মন নিয়ে পর্ব-১০

0
171

মন নিয়ে (পর্ব ১০)

ততক্ষণে ওদের খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। পারি উঠে বাসনটা সরিয়ে রাখল। খেয়ে একটু ভালো লাগছে। মাথা কাজ করছে মনে হয়। ঘরের চারিদিকে তাকিয়ে দেখল। তারপরেই আঁতকে উঠে বলল
— মাই গড!
— কী হল, পারিজা?
— আই থিঙ্ক…আই থিঙ্ক…
— হোয়াট ডিড ইউ থিঙ্ক, পারিজা?
পারি উত্তর দিতে পারল না। ওকে চুপ দেখে রিক সাহায্য করল।
— ওরা ভেবেছে আমরা স্বামী স্ত্রী, এই তো?
পারি আবারও উত্তর দিল না। ওর গাল সামান্য লাল হয়ে গেল।
— ভাবুক আর না ভাবুক, ওদের ঘর বেশি নাই। এ ঘরটা যে পেয়েছি, এটাই অনেক, বুঝলে পারিজা?
রিকের গলায় যেন ঠাট্টার সুর।
— আর ইউ লাফিং এট মি, রিক?
— নট এট অল। আমি তোমাকে সহজ করতে চাইছি। এতক্ষণে তোমার খেয়াল হল যে তুমি ঘরের একমাত্র বিছানায় বসে রয়েছ? আমি দেখেই বুঝেছিলাম। কিন্তু কিছু করার নাই। এটা পাওয়া গেছে, এই অনেক। অলটার্নেটলি আমরা অন্ধকারের মধ্যে ফিরে গিয়ে গাড়িতে বসে রাত কাটাতে পারি।
— রিক, বি সিরিয়াস।
— আই এম সিরিয়াস, পারিজা। ট্রাস্ট মি, আমি তোমাকে হাসাতে চাইছি। যাতে ব্যপারটা তুমি ইজিলি নাও।
— ইজিলি তো নিচ্ছি। নানান দুশ্চিন্তায় এদিকটা আমি খেয়াল করিনি।
— এখন খেয়াল করে দুশ্চিন্তা কি বাড়ল না কমল?

পারি গম্ভীর হয়ে বলল
— অবভিয়াসলি যা পাওয়া গেছে সেটা নিয়েই আমাদের সন্তস্ট থাকতে হবে। যাই হোক, আমি শুয়ে পড়লাম। তুমি তোমার হাসি ঠাট্টা নিয়ে থাকো।
— আমি কোথায় থাকব, পারিজা?
— কোথায় আবার? এখানেই।
— আর ইউ শিওর?
— অফ কোর্স। এসব নিয়ে কথা বাড়াবারই দরকার নাই। গুড নাইট, রিক।
বিছানাটা দেয়ালের সাথে লাগানো, সে দেয়ালে খোলা জানালা। পারি দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়ল।
রিক লাইট নিভিয়ে দিতে খোলা জানালা দিয়ে চাঁদের আলো বিছানায় এসে পড়ল। সে আলোতে ধীরেধীরে এগিয়ে বিছানায় এসে বসল। তারপরে জানালার উল্টোদিকে মুখ ফিরিয়ে সেও শুয়ে পড়ল।

কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ। পারি চোখ বুজে ঘুমাতে চেষ্টা করল, রিকও। কিন্তু দুজনের একজনও ঘুমাতে পারল না। পারি নড়াচড়া করছে বুঝতে পেরে রিক প্রশ্ন করল
— তোমার অসুবিধা হচ্ছে?
— অসুবিধা হলেও কিছু করার নাই। লাইক ইউ সেইড, এ পেয়েছি, এটাই অনেক। কাল ঠিকঠাক সময়ে ফিরে গিয়ে প্লেন ধরতে পারলেই হল। নাহলে তুলকালাম কান্ড শুরু হয়ে যাবে। আজ মা’কে খবর না দিলেও কাল মিসিং থাকলে ঠিকই দেবে। তখন কী হবে ভাবতেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আমার।
— আপাতত ঘুমাতে চেষ্টা করো। কালকের কথা কাল ভাবা যাবে।

আরও পাঁচ দশ মিনিট পার হয়ে গেল। হঠাত রিকের মনে হল ওর পায়ের কাছে কিছু একটা বসে আছে। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে দেখে পারি পিঠে বালিশ দিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রয়েছে।
— ঘুমাতে পারছ না?
মাথা নাড়ল পারি।— এত এক্সাইটমেন্টে হাইপার হয়ে গেছি। কিছুতেই রিলাক্স করতে পারছি না। আমার ঘুম হবে না। তুমি ঘুমাও।
আরও পাঁচ মিনিট কেটে গেল। এবারে রিকও উঠে বসল। বালিশটা পারির উল্টাদিকের দেয়ালে বসিয়ে আরাম করে ঠেস দিয়ে বসল। জানালা থেকে মুখ ফেরালো পারি।
— ওকি, তুমি উঠছ কেন?
— আমারও ঘুম হবে না।

জানালার দিকে আবারও মুখ ফেরালো পারি, কিছু বলল না। ওর মুখের ওপরে চাঁদের আলো এসে পড়েছে। রিক ওকে লক্ষ করতে থাকে। একসময় প্রশ্ন করে।
— তুমি তোমার মা’কে খুব ভালোবাস, না?
আশ্চর্য হয়ে আবারও মুখ ফেরালো পারি।
— নিজের মা’কে ভালোবাসব না? তুমি বাসো না?
— তা বাসি। কিন্তু তুমি মনে হয় আমার চাইতে অনেক বেশি। আমি হারিয়ে গেলে সে কী ভাববে তা নিয়ে একটু পরপর আপডেট দিচ্ছি না।
হাসল পারি
— আমার মা একটু পাগল তো, তাই।
— সত্যি? আমার মাও কম না।
— কেমন পাগল?
— বাটিপাগল!
— হোয়াট! এটা আবার কেমন পাগল?
— ছোটবেলা থেকে আমি আর বাবা তাকে খুব টিজ করতাম এ নিয়ে। আমরা মন্ট্রিয়ালে বহুবছর ধরে আছি। বাবা ইউনিভার্সিটির টিচার। মা উইনার্সে কাজ করে। আবার সোশালি খুব এক্টিভ। পার্টিতে যেতে ভালোবাসে, বাসায় পার্টি দিতেও খুব ভালোবাসে।
— বুঝলাম। কিন্তু এর সাথে বাটিপাগল হবার কী সম্পর্ক।
— বলছি। প্রত্যেক পার্টিতে লেফট ওভার খাবার বেঁচে যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটা নানান বক্সে বক্সে সবার বাসায় সাথে করে দিয়ে দেয়া হয়। তো আমার মায়ের একটা অবসেশান আছে। দুনিয়ার যত ক্রিম চিজ, ইয়োগার্টের কন্টেনার, হাবিজাবি কন্টেনার জমা করা। আমাদের প্যান্ট্রিতে ঢোকবার উপায় নাই। বলতে পারো ছাদ পর্যন্ত কন্টেনার দিয়ে ঠাসা।
হাসতে আরম্ভ করে পারি।— তারপর?
— আমাদের বাসায় পার্টি হলে এসব কন্টেনারে করে বেঁচে যাওয়া খাবার মা খুশিমনে প্যাক করে দিয়ে দেবে। কিন্তু তার কড়া নজর থাকে কন্টেনারগুলি ফেরত এলো কিনা, সেদিকে। যারা ফেরত দেয় না, তাদের সাথে রাগারাগি করে এমনকি ঘটনা এতদূর পর্যন্ত মাঝেমাঝে গড়িয়ে যায় যে সম্পর্ক পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। বাসায় থাকা আমি আর বাবাও কম সাফার করি না। কে ফেরত দিল আর কে দিল না, এনিয়ে নিয়মিত আপডেট, কমপ্লেন পেতে থাকি।

পারি হাসতে হাসতে শেষ। কন্টেনার প্রীতি অনেকেরি আছে কিন্তু এই লেভেলের অবসেশান ও প্রথম শুনল।
— কিন্তু এগুলো তো ফ্রি। আই মিন, ইয়োগার্ট কিনলে কনটেনার তো সাথে আসবেই।
— সেটা তাকে আমি কোনোদিন বোঝাতে পারলাম না। আমার বাবা সারাজীবন এত ছাত্র ছাত্রী পড়িয়েছে কিন্তু মা’র বেলায় এসে সেও ফেল। তাকে কিছুতেই বোঝাতে পারেনি। বরং এসব শুনলে মা রেগে আগুন হয়ে যায়। এবং সন্দেহ করে আমরাও এ কনসপিরেসিতে আছি।
— কোন কন্সপিরেসি?
— বাটি ফেরত না দেবার ইলাবোরেট কন্সপিরেসি। কারণ সময়ে সময়ে প্যান্ট্রি ভর্তি বক্সের কিছু অংশ ফেলে দেবার কথা আমরা সাজেস্ট করেছি। তাই আমরা বিপক্ষ দল!
— মাই গড। ফ্রি বক্স নিয়ে এত কান্ড?
— হু। আমাদের ধারণা সে আমাকে বা বাবাকে যতটা ভালোবাসে, তার বক্সদের এর চাইতে বেশি ভালোবাসে।

আবারও হাসতে থাকে পারি। সত্যি, পারিজাকে হাসলে এত ভালো লাগে। মেয়েটা আরও বেশি হাসে না কেন?
— এখন বলো তোমার মা কেন পাগল?
— আমার মায়েরও একটা বড় পরিচিত সার্কেল আছে। পার্টি, গসিপিং খুব চলে। যা হয়, ইউ নো। তো ইদানিং সে সার্কেলের অনেকেরই ছেলেমেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। সে থেকে আমার মা ঘরে বাইরে মুখ দেখাতে পারছে না।
— কেন?
— আমি হাই স্কুলে ওঠার পর থেকে আমার মায়ের মেইন এইম ইন লাইফ হয়ে গেল ধুমধাম করে আমার বিয়ে দেবে। এনিয়ে তার সমস্ত প্ল্যান প্রোগ্রাম করা শেষ। কবে থেকে গয়না কিনছে, শাড়ি কিনছে। এমনকি সে কোন প্রোগ্রামে কী পরবে, সেটাও রিসেন্টলি কিনে ফেলেছে।
— কিন্তু মুশকিল হচ্ছে তোমাকে রাজি করাতে পারছে না, এই তো?
— তুমি কী করে বুঝলে?
— যে মেয়ে বিয়ের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে ডাউনটাউনে পালায়…

কথাটা শেষ করল না রিক, হাসতে থাকল। পারি সিরিয়াস হয়ে গেল
— আই এম রিয়েলি সরি, রিক। এটা তুমি না, যে কেউ হলে আমি পালাতাম। মা আমাকে না জানিয়ে এ প্রোগ্রাম সেট করেছিল। এমন আগেও করেছে। কিন্তু ঐদিন আমি রিভোল্ট করেছিলাম। আমি জানি তুমি খুব ইন্সাল্টেড ফিল করেছ বাট ইট হ্যাড নাথিং টু ডু উইথ ইউ। বিলিভ মি।
— রিয়েলি? তুমি যেভাবে আমাকে ইগনোর করছ, আমি তো ভাবলাম ইউ হ্যাভ সামথিং এগেইন্সট মি।
— আই সোয়ের, রিক। নাথিং এগেইন্সট ইউ। কিন্তু মা’কে আমি বোঝাতে পারছি না যে বিয়ে এখন আমি করব না।
— এখন করবে না, নাকি কখনো করবে না?
জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো পারি।
— একসময় না একসময় তো করতেই হবে।
— এমনভাবে বলছ যেন তোমাকে একটা শাস্তি পেতে হবে।
— না, আমি এভাবে মিন করিনি। মানে বিয়ে তো করতেই হবে। সবাই করে। আমি এখন তৈরি না, দ্যাটস অল।
— কেন তৈরি না, জানতে পারি কি? আমি জানি পার্সোনাল কোয়েশ্চান হয়ে যাচ্ছে, উত্তর দেয়া তোমার ইচ্ছা।

পারি অনেক্ষণ চুপ করে রইল। ওর চেহারায় বেদনার ছায়া পড়ল। একসময় ফিসফিস করে বলল
— আমার মন এখনো তৈরি না।
— তৈরি না? আর ইউ ইন লাভ উইথ সামওয়ান?
— বলতে পারো।
— তাহলে তোমার মা’কে বলছ না কেন?
— সম্ভব না।
— কেন জানতে পারি?
পারি চুপ করে রইল। এবারে সে উত্তর দেবে না, বোঝা গেল। কিন্তু রিকের জেদ চেপে গেছে। ওকে এ রহস্য ভেদ করতেই হবে।
— আই স ইউ, ইউ নো।
— হোয়াট ডু ইউ মিন, রিক? চমকে গেল পারি।
— লাস্ট নাইট। আমি তোমাদের উল্টোদিকের রেস্তোরায় ছিলাম। আই স ইউ উইথ এ গাই। ইজ হি দা রিজন?
ফিসফিস করে উত্তর দিল পারি।
— ইয়েস।

রিকের বুকে অদ্ভুত একটা খালিখালি অনুভূতি হল। যতক্ষণ শিওর ছিল না, ততক্ষণ একরকম ছিল। আর এখন পারিজা যখন নিজের মুখে স্বীকার করল, তখন তো আর কোনো আশাই নেই।
আরকিছু জিজ্ঞেস করতে রিকের ইচ্ছাই করল না। একটা ম্যারিড ম্যানের সাথে পারিজা… আনবিলিভএবল!

খানিক বাদে পারি আপনা থেকে বলতে আরম্ভ করল
— এন্ড্রু আমার বস ছিল। ডাইরেক্ট বস না, আমি তখন নতুন কাজে ঢুকেছি। প্রথম প্রোজেক্ট ছিল ম্যানেজমেন্ট লেভেলের কয়েকজনকে নিয়ে একটা প্রেজেন্টেশান তৈরি করে দেয়া। বোর্ড মিটিং এর জন্য। সে সূত্রে এন্ড্রুর সাথে কাজ করতে শুরু করলাম। ও ছিল কোম্পানির মিডিয়া ম্যানেজার। আমি ওর কাজ নিয়ে ইনফর্মেশান জোগাড় করতে ওরসাথে নানান মিটিং এটেন্ড করতাম, কখনো কখনো অন্য অফিসে যেতাম ওরসাথে। হয়ত প্রয়োজনের চাইতে বেশিই গেছি। কিন্তু নিজেকে থামাতে পারিনি। এন্ড্রু এত ভালো, এত কেয়ারিং ছিল। একসময় কাজ শেষ হয়ে গেল কিন্তু আমাদের যোগাযোগটা বজায় রইল। দুই মাস পরে আমরা আবিস্কার করলাম উই লাভ ইচ আদার। আমি আগে কখনো প্রেমে পড়িনি। এখন এন্ড্রুর মাঝে ডুবে গেলাম। এন্ড্রুও ইকোয়ালি সিরিয়াস। ছয়মাসের এনিভার্সারিতে ও আমাকে প্রপোজ করল। আমার মাথায় তখনি আকাশ ভেঙে পড়ল। আমি আসলে তখন ভেসে গেছি কিন্তু এ সম্পর্কের পরিণতি কী হতে পারে এনিয়ে কখনো ভাবিনি।
— অসুবিধা কী ছিল বিয়ে করতে? এমন বিয়ে তো আনকমন না। অনেকেই বিদেশি ছেলে বিয়ে করছে।
ম্লান হাসল পারি।
— হ্যাঁ, অনেকে করছে। অনেকে আমাদের কালচার খুব পছন্দ করে, চেষ্টা করে এর সাথে মিশে যেতে। কিন্তু সেটা পুরোপুরি কখনো সম্ভব হয় না।
— সে তো হবেই না। একটা বিদেশি ছেলের কাছ থেকে এতটা এক্সপেক্ট করাও ঠিক না। এমনকি আমরাও কি পুরোপুরি বাঙালি? এখানে জন্মেছি, এখানে বড়ো হয়েছি। আমরাও তো মিক্সড হয়ে গেছি।
— তুমি আমার মা’কে জানো না, রিক। বাবা ইজিগোয়িং, সে হয়ত মেনে নিত একসময়। কিন্তু মা! সে কিছুতেই আরেকটা এমন বিয়ে মেনে নিত না।
— আরেকটা?
— আমার এক বড়ো ভাই আছে। সে তার কিছুদিন আগে এক চাইনিজ মেয়েকে বিয়ে করল। সেনিয়ে বাড়িতে তুলকালাম। ভাইয়ার বিয়ে নিয়ে মার প্ল্যান সব শেষ। মাও চেষ্টা করেছিল কিন্তু কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারল না। ভাইয়া এখন ভ্যানকুভারে আছে। মাঝেসাঝে আসে কিন্তু সম্পর্কটা আর সহজ নাই। কেমন ভাসাভাসা, নেহাত যতটুকু না করলেই নয়, ততোটুকু করে দুপক্ষ।
— তাই বলে তুমি নিজের প্রতি এমন অবিচার করবে? জাস্ট বিকজ হি ইজ নট ফ্রম দা সেম কমিউনিটি? আর কোনো কারণ ছিল কি? ইজ হি ম্যারিড?
— না না। এন্ড্রু ম্যারিড ছিল না। হি নেভার ওয়ান্টেড টু গেট ম্যারিড টিল হি মেট মি। কিন্তু আমি বুঝেছিলাম এ বিয়েতে একসময় কেউ হয়ত সুখী হব না। বিয়ে এমনিতেই অনেক কমপ্লিকেটেড রিলেশানশিপ। তারমধ্যে ও আমাদের কালচার বুঝবে না, আমাদের ফ্যামিলির সাথে মিশে যেতে পারবে না। মাও একটা বড়ো ধাক্কা কেবলি খেয়েছে। আমিও যদি তাকে আরেকটা ধাক্কা দেই… তাছাড়া…

একটু চুপ করে থাকে পারি। কিন্তু আজ যেন কথায় পেয়েছে ওকে।
— তাছাড়া আমাদের বয়সের ডিফারেন্সও ছিল। এটাও একটা ইস্যু হত। সেটা নাহয় কোনোমতে ম্যানেজ করে ফেলতাম কিন্তু ও সম্পূর্ণ একটা ভিন্ন কমিউনিটির লোক। একধরণের জীবনে এতদিন ধরে অভ্যস্ত। যে জীবনের সাথে আমাদের কমিউনিটির ছিটেফোঁটাও মিল নাই। আমি এত বড়ো স্টেপ নিতে তাই পিছিয়ে এলাম। টাইমিং টাও খারাপ ছিল তখন।
— এ ব্যাপারে সে কী বলল?
— অনেক বোঝানোর চেষ্টা করল। হি ওয়াজ রিয়েলি সিরিয়াস এবাউট মি। আমিও ছিলাম। কিন্তু সেটা সবসময় এনাফ হয় না। লাস্টবার যখন আমাদের দেখা হল তখন উই হ্যাড এ টেরিবল ফাইট। উই ব্রোপ আপ দ্যাট ডে ইন এ বিটার ওয়ে। ও চাকরি ছেড়ে দিয়ে মেক্সিকো চলে এল। বিয়ে করেছে কিছুদিন আগে।
— তুমি কি ওর সাথে দেখা করতে মেক্সিকোতে এলে তাহলে।
— না, এ ট্রিপ মাহার আইডিয়া ছিল। টু চিয়ার আপ জেরিন। কিন্তু আমি জানতাম ও মেক্সিকোতে আছে। ওরসাথে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিলেও আমি ওকে ব্লক করিনি। সেও আমাকে ব্লক করেনি কিন্তু আমাদের মধ্যে ঐ দিনের পরে আর কোনোই কমিউনিকেশান ছিল না।
— তাহলে এখন যোগাযোগ করছ কেন? তুমি কি আবার ওর সাথে সম্পর্কে যেতে চাও?
— না, আমি ওকে ভুলে যেতে চাই। বাট আই নিড ক্লোজার। ওরসাথে এত তিক্ততার মধ্য দিয়ে সম্পর্ক ভেঙেছে যে আমি এ থেকে বের হয়ে আসতেই পারছি না। এতদিনে আমি বুঝেছি ওরসাথে শেষবারের মতো দেখা করে বিদায় নিতে হবে আমাকে। ভালোমনে। ওরদিক থেকেও তো আপত্তি হবার কথা না। বিয়ে করেছে, নতুন জীবন আরম্ভ করেছে। ও নিশ্চয় পুরানো কথা ধরে নাই। কিন্তু আমি মুভ অন করতে পারছিলাম না। সেজন্য গতরাতে ওকে কল দিয়ে দেখা করতে বললাম।
— দেখা তো হল, এখন মুভ অন করতে পারবে, পারিজা? প্রশ্নটা করে রিক নিশ্বাস বন্ধ করে রইল জবাবের অপেক্ষায়।

জানালা দিয়ে ভোর উঁকি দিচ্ছে। নতুন দিনের লাল সূর্যের অল্প আলো এসে পড়েছে পারির মুখের ওপরে। ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।
— পারব। বাট আই নিড টাইম। মাই হার্ট ইজ স্টিল উন্ডেড। এ ক্ষত সারবার জন্য সময় চাই আমার। কিন্তু মা এরমধ্যেই এমন চাপাচাপি শুরু করে দিয়েছে যে মাঝেমাঝে মনে হয় আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না, ডুবে যাচ্ছি। সে থেকেই কিছুদিন আগে শুরু হল প্যানিক এটাক।
— পারিজা! উঠে পারির সামনে এসে বসল রিক। দুহাতে ওর মুখ তুলে ধরল
— অফ কোর্স ইউ নিড টাইম। তোমার মা’কে বুঝিয়ে বলো।
— বুঝবে না। সে আমাকে বড়ো বলেই ভাবে না। ভাবে ছোটবেলার মতো আমাকে চালাতে পারবে।
— কিন্তু না বললে তো হবে না, পারিজা। তুমি অনর্থক সাফার করছ। জোর করলে যে উলটা ফল হতে পারে তাকে বুঝতে হবে। তার ইচ্ছাই তো সবকিছু না। তোমারও একটা দিক আছে। অন্যের কথা এত ভেবো না, পারিজা। নিজের কথাও একটু ভাবো। একাই বার্ডেন ক্যারি কোরো না।
পারির চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়তে লাগল। রিক নিজেকে সামলাতে পারল না। আস্তে পারির ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্শ করল। তারপরে ছেড়ে দিল।

স্তম্ভিত গলায় পারি জানতে চাইল
— হোয়াই ডিড ইউ কিস মি, রিক?
স্পস্ট করে রিক জানালো
— কুডন্ট হেল্প মাইসেলফ। তোমাকে কাঁদতে দেখে ভালো লাগেনি আমার।
চোখ মুছল পারি। রিক আবার বলল
— আই এম নট সরি, ইউ নো। আমার মনে হয়েছে তোমাকে কেয়ার করা দরকার, প্যাম্পার করা দরকার, তাই। আই হ্যাভ নো আদার এজেন্ডা।
— আই নো, রিক। তুমি একটা পার্ফেক্ট জেন্টেলম্যানের মতো বিহেভ করেছ পুরাটা সময়। বরং আমিই প্যানিক করে কী বিশ্রী একটা কান্ড করলাম।
— ডোন্ট বি এম্বারাসড, পারিজা। এতদিন ধরে এতখানি ভার বয়ে বেরিয়েছ বলেই এমনটা হচ্ছে।
— তোমাকে বলে অনেক হাল্কা লাগছে, রিক। এতদিন কাউকে বলিনি। নোবোডি নোজ।
— গ্ল্যাড আই কুড হেল্প।
উঠে পড়ল রিক। আড়মোড়া ভেঙে বলল
— যাই। তোমাকে ফিক্স করে দিলাম, সাফাতকেও করলাম। এখন গাড়িটাকে ফিক্স করতে পারি কিনা দেখি। নাহলে আমার রেপুটেশান টিকবে না!।
হেসে ফেলল পারি। রিক মুগ্ধ হয়ে গেল।
চলবে।