মায়া পর্ব-১০

0
431

#মায়া
পর্ব ১০
লেখা- #Alisia_Amber
[কপি করা নিষেধ]
.
অয়নের তাকিয়ে থাকা দেখে আমি অন্যদিকে ফিরে গেলাম চলে যাওয়ার জন্য। তখন অয়ন আমাকে ডাক দিয়ে বললো, ‘অফিসে দেখা করবেন’

বলেই হনহন করে চলে গেলো। কি আশ্চর্য! আমি তার দিকে তাকাতেই দেখলাম হাওয়া হয়ে গেলো।
দিনগুলো খুব দ্রুত পার হয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষা ক্লাস মাঝে মাঝে মামনিকে দেখতে যাওয়া। সব মিলিয়ে দিনগুলো খারাপ যাচ্ছে না।কিভাবে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে ফেললাম চোখের পলকে!
খারাপ হলো তো আজ। বিয়ের সাড়ে চার বছর পেরুনোর পর যখন শুদ্ধ আসলো দেখা করার জন্য।

শুদ্ধকে ভার্সিটি ক্যাম্পাসে দেখে আমি অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গিয়েছি। এ আমি কাকে দেখছি। এ সত্যিই শুদ্ধ তো?
আমি গেইটের সামনে গিয়ে দাড়াতেই পরিচিত একটা মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠে। আমাকে দেখতেই শুদ্ধ দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে এসে বললো, ‘মায়া’

তার ডাকে আমার ধ্যান ভংগ হলো। আমি অবাকের চরম পর্যায়ে পদার্পণ করলাম। এ কি সেই যার একটু খানি কন্ঠস্বর আমাকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিত। যার মুখের একটা বাক্য আমাকে বাধ্য করতো প্রতি পদে পদে তার প্রেমে ফেলতে!

আমি শুণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। সে আবারো বললো, ‘কেমম আছো মায়া?’

নাহ তার এই বাক্য আমাকে গলাতে পারবে না। আমি সুন্দর ভাবেই উওর দিলাম, ‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি’

শুদ্ধ হালকা হাসলো। সেই আগের মতই তার এক গালে টুল পরলো। সুন্দর হাসিটা আমার বুকে একটা ধাক্কা দিলো। বড় একটা দম নিয়ে বুকে সাহস সঞ্চয় করে বললাম, ‘হঠাৎ আপনি?’

শুদ্ধর হাসি হাসি মুখটায় একরাশ দুঃখ এসে ধরা দিলো যেনো। তবুও তার মুখে উত্তর শুনার আশায় অধির আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকলাম। শুদ্ধ বলল, ‘একটু একসাথে বসা যাবে? বেশি না ৩০মিনিট সময় আমাকে দেয়া যাবে?’

ঐ মায়াবী মুখে বলা কথাটা আমি ফেলতে চাইলেও পারলাম না। মনে হলো সে এমন কিছু বলতে চাইছে যা আমার জানা দরকার। খুব দরকার। আমি সায় জানালাম। কাছেই একটা ছোট্ট কফিশপে গিয়ে দুজন ঢুকলাম। শুদ্ধ ঘেমে নেয়ে একাকার। আমি ওয়েটারকে ডেকে একটা ঠান্ডা পানি অর্ডার দিলাম। শুদ্ধ মুচকি হাসি দিয়ে বললো, ‘থ্যাংক্স’

আমি কিছু বললাম না। অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম, ‘কি বলবেন জলদি বলুন মিস্টার। আমার হাতে সময় নেই’

শুদ্ধ প্রথম যে কথাটা বলল তাতেই আমার অবস্থা খারাপ হওয়ার মত।

‘ফিরে চলো মায়া।’

আমি বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকায় উনি আবারো বললেন, ‘ ভুল করেছি আমি খুব ভুল করেছি তোমাকে সেদিন ছেড়ে। আমার ভুলের প্রায়সচিত্ত আমি ক্ষনে ক্ষনে পেয়েছি।

তোমাকে খুজে বের করতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে মায়া। শেষে তোমার বাবার পায়ে ধরে কান্না করেছি তোমার খোজ পাওয়ার জন্য। তিনি বলেছে তোমাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। অথছ দেখো উনি মিথ্যে বলেছেন আমাকে।
আমি জানি মায়া তুমি আমাকে পছন্দ করো’

আমি থামিয়ে দিলাম। বললাম, ‘ভুল শুদ্ধ সাহেব। পছন্দ করি নই। পছন্দ করতাম!’

শুদ্ধ দম নিয়ে বলল, ‘আর কষ্ট দিও না মায়া। মরে যাবো।’
বুকটা মুচর দিয়ে উঠলো যেনো।

আমি উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। আর দুর্বল হবো না আমি কিছুতেই না। শুদ্ধর প্রতি আমার আর আগের আবেগ কাজ করে না এটা চিরন্তন সত্য হলেও আজ এত দিন পর শুদ্ধকে দেখে আমার মায়া হচ্ছে।
কেমন তাগড়া যুবকটা শুকিয়ে গেছে। বড্ড মায়া হচ্ছে। কিন্তু তার তো সুখে সংসার করার কথা।

শুদ্ধ হুট করেই আমার হাত চেপে ধরলো। আমি চারিদিকে তাকালাম। টু শব্দটাও করলাম না। শুধু শুধুই সিনক্রিয়েট না করে ব্যাপারটা চুপচাপ সমাধান করতে চাইলাম। কারণ এই ক্যাফে তে অয়নের সাথে আমার প্রায় আসা হয়। অযথা ছুতো দিয়ে সে আসে কফি খেতে। একদিন তার গরমে অস্থির লাগে। তো আরেকদিন কফির তেষ্টায় মরে যাওয়ার মত হাল হয়ে যায়। তাই ক্যাফের কম বেশি সবাই আমাকে চেনে। কম সময় তো আর না। চার বছর পার করেছি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের।

আমি সুন্দর করে শুদ্ধকে বললাম, ‘হাতটা ছাড়েন। এটা পাবলিক প্লেস। যেটুকু সম্মান অর্জন করেছি তা আর কেড়ে নেবেন না আশা রাখছি।

শুদ্ধ হাতটা ছেড়ে দিলেও রিকুয়েস্ট করলো। ‘আর ৫টা মিনিট প্লিজ!’

আমি বসলাম। তবে অন্যদিকে তাকিয়ে।
সে দম নিয়ে বললো, ‘বেশি সময় নিবো না। তবে কিছু কথা না বললেই নয় মায়া।’

আমি চুপ করে রইলাম। সে আবারো বলতে লাগলো, ‘তুমাকে ফিরিয়ে দেয়ার পর তিথিকে বেক আনার চেষ্টা করলাম। বাট আমি বিবাহিত বলে সে আমার কাছে কোনো ভাবেই ফিরতে চাইলো না। পরে মা বুঝিয়ে বলায় সে রাজি হলো। আমি তাকে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য যাই। আমরা রাজশাহী থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম। পথিমধ্যে আমাদের গাড়ির একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যায়। দুদিন আমার জ্ঞান ছিলো না। আমার খবর না পেয়ে মায়ের অবস্থাও খারাপ হয়ে যায়। আমার সুস্থ হতে প্রায় ৬মাসের মত সময় লাগে। পায়ে এখনো হালকা সমস্যা রয়ে গেছে। আমার জ্ঞান ফেরার পরই আমি তিথির খোজ নিতে চাই। পাগল হয়ে যাই ওর জন্য। কিন্তু’

আমি তিথির কথা জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠি। বলে ফেলি, ‘তিথির কি হয়েছিলো? সে কোথায়’

‘স্পট ডেড’

‘ইয়া আল্লাহ!’ আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।

শুদ্ধ বলতে শুরু করলো, ‘তিথি মারা যাওয়ার পর আমি মানসিক ভাবে ভীষণ ভেঙ্গে পরি। মা আমাকে নানা ভাবে বুঝানোর ট্রাই করেন। নতুন করে সংসার সাজানোর কথা ভাবেন। মা বার বার আমাকে তোমার কথা বলেন। সবই নাকি তোমার সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি। মা আমাকে আদেশ দেন যেখান থেকে পারি তোমাকে যেনো খুজে নিয়ে আসি। কিন্তু আংকেল জানান উনি তোমার বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। আমি যেনো তোমার সুখের সংসারে কোনো রকমের অশান্তি সৃষ্টি না করি। কিন্তু বিশ্বাস করো এক মুহুর্তের জন্যও জীবনে কখনো তোমার খারাপ চাই নি। তবে সেদিন মনে হয়েছিলো তুমি আমার স্ত্রী!! আমার তোমার উপর অধিকার আছে। তুমি চাইলেই সংসার করতে পারো না। আমি হন্য হয়ে তোমাকে খোজা শুরু করি। কিন্তু কোথাও তুমি নেই মায়া। নিজেকে নিজে শেষ করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। মা তোমাকে এক বার দেখতে চাইছেন মায়া। চলো না সব শুরু করি। তুমি আর আমি। ভালোবাসবো মায়া। খুব ভালোবাসবো। খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না মায়া। দিও না।’

‘মা কেমন আছেন?’

‘ভালো না মায়া। তোমাকে দেখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। একবার চলো প্লিজ!’

আমি নিজেকে ঠান্ডা করে শুদ্ধকে বলতে চাইলাম কিছু। এর আগেই হন্তদন্ত হয়ে কোত্থেকে অয়ন এসে আমাদের টেবিলের সামনে দাড়ালো। এক হাতে আমার এক হাত চেপে বললো, ‘চলো!’

চলবে কি?