মুখোশের_আড়ালে পর্ব-০৪

0
2862

#মুখোশের_আড়ালে
#Writerঃতাসনিম_রাইসা(আরিয়ানা)
#Partঃ4

রাই মিমি দুজনই স্তব্ধ হয়ে গেলো,কারো মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না,
ভিডিওটি দেখে রাই চিৎকার দিয়ে কান্না করে বললো,

রাইঃএটা হতে পারে আমার নিজের আপন চাচাতো ভাই আমার সাথে এমন জঘন্য কাজ করতে পারে না

মিমিও ভাবতে পারে নি রাজ এমন একটা জঘন্য কাজ করবে। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রাজ রাতে রাইকে ধর্ষণ করেছে।।নিজের আপন ভাইয়ের মতই রাই রাজকে ভালোবাসতো বাট আজ সে রাইয়ের গায়ে ধর্ষনের দাগ লাগিয়ে দিল।। এখন ও সমাজে মুখ দেখাবে কি করে।। রাই মিমিকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে কান্না করছে,মিমিও আর সহ্য করতে পারছে না!! এমন একটা সত্য ঘটনা আজ ধরা পরলো,মুখোশের আড়ালে রাজ এতটা জঘন্য হতে পারে তা মিমি আর রাইয়ের কল্পনাও অতীত।।

মিমিঃমুখোশের আড়ালে এই মানুষটাকে আমি ছাড়বো না।। আমার কলিজার গায়ে ও হাত দিয়েছে।। ওকে তো শাস্তি পেতেই হবে

রাইয়ের কান্নার চিৎকারে রাইয়ের মা বাবা দৌড়ে রাইয়ের ঘরে এসে দেখে রাই আর মিমি দুজনই কান্না করছে আর রাই বলছে,

রাইঃমিমি আমি আর বাঁচতে চাই না।। আমার সাথে কেনো এমনটা করলো।। আমার সুন্দর জীবনটাকে নষ্ট করে দিল। আমি এই মানুষটাকে নিজের ভাইয়ের মতে জানতাম বাট সে আমার জীবন নষ্ট করে দিলো

রাইয়ের বাবা মা রাইয়ের কথা শুনে ঘাবড়ে গেলো,রাই এসব কি বলছে আর কান্নাই বা করছে কেনো??মিমির কপাল রক্ত দেখে আরো ঘাবড়ে গেলো।।হাজারো প্রশ্ন তাদের মাথায় ঘোড়পাক খাচ্ছে,

মিমিঃনিজেকে সামলা রাই,এভাবে ভেঙ্গে পরলে চলবে না,এই মুখোশের আড়ালের জানোয়ারটাকে যে শাস্তি দিতে হবে।

প্রচন্ড রাগ নিয়ে মিমি কথাগুলো বললো।। রাইয়ের মা বাবা নিজের মেয়ের এমন অবস্থা দেখে বুঝতে পারছে না কি হয়েছে রাইয়ের??

আব্বুঃরাই তোর কি হয়েছে??কান্না করছিস কেনো?? এসব কি বলছিস তুই?
.
আম্মুঃমিমি রাইয়ের কি হয়েছে??আর তোর কপালে আঘাত পেয়েছিস কি করে??

মিমি ওনাদের দেখে ক্যামেরাটা লুকিয়ে ফেলে,কারণ ও এই মূহূর্তে ওনাদের কিছু বলতে চায় না,তাহলে রাজ সাবধান হয়ে পালাতে পারে এটা মিমির ধারণা আর রাইকেও তারা ভুল বুঝতে পারে।। তাই ও ওনাদের কথার কোনো জবাব দিলো না
হঠাৎ রাই সেন্স হারিয়ে মিমির কোলে ঢলে পরে।।মিমি রাইকে ধরে বিছানায় শোয়ায়।। মিমি,রাইয়ের আব্বু আম্মু রাইকে ডাকছে,ওর চোখে মুখে পানি দিচ্ছে বাট রাই চোখ খুলছে না।। ওরা আর কিছু না ভেবে রাইকে হাসপাতালে নিয়ে যায়
রাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়,ডাক্তার রাইয়ের এমন অবস্থা দেখে বুঝতে পারে বাট সে সিউর হওয়ার জন্য রাইয়ের মা বাবাকে বলে ওর কিছু টেস্ট করাতে।
মিমি ডাক্তারের কথা শুনে চিন্তায় পরে যায়,টেস্টে যদি কিছু ধরা পরে,মামুনি আঙ্কেল,নিরব যদি রাইকে ভুল বুঝে,কি জবাব দেবে ও?? মিমি আর ভাবতে পারছে না ওর মাথা ঘুরোচ্ছে।।
নিরব দৌড়ে হসপিটালে পৌঁছে রাইয়ের এমন অবস্থা শুনে ভেঙ্গে পরে,একমাত্র আদরের কলিজার বোনের এই অবস্থা দেখে নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না হাউ মাউ করে কান্না করে দেয়,নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসতো ও রাইকে।।মিমি নিরবকে শান্তনা দিয়ে বলছে,

মিমিঃনিজেকে সামলাও নিরব,এভাবে ভেঙ্গে পরলে চলবে না। নিজেকে শক্ত করো!

নিরব মিমিকে জড়িয়ে ধরে আরো জোরে কান্না করে দেয়,মিমিরও খুব খারাপ লাগছে,কান্না করতে ইচ্ছে করছে বাট এই পরিস্থিতিতে ওর ভেঙ্গে পরলে চলবে না,ও আর আল্লাহ ছাড়া রাইয়ের পাশে থাকার মত যে এখন কেউ নেই।।নিজেকে সামলে মিমি নিরবকে উঠিয়ে ওর দিকে তাকালো,

মিমিঃনিরব নিজেকে সামলাও,এর থেকে আরো কঠিন পরিস্থিতিতে তোমাদের পরতে হবে,চরম একটা সত্যের মুখোমুখি তোমাদের হতে হবে।। তাই বলছি এখন থেকে নিজেকে সামলাও

নিরব মিমির কথায় কিছুটা অবাক হলো,এসব কি বলছে মিমি,কেনোই বা বলছে??নিরব নিজেকে সামলে মিমির দিকে জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকালো,

নিরবঃমিমি তুমি এসব কি বলছো,কিসের সত্য??
.
মিমিঃসরি নিরব আমি এখন তোমাকে কিছুই বলতে পারবো না।।তবে সময় হোক তোমাদের সবটা জানাবো, আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারো রাইয়ের কোনো ক্ষতি আমি হতে দেবো না।। তবে এখন আমি কিছু বলতে পারবো না

নিরব মিমির কথার কিছুই বুঝলো না,কি সত্য জানাবে মিমি?? আর রাইয়ের ক্ষতি কে করবে,ওদের তো কোনো শত্রু নেই।।তাহলে….
নিরব মিমিকে আর কিছুই জিজ্ঞাসা করলো না,কথাগুলো বলে মিমি রাইয়ের কেবিনের সামনে চলে গেলো।। রাইয়ের মা প্রচুর কান্না করছে,সবার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ।। মিমির চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে,সকালে ওর কপাল থেকে প্রচুর রক্ত পরেছে,মাথা ব্যথায় আর হাঁটতে পারছে না মিমি তাই চেয়ারে বসে পরে…রাজ অফিস থেকে হসপিটালে এসে রাইয়ের মা বাবাকে জিজ্ঞাসা করলো,

রাজঃচাচ্চু কি হয়েছে রাইয়ের??

রাজকে দেখে মিমির প্রচুর রাগ উঠলো,ওর রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে,মিমির রাজকে খুন করতে ইচ্ছে করছে,রাজের দিকে এগিয়ে গিয়ে মিমি বললো,

মিমিঃআপনার এত জানতে হবে না রাইয়ের কি হয়েছে??

মিমির এমন আচরণে রাজ,নিরব আর রাইয়ের মা বাবা খুব অবাক হয়,সচরাচর মিমি কারো সাথে এমন আচরণ করে না,নিরব মিমির দিকে এগিয়ে গেলো,

নিরবঃকি হচ্ছে মিমি?? রাজের সাথে এমন আচরণ করছো কেনো?? (নিরব কিছুটা রেগে বললো)

মিমি নিজেকে সামলে বললো,

মিমিঃসরি আসলে মাথা ঠিক নেই তো তাই ভুলবাল বলছি।। সরি রাজ ভাইয়া….
.
রাজঃit’s ok

সবার সামনে মিমি রাজকে কিছু বললো না।।নিজের রাগকে কন্ট্রোল করলো।।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার রির্পোট হাতে নিয়ে ওদের সবার সামনে দাঁড়ালো,ডাক্তার তাদের সবাইকে রির্পোটে কি এসেছে বলতেই সবাই অবাক হয়ে যায়,

ডাক্তারঃshe is pregnant!! রাইয়ের গর্ভে ৪ মাসের বাচ্চা!!

ডাক্তারের কথা শুনে সবার মাথায় যেন বাজ পরলো,কি বলছে ডাক্তার এসব?? তাদের জানা মতে রাইয়ের সাথে কারো কোনো রিলেশন নেই আর রাই এরকম মেয়ে না যে এসবে জড়াবে,তাহলে ডাক্তার এসব কি বলছে?? রাই কি কারো সাথে….সবার মনে একই প্রশ্ন??মিমিও ডাক্তারের কথা শুনে কিছুটা অবাক হলো,ওর খুব চিন্তা হচ্ছে এবার সবাইকে ও কি উত্তর দেবে
নিরব মিমির দিকে জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকালো,বাকি সবাইও ওকে ঘিরে ধরেছে,

নিরবঃমিমি ডাক্তার এসব কি বললো??

মিমি জেনেও চুপ করে ছিলো,সে অসহায় দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকিয়ে আছে,

মিমিঃনিরব আমি কিছু জানি না!!

কেউ মিমিকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করলো না।নিরব মিমির চাহনিতে বুঝলো ও কিছু জানে বাট ও কাউকে বলছে না,নিরব মিমিকে বিশ্বাস করে তাই মিমিকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করে নি।নিরব সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,

নিরবঃকেউ রাইকে এ ব্যাপারে এখন কিছু জিজ্ঞাসা করবা না,আগে ও সুস্থ হোক,পরে সব জানা যাবে,

সবাই নিরবের কথায় সম্মতি জানালো।।কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে বললো,

ডাক্তারঃরাইয়ের জ্ঞান ফিরেছে,এখন ওকে দেখতে পারেন,আর কিছুক্ষণ পর ওকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন,তবে রাইকে কোনো প্রকার চাপ আর টেনশন করতে দেয়া যাবে না,ওর শরীর প্রচুর দূর্বল,ওর দিকে খেয়াল রাখবেন…..

সবাই ডাক্তারের কথায় সম্মতি জানিয়ে রাইয়ের কেবিনে গেলো,রাই রাজকে দেখে রাগে ঘৃণায় অন্যদিকে ফিরে গেলো,ও ভাবতেও পারছে না ভাই নামের এই মানুষটা এতটা জঘন্য,ভালো মানুষের মুখোশের আড়ালে রাজ যে এতটা খারাপ ও বুঝতেও পারে নি,রাইয়ের চোখ দিয়ে পানি পরছে আর ভাবছে,এবার ও কি করবে?? সবাই জানতে পারলে ও কি জবাব দেবে??
রাইয়ের মা রাইয়ের মাথায় হাত দিয়ে বললো,

আম্মুঃএখন কেমন আছিস মা
.
রাইঃভালো

কেউ রাইকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করলো না…ওকে বাসায় নিয়ে গেলো,মিমি ওর পাশে থাকে,ও জানে পরের পরিস্থিতি রাইয়ের সামাল দিতে অনেকটা কষ্ট হবে,তাই মিমি ওর পাশেই থাকে,কলেজে ওদের তেমন যাওয়া পরে না..রাই ঘর থেকে তেমন বের হয় না।। রাই কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর সবাই রাইকে ডাক্তারের বলা কথা অনুযায়ি নানান প্রশ্ন করছে,রাই জানতে পারলো ও প্রেগন্যান্ট,ও কান্নায় ভেঙ্গে পরে, ওর এখন মরে যেতে ইচ্ছে করছে।।মিমিও কান্না করছে,বাট ওর রাজের উপর প্রচুর রাগ উঠছে,ও শপথ করেছে আজ রাজের ভালো মানুষির রুপটা টেনে ছিড়ে মুখোশের আড়ালে যে আসল রুপ আছে তা সবার সামনে বের করে ওকে শাস্তি দেবে….

চলবে………