মিথ্যা_অপবাদ পর্ব-১২

0
1705

#মিথ্যা_অপবাদ
#ফারজানা_আফরোজ
#পর্ব_১২

মেয়েটাই যেই পা উঠাবে তখন টুল কাথ হয়ে মেয়েটি পরে যেতে নিয়েই হৃদয় ধরে ফেলে। হৃদয় ইতিকে দেখে সারপ্রাইজ হয়ে যায়।

ইতি চোখ বন্ধ করে আছে। এলোমেলো চুলগুলো মুখের সামনে এসে পড়লো। কপাল ভাঁজ করে রেখেছে। হৃদয় তাকিয়ে দেখছে। ইতি যখন বুঝতে পারলো ও হাওয়ায় ভাসছে তখন এক চোখ বন্ধ করে অন্য চোখ খুলে দেখলো কি ঘটেছে যখন দেখলো ও হৃদয়ের কোলে তখন বললো……

—” আপনারা জেনে গেছেন আজ সোনালীকে দেখতে আসবে?”

হৃদয় কিছু বলছে না অপলোকভাবে তাকিয়ে আছে।

—-” এই যেএএএএএএএএএ শুনছেন আমারররররররর কথাআআআআআআআ।”

হৃদয় এত জোরে চিৎকার শুনে মনের অজান্তেই হাত ছেড়ে দিয়ে কানে ধরে আর ইতি মেঝেতে পরে যায়…….

—-” ও মা গো আমার কোমড় শেষ। বজ্জাত, অ্যানাকোন্ডা, হাতির দাঁত, জিরাফ, নাইজেরিয়ান, লাল মহিষ, বিলাতি ইন্দুর, পঁচা নদীর মরা মাছ, পঁচা কুমড়া,ফাজিল, অসভ্য ছেলে, শয়তানের জমজ ভাই, হাবলা মাছ,বট গাছে থাকা ভুত ,জলহস্তী, বিড়ালের এক্স জামাই, শয়তান ছেলে,মুখ পোড়া হনুমান, ধলা চিকা, ইবলিশ শয়তান, পচা লাউ, পচা ডিম, গোলাপি মহিষ,লাল বাঁদর, ছাল ছাড়া মোরগ, হাড্ডি ছাড়া ছাগল, বোল ছাড়া মোরগ, নীল খাটাশ, লাল খবিশ, অস্ট্রেলিয়ান জিরাফ, বট গাছে থাকা মিশকা ভূত,দেশী ছাগল, ভেড়া, হনুমান, বিড়ালের বড় ভাই, আমার কোমড় ভেঙে দিলো রেএএএএএএএ এখন আমার হবু বর কি আমায় বিয়ে করবে এ্য‌াঁ এ্য‌াঁ এ্য‌াঁ এ্য‌াঁ এ্য‌াঁ ।”

ইতির কথা গুলো হৃদয়ের মাথার উপর দিয়ে গেলো।এতক্ষণ রেডিওর মতো যা বলছে ইতি হৃদয় কিছুই বুঝতে পারলো না……..

—” আচ্ছা তুমি এতক্ষণ কি বললে ওইসব?”

হৃদয়ের এমন কথা শুনে রাগে ফুঁসতে থাকে ইতি। ফ্লোর থেকে উঠে কোমরে হাত দিয়ে কিছুটা বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো……

—” ওইগুলো আমার স্পেশাল গালি। আপনাকে তো আরো কিছু বলতে ইচ্ছে করছে নির্ঘাত আমি ভালো মানুষ তাই সামান্য কিছু বললাম।”

—” গালির পরিমাণ সামান্য ছিলো?”

—-” তা নয় তো কি? আমার জীবনে এত কম বকা শুধু আপনাকেই দিয়েছি। যে আমার বকার লিস্ট শুনেছে সে বলতে পারে এই ইতির বকার লিস্ট কত লম্বা।”

—” কত লম্বা?”

ইতি দুই হাত অনেকটা দূরে নিয়ে বললো……

—-” এতততততততত লম্বাআআআআআ।”

—-” এতততত লম্বাআআআ।”

—” হুম। আপনার কপাল ভালো যান বাতাসা বিলান এখন। ”

—” হুম।”

হৃদয় অন্যদিকে ঘুরে বুকে থু থু দিতে লাগলো…….

—” ওই আপনারা কেমনে জানেন আজ সোনালীকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসছে?”

—” পাত্র পক্ষই তো আমরা আর পাত্র হলেন শয়ং আমার ব্রো আরিয়ান।”

—” সোনালী বেবি তুমি তো গেছো এইবার। এই লেখক ভাইয়ার হাত থেকে তোমার মুক্তি নেই।”

—” শুনলাম তোমার নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?”

—” হুম। আগামী মাসেই বিয়ে। আপনাকে অগ্রিম দাওয়াত দিলাম চলে আসবেন কিন্তু!”

হৃদয় শুকনো হাঁসি দিয়ে বললো…..

—” আমি না থাকলে তো আর বিয়েই হবে না।”

—” আপনি না থাকলে বিয়ে হবে না কেনো?”

—” আরেহ তুমি দাওয়াত দিছো। তুমি তো চাও আমি যাই তাই বললাম।”

—” ওহহহহহ।”

—” হুম।”

বিছানার পাশ থেকে ইতির ফোন বাজছে হৃদয় ফোন হাতে নিয়ে দেখলো নিক নেম ‘ লাইফ লাইন ‘ । ফোন ইতির হাতে দিয়ে বললো…..

—” কারেন্টের লাইন ফোন দিয়েছে তোমার।”

ইতি হৃদয়ের দিকে কড়া চোখে তাকালো হৃদয় হাসলো। ইতি ফোন রিসিভ করতে যাবে তখন হৃদয় বললো……

—” সাবধানে কথা বলো পরে আবার শক খেও না কারেন্টের লাইনের সাথে কথা বলে।”

হৃদয় ইতিকে চোখ টিপ দিয়ে চলে যায়। ইতি হৃদয়কে ভেংচি কেটে নাহিদের সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত…….

।।

।।

।।

।।

—” জানো সোনালী এই শাড়িতে তোমায় কিন্তু একদম হহহহহহহহ……!”

—” ছিঃ ছিঃ ছিঃ কি বাজে ভাষা ইউজ করছেন। লজ্জা নাই আপনার। কিভাবে উচ্চারণ করেন এমন কথা।”

আরিয়ানের মুখে হাত দিয়ে সোনালী কথা বলতে লাগলো। আরিয়ান সোনালীর হাতে কামর দিলো…..

—” আহ্হ।”

—” তোমরা মেয়েরা না বুঝো কম বকবক করো বেশি। আমি হট না হুর বলতে চাইলাম। বাই দা ওয়ে তোমার মাইন্ড কি খারাপ গো ! সব সময় ভালো কথা শোনার আগে নেগেটিভ ভাবো। আচ্ছা তুমি কি সব সময় এমন পজিটিভ কে নেগেটিভ ভেবে মাথায় রাখো?”

সোনালী এখন লজ্জার থেকেও যদি বড় লজ্জা থাকে সে পেয়ে গেছে। মনে মনে বললো……

—” আমার মত বোকা পৃথিবীতে দুটো আছে বলে আমি মনে করি না। সব সময় ভাবী কি হবে আর হয় কি সত্যিই তো আমার মাইন্ড এত খারাপ কেনো?”

—” ওই হ্যালো এত না ভেবে আসো সেলফি তুলি।”

—” আপনার মত জিরাফের সাথে পিক তুললে লোকে বলবে বাপ বেটি দাঁড়িয়ে পিক তুলছে।”

সোনালী বুঝাতে চেয়েছিল লম্বার কথা কিন্তু আরিয়ান বুঝলো বয়সের কথা। দিলো থাপ্পড় সোনালীকে…..

—” ওই তুমি আমার থেকে মাত্র সাত বছরের ছোট। স্বামী স্ত্রীর এইটা পারফেক্ট । এইসব ফালতু কথা বললে এমন মার মারবো যেনো জীবনে কথা বলতে না পারে।”

সোনালী গালে হাত দিয়ে বললো……

—” আমি তো জাস্ট মজা করছিলাম আর আপনি এত জোড়ে থাপ্পড় দিলেন ওইটা হাত নাকি হাতুড়ি এক থাপ্পড়ে দাঁত সব নড়ে উঠেছে। আপনার মনে আমার জন্য কি একটু মায়া নেই । শুধু কি ওই মিথ্যা অপবাদ করার জন্যই আমার সাথে এমন করছেন?”

সোনালীর কান্না দেখে আজ খুব কষ্ট হচ্ছে আরিয়ানের। তাই হটাৎ করেই সোনালীর গালে চুমু খেয়ে সোজা হাঁটা শুরু করলো। সোনালী কান্না থামিয়ে আরিয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো…….

।।

।।

।।

।।

—-” তুমি সারাদিন ওই বাড়িতে কি করো? তোমার কি নিজের বাড়ি নেই?”

নাহিদ ইতির সাথে মিসবিহেভ করছে। ইতি নাহিদকে বললো…..

—” আজ সোনালীকে দেখতে এসেছিল তাই আন্টি আমায় আসতে বলেছে। আপনি তো জানেন সোনালী আমার বেস্ট…..!”

—” আমি কি এত কথা শুনতে চেয়েছি তোমার কাছে? এখন তুমি আমার বাগদত্তা আমি যা বলবো তাই করবে ওকে।”

—” আমি তো খারাপ কিছু করেনি।”

—” তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছো না।”

দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো নাহিদ। ইতির কোনো কথাই শুনতে ইচ্ছুক না নাহিদ।

—” হুম আমি বাসায় যাচ্ছি।”

—” ফ্রেন্ডকে পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছে এইখানে তোমার আসা তো কোনো দরকার নেই নাকি নিজেও আরেকটা খুঁজছো?”

—-” নাহিদ !”

—” একদম বকবক করবে না বাসায় যাও এক্ষুনি আমি ত্রিশ মিনিট পর ফোন দিবো তোমাকে যেনো তখন বাসায় দেখি।”

নাহিদ ফোন কেটে দিল ইতি কিছুক্ষণ কান্না করে ব্যাগ নিয়ে সোনালীর মাকে বলে চলে যায়। সোনালী মা কিছু জিজ্ঞাস করলে বলে বাড়িতে কিছু প্রবলেম হয়েছে তাই চলে যাচ্ছে……

ইতি যাওয়ার আগে হৃদয়ের সাথে দেখা হয়। হৃদয় ইতির মুখ দেখে বুঝতে পারে ইতি কাঁদছিল। হৃদয় কিছু বলার আগেই ইতি চলে যায়…….

।।

।।

।।

আরিয়ান তিন মাস পর বিয়ের ডেট ঠিক করতে বলেছে। আরিয়ানের কথা অনুযায়ী এক সপ্তাহ পর এনগেজমেন্ট হবে আর তিনমাস পর বিয়ে। আরিয়ানের দাদী বিয়েটা আরো একটু আগে নিতে চাইছিল কিন্তু ভয়ে কিছু বলেনি। আরিয়ানের দাদিও খুব ভয় পায় আরিয়ানকে।

আরিয়ানের বাবা মা নেই হৃদয়ের মা বাবার ডিভোর্স হয়ে গেছে তাই হৃদয় ওদের কারো সাথে কথা বলে না আরিয়ানের কাছেই থাকে। দাদী ওদের দুজনকে দেখে আসছে সেই ছোট থেকেই । ওরা দুইজন খুব ভালোবেসে ওদের দাদীকে…….

আরিয়ান হৃদয় আর ওর দাদী চলে যায়। সোনালী ইতির কথা ওর মার কাছ থেকে জানতে পেরে ইতিকে ফোন দিয়ে দেখে ও ব্যাস্ত। অনেকবার কল দেয় ফলাফল ওই একটাই…..

—” মাইয়া দেখি এখন খুব বিজি জামাই পাইয়া আমারে তো ভুইল্লা গেছে এক্কে বারে।”

।।

।।

।।

—” কে এত কল দিচ্ছে তোমায়?

—” সোনালী ফোন দিচ্ছে।”

—” তোমার ফ্রেন্ড এত ফোন দেয় কেনো?”

—” ও আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড নাহিদ।”

—” বিয়ের পর এইসব ফ্রেন্ড বেষ্ট ফ্রেন্ড কোনো কিছুই থাকবে না ওকে।”

ইতি আর সহ্য করতে না পেরে রাগে ফোন কেটে দিয়ে মাথার উপরে বালিশ রেখে শুয়ে পড়ে আর হুমায়ন আহমেদ স্যারের একটি উক্তি মনে পড়ে তার……

“গভীর প্রেম মানুষকে পুতুল বানিয় দেয়। প্রেমিক প্রেমিকার হাতের পুতুল হয় কিংবা প্রেমিকা হয় প্রেমিকের পুতুল। দুজন একসঙ্গে কখনও পুতুল হয় না। কে পুতুল হবে আর কে হবে সূত্রধর তা নির্ভর করে মানসিক ক্ষমতার উপর । মানসিক ক্ষমতা যার বেশি তার হাতেই পুতুলের সুতা”।

—” আমি এখন সেই পুতুল।”

।।

।।

।।

।।

রাতে সোনালী আরিয়ানের সেই গল্পটি পড়ছে ‘ অবশেষে তুমি আমার ‘

গল্পের একটা লাইনে এসে সোনালী বার বার পড়তে থাকে……

“বেশি সুন্দরী মেয়েদের কারো প্রেমে পড়তে নেই কেননা তার পিছনেই তো প্রেমে পড়ার মানুষের অভাব থাকে না। প্রেম হয় রাগ, লজ্জা, অপমান, ঘৃনা, কেয়ারিং, শাসন তাই কে কি দেখে প্রেম করবে তা সম্পূর্ণ তার মন ঠিক করে দেয়। ”

কথাগুলো সোনালীর মনকে বার বার মুগ্ধ করছে। ওর মনে হচ্ছে আরিয়ান কিছু মিশিয়ে এই কথাগুলো লিখেছে। বার বার ওই লেখায় মুগ্ধ হয়ে পড়ছে সোনালী……….

ট্রিং…….

—” এত রাত করে জেগে আছো কেনো?”

আরিয়ানের ম্যাসেজ দেখে সোনালী উত্তর দিলো…..

—” এত সুন্দর কিভাবে লিখেন বলবেন একটু ? যত পড়ি ততই মুগ্ধ হচ্ছি কি যাদু আপনার লেখায়?”

—” লেখার জাদু দেখলে মনের জাদু দেখলে না।”

—” আপনার আবার মনের জাদু আছে? আমি তো জানি শুধু থাপ্পড় দেওয়ার এক্সট্রা শক্তি আছে আপনার।”

—” ঘুমাও এখন।”

—” কি করবেন আপনি?”

—” সিগারেট ধরিয়ে বইয়ের কিছু কাজ আছে ওইটা কমপ্লিট করবো। গুড নাইট।”

আরিয়ান সাথে সাথেই অফলাইন……..

—” আনরোমান্টিক কোথাকার।”

চলবে……

বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন।