#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ১৭
সকালে ব্রেকফাস্ট করে অভিদ, রায়হান অফিসে চলে এসেছে। অভিদ অফিসে বসে ফাইল দেখছিলো তখন রায়হান নক করে ঢোকে।রায়হান টেবিলের উপর একটা ফাইল রেখে বলে
” প্রত্যেক বছরের মতো এবারও award competition হবে।”
অভিদ রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলে
” কবে হবে ?? ”
রায়হান চেয়ারে বসে বলে
” কয়েকদিনের মাঝেই। কালকে রাতে ইমেইল পাঠিয়েছে আর আজকে কার্ড পেয়েছি। কোম্পানি থেকে প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে হবে। ”
অভিদ ল্যাপটপ খুলতে খুলতে রায়হানকে বলে
” নিরবকে আসতে বল। ” রায়হান টেবিলের উপর থাকা ল্যান্ডফোন থেকে নিরব কে কল করে বলে
” কেবিনে আসো কথা আছে।”
নিরব হচ্ছে অভিদের অফিসের পি.এ। রায়হানের মতোই বিশ্বস্ত। নিরব খুব ভাল একজন মানুষ। রায়হানের মতো নিরবকে ও অভিদ বিশ্বাস করে তবে অভিদের মনে রায়হানের জন্য থাকা জায়গাটা কেউ নিতে পারবে না। অভিদের অফিসে মেয়েদের পি.এ হিসেবে সিলেক্ট করা হয় না। পি.এ ছেলেই থাকতে হয়।
দরজায় নক করতেই অভিদ গম্ভীর গলায় বলে
“Come in. ”
দরজা খুলে কেবিনে নিরব প্রবেশ করে। অভিদ নিরবের দিকে একবার তাকিয়ে চেয়ার দেখিয়ে বলে
” sit there. ” নিরব এসে অভিদের সামনের চেয়ারে বসে। পাশে রায়হান বসে আছে। অভিদ নিরবের দিকে তাকিয়ে বলে
” নিরব জানো তো আমাদের কোম্পানি থেকে প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে হবে ?? ”
নিরব গলার টাইটা একটু নাড়িয়ে বলে
” জি স্যার জানি। ”
অভিদ চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে
” গুড। তাহলে শোনো এখন থেকে আমাদের প্রেজেন্টেশন এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এন্ড আগের থেকে বেষ্ট প্রেজেন্টেশন করতে হবে। আর খেয়াল রাখবে যাতে কোম্পানির বাইরে প্রেজেন্টেশন এর একটা ডিটেইলসও না যায়। আন্ডারস্ট্যান্ড??” রায়হান আর নিরব একসাথে মাথা নাড়ায়। তিনজন তাদের কাজে লেগে পড়ে।
কাজের মাঝে অভিদের কল আসে। অভিদ ফোন হাতে নিয়ে দেখে গার্ড ফোন করেছে। হঠাৎ গার্ডের ফোন দেখে অভিদের কপাল কুচকে আসে। অভিদ কল রিসিভ করে বলে
” বলো ” ওপরপাশ থেকে গার্ড ভয়ে ভয়ে বলে,
” স্যার !! অনি ম্যাম, রুহি ম্যাম, তুষার স্যার জোর করে গাড়ি নিয়ে নিজেরা একাই বেড়িয়ে গিয়েছে। আমরা অনেক জোড় করলেও কোনো গার্ড কে নেয়নি। এমনকি ড্রাইভার কেও নিয়ে যায়নি। ”
অভিদ রেগে চেচিয়ে বলে
” হোয়াট ডু ইউ মিন বাই দিস ?? ওরা কি বাচ্চা নাকি যে কোনো কথা না শুনে বেড়িয়ে গিয়েছে। ফুপি, ফুপা কোথায় ”
গার্ড কাপাকাপা গলায় বলে
” স্যার ওরা তো বাইরে গিয়েছে। কিসের দরকারি কাজে।” অভিদ রাগে টেবিলের উপর জোড়ে ফোন রাখে। রায়হান বলে
” কি হয়েছে, কারা বেড়িয়ে গিয়েছে ??”
অভিদ দাতে দাত চেপে বলে
” রুহি, অনি, তুষার তিনজন পাকনামি করে একাই বেড়িয়ে গিয়েছে। একটা গার্ডও নেয়নি। ওরা কি বাচ্চা নাকি বোঝে না কিছু ?? রাস্তায় যদি কিছু হয় তখন কি হবে। এখন তো আবার আখিল সুযোগের অপেক্ষায় বসে আছে রুহির জন্য। আচ্ছা আমি যাচ্ছি। ”
বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। তাড়াতাড়ি যেতে নিলেই রায়হান বলে উঠে
” আমি আসি। ”
অভিদ পেছনে ঘুরে বলে
” না তুই আর নিরব কাজ কর আমি ওদের দেখছি ” বলে রায়হানকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বেড়িয়ে যায়।
এদিকে রুহি, অনি, তুষার খাচ্ছে আর চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখিছে। ওরা তিনজনের আজকে একা একা বের হতে ইচ্ছে করলো তাই সব গার্ডকে ফেলে চলে এসেছে। তিনজন রেস্টুরেন্টে বসে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে। টেবিলের উপর তিনজনের সামনে নুডলস, দই ফুচকা, কোক, রাখা। একবার আইসক্রিম খাচ্ছে তো একবার একটা ফুচকা মুখে দিচ্ছে আবার নুডলস খাচ্ছে।
অনি নুডলস খেতে খেতে বলে
” ইউ নো ভাবি আজকে আমি অনেক খুশি!! কারণ ভাইয়া কখনো গার্ড ছাড়া কোথাও যেতেই দেয় না। তবে আজকে আমি গার্ড ছাড়া এসেছি আমার অনেক খুশি লাগছে।”
তুষার আইসক্রিম খেতে খেতে বলে
” হুম সব সময় গার্ড নিয়ে ঘুরতে একদম ভালো লাগে না। গার্ড নিয়ে ঘুরলে মনে হয় কি, এখনি কেউ আমাদের মারতে আসবে।আজকে গার্ড না থাকায় ওইসব কিছুই মনে হচ্ছে না। ”
রুহি ফুচকা মুখে পুরে চিবোতে চিবোতে বলে
” এসেছি তো ঠিকাছে তবে তোমার ভাইয়াকে যদি গার্ডরা জানিয়ে দেয় বা তোমার ভাইয়া কোন ভাবে জানতে পারে তাহলে মনে করো আজকে আমাদের শেষ দিন। ”
অনি রুহির দিকে তাকিয়ে অসহায় মুখ করে বলে
” ভাবি প্লিজ ভয় দেখিয়ো না। ভাইয়া কিছু করবে না। ” রুহি নিশ্বাস ফেলে। তিনজন গল্প করতে করতে খেতে থাকে। রুহি গল্প করার সময় খেয়াল করলো রেস্টুরেন্টে থাকা মানুষ গুলো একে একে বের হয়ে যাচ্ছে। ওয়েটার, অনি, তুষার, রুহি ছাড়া আর কেউ নেই।
রুহি অবাক হয়ে বলে
” সবাই একসাথে কোথায় চলে গেলো ??”
অনি, তুষার চারপাশে তাকিয়ে দেখে সত্যি কেউ নেই। রুহি ভয় নিয়ে একটু গুটিয়ে বসে বলে
” আমার না ভয় করছে। একা না আসাই ভালো ছিলো ”
অনি হেসে দিয়ে বলে
” ভাবি ভয় পাওয়ার কিছু নেই কারণ এটা ভাইয়ার রেস্টুরেন্ট। এখানে আমাদের ক্ষতি করার মতো কেউ আসতে পারবে না ” অনির কথায় রুহি একটু নিশ্চিত হয়। তুষার চিন্তিত হয়ে বলে
” কিন্তু সবাই চলে গেলো কেনো ??”
” কারণ আমি যেতে বলেছি তাই। ” রুহি, অনি, তুষার তাকিয়ে দেখে অভিদ দাঁড়িয়ে আছে। অভিদকে দেখে তিনজনের গলা শুকিয়ে গেলো। তিনজন চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে গেলো। অভিদ প্রচন্ড রেগে আছে। অভিদ রুহিদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বললো
” তোমাদের গার্ড ছাড়া বাইরে বের হওয়া নিষেধ আছে সেটা কি ভুলে গিয়েছো ??”
তিনজন মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে। অভিদ রেগে টেবিলের উপর থেকে কাচের flowerbask টা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয় ফ্লোরে। রুহি ভয়ে চোখ বন্ধ করে অনির হাত ধরে। অভিদ গান হাতে নিয়ে তিনজন এর সামনে এসে গম্ভীর গলায় বলে
” এর পর থেকে এইরকম ভুল যদি আর কোনোদিন হয় তাহলে তোমাদের তিনজনের এমন অবস্থা করবো !! দেখতে পাবে ” অনি, রুহি তুষার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
অভিদ তীক্ষ্ণ নজরে তিনজের দিকে তাকায়।
” তোমাদের কোনো ধারণা আছে গার্ড ছাড়া বের হওয়া তোমাদের জন্য কতোটা বিপদজনক। আখিল তো সুযোগের জন্য বসে আছে। গার্ড থাকা সত্ত্বেও তোমাদের উঠিয়ে যেতে পারবে আর তোমরা তো একা এসেছো। কোনো চিন্তা আছে ?? নাকি শুধু আমাকেই চিন্তা করতে হবে ?”
অনি মিনমিন গলায় বলে
” সরি ভাইয়া আমরা আর একা একা আসবো না।” অভিদ কঠোর গলায় বলে
” আর আসতে দিলে তো আসবে ?? আজকের পর আমাকে না বলে বাড়ি থেকে এক পাও বের করলে আমি পা ভেঙে রেখে দেবো। যাও গাড়িতে উঠো ” অভিদের ধমক খেয়ে তিনজন সুরসুর করে বেড়িয়ে গাড়িয়ে উঠে বসে। অভিদ তিনজনকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে আবার অফিসে চলে যায়।
রাতে অভিদ, রায়হান বাড়িতে এসে দেখে রুহি, অহি, তুষার তিনজন তিন সোফায় শুয়ে আছে। রুহি আর অনি হেসে হেসে কথা বলছে আর ফোন টিপছে। আর তুষার গানে হেডফোন লাগিয়ে ফোন টিপছে। রায়হান মিটমিট করে হেসে রুমে চলে গেলো। অভিদ তার কোর্ট খুলে সোফার হ্যান্ডেলে রাখে কোমড়ে হাত রেখে রুহি আর অনির দিকে তাকিয়ে বলে
“এই যে দুই মহারানী !! পড়াশোনা নেই নাকি আপনাদের ?? সারাদিন ঘোরা ঘুরি, খাওয়া দাওয়া, ফোন টেপা ছাড়া আর কিছু করতে পারো ?? ”
অভিদকে দেখে দুজন ধরফরিয়ে উঠে বসে। অভিদের কথা শুনে অনি হেসে বলে উঠে
” ভাইয়া আমি এখানে কি পরবো বলো ?? আমার ভার্সিটি তো আমেরিকায় ”
অভিদ রাগি গলায় বলে
” কালকে তোকে ভার্সিটি নিয়ে এডমিশন করিয়ে দেবো যতদিন এখানে থাকবি ততোদিন ভার্সিটি তে যাবি আর পড়াশোনা করবি ”
অনি কাঁদোকাঁদো মুখ করে পা নাচাতে নাচাতে রুমে চলে গেল।
অভিদ এবার রুহির দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে
” কি আপনাকেও ইনভেনশন কার্ড দিয়ে রুমে পাঠাতে হবে ?? যাও রুমে গিয়ে পড়তে বসো ” রুহি মাথা নেড়ে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
অভিদ তুষারের দিকে তাকিয়ে দেখে তুষার আগের মতোই শুয়ে আছে। অভিদ যে এসেছে সেদিকে খেয়ালই নেই। অভিদ গিয়ে তুষারের কান থেকে হেডফোন টা খুলে নেয়। তুষার লাফিয়ে উঠে বলে
” কে রে ?? ” অভিদকে দেখে তুষার ঢোক গিললো।
অভিদ হেডফোনটা ছুড়ে সোফার উপর ফেলে দিয়ে রাগি গলায় বলে
” তোকে কি আমি শুয়ে থাকার জন্য বাসায় বসিয়ে গিয়েছি ?? তোকে যে অফিসের কয়েকটা ফাইল দিয়েছিলাম সেগুলোর কাজ হয়েছে নাকি সারাদিন ফোন নিয়েই পড়ে থাকিস ”
তুষার মাথা চুলকে বলে
“মানে আরও তিনটা আছে ” অভিদ দাতে দাত চেপে বলে
” কালকের মধ্যে সব কাজ শেষ করবি, এখন গিয়ে কাজ কর ” তুষার মাথা নেড়ে সেখান থেকে চলে যায়। অভিদ সোফার হ্যান্ডেলের উপর থেকে কোর্ট টা নিয়ে রুমে চলে যায়।
অভিদ রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর সবার সাথে ডিনার করে রাত ১ টা পর্যন্ত কাজ করে রুহির পাশে ঘুমিয়ে পরে।
সকালে ফুপি, ফুপাকে নিয়ে সবাই এয়ারপোর্ট যায়। ফুপা, ফুপি ফ্লাইটে উঠলে সবার মন খারাপ হয়ে যায়। অনি, রুহি, তুষার ভার্সিটিতে চলে যায়। তুষার অনিকে রুহিদের ভার্সিটিতে এডমিশন করাতে নিয়ে যাচ্ছে। আর অভিদ, রায়হান অফিসে চলে যায়।
আজকে দুই দিন হয়ে গেলো অভিদের ফুপি চলে গিয়েছে। দুইদিন অভি, রায়হানের ভিষন ব্যস্ততায় কাটলো। রুহি, অনি ভার্সিটিতে যায় তাই সময় কেটে যায়। ভার্সিটিতে মিশুর সাথে দুজনের ভালো সময় কাটে। অভিদ, রায়হান, নিরব নতুন প্রেজেন্টেশনে ব্যস্ত থাকায় তুষার অভিদকে অফিসের বাকি কাজে হেল্প করছে।
অভিদ, রায়হান রাতে এসে দেখে রুহি ড্রইংরুমের সোফায় ঘুমিয়ে আছে। এক হাত সামনের টেবিলের উপর অন্য হাত পেটে উপর রাখা। রায়হান অভিদের দিকে তাকিয়ে আফসোস সুরে বলে
” ভাইরে জীবনে বড় একটা ভুল করলাম। এখনও বিয়েই করলাম না। আজকে আমারও একটা বউ থাকলে এভাবেই অপেক্ষা করতো প্রতিদিন। ”
অভিদ বাকা হেসে রায়হানের কাধে কনুই রেখে ভর দিয়ে বলে
” তো বিয়ে করে ফেল। মিশুর মা – বাবার সাথে আমি কথা বলে নেবো ” রায়হান হতভম্ব হয়ে অভিদের দিকে বড়বড় চোখ করে তাকায়।
রায়হান হা করে বলে
” কি সব বলছিস। ওই মেয়েকে বিয়ে করলে আমার জীবন তেজপাতা করে দেবে। দেখা হলেই আমাকে কিপটে বলে। আর বিয়ে করলে তো সারাজীবনই এই কথা শুনতে হবে। ”
অভিদ হেসে উঠে রায়হানের কথায়। রায়হান বিরবির করতে করতে রুমে চলে যায়। অভিদ এসে রুহিকে কোলে তুলে রুমের দিকে পা বাড়ায়। দুদিন ধরে এটাই চলছে। অভিদ, রায়হান দুদিন ধরে রার ১২টার পরে বাড়ি আসে আর রুহি অভিদ আর রায়হানের জন্য অপেক্ষা করতে করতে সোফায় শুয়ে থাকে। রুহি অভিদের সাথে ডিনার করার জন্য ওয়েট করে।
অভিদ রুমে এসে রুহিকে শুয়ে দেয়। কোর্ট খুলে কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়।
অভিদ ওয়াসরুমে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই রুহি ঘুম থেকে উঠে যায়।
রুহি ঘুম থেকে উঠে নিজেকে রুমে দেখে বুঝতে পারে অভিদ চলে এসেছে। রুহি হাই তুলে উঠে বসে। চোখ কচলাতে কচলাতে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। সার্ভেন্টরা ঘুমিয়ে আছে তাই নিজেই নিচে রান্না ঘরে গিয়ে ওভেনে খাবার গরম করে টেবিলে রাখতে থাকে।
অভিদ রুমে এসে রুহিকে না দেখে নিশ্বাস ফেলে নিচে চলে গেলো। নিচে গিয়ে দেখে রুহি টেবিলে খাবার রেখে রায়হানকে ডাকছে। অভিদ রেগে ধুপধাপ পা ফেলে চেয়ারে বসে পড়ে। রায়হান এসে পাশের চেয়ারে বসে আর রুহি অভিদের সামনে বসে। তিনজন খাওয়া শুরু। অভিদ খেতে খেতে রুহির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে
” তোমাকে আমি জেগে থাকতে নিষেধ করেছি না ?? এতো রাত পর্যন্ত জেগে থেকে লাভ কি?? অসুস্থ হলে তো পড়ে বিছানায় পড়ে থাকতে হবে।”
রুহি অসহায় চেহারা করে রায়হানের দিকে তাকায়। রায়হান রুহির তাকানোর কারণ বুঝতে পেরে অভিদকে বিরক্তি স্বরে বলে
” কি রে ভাই তুই এমন কেনো ?? তোর বউ নিজ থেকে বসে থাকে প্রতিদিন তোর সাথে ডিনার করবে বলে। আর তুই ওর উপর রেগে থাকিস। আমার বউ থাকলে না আমি নিজেই বলতাম প্রতিদিন আমার জন্য বসে থাকতে। আমাকে রান্না করিয়ে খাওয়াতে। তুইও তো রুহির হাতের রান্না করা খাবার খেতে পারিস। তা না করে শুধু বছিস। ”
রান্নার কথা শুনে রুহি বিষম খেলো। অভিদ উঠে তাড়াতাড়ি করে পানি খাওয়ালো রুহিকে।
মাথায় থাপা দিতে লাগলো। রুহির কাশি আস্তে আস্তে কমে গেলো।
অভিদ রুহির পাশে বসে রাগ দেখিয়ে বলে
” দেখেছিস ওকে রান্না করতে বলবো আমি ?? খেতেই গিয়েই এই অবস্থা আর রান্না করতে গেলে তো হাত পোড়াবে, গা পোড়াবে। ”
রায়হান দাত খিচে অভিদের দিকে তাকিয়ে ক্ষিপ্ত সুরে বলে
” তুই না একটু বেশিই করিস। রুহি অনেক ভালো খাবার রান্না করে। কালকে আমাদের রান্না করেও খাওয়াবে দেখিস। ”
রুহি মাথা নিচু করে ক্ষীণ সুরে বলে
” আমি কিছুই রান্না করতে পারি না শুধু সার্ভ করতে পারি ” রুহির কথা দুজনের কানে পৌছা মাত্রই অভিদ, রায়হান নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। অভিদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই রায়হানের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠে। আর রায়হান আগের মতোই তাকিয়ে থাকে। অভিদ রায়হানকে দেখে অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে খাওয়া শুরু করে। তবে খাওয়ার মাঝেও হেসে দিচ্ছে। রায়হান সেভাবে থেকেই খাওয়া শেষ করলো। আর রুহি লজ্জা পেলেও রায়হানের চেহারা দেখে দুঃখ পেলো। ওর হয়ে কথা বলতে গিয়ে এমন হলো।
তিনজন খাওয়া শেষ করে রুমে চলে গেলো।
রুহি বিছানায় এসে শুয়ে পরতেই অভিদ এসে শুয়ে পরলো পাশে। রুহি অবাক হয়ে বলে,
” আজকে কাজ করবেন না ??”
অভিদ রুহিকে টেনে আরও কাছে নিয়ে এসে বলে
” না আমাদের প্রেজেন্টেশন তৈরি হয়ে গিয়েছে। কালকে আমরা সেটা প্রেজেন্ট করবো।”
রুহি ব্ল্যাংকেট দিয়ে নিজেকে মুড়িয়ে নিয়ে বলে
” ওও খুব ভালো ” অভিদ ব্ল্যাংকেটের নিচ দিয়ে হাত নিয়ে রুহির পেটের উপর হাত রাখে। রুহি ঠান্ডা হাতের স্পর্শে কেপে উঠলো। আর কম্পিত গলায় বললো
” আপনার হাত অনেক ঠান্ডা ” অভিদ রুহির ঘাড়ে নাক ঘষে বলে
” কারণ তুমি অনেক গরম তাই। সারাদিন তো ব্ল্যাংকেটের নিচে শুয়ে থাকো। এতো উষ্ণ প্রিয় তুমি!! আবার সূর্যের আলোও পছন্দ করো না।”
রুহি ভেংচি কেটে মাথাটাও ব্ল্যাংকেটের নিচে ঢুকিয়ে নেয়। অভিদ হালকা হাসে রুহিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে।
অভিদ মিররের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে তৈরি করছে। আর রুহি মুখ ফুলিয়ে গালে হাত দিয়ে খাটে বসে আছে। রুহি কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে
” আমিও যাই না প্লিজ ?? আমি সবসময় আপনার সাথে থাকবো। প্লিজ ”
অভিদ চোয়াল শক্ত করে রেগে রুহির দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলে
” একবার বলেছি শোননি ?? আখিলও একজন বিজনেসম্যান। মনে আছে ?? আজকে সেখানে আখিলও আসবে। তোমাকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চাই না আমি। চুপচাপ বসে থাকো নাহলে তোমাকে আমি নিজেই আখিলের দিয়ে আসবো ” ধমক খেয়ে রুহি কেঁদে দেবে দেবে করে কাদলো না। চুপ করে বসে থাকলো।
অভিদ ফুলফিল তৈরি হয়ে রুহির সামনে এসে দাঁড়ায়। রুহি অভিদকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। অভিদ রুহির সামনে বসে রুহির মুখ ধরে নিজের দিকে ফেরায়। রুহি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। অভিদ রুহির কপালে ঠোট ছুঁয়ে বলে
” please don’t angry. আমি তোমার ভালোর জন্য বলছি। সাবধানে থেকো। আমি যাচ্ছি ”
বলে উঠে দাঁড়ায়।
রুহি আড়চোখে অভিদের দিকে তাকিয়ে বলে
” all the best. ” অভিদ মুচকি হেসে বেড়িয়ে যায়। অভিদ নিচে এসে দেখে রায়হান আর তুষার তৈরি হয়ে বসে আছে।
অভিদ দুজনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলে
” এখানে বসে আছিস কেনো। তোদের ইনভাইট করতে হবে যাওয়ার জন্য ??”
রায়হান দাঁড়িয়ে বলে
” না আমরা বাড়ির মানুষই আছি। ইনভাইট করতে হবে না চল ” অভিদ, রায়হান, তুষার গাড়ির কাছে যেতেই গার্ড গাড়ি খুলে দেয়। তিনজন বসতেই গাড়ি স্টার্ট দেয়।
অভিদরা বেড়িয়ে যেতেই অনি আর রুহি ড্রইংরুমের সোফায় বসে টিভি চালিয়ে পপকর্ন হাতে নিয়ে মুভি দেখতে বসে পরে।
অভিদরা পৌছে যায়। ভেতরে ঢুকতেই চারপাশে মিডিয়ারা ঘিরে ধরে। গার্ডরা ওদের সরিয়ে তিনজনকে ভেতরে নিয়ে যায়। এখানে দেশের বড়বড় বিজনেসম্যানরা ছিলো। অভিদ, রায়হান, তুষার গিয়ে নিজেদের সিটে বসে নিরব আগে থেকেই ছিলো। পআধ ঘন্টা পর অনুষ্ঠানের শুরু হলো।
– ladies and Gentleman attention please.
প্রতিবারের মতো এবারও টপ বিজনেসম্যানদের best product এর উপর ভিত্তি করে বিজয়ী number one group of industries সুযোগ পাবে international business company এর সাথে ডিল করার সুযোগ।
প্রতিবারে মতো এবারের সেই লিস্টে আছে
1. O.R.R group of industries.
2. Khan group of company.
3. Rahman group of industries
প্রথমেই প্রোডাক্ট প্রেজেন্ট করবে O.R.R group of industries এর owner অভিদ রায়জাদা এবং personal assistant নিরব আহমেদ।
অভিদ আর নিরব দুজনে উঠে যায় স্টেজে। খুব সুন্দর করে প্রোডাক্ট প্রেজেন্ট করে। অভিদের শেষ হতেই খান গ্রুপের মালিক আর তার এসিস্টেন্ট আসে।
– এবার আসবে Rahman group of company এর owner আখিল রহমান এবং তার personal assistant আশিক আহমেদ।
আখিল আর আশিক স্টেজে উঠে যায়। অভিদ আখিলের দিকে তাকিয়ে বাকা হাসে। আখিল অভিদের হাসি দেখে রেগে যায়। কিন্তু শান্ত হয়ে প্রোডাক্ট প্রেজেন্ট করে।
– আজকে তিনটি কোম্পানি খুব ভালো পারফর্ম করেছে। আজকে তাদের এই ভালো পারফর্ম গুলো তাদের জায়গা নাড়িয়ে দিয়েছে। প্রথম স্থান অধিকারী কোম্পানি হলো :
1. O.R.R group if industries.
দ্বিতীয় স্থান অধিকারী কোম্পানি হলো :
2. Rahman group of industries.
এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী কোম্পানি হলো
3. Khan group of company.
সুতরাং আজকের বিজয়ী O.R.R group of industries. So international group of industries এর সাথে ডিল করার সুযোগ পাচ্ছে O.R.R group of industries.
অভিদ আর নিরব এওয়ার্ড নিতে স্টেজে যায়। এওয়ার্ড নিয়ে অভিদ আখিলের সামনে এসে দাঁড়ায়। বাকা হেসে বলে
” so sad আখিল রহমান এবারেও হেরে গেলেন।”
আখিল হাত মুঠো করে দাতে দাত চেপে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলে
” আমি তো জিতবোই। just wait and watch. রুহিকে আমার করেই ছাড়বো। তখন দেখবো কে যেতে আর কে হারে। ”
অভিদ বাকা হেসে বলে
” দেখা যাবে ”
অভিদ, রায়হান, তুষার, নিরব পার্টি শেষে বেড়িয়ে আসলো। এবার আগের থেকেও দ্বিগুণ ভির রয়েছে। গার্ডরা কোনোরকমে ওদের নিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে স্টার্ট দেয়।
চলবে…wait for next part….