#মিথ্যা_অপবাদ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_১
আজ সবার সামনে একজন মানুষের মুখোশ উন্মোচন করবো আমি। আমি যার কথা বলছি সবাই চিনেন তাকে। তিনি একজন অনেক বড় লেখক। কিন্তু তাকে লেখক আমি ভাবতে পারছি না। লেখক হয়ে ওনি আমার সাথে এই ধরনের বিহেভ কিছুতেই করতে পারেন না। তার অনেক পাঠক আছে, ফলোয়ার আছে তাই বলে কি তিনি নিজেকে প্রধান মন্ত্রী ভাবেন? আজ আপনাদের সামনেই আপনাদের প্রিয় লেখকের দুর্নীতি ধরিয়ে দিতে এসেছি……..
বার বার ডাইরি অ্যাপসে লিখছি আর কাটছি। মনের ভিতর কেমন যেনো ঘুজঘুজ করছে। লেখক আরিয়ানের সাথে কিছুদিন ধরে ঝগড়া চলছে আমার তার জন্য ওনার নামে খারাপ রেকর্ড বানানোর জন্য কত কিছুই না করছি কিন্তু বার বার কিছু একটা লেখা সত্বেও তা পাবলিক করতে মন সায় দিচ্ছে না।
—–” ওই কি হলো পোষ্ট কর। আমরা তো এত ভালো করে এডিট করেছি যে, কেউ বুঝতে-ই পারবে না তাহলে এত ভয় কিসের তোর?”
—-” শুন না, আমার দ্বারা এইসব হবে না রে। ঝগড়া হয়েছে অন্য বিষয় নিয়ে এইখানে ওনার মান-সম্মান টানার কোন মানে হয় না।”
—-” ওহ চিল সোনালী। কেউ বুঝতে পারবে না এইটা যে আমাদের কাজ। তোর অনেকদিনের একটা ফেক আইডি আছে না ওইটা দিয়েই পোষ্ট করবি বিভিন্ন গ্রুপে। দেখিস ব্যাটার সুনাম এক নিমিষেই কুনাম হয়ে যাবে হাহাহা।”
ইতির কথায় সোনালী আবার খুব সুন্দর করে লিখে বিভিন্ন পাবলিক গ্রুপে পোষ্ট করলো। মিনিটে মিনিটে লাইক কমেন্ট ভরে গেলো। কেউ বিশ্বাস করে বাজে গালি দিচ্ছে কেউ আবার বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না। এমনভাবে প্রুভ দিয়েছি ১০০% এর মধ্যে ৯৯% মানুষ আমার কথায় বিশ্বাস করছে। লেখকের পেজ, গ্রুপ আইডি সব জায়গায় পাঁচ মিনিটের মধ্য তার নামডাক বদনামে রূপান্তরিত হলো। খারাপ লাগা সত্বেও শত্রুর এমন দূর অবস্থা দেখতে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। ফোনটা রেখে ইতি কে নিয়ে কিছুক্ষণ ডান্স করে চলে গেলাম মানিক চাচার ফুচকা খাওয়ার জন্য……
—–” আজ যে টাইড দিয়েছিস ব্যাটাকে দেখবি তিনমাস বাসা থেকে বের হবে না। লজ্জায় মনে হয় আত্মহত্যাই করে বসবে।”
—-” এইভাবে বলিস না ইতি। ওনি দোষ না করা সত্বেও ওনার চরিত্র নিয়ে আমরা মিথ্যা দোষারোপ করেছি। শুনেছি ওনি একজন বিজনেস ম্যান। ভার্চয়াল জগতের পাশাপাশি রিয়েল জগতেও ওনার সম্মান ধুলোয় মিশে যাচ্ছে।”
—-” ওই শয়তান লোকের কথা বাদ দে। মনে নাই কি করেছে ওনি তোর সাথে। সবার সামনে তোর গালে থাপ্পড় মেরেছে তুই তার প্রতিশোধ কেনো নিবি না বল তো? তোরও তো কোনো দোষ ছিল না।”
—-” তাহলে আমি যা করেছি একদম ঠিক কাজ করেছি ওনি যদি আমাকে অপমান করতে পারে আমি কেনো পারবো না হুহহহ।”
—-” হুম ঠিক তাই।”
।।
।।
।।
।।
—” ভাই কি হচ্ছে তোকে নিয়ে এইসব? দেখ আধা ঘন্টায় হাজার কল এসে পড়ছে কেউ কেউ তো তোকে বাজে ভাষায় গালি দিচ্ছে।”
আরিয়ান তার পরবর্তী উপন্যাস ‘ অন্ধকারের মাঝে’ বানান কোথায় কোথায় কি মিসটেক হয়েছে দেখছিলো তখন ওর চাচাতো ভাই হৃদয় এসে তাকে কথা গুলো বললো। আরিয়ান কিছুক্ষণ হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। ও বুঝতে পারে নাই হৃদয় কি বললো তাকে……
—-” চুপ করে আছিস কেনো? বল কিছু?”
—-” আমাকে নিয়ে কেউ বাজে কথা বললে পাবলিক তাকে ছেড়ে দিবে না সো কুল থাক।”
—-” আজ পাবলিকেই তোকে দোষারোপ করছে। তুই বরং তোর ফোন চেক কর।”
আরিয়ান ফোন চেক করে দেখলো এতদিন যারা আরিয়ান বলতে অজ্ঞান ছিলো আজ তারাই তাকে বাজে বাজে কথা বলছে। আরিয়ান তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ গুলো দেখলো আর রাগে তার চোখ থেকে লাল পানি বের হচ্ছে……
—-” এই মেয়ে কে? চিনিস তাকে?”
—-” উহু। কেনো তুই চিনিস না?”
—-” চিনলে তো আর তোকে প্রশ্ন করতে হতো না তাই না?”
ফোনটা হাত থেকে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে জোরে চিৎকার করে বললো আরিয়ান। হৃদয় এখন আরিয়ানের সামনে থাকতে ভয় লাগছে যদি রাগের বশে কিছু করে ফেলে তাই আমতা আমতা করে বললো…..
—-” তুই শান্ত হো আমি খুঁজ নিচ্ছি মেয়েটা কে। ”
—-” তুই আমাকে শান্ত হতে বলছিস কিভাবে? একটা মেয়ে আমার নামে এত বড় মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সবার সামনে আমাকে ছোট করেছে। আর তুই আমায় শান্ত হতে বলেছিস?”
হাতের কাছে পানির জগটা বারী মেরে ফেলে দিলো আরিয়ান । এখন যদি তার সামনে ওই মেয়েটাকে পায় খুন করে ফেলবে মনে হচ্ছে…..
হৃদয় চলে গেলো। আরিয়ানকে দেখে ওর খুব ভয় হচ্ছে। ও তো জানে আরিয়ান কে? সবার সামনে আরিয়ান একজন সেলিব্রিটি লেখক পাশাপাশি বিজনেস ম্যান কিন্তু কেউ তো জানে না আরিয়ানের রাগের সামনে বড় বড় মাফিয়ারা ভয় পাবে। আরিয়ান জোরে জোরে চিৎকার করছে আর জিনিসপত্র ছুড়ে মারছে…….
।।
।।
।।।
।।
সোনালী কিছুক্ষণ সবার কমেন্টের উত্তর দিচ্ছে। হটাৎ দেখলো আরিয়ানের ভাই হৃদয় তাকে ইনবক্সে ম্যাসেজ দিচ্ছে। সোনালী আইডি অফ না করে ফোন থেকে ডিলেট দিয়ে দিলো যেনো আইডি ওর কাছে না থাকে বাট পোষ্ট যেনো গ্রুপ গুলোতে থাকে। মাঝে দরকার পড়লে লগ আউট করে আবার আইডিতে ঢুকবে।
—-” ওই জানিস সোনালী আমি না আগে এই আরিয়ানের উপর ক্রাশ খাইছিলাম। কি সুন্দর তার লেখা। বার বার মুগ্ধ হয়ে যেতাম। মনে হতো তার লেখায় কোনো জাদু আছে কিন্তু দেখ আজ সেই মানুষটিকে সবার সামনে ছোট করার জন্য আমরা কত কিছুই না করলাম। বাই দা ওয়ে সকালে আইডি অফ করে দিস। ”
—” আইডি অফ করে দিলে তো মজা শেষ। পরে বলবে এইসব ফেক তাই আইডি অফ। আর আজকাল মানুষ ওর প্রতি অন্ধ ভক্ত পরে বিশ্বাস করে ফেলবে। আমাদের এত কষ্ট সব জলে যাবে থাকুক আইডি আর আমরাও আমাদের রিয়েল আইডি নিয়ে মজা করি পাশাপাশি আরিয়ানকে সান্তনা দেই।”
—-” কাটা গায়ে লবণের ছিটা দিবি হাহাহা।”
।।।
।।
।।।
।।।
রাতে আরিয়ান বসে বসে সিগারেট খাচ্ছে। সেই সকাল থেকে ওর ক্লাইন্ড থেকে ধরে রিলেটিভ সবাই ফোন দিয়ে ওই এক কথাই বলছে। তাই রাগে এই ফোনও ভেঙ্গে ফেলছে। হৃদয়কে বলেছে কেউ ফোন দিলে যেনো না ধরে। সারাদিন দশ প্যাকেট সিগারেট শেষ করে আরেকটি প্যাকেট খুললো আরিয়ান। ভাবতে লাগলো কার সাথে ওর এমন শত্রুতা যে এত বিশ্রী ভাবে প্রতিশোধ নিবে।
—” যে বা যারা এমন কাজ করেছে ছাড়বো না তাদের। কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি দিবো আমি। আইডির লিংক হৃদয় নাকি একজনকে দিয়েছে । কিছুদিন সময় লাগবে মেয়েটার খুঁজ পেতে ততদিন এইভাবেই চলতে হবে।”
পুরো রুম অন্ধকার। হৃদয় রুমে এসে সিগারেটের ধোঁয়ায় কাশতে শুরু করলো……
—” তোর কি করোনা হয়েছে তাহলে ট্রিপল নাইনে ফোন দিয়ে বল তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।”
এই অসময়ে তার উপর এমন পরিস্থিতিতে আরিয়ানের এমন মজা সূচক কথায় ঘাবড়ে গেলো হৃদয়। ঝড় শুরু হওয়ার আগে নাকি পরিবেশ শান্ত থাকে তাই হৃদয় মনে মনে দোয়া দুরূদ পরে আরিয়ানকে বললো……
—-” তোর বইটি আর প্রকাশিত হবে না। প্রকাশক বলেছে যে লোকের চরিত্র ঠিক নেই সেই লোকের বই কেউ কিনবে না। এতে নাকি তাদের লোকসান হবে আর সম্মানহানি হবে। ”
কথাটা বলে হৃদয় আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে দু পা পিছিয়ে নিলো…….
চলবে……..
বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন। গল্পকে গল্প ভেবেই পড়বেন বাস্তব মিলাবেন না প্লিজ।