মাফিয়া ক্রাশ বর পর্ব-১৬

0
2307

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ১৬

রুহি অভিদের পাশে দাড়িয়ে অভিদের দিকে তাকায়। অভিদ শক্ত চোখে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে হাজারো ঘৃণা রয়েছে। তবে সেটা কার জন্য সেটা বুঝতে পারলো না রুহি।
রুহি ভয় নিয়ে বললো
” আপনি রাগ করবেন না। আমি আর কিছু বলবো না। আপনি গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন। ”

অভিদ বাইরের দৃষ্টি সরিয়ে রুহির দিকে তাকায়। রুহি ভয় নিয়ে তাকিয়ে আছে। অভিদ হঠাৎ করে রুহিকে নিজের দিকে টান মারে। রুহিকে একহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রুহির উন্মুক্ত কাধে নিজের মাথা রেখে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে, অন্য হাত রেলিং এর উপর রাখা। রুহি কাপাকাপা গলায় বলে,
” কি হয়েছে আপনার ?? আপনি কি অসুস্থ !! ”

অভিদ রুহিকে ছেড়ে দিয়ে আবার সামনের দিকে তাকায়। শক্ত গলায় বললো
” আমার মা – বাবার কথা জানতে চাও ??”
রুহি মাথা মেড়ে হ্যা বোঝায়।

অভিদ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করে,
” মা – বাবার পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয়। মা – বাবার তিন বছর সংসারের সময় আমার জন্ম হয়। আমার পাঁচবছর বয়সে অনি হয়। আমাদের পরিবারে কোনো অশান্তি ছিলো না। যখন আমার ১০ বছর বয়স তখন একদিন খেয়াল করলাম মা – বাবা দুজন যার যার মতো থাকে। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। পর থেকে মাঝে মাঝে রাতে মা – বাবার রুম থেকে ঝগড়ার আওয়াজ শুনতে পেতাম। আমি ছোট ছিলাম বিধায় কিছু বলতেও পারতাম না। এভাবেই ঝগড়া নিয়ে ৪,৫ মাস কেটে গেলো।
একদিন স্কুল থেকে এসে দেখি মা – বাবার মাঝে প্রতিদিনের তুলনায় অনেক বড় ঝগড়া তৈরি হয়েছে। ঝগড়ার সময় আমি স্কুল থেকে যে এসেছি সেটাও ওদের খেয়াল ছিলো না।ওরা নিজেদের মতো ঝগড়া করছিলো। আমি ভয় পেয়ে দরজার পেছনে লুকিয়ে গিয়েছিলাম। ঝগড়া শুনে বুঝতে পেরেছিলাম মা, বাবাকে ডিভোর্স দিতে চাইছে তবে বাবা রাজি ছিলো না । বাবা কারণ জানতে চাইলে মা বলে না অনেক ঝগড়া করার পর এক পর্যায়ে বলে। মা কাউকে ভালোবাসে এবং সেটা এখন থেকে নয় বিয়ের আগে থেকেই তবে সেই লোকটা মার কাছে নিখোজ ছিলো আর এতো বছর খোজ পায়নি বিধায় মা ধরে নিয়েছিলো সে বিয়ে করে ফেলেছে। কিন্তু হঠাৎ একদিন লোকটা উদয় হলো এবং মাকে বললো তার সংসার মানে আমাকে, বাবাকে, অনিকে ছেড়ে তার কাছে চলে যেতে, এতে মাও রাজি ছিলো তাই ডিভোর্স চেয়েছে। বাবা মাকে অনেক ভালোবাসতো। ১৩ বছর সংসারে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালবাসা থাকতেই পারে সেটা স্বাভাবিক ছিলো। বাবা ঝগড়া থামিয়ে মাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু মা তার সিদ্ধন্তে অটল ছিলো। বাবা বিরক্ত আর কষ্ট নিয়ে রুমে চলে যায়। মাও গেস্ট রুমে চলে যায়।
আমিও আমার রুমে চলে যাই। সেই সময়টায় অনি পাশের বাসার একটা ফ্রেন্ডের সাথে খেলা করে তাই বাসায় ছিলো না। আমি ফ্রেশ টেশ হয়ে রুম থেকে বের হই। আমার রুমের পাশেই গেস্ট রুম ছিলো। সেখানে মাকে কথা বলতে শুনে থেমে যাই। মা ফোনে লোকটার সাথে কথা বলছিলো।

বিরক্ত হয়ে বলছিলো
” কি করবো অভির বাবা তো ডিভোর্স দিতে চাইছে না। আমার ওনার উপর বিরক্ত লাগছে। আপনি কিছু তো বলুন ??”
ওপরপাশের ব্যক্তির কথা শুনতে পাইনি বিধায় বুঝতে পারি না কি বলছে। তবে এমন কিছু বলেছে যেটা শোনার পর মার মুখে শয়তানি হাসি ফুটেছিলো।
মা হেসে বলে
” বিশ !! তারমানে ওনাকে বিশ খাওয়ালেই আমাদের রাস্তা ফাকা কিন্তু অভি, আর অনিকে কি করবো। ” এবারেও সেই ব্যক্তির কথা শুনতে পায়নি আমি।

মা বাকা হেসে বলে
” ঠিকাছে তাহলে তিনজনকেই বিশ খাইয়ে মেরে ফেলবো। আপনি একটু পরে বিশটা নিয়ে আসুন। আর আমি এতোক্ষণে ভালো ভালো সব খাবার রান্না করে রাখছি। শেষ বেলায় ভাল খাবার খাইয়ে দিলে আমারও শান্তি ওদেরও শান্তি ”

বলে হাসে তবে আবার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে
” ঠিকাছে। তাহলে আমি রাতেই খাবারে বিশ মেশাবো। রাতে কাজটা করলে কেউ জানতে পারবে না কিছু আর আমিও রাতের অন্ধকারে চুপচাপ বেড়িয়ে পরবো। ” আরও কিছু কথা বলে ফোন কেটে রান্না ঘরে চলে যায়।

মায়ের প্রত্যেকটা কথা শুনে আমি অনেক অবাক হয়েছিলাম। সেই বয়সে বিশ শব্দটার অর্থ না বুঝলেও মেরে ফেলবো শব্দের অর্থ বুঝতে পেরেছিলাম। মা এমন কিছু মেশাবে যেটা খেলে আমরা মারা যাবো। আমি দৌড়ে বাবার রুমে গিয়ে ছিলাম কিন্তু সেইসময় বাবার দরজা বন্ধ ছিলো। বাবার মন খারাও থাকলে দরজা বন্ধ করে একাই বসে থাকতো। আমিও আর বাবাকে না ডেকে চলে আসি।
নিজের রুমে গিয়ে রুমের ল্যান্ডলাইন থেকে ফুপিকে ফোন করে চুপিচুপি সব কথা বলি। ফুপি তখন বাংলাদেশেই নিজের শশুর বাড়িতে ছিলো। ফুপি আমার কিছু কথা শুনে প্রথমে সিরিয়াস না হলে পরে সব শুনে সিরিয়াস হয় আর বলে এখনি রওনা দিবে। আমি ফোন রেখে ছটফট করতে থাকলাম। বাবাকে কি করে বলবো সেটা ভাবছিলাম। এখন বাবাকে ডাকলেও বাবা দরজা খুলবে না। আমি অনির বাসায় আসার অপেক্ষা করছিলাম আর ফুপির জন্য লাঞ্চের আগে অনি এসে পরে।

মা অনিকে নিয়ে আদর করে, শাওয়ার করিয়ে দেয়। খাওয়ার সময় সবাই টেবিলে উপস্থিত হয়। বাবাও আসে মুখ দেখে মনে হচ্ছিলো এখনও রেগে আছে। তবে টেবিলে মায়ের হাতে রান্না করা পছন্দ খাবার দেখে সব রাগ চলে গেলো। খুশি মনে টেবিলে বসে। অনি, আমিও টেবিলে বসি। রাতের খাবারে মা কিছু মেশাবে সেটা জেনেও কেনো যেন এখনও মায়ের হাতের রান্না খেতে দিতে ইচ্ছে করছিলো না। ভয় করছিলো, এখন কিছু হবে না তবে কিছু হয়ে গেলে !!! সেই ভয়ের বশেই আমি আমার দিক থেকে টেবিলের উপর থাকা কাজটা কে জোড়ে টান দিলাম। ফলস্বরূপ টেবিলের কাগজের উপরে থাকা সব খাবার পরে গেলো। বাবা অবাক হয়ে বসে রইলো। মা রেগে গেলেও প্রকাশ করলো না। আমি নিচ থেকে টান দেওয়ায় কেউ দেখেনি তবে অনি দেখেছিলো কিন্তু কিছু বলেনি কারণ অনি জানে, মা যদি জানে আমি খাবার নষ্ট করেছি তাহলে মা আমাকে অনেক মারবে তাই।

আমি খাবারের দিকে তাকিয়ে বাবা বলেছিলাম
” বাবা হোটেলে ফোন করে খাবার অর্ডার করে দিচ্ছি আমি। আজকে আমরা হোটেলের খাবার খাবো। ” আমি উঠতে নিলেই
বাবা আমাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে বলে
” অর্ডার করার কি দরকার। আরও খাবার তো আছেই। তোমার মা তো এতোটুকু খাবার রান্না করে না ”

বাবার কথায় মা হকচকিয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে
” না মানে ওটা তো রাতের খাবার। আর এখন ওটা খেলে তো রাতে আবার রান্না করতে হবে তার চেওএ ভালো এখন হোটেল থেকেই খাবার কিনে আনো। ” বাবার মন খারাপ হলেও রাতে পছন্দের খাবার খাবে ভেবে কিছু বললো না। আমি গিয়ে হোটেলে ফোন করে খাবার অর্ডার দিয়ে দেই। আমাদের বাড়ির পাশেই রেস্টুরেন্ট টা হওয়ায় কাছে থাকায় আধ ঘন্টার মাঝেই খাবার নিয়ে এসে পরে।

সবাই খাবার পর্ব শেষ করে রুমে চলে যায়। আমিও রুমে গিয়ে ফুপির নাম্বারে ফোন করি। ফুপি বললো রওনা দিয়ে দিয়েছে অনেক্ষণ আগে। এখন শুধু আসার অপেক্ষা। এভাবেই রাত হয়ে যায়। এই সময়ের মাঝে আমি প্রায় ৭, ৮ বার ফুপিকে ফোন করেছিলাম। ডিনারের সময় সবাই খেতে বসে। আমি কোনো উপায় পাচ্ছিলাম না। অনেক ভয় করছিলো। বাবাকে বলতে পারছিলাম না। কারণ বাবা মাকে ভালোবাসে তাই আমার কথায় বিশ্বাস করতে নাও পারে।
কিন্তু যখন দেখলাম বাবা, অনি খাবার মুখে দিতে যাচ্ছে তখন কোন উপায় না পেয়ে দাঁড়িয়ে অনির হাত থেকে ঝাড়া দিয়ে খাবার ফেলে বলে চিৎকার করে বলে উঠলাম
” বাবা খাবারে বিশ আছে। মা আমাদের মারার জন্য খাবারে বিশ দিয়েছে। খাবারটা খেয়ো না। ”

আমার কথা শোনা মাত্রই বাবা খাবার রেখে বলে
” এটা কোন ধরনের ফাজলামো অভি ?? মার সম্পর্কে এসব কি বলছো তুমি ”
আমি মাথা নেড়ে বললাম
” না বাবা বিশ্বাস করো !!! আমি সত্যি বলছি ”
মা রেগে আমার কাছে এসে গালে থাপ্পড় মেরে বলে
” অসভ্য ছেলে এই জন্যই তোকে তোর বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করতে নিষেধ করেছি। কি সব উল্টো পাল্টা কথা শিখিয়েছে ”
বাবা মাকে হালকা ধমক দিয়ে বলে
” আহ, তুমি ওকে মারছো কেনো। তুমি তো সত্যি সত্যি বিশ দেওনি তাহলে শুধু শুধু রাগারাগির কি আছে ”

মা আমার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বলে
” রাগা-রাগি করবো না ?? নিজের মায়ের নামে এমন কথা বলে কি করে ” বাবা শান্তনা দিয়ে বলে
” ঠিকাছে এখন তুমি চুপ করো। ও ছোট তাই কি বলতে কি বলে ফেলেছে নিজেও জানে না। আমি খাবার খেলেই তো সব ঠিক হয়ে যাবে তাহলে আমি খাচ্ছি ”
বলে বাবা আবার বসে পরে। আমি উঠে বাবাকে থামানোর আগেই বাবা খেয়ে ফেলে। আমি গিয়ে উত্তেজিত হয়ে বাবাকে বলি
” বাবা তুমি আমার কথা বিশ্বাস করলে না ?? তাড়াতাড়ি বমি করো। আর এই খাবার খেয় না প্লিন ”

বাবা আমার কথা বিশ্বাস করেনি। আরও কয়েক লোকমা খেয়ে নেয়। তারপর খাওয়া থামিয়ে কেমন যেন করতে থাকে। আমি কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলাম
” বাবা দেখেছো আমার কথা শুনলে না তুমি ?? এখন কি করবো আমি ” আমি বাবাকে ধরে সোফায় বসিয়ে ল্যান্ডলাইন দিয়ে ডক্টর আংকেল কে ফোন করি। অনি পাশেই ভয়ে গুটিসুটি মেরে বসে ছিলো। মা বাবাকে খাবার খেতে দেখে অনেক আগেই নিজের রুমে চলে গিয়েছে। মা ব্যাগ হাতে নিয়ে বাবার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বাকা হেসে বলে
” কি বলেছিলে তুমি ?? আমাকে ডিভোর্স দেবে না, তাই না !! কিন্তু আমার তো এখন আর ডিভোর্স লাগবে না। আমি এমনি চলে যাচ্ছি। অভিদ ঠিক বলেছিলো আমি তোমাদের খাবারে বিশ মিশিয়েছিলাম। এখন কয়েক মিনিটির মাঝে তুমি মরে যাবে। শুভ নিদ্রা। তোমার ছেলে মেয়েকে রেখে যাচ্ছি। ওদের নিয়ে তো আমি নতুন জীবন শুরু করতে পারবো না তাই। ” বলে চলে যায়। অনি মাকে যেতে দেখে চিৎকার করে কাদছিলো আর বলছিলো কোথাও যেতে না। কিন্তু মা কিছু শুনেনি, চলে গিয়েছিলো।
আমি কাঁদছিলাম বাবার জন্য। কিছুক্ষণ পর দেখলাম ফুপি এসেছে। ফুপি, ফুপা এসে বাবাকে এভাবে দেখে আকাশ থেকে পরলো। ফুপা তাড়াতাড়ি করে আবার ডক্টর কে ফোন করলো। ফুপিকে বলতেই ফুপি পুলিশকে ফোন করে।

এ্যাম্বুলেন্স আসলে বাবাকে নিয়ে হসপিটালে যাওয়া হয়। কিন্তু বাবাকে বাঁচাতে পারেনি ডক্টর। মা খুব ক্ষতিকর বিশ দিয়েছিলো। বাবার সারা শরীরে বিশ ছড়িয়ে পড়ায় বাচাতে পারেনি। বাড়িতে কান্মার রোল পরলো। পরের দিন গ্রাম থেকে দাদা, দাদি সবাই আসলো। বাবাকে সাদা কাপড়ে ড্রইংরুমে শুইয়ে রাখা হয়েছে। সবাই কান্না করছিলো তখন পুলিশ আসে। যাকে ফুপি কালকে ফোন করেছিলো। তারা মাকে ধরার জন্য সব জায়গায় পুলিশ ছড়িয়ে দিয়েছিলো।

পুলিশ এসে সবার সামনে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে বললো
” সেই মহিলা যার সাথে পালিয়েছিলো তাদের গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে এবং দুজনেরই স্পট ডেড হয়েছে।” সবাই খবরটা শুনে এক্সিডেন্ট কে মার কর্মফল বলে। মার লাশ বাবার সাথে কবর দিতে চাইলে আমি আর ফুপি দিতে দেইনি। সেখানে শুধু বাবার কবর দেওয়া হয়েছে। মাকে নানার বাড়িতে কবর দেওয়া হয়।
এরপর থেকে আমাকে, অনি, তুষারকে ফুপি ফুপা বড় করতে থাকে। I hate her. ঘৃনা করি ওই মহিলাকে। এই বাড়িতে ওই মহিলার বিষয়ে কথা হয় না। আমি, অনি, ফুপি সবাই উনাকে ঘৃনা করি”

অভিদের চোখ ছলছল করছে। রুহি বিস্ফোরিত চোখে অভিদের দিকে তাকিয়ে আছে, চোখ বেয়ে পানি পরছে। একজন মা হয়ে কি করে ছেলে, মেয়েদের সাথেও এমন করতে পারলো।

কষ্টের, ভালোবাসার গভীরতা মাপা যায় না। তবে অভিদের কষ্ট কিছুটা হলেও অনুভব করতে পেরে রুহি মাথা নিচু করে ফুপিয়ে কেঁদে দেয়। অভিদ ফিকে হেসে রুহির মুখ তুলে রুহির চোখ মুছিয়ে দিলো। রুহি অভিদের বাহুতে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে
” আপনার কষ্ট হয় তাই না ?? আমি অনেক সরি।”

অভিদ হালকা হেসে বাইরের দিকে তাকিয়ে রুহিকে জড়িয়ে ধরে বলে
” থাক কেদো না। আমি কষ্ট পাই তবে বাবার জন্য। আমার বাবা ওই মহিলাকে ভালোবাসতো কিন্তু উনি !! উনি না বাবার কথা ভেবেছে আর না আমার আর অনির কথা ভেবেছে। আমি বাবাকে ভালোবাসি, বাবার কথা মনে পড়ে। কিন্তু উনাকে ঘৃনা করি আমি উনার কথা কখনো মনে করতে চাই না। ”
রুহি অভিদকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। সেটা খেয়াল নেই। রুহির বুক ঢিপঢিপ করলেও সেটা অনুভন করতে পারলো না। মনের অজান্তেই অভিদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

অনেক্ষণ পরেও যখন রুহির কান্না থামছে না তখন অভিদ গম্ভীরগলায় বলে
” চুপ করবে নাকি অন্য কিছু করে থামাতে হবে।”
অভিদের কথায় রুহি আস্তে আস্তে কান্না থামাতে লাগলো। রুহি নাকি টেনে টেনে বলে
” চলুন ঘুমাবেন ” অভিদ হালকা হেসে রুহিকে নিয়ে রুমে আসে। দুজন শুয়ে পরে।

রুহি কিছুক্ষণ পরে তার জায়গা থেকে কয়েক হাত এগিয়ে আসে অভিদের দিকে। অভিদ টের পেয়ে বলে
” কি হয়েছে এগোচ্ছো কেনো। ” রুহি ঢোক গিয়ে মিনমিন গলায় বলে
” মানে আমার ভয় করছে। আপনার বাবা যদি রাতে আমার কাছে এসে আমার ঘার মটকে দেয়।”

রুহির কথায় অভিদের অনেক হাসি পেলো কিন্তু হাসি চাপিয়ে রাগি গলায় বলে
” what do you mean by this. আমার বাবা কি এতো খারাপ নাকি যে রাতে তোমাকে এসে মেরে ফেলবে ?? ”
রুহি থতমত খেয়ে আবার পেছতে পেছতে বলে
” আমি এটা বলতে চাইনি। আমিতো বলছিলাম আমার ভয় করছে…আআআআআ ”

রুহির চিৎকার শুনে অভিদ ভয় পেয়ে উঠে বসে পাশে হাত দিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দেখে রুহি নিচে পরে গিয়েছে।
অভিদ ফিকফিক করে হেসে দিলো রুহিকে দেখে। রুহি অভিদকে হাসতে দেখে রেগে গেলেও অভিদের মুগ্ধকর হাসি দেখে চুপ করে রইলো। আনমনে উঠতে নিলেই আবার ব্যাথায় চোখ মুখ কুচকে ফেলে। অভিদ রুহিকে দেখে হাসি থামিয়ে রুহির পাশে বসে বলে
” ব্যাথা পেয়েছো ?? ”

রুহি নাক ফুলিয়ে বলে
” না ব্যাথা পাইনি। অদ্ভুত কথা বলেন কেনো। খাট থেকে নিচে পরে গিয়েছি তো ব্যাথা পাবো না ”

অভিদ রুহিকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দিয়ে রেগে বলে
” পরলে কি করে ?? এতো বর খাটে জায়গা নেই নাকি ?? যে কোণায় গিয়ে ঘুমাতে হয়। ”
রুহি মুখ গোমড়া করে শুয়ে থাকে। অভিদ ভ্রু কুচকে বলে
” বেশি ব্যাথা করছে ?? ঔষধ আনবো ??”
রুহি মাথা নেড়ে বলে
” না লাগবে না। বেশি ব্যাথা লাগেনি। ঘুমিয়ে পরুন। ”

অভিদ লাইট অফ করে শুয়ে পরে। রুহিকে অনেক কাছে নিয়ে আসে। রুহির পেটের উপর হাত রেখে ঘুমিয়ে পরে। রুহি কাপতে কাপতে বলে
” কি করছেন কি আপনি ”
অভিদ রুহির কানে ফিসফিস করে বলে
” চুপ করে থাকো নাহলে এখন আমি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবো ”
রুহি চুপ করে যায়। এভাবেই ঘুমিয়ে পরে দুজন।

সকালে ব্রেকফাস্ট করে অভিদ, রায়হান অফিসে চলে এসেছে। অভিদ অফিসে বসে ফাইল দেখছিলো তখন রায়হান নক করে ঢোকে।রায়হান টেবিলের উপর একটা ফাইল রেখে বলে
” প্রত্যেক বছরের মতো এবারও award competition হবে।”

চলবে… wait for next part….

সবার মন্ত্যবের আশা করছি। ভুল ক্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।