মন নিয়ে পর্ব-০৯

0
174

মন নিয়ে (পর্ব ৯)

খাওয়া শেষ করে পারি কাউন্টারে চলে গেল বিল দিতে। ফিরে আসতে রিক বলল
— বিলটা আমি দিতাম নাহয়।
আশ্চর্য হয়ে গেল পারি
— আমি তো আগেই বলেছি লাঞ্চ আমি খাওয়াবো।
— তা বলেছ।
গতরাতের লোকটির কথা আবার মনে পড়ে গেল রিকের। কই তখন তো বিল সেই দিয়েছিল। দুজনের বডি ল্যাংগুয়েজ দেখে বোঝা যাচ্ছিল অন্তরঙ্গ সম্পর্ক দুজনের। কী সম্পর্ক এদের মধ্যে? ওর জন্যই কি পারিজার মুখে হাসি নাই?

হাঁটতে হাঁটতে দুজনে পিরামিডের দিকে এগুতে থাকে। রিক মনেমনে ঠিক করে ফেলল যেভাবেই হোক ও পারিজাকে হাসিয়ে দেবে। পারিজার হাসিমুখটা সত্যি খুব এট্রাকটিভ।
দুপাশে অস্থায়ী দোকান, মাঝখানে পায়েচলা পথ। সেটা ধরে ওরা এগিয়ে যেতে থাকে। জায়গাটায় বেশ গাছ। যারজন্য সামনে কী অপেক্ষা করছে ওদের জন্য, কিছু বোঝার উপায় নাই। হুট করে গাছপালা শেষ হয়ে গেল, ওরা এসে পড়ল খোলা জায়গায়। সামনে রাজকীয় গাম্ভীর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে চিচেন ইতজার স্টেপ পিরামিড এল কাসটিলো।

— ওহ মাই গড! নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল পারির।
হাসল রিক— টোল্ড ইউ। এজন্য আগে থেকে কিছু বলতে চাইনি। আমিও ঠিক এ কথাটাই বলেছিলাম।
— ইটস গর্জাস, রিক। আই ক্যাননট বিলিভ ইট। রিকের হাত চেপে ধরল পারি। পারির দিকে একবার তাকিয়ে দেখল রিক। পারিজার খেয়ালই নাই।
— বাতাসে একটা প্রাচীন গন্ধ। যেন যেকোনো মুহূর্তে সব টুরিস্ট উধাও হয়ে গিয়ে বহুপুরাতন কোনো দৃশ্য দেখতে পাবো।
হাসল রিক
— আর ইউ এ পোয়েট?
বাস্তবে ফিরে এল পারি।
— একেবারেই না। কিন্তু পিরামিডের বিশালত্বের কাছে সবকিছু মনে হচ্ছে তুচ্ছ। চলো কাছে যাই।

হাত ছেড়ে দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে পারি। রিকের খুব ইচ্ছা করল এগিয়ে গিয়ে পারিজার হাতটা ধরে। কিন্তু ধরল না। পারিজা খেয়াল করে ওর হাত ধরেনি। এখন ও ধরলে পারিজা নিজেকে গুটিয়ে নেবে। যতটুকু সহজ হয়েছিল, নিমেষে বদলে যাবে।
রিক গতবারেই একটা গাইডেড ট্যুর নিয়েছিল। অনেককিছু মনে আছে ওর। হাঁটতে হাঁটতে বলতে থাকে ও।

— চিচেন ইতজা কিন্তু সিটির নাম। মায়া সভ্যতার এক প্রাচীন শহর। আর পিরামিডের নাম এল কাস্টিলো। এর প্রত্যেক সাইডে ৯১টা করে সিঁড়ি রয়েছে। যারজন্য একে স্টেপ পিরামিড বলা হয়ে থাকে। এর ভিতরে রেড জাগুয়ার সিংহাসন পাওয়া গিয়েছে। বলা হয়ে থাকে এখানে একসময় নরবলি দেয়া হত।
— আশ্চর্য না? কত মানুষের যে কত অদ্ভুত ধ্যান ধারণা।
— হু, একসময়ে চিচেন ইতসা থেকে লোকে বাস উঠিয়ে নিল। কারণ হিসাবে খরাকে ধরা হয়। সেটা তখন হয়ে গেল ঘোস্ট টাউন। সময়ের সাথেসাথে জঙ্গলে ঢাকা পড়ল পুরা জায়গাটা। কিন্তু শহর হয়ে গেল কিংবদন্তীর শহর।
— তারপর? মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকে পারি।
— তারপর বিদেশী কিছু ট্রাভেলার একে আবিস্কার করে। তারপর এর সংস্কার হয়ে এখন এটা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। আগে এর সিড়ি ধরে ওঠানামা করা যেত কিন্তু ২০০৬ এর পর থেকে অনুমতি দেয়া হয় না। এক মহিলা সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মারা যায়, সে থেকে বন্ধ করে দিয়েছে।
— ইশ যদি আগে আসতে পারতাম। তাহলে উঠতে পারতাম। ছেলেমানুষের মতো পারি বলে উঠল।
হাসল রিক
— সেই। আমার কিন্তু পিরামিডের চাইতেও সিনোটি বেশি ইন্টারেস্টিং লেগেছে। আশেপাশে মোট চারটি সিনোটি আছে। সেখান থেকে লোকে পানি সংগ্রহ করত সেসময়ে। কারণ নদী ছিল না। তাই সিনোটিগুলি ছিল একমাত্র ভরসা। তবে যে সিনোটি সবচাইতে বিখ্যাত সেটার কিন্তু আরও একটা কাজ ছিল।

— কী কাজ?
— পিরামিড দেখা শেষ করো আগে। তারপরে চলো সিনোটির দিকে যাই। তখন বলছি।
পিরামিডের চারিদিকে পারি ঘুরে ঘুরে দেখল। সাথে আরও অনেক ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। কিছু খনন কাজ তখনো চলছে। যতো দেখে, পারির বিস্ময় ততোই বেড়ে যায়। একসময়ে রিক বলতে বাধ্য হল

— এরা কিন্তু পাঁচটার সময় বন্ধ করে দেবে। তার আগে চলো সিনোটির দিকে যাই। একটু হাঁটতে হবে।
— চলো।
এ সিনোটি টা গতকালকের মতো না। এর নাম সিনোটি সাগ্রাডো। কিনার থেকে প্রায় ৯০ ফিট নীচে তাকালে পানি দেখা যায়।
— মা গো!
— বি কেয়ারফুল, পারিজা।
— আমি কেয়ারফুলই আছি। হঠাত করে নীচে তাকিয়ে চমকে গেছিলাম আরকি। এখন বলো কী বলবে বলছিলে।
— বলছি। আসলে এ সিনোটিকে পবিত্র ধরা হত। খরা যখন দেখা দিত, তখন বৃষ্টি দেবতা চাকের উদ্দেশ্যে এখানে উতসর্গ করা হত। সিনোটি সেঁচে অনেককিছু উদ্ধার করা গেছিল। সেথেকে বোঝা গেছিল।
— সত্যি? কী উদ্ধার করা গেছিল?
— সোনা, জেড পাথর, অবসিডিয়ান, হাড়িকুড়ি, গয়না, কাঠের অস্ত্র, জামাকাপড়, সুগন্ধী লোবান। এমনকি বাচ্চা আর পুরুষের কংকালও।
— বাবা রে বাবা!
— আরেকটা ইন্টারেস্টিং জিনিস আছে। মায়াদের সবকিছুতে দেখবে নীল রঙ খুব প্রকট। অনেককিছু এরা নীল রঙে পেইন্ট করে। এর সেগুলি ফেড হয়ে যায় না সহজে। উতসর্গ করা বাসন, কাঠের জিনিসও এরা নীল রঙ পেইন্ট করে দিত। এমনকি মানুষের সারা শরীরও নীল রঙে রাঙিয়ে তারপর সিনোটিতে ফেলে দিল।

হুট করে এক ঝলক বাতাস বইতে লাগল। পারির গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। রিককে প্রশ্ন করল
— তোমার এগুলি সত্য বলে মনে হয়?
— কোনটা?
— এই যে বলিদান করলে বিনিময়ে কিছু পাওয়া যায়।
— আমরা আধুনিক মানুষ, আমরা তো বিশ্বাস করি না। কিন্তু একসময়ে লোকে এমনটাই ভাবত, বিশ্বাসও করত। নাহলে পিরামিড এ বলিদান দিত কেন, বলো?
পারি আবার শিউরে উঠল। রিক ওকে খেয়াল করতে থাকে। কিন্তু পারি যেন এ দুনিয়ায় নাই। কিছু একটা গভীর ভাবনায় ও ডুবে রয়েছে। মনের সাথে যেন যুদ্ধ করছে।
রিক ওকে ওর মতো থাকতে দিল। কথা বলল না।

একসময়ে নরম গলায় বলল
— আর থাকবে? চলো যাই এবারে? দেখো চলে যাবার জন্য ওরা ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে।
পারি যেন ধ্যান ভেঙে বাস্তবে ফিরে এলো
— যাব?
কৌতুক করল রিক।— যাবে না তো কি এখানেই রাত কাটাতে চাও নাকি? যদি বাচ্চাগুলি সিনোটি থেকে উঠে আসে?
হেসে ফেলল পারি।– দ্যাট উড নট বি প্লেজান্ট।
রিকও হাসল— তা তো প্লেজান্ট হবে নাইই। চলো।

বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠে পড়ল দুজনে। রিক অন্যমনস্কভাবে গাড়ি চালাতে থাকে, পারিও চুপ। খানিক বাদে সন্ধ্যা নেমে এলো। নীরবতা ভেঙে হঠাত পারি বলল
— তুমি ঠিক রাস্তায় আছ তো, না?
— হ্যাঁ, কেন?
— মনে হচ্ছে এ রাস্তা দিয়ে আসিনি। ভুলভাল কোনো রাস্তায় চলে এসেছ নাকি?
— একটু আগেই তো রোড সাইন দেখলাম। সেখানে প্লায়া ডেল কারমেন লেখা ছিল।

আরেকটু যেতেই পারির সন্দেহ সত্যি বলে প্রমাণিত হল। অন্ধকার হয়ে গেছে ততক্ষণে। দুপাশে তেমন কোনো বসতির চিহ্ন নাই, কোনো রোড সাইন নাই। এক বিরান ভূমির মধ্য দিয়ে গাড়িটা চলেছে। আরও খানিক বাদে রাস্তা শেষ হয়ে কাঁচা রাস্তা শুরু হল। পারি ভয় পাওয়া গলায় বলল
— আই ডোন্ট লাইক ইট এট অল। ফোন বের করে দেখে নেটওয়ার্ক নাই। — কী হবে এখন, রিক?
রিকের চোয়াল শক্ত হয়ে এসেছে।— প্লিজ ডোন্ট প্যানিক, পারিজা।
— আই এম নট প্যানিকিং। কিন্তু কেউ জানে না আমরা কোথায় আছি। সবাই দুশ্চিন্তা করবে। আমাদের বিপদও তো হতে পারে।
— পারিজা, প্লিজ। ভালোটাই ভাবো এখন।
— ভালো ভাবব? কিভাবে ভালো ভাবব আমাকে বলো দেখি। এখানে ড্রাগ ডিলিং কম হয়? যদি আমরা তাদের খপ্পরে পড়ি? যদি রাস্তা আর খুঁজে না পাই। যদি জেরিন আমার মা’কে খবর দিয়ে দেয়? পারি হিস্টেরিকাল হয়ে গেল।
— পারিজা! কুল ডাউন। দেখি কী হয়।
— রিক, গাড়ি ঘোরাও। যে রাস্তা দিয়ে এসেছি, সে রাস্তায় দিয়েই ফিরে যাও। কিছুক্ষণ আগে আমরা একটা বাড়ি পেরিয়ে এসেছিলাম। ওরা নিশ্চয় বলতে পারবে কিভাবে মেইন রোডে যাওয়া যাবে।

অন্ধকারে ঠিকভাবে দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল না। হঠাত করে একটা বড়ো গর্তে গাড়ির চাকা আটকে গেল। অনেক চেষ্টা করল রিক। কিন্তু এত বড়ো গর্ত থেকে কিছুতেই গাড়িটাকে তুলতে পারল না। বরং যত চেষ্টা করতে লাগল, ততোই চাকা গর্তে দেবে যেতে লাগল। অনেক চেষ্টার পর হাল ছেড়ে দিল রিক
— ড্যাম! ড্যাম! ড্যাম!
পারি হঠাত করে ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। ও আর এক সেকেন্ডও গাড়িতে থাকতে পারবে না। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ওর। দরজা খুলে যেদিক দিয়ে আসছিল, সেদিকে দিল দৌড়। অন্ধকারেই।

— পারিজা! রিক চিৎকার করে উঠে গাড়ি ছেড়ে বের হয়ে এল। আবছা আলোয় সামনে পারিজাকে দেখা যাচ্ছে। দৌড়ে গিয়ে ওকে ধরে ফেলল।
— পারিজা, আর ইউ ক্রেজি?
— আমি এখানে থাকব না। কেঁদে ফেলল পারি।— আমার খুব ভয় করছে।
— কাম ডাউন! কাম ডাউন!

ফোনের টর্চ জ্বালাল রিক। দেখে পারিজা নিশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওর চেহারা কেমন নীল হয়ে যাচ্ছে।
— আর ইউ হ্যাভিং এ প্যানিক এটাক, পারিজা?
পারি উত্তর দিতে পারল না। দুহাতে চুল খামচে ধরেছে ও।
পারির কাঁধ শক্ত করে ধরল রিক।
— ব্রিথ, পারিজা। ব্রিথ। লম্বা লম্বা শ্বাস নাও। ইট উইল বি ওকে। আই এম হিয়ার। আমি কিছু হতে দিব না। এত ভয় পাবার কিছু নাই। ব্রিথ, পারিজা।
পারি ততক্ষণে কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে। ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়েছে।
— ব্রিথ, আই সেইড।
আস্তে আস্তে প্যানিক এটাকের প্রকোপটা কেটে গেল। পারি লম্বা কয়েকটা শ্বাস নিল, চোখ মুছল।
— আর ইউ ওকে নাউ?
মাথা ঝাঁকাল পারি।
— বেটার।
— লিসেন। চল, সামনে এগিয়ে যাই। যে বাড়িটার কথা বললে, সেটাতে যাই চলো।
— আই এম সরি। আই ডিড নট মিন টু রান লাইক দিস।
— সরি কেন? তোমার প্যানিক এটাক হয়েছে, এতে সরির কী আছে? আগে এমন হয়েছে?
আবার চোখ মুছল পারি— মাঝেমাঝে হয়।
— ডাক্তার দেখিয়েছ?
— হু। কাউকে বলো না প্লিজ।
— ইউ ক্যান ট্রাস্ট মি। চলো এখন।

টর্চের আলো ফেলতে ফেলতে একহাতে পারিকে জড়িয়ে ধরে সামনে এগোতে থাকে রিক। পারিও নিজেকে সামলে নিয়েছে। এবং প্রচন্ড লজ্জা পেয়েছে। নিজেকে ও একজন সাহসী মেয়ে হিসাবেই দেখাতে চায়। এখন রিকের সামনে এভাবে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়ে যাবে, ও ভাবতেও পারেনি। ছি ছি। কী লজ্জা।
রিক ওর মনের ভাব বুঝে হালকাভাবে কথা বলতে বলতে হাঁটতে লাগল
— ইউনিভার্সিটিতে আমার যে রুমমেট ছিল, সে বডিবিল্ডিং করত, জানো? কী মাসল তার, ইউনিভার্সিটি চ্যাম্পিওন ছিল। নিজেকে বিরাট হি ম্যান দেখাতে চাইত সবার কাছে। শুধু আমি জানতাম আসল কথা।
— কী কথা?
— ওরও প্যানিক এটাক হত। সবসময় হি ম্যান ইমেজ দেখাতে যাবার চাপটা ও নিতে পারছিল না। প্রচন্ড স্ট্রেস হত ওর। সেথেকে প্যানিক এটাক। শুধু আমি জানতাম, ওর এটাকের সময় ওকে হেল্প করতাম।
পারি উত্তর দিল না। ও তখনো প্রচন্ড অস্বস্তি বোধ করছে। বিপদে পড়েছে, মাথা ঠান্ডা রাখা উচিত ছিল ওর। তা না। কী বিশ্রী একটা কান্ড হল।

মিনিট বিশেক চুপচাপ হাঁটতে থাকে ওরা। সামনে টিমটিমে আলো দেখা গেল। যে বাড়ি ওরা পার হয়ে এসেছিল, সেটারই হবে।
— ওই তো বাড়ি দেখা যাচ্ছে। এখানে রাতে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। সকালে গাড়ি গর্ত থেকে ওঠানোর দেখি কী করা যায়।
— রিক, ফিরে না গেলে ওদিকে সবাই চিন্তা করবে। যদি বাসায় কল করে বলে দেয়?
— কিছু করার নাই, পারিজা। আজ আমরা ফিরতে পারব না, এটাই রিয়েলিটি। হোপফুলি ওরা কেউ একথা জানিয়ে দেবে না।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল পারি। ওর সিক্সথ সেন্স ওকে ঠিকই জানান দিয়েছিল। আজ একটা গণ্ডগোল কপালে লেখাই ছিল।

বাড়িতে শুধু এক লোক, তার বৌ আর ছয় মাসের বাচ্চা থাকে। একফোঁটা ইংরেজি জানে না। রিক বহুকষ্টে ভাঙা স্প্যানিশ আর ইঙ্গিতের মাধ্যমে ওদের দুরবস্থা বোঝাতে পারল। বুঝতে পেরে লোকটা ওদের রাত্রে থাকতে দিতে রাজি হল। ওদের কালচারে বাড়ির কর্তার কথাই শেষ কথা। বউরা কাজ করে, সংসার সামলায়, বাচ্চা পালে কিন্তু সবকিছুর সিদ্ধান্ত নেয় পুরুষেরা।
যতক্ষণ কথা চলছিল ততক্ষণ বউটা চুপ করে ছিল। কিন্তু লোকটা রাজি হতেই হাসিমুখে এগিয়ে এলো। ওদের ছোট একটা রুমে নিয়ে গেল। ইশারা করে বোঝালো এ রুমে ওরা রাত্রে থাকবে। তারপর খাবার নিয়ে এল। সামান্য আয়োজন কিন্তু ওদের পেটে তখন এত খিদে যে যা পাবে তাই সই। সেই কখন পিজ্জা খেয়েছিল।
খেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার ইঙ্গিত করে বউটা চলে গেল।

ছোট্ট বিছানায় ধপ করে বসে পড়ল পারি।
— যাক বাবা। অন্তত রাত্রিটা গাড়িতে থাকতে হচ্ছে না আমাদের।
রিক ঢাকনা খুলে খাবার দেখছিল। এখন পারির দিকে এগিয়ে দিল।
— নাও খাও।
— তুমি?
— আমিও খাব। একটাই তো প্লেট। শেয়ার করতে হবে আমাদের।
দুজনে এক প্লেট থেকে খাবার খেতে থাকে। খেতে খেতে রিক বলে
— চিন্তার কিছু নাই, বুঝলে পারিজা? আমরা এখানে সেফ। ওদেরকে দেখে ড্রাগ ডিলার বলে মনে হচ্ছে না।
এতক্ষণে হেসে ফেলল পারি।
— সরি, আমি লাফ দিয়ে অনেককিছু ভেবে নিয়েছিলাম।
— সরির কিছু নাই। সাবধানে থাকাই ভালো। দেখলে না রাস্তায় বন্দুক হাতে পুলিশ গাড়ি চেক করছিল। আমাদেরকে চলে যেতে ইঙ্গিত করল কারণ আমরা টুরিস্ট বুঝে গেছিল। কিন্তু এখন মনে হয় না বিপদে আছি আমরা। ওরা নিরীহ লোক।
— হু।
— সকালে উঠে দেখি গাড়ি গর্ত থেকে কিভাবে তোলা যায়।
— প্লিজ সকাল সকাল কোরো কাজটা। কাল আমাদের ফ্লাইট।
— আমাদেরও। চিন্তা কোরো না। ব্যবস্থা একটা হয়ে যাবে।
— তাই যেন হয়।
(চলবে)