মনোহারিণী পর্ব-৪+৫

0
285

#মনোহারিণী
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি

৪.
মনোহারিণী,
বিশের কোঠায় পা দিয়েই কি তুমি বড্ড বড়ো হয়ে গেছ, না কি বড়োদের মতো আচরণ করে বড়ো হতে চাইছ? তবে যা-ই করো, আমার চোখে তো তুমি সেই পঞ্চদশী কিশোরীই আছো। তফাত হচ্ছে, তখন ভেজা চুলগুলো ভালোভাবে মুছতে না, শুকাতে না; অথচ মাথাভর্তি মিশমিশে কালো চুল ছিল। কিন্তু এখন তুমি ভেজা চুলে সযত্নে চিরুনিও চালাচ্ছ; অথচ মাথায় চুলের পরিমাণ আগের তিনভাগের একভাগ। তোমার বাহিরটা বদলেছে, যদিও আমি চাইনি তুমি বদলাও। শোনো কেশবতী, ওই লম্বা কেশ সামলে রেখো। ভেজা কেশে ভুল করেও আর আমার সামনে আসার মতো ভুল কোরো না। ওই কেশে যে আমার ভয়াবহ মুগ্ধতা। এই মুগ্ধতা মাত্রা ছাড়ালে আবার বিপদ নিশ্চিত।
ইতি
সব চিঠির প্রেরক খুঁজতে নেই

চিরকুট পড়ে আমি তব্দা খেয়ে বসে রইলাম। বিকেলের দিকে একটু ঘুমিয়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠেই হাতের মুঠোয় এই চিরকুটটা পেয়েছি। প্রেরক চেনার চেষ্টা করতে গিয়ে বারবার পড়ার পরও চিনতে পারলাম না। শেষে নামও দেওয়া নেই। লেখা, সব চিঠির প্রেরক খুঁজতে নেই। এ আবার কেমন কথা? আশ্চর্য! এ বাসায় চিরকুট দেওয়ার মতো কে আছে? তা-ও আবার এই ধরণের চিরকুট। প্রথমে ভাবলাম আমিরা আপুদের মধ্যে কেউ মজা করার জন্য দিয়েছে? কিন্তু তাদের সবার হাতের লেখা আমি চিনি। সৌরভ ভাইয়া হলে চলে গেছে, রাজ ভাইও দুপুরের পরপর চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিল। বাসায় আছে শুধু কুলসুম আপা, আম্মি আর তাজ ভাই। তাজ ভাইয়ের কাজ? নাহ্,তা তো একদমই অসম্ভব। উনি এই প্রেমময় চিরকুট দিবেন আমাকে? উনি তো একটা ভুলভাল চিরকুটের জন্য আজও আমাকে খোঁচা মেরে কথা বলেন। চিরকুট যে লিখেছে, সে মনের গভীর অনুভূতি থেকে লিখেছে। এখানে এমন কে-ই বা আছে? তাজ ভাই না নিশ্চিত, তবু যেহেতু উনি ছাড়া এখানে কেউ নেই, সেহেতু খোঁজ নিয়ে দেখা যায়। ওনার হাতের লেখা কেমন ছিল ভুল গেছি। মিলিয়ে দেখলে নিশ্চিত হতে পারব। কিন্তু কীভাবে? যেচে গিয়ে যদি ধরা খাই? কাগজটা মুঠোয় নিয়ে চললাম তাজ ভাইয়ের ঘরের দিকে। আম্মিকে দেখছি না। আমিরা আপুদের বাসায় গেছে বোধ হয়। তাজ ভাই কি রুমে আছেন? রুমের দরজা তো হা করে খোলা। বাসায় থাকলে উনি দরজা এভাবে খুলে রাখেন না, সুতরাং এখন বাসায় নেই। তবু সাবধানের মা’র নেই। দরজায় দাঁড়িয়ে আমি ভেতরে উঁকি মে’রে সারা ঘরে চোখ বুলালাম। উনি নেই। মনে-মনে বেশ খুশি হলাম। পা টিপে-টিপে রুমে ঢুকে স্টাডি টেবিলের কাছে গেলাম। ভ্রুকুটি করে পুরো টেবিলে চোখ বুলিয়ে একটা নোটপ্যাড নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই কোমড়ে শক্ত কোনো বস্তুর চাপ অনুভব করলাম। সঙ্গে-সঙ্গে চকিতে ঘুরে দাঁড়ালাম। এমনভাবে চমকে উঠলাম যে দু’পা পেছাতে গিয়ে টেবিলের সাথে জোরেশোরে ধাক্কা খেয়ে আহাম্মক বনে গেলাম। চোখ দুটো ছানাবড়া করে শুকনো ঢোক গিলে কিছু বলার আগেই তাজ ভাই আমার কোমরে ঠেকানো পি’স্তলটা শক্ত করে চেপে ধরলেন। তাচ্ছিল্যের হাসি মুখে ঝুলিয়ে বললেন,
“স্বয়ং ডিটেকটিভের ঘরে চু’রি করতে ঢুকে পড়েছিস? এত সাহস?”
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তুতলিয়ে বললাম,
“আমি কী চু’রি করব?”
“আমি না থাকলে তো করতি। ভাগ্যিস ছিলাম। তা কী চু’রি করতে এসেছিলি, শুনি?”
আমি আলগোছে হাতের কাগজটা ওড়নার নিচে লুকিয়ে ফেললাম। কাঁদো কাঁদো মুখ করে ইনিয়ে-বিনিয়ে বললাম,
“চু’রি করতে আসিনি। জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম ওই হ্যান্ড পেইন্টিংয়ের এত সুন্দর কাপড়টা শেলফ পরিষ্কার করে নষ্ট করব কি না।”
“চো’রের মতো এলি কেন তুই?” ত্যাড়াভাবে ফের প্রশ্ন করলেন উনি।
আমি অসহায় মুখ করে বললাম,
“আপনাকে ভেতরে দেখছিলাম না বলে এসেছি। এটা সরান না।”
উনি আমার কথা না শোনার ভান করে পি’স্তলটা আরও জোরে চেপে ধরলেন। কোমরে এবার হালকা ব্যথাও পেলাম। এরপরও উনি থামলেন না। অপর হাত টেবিলে ঠেকিয়ে আমার মুখের ওপর ঝুঁকে পড়ে আমাকে সবদিক থেকে আটকে ফেললেন। আমি জড়োসড়ো হয়ে শুকনো ঢোক গিললাম। উনি গভীর দৃষ্টি আমার মুখে নিবদ্ধ করে নিচু স্বরে বললেন,
“এই পিচ্চি, এখনও সেই ভীতুই আছিস? খুব তো বকবক শিখেছিস। তো ভীতু স্বভাব যায়নি কেন?”
ওনার নিঃশ্বাস আমার মুখে পড়তেই আমি শিউরে উঠলাম। দম বন্ধ হয়ে এল। হঠাৎ ওনার এমন অদ্ভুত আচরণে পি’স্তলের ভয় বেমালুম ভুলে হতবাক হয়ে গেলাম। ছাড় পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠলাম। কোনোমতে বললাম,
“আমায় যেতে দিন, তাজ ভাই।”
উনি কয়েক মুহূর্ত স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। তারপর আদেশের সুরে বললেন,
“অনুমতি ব্যতীত আমার কাজের কোনো জিনিসে কখনও হাত দিতে যেন না দেখি। মনে থাকবে?”
আমি বাধ্য মেয়ের মতো দ্রুত গতিতে ওপর-নিচে মাথা ঝাঁকালাম। উনি বেশ শান্ত ভঙ্গিতে সোজা হয়ে আমার থেকে দু’পা সরে দাঁড়ালেন। এতক্ষণে যেন আমি শান্তিতে শ্বাস নিতে পারলাম। মুক্তি পেয়ে দ্রুত চলে যেতে নিতেই উনি আমার বাঁ হাতটা মুঠোয় চেপে ধরে পি’স্তলটা আমার হাতে গুঁজে দিলেন। অতঃপর খুব মিষ্টি করে হেসে বললেন,
“কাল গ্রামে যাব ‌তো। অলি আগেই একটা পি’স্তলের বায়না ধরেছে। তাই একশো টাকা দিয়ে কিনে এনেছিলাম। তোর কাছে রাখ তো, পিচ্চি বলদ।”
আমি এবার যেন পুরোপুরি রকম বোকা বনে গেলাম। বিস্ময়ে ‘থ’ হয়ে স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। উনি আমার বিস্ময়কে বিশেষ পাত্তা না দিয়ে সামনে থেকে সরে গিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লেন। ল্যাপটপ খুলতে-খুলতে মহাসুখে গান ধরলেন,
“তোমার এলোমেলো চুলে
আমার সাদা মনে
হারিয়ে যেতে চাই
কোনো হুড তোলা রিকশায়-”

লোকটার গানের গলা বেশ সুন্দর। কিন্তু এখন ওসব শোনার মতো অনুভূতি নেই আমার। পি’স্তলটা হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরে আমি রাগে গজগজ করতে-করতে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। বলা তো যায় না, কিছু বললে আবার না সত্যিকারের পি’স্তলই চেপে ধরে। না বাবা, রিস্ক নেওয়া একদম চলবে না। কুলসুম আপা আমার হাতের পি’স্তল দেখে দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে উঠলেন,
“ও আফা, আপনে এই খেলনা গু’ল্লি কই পাইছেন? আমার পোলার আছে একখান। গতমাসে বেতন পাইয়া কিন্না দিছিলাম। বা’ন্দরের বাচ্চায় প্রথম দিনেই ডা’ন্ডা ভাইঙ্গা ফেলছে। অহন ওই ভাঙ্গাডা দিয়াই খেলে। কিন্তু আপনে কিনছেন কার লাইগা? আপনের কি এগুলা দিয়া খেলার বয়স আছেনি?”
আমি হতাশ চোখে চেয়ে ভাবলাম, কুলসুম আপা একবার দেখেই বুঝে গেল এটা খেলনা পি’স্তল। আর আমি কি না ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে পড়েছিলাম! সত্যিই কি এত বলদ আমি? এ-ও কী মানা যায়! অবশ্য আমার ভাবনাতেও বোধ হয় তেমন ভুল ছিল না। উনি ডিটেকটিভ মানুষ, পি’স্তল থাকাটা তো অস্বাভাবিক কিছু নয়। রাগে-দুঃখে ঠোঁট উলটে পি’স্তল দিয়ে বার কয়েক কপাল চাপড়ালাম।

প্রতি সন্ধ্যায় আমিরা আপুরা তিন ভাই-বোন এ বাসায় চলে আসে চায়ের আড্ডা বসানোর জন্য। আজও এল। আমি তখন রুমে ছিলাম। মিনহা আপু আমায় ডেকে গেল চা খাওয়ার জন্য। গিয়ে এক কাপ চা নিয়ে সোফায় পা তুলে আরাম করে বসলাম। জুম্মান ভাইয়া ইতোমধ্যে আড্ডার আসর জমিয়ে ফেলেছেন। আড্ডার টপিক, তার এক্স গার্লফ্রেন্ড কেমন ভঙ্গিমায় কথা বলত। এখন উনি শরীর দুলিয়ে-দুলিয়ে তার এক্স গার্লফ্রেন্ডের ঢং করে কথা বলার ভঙ্গিমা শোনাচ্ছেন। আমি প্রথমে শুনেই ফিক করে হেসে উঠেছি। আমিরা আপু আর মিনহা আপু রীতিমতো হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আমি মুখ কুঁচকে ফেললাম। চিনি কম পড়েছে। এমনিতে আমি মিষ্টি জাতীয় খাবার খুব কম খেলেও, চায়ে চিনি কম হলে খেতে পারি না। চায়ের কাপটা রেখে আমি গেলাম চিনি আনতে। চিনি এনে চায়ে মেশানোর সময় এলেন তাজ ভাই। উনি আসতেই জুম্মান ভাইয়াসহ তার দুবোন মূর্তির মতো নিশ্চুপ হয়ে গেল। তাজ ভাই এসেই বললেন,
“চা খেতে এতক্ষণ লাগে? হেসে তো পুরো অ্যাপার্টমেন্ট উড়িয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। পড়াশোনা নেই?”
মিনহা আপু গাল ফুলিয়ে বলল,
“সবসময় এত পড়া-পড়া করেন কেন, তাজ ভাই? এসে হতে তো একটু আমাদের সাথে বসে আড্ডাও দিলেন না।”
তাজ ভাই মিনহা আপুর মাথায় চাটি মেরে বললেন,
“তোদের আড্ডার কোনো মাথামুণ্ডু আছে? পড়ার সময় নাচতে-নাচতে আসিস আড্ডা দিতে। ফাঁকিবাজের দল।”
জুম্মান ভাইয়া এবার হেসে বললেন,
“আরে ব্রো, বসো না। বহু বছর তোমার সাথে আড্ডা হয় না। এখন আমরা সবাই বেশ বড়ো হয়ে গেছি, একসাথে আড্ডায় বসাই যায়। তাই না?”
তাজ ভাই আমার দিকে একবার তাকিয়ে সন্দিহান কন্ঠে বললেন,
“সবাই বড়ো হয়ে গেছিস? হাউ ফানি!”
আমিরা আপুও এবার ওনাকে বসানোর জন্য অনুরোধ করতে লাগলেন। বেশিক্ষণ অনুরোধ করতে হলো না। উনি এসে আমার পাশের খালি জায়গায় বসে পড়লেন। সবশেষে আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার চিনি মেশানো চা আমার আগেই উনি নিজের হাতে নিয়ে চুমুক দিয়ে বসলেন। ওনার এহেন কান্ডে আমি বোকা হয়ে শুধু বললাম,
“আমার চা।”
উনি চায়ের কাপে দ্বিতীয় চুমুক দিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললেন,
“চায়ে তোর নাম লেখা আছে?”
জুম্মান ভাইয়া চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,
“কুলসুম আপা, এখানে আরেক কাপ চা দিয়ে যান তো।”
আমি গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম। তাজ ভাই জুম্মান ভাইয়াকে বললেন,
“বুঝলি জুম্মান? এই ধরণের মহিলাদের ভুল করেও বিয়ে করবি না। দেখ, চায়ে পারলে বয়াম উলটো করে চিনি ঢালে। একদিকে তোর দুদিন পর-পর চিনি কিনতে হবে। আরেকদিকে বউয়ের ডায়াবিটিস হলে পকেটের সব টাকা দোকানদারের সাথে-সাথে আবার ডক্টরের পকেটেও ট্রান্সফার হবে। তোর অবস্থাটা কী হবে ভাবতে পারছিস? নিজের ইনকাম করা টাকা সব গোল্লায় যাবে। তাই বিয়ে বা প্রেম করার আগে জেনে নিবি মেয়ে চিনি কম খায় কি না।”
ওনার কথা শুনে জুম্মান ভাইয়া, আমিরা আপু আর মিনহা আপু দারুণ উৎসাহে হাসতে-হাসতে ওনার সাথে তাল মিলাতে লাগলেন। এদিকে আমি ভেতরে-ভেতরে রাগে ফুঁসে উঠলেও, পালটা জবাব দিতে পারলাম না। কুলসুম আপা আবার চা দিয়ে গেলেন। আমি সেই চায়ের কাপ ছুঁয়েও দেখলাম না। তাজ ভাই আড্ডা জমিয়েছেন বেশ। মাঝে বুঝি বেখেয়ালে এক পলক তাকিয়েছিলেন আমার দিকে। ওনাদের আড্ডায় যোগ দেওয়া আর হলো না আমার। তাল মেলাতে পারিনি যে। এই প্রথম আমিরা আপুদের আড্ডায় আমি চুপ মে’রে বসে রইলাম। তবে বেশিক্ষণ বসলাম না। আম্মিকে ডাকতে চলে গেলাম আমিরা আপুদের ফ্ল্যাটে। সেখানে গিয়ে আবার আমিরা আপুর মা আর আম্মির সাংসারিক বকবক শুনে কাটিয়ে দিলাম অনেকটা সময়। আমিরা আপুরা তাদের বাসায় ফিরে আসার পর আম্মি উঠল। আমাকে মিনহা আপু একটা কাজে ডাকায় আম্মি আমার আগেই চলে গেল। আমি আমিরা আপুদের বাসা থেকে বের হলাম তার কিছুক্ষণ পর। আগামী পরশু মিনহা আপুর বান্ধবীর জন্মদিন। ধুমধাম করে সেলিব্রেশন হবে। মিনহা আপু সেখানে আমাকে নিয়ে যাবে। ওসব লোকজনের সমাগম আমার মোটেও ভালো লাগে না। তবু মিনহা আপুর অনুরোধে রাজি হতেই হয়েছে। পরশু ওখানে যাওয়ার আগ পর্যন্ত যে আমার ওভার থিংকিং মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে, তা এখনই টের পাচ্ছি। এসব বিষয়ে আমি অভ্যস্ত। মিনহা আপুর বান্ধবীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ঠিক কেমন মানুষের সমাগম থাকবে ওসব ভাবতে-ভাবতেই আমি নূর আঙ্কেলের ফ্ল্যাটের দিকে যাচ্ছিলাম। আচমকা একটা শক্ত হাত আমাকে টেনে নিল পাশের লিফটের ভেতর। ঘটনার আকস্মিকতায় আমার হৃদপিন্ড লাফিয়ে উঠল। ভয়ে চিৎকার দিতে গিয়েও ব্যর্থ হলাম। মুখও বন্ধ করে দিয়েছে। চোখ দুটো ছানাবড়া করে আমি সামনের ব্যক্তির দিকে তাকাতেই ভয়ের সাথে চরম রাগও উঠে গেল। মুখ থেকে হাত সরিয়ে ভদ্র ছেলেটির মতো তাজ ভাই আমার কাছ থেকে সরে দাঁড়ালেন। কপাল কুঁচকে বললেন,
“হার্ট ফেইল করে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ধান্দা? পিচ্চি পোলাপান নিয়ে দেখছি ভয়ানক রিস্ক।”
আমার হৃদপিন্ড তখনও শান্ত হয়নি। ভয়টা বাড়াবাড়ি রকমের যে। চাপা রাগটা আর চেপে রাখা হলো না। রেগেমেগে বললাম,
“সমস্যা কী আপনার? এভাবে ভয় দেখালেন কেন?”
উনি ভাবলেশহীন মুখে বললেন,
“ভয় দেখালাম না কি? তুই না বড়ো হয়ে গেছিস?”
“এভাবে লিফটে কেন এনেছেন আমায়?”
“আমি?” চূড়ান্ত অবাক হবার ভান করে বললেন উনি।
আমার মেজাজ এতে তরতর করে বেড়ে গেল।
“ত্যাড়ামি করছেন কেন? কোথায় যাচ্ছেন আমাকে নিয়ে?”
“তোর জন্য জামাই খুঁজতে। তোর মতো বলদ মেয়ের জন্য তো জামাই খোঁজা দুষ্কর হয়ে পড়বে। তাই ভাবলাম এখনই আমি খোঁজ লাগাই। ফুটপাত থেকে সুন্দর দেখে এক পাগল-ছাগল খুঁজে পেলেই, আলহামদুলিল্লাহ্।”
লিফট গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে থেমে গেছে। আমি চরম বিরক্তি নিয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। তাজ ভাই আমাকে বের হতে বলতেই আমি ত্যাড়াভাবে বললাম,
“আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না। বাসায় যাব। জোর দেখাবেন না তো।”
উনি কেমন রক্তচক্ষু করে তাকালেন। এতেই আমি দপ করে নিভে গেলাম। কাঁদো-কাঁদো মুখ করে লিফট থেকে বেরোতে-বেরোতে বিড়বিড় করে বললাম,
“খালি আলগা রাগ। আপনি ডিটেকটিভ, না মাফিয়া?”
উনি আমার পেছন-পেছন বেরিয়ে এসে বললেন,
“দুটোই।”
লিফট থেকে বেরিয়ে আর আমি পা থামাতে পারলাম না। বিরক্তিকর লোকটা আমার এক হাত মুঠোবন্দী করে সামনে হাঁটা শুরু করলেন। গেইটের দারোয়ান দুটো কেমন চোখে যেন তাকিয়ে রইল আমাদের দিকে। আমি হাত মোচড়াতে-মোচড়াতে ছাড়ানোর চেষ্টা করে চাপা স্বরে বললাম,
“হাত ছাড়ুন।”
উনি তা না শোনার ভান করে চুপচাপ পা চালালেন। ডান দিকের রাস্তার কিনারা ধরে হেঁটে চলেছেন। আমার কোনো কথাই উনি পাত্তা দিচ্ছেন না। এই মুহূর্তে আমার ঠিক রাগ করা উচিত, বিরক্ত হওয়া উচিত, না কাঁদা উচিত বুঝে ওঠা মুশকিল হয়ে পড়ল। এ তো পুরো রোবটের মতো সোজা হয়ে হেঁটেই চলেছে। শেষে আমি অসহায় মুখে বললাম,
“আম্মি খুঁজবে।”
উনি এতক্ষণে মুখ খুললেন। তা-ও ছোট্ট একটা শব্দ করলেন,
“উঁহু।”
আমি ঠোঁট উলটে অধৈর্য হয়ে বললাম,
“কোথায় যাচ্ছেন তা তো বলুন। এমন করছেন কেন আপনি?”
উনি মুঠোয় ধরা আমার হাতটায় মৃদু চাপ দিয়ে অতিশয় স্বাভাবিক গলায় বললেন,
“গাড়ির তলায় পি’ষ্ট হতে না চাইলে মুখ বন্ধ রাখ।”
আমার ইচ্ছে হলো নিজেই গিয়ে গাড়ির তলায় ঢুকে পড়ি। এতটা বিরক্তিকরও মানুষ হতে পারে? ওনার তো এমন আচরণ করার কথা না। এ তো সম্পূর্ণ নতুন তাজ ভাই, যেন অন্য কেউ। আগেও আমাদেরকে জ্বালাতেন, কত মজা করতেন। কিন্তু তখন এমন বিরক্ত লাগত না। এখন যেন ওনার আচরণগুলো কেমন বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে। অথচ আমার নিশ্চিত ধারণা ছিল, সুইডেন থেকে ফিরে উনি আমার সাথে কথাও বলবেন না। আসলে হলোটা কী? আশ্চর্য! বেশ কিছুটা পথ হাঁটার পর একটা নিরিবিলি দোকানের সামনে এসে উনি পা থামালেন। চা, পানের দোকান। লোকজন নেই বললেই চলে। দোকানদার বসে ঝিমাচ্ছেন। তাজ ভাই উঁচু গলায় ডেকে বললেন,
“মামা, দুটো চা দিন তো।”
দোকানদার চকিতে মাথা তুলে তাকালেন। প্রশ্ন করলেন,
“রং চা, না দুধ চা?”
“একটা রং চা,‌ আরেকটা দুধ চা। রং চায়ে চিনি কম দেবেন।”
“আচ্ছা মামা। বসেন আপনারা”
তাজ ভাই আমাকে বসতে ইশারা করলেন। আমি টাইট হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে নিচু স্বরে বললাম,
“আপনি এই চা খাওয়ার জন্য এতদূর হেঁটে এসেছেন? আমি চা খাব না, বাসায় যাব।”
উনি তার থেকেও নিচু স্বরে বললেন,
“বাসায় জামাই রেখে এসেছিস, না কি দু মাসের বাচ্চা? আজাইরা মেয়ের এত তাড়া কিসের?”
“কথায়-কথায় আমাকে পচানোর জন্য লেগে পড়েন কেন আপনি?”
“বলছি তোর এই সাহস বাড়ানোর মতো মহান কাজটা কে করেছে বল তো? আগে বিড়াল হয়ে থাকতি, আর এখন কি শেয়াল হবার পাঁয়তারা করছিস?”
দোকানদার চা এগিয়ে দিয়ে তাজ ভাইকে বললেন,
“বউ রাগ করছে না কি, বাপ?”
তাজ ভাই আমার দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে ধরেছিলেন। দোকানদারের কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই হাসিমুখে জবাব দিলেন,
“পিচ্চি মানুষ হলে এই জ্বালা, মামা।”
আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। এমনভাবে উত্তর দিলেন, যেন আমি সত্যি সত্যিই ওনার বিয়ে করা বউ। চায়ের কাপটা শক্ত করে ধরে আমি আনমনে বিড়বিড় করে বললাম,
“আপনাকে কিছুতেই চিনতে পারছি না, তাজ ভাই। কেমন অদ্ভুত লাগছে!”
উনি মুচকি হাসলেন। বৈদ্যুতিক বাতির আলোয় সেই হাসির রেখাটা স্পষ্ট ধরা পড়ল। নিঃশব্দে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে উনি নিজেও বিড়বিড় করলেন,
“অদ্ভুত!”

চলবে, ইন শা আল্লাহ্।🖤

#মনোহারিণী
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি

৫.
এখন রাত সাড়ে বারোটা। পুরো অ্যাপার্টমেন্টে নীরবতা বিরাজমান। না জানি আজ আমার কপালে কী আছে! ভয়ে-ভয়ে কলিংবেল চাপলাম। দুই সেকেন্ডের মধ্যেই দরজা খুলে গেল, যেন আমার আসার অপেক্ষাতেই ছিল। দরজায় দাঁড়ানো তাজ ভাইয়ের গম্ভীর মুখ দেখেই আমি চমকে উঠলাম। উনি কখন এলেন? আশ্চর্য! গতকাল গ্রামে গেলেন, আজই ফিরে এলেন! আজ বুঝি আমার রক্ষা নেই। আমার বুকের মধ্যের ঢিপঢিপ শব্দ দ্বিগুণ বাড়ল। তাজ ভাই চুপচাপ দরজা ছেড়ে দাঁড়ালেন। আমি নিঃশব্দে ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। এরপর আর ওনার দিকে তাকানোর সাহস করলাম না। ভেজা বিড়ালের মতো সরে যেতে নিতেই তাজ ভাই যথাসম্ভব ঠান্ডা গলায় বলে উঠলেন,
“কয়টা বাজে ফেরার কথা ছিল?”
আমার বুকটা ধক করে উঠল। পা থামিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। এত ঠান্ডা গলায় কথা বলছে মানে ঝড়ের পূর্বাভাস। মনে-মনে আল্লাহকে ডাকলাম। ওনার রাগের ফল আমার অজানা নয়। কিন্তু এই মুহূর্তে ওনার থেকে বেশি আব্বুর ভয়ে আছি। উনি যদি আব্বুকে জানিয়ে দেন আমার এত রাত অবধি বাসার বাইরে থাকার খবর, তাহলে আব্বু যে বিনা কৈফিয়তে আমাকে শরীয়তপুর নিয়ে বাড়িতে আটকে রাখবে, সে বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আব্বু এসব মোটেও পছন্দ করে না। আমার নীরবতায় বিরক্ত হয়ে তাজ ভাই এবার কিছুটা জোরেই পুনরায় বলে উঠলেন,
“কয়টা বাজে?”
আমি মেঝেতে দৃষ্টি রেখে মিনমিনে গলায় উত্তর দিলাম,
“সাড়ে বারোটা।”
“ফেরার কথা ছিল কয়টায়?”
“দশটায়।”
“বাড়তি আড়াই ঘন্টা কি বয়ফ্রেন্ডের জন্য বরাদ্দ ছিল?”
ওনার কটাক্ষ শুনে আমি মুখে অন্ধকার ডেকে চুপ মেরে রইলাম।
“মুখে কুলুপ এঁটে দাঁড়িয়ে থাকতে বলিনি। এত দেরী কেন হয়েছে?”
আমি এবারও মিনমিন করে বললাম,
“মিনহা আপু দেরী করেছে। আমি ভেবেছিলাম দশটায় ফিরবে। দশটার সময়ই আমি ফিরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মিনহা আপু তার সব ফ্রেন্ডসদের সাথে আড্ডা দিতে বসেছিল। আমার কথা শোনেনি।”
তাজ ভাইয়ের প্রত্যুত্তর না পেয়ে আমি মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি উনি কপাল কুঁচকে আমার জামার হাতার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি চমকে উঠে চট করে হাতটা ওড়নার নিচে লুকানোর চেষ্টা করলাম। সঙ্গে-সঙ্গে ওনার ধারালো প্রশ্ন,
“জামা ভিজলো কীভাবে?”
এবার আমার গলা শুকিয়ে এল। ফটাফট মিথ্যে বলে ফেললাম।
“পানি পড়ে ভিজে গেছে।”
“পানি পড়ল কীভাবে?”
“ধাক্কা লেগেছিল একজনের সাথে।”
“চোখ কোথায় ছিল? আকাশে, না বয়ফ্রেন্ডের কাছে?”
আমি মনে-মনে ভীষণ বিরক্ত হলাম। কী বয়ফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড শুরু করল এই লোক! শুধুমাত্র আব্বুকে বাঘের মতো ভয় পাই বলে। নইলে এই বিপজ্জনক লোকের সামনে ভেজা বিড়াল সাজতে হত না। বাড়িতেও ডিটেকটিভিটি শুরু করেছে। কতক্ষণ জেরা করবে মাবুদ জানে। জামার হাতা ভেজা, এই নিয়েও এত জেরা করা লাগে? কেন ভাই? তোমার কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়েছে তাতে? এখন কি আমায় সব জায়গায় যাওয়ার আগে জ্যোতিষীর কাছে গণনা করে যেতে হবে, যাতে কোনো অঘ’টনের শি’কার না হতে হয়?
“ডিটেকটিভ হয়েছি আর সামান্য পানি আর ম’দের পার্থক্য বুঝব না, এতটাই বোকা মনে হয় আমাকে?”
আমার পিলে চমকে উঠল। চোখ দুটো ছানাবড়া করে ওনার সূক্ষ্ম চোখের দিকে একবার তাকিয়ে পুনরায় মাথানত করলাম। উস-খুস করতে লাগলাম। এবার কী হবে? এই চতুর লোক তো বুঝে গেল। এবার আমি কী জবাব দেবো? হায় আল্লাহ্! আজ আমি শেষ। ইচ্ছে তো করছে মিনহা আপুকে ধরে এনে এই চিতা বাঘের সামনে দাঁড় করিয়ে দিই। আমাকে বিপদে ঠেলে দিয়ে নিজে পগারপার। অকৃতজ্ঞ মেয়ে!
“মুখ খুলবি, না আঙ্কেলকে ফোন লাগাব?”
আমি এবার সাতপাঁচ না ভেবে অসহায় মুখ করে গড়গড় করে বলতে শুরু করলাম,
“হ্যাঁ, ম’দই। মিনহা আপুর ফ্রেন্ডসরা আড্ডায় বসে খাচ্ছিল। আমাকেও খাওয়ার জন্য জোরাজুরি করছিল। তখনই হাতাহাতি করতে গিয়ে জামার হাতায় পড়ে গেছে। পরে মিনহা আপু বারণ করায় আর জোর করেনি।”
তাজ ভাইয়ের চেহারায় হঠাৎ কাঠিন্যের ছাপ পরিলক্ষিত হলো। উনি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে চোয়াল শক্ত করে বললেন,
“মিনহা ম’দ খায়? বাহ্! খুব উন্নতি হয়েছে। ফালতু মেয়ে! আর একদিন যদি দেখেছি ওর সাথে বাইরে বেরোতে, ঠ্যাং ভে’ঙে ঘরে বসিয়ে রাখব। মাইন্ড ইট। ওর ফ্রেন্ড সার্কেলে ছেলে কজন?”
আমি এবার কেঁপে উঠলাম। ঢোক গিলে কোনোরকমে উত্তর দিলাম,
“যার জন্মদিন ছিল সে ছাড়া সবাই ছেলে।”
“কজন?”
“পাঁচজন।”
“আর কখনও যাবি ওর সাথে?”
আমি ডানে-বায়ে মাথা নাড়লাম। উনি কটাক্ষ করে বললেন,
“কেন, যাবি না কেন? আরও যাস। ড্রিংকস করা শিখে স্মার্ট হতে পারবি। আজও একটু ট্রাই করে আসতি। মিনহার বন্ধুগুলো হৈ-হৈ করে সাহস জোগাত। মজার ব্যাপার হত না?”
তাজ ভাই আবার চুপ মে’রে রইলেন। কী এক বিপদে পড়লাম রে বাবা! এই মিনহা আপুর আজকের কাণ্ড দেখার পর এমনিতেই তার সাথে কোথাও যাওয়ার শখ মিটে গেছে। তার ওপর আবার তাজ ভাইয়ের খ্যাঁকখ্যাঁক। আজ সন্ধ্যায় গেলাম মিনহা আপুর অনুরোধে তার সাথে তার বান্ধবীর জন্মদিনে। জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান বেশ ভালোই কাটছিল। আনন্দ করে সবাই খাওয়া-দাওয়া করল। সবশেষে মিনহা আপুর বান্ধবী সব বন্ধুদের নিয়ে গেল নিজের রুমে। ভাবলাম নিরিবিলি সময় কাটাবে। ওমা! তারা দেখি ম’দের আসর বসিয়েছে। ঘৃণায় তখনই আমার ইচ্ছে হচ্ছিল ওখান থেকে বেরিয়ে আসি। কিন্তু কিছু চিনি না বলে সাহস জুগিয়ে উঠতে পারিনি। মিনহা আপু আমার একটা কথাও শোনেনি। বাধ্য হয়েই আমি দূরে দাঁড়িয়ে ওদের ম’দ খাওয়া দেখেছি। ম’দ খেতে-খেতে মিনহা আপুর বন্ধুগুলো আমার দিকে তাকিয়ে চাপা স্বরে মিনহা আপুর সাথে কিছু বলাবলি করছিল। সেই সময়টা অজানা শঙ্কায় আমার বুকের ভেতর কাঁপছিল। তবে মিনহা আপু কী সব বলতেই ছেলেগুলো আমার থেকে মনোযোগ সরিয়ে ম’দ খাওয়ায় মত্ত হয় দেখে আমি বাড়ি ফেরার জন্য অস্থির হয়ে উঠি। মাঝে আবার মিনহা আপুর বান্ধবীটা আমাকে মদ খাওয়ানোর জন্য জোরাজুরি করল। আমি খাব না বলে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য হাতাহাতি করেছি। ফলস্বরূপ সব মদ এসে পড়ল আমার জামার হাতায়। এখন দোষ না করেও সেই আমাকেই ধমক শুনতে হচ্ছে। ধুর, ধুর! ফাটা কপাল আমার! তবু যেন আব্বুর কানে না যায়। তাজ ভাই খুব ঠান্ডা গলায় বললেন,
“মিনহা এই পরিবেশে অভ্যস্ত। ও যা অনায়াসে করতে পারবে তুই তা পারবি না। সংকোচ বোধ করবি, ভয় পাবি। কথায় আছে না, সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে? মিনহার পাল্লায় পড়ে তুই কোনো ভুল করে বসলে তা কিন্তু আর শোধরাতে পারবি না। কারণ তোর বাপ তখন আঙুলটা আমাদের দিকেই তুলবে। বলবে আমরা দেখে রাখিনি। তার মেয়েকে যার-তার সাথে বিপথে ছেড়ে দিয়েছি। কিংবা তোকেই দোষারোপ করবে। তোর বাপ ক্ষেপলে তার ফল কী হবে তা নিশ্চয়ই বলে বুঝাতে হবে না? বাসায় মিনহার সাথে সময় কা’টা, যা ইচ্ছে কর। কিন্তু ভুল করেও আর বাইরে যাওয়ার কথা চিন্তা করবি না। আমি কিন্তু এক কথা দ্বিতীয়বার আর রিপিট করব না। মনে থাকবে?”
আমি বাধ্য মেয়ের মতো ওপর-নিচে মাথা ঝাঁকালাম। উনি আমার সামনে থেকে সরে গিয়ে ধপ করে সোফায় বসে পড়লেন। অলস ভঙ্গিতে আড়মোড়া ভেঙে বললেন,
“ফ্রেশ হয়ে এসে এক কাপ চা করে নিয়ে আয় তো।”
আমি কপাল কুঁচকে তাকালাম। এই রাত-বিরেতে আমাকে দিয়ে চা করাবে? এখন তো রান্নাঘরে ঢুকতেই ইচ্ছে করছে না। হাত-পা দুর্বল লাগছে। বিছানাটা বড়ো টানছে। অন্য সময় হলে মুখের ওপর ‘না’ বলা যেত। কিন্তু এতগুলো ঝাড়ি শোনার পর ত্যাড়ামি করা মানে খাল কে’টে কুমির ডেকে এনে হাসিমুখে বলা, এসো বাবাজি। আমার ঘাড়ে চেপে বসো। এই লোককে বিশ্বাস নেই। আমার অনিচ্ছুক মুখের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে তাজ ভাই বললেন,
“এত কথা শুনেও মন ভরেনি? প্রথম থেকে আবার শুরু করব, ম্যাম?”
আমি চোখ বড়ো করে উলটো দিক ঘুরে রুমের দিকে হাঁটা দিলাম। আম্মির রুমে উঁকি মেরে দেখলাম আম্মি ঘুমে অচেতন। আলগোছে নিজের রুমে এসে বিছানার দিকে তাকাতেই চেঁচিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করল। হায়রে আমার সাধের ঘুম! জেমি হাত-পা ছড়িয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ওর ঘুমের ধরন দেখে হেসে ফেললাম। এগিয়ে গিয়ে গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করে দিলাম। ঘুমের মধ্যেই ও একটু নড়ে উঠল। অলস শরীরটা টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে কোনোরকমে ফ্রেশ হয়ে এলাম। তারপর ছুটলাম মহারাজের আজ্ঞা পালনে। রান্নাঘর থেকে শুনতে পেলাম উনি কারো সাথে কথা বলছেন; তবে স্পষ্ট বুঝতে পারছি না। ঝটপট চা করে কাপে ঢেলে সোজা ড্রয়িংরুমে চলে গেলাম। তাজ ভাই হাসিমুখে ল্যাপটপে তাকিয়ে আছেন। এবার শুনলাম উনি ইংরেজিতে বিরতিহীন বকবক করছেন। এজন্যই রান্নাঘর থেকে বুঝতে পারিনি। ভাবলাম হয়তো বন্ধু-বান্ধবের সাথে কথা বলছেন। কিন্তু ওপাশ থেকে নারী কন্ঠ ভেসে আসতেই আমার দৃষ্টি সন্দিহান হলো। মেয়েটাও ইংরেজিতে কথা বলছে। উঁকি দিয়ে দেখতে ইচ্ছে করছিল; কিন্তু আরেক দফা ঝাড়ি শোনার ভয়ে ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখলাম। উনি তো আমার দিকে তাকাচ্ছেনই না। কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে শেষে বিরক্ত হয়ে আমি চায়ের কাপ এগিয়ে ধরলাম। তাজ ভাই ল্যাপটপে চোখ রেখেই আমার হাত থেকে চায়ের কাপ নিলেন। আমার সন্দেহ এবার আরও একগুণ বাড়ল। এমন কোন মেয়ের সাথে কথা বলছে যে, পাশে দাঁড়ানো আস্ত একটা মানুষের দিকে তাকানোর সময়টুকুও পাচ্ছে না? হঠাৎ অনুভব করলাম আমার আসলে রাগ লাগছে। চাপা রাগ। এর কোনো মানে হয়? উনি এমন দশটা মেয়ের সাথে কথা বললেই আমার কী যায়-আসে? যায়-আসে বুঝি? নইলে এই অযথা রাগের মানে কী? ওনার প্রতি সুপ্ত অনুভূতি সেই পাঁচ বছর আগেই অনুভব করার সাথে সাথেই মাটিচাপা দিয়েছিলাম। পুরোনো অনুভুতির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে না কি? কী জানি! না বাবা, আমি আর ওসবে নেই। এই ব’জ্জাত লোক টের পেলেই হাসিঠাট্টা করে অপমানের মাত্রা বাড়াবে। একটা ভুল চিরকুটের জের ধরে যা কথা শোনাল, হাহ্! গোষ্ঠী কিলাই এসব ফালতু অনুভূতির। মাথা থেকে এসব ঝাড়তে চলে যাওয়া ধরতেই মুহুর্তের মধ্যে হাতে তীব্র টান অনুভব করলাম। ফলস্বরূপ হোঁচট খেয়ে গিয়ে ধপাস করে পড়লাম তাজ ভাইয়ের পাশে। আকস্মিক ঘটনায় আমার হৃদপিন্ড লাফিয়ে উঠল। চোখ দুটো ছানাবড়া করে বড়োসড়ো এক দম নিয়ে আমি হতভম্ব দৃষ্টিতে তাজ ভাইয়ের দিকে তাকালাম। আ মর! মহাশয় নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দিব্যি হেসে-হেসে কথা বলে চলেছেন। ভয়ানক কাণ্ড ঘটিয়ে ভাবটা এই যে, তেমন কিছুই হয়নি। ল্যাপটপের স্ক্রিনে এতক্ষণ ধরে কথা বলা মেয়েটার ওপর চোখ পড়তেই আমার মনোযোগ সেদিকে ঘুরে গেল। দেখেই বুঝলাম মেয়েটা বিদেশিনী। কী সুন্দর দেখতে! শেতাংগো শরীর, মাঝারি আকারের চোখ দুটোতে নীলচে চোখের মণি, কাঁধ অবধি সোনালি চুল। মেয়েটার পরনে একটা হলুদ টি-শার্ট। প্রাকৃতিক সুন্দরী বটে! এটুকু নিশ্চিতভাবে বলাই যায়, মেয়েটা হয়তো সুইডেনের নাগরিক। আচ্ছা, তাহলে সুইডেনে গিয়েই নিজের বিলাই মার্কা চেহারা দিয়ে সুন্দরী বালিকা পটিয়ে বসে আছে। ওয়াহ্, ব্যাটা বাট’পার! নিজের দেশে কি মেয়ের আকাল পড়েছে? মনে-মনে কয়েক দফা বকুনি দিতেই তাজ ভাইয়ের মুখে আমার পুরো নাম শুনে কান খাড়া করলাম। মেয়েটার সাথে আমার ব্যাপারে কথা বলছেন উনি। কিন্তু বিধিবাম! এই রকেটের গতিতে চলমান প্যাঁচাল তো আমি এক লাইন না বুঝতেই, আরেক লাইন ঘেঁটে ফেলি। জীবনে প্রথমবারের মতো ইংরেজি সাবজেক্ট হেলা করার জন্য বড়ো আফসোস হলো। জরুরী ভিত্তিতে ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি হতে ইচ্ছে করল। পরক্ষণেই আবার তাজ ভাইয়ের ওপর মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। আরে ভাই তুই বাঙালি, বাংলায় মধুর সুরে কথা বলবি। তা না। তুই কিসের ইংরেজদের মতো প্যাঁক-প্যাঁক করিস! যত্তসব ফাও প্যাঁচাল! এরমধ্যে মেয়েটা মিষ্টি হাসি মুখে ঝুলিয়ে কয়েকটা সহজ শব্দ উচ্চারণ করল, সেসব বুঝতে আমার মোটেও অসুবিধা হলো না। এই যেমন; কিউট, আডোরেবল, বিউটি কুইন। এমা! এই মেয়ে তো আমার প্রশংসা করছে। নিজে যেসব প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য, সেসব কি না আমাকে বলছে! মেয়েটার মুখের মিষ্টি হাসিটাই জানান দেয় সে কতটা মিশুক আর সুন্দর স্বভাবের মানুষ। আমার খুব ইচ্ছে জাগল মেয়েটার সাথে পরিচিত হই। কিন্তু হায়! এই মেয়ে তো আমার বাংলা ভাষার ব-ও বুঝবে না। অপরদিকে আমিও এর সাথে সমান তালে ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারব না। তাজ ভাইয়ের কথা বলা শেষ। উনি ল্যাপটপ বন্ধ করতেই আমার খুব মন খারাপ হলো। ইশ্! মেয়েটার সাথে আর কথা বলা হলো না। ওনাকে কি জিজ্ঞেস করব, মেয়েটা কে? এই লোক যদি আবার সোজা প্রশ্নটা বাঁকা করে ফেলে? নিশ্চয়তা নেই। করতেই পারে। আমাকে অবাক করে দিয়ে তাজ ভাই বাঁ হাতে চায়ের কাপটা তুলে নিয়ে বলে উঠলেন,
“আমার ফ্রেন্ড ন্যান্সি। সুইডেনে পরিচয়। ওরা ওখানকার স্থানীয় মানুষ। ও যেমন মিশুক, ওর পরিবারও তেমনি। শ্রেয়ান আর আমার সাথে বেশ ভালো ফ্রেন্ডশীপ ছিল। আমরা দেশে চলে আসায় মন খারাপ করেছে। এখন বলছে বিয়ের পর হাজবেন্ডকে নিয়ে বাংলাদেশে আসবে। বিয়ের আগে না কি হবু বরের সাথে কম্প্রোমাইজ করে নিবে বিয়ের পর বাংলাদেশে নিয়ে আসবে কি না। কনফার্ম হলে বিয়ে কনফার্ম, নইলে ক্যান্সেল।”
উনি হাসছেন। আমি আহাম্মকের মতো ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। উনি কৈফিয়ত দেওয়ার মতো মহামানব নন। আর আমার কাছে তো প্রশ্নই ওঠে না। তবে? উনি চায়ের কাপে চুমুক দিতেই আমার হুঁশ হলো এখনও ওনার হাতের মুঠোয় আমার হাতটা বন্দী। খেয়াল হতেই আমি ঝট করে হাত সরিয়ে নিলাম। মনে মনে ঈষৎ লজ্জাও পেলাম।
“আমার ঘুম আসছে” বলেই উঠে পড়লাম। তাজ ভাই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন,
“মাঝে-মাঝে তোর এই ফালতু চা করে খাওয়াস তো। রোজ-রোজ মজাদার চা খেলে চায়ের টেস্ট গোলমেলে লাগে। মাঝে-মাঝে তোর হাতের এই অখাদ্য গলধঃকরন করে চায়ের আসল সাদটার গুরুত্ব অনুধাবন করতে চাই। বোঝা গেছে?”
বিরক্তিতে আমার গা রি-রি করে উঠল। আমার চা না কি অখাদ্য। এই রাতবিরেতে এত কষ্ট করে চা করে দিলাম, ফলস্বরূপ নবাব দিলেন ফা’লতু রিভিউ। বলি আমার চা অখাদ্য হলে মাঝেমাঝে খাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করছিস কেন রে ভাই? এতই যখন চায়ের গুরুত্ব অনুধাবন করার সাধ, তো যা না, গিয়ে ওই বাসার মুখোমুখি দোকানের আবুল চাচার আবুল মার্কা চা নামক খালের পানি খেয়ে আয়। জনমের তরে চা খাওয়ার সাধ মিটে যাবে। ভেতরের রাগের গোলা আচমকা ফেটে গেল। আমি উলটো দিকে পা বাড়াতে-বাড়াতে বলে বসলাম,
“চাওয়ালী মেয়ে দেখে বিয়ে করে সাধ মিটান। আমি পারব না।”
কথাটা বলে আর ভুল করেও পেছন ফিরে তাকালাম না। ভোঁ দৌড় দিয়ে রুমে ঢুকেই ঠা’স করে দরজা লাগালাম। এবার বুঝি একটু শান্তি লাগছে, আহ্!

________________

আজ শ্রেয়ান ভাইয়াকে আম্মি দাওয়াত করে বাসায় এনেছে। ওনার পুরো পরিবারকেই দাওয়াত করেছিল। কিন্তু তারা কোনো এক কারণে আসতে পারবেন না জানিয়েছেন। ঠিক দুপুরবেলাতেই শ্রেয়ান ভাইয়া এসে বাসায় উপস্থিত হয়েছেন। ফল, মিষ্টির সাথে হাতে করে একগাদা চকলেটও নিয়ে এসেছেন। সেগুলো আমার হাতে গুঁজে দিতেই আমি খুশির ঠেলায় ওনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে দিলাম। আহা! এমন মেহমান রোজ-রোজ আসুক। কী সুন্দর মন! আম্মি টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে, আর তাজ ভাই গোসল করছেন। বাধ্য হয়েই আমাকে শ্রেয়ান ভাইয়ার সাথে গল্প জুড়ে বসতে হয়েছে। আমি অবশ্য খুব বেশি কথা বলছি না। ওনার বিরতিহীন বকবকের ফাঁক-ফোকরে হুঁ, হা করে তাল মিলানোর চেষ্টা করছি। অপরিচিত মানুষের সামনে আমি বলার মতো কথা খুঁজে পাই না। অস্বস্তিও লাগে বটে! তবে শ্রেয়ান ভাইয়া অন্যরকম ছেলে। এমনভাবে কথা বলেন, যেন কত বছরের পরিচিত। কী সুন্দর হাসিমুখে সব কথা অকপটে বলে চলেছেন! ওনার কথায় মোটেও বিরক্তি আসে না। কিছু সময়ের ব্যবধানেই আমি ওনার গল্পের মনোযোগী শ্রোতা হয়ে গেলাম। কিন্তু তাজ ভাই এসে ব্যাঘাত ঘটিয়ে দিলেন। শ্রেয়ান ভাইয়াকে টেনেটুনে খাবার টেবিলে নিয়ে গেলেন। ওনারা দুজন পাশাপাশি চেয়ারে বসলেন। আমি বসলাম বিপরীত পাশের চেয়ারে। আম্মি খাবার পরিবেশন করে আমার পাশের চেয়ারে বসে পড়েছে। খেতে বসেও শ্রেয়ান ভাইয়ার মুখ থামাথামির নাম নিল না। তার সাথে এবার আম্মিও যোগদান করল। ফলস্বরূপ শ্রেয়ান ভাইয়ার উৎসাহ দ্বিগুণ বাড়ল। আম্মির সাথে আমি নিজেও মাঝেমধ্যে তাল মিলালাম। শ্রেয়ান ভাইয়ার সাথে আড্ডা যখন বেশ জমে উঠেছে, ঠিক তখনই খাওয়ার মাঝপথে হঠাৎ অনুভব করলাম আমার দু’পা আটকা পড়েছে। ভীষণভাবে চমকে উঠে আমি চুপ মে’রে গেলাম। সতর্ক চোখে তাজ ভাই আর শ্রেয়ান ভাইয়ার মুখে চোখ বোলালাম। দুজনেই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে খাবার খাচ্ছেন। সবার অগোচরে আমি টেবিলের নিচে তাকাতেই চোখ দুটো রসগোল্লার আকার ধারণ করল। বজ্জাত ব্যাটা নিজের পা দিয়ে আমার পা দুটো চিপকে ধরেছে। পায়ে হালকা ব্যথাও পাচ্ছি। এ আবার কেমন কাণ্ড, আজিব! চেষ্টা করেও ওনার পাথরের মতো শক্ত পায়ের সাথে পেরে উঠলাম না। শ্রেয়ান ভাইয়া প্রশ্ন করে বসলেন,
“তুমি চুপ হয়ে গেলে কেন, ইলোমিলো? কথা বলতে ভালো লাগছে না?”
আমি জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললাম,
“তেমন কিছু না, এমনি।”
সঙ্গে-সঙ্গে তাজ ভাই আলগোছে আমার পা জোড়া মুক্ত করে দিয়ে বললেন,
“খাওয়ার সময় বেশি কথা বলা ভালো না ভেবে চুপ হয়ে গেছে। চুপ থাকুক, তা-ই ভালো। তুই তোর ক্যাসেট চালিয়ে যা।”
শ্রেয়ান ভাইয়া পুনরায় শুরু করলেন। বাকিটা সময় আমি আর টু শব্দটিও করলাম না। তাজ ভাইয়ের এমন অদ্ভুত আচরণে মাথার মধ্যে গোলমাল পাকিয়ে বসে আছি। খাওয়া শেষ হলে আম্মি থালা-বাটি নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। তাজ ভাই হাত ধুয়ে তোয়ালেতে হাত মুছছেন। শ্রেয়ান ভাইয়া বেসিনে হাত ধুচ্ছেন। আমি সবেমাত্র চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছি। আচমকা তাজ ভাই এগিয়ে এসে আমার চুলের মুঠি ধরে দিলেন এক হেঁচকা টান। তীব্র ব্যথায় আমি মুখ কুঁচকে ফেললাম। চোখের কোণে একটুখানি পানিও জমে গেল। উনি আমাকে কিছু বলার সুযোগও দিলেন না। ওনার সেই বিখ্যাত হাসি মুখে ঝুলিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে হেলেদুলে চলে যেতে-যেতে গুনগুনিয়ে গান ধরলেন।

“চাই না মেয়ে তুমি অন্য কারো হও,
পাবে না কেউ তোমাকে তুমি কারো নও…”

ব্যস, গান শেষ। এরপরই আবার অন্য গানে টপকে গিয়ে রুমে ঢুকে পড়লেন। রাগে-দুঃখে আমি ভেতরে-ভেতরে ফুঁসে উঠলাম। শ্রেয়ান ভাইয়া সামনে বলে মুখ বুজে রাগটা গিলে ফেলতে হলো। তাজ ভাইয়ের কন্ঠ নিঃসন্দেহে সুন্দর জেনেও, রাগ ঝাড়তে চোয়াল শক্ত করে অযথা বিড়বিড় করে বকতে লাগলাম,
“ইবলিশের খালাতো ভাই। হিরো আলমের শিষ্য কোথাকার! তোর কপালে রানু মন্ডলের মতো বউ জুটবে। মিলিয়ে নিস, ব’জ্জাত। গানের সাধ একেবারে মিটিয়ে দিবে। এই আমি অভিশাপ দিলাম, হুঁহ্।”

চলবে, ইন শা আল্লাহ্।