মায়া পর্ব-০৯

0
408

#মায়া
পর্ব ৯
লেখা- #Alisia_Amber
[কপি করা নিষেধ]
.
.
ভাগ্য আমার সাথে ঠিক কি খেলা খেলছে আমি জানি না। আমার জীবনের উথাল পাথাল ডেউ বয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা যেনো ক্রমশ হারিয়ে ফেলছি আমি। আজ এক সপ্তাহ যাবত মনিমার বাসায় আছি। অয়ন নামক ছেলেটি সেদিন বাড়িতে নিয়ে এসে বলেছে, ‘এই জেদটা আমার সাথে না দেখি জায়গামত দেখাতে শিখো।’

আর মামনিকে বলেছে, ‘মা তোমার এই মেয়ের তেড়ামি সহ্য করবো না বলে দিলাম।’

মনিমা হেসে দিয়েছিলো। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘এমন পাগলামু করে না মা। তোর জন্য ছেলেটাকেও বকেছি বেশ। এভাবে জেদ ধরে একা বেড়িয়ে গিয়েছিস! কোনো বিপদ হত যদি! কি ভয়টাই না পেয়ে গিয়েছিলাম’

এর পর থেকে অয়ন আমার সাথে বেশ স্বাভাবিক ব্যাবহার করে। দুপুর , রাতের খাওয়ার সময় নিজে এসে ডেকে যায়। তাও আমাকে খোচা মেরে।

‘মহানারী, সরি মহারাণী আপনার খাবারের সময় হয়ে গেছে। টেবিলে এসে বসুন প্লিজ!’

প্রথম প্রথম রাগ হলেও এখন হাসি পায়। হাসি আটকে রেখে গিয়ে বসি। আর নিয়ন তো আছেই সারাদিন বকর বকর করতেই থাকে। মনের ভেতরের কালো ছায়াগুলো দিন দিন সরে যাচ্ছে। তাতে যেনো ধরা দিচ্ছে এক ফালি রোদ!

এবাড়িতে থাকছি খাচ্ছি। সব মিলিয়ে যেনো নিজেকে পরগাছা মনে হয়। মনিমা বুঝতে পারেন। আমার মাথায় এসে হাত বুলিয়ে বলেন, ‘আমাকে নিজের মায়ের জায়গায় বসাতে খুব কষ্ট হয়?’

আমি দুদিকে মাথা নাড়িয়ে না বুঝাই। মনে মনে বলি, ‘এত ভালো কেনো তোমরা। মায়ার মন যে বড্ড নরম। মায়া যে মায়ায় পরে যাচ্ছে। ‘

আজ অয়নের সাথে ওর ভার্সিটিতে গিয়ে ভর্তি হয়ে এসেছি। এভাবে প্রাইভেটে পড়ার আমার কোনো ইচ্ছে না থাকলেও মনিমার জোরের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছি। নতুন জীবনের সূচনায় সব কিছু ভালো থাকলেও রাতের আধারে শুদ্ধ এসে বারং বার আমার মনে উকি দিয়ে যায়! আচ্ছা সে কি বিয়ে করে নিয়েছে? নাকি না। আমার সাথে তো তার এখনো ডিভোর্স হয় নি। তাহলে সে কিভাবে বিয়ে করবে?

একদিন বিকেলে ছাদের কার্ণিশে পা দুলিয়ে গুনগুনাচ্ছিলাম। হঠাৎ অয়ন আমার পাশে এসে বসলো। তার গায়ে একটা সেন্ডু গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট। আমি নাক কুচকে অন্য দিকে মুখ ঘুরাতেই সে বুঝে ফেলল। কেনো এমন করলাম। আমার মুখ টেনে তার দিকে ফিরিয়ে বলল, ‘শুনো মেয়ে লজ্জা নারীর ভূষণ ছেলেদের নয়!’

আমি অন্যদিকে ফিরে মুচকি হাসলাম। তারপর নিরবতা।

মনিমার বাড়িতে এসেছি প্রায় সাতমাসের কাছাকাছি। এতদিনে না বাবার সাথে কোনো কথা হয়েছে। আর না শুদ্ধর সম্পর্কে জানতে পেরেছি। অয়ন একটা ফেসবুক একাউন্ট খুলে দিয়েছিলো। তাতে হাজারো বার শুদ্ধের নাম সার্চ করেও খুজে পাই নি। আমি জানতে চেয়েছিলাম সে তার সংসারে কতটা সুখে আছে!

আজ পরীক্ষা থাকার কারণে তাড়াতাড়িই বাড়িতে এসেছি। আর এখানে আমার জন্য যে কতবড় চমক অপেক্ষা করছিলো। তা আর বাকি নেই। বাবা! হ্যাঁ বাবা বসে আছেন। আমি বাবাকে দেখে আবেগী হয়ে পরি। বাবার কাছে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরি। বাবা আমায় মাথায় হাত রেখে বলেন, ‘বাবাকে তো ভুলেই গেছিস’

অভিমানে কথা বলতে পারি নি। বাবার বুকে কতক্ষন থেকেছি জানি না। মাথা তুলতে বাবা বলেন, ‘আর কতদিন রাগ করে থাকবি মা! বাড়ি চল।’

একটু দূরে সরে এলাম। বাবাকে হালকা হেসে বললাম, ‘যাবো বাবা। তবে আজ নয়।’

হুট করে মনে হয়ে গেলো একটা কথা বাবাকে বললাম, ‘বাবা তুমি শেষ বারের মত মাকে দেখতে দাও কি কেনো? ‘

বাবা থমকে গেলেন। বললেন, ‘ঐ নষ্টা মহিলার নাম মুখে নিবি না একদম’

আমি নিরব থাকলেও অয়ন উচ্চ স্বরে বলে উঠলো, ‘মুখ সামলিয়ে কথা বলুন’

বাবা চেহারা গম্ভীর করে বললেন, ‘আর কত অন্যের বাড়িতে থাকবি! বাড়ি চল। নাহলে দুদিন পর মানুষ বলবে মেয়েকে খাওয়ানোর ক্ষমতা আমার নেই।’

আমি বললাম, ‘বাবা আমার পড়াশুনো! আমি সেকেন্ড ইয়ারে উঠে যাবো বাবা’

মনিমা বললো, ‘হ্যা ভাই!’

বাবা বলে উঠলেন, ‘কি পরিচয়! কি পরিচয়ে আপনি তাকে এখানে রাখছেন। যেখানে আপনার দুটো তাগড়া ছেলে উপস্থিত এখানে?’

মনিমা চুপ হয়ে গেলেও অয়ন চুপ করে থাকলো না। দাত কিড়মিড় করে বললো, ‘ আপনার মেয়েকে আমরা এ বাড়িতে এনেছিলাম? নিজের মেয়েকে তো নিজেই বাড়িতে জায়গা দেন নি। তবে! এখন এত বড় কথা বলার সময় মুখে আটকাচ্ছে না?’

বাবা আমার হাত ধরে টেনে বললেন, ‘এখনই চল’

মনিমা আমাকে আটকে দিলেন। আর বললেন, ‘এখনই এই মুহুর্তে অয়নের সাথে আমি মায়ার বিয়ে দেব। ও পরিচয় নিয়ে এ বাড়িতে থাকবে। আমার ছেলের বউ হিসেবে!’

তারপর অয়নের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘অয়ন যা তো কাজি ডেকে নিয়ে আয়!’

আমি জানি বাবা সুবিধাবাজী। বিয়ে হবে শুনলে গাইগুই করলেও মেনে নিবেন। যেভাবে শুদ্ধর বাড়িতে আমাকে রেখে এসেছিলেন। আমি গভীর নিশ্বাস নিয়ে বললাম, ‘আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আইনত আমি এখনো শুদ্ধর বউ! তাই চাইলেও আমি এখন কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। তাছাড়া আমারও নিজস্ব মতামত রয়েছে। আমি এখন বিয়ে করতে চাই না’

বাবা আমাকে উনার দিকে ফিরিয়ে বললেন, ‘হু বাড়ি চল’

আমি নড়লাম না। চুপচাপ বললাম, ‘বাড়ি ফিরে যাও বাবা। তোমার বউ আর মেয়ে তোমার অপেক্ষায় আছে। ‘

বাবা কতক্ষন কতকিছু বললেন। কানে নিলাম না। বাবা চলে যেতেই মনিমার হাতে ধরে রিকুয়েস্ট করলাম, ‘আমার একটা কথা রাখবেন মনিমা প্লিজ! আমাকে এখানকার কোনো একটা হোস্টেলে রেখে আসুন। প্লিজ! আমি আর কারো উপর বোঝা হয়ে থাকতে চাই না!’ কথাটা বলতে কেমম ঠোট কাপছিলো। অয়ন এসে বললো, ‘ব্যাগ গুছিয়ে নাও!’

আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন। সে চলে গেলো। আমার মনে রেখে গেলো তাকে নিয়ে তৈরি হওয়া হাজারো প্রশ্নের পাহাড়!

দুজনের সিটের একটা ছোট রুম৷ সাথে লাগোয়া বারান্দা। আর রুমের বাইরে দুইটা রুম মিলিয়ে একটা ওয়াসরুম।রুমে একটা সিংগেল বেড একটা পড়ার টেবিল। আর একটা ট্রাংক।এই।
আমি বই গুছিয়ে রেখে লম্বা একটা শাওয়ার নিলাম। বারান্দায় আসতেই আকাশে দেখলাম মস্ত বড় এক চাঁদ! চাদের আলো গুলো আমার গায়ে এসে ঠেকছে। নিচের দিকে তাকাতেই দেখলাম গাড়িতে হ্যালান দিয়ে অয়ন দাঁড়ানো। হ্যাঁ এটা অয়নেরই গাড়ি। সে এতক্ষন অবদি এখানে দাঁড়িয়ে কি করছে। ভাবতে ভাবতেই দেখলাম হাত বাড়িয়ে একটা মহিলাকে একটা ব্যাগ দিচ্ছে তারপর উপরে তাকালো। চোখাচোখি হতেই আমি অন্যদিকে তাকালাম। সে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। এর কিছুক্ষন পরই আমার রুমে নক হলো। দরজা খুলতেই দেখলাম। ভর্তি হওয়ার সময় নিচে যে খালাকে দেখতে পেয়েছিলাম। উনি এসেছেন। এসে বললেন, ‘স্যার আমনেরে খাওন দিয়া গেছে মা। খাইয়া লন।’

বুঝতে পারলাম অয়ন খাবার দিয়ে গেছে। হালকা হাসলাম। ছেলেটা রাগী রগচটা হলেও মনের দিক দিয়ে মন্দ নয় বটে!

আমার রুমমেটটা কেমন গুমড়া মুখো। আসার পর থেকে তেমন কথা বলে নি। চুপচাপ। আমিও আগ বাড়িয়ে আর কিছু বলতে গেলাম না। পরের দিন ভার্সিটি গিয়েই অয়নের মুখোমুখি হলাম। সাথে ফ্রেন্ড থাকায় নরমালি সালাম দিলাম, ‘ আসসালামুয়ালাইকুম স্যার’

অয়ন কেমন আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো। আজ পর্যন্ত কখনো তাকে এভাবে সালাম দেই নি বলে?

চলবে…