লেগে থাকে? নতুন করে কোন সমস্যা হয়েছে?’ কিছুটা
সময় নিল ভাবতে। আমি জানি ওর জীবনে ঘটা অনেক কথাই ও আমাকে বলে না। কাজেই কারোও ব্যক্তিগত ব্যাপারে আর অতটা খোঁচা*খুঁচি করাও আমার স্বভাব নয়।
‘জানো তো স্কুলে যতই ভালোভাবে থাকার চেষ্টা করি না কেন কোন না কোন গন্ড*গোলে জড়িয়েই যাই।’

‘ইভানের সাথে?’

‘হ্যা।’

‘আবারও? ওর সমস্যাটা কী?’ টনি চুপ করে থাকল। ওদের মধ্যে সমস্যাটা কী তা নিনার জানা নেই। টনি কখনো জানানোর প্রয়োজন বোধও করেনি। কিছুক্ষণ পর বলল,
‘তুমি শুনলে হাসবা। এইবার আমি হাসপাতাল পৌঁছে গিয়েছিলাম।’ বলে হাসল।

আমি অবাক হয়ে বলল,
‘কী বলছো? এটা হাসির ব্যাপার? কী হয়েছিল টা কী?’

‘ওয়েল হাসির ব্যাপার কারণ আমি একা ছিলাম না। গিয়েছি যখন সাথে ইভানকেও হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম।’

‘আমার শুনে কিন্তু ভালো লাগলো না।’ স্তিমিত স্বরে বললাম।

‘যাই হোক। আজকাল একটা মজার বিষয় ঘটছে আমি মাঝেসাঝে স্কুলে না গেলে বা কোন ক্লাস মিস গেলেও সমস্যা হয় না। একটা মেয়ে আছে, সিরিয়াসলি ও সব নোটগুলো নিজ দায়িত্বে আমাকে গছিয়ে দেয়।’

‘কেন? এতে ওর কী লাভ?’

‘জানি না। থাকে না কিছু মানুষ খুব উদার হয়। সকলকে সাহায্য করতে ভালোবাসে।’

‘হুম।’ বলে ওর গ্রাস জুসের বোতলটা এগিয়ে দিলাম। বললাম, ‘তোমার ঘরের কী অবস্থা? এখনো একা আছো?’

‘না গতকালই বাবা মা ফিরেছেন ইটালি থেকে।’ প্রফুল্লচিত্তে
বলল। পরমুহূর্তেই ম্লানমুখে বলল, ‘তবে আগামী সপ্তাহেই ইউকে যাবেন।’

‘দুজনেই?’

‘হ্যা।’

‘থাক তোমার বোন তো সাথেই থাকে তাই না? একেবারে তো একা থাকতে হয় না।’

‘ওর থাকা না থাকা একই ব্যাপার।’ এর মাঝে কাস্টোমাররা আসছিলেন। তাদের সামলে নিয়ে আবার কথায় ফিরে আসছিলাম। টনি জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা নিমার সাথে কথা হয়েছে?’ কথাটা কানে প্রবেশ করতেই আমার হৃদয়ে বিষন্নতা সংক্রমিত হলো। আমি শুঁকনো ঢোক গিলে বললাম,
‘না।’

‘ওর সাথে দেখা করার কোন ব্যবস্থা করা যায় না? তাহলে হয়তো কোন বিহিত হতে পারে।’ অতি সাবধানে বলল কথাটা।

‘না টনি। ও দেখা করবে না।’ ও আর কিছু বললো না।”

——————–

‘হেই।’ কারোও ডাকে চমকে উঠল নিনা। এতক্ষণ যাবত মানসপটে ভিডিওর মতো একে একে ভেসে ওঠা ছবিগুলো কোথায় হারিয়ে গেল। একটা মেয়ে নিনার সামনে দাঁড়িয়ে। হলদেটে ফরসা সে। হালকা কোঁকড়া কালো চুল। সে বলল,
‘আমি ওমানা। অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করলাম দূরে এই গাছের সাথে গুম মেরে দাঁড়িয়ে আছো তুমি।’ মেয়েটার মুখ চেনা ঠেকল। খুব সম্ভবত ক্লাসেই দেখেছিল দুই-একবার।
‘না এমনি অত কোলাহলের মাঝে ভালো লাগে না তাই।’

‘তুমি তো স্কুলে নতুন এসেছো তাহলে এখানে? টনির সঙ্গে পূর্বপরিচিত ছিলে?’ জিজ্ঞেস করল।

‘তুমি আমাকে চেনো?’

‘আগে চিনতাম না অবশ্যই। দুইদিনেই চিনে গিয়েছি। আর আমি অমিতেরও ফ্রেন্ড। তুমি তো বেসৃট ফ্রেন্ড তাই না?’ বলে এটকু থামল। তবে নিনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই পুনরায় বলল,
‘তুমি একবারও দেখোনি লিটারেচার ক্লাসে আমি তোমার পিছনেই তো বসেছিলাম।’ নিনা মাথায় জোর চালালো। আজ ক্লাসে পেছন থেকে যেই মেয়েটা গুঁতা দিয়ে কিছু একটা বলেছিল সে এবং এই মেয়েটা একই মানুষ কিনা। কিন্তু এমন কিছু মাথায় আসল না। নিনা ইতস্তত করে বলল, ‘হ্যা তোমাকে দেখেছি সম্ভবত। আমি অতটা খেয়াল করার সুযোগ কোথায় পেয়েছি। মাত্র দুইদিন তো হলো।’

‘হুম। আচ্ছা যদি কিছু মনে না করো আমার সাথে গিয়ে ওখানে বসবা? আমি একদম একা এখানে। খুব বোরিং লাগছে।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে।’ বলে মেয়েটার সাথে হেঁটে গিয়ে সারি সারি রাখা আসন গুলোর একটায় বসল৷ কফিনের ডান পাশে সামনাসামনি চেয়ারটা। যতবারই কফিনের দিকে চোখ যাচ্ছে ততবারই পুরনো স্মৃতিগুলো জলজ্যান্ত হয়ে উঠছে যেন। আরোও কিছুক্ষণ পর ফাদার এলেন। টনির বাবা মা একদিকে বিষন্ন মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। মিসেস গ্রেউড মাঝেমাঝে কিছুক্ষণ পরপর চোখ মুছছেন। তার চোখ মুখ ভয়ানক ভাবে লাল হয়ে ফুলে উঠেছে৷ চোখের নিচে কালচে দাগ বসে গিয়েছে। তার খুব পরিপাটি ভাবের লেশমাত্র নেই এখন৷ চুলগুলোও কোন রকমের বেধে নেওয়া হয়েছে৷ নিনার খারাপই লাগলো এভাবে ওনাকে দেখতে। টনি খুব ভালোবাসতো ওর মাকে। শত ব্যস্ততার মাঝে, মাসের বেশির ভাগ সময় বাড়ি না থেকেও টনিকে যথেষ্ট আদর করতেন মিসেস গ্রেউড। ফাদার বাইবেল থেকে কিছু অংশ পাঠ করার পর প্রথমেই মি.গ্রেউড ছেলের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বললেন। মিসেস গ্রেউড উঠে দাঁড়ালেন। অত্যন্ত ধীরে নমনীয়তার সমেত বলতে শুরু করলেন, ‘আমি মা হিসেবে আমার ছেলের জন্য যথেষ্ট সময় দিতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা।’ শেষের কথাটা বলার সময় গলা কেঁপে উঠল। আবার বললেন,
‘আমার কাজ, এ্যামবিশনকে হয়তো এতটাই গুরুত্ব দিয়েছিলাম যে নিজের ছেলেকেই গুরুত্ব দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। সেই ভুলের মাশুল খুবই মর্মা*ন্তিকভাবে দিতে হচ্ছে আমায়। নিজের ছেলেকে হারিয়ে…আমার শুধু একটাই আশা, ওর আ*ত্মা যেখানেই থাকুক, শান্তিতে থা…কথা সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই তার গলা ধরে এলো। তিনি নিজের আসনে বসে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। তার পাশে বসা মহিলাটি তাকে জড়িয়ে ধরল। এরপর টনির পরিবারের সদস্যরা একে একে নিজের বক্তৃতা দিলেন। এরপর হঠাৎ করে একটা মেয়ে কফিনের পাশে এসে দাঁড়াল। মেয়েটাকে এতক্ষণে কোথাও চোখে পরেনি নিনার। মেয়েটা প্রথমে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইল। তারপর বলল, ‘আমি প্রথমে ভাইয়ের উদ্দেশ্যে একটি গান গাইব। হয়তো কখনো সেভাবে আমার ভালোবাসা ভাইয়ের প্রতি প্রকাশ করার সুযোগ আমার হয়নি। আর আফসোস কখনো হবেও না।’ বলে থামল। এবার নিনা বুঝলো এটাই এমিলি। টনির বোন এমিলি গ্রেউড। যদিও এর পূর্বে কখনো এমিলির সঙ্গে সামন-সামনি দেখা হয়নি। হবেই বা কিভাবে? এই প্রথম টনির বাড়ি আসা হলো তাও আবার তার ফিউ*নেরালে। হঠাৎ টনির বলা একটা কথা মনে পরল,

——————-

প্রায় দুই মাস আগের কথা। একটা লাইব্রেরিতে কোন এক বিকেলে বসেছিল ওরা।

“নিনা তুমি কী অমিতের বাসায় কখনো গিয়েছো?’

‘হ্যা।’

‘তাহলে আমার বাসায় সমস্যাটা কী?’

‘নাহ এমনি।’ বলল নিনা। তারপর একটু থেমে আবার বলল,

‘দেখো আমার না এত কারো বাসায় যেতে ভালো লাগে না।
আর অমিতের কথা কী বলবো, ওর পুরো পরিবার আমাকে চিনে বসে আছে। না যেয়ে উপায় নেই।’

‘তাহলে আমার পুরো পরিবারের সাথে তোমার পরিচয় করানো লাগবে দেখছি।’

‘বাহ কী ফন্দি!’

‘নাহলে অবস্থা এমন দাঁড়াবে যে শেষ পর্যন্ত আমার ফিউ*নেরালে গিয়ে যদি আমার বাসায় আসো তুমি।’ হেসে বলল।

‘আরেহ ধুর! তাই বলে এতটা খারাপ নই আমি।’ হেসে বলেছিল নিনা।”

——————-

কথাগুলো মনে পরতেই কেমন ফাঁকা ফাঁকা একটা অনুভুতি হলো। সেই মন কেমন করা ভায়োলিনের সুর থামার যেন নামগন্ধ নেই। মনের আঙ্গিনায় নিদারুণ বেদনা ছড়িয়ে চলেছে। এমিলি প্রথমে লানা ডেল রেয়ের “ডার্ক প্যারাডাইস” গানটা গাইল। কোন মৃ*ত মানুষের উদ্দেশ্যে গাওয়ার জন্য এর চাইতে উপযুক্ত গান আর কী হতে পারে? পুরোটা সময় সকলে নিশ্চুপ বসে রইল। গানটার প্রতিটি বাক্য যেন সকলকে তাদের নিজ নিজ স্মৃতি ভান্ডার থেকে টনির স্মৃতিগুলো খুঁজে দিচ্ছে। তবে এতেই এমিলি থেমে রইল না। এরপর বলল, ‘এবার আমি যে গানটা গাইব সেটা ভাইয়ের অত্যন্ত প্রিয় একটি গান। এটা শুনে হয়তো অনেক স্মৃতি তাজা হয়ে যেত। মাঝে মাঝে মজা করে আমরা এটা গাইতাম।’ বলে থামল। এবার সে শুরু করল “ভিলেইন” গানটা,

‘In the dark
Where I like to keep my heart
Know I’m all bite, no bark
Like to catch you way off guard

I’ll stay so deep inside your brain
And take you somewhere far away’…

নিনার অদ্ভুত লাগলো গানটা শুনে। মনে মনে ভাবল,
টনির তো এমন ধরনের ডার্ক টাইপের গান কখনোই পছন্দ ছিলো না। সেখানে এই গান ওর প্রিয় গান? যদিও অবশ্যই এমিলির এটা ভালো জানার কথা। কিন্তু এমন কিছু আমি কখনো শুনিনি কেন?’

‘এমিলির গানের গলা কী ভালো। তাই না?’ ওমানার কথায় ভাবনার সুতায় টান পরল। নিনা ওর দিকে ফিরে চাইল। বলল, ‘হুম তা ঠিক। সুন্দর কন্ঠ।’ গান শেষে এমিলি গিয়ে মিসেস গ্রেউডের পাশে বসে পরল। এরপর কোথা থেকে যেন লিজা এসে হাজির হলো। নিনা ভাবতে পারেনি লিজাও এখানে উপস্থিত রয়েছে। থাকলেও এতক্ষণ কোথায় ছিলো? নাকি নিনা স্মৃতিচারণ এবং নিজের বেদনায় এতটা আপ্লুত হয়েছিল যে খেয়ালই করেনি। লিজাও এসে কফিনের পাশে দাঁড়াল। লিজা ম্লান কন্ঠে বলল, ‘আমার টনির সঙ্গে বিশেষ সক্ষতা ছিলো। যেই গানটা আমি গাইব সেটাও ওর প্রিয় একটা গান। একবার আমার মুখ থেকে এই গান ও শুনেছিল। নিঃসন্দেহে সেটা ওর খুব ভালো লেগেছিল। কাজেই শেষ বারের মতো না হয় একবার গাইলাম।’ বলে একটু থামল। কেসে গলা পরিষ্কার করে নিল। তারপর গাইতে শুরু করল,

“And I’ve heard of a love that comes once in a lifetime
And I’m pretty sure that you are that love of mine

‘Cause I’m in a field of dandelions
Wishing on every one that you’ll be mine, mine”

গানটা গাওয়া শুরু করতে নিনার মুখে হাসি ফুটে উঠল। কিছু মিষ্টি স্মৃতি চোখের সামনে ফুটে উঠল। একবার এই গানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য করেছিল টনি। সেটা ভেবেই এক প্রলম্বিত শ্বাস বেরিয়ে এলো বুক চিরে। এবার ওমানা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘নিনা তুমি বোধহয় টনির খুবই কাছের বন্ধু ছিলা। আই এম সরি।’ নিনা আত্মসংযম করে কেসে গলা পরিষ্কার করল। বলল, ‘না মানে পরিচিত ছিলাম। তবে এভাবে প্রতিটা মানুষের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ দেখে খারাপ লাগছে।’
‘হুম বুঝলাম। দেখে খারাপ লাগে। ছেলেটা খুব ভালো ছিলো। আশা করিনি এভাবে অকালে চলে যাবে ও।’
লিজা গান করছে যেন হৃদয় নিংড়ে। আর সকলেও নিরবে থম মেরে বসে রয়েছে। ওর গানের সুর যেন সকলের অন্তর ছুঁয়ে দিয়ে গিয়েছে। নিনা ভাবল, ‘কী আজব ইভানের সঙ্গে টনির শত্রুতা অথচ তার বোনের সঙ্গেই টনির নাকি বিশেষ সক্ষতা ছিলো? বাহ! অবশ্য টনি আমাকে কখনো ইভান ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে কোন ঝামেলার কথা বলেনি। ছিলো বলেও মনে হয় না।’ এরপর টনির একজন কাজিন এসে
বক্তৃতা দিল। তারপর এলো অরল্যান্ডো। সে শান্ত কন্ঠে বলতে শুরু করল, ‘আমার জীবনের সবচাইতে কাছের বন্ধু ছিলো একমাত্র টনি। সেই ছোট্ট বেলা থেকে৷ ওর সাথে আসলে আমার স্মৃতি ঘেটে বের করার কিছু নেই বরং আমার জীবনের কোন একটা দিন বোধ-হয় এমন কাটেনি যেখানে ও উপস্থিত নেই৷ আসলে ও আমার ভাইয়ের মতো ছিল, বলতে বলতে থেমে গেল। কিছুক্ষণ মৌন থেকে আবার বলতে শুরু করল, ‘এমনকি শেষ দিনও বিকেল পর্যন্ত ওর সাথেই ছিলাম আমি। যদি জানতাম এই লেখা আছে ওর ভাগ্যে! আমার সৌভাগ্য শেষ দিন ওর একটা আবদার রাখতে পেরেছিলাম। একটা স্ট্রবেরি শেইক এনে দিতে বলেছিল। এনেওছিলাম আমি।’ বলে আসনগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন শীর্ণকায় মহিলার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘উনি যখন বললেন যে,
সম্ভবত শেষ টনি আমার আনা স্ট্রবেরি শেইকটাই খেয়েছিল তখন অন্তত ভালো লেগেছিল এটা জেনে যে শেষ সময়েও আমার আনা কোন একটা জিনিস ও শেষ বারের মতো খেতে পেরেছিল।’
নিনা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকল সেদিকে। বাতাসের প্রাবল্য বেড়েছে। বাগানে দাঁড়িয়ে তিন চারটে বড় গাছগুলোর ডালপালা নৃত্য আরম্ভ করেছে যেন। সূর্য ক্রমশ পশ্চিমে হেলে পরছে। তবে এখনো পূর্ণদ্যমে শিখা ছড়িয়ে চলেছে। এরপর আরোও বেশ কিছুক্ষণ বক্তৃতা এবং গান, কবিতা চললো। তবে নিনা বসে রইল না। অরল্যান্ডোর বক্তৃতা শেষ হতে না হতেই উঠে গেল। ওমানা মেয়েটাকে বলে গেল চলে যাচ্ছে। তবে সকল আসনগুলোর পেছন দিয়ে গিয়ে গ্রেউড বাড়ির কেয়ারটেকার মিস ম্যারির পাশে দাঁড়াল। ওনাকে কখনো না দেখেই চিনতে পেরেছিল। যেহেতু বাড়িতে টনির সঙ্গে সর্বক্ষণ উনিই থাকতেন। টনি তাকে অত্যন্ত ভালোবাসতো। ওনাকে নিয়ে কত ঘটনাই না বলেছে নিনাকে। নিনা বলল,
‘হ্যালো মিস ম্যারি।’
মিস ম্যারি চমকে তাকালেন। বোধহয় কোন ভাবনায় গুম হয়েছিলেন। ভ্রু কুঁচকে গেল ওনার। বললেন,
‘হ্যা?’

‘আমি টনির একজন ক্লাসমেট।’ নিজের আসল পরিচয়টা গোপন করে গেল। এখানে কাউকেই বিশ্বাস করা যায় না। সকলেই সন্দেহের তালিকায় পরে৷ সেখান থেকে মিস ম্যারিও বাদ যান না। উনি হালকা হেসে বললেন,
‘ওহ সরি তোমাকে আমি ঠিক চিনতে পারলাম না। এর আগে বোধহয় কখনো আসোনি বাসায়।’ বলে থামলেন। নিনা জিজ্ঞেস করল,
‘হুম। কিন্তু খবরটা সত্যি খুবই বিস্ময়কর ছিল। শুনলাম আপনিই নাকি প্রথম টনির ব*ডি খুঁজে পেয়েছিলেন?’

মিস ম্যারি শান্ত ভাবে নিনার দিকে তাকালেন। তারপর যেন মনের মধ্যে অনেক অনেক স্মৃতি ঘাঁটতে আরাম্ভ করলেন। অবশেষে বললেন, ‘হ্যা আমিই পেয়েছিলাম। বলে বোঝাতে পারব না কতটা….কতটা কষ্ট হয়েছে আমার। সত্যি বলছি আমি যদি ভোর বেলায় আসার সাথে সাথে টের পেতাম। তাহলেও হয়তো আরেকটু আগে হাসপাতাল নেওয়া যেত।’

‘কেন? আপনি কোথায় ছিলেন?’ অত্যন্ত সাবধানে প্রশ্নটা করল। উনি কিছুটা সময় ভেবে নিলেন। তারপর বললেন,
‘ ওইতো। আমি তো বসে থাকতে পারি না। কত কাজ থাকে। ওর জুসের গ্লাসটা পরেছিল। সেটাও নিয়ে গিয়ে ধুয়ে ফেললাম৷ নিচে এসব কাজ করতে করতে যখন দেখলাম টনির ঘুম থেকে উঠার সময় পার হয়ে গিয়েছে কিন্তু সে এখনো উঠেনি তখন আমি উপরে গেলাম। এবং গিয়ে যখন ওর কামরায় ঢুকেছিলাম.. মানে আমার… বলতে বলতে ওনার চোখ টলমল করে উঠল। এবার নিনারও চোখ ভিজে উঠল। অন্যূিকে মুখ ফেরাল। কিছুক্ষণ মৌন হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এদিকে টনির কফিন সেমেটারিতে নিয়ে যাওয়ার তোরজোর শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেক অতিথিই উঠে পরেছে। এদিকওদিক ঘুরেফিরে ভির করছে। কফিনটা দেখা যাচ্ছে না। সেখানে বেশ জটলা। নিনা কেসে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘আর তার মানে এই যে জুসের বোতল এসব তো ফেলে দিয়েছেন তাই না?’

‘হ্যা।’

‘মানে গার্বেজ ট্রাক এসে এসব নিয়ে গিয়েছে?’

‘না, উইকেন্ডে ওসব নিয়ে যায়। কিন্তু কেন?’

‘এমনি আপনি তো পুলিশকে সাহায্য করতে পারেন এসব বিষয়। তাই না?’
উনি স্তিমিত হাসলেন। বললেন, ‘মা আমি চাইলেও সাহায্য করতে পারি না। কারণ আমি যতই ওকে ভালোবাসি না কেন ওর ওপর তো আমার কোন অধিকার ছিলো না। যাদের ছেলে তারা পু*লিশি ঝামে*লায় জড়াতে চায় না।’

‘মানে টনির বাবা মা এইজন্যেই ওর খু*নি কে সেটা বেরও করতে চাইবেন না?’ কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলল নিনা।

‘না না। আস্তে কোন খু*নির কথা উল্লেখ করো না। মি. এবং মিসেস গ্রেউড মানতে নারাজ যে ওনাদের ছেলে খু*ন হয়েছে। এবং আমার কথায় কিছুই যায় আসে না।’

‘ওহ’। ছোট করে বলল নিনা।

‘আচ্ছা। আমি এখন ভেতরে যাই আমার অনেক কাজ। অতিথিরা ভেতরে যাচ্ছেন অনেকে।’

‘আচ্ছা।’ বলতেই উনি তড়িঘড়ি ড্রইংরুমের কাঁচের দরজা দিয়ে ভেতরে চলে গেলেন। নিনা বুক ভরে লম্বা শ্বাস নিল।
সকল অতিথিদের কেউ কেউ বেরিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ ভেতরে গিয়ে বসছে। আবার অনেকে সেমিটারি পর্যন্ত যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। টনির কফিনটা ইতোমধ্যেই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাগানে আর বেশি ভির নেই। বেশ কয়েকজন ছেলেমেয়েরা এদিক ওদিক দাঁড়িয়ে কথা বলতে ব্যস্ত। নিনা হাঁটতে হাঁটতে গেটের সামনে পৌঁছল। বাম দিকে গ্যারেজ। দুটো গাড়ি ইতোমধ্যেই বের করা হয়ে গিয়েছে। কাজেই ওদিকে আর কারোও থাকার কথা নয়। ঠিক যখন গেইটের কাছটা একদম ফাঁকা তখন নিনা দ্রুত পা চালিয়ে বাম দিকে গ্যারেজের সামনে এসে দাঁড়াল। এদিকটা একেবারে নির্জন, নিরব। বাম দিকে বাড়ির ভেতরে স্টাডিরুমটা। কাজেই বাড়ির ভেতরেও এদিকে কোলাহল কম। নিনা ওর ব্যাগ ঘাঁটতে শুরু করল। অনেক জিনিসপত্রের ভিরে কোন ক্রমে একটা হ্যান্ড গ্লাভস পেল। ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। কারোও এখানে চলে আসার চিন্তায় কপালে গভীর ভাজ। আরও খানিকটা হাতড়ে আরেকটা গ্লাভসও অবশেষে পেয়ে গেল। বাউন্ডারি দেয়ালের পাশে বড় একটা গাছের নিচে বড় গার্বেজ বিনটা রাখা ছিলো। গ্লাভস দুহাতে পরে নিয়ে ট্র্যাস বিনের কাছে এগিয়ে গেল। তবে শেষমুহুর্তে আবার মাস্কের জন্য ব্যাগ খুললো। মাস্ক পোরে নিয়ে তবে গার্বেজ বিনের মুখটা খুললো। বারবার চোখ চলে যাচ্ছে বাম দিকের রাস্তার দিকে যেটা গেইটের সামনে থেমেছে। কখন কে চলে আসে এই আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে ওকে। বুক ধুকপুক করছে। গার্বেজ বিনের ওপরের দিকে শুধু কাগজ। সেভাবে হাতড়াতেও পারছে না। কারণ গার্বেজ বিনটা নিনার থুতনি সমান উঁচু। তাছাড়া ময়লা আবর্জনা ঘাঁটতে কারই বা ভালো লাগে? শাকসবজির উচ্ছিষ্ট অংশ। ডিমের খোসা। অবশেষে স্টারবাক্সের চিহ্নযুক্ত একটা জুসের বোতল পেল। বোতলটা হাতে তুলে নিল নিনা৷ বোতলের তলায় কয়েক ফোটা গোলাপি তরল এখনো অবশিষ্ট আছে। এটাই অরল্যান্ডোর আনা জুসের বোতল হতে পারে। নিনা গার্বেজ বিন থেকে সেই দুমড়ে*মুচড়ে ফেলা কাগজগুলোর প্রায় সবগুলোই তুলে নিয়ে বোতলটা পেচিয়ে ফেললো। তারপর মাটিতে রাখল। বিনের মুখ বন্ধ করে দিয়ে হ্যান্ড গ্লাভস খুলে ফেললো৷ অস্থিরতায় কপালের ঘাম ছুটে যাচ্ছে। ময়লা আবর্জনা ঘাঁটতে ঘাঁটতে হাত এবং ঘাড় ব্যাথা হয়ে গিয়েছে। ব্যাগ থেকে একটা পলিব্যাগ বের করে হ্যান্ড গ্লাভসটা ভরে রাখল। এরপর আরেকটা পলিব্যাগ বের করে বোতলটা এর মধ্যে ভরল। তবে বোতলটা ব্যাগে রাখার পূর্বেই কারোও কন্ঠস্বর শোনা গেল। নিনা ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। একমুহূর্তের জন্য যেন নিজের স্থানে জমে গেল। তবে পরমুহূর্তে কোন রকমে বোতলটা ব্যাগ রাখল। বিনের কাছ থেকে সরার সময় পেল না। একটা মেয়ে এদিকের পথ ধরে ধীরে ধীরে হেঁটে আসল। নিনাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি এখানে কেন?’
মেয়েটার চিকন ছোট ছোট চোখ। সেই কোরিয়ান মেয়েটা যে ক্লাসে নিনার দিকে তাকিয়ে ছিল। নিনার ওকে চিনে নিতে একটুও সমস্যা হলো না। গলা শুঁকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। তবে নিজেকে যতটা সম্ভব সামলে নিয়ে বলল, ‘আমি টিস্যু ফেলতে এসেছিলাম।’
‘বাড়ির ভেতরেও ট্র্যাসবিন আছে।’ বলে থামল। খুব তীক্ষ্ণ ভাবে বোধহয় পর্যবেক্ষণ করতে ব্যস্ত। বলল,
‘তুমি এভাবে ঘেমে এলোমেলো হয়ে আছো কেন যেন টানা অনেক কাজ করতে হয়েছে।’
‘না এমন কিছুই না। আমার একটু অসুস্থ বোধ হচ্ছে তাই ঘেমে গিয়েছি। এমনিতেও আমিও চলেই যাচ্ছিলাম।’
বলে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে গিয়ে মেয়েটাকে পাশ কাটিয়ে গেল।

ইনশাআল্লাহ চলবে।।