মনোহারিণী পর্ব-৬+৭

0
256

#মনোহারিণী
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি

৬.
আমার কাছে শুক্রবারের বিশেষত্ব মানেই আম্মির হাতের মুখরোচক খাবারের সমারোহ। প্রত্যেক শুক্রবারে আম্মি আমার কিংবা তার পছন্দের ডিশ রান্না করে। এইদিনে আমার বিচরণ থাকে রান্নাঘরের চারপাশে। আজও শুক্রবার, আম্মির স্পেশাল ডিশ রান্নার দিন। সকালে নাশতা করতে বসেই আম্মি জিজ্ঞেস করল আজ কী রান্না করবে। আগের সময় হলে উত্তরটা কেবল আমাকেই দিতে হত। কিন্তু এখন যে আরও একজন নাক গলানো মানব আছেন। আমি এককথায় বলে দিলাম আজ বিরিয়ানি চাই। কিন্তু সামনে বসে গোগ্রাসে খাবার গলধঃকরন করা মহামানবের তো আবার আমার কথা সমর্থন করলে দুনিয়া উলটে যাবে। তিনি আয়েস করে পরোটা চিবোতে-চিবোতে ঘোষণা করলেন, আজ খিচুড়ি রান্না হবে। সাথে গোরুর গোশত ভুনা, বেগুন ভাজা আর শুঁটকি ভর্তা। এর বাইরে কোনো ডিশ রান্না হবে না। সঙ্গে-সঙ্গে আমি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বললাম,
“আমি যেহেতু আগে বলেছি, সেহেতু বিরিয়ানি রান্না হবে।”
তাজ ভাই ভ্রু দ্বয়ের মাঝে প্রগাঢ় ভাঁজ ফেলে বললেন,
“তুই বললেই রান্না হবে? এতদিন নিজের পছন্দমতো গিলেছিস না? এখন থেকে মুখ বন্ধ রাখবি। শুক্রবারের ডিশ আমি ঠিক করব।”
“আপনি কেন ঠিক করবেন? খাবেন কি আপনি একা? সবসময় আমি ঠিক করি, আজও আমি করব।”
“তোর পছন্দের ডিশ খায় মানুষ? জানিস তো শুধু বিরিয়ানি, বিরিয়ানি করতে। গর্দভ!” কটাক্ষ করে বললেন তাজ ভাই।
আমি আম্মির দিকে তাকিয়ে বিচারের সুরে বললাম,
“আম্মি, শুনলে কী বলল?”
আম্মি বোকা-বোকা চাহনিতে একবার তাজ ভাই, আরেকবার আমার দিকে তাকাচ্ছে। তাজ ভাই সেই সুযোগ লুফে নিয়ে অতি কোমল কন্ঠে বললেন,
“আম্মি, টানা পাঁচ বছর কিন্তু আমি দূরে ছিলাম। তোমার হাতের রান্না কত মিস করেছি তা তো জানোই। তোমার কি উচিত না আমার এই পাঁচ বছরের দুঃখ ঘুচিয়ে দেওয়া? সত্যি করে বলো তো, উচিত না?”
আম্মির দুঃখী‌-দুঃখী মুখ দেখেই বুঝা গেল সে এখন ছেলের পাঁচ বছরের অনুপস্থিতির শোক স্মরণ করছে। আমার দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলল,
“তোমাকে না হয় কাল বিরিয়ানি করে দিব। ছেলেটা যখন চাইছে আজ খিচুড়িই রান্না করি।”
তাজ ভাই দাঁত কেলিয়ে হেসে বললেন,
“এই তো আমার ইন্টেলিজেন্ট আম্মি।”
আমি গাল ফুলিয়ে বললাম,
“ছেলেকে পেয়ে এখন আমার কথার দাম নেই, বুঝেছি।”
“এভাবে বলছো কেন, আম্মু? আমি দুটো ডিশ একসাথে রান্না করতে পারি, কিন্তু খাওয়ার সময় দেখবে তোমাদের আর কোনোটাই খেতে ইচ্ছে করবে না। একটা ডিশ রান্না করলে খেতে ভালো লাগবে।”
“আচ্ছা তুমিই বলো, বিরিয়ানির কথা আমি আগে বলেছি না?”
আম্মি ওপর-নিচে মাথা ঝাঁকাল। আমি বললাম,
“তাহলে? যে আগে বলেছে তাকে সমর্থন করা উচিত না তোমার?”
আম্মি দারুণ কনফিউশন নিয়ে চুপ মে’রে বসে রইল। তাজ ভাই আবার দৃঢ় গলায় ঘোষণা করে বসলেন,
“আমার দাবি না মানলে আজ আমি বাড়িতে খাবই না। প্রয়োজনে বাইরে খাব।”
আমি সরু চোখে তাকিয়ে বললাম,
“অনশন করলেও আপনার দাবি মানা হবে না।”
“আমার দাবি মানার তুই কে রে? যা ভাগ এখান থেকে। আজ খিচুড়ি রান্না হবে মানে খিচুড়িই রান্না হবে। তুই না খেলে নিজে নিশ্চিন্তে অনশন করতে পারিস। যাহ্, হুশশশ।”
“আপনি বললেই হলো? আম্মি বিরিয়ানিই করবে।”
“নো, খিচুড়ি।”
“বিরিয়ানি।”
“বললাম না খিচুড়ি?”
“বললাম না বিরিয়ানি?”
“তোর বিরিয়ানির গোষ্ঠী কি’লাই, বে’য়াদব।”
আমাদের তর্কযুদ্ধের এক পর্যায়ে আম্মি চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ল। দ্রুতবেগে ওঠার দরুন চেয়ারের তীব্র শব্দে আমি আর তাজ ভাই একইসঙ্গে চুপ মে’রে আম্মির দিকে চাইলাম। আম্মি বিরক্তির সুরে বলল,
“নো বিরিয়ানি, নো খিচুড়ি। আজকে সোজাসুজি ডাল-ভাত খাওয়াব দুটোকে।”
তারপর আমাদের কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দ্রুত পায়ে রান্নাঘরে যেতে-যেতে হাঁক ছাড়ল,
“কুলসুম, চুলায় ডাল-ভাত বসাও।”
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। তাজ ভাইকে দেখলাম ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে খাবার মুখে তুলছেন, যেন এতক্ষণ যা হয়েছে তা ওনার অজানা। আহা, কী ভোলাভালা বাঁদর একটা! উনি খেতে-খেতে উঁচু গলায় ডেকে বললেন,
“আম্মি, শোনো না।”
রান্নাঘর থেকে আম্মি কড়া গলায় বলে উঠল,
“আর কিচ্ছু শুনছি না। ডাল-ভাত বসিয়েছি। তোদের খিচুড়ি-বিরিয়ানির সাধ মেটাচ্ছি, দাঁড়া।”
উনি হতাশ চোখে আমার দিকে তাকালেন। আমি গোমড়া মুখে ওনার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। উনি তাকাতেই শক্ত মুখে বলে উঠলাম,
“সব আপনার দোষ। খান এখন মজা করে খিচুড়ি। ভাবলাম আজ তৃপ্তি করে বিরিয়ানি খাব, দিলো বারোটা বাজিয়ে।”
উনি সকৌতুকে বললেন,
“কেন রে? কত বছরের অভুক্ত তুই? আহারে, ক্ষুধার্ত বেচারি! তোকে একটা দারুণ আইডিয়া দিই, শোন। ওই স্কুলের পাশে একটা মসজিদ আছে না? ওখানে প্রতি শুক্রবার সবাইকে এক প্যাকেট করে বিরিয়ানি বিলি করা হয়। তুই বরং প্রতি শুক্রবারে ওখানে চলে যাস। হাত পাততে লজ্জা পেলে সমস্যা নেই। আমি বলে রাখব, এখন থেকে আমার এক পরিচিত ভিক্ষুক আসবে। তাকে দয়া করে এক প্যাকেট বিরিয়ানি দিয়ে দিবেন। খরচ, খাটুনি দুটোই বেঁচে যাবে, আর ফ্রিতে বিরিয়ানিও খেতে পারবি। ওকে, এবার হাত জোর করে কৃতজ্ঞতা জানা আমার আইডিয়ার জন্য।”
আমি তেতে উঠে বললাম,
“আপনার শখ থাকলে আপনি গিয়ে ভিক্ষা করুন। দরকার পড়লে পুরো ঢাকা শহরের সব মসজিদে ঘুরে-ঘুরে ভিক্ষা করুন। খিচুড়ি আবার সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। আপনার তো আর লজ্জা-শরমের বালাই নেই। সহজেই খিচুড়ি খাওয়ার সাধ মেটাতে পারবেন।”
তাজ ভাই কিছু বলতে উদ্যত হতেই রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়াল আম্মি। কপাল কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে বলল,
“শালিকের মতো ঝগড়া করছিস কেন তোরা? তাড়াতাড়ি সর এখান থেকে।”
তাজ ভাই দায়সারাভাবে বললেন,
“এই মহিলাকে সরতে বলো, দেখবে চারপাশ শান্ত। এমনিতেও আমার এখন এর সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই। আসলে মহিলা মানুষ ঝগড়া ছাড়া টিকতে পারে না। ঝগড়া হচ্ছে এদের টিকে থাকার অ’স্ত্র।”
আম্মি বাজেভাবে কপাল কুঁচকে বলল,
“কী বললি তুই? মহিলা মানুষ ঝগড়া ছাড়া টিকতে পারে না?”
তাজ ভাই মেকি হেসে বললেন,
“ওপস্! তুমিও তো মহিলা, ভুলে গিয়েছিলাম। রেগো না আম্মি, তোমাকে বলিনি। তুমি হচ্ছ দ্য গ্রেট ডিটেকটিভ আহনাফ তাজওয়ারের গ্রেট আম্মি। তোমাকে এমন কথা বলা সাজে? এ বাসায় তুমি ছাড়াও কিন্তু মহিলা আছে।”
আম্মি পুনরায় এক ধমক দিয়ে চলে গেল। আমার রাগ তখন উচ্চশিরে।
“আপনি আমাকে মিন করে বললেন? ঝামেলাটা বাঁধিয়েছে কে? আমি? নিজে ঝগড়া করে আমার দোষ দেয়। শ’য়তান লোক।”
“শয়তান আবার লোক হয় কীভাবে রে? শয়তান তোর কানে-কানে বলে গেছে সে লোক? কী সাংঘাতিক! শয়তানের সাথে লাইন হয়ে গেল না কি তোর? এখন থেকে তো তোকে মিসেস শ’য়তান বলে ডাকতে হবে।”
আমি পানি খেতে গিয়েও থেমে গেলাম। পানি খাওয়া আর হলো না। গ্লাসটা শব্দ করে টেবিলে রেখে চোখে-মুখে বিরক্তি নিয়ে উঠে পড়লাম। রুমের দিকে হাঁটা দিতেই তাজ ভাই উঁচু গলায় বললেন,
“এই ভোলাভালা পিচ্চি, এত চালাক হলি কবে রে? ভীতুর ডিমের দেখছি সাহস বেড়েছে। ভাবা যায়! কেমন রেখে গেলাম, আর কেমন পেলাম!”
শেষের বাক্যটা শুনে আমি কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ ফেলে রুমে ঢুকে পড়লাম। আজ সারাদিন আমি দুঃখ বিলাস করব। দুঃখের শিরোনাম, ‘বিরিয়ানির অভাবে ইলোর দুঃখ বিলাস।’ তাজ ভাইয়ের ওপর রাগটা তরতর করে বেড়ে গেল। লোকটা কি আমার সুখ সহ্য করতে পারে না? ইচ্ছে তো করছে হোটেলের উচ্ছিষ্ট খিচুড়ি এনে মুখে পুরে দিতে। খিচুড়ি খাওয়ার সাধ জন্মের মতো মিটে যাবে। জাতীয় খাদক! তাজ ভাইয়ের চেঁচামেচি শুনে আবার বাইরে ছুটে গেলাম। যেতেই উনি ধমকে উঠে বললেন,
“তোর এই বিড়াল সরা, নইলে এক্ষুনি বাইরে ফেলে রেখে আসব। বলেছি না আমার থেকে দূরে রাখতে?”
দেখলাম জেমি ডাইনিং টেবিলের ওপর উঠে বসে আছে। কিছুদূর বসে তাজ ভাইয়ের মুখের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। তাজ ভাই আমার সাথে ধমকে উঠতেই ছোটো করে বলল,
“মিয়াও।”
পরক্ষণেই এক ভয়ানক কাণ্ড ঘটিয়ে বসল। চোখের পলকে তাজ ভাইয়ের প্লেট থেকে ডিমের অমলেটের বাকি অংশ মুখে নিয়েই টেবিল থেকে লাফিয়ে পড়ে ভোঁ দৌড় দিয়ে সোজা রুমে ঢুকে পড়ল। তাজ ভাই আর আমি চোখ বড়ো করে তাকিয়ে রইলাম। পরমুহূর্তেই আমি ফিক করে হেসে ফেললাম। উনি রেগেমেগে আম্মিকে ডেকে বললেন,
“আম্মি, এই বাসা থেকে বিড়াল না তাড়ালে আমি কিন্তু এখানে থাকব না।”
তারপর আমার দিকে তেড়ে এসে বললেন,
“আজকের মধ্যে যদি এই পাজি বিড়াল না তাড়িয়েছিস, তো তোর খবর আছে। তোকেসহ তোর বিড়ালকে ঘাড় ধরে নিয়ে ডিরেক্ট চিড়িয়াখানায় রেখে আসব।”
আমি কপাল কুঁচকালাম। তাজ ভাইয়ের রাগ সপ্ত আকাশ অবধি পৌঁছাতে সাহায্য করে দাঁত কেলিয়ে হেসে রুমের দিকে ছুট লাগালাম। উঁচু গলায় বললাম,
“একদম ঠিক হয়েছে। উচিত শিক্ষা। এই খুশিতে জেমিকে আজ আরও একটা আস্ত অমলেট খাওয়াব।”

আম্মি রান্নাঘর থেকে সরতেই আমি চট করে ঢুকে পড়লাম। কুলসুম আপা উলটো দিকে ঘুরে কাজে ব্যস্ত। মুখটা যথাসম্ভব গম্ভীর করে আমি কিচেন ডেস্কে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ডাকলাম,
“কুলসুম আপা?”
কুলসুম আপা একপলক তাকিয়ে আবার কাজে মনোযোগী হয়ে বললেন,
“জে আফা, কিছু কইবেন?”
“আপনাকে একটা কাজ দিয়েছিলাম। এখনও পর্যন্ত শুরুই করেননি।”
কুলসুম আপা কয়েক মুহূর্ত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে হুট করে আমার দিকে ফিরে দুহাতে চোখ কচলাতে-কচলাতে ভীষণ দুঃখী গলায় বললেন,
“হে দুঃখেই তো আমার কান্দা আইতাছে গো আফা। আফনে একখান কাম দিলেন, হেইহানও করতে পারলাম না। পারমু কেমনে কন তো? ছোডো ভাইজান চলাফেরা করে ফুরুত-ফারুত। কোন বেলায় কই থাহে বুইঝা উঠতে পারি না। এই দেহি ঘরে, আবার চোক্কের পলকে দেহি ফুরুত কইরা এইহানে-ওইহানে যায়গা। আপনের এই কাম করতে গেলে তো আমার হাতের কাম ফালাই রাইখা ভাইজানের পিছনে দৌড়াইতে হইব।হেরপর বড়ো আফা আমারে কামের থিকাই বাতিল কইরা দিবো। ছোডো ভাইজানেরে পাহাড়া দিতে হইলে আমার এই বাসার কাম ছাইড়া পাহারাদারের কাম করতে হইব গো আফা।”
কুলসুম আপা থামাথামির নাম নিচ্ছেন না। চোখ ঘষাঘষি করে লাল করে ফেলেছেন। আমি হতাশ চোখে তাকিয়ে থেকে বাঁধা দিয়ে বললাম,
“হয়েছে, থামেন এবার, বুঝেছি। আপনি বাসার কাজটাই করেন, আমার কাজ করতে হবে না।”
“আপনে কি গোসসা করলেন, আফা? বিশ্বাস করেন, এই মরা মাডির উপ্রে খাড়াইয়া কইতাছি, আপনে অন্য কোনো কাম দিলে আমি ঠিক-ঠিক সময়মতো কইরা দিতাম।”
“রাগ করিনি। আর আপনি আমার সাথে ঢপ মার’বেন কম। আমি নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছি আপনি কাঁদছেন না, পেঁয়াজ কা’টছেন বলে চোখ জ্বালা করছে। এমন ঢপ আবার গিয়ে আপনার ডিটেকটিভ ছোডো ভাইজানের সাথে মাই’রেন না।”
কুলসুম আপা ধরা খেয়ে মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে ফেললেন। আমার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে খুব ব্যস্ত ভঙ্গিতে কাজে হাত লাগালেন। আমি তা দেখে পুনরায় হতাশ নিঃশ্বাস ফেললাম। ওভার অ্যাক্টিং শুধু এদের গোষ্টিতেই সীমাবদ্ধ নয়, কাজের লোকরাও এদের সাথে সমান তালে সংক্রমিত। কবে না আবার দেখতে হয় এই ওভার অ্যাক্টিংয়ের দলকে সিনেমার পরিচালক ডেকে বসেছে। উদ্ধার করো খোদা।

দুপুরে জুম্মান ভাইয়া এলেন তাজ ভাইকে ডাকতে। জুম্মার নামাজের জন্য তারা মসজিদে যাবেন। এসেই গলা ছেড়ে তাজ ভাইকে ডাকলেন। পাঞ্জাবির হাতা গুটাতে-গুটাতে আমাকে বললেন,
“ইলো, এই পাঞ্জাবিটা কেমন হয়েছে রে?”
আমি সূক্ষ্ম চোখে দেখলাম। বুকের কাছে সোনালী সুতার হালকা নকশা করা সাদা পাঞ্জাবিটা জুম্মান ভাইয়ার হলদেটে ফরসা শরীরে দারুণ মানিয়েছে। আমি একগাল হেসে বললাম,
“খুব সুন্দর হয়েছে। নতুন কিনেছেন?”
“ধুর! আমি আবার পাঞ্জাবি কিনি কবে? তাজ ভাই গতকাল নিজের জন্য কিনতে গিয়েছিল। আমি সাথে ছিলাম বলে আমার জন্যও কিনেছে। আমার ভাল্লাগে না এসব পাঞ্জাবি।”
আমি ভ্রুকুটি করলাম। প্রতিবাদ করে বললাম,
“আপনার উচিত মেয়েদের মতো শাড়ি পরা।”
“কেন রে?”
“এই যে, ছেলে হয়ে পাঞ্জাবি পছন্দ করেন না। মেয়েদের যেমন শাড়িতে সৌন্দর্য বাড়ে, ছেলেদের তেমন পাঞ্জাবিতে। পাঞ্জাবি হচ্ছে ছেলেদের সবচেয়ে সুন্দর পোশাক। আপনার এক্স গার্লফ্রেন্ড আলট্রা মডার্ন ছিল বলে পাঞ্জাবির মর্ম বুঝে উঠতে পারেননি বোধ হয়। আফসোস, ভাইয়া।”
শেষের কথাটা বলেই আমি শব্দ তুলে হেসে উঠলাম। জুম্মান ভাইয়া বিরক্ত হয়ে ঠোঁট উলটে বললেন,
“আজাইরা কথা। ব্রো, তুমি কি একমত?”
জুম্মান ভাইয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে আমি পেছন ফিরে তাকালাম। তাজ ভাই কখন এসে দাঁড়িয়েছে টেরও পাইনি। উনি আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে মুচকি হেসে উত্তর দিলেন,
“হয়তো।”
সঙ্গে-সঙ্গে জুম্মান ভাইয়া দ্বিমত পোষণ করলেন। কারণ তাজ ভাই নিজেও নামাজ ছাড়া পাঞ্জাবি পড়ে উলটে ফেলেন না। সেই হিসেবে ওনার উচিত দ্বিমত করা। তাজ ভাইয়ের পরনেও জুম্মান ভাইয়ার মতো একই রকমের পাঞ্জাবি। আমি কিছু সময় দেখেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম। পাঞ্জাবির সৌন্দর্যের প্রশংসা করা উচিত, না পাঞ্জাবি পরিহিত মানবের? প্রশংসা বিভ্রাটে পড়ে দারুণ বিরক্ত হলাম। আপনমনে শব্দহীন বিড়বিড় করতে-করতে দ্রুত সরে গেলাম। পুরুষ মানুষ মেয়েদের মতো বাড়াবাড়ি সুন্দর কেন হতে হবে? একটু কম সুন্দর হলে বুঝি সুন্দরী সুইডিশ রমণী হাতছাড়া হয়ে যেত? সাদা বিলাই কোথাকার। খালি মেয়ে পটানোর ধান্দা।

আজ সন্ধ্যায় প্রতিদিনকার মতো আড্ডা জমেনি। মিনহা আপুকে না কি তাজ ভাই সাংঘাতিক রকমের বকা দিয়েছেন। এই নিয়ে মিনহা আপু আমার সাথে রেগে আছে। তার এক কথা, আমি বললাম কেন তাজ ভাইকে। আমি যেচে কথা বলতে গেলেও মিনহা আপু গাল ফুলিয়ে রাখছে। আজ সন্ধ্যায় মিথ্যে অজুহাত দেখিয়ে এ বাসায় আসেনি বলে আমিরা আপু আর জুম্মান ভাইয়া কিছু সময় থেকেই চলে গেছে। আজ আর আমার রাতের খাবারও খাওয়া হয়নি। খেতে ইচ্ছে করেনি। ঘুমাতেও গিয়েছি খুব তাড়াতাড়ি। কিন্তু ঘুমটা আরামদায়ক হয়ে ওঠেনি। ঘুমানোর কিছুক্ষণ পরেই মুখে পানির স্পর্শ পেয়ে ঘুম ভেঙে গেল। চোখ খুলে তাজ ভাইকে দেখে বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে ফেললাম। কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
“কাঁচা ঘুম ভাঙলেন কেন? কী হয়েছে?”
উনি পালটা ধমক দিয়ে বললেন,
“কয়টা বাজে? পড়াশোনা ফেলে রেখে ঘুমানো হচ্ছে? বইখাতা কি চেহারা দেখতে রেখেছিস? উঠে বস।”
“আপনি নিজের কাজে যান। ঘুমাব আমি। অযথা বিরক্ত করবেন না তো, ভালো লাগে না।”
“উঠতে বলেছি। মুখে-মুখে কথা বললে চ’ড়িয়ে সাহস বের করে দেবো।”
ওনার কন্ঠে আদেশের সুর। অলসতা ঠেলে একঝাঁক বিরক্তিকে সঙ্গি করে আমি উঠে বসলাম। হামি তুলে বললাম,
“আমি এখন পড়ব না। অযথা কেন এমন করছেন? আম্মিকে ডাকব।”
তাজ ভাই বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে তাকিয়ে আছেন। আমার কথা শুনে বুকে দুহাত বেঁধে ঠান্ডা গলায় প্রশ্ন ছুঁড়লেন,
“আম্মিকে ডাকলে কী হবে?”
তাই তো, কী হবে? আমি নিজেও তো জানি না। এই লোক তো আম্মিকে ভয় পাওয়ার মতো ভীতু ব্যক্তি নন। বোকার মতো অযথাই ভয় দেখালাম। আমাকে নিশ্চুপ দেখে উনি সকৌতুকে বললেন,
“মুখে-মুখে তর্ক করা শিখেছে ঠিকই; অথচ তার মধ্যে সবটাই আজাইরা কথা। বলদ মাইয়া।”
“আজাইরা কথা আপনি নিজেই বলেন, তাজ ভাই। আমার সাথে যতটুকু কথা বলেন তার সবটাই আজাইরা, ভেবে দেখুন। এই তো, এখন আমাকে অযথা ঘুম থেকে তুলে আপনি এসেছেন আজাইরা বকবক করতে। বকবক শেষ হলে এবার যান। আমার চোখে প্রচুর ঘুম।”
উনি চুপ মে’রে স্থির দৃষ্টিতে খানিক সময় তাকিয়ে রইলেন। হুট করেই আমার মাঝে জড়তা বাসা বাঁধল। তবে সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। উনি বিছানার ওপাশ থেকে একটা প্যাকেট হাতে নিয়ে আমার কোলে ফেললেন। আমাকে কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়েই হনহনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে প্যাকেট খুলতেই চোখ জোড়া চকচক করে উঠল। ফুরফুরে মনটা আকাশে উড়াউড়ি করে বলল, ‘অবশেষে দুঃখ বিলাসের সমাপ্তি ঘটল। আহা বিরিয়ানি!’ পরক্ষণেই চকচকে চোখ জোড়া সরু হয়ে এল বিরিয়ানির প্যাকেটের সাথে আরও একটা জিনিস পেয়ে। জিনিসটা দেখেই আমি দ্রুত হাতে তুলে নিলাম। আবারও চিরকুট! ব্যস্ত ভঙ্গিতে ভাঁজ খুলে রুদ্ধশ্বাসে পড়া শুরু করলাম।

অভিমানী,
নাও তোমার বিরিয়ানি। সারাদিনের দুঃখ বিলাসে এক প্যাকেট বিরিয়ানি ঢেলে চটজলদি অভিমানে ভাটা ফেলো তো। এই রাতের শেষ হাসিটা বিরিয়ানির মতো লোভনীয় হয়ে উঠুক। বন্ধ দরজার ওপারে দাঁড়ানো কারো উদগ্রীব কানে অতি সন্তর্পণে ওই মুচকি হাসির মৃদঙ্গ বাজুক। বিরিয়ানির বিনিময়ে এটুকুই তার প্রাপ্য। হারি অন।
ইতি
অপেক্ষারত বিরিয়ানি প্রেরক

আমি বার কয়েক পলক ঝাপটালাম। হতবাক হয়ে একবার বিরিয়ানির দিকে, আরেকবার বন্ধ দরজার দিকে তাকালাম। মাথার মধ্যে প্রশ্ন নামক পোকার ঝাঁক কিলবিল করতে শুরু করল। এতসব কাহিনির মানে কি? চিরকুট লিখতে পারলে, ইতিতে নিজের নাম লিখতে কি সমস্যা? আমি তো বিরিয়ানির কথা সারাদিনে আর একবারও মুখেও আনিনি। দুঃখ বিলাসের খবর তো জানার কথা না। আজকাল ক্রিমিনোলজিতে কি জ্যোতিষবিদ্যাও আছে না কি? আশ্চর্য! হাজারো প্রশ্নরা আটকে গেল চিরকুটের অতি বিস্ময়কর শেষ কথাগুলোতে। আমার কপালের ভাঁজ গাঢ় হলো। চোখের কোণে বিস্ময়ের মাত্রা বাড়ল। আহনাফ তাজওয়ারের এমন কথা অন্তত আমাকে বলার নয়। অপছন্দের ব্যক্তিকে এমন ভয়াবহ কথা বলা যায় না। অথচ উনি বললেন। কেন বললেন? এই মুহূর্তে আমার মনে বুঝি সন্দেহ জাগার কথা? কিন্তু, পূর্ব অভিজ্ঞতা সেই সন্দেহেরও উর্ধ্বে। পাঁচ বছর আগের ভুল চিরকুটের জন্য যে মানুষটা আজও বাজেভাবে অপমান করতে দুবার ভাবে না, সেই মানুষটার অদ্ভুত চিরকুট সত্য হয় কীভাবে?

চলবে, ইন শা আল্লাহ্

#মনোহারিণী
লেখনীতে—ইলোরা জাহান ঊর্মি

৭.
সন্ধ্যার পর সোফায় দু’পা তুলে আয়েস করে বসে ফোন ঘাঁটছিলাম। কোলের ওপর নুডলসের বাটি রাখা। অর্ধেকটা নুডলসও খেতে পারিনি এখনও। ঠিক তখন কলিংবেলের শব্দে বিরক্ত হলাম। ফোন আর নুডলসের বাটি সেন্টার টেবিলে রেখে উঠে গিয়ে লুকিং হোলে চোখ রাখলাম। তারপর মুখ ভেংচে দরজা খুললাম। সামনে থেকে সরে যেতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়লাম। ভ্রুকুটি করে দরজার ওপাশে দাঁড়ানো ব্যক্তির দুহাত ভর্তি ব্যাগের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভাবতে লাগলাম, এতগুলো শপিং ব্যাগে কী আছে? তাজ ভাই গমগমে গলায় বললেন,
“পিলারের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? সার্কাস দেখছিস? সর সামনে থেকে।”
আমি চুপচাপ সরে দাঁড়ালাম। উনি ভেতরে ঢুকেই হাতের ব্যাগগুলো সোফায় একরকম ছুঁড়ে মা’রলেন। নিজেও ধপ করে সোফায় বসে গা এলিয়ে দিলেন। চোখে-মুখে দারুণ বিরক্তভাব। তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে একা একাই বকতে শুরু করলেন,
“শা’লার জ্যাম। গাড়ি নিয়ে রোডে নামলেই দুনিয়ার সব গাড়ি ওই রোডে উপস্থিত হয়। যা অবস্থা, এখন মনে হচ্ছে জ্যামের জ্বালায় এই শহরে বিমান নিয়ে চলাফেরা করতে হবে। গাড়িতে চলাফেরার সাধ একদম মিটিয়ে দিচ্ছে। মিনিটের আগায়-মাথায় জ্যাম।”
আমি মুখ টিপে হাসলাম। নিশ্চিত জ্যামের খপ্পরে পড়ে জানের দফারফা করে ফিরেছে। এরপরেই আমার দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে তিক্ত মুখে বললেন,
“খালি গিলতে শিখেছিস? সেবা করতে শিখিসনি? ঠান্ডা পানি নিয়ে আয়, যা।”
আমি কথা না বাড়িয়ে পানি আনতে চললাম। মহারাজ যা মেজাজ নিয়ে এসেছেন, ত্যাড়ামি করলে নিশ্চিত মাথায় তুলে আছাড় মা’রবে। ঠান্ডা পানি নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসতেই তাজ ভাইয়ের মেজাজের তীব্রতা আমার কাছে স্থানান্তর হলো। আমার আধখাওয়া নুডলসের বাটি সাবার করে ফেলেছে রাক্ষসটা। পানির গ্লাসটা শব্দ করে টেবিলে রেখে আমি ব্যস্ত হয়ে বললাম,
“এটা আমার।”
ততক্ষণে উনি বাটির নিচে পড়ে থাকা নুডলসের শেষ অংশটুকুও গলধঃকরন করেছেন। আমার কথা শুনেও যেন শুনলেন না।‌ ফিরে তাকানো তো দূর, পাত্তাই দিলেন না। সেন্টার টেবিলের ওপাশে বসে জেমি নিজের ভাগের নুডলস্ খাচ্ছিল। ও খাওয়া রেখে গোলগোল চোখে তাজ ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মালকিনের খাবার লুটের অপরাধে হয়তো মনে-মনে কয়েক ধাপ বকুনি দিচ্ছে। আফসোস! মুখে প্রকাশ করতে পারল না বেচারা। তাজ ভাই এতক্ষণে জেমিকে খেয়াল করলেন। চোখ দুটো সরু করে জেমিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“কিরে বড়োলোক বিলাই? নুডলসও ছাড়লি না! মালকিনের মতোই খাদক হইছিস? দুটোই অকর্মা।”
জেমি লেজ নেড়ে দুবার ‘মিয়াও’ বলে ডেকে উঠে পুনরায় নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। আমি কপালে ভাঁজ ফেললাম। তীব্র আক্ষেপ নিয়ে বললাম,
“আমি খাদক? নিজের ট্যাগ আমাকে দিচ্ছেন কোন দুঃখে? পারলে তো গোটা দুনিয়াটা গিলে খান। আজাইরা আমাকে পচানোর চেষ্টা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই আপনার?”
উনি শুনেও যেন কিছুই শুনলেন না। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে গ্লাসের পানিটুকু এক নিঃশ্বাসে পেটে চালান করলেন। অতঃপর উঠে দাঁড়িয়ে শপিং ব্যাগগুলো পুনরায় হাতে তুলে নিলেন। আমার দিকে না তাকিয়েই প্রশ্ন করলেন,
“আম্মি কোথায়?”
আমি থমথমে গলায় উত্তর দিলাম,
“রুমে, রাজ ভাইয়ের সাথে কথা বলছে।”
উনি আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন। ডাইনিং রুম দিয়ে যেতে-যেতে উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে উঠলেন,
“আম্মি, ক্ষুধা পেয়েছে। কিছু খেতে দাও।”
আমি এবার কপাল কুঁচকে ফেললাম। আমার নুডলসটুকু গিলে এখন আবার আম্মিকে বলছে খাবার দিতে! এই অসময়ে এর পেটে কোন রাক্ষস বাসা বেঁধেছে? আবার আমাকে বলে খাদক। নিজে তো খাদকদের রাজা। সেন্টার টেবিলে পড়ে থাকা নিজের ফাঁকা নুডলসের বাটির দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উলটালাম। আহারে আমার সাধের নুডলস্! কত সাধ করে বানালাম! ধুর! এই রাক্ষসের সাথে মানুষ বসবাস করে? নুডলসের জন্য দুঃখ বিলাস করতে-করতে হুট করেই আমার মাথায় আরেক ভাবনা উঁকি মা’রল। তাজ ভাই হঠাৎ এত শপিং করলেন কেন? গত সপ্তাহেই তো দেখলাম উনি নিজের জন্য যথেষ্ট শপিং করেছেন। সপ্তাহ ঘুরতেই আবার শপিং! কী এত কিনেছেন? আগ্রহ নিয়ে আমি ওনার রুমের দরজায় দাঁড়ালাম। দরজা ভেজিয়ে রাখা। বাইরে থেকে এসে উনি সবসময় আগে ফ্রেশ হতে ঢোকেন। আজও হয়তো তার বিপরীত হয়নি।‌ দরজার ফাঁক দিয়ে ভেতরে উঁকি মে’রে ওনাকে দেখলাম না। শপিং ব্যাগগুলো বিছানায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। বুকে বেশ সাহস সঞ্চার করে দরজা ঠেলে নিঃশব্দে ভেতরে ঢুকলাম। ওয়াশরুমের বন্ধ দরজায় একবার সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে পা টিপে-টিপে বিছানার পাশে এগিয়ে গেলাম। তারপর একটা শপিং ব্যাগ ফাঁক করে অতি সাবধানে ভেতরের প্যাকেট দেখলাম। দুটো পাঞ্জাবি দেখা যাচ্ছে। বুঝলাম আজও লাট সাহেব নিজের জন্য শপিং করেছেন। টাকা-পয়সা উথলে পড়ে, হুঁহ্। আরও একটা শপিং ব্যাগে সন্ধান চালিয়ে আমি ভ্রুকুটি করলাম। এটাতেও পাঞ্জাবি! দ্বিগুণ উৎসাহে আমি অপর ব্যাগে সন্ধান চালালাম। ওমা! এটাতেও পাঞ্জাবি! অতঃপর একটা-একটা করে সবকটা ব্যাগে সন্ধান চালিয়ে পাঞ্জাবি ছাড়া অন্য কিছুই পেলাম না। আমি পুরোদস্তুর আহাম্মক বনে গেলাম। হা করে তাকিয়ে রইলাম ব্যাগগুলোর দিকে। এ তো পুরো একটা পাঞ্জাবির দোকান তুলে নিয়ে এসেছে! ডিটেকটিভিটি ছেড়ে কি এখন পাঞ্জাবির দোকান দিয়ে বসার পরিকল্পনা চলছে? না কি সবই নিজে পরবেন? অথচ আমার জানামতে এই লোক বিশেষ কারণ ছাড়া পাঞ্জাবি পরেন না। তাহলে হঠাৎ এই অদ্ভুত কাণ্ডের কারণ কী? এতগুলো পাঞ্জাবি দিয়ে কী করবেন উনি? আজব! ওয়াশরুমের ছিটকিনি খোলার শব্দ কানে আসতেই আমি চোখ বড়ো করে ঘুরে দাঁড়িয়েই এক ছুটে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। সোজা ড্রয়িংরুমে ফিরে এসে ধপাস করে সোফায় বসে পড়লাম। আহাম্মকের মতো বার কয়েক পলক ঝাপটালাম। এতগুলো পাঞ্জাবির টাকা দিয়ে তো আরও কত শপিং করা যেত। পরক্ষণেই হুট করে মনে পড়ে গেল উনি সেদিন বলছিলেন ওনার বন্ধুদের কিছু গিফট করবেন। তাদের জন্যই কি এসব কিনেছেন না কি? তা-ই হবে হয়তো। অযথাই কনফিউশনে পড়লাম। ধ্যাত!

রাত দশটার দিকে অ্যাকাডেমিক বইয়ের পড়া শেষ করে গতকালের অর্ধেক শেষ করা উপন্যাসের বইটার সন্ধান চালাতে ব্যস্ত হলাম। শেলফ তন্ন-তন্ন করে খুঁজেও যখন পেলাম না, তখন মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। এ ঘটনা নতুন নয়। এই শেলফ আনার পর থেকেই এ ঘটনার জন্ম। যেই বইটাই অর্ধেক শেষ করে শেলফে কিংবা ঘরে রাখি, সেটাই ওই জায়গা থেকে উধাও হয়ে যায়। ইচ্ছাকৃত চু’রি বলা চলে। তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে গটগট করে হেঁটে গিয়ে চো’র বাবাজির ঘরে ঢুকে পড়লাম। দরজাটা শব্দ করে খুলে ভেতরে ঢুকে এদিক-ওদিক না তাকিয়ে সোজা টেবিলের কাছে চলে গেলাম। টেবিলের আনাচে-কানাচে সন্ধান চালাতে-চালাতে ভেতরের রাগটা বুঝানোর তীব্র প্রচেষ্টায় আপনমনে বকবক শুরু করলাম,
“শেলফের আগাগোড়া বই দিয়ে ঠেসে রেখেছে, অথচ পড়ার সময় খুঁজে পায় আমার বইটাই। আর কোনো বই চোখে দেখে না। প্রতিদিনই এক বিরক্তিকর কাহিনি। তার থেকে শেলফ না থাকতেই শান্তি ছিল। ধুর!”
বই না পেয়ে এবার গরম মেজাজে কেরোসিন পড়ল। ঘুরে দাঁড়িয়ে বিছানায় দায়সারা ভঙ্গিতে পা বিছিয়ে বসে ল্যাপটপে কারো সাথে বকবক করতে থাকা মহারাজের দিকে তাকালাম। কপট রাগ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“আমার বই কোথায়?”
উনি শুনেও যেন শুনলেন না। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে নিজের কথোপকথন চালিয়ে গেলেন। আমি বিছানার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। বার কয়েক একই প্রশ্ন করেও কোনো জবাব পেলাম না। এই ঘরে এই বিছানার পাশে যে আস্ত একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তা যেন কেউ দেখেইনি। অধৈর্য হয়ে আমি এগিয়ে গিয়ে বালিশের কাছটায় খুঁজতে লাগলাম। ঠিক তখনই পুরুষালি কন্ঠস্বর শোনা গেল। আনন্দিত কন্ঠে কেউ ডেকে উঠল,
“হেই ইলোমিলো।”
আমি চকিতে ফিরে তাকালাম। ল্যাপটপের স্ক্রিনে শ্রেয়ান ভাইয়ার হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখা যাচ্ছে। তাজ ভাইয়ের পাশে চলে আসায় আমাকে দেখে ফেলেছে। আমি ভারি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। তাজ ভাইয়ের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম উনি গম্ভীর মুখে ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছেন। শ্রেয়ান ভাইয়া পুনরায় ডেকে বললেন,
“কেমন আছো, ইলোমিলো?”
অগত্যা আমি আলগোছে বিছানায় বসে পড়লাম। ক্যাবলাকান্তের মতো মুখে হাসি টেনে বললাম,
“জি, ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ্। তোমার সাথে আড্ডার মুহূর্তটা কিন্তু আমি মিস করি। বেশ ভালো আড্ডা দাও তুমি। সব কথায় মুখে হাসি থাকে। আই লাইক ইট। ব্যস্ততা না থাকলে আমি যখন-তখন চলে যেতাম তোমার সাথে আড্ডা দিতে। যাইহোক, আগামীকাল আমি ফ্রি আছি। চলো আমরা বাইরে বেরোই। আড্ডাও হয়ে যাবে, সাথে ঘোরাঘুরিও হবে।”
আমি ইতস্তত করে মুখ খোলার আগেই তাজ ভাই থমথমে মুখে ফট করে বলে উঠলেন,
“এখন ওর পড়ার চাপ বেশি। কোথাও যেতে পারবে না। আঙ্কেলের নিষেধ আছে।”
আমি ভ্রুকুটি করলাম। কোন আঙ্কেলের নিষেধ আছে? আর আমার পড়ার চাপই বা কোথায়? শ্রেয়ান ভাইয়া একটু আশাহত হলেন। বললেন,
“আঙ্কেল কে?”
“ওর বাবা,” তাজ ভাইয়ের স্পষ্ট উত্তর।
“আঙ্কেল জানবে কীভাবে? আমরা কি ঢাকঢোল পিটিয়ে বাইরে বেরোব? আন্টিকে বলে কিছু সময়ের জন্য তুই, আমি আর ইলোমিলো বেরোব। চাইলে জুম্মানদেরও নিতে পারিস।”
এমন একটা প্রস্তাব শুনে আমার আনন্দে লাফিয়ে উঠতে ইচ্ছে করল। আমার আনন্দে ভাটা ফেলে তাজ ভাই পুনরায় আপত্তি জানালেন,
“কোনো প্রয়োজন নেই। আঙ্কেল যেখানে নিষেধ করেছে, সেখানে আম্মিও যেতে দিবে না। তোর এই ফাও প্যাঁচাল বন্ধ করে কাজের কথায় আয়।”
“আরে ভাই এমন করিস কেন? আন্টিকে আমি ম্যানেজ করে নিব, দেখিস।”
এবারে তাজ ভাই ত্যাড়ামি করার আগেই আমি চট করে বলে বসলাম,
“আমি যাব, শ্রেয়ান ভাইয়া। আপনি কাল সন্ধ্যায় চলে আসবেন। আমি জুম্মান ভাইয়াদেরও বলে রাখব। আমরা সন্ধ্যায় রেডি হয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করব।”
শ্রেয়ান ভাইয়া চমৎকার করে হেসে আনন্দিত কন্ঠে বললেন,
“গ্রেট, ইলোমিলো। এটাই ফাইনাল। থ্যাংক ইউ সো মাচ। এই তাজ, দেখ শা’লা। তুই খামোখা-”
শ্রেয়ান ভাইয়ার কথা শেষও হলো না। তাজ ভাই আচমকা শব্দ করে ল্যাপটপ বন্ধ করে ফেললেন। কোল থেকে একপ্রকার ছুঁড়ে পাশে ফেললেন ল্যাপটপটা। অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। আমি ওনার কাণ্ডে চমকে উঠলাম। হঠাৎ আবহাওয়া বদল হলো কেন? কী মুশকিল! এখন কি আমার ওপর সুনামি বয়ে যাবে না কি? দৃষ্টি তো তা-ই বলছে। আমি ভয়কে জয় করে ভ্রুকুটি করে বললাম,
“কী হলো?”
উনি বরাবরের মতো আমার চুলের মুঠিতেই রাগ ঝাড়লেন। আমি ব্যথাতুর শব্দ করে মুখ খোলার আগেই শ্লেষের সুরে বললেন,
“খুব শখ তোমার শ্রেয়ানের সাথে ঘুরতে যাওয়ার? এত শখ কেন? বয়ফ্রেন্ড জীবনে ঘুরতে নিয়ে যায়নি? আমি না বলার ওপরে আবার বাড়তি কথা বলতে গেছো কোন সাহসে?”
আমি চুলের মুঠি থেকে ওনার হাত সরানোর চেষ্টা করে উলটো রাগ দেখিয়ে বললাম,
“আপনার এত সমস্যা কিসের? চুল ছাড়ুন, ব্যথা লাগছে। যখন-তখন চুল টানাটানি করবেন না।”
ওনার মুঠো থেকে চুল ছাড়িয়ে পুনরায় বললাম,
“আমি বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরি বা শ্রেয়ান ভাইয়ার সাথে। তাতে আপনার কী? আপনার ইচ্ছে না হলে আপনি যাবেন না। আপনাকে তো কেউ নেওয়ার জন্য মাথার দিব্যি দেয়নি।”
উনি সূক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে রইলেন আমার মুখে। তাচ্ছিল্যের হাসি মুখে টেনে বললেন,
“আশ্চর্যজনক পরিবর্তন!”
জবাবে আমিও হাসলাম। বললাম,
“আগের মতো সেই বোকাসোকা থাকলে খুব খুশি হতেন মনে হচ্ছে? অযথা কারণে কাঁদাতে পারতেন, খুশি হবারই কথা। কিন্তু কী বলুন তো? বয়সের সাথে যে আমার মাঝে পরিবর্তনটা এসেছে, এজন্য আমি খুব খুশি। অন্তত কেউ অকারণে কাঁদাতে পারবে না।”
“ইশ্ রে! এবার আমি পাঁচ বছর আগের ওই পুরোনো চিরকুট দিয়ে কী করি বল তো, পিচ্চি?”
আমি ছোটো একটা নিঃশ্বাস ফেলে রাগ দমন করলাম। আবার ওই অভিশপ্ত চিরকুট নিয়ে ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে না। তাই বিছানা‌ থেকে নেমে দাঁড়িয়ে থমথমে মুখে বললাম,
“আমার বই দিন।”
তাজ ভাই যেন আমার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝলেন না। অবুঝের মতো প্রশ্ন করলেন,
“কিসের বই?”
“নাটক কইরেন না তো। তাড়াতাড়ি বই দিন।”
“তোর বই আমার কাছে আসবে কোত্থেকে?”
“ধুর, দিন তো। কোথায় রেখেছেন?”
“জানি না।”
“আপনার জন্য কি অন্য কোনো বই নেই? শেলফে এত-এত বই থাকতে আমারটাই পড়তে হবে কেন? আশ্চর্য! বালিশের নিচে রেখেছেন? দেখি সরুন, উঠুন না।”
তাজ ভাই ভ্রু দ্বয়ের মাঝে কিঞ্চিত ভাঁজ ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। অতঃপর হাত বাড়িয়ে আমার বাঁ গালটা জোরে টিপে দিয়েই দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি চোখ-মুখ কুঁচকে গালে হাত দিয়ে বসে রইলাম। এই লোক কি সত্যিই আম্মি আর নূর আঙ্কেলের আপন ছেলে? রাজ ভাইয়ের আপন ভাই? আমার কেমন সন্দে-সন্দেহ লাগে।‌ আপন হলে সবার উলটো কেন হলো? পা’জি লোক! বালিশ সরাতেই বইটা পেয়ে গেলাম। বই নিয়ে আপনমনে তাজ ভাইকে বকতে-বকতে নিজের রুমে চলে এলাম।
রাতের খাবার খেতে বসে ঘটল আরেক কাহিনি। আমিরা আপু এল হাতে এক বাটি চিংড়ির মালাইকারি নিয়ে। খুব আনন্দিত মনে সহাস্যে জানাল এই ডিশটা সে নিজ হাতে বানিয়েছে। তাই স্পেশালি তাজ ভাইয়ের জন্য নিয়ে এসেছে। আম্মি তাকে আমাদের সাথে খেতে বসতে বলল।‌ কিন্তু সে খেয়ে এসেছে বলে সুযোগটা ফসকে গেল। মুশকিল হলো আমিরা আপু তাজ ভাইকে তার স্পেশাল ডিশ খাওয়ানোর আশায় বসে রইল। তাজ ভাই চিংড়ির মালাইকারি নিচ্ছেন না বলে অসহায় মুখ করে বারবার তাগাদা দিলো,
“তাজ ভাই, এটা নিন না। আমি কত কষ্ট করে বানিয়েছি। খেয়ে বলুন তো কেমন হয়েছে। শুনেই আমি চলে যাব। পড়া ফেলে রেখে এসেছি। নিন না প্লিজ।”
তার অনুরোধ দেখে আম্মিও তাজ ভাইকে বললেন আমিরা আপুর ডিশটা খেয়ে দেখতে। তাজ ভাই সহাস্যে বললেন,
“তোর পড়া আগে জরুরি। যা, যা, পড়া শেষ কর গিয়ে। আমি খেয়ে নিব। কেমন হয়েছে তা কাল জানালেই তো হবে। যা, ব্যস্ত হতে হবে না। দেখছিস না আমি আমি রিল্যাক্সে খাচ্ছি?”
আমিরা আপুর মুখটা পাংশুবর্ণ ধারণ করল। মুখের ওপর এমন কথা শুনে তার আর বসে থাকাও হলো না। মুখ কালো করে অসন্তুষ্ট মনে সম্মতি জানিয়ে চলে গেল। আম্মি ডায়াবিটিসের রোগী বলে রাতে রুটি খায়। তার রুটি খাওয়া শেষ। তাজ ভাই চিংড়ির মালাইকারির বাটিটা হাতে নিয়ে একবার সূক্ষ্ম চোখে পরখ করে দেখলেন। তারপর কোনোরকম ইতিউতি ছাড়াই বাটি উলটো করে পুরো মালাইকারিটাই আমার প্লেটে ঢেলে দিলেন। ওনার এহেন কাণ্ডে আমি আর আম্মি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওনার দিকে তাকালাম। আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম,
“আরে! সব ঢাললেন কেন?”
উনি স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলেন,
“আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। যার প্রিয় সে-ই খাক।”
আম্মি গ্লাসে পানি ঢালতে-ঢালতে বলল,
“এক পিস অন্তত খেয়ে দেখতে পারতি। মেয়েটা এত কষ্ট করে বানিয়েছে।”
তাজ ভাই মুখ লটকে বললেন,
“হ্যাঁ, ইউটিউবে ভিডিয়ো দেখে বানিয়েছে নিশ্চয়ই। প্রচুর কষ্ট করেছে। সেজন্যই চিংড়িপ্রেমীকে খেতে দিলাম। সে ভালো রিভিউ দিতে পারবে। আমি আবার এত কষ্টের রান্নার রিভিউ দিতে এক্সপার্ট নই। তাছাড়া চিংড়ি-ফিংড়ি খেতে আমার ভালোও লাগে না, জানোই তো।”
আমি গাল ফুলিয়ে বললাম,
“তাই বলে এতগুলো চিংড়ি সব আমার প্লেটে ঢালবেন? আমার পেট অলরেডি ভরে গেছে।”
উনি আয়েস করে নিজের খাবার খেতে-খেতে বললেন,
“সমস্যা কী? খেয়ে ফেল। তুই না খাদক?”
আম্মি বলল,
“ও আবার খাদক কবে থেকে? খাবারের পরিমাণ দেখেছিস? তোর থেকেও তো কত কম খায়।”
আমি মুখ টিপে হাসলাম। তাজ ভাই অসন্তোষ প্রকাশ করে বললেন,
“কী মিন করতে চাইছো, আম্মি? আমি বেশি খাই?”
“আরে ধুর! তা কখন বললাম?”
“তোমার কথা তো তা-ই বলছে। বেশি খেয়ে তোমার স্বামীর টাকা-পয়সা কমিয়ে দিলে ডিরেক্টলি বলে দিবে, আমি নিজের টাকায় খাব। বাপের হোটেলে খাই বলে কথা শোনাচ্ছ। বুঝি, বুঝি। তোমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করব তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী ছেলের খাবার নিয়ে খোটা দেয় কেন। তার উপার্জন কমে গেছে না কি?”
আম্মি হেসে ফেলল। তাজ ভাইয়ের বাহুতে হালকা করে থা’প্পড় মে’রে বলল,
“বাজে কথা বন্ধ করে চুপচাপ খাবার শেষ কর। পা’জি ছেলে।”
আমি ঠোঁট উলটে প্লেটের মালাইকারি চিবোচ্ছি। স্বাদ খুব বেশি ভালো না,‌ আবার খুব বেশি খারাপও না। মোটামুটি ভালোই হয়েছে। আমিরা আপুর জন্য মায়া হলো। আহারে বেচারি! যার জন্য কষ্ট করে রান্না করল, সে একটু চেখেও দেখল না। এ কথা শুনলে তো ওই বেচারি দেয়ালে মাথা ঠুকতে-ঠুকতে আফসোসে ম’রে যাবে। এই ওভার অ্যাক্টিংয়ের গোষ্ঠীর পাল্লায় পড়ে যে আমি আরও কী, কী হাস্যকর কাহিনির সাক্ষী হব, ওপরওয়ালা জানেন। হয়তো একেই বলে বিনামূল্যে রম্য নাটকের শুটিং উপভোগ করা।

চলবে, ইন শা আল্লাহ্।🖤