মন ভেজা শ্রাবণে পর্ব-০৮

0
361

#মন_ভেজা_শ্রাবণে❤️
(পর্ব – ৮)
——-♦——-
পাশের মেয়েটির ডাকে হুঁশ ফিরে অন্তির। নিজেকে ধাতস্থ করে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে পাশের মেয়েটি সতর্কতার সহিত তাকে সামনে মনোযোগী হতে বলছে। ক্লাসে স্যার এসেছেন। অন্তি সকলকে অনুসরণ করে উঠে দাড়িয়ে স্যারকে সালাম জানায়। চোখ জোড়া তার এখনো আড়চোখে জানালার বাহিরে চলে যাচ্ছে বারেবার। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত স্থানটি এখন ফাঁকা। কোনো মানব-মানবীর উপস্থিতি সেখানে নেই। অথচ একটু আগেই একজন সুন্দরী তরুণী হোঁচট খেয়ে পড়তে নিচ্ছিল ঠিক তখনই একজন সুদর্শন পুরুষ তাকে সন্তর্পণে আগলে নেয়। মেয়েটি লাজুক হেসে প্রস্থান করে। ছেলেটির ভাবমূর্তি বোঝা দায়। সে স্বভাবসুলভ গম্ভীর পদচারণে অগ্রসর হয়। কিন্তু তারা কেউই জানতে পারে না তাদের এই ঘেঁষাঘেঁষি অন্য কারো হৃদয়কে করে তোলে মরুভূমি। বক্ষে যন্ত্রণা বাড়িয়ে দেয় ভীষণ। মনে হয় যেন বহু বছরের হার্ট পেসেন্ট।

অন্তি মনকে স্থির করার চেষ্টায় ব্যর্থ হচ্ছে বারংবার। কোনো রকমে ক্লাস করছে। প্রথম দিন তেমন একটা পড়াশোনা হচ্ছে না। যেই টিচার আসছে সেই পরিচয় আদান-প্রদানে ব্যস্ত। এসব করে বই ধরতে ধরতেই বেল পড়ে যাচ্ছে। প্রতিটি বিরতিতে অন্তির চোখ সেই স্থানে বিচরণ করছে। অবশেষে অপেক্ষার ইতি টেনে ছুটির বেল বাজে। অন্তি কোনোদিকে না তাকিয়েই হন্তদন্ত পায়ে বেড়িয়ে যায়। পেছন থেকে কারো ডাকে পা জোড়া থেমে যায় তার। পাশের সিটের সেই মেয়েটি ডাকছে। মেয়েটি অন্তির পাশে এসে হাঁপাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে জোর পায়ে হেঁটে এসেছে অন্তিকে ধরতে। অন্তির প্রশ্নসূচক দৃষ্টি দেখে সে নিজেই বলল,

“হেই অন্তি তুমি এতো ফার্স্ট কেনো কখন থেকে তোমাকে ধরার চেষ্টা করছি।”

“রিল্যাক্স রিল্যাক্স!! আগে শান্ত হও তারপর বলো কী হয়েছে। এভাবে কেনো ছুটছো আমার পেছনে?”

“আরেহ তোমাকে পুরোটা ক্লাস নোট করলাম। তুমি হয়তো একটু বেশিই আপসেট হয়ে আছো। ক্লাসেও মনোযোগী ছিলে না। এনি প্রবলেম? আমাকে বলতে পারো আমি হেল্প করবো তোমায়।”

“নো নো! নো প্রবলেম। আমি ঠিক আছি।”

“আচ্ছা তুমি কী বিরক্ত হচ্ছো আমাকে দেখে? আসলে আমি এমনই খুব বেশি কথা বলি। চাইলেও থামতে পারি না। আর যাকে একবার ভালো লেগে যায় তার সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা না বলতে পারলে মনে শান্তি পাই না। এই যেমন দেখো না তোমাকে ভালো লেগে গেছে ভীষণ। এখন এই অবস্থায় তোমার সঙ্গে মিট না করে বাড়িতে চলে গেলে আজ রাতে আর আমার ঘুম হবে না। পেটের মধ্যে কথা গুলো রীতিমতো আন্দোলন শুরু করে দেবে। ক্লাসেও অনেক বার ট্রাই করেছি কিন্তু তুমি…… ”

অন্তি হেসে ফেলল। মেয়েটা একটু বেশিই কিউট। কীভাবে পকপক করছে৷ অন্তি অনূভব করল তার হৃদয়ের দহন কিছুটা উপশম হয়েছে এর বকবকানিতে। কেমন জানি মেডিসিনের মতোই। অন্তি মিষ্টি হেসে মেয়েটিকে বলল,

“আচ্ছা তোমার নাম কী?”

মেয়েটি অবাক হয়ে বলল,”দেখেছ তুমি আমার নামটাও খেয়াল করো নি। আমি ঠিকই বুঝেছিলাম তুমি ক্লাসে অমনোযোগী। আমি কিন্তু পরিচয় পর্বের সময় ঠিকই তোমার নাম টা শুনে রেখেছিলাম। বাই দি ওয়ে, আমার নাম স্নেহা। সারাবিকা বিনতে স্নেহা!!”

“ওয়াও সো কিউট নেম। তুমি যেমন তোমার নামটাও তেমন।”

স্নেহা উৎফুল্ল কন্ঠে বলল,”ও মাই গড! তোমার পছন্দ হয়েছে আমাকে?”

অন্তি মাথা নেড়ে “হ্যাঁ” বোঝালো।

স্নেহা খুশিতে লাফিয়ে উঠে অন্তিকে জড়িয়ে ধরল। শক্ত করে চেপে ধরে উৎফুল্লতার সঙ্গে বলল,

“ওহহহহো আ’ম সো হ্যাপি। তুমি আমাকে অপছন্দ করলে আমার খুব মন খারাপ হতো। আচ্ছা আজ থেকে আমরা তাহলে ফ্রেন্ড।”

স্নেহা অন্তিকে ছেড়ে দাড়িয়ে ওর দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে কথাটি বলল। অন্তি স্নেহার আচমকা আক্রমণে হতভম্ব হয়ে পড়লেন আবার নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে স্নেহার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে নিলো। দু’জনের অধর কোণে মিষ্টি হাসি। যার অর্থ তারা এখন থেকে ফ্রেন্ড। দুই মেরুর দুই মানবী কীভাবে বেস্ট ফ্রেন্ড হতে পারে!যেখানে একজন পুরোপুরি শান্তশিষ্ট, অভিমানী তো আরেকজন চঞ্চল, দুষ্টুরানী।

———————-
কথা ছিলো অন্তিকে আদ্র বাড়িতে পৌঁছে দিবে। কিন্তু অন্তি সে কথা অমান্য করে একাই রিকশা ধরে বাড়ি চলে গেলো। আদ্র সারা কলেজ খুঁজেও অন্তির খোঁজ পেলো না। হন্তদন্ত হয়ে সে অনিককে কল করলো। অনিক জানালো, সে তো সকালেই বলে গিয়েছে কলেজ শেষে বন্ধুর বাড়িতে দরকারী কাজে যাবে তো কথা মতো সে সেখানেই চলে গেছে। অনিকের থেকে ফোন কেটে আরিয়াকে ফোন করতেই সে জানালো, সে আরও এক ঘন্টা আগে প্রাইভেট কোচিংয়ে চলে গেছে কলেজের ক্লাস ডিউ রেখেই। আদ্র এবার ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল। অন্তির কাছে ফোন নেই আগের দিন রাতে রাগের মাথায় যে আছাড় মেরেছে তাকে করে একেবারে স্বর্গে চলে গেছে। এখন উপায় ভেবে পায় না আদ্র। অকস্মাৎ আদ্র কিছু একটা ভেবে ছুট লাগায় বাড়িতে। গাড়ি চালাতেও হিমশিম অবস্থা আজ তার।

বাড়িতে ঢুকেই এক প্রকার চিৎকার করে আদ্র অন্তিকে ডাকছে। তখনই রুহানা বেগম আঁচলে হাত মুছতে মুছতে কিচেন থেকে বেড়িয়ে এলেন। আদ্র দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বললেন,

“কী ব্যাপার এভাবে চেঁচাচ্ছ কেনো? অন্তি তো শাওয়ার নিচ্ছে হয়তো।”

আদ্র লম্বা শ্বাস টেনে শান্ত হলো। পরপরই দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করল, “কখন এসেছে?”

“এই তো বিশ মিনিটের মতো হলো তো।”

আদ্র গটগট পায়ে হেঁটে অন্তি যে রুমে আছে ওইদিকে চলে গেলো। পেছন থেকে রুহানা বেগম বললেন,”কী হয়েছে? ওভাবে রেগে আছো কেনো? বাচ্চা মেয়েটা ভয় পাবে তো?সামলাও নিজেকে।”

আদ্র শুনলো কী না কে জানে? রুহানা বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কিচেনের দিকে অগ্রসর হলেন। চুলায় তরকারি পুড়তে বসেছে।

———————-
সবেই শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে অন্তি। আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুছতে ব্যস্ত সে। হঠাৎ দরজার শব্দে পেছন ঘুরতেই আঁতকে ওঠে তার অন্তরিক্ষ। আদ্র ভয়ংকর রুপে তার সম্মুখে। এমন ভয়ংকর আদ্রকে আগে কখনো দেখে নি অন্তি। ভীষণ ভয় করছে তার। ওগুলো কী চোখ নাকি আস্ত আগ্নেয়গিরি। যেন ঝড়ে পড়ছে আগুনের লাভা। অন্তি বারকয়েক ঢোক গিলল। থতমত কন্ঠে কিছু বলতে নিবে কিন্তু তার আগেই সপাটে চড় পড়ল তার ডান গালে। অন্তি টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের কোণে বারি খেলো। কপালে কিঞ্চিৎ লাগলো তবুও টু শব্দটি করল না। কারণ সে জানে এখন মুখ খোলা মানে নিজের ওপরে সাইক্লোন ডেকে আনা। আদ্র চিৎকার করে বলল,

“ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া হোয়াট আই ওয়াজ গোয়িং থ্রো অল দিস টাইম? হাউ মাচ আই ওয়াজ সাফারিং?”

অন্তি কেঁপে ওঠে। নিঃশব্দে ফুপিয়ে চলেছে। আদ্র রাগ সংবরনের চেষ্টায় পাশেই টেবিল থেকে কাঁচের জার টা খুব জোরে ফ্লোরে আছাড় মা’রে। ততক্ষণাৎ জার টি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল। অন্তি ভয়ে সিটিয়ে গেলো। হেঁচকি তুলে কেঁদে উঠল। আদ্রর হুঁশ ফিরল যেন অন্তির কান্নায়। অকস্মাৎ সে ধাপ ধুপ কদম ফেলে অন্তির একদম নিকটে চলে গেল। অন্তি পেছতে নিতেই এক ঝটকায় নিজের বক্ষে আটকে ফেলল ওকে। খুব দৃঢ় সেই বন্ধন। খুব শক্ত। খুব ভরসার। খুব ভালবাসার।

———————

চলবে,
✍️সাদিয়া আফরিন নিশি