মুখোশের_আড়ালে পর্ব-০৩

0
3298

#মুখোশের_আড়ালে
#Writerঃতাসনিম_রাইসা(আরিয়ানা)
#Partঃ3

মিমি হঠাৎ কারো গলার শব্দ শুনতে পেলো।।পেছনে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো
রাইয়ের চাচাতো ভাই রাজ,রাজ এসে বললো,

রাজঃকি হয়েছে রাইয়ের?আপনি কান্না করছেন কেনো?
মিমি কিছু না ভেবেই বললো
.
মিমিঃও দরজার বাহিরে সেন্সলেস হয়ে পরে ছিল।।আমি ঘুম থেকে উঠে ওকে বাহিরে দেখেছি,আপনাদের অনেক ডেকেছি বাট কেউ সারা দেয়নি

রাজ আর মিমি রাইয়ের চোখে মুখে পানি দিতে লাগলো।।কিছুক্ষণ পর রাই চোখ মেলে তাকালো,রাই মিমি আর রাজকে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেল,কি হয়েছিল ওর,মিমি কান্না করছে কেনো।।
মিমিঃদোস্ত এখন কেমন আছিস? তোর কি হয়েছিল?তুই দরজার বাহিরে ওভাবে…

রাজ সামনে বলে মিমি রাইকে আর কিছু বললো না।।রাই রাজকে ধন্যবাদ দিয়ে যেতে বললো।। রাজ চলে যাওয়ার পর।।রাই হঠাৎ মিমিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।। মিমিও রাইকে ধরে কাঁদছে।। মিমি ঠিক বুঝতে পারছে রাইয়ের সাথে কেউ… আর ভাবতে পারছে না মিমি কি করবে।।নিজেকে সামলে মিমি রাইয়ের দিকে তাকালো,

মিমিঃতোর কিছু মনে পরছে,কে এমন করেছে?
.
রাইঃনা দোস্ত তবে আমার এতটুকু খেয়াল আছে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য উঠতে চাইছিলাম বাট ঘুমের কারণে পারছিলাম না,কষ্ট করে উঠে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম কিন্তু হঠাৎ আমি মাথা ঘুরে পরে যাই।।এরপর আমার আর কিছুই মনে নেই।। এখন তোদের দেখলাম।।

মিমি রাইয়ের কথা শুনে আর ওর এমন অবস্থা দেখে স্তব্দ হয়ে যায়।।এমন পরিস্থিতিতে ও কি বলবে বুঝতে পারছে না।।রাইকে সান্তনা দেয়া ছাড়া ওর আর কিছুই করার নেই
আজ রাই আর মিমি কেউ কলেজে যায়নি।মিমি ওর বাসায় ফোন করে জানিয়ে দিল ও কয়টা দিন রাইয়ের সাথে থাকবে।।এ অবস্থায় রাইকে ও একলা রাখতে চায় না যদি কোনো অঘটন ঘটে যায়।।
মিমি আর রাই ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করার জন্য নিচে নামলো

মিমিঃগুড মর্নিং মামুনি

মিমি রাইয়ের আম্মুকে ভালোবেসে মামুনি ডাকে।।রাইয়ের বাবা,ভাই নিরব আর রাজ টেবিলে এসে বসলো।।

নিরবঃকি মিমি কেমন আছো?
.
মিমিঃএইতো ভালো,তুমি নিরব?
.
রাইঃঐ তোরে না বলছি আমার ভাইয়াকে ভাইয়া বলে ডাকতে
.
মিমিঃসর যা তোর ভাই আমার হবু বর।ওকে কেনো ভাইয়া বলে ডাকতে যাবো

মিমির কথা শুনে নিরব অবাক হয়ে গেছে আর কিছুটা লজ্জা পেয়েছে,

নিরবঃমিমি এসব কি বলছো?
.
মিমিঃনা_মা_মানে কিছু না
.
রাইঃহা হা হা কি ব্যাপার.. মজা করতে গিয়ে সত্যি কথা মুখ থেকে বেরিয়ে গেলো

মিমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।।মিমি আর নিরব দুজন দুজনকে পছন্দ করে বাট কেউ কাউকে বলে না।। সবার নাস্তা করা শেষ হলে যে যার কাজে চলে গেল
মিমি আর রাই ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছে,

মিমিঃআচ্ছা দোস্ত রাজ ভাইয়া কি সবসময় এরকম চুপচাপ থাকে।।কথাবার্তা কি বলে না নাকি?
.
রাইঃওনার বোন মরার পর থেকেই এমন চুপচাপ থাকে।।দরকার ছাড়া তেমন কথা বলে না।।আপন বলতে রিতু আপুই ছিলো।।সেও চলে গেছে।।তাই এমন চুপচাপ বাট রাজ ভাইয়া খুব ভালো ছেলে,কোনো মেয়ের দিকে তাকায় না।
.
মিমিঃতাই নাকি!! তুই আবার প্রেমে টেমে পরে গেলি নাকি?? প্রেমে পরেছে মন প্রেমে পরেছে,অচেনা এক মানুষ আমায়,থুক্কু অচেনা না চেনা হবে।। চেনা একজন বালক আমায় পাগল করেছে।
.
রাইঃউফফ মিমি উনাকে আমি ভাইয়ের চোখে দেখি আর তুই এসব কি বলছিস??মজা করিস না তো
.
মিমিঃসরি জানেমান।। তুই তো আমার আর কারো না।
.
রাইঃচিন্তায় আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে আর তুই মজা করছিস

এবার রাই আর মিমি দুজনই রাত আর সকালের কথা ভাবতে থাকে।। মিমি কিছুতেই বুঝতে পারছে না ও বিছানা থেকে একবারো উঠে নি তাহলে ও সোফায় গেলো কি করে আর রাই, রাই বা ওমন অবস্থায় ছিলো কেনো।।হঠাৎ মিমি ভয়ের দৃষ্টিতে রাইয়ের দিকে তাকালো,

রাইঃএভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?
.
মিমিঃতো_দে_র বাড়িতে ভূ_ত_ত নেই তো
.
রাইঃsetup মিমি,কি সব যা তা বলছিস?ভূত বলতে কিছুই নেই।।এসব উল্টা পাল্টা কথা বলবি না।
.
মিমিঃরাগ করছিস কেনো?যে সব ঘটনা ঘটছে দেখে তো মনে হচ্ছে কোনো ভূত প্রেত কাজগুলো করছে
.
রাইঃউফফ মিমি মজা করিস না তো!!
.
মিমিঃআচ্ছা দোস্ত তোর ঘরের চাবি কার কার কাছে থাকে??
.
রাইঃএকটা আমার কাছে আরেকটা আম্মুর কাছে।।আমি রুমে দরজা লক করে থাকলেও অন্য কেউ তা বাহির থেকে খুলতে পারবে।।কিন্তু আমার পুরো বিশ্বাস আমার পরিবারের কেউ এমন কাজ করবে না। তারা আমাকে অনেক ভালোবাসে।।
.
মিমিঃহুম বুঝলাম।

মিমি আর রাই ভাবছে কি করা যায়।।মিমির মাথায় দারুন একটা প্লেন আসছে,

মিমিঃদোস্ত আমরা একটা কাজ করলেই পারি একটা ক্যামেরা এনে তোর ঘরে ফিট করে রাখবো।।তাতে সব রেকর্ড হয়ে থাকবে আর তাতে দেখা যাবে কে এই কাজগুলো করে
.
রাইঃঠিক বলেছিস

রাই আর মিমি বিকেলে রেডি হয়ে শপিং এর জন্য বের হলো। শপিং করে সাথে তারা একটা ক্যামেরাও কিনে নিলো।।রাতে বাসায় এসে ডিনার করে রুমে আসলো।। রাই আর মিমি মিলে ক্যামেরাটা একটা জায়গায় সেট করলো,যেখান থেকে রাইয়ের রুম পুরোটা দেখা যায়।। রাই রুমের লাইট জ্বালিয়ে এক গ্লাস দুধ পান করে মিমির সাথে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পরলো।।রুমের বাতি তারা অফ করলো না
সকালে রাইয়ের ঘুম ভাঙ্গতেই বুঝতে পারে সে আজও ধর্ষনের শিকার হয়েছে।।গায়ে সেই ব্যথা,মিমিকে পাশে দেখতে না পেয়ে রাই বিছানা ছেড়ে উঠে মিমিকে খুজতে লাগলো,ওয়াশরুমের পাশে মিমিকে আহত অবস্থায় দেখে রাই মিমি বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।। বাট কেউ ওর আওয়াজের শব্দে এলো না।। রাই খুব কান্না করছে,কি হচ্ছে এসব,ও বুঝতে পারছে না।।আজ ওর জন্য মিমির এই অবস্থা, কান্না করতে থাকে ও।।মিমির কপাল থেকে রক্ত বের হচ্ছে,রাই মিমির চোখে মুখে পানি দিলো,মিমি চোখ খুললো,ওর মাথায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করছে।।হঠাৎ মিমির রাতের কথা মনে পরে,মনে পরতেই মিমি উঠে রাইয়ের দিকে তাকায়,

মিমিঃরাই তুই ঠিক আছিস।।কিছু হয়নি তো তোর

রাই চিৎকার দিয়ে কান্না করছে,আর বলছে,

রাইঃকিচ্ছু ঠিক নেই,কেনো এসব হচ্ছে আমার সাথে??কে এসব করছে,করে কি এমন শান্তি পাচ্ছে??

রাইয়ের কান্না মিমি ছাড়া কেউ শুনতে পাচ্ছে না,অসহায়ের মতো কান্না করছে রাই,তার আর বাচতে ইচ্ছে করছে না।রাইয়ের কান্নায় মিমিও ভেঙ্গে পরে,ও থেকেও কিছুই করতে পারছে না।।রাইয়ের কষ্ট মিমির আর সহ্য হচ্ছে না।।মিমির কপাল বেয়ে প্রচুর রক্ত পরছে বাট ওর সেদিকে খেয়াল নেই।।রাইয়ের কষ্টে ওর বুকটা ধুমরে মুচড়ে যাচ্ছে।।ও রাইকে এতটাই ভালোবাসে যে নিজেকে বার বার দোষারোপ করছে, ও রাইয়ের পাশে থেকেও রাইকে ঐ জানোয়ারের হাত থেকে বাচাতে পারলো না,এখন কি করবে ও??নিজেকে সামলে মিমি রাইয়ের দিকে তাকায়,

মিমিঃআমি পারলাম না তোকে রক্ষা করতে
.
রাইঃএসব বলিস না মিমি,আমার জন্য তোর আজ এই অবস্থা!! আচ্ছা তোর এই অবস্থা হলো কি করে??
.
মিমিঃরাতে আমি কারো আসার শব্দ পেয়েছিলাম,ঘুমটা তখন ভেঙ্গে যায়,দেখি লাইট অফ,আমি কিছুটা অবাক হই,লাইট তো জ্বালানো ছিল অফ করলো কে?অন্ধকারে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না,উঠে গিয়ে
বাতি জ্বালানোর জন্য এগিয়ে যেতেই কেউ সামনে থেকে আমার মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে,এরপর আর আমার কিছুই মনে নেই
.
রাইঃএসব কি হচ্ছে আমার সাথে,আমার আর বাচতে ইচ্ছে করছে না দোস্ত
.
মিমিঃএমন কথা বলিস না দোস্ত,সব ঠিক হয়ে যাবে

হঠাৎ রাইয়ের ক্যামেরার কথা মনে পরলো,মিমিকে বলে ক্যামেরাটা নামিয়ে যা রেকর্ড হয়েছে তা দেখছিলো।।কয়েক মিনিট পর ওরা ভিডিওতে যা দেখলো তা দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না।।রাই মিমি দুজনই স্তব্ধ হয়ে গেলো,কারো মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না

চলবে__