মুখোশের_আড়ালে পর্ব-০৬

0
2535

#মুখোশের_আড়ালে
#Writerঃতাসনিম_রাইসা(আরিয়ানা)
#Partঃ6

রাজের হাত পা কাঁপছে সে তো অন্যায় কিছু করেনি,সে তো রাইকে ভালোবাসে,তাও আজ তাকে অপমান হতে হবে,তার ভালোবাসার মানুষকে সে আজ হারিয়ে ফেলবে
অচেনা এক ভয় কাজ করছে রাজের মধ্যে,ও সবাইকে কি জবাব দেবে বুঝতে পারছে না।।
নিরব,রাইয়ের বাবা মা সবাই ভিডিওটি দেখে অবাক হয়,তারা যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না রাজ এসব করেছে।।রাই কান্না করছে ঘৃণায় ও মাথা উঁচু করে তাকাতে পারছে না,ওর খুব কষ্ট হচ্ছে।।রাজ রাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে,সে জানে সে রাইকে অনেক কষ্ট দিয়েছে,রাইয়ের কান্না দেখেও,কষ্ট হলেও ভালো থাকার মিথ্যে অভিনয় করেছে বাট সে তো রাইকে ভালোবাসে, সে চায়নি রাই কষ্ট পাক।। মুখোশের আড়ালের সে মানুষটার আসল রুপ বের করতে আর রাইকে বাচাতেই তাকে যে এতকিছু করতে হয়েছে,রাজ ভাবছে ও রাইকে ছাড়া থাকতে পারবে না, আজ যদি রাই ওকে ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দেয় তাহলে ও থাকবে কি করে।। আর ভাবতে পারছে না রাজ,ওর চোখ পানিতে ভিজে আসলো, কাউকে বুঝতে দিলো না রাজ।। নিরব ভিডিওটা দেখে ওর রক্ত টগবগ করছে রাজকে খুন করার জন্য।। নিরব রাজের কলার ধরে ওকে মারতে থাকে বাট রাজ কিছুই বলছে না,

নিরবঃবল আমার বোনের সাথে তুই এমন করেছিস কেনো??তোকে আমি মেরেই ফেলবো!!

নিরব পাগলের মতো রাজকে মারছে।। সবাই নিরবের আচরণে ভয় পেয়ে যায়, কেউ চাইলেও নিরবকে আটকাতে পারবে না,ভয়ে কেউ সামনে যাচ্ছে না,

নিরবঃজানোয়ার তুই আমার বোনের জীবনটা কেনো নষ্ট করলি??
.
রাজঃনিরব আমাকে যত পারিস মার তাও কথাগুলো একবার শোন ভাই
.
নিরবঃতোর কোনো কথাই আমি শুনবো না, তোকে খুন করবো আজ

নিরব কোনো কথা না শুনে পাগলের মতো মারছে রাজকে, মারতে মারতে রাজের শরীর দিয়ে রক্ত ঝরছে, ভয়ে ভয়ে রাই নিরবের কাছে গিয়ে নিরবকে আটকে বললো,

রাইঃভাইয়া ছেড়ে দে আর মারিস না,মরে যাবে তো
.
নিরবঃওর সাহস কি করে হলো আমার কলিজার বোনের দিকে নজর দেয়ার, ওর চোখ টেনে ছিড়ে ফেলবো আমি
.
রাইঃভাইয়া তোর পায়ে পরি,তুই থাম এবার

রাইয়ের কথায় নিরব থেমে যায়, ও সরে যায় রাজের কাছ থেকে, রাজ পানি পানি করেছিলো,রাই মিমিকে পানি আনতে বলে,মিমি পানি এনে রাজকে খাওয়ায়।। রাই রাজের দিকে তাকতেও পারছে না,তাও যে তাকে আজ রাজের দিকে তাকাতে হবে,ওর জানতে হবে কেনো সে ওর জীবনটা অল্পতে নষ্ট করলো,রাই রাজের সামনে গিয়ে বসে,

রাইঃআমি কি অন্যায় করেছি রাজ ভাইয়া,আপনি আমার জীবন কেনো এভাবে নষ্ট করলেন??

রাজ রাইয়ের দিকে করুন চোখে তাকালো,

রাজঃরাই তুই আমাকে ভুল বুঝিস না।। তুই তো জানিস আমি তোকে ভালোবাসি,আমি কোনো অন্যায় করি নি

রাজের কথা শুনে যেন সবাই আকাশ থেকে পরলো,কি বলছে রাজের এসব,ও রাইকে ভালোবাসে আর রাই তা জানে।।

মিমিঃরাই রাজ ভাইয়া এসব কি বলছে তুই জানিস,আমাকেও তো বললি না
.
রাইঃমিমি আমি চাই নি রাজ ভাইয়া কারো কাছে ছোট হোক,আর উনি একবার বলার পর আর আমাকে বলে নি,তাই আমি কাউকে বলার প্রয়োজন মনে করিনি
.
রাজঃআমি সত্যি বলছি রাই তখন তুই আমাকে না করার পর আমার খুব কষ্ট হয়েছিলো বাট তাও আমি তোকে ভালোবেসে গেছি
.
রাইঃset up, আপনার ঐ অপবিত্র মুখে ভালোবাসার কথা বলবেন না, আর আমি তো আপনাকে না করে দিয়েছিলাম, বলেছিলাম আমি আপনাকে ভাইয়ের মতো জানি
.
রাজঃকিন্তু আমি তো তোকে ভালোবাসি।। আমি কোনো অন্যায় করি নি রাই, আমি তোকে এক রাক্ষসের হাত থেকে বাচাতে চেয়েছিলাম আর আমার আর তোর একটা ফুটফুটে মেয়ে বাবু দেখতে চেয়েছিলাম, আমি কোনো ভুল করিনি রাই

রাই রাজের গালে সজোরে একটা থাপ্পর মারে।।

রাইঃমিথ্যে বলবেন না,নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপাবেন না।। আর আমাকে ধর্ষন করে এভাবে সবার কাছে ছোট করে বাচ্চার বাবা হতে চেয়েছেন,এই আপনার আমার প্রতি ভালোবাসা,ছিহ ঘৃণা লাগছে আমার আপনার প্রতি
.
আব্বুঃওর বোন যেমন খারাপ ছিলো,বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট হয়েছে,পরে কাউকে মুখ দেখাতে না পেরে গলায় দড়ি দিয়ে মরেছে,আর এখন ও অন্য মেয়েদের সাথে এমন করে ছিহ। তোকে ছেলের মত ভাবাও ভুল হয়েছে

এবার আর রাজ ওর রাগকে আটকে রাখতে পারলো না,ব্যথার শরীর নিয়েই রাইয়ের বাবার গলা টিপে ধরে,সবাই ভয় পেয়ে যায়,রাজকে সবাই ছাড়াতে থাকে।।বাট নিরব ছাড়ছে না,এতক্ষণ ওকে মেরেছে ওর কষ্ট লাগে নি বাট ওর কলিজার বোনের নামে বাজে কথা বলাতে আর সহ্য করতে পারেনি।।

রাজঃআমার বোনকে নিয়ে একটাও বাজে কথা বলবি না

নিরব রেগে আবার রাজকে ওর বাবার কাছ থেকে ছাড়িয়ে মারতে যায়,বাট মিমি আর রাই আটকে ফেলে।।রাজ ব্যথায় ভালোভাবে নড়তে পারছে না,বাট ওর আর সহ্য হচ্ছে না,রাগে ওর চোখ লাল হয়ে যায়,ও আর নিতে পারছে না এসব বাজে কথা।।এবার রাজ রেগে গিয়ে রাইকে ধরে যা বললো তা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়,রাই কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়,ওর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছিল না,রাজ চিৎকার করে বললো,

রাজঃenough is enough, এতক্ষণ অনেক সহ্য করেছি বাট আর নয়,আমি কোনো অন্যায় করি নি আমার বোন রিতুও করেনি।। আর তোকে আমি ধর্ষন করি নি রাই,এটা আমার অধিকার,আর এই বাচ্চাটা তোর আর আমার ভালোবাসার চিন্হ, because তুই আমার বিয়ে করা বউ

রাই রাজের কথা শুনে পুরো অবাক হয়ে যায়,কি বলছে রাজ এসব, ও ভাবতে থাকে,রাজ কি সত্যি বলছে??

আম্মুঃতুই এসব কি বলছিস??
.
রাজঃহ্যা রাই আমার স্ত্রী,আর মুখোশের আড়ালের জানোয়ার আমি না অন্য কেউ,যে আমার বোন রিতুকে ধর্ষন করেছে সাথে রাইকেও

রাজের কথায় সবাই পুনরায় অবাক হয়ে গেলো,রাই হঠাৎ চিৎকার দিয়ে কান্না করে বলতে থাকে,

রাইঃইয়া আল্লাহ এসব কি হচ্ছে আমার সাথে,কোন পাপের শাস্তি তুমি আমাকে দিচ্ছো

রাই কান্না করতে করতে বসে পরে,মিমি গিয়ে রাইকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,মিমিও আর রাইয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারছে না,রাজ আবার বলা শুরু করলো,

রাজঃরাই আমাকে মাফ করে দে,তোকে ভালোবাসি বলেই তোকে বাঁচাতে চেয়েছি,আজ আমি সব বলবো,আসল শয়তান কে??
.
আব্বুঃতুই কি বলবি,তোর আর কোনো কথা আমরা শুনবো না,নিরব পুলিশকে এখনি ডাক,ওকে পুলিশে দেবো

নিরব হাতে ফোন নিয়ে পুলিশকে কল দেবে এমন সময় রাই বললো,

রাইঃনা ভাইয়া ফোন দিবি না,আমি সবটা জানতে চাই,রিতু আপু আমাকে কিছু বলতে চেয়েছিল বাট আমি সময়ের জন্য আপুর কথা শুনতে পারিনি,আজ আমি সবটা জানতে চাই
.
আব্বুঃবাট রাই…
.
রাইঃআব্বু প্লিজ আমি সবটা জানতে চাই(চেঁচিয়ে বললো) রাজ ভাইয়া আপনি সব বলা শুরু করেন। তার আগে বলুন আপনার সাথে আমার বিয়ে হলো কখন আর কি করে??
.
রাজঃতুই যখন আমার প্রোপোজালে রাজি হসনি তখন আমার বাধ্য হয়ে এই কাজ করতে হয়েছিল শুধু মাত্র তোকে বাচানোর জন্য।। কারণ এর আগে তুই অনেকবার ধর্ষণ হয়েছিস আর তা কে করেছে আমি তা জানি।। আর সেই রিতুকে ধর্ষণ করে,রিতুকে গলায় দড়ি দিতে বাধ্য করিয়েছে

কথাগুলো বলেই রাজ কান্না করে দেয়,নিজেকে সামলে আবার বলা শুরু করে,

রাজঃতোকে আমি একদিন কিছু কাগজপত্র দিয়ে বলেছিলাম ওগুলোতে সাইন করে দিতে
.
রাইঃওগুলো তো আপনার অফিসের কাগজ ছিলো,বলেছিলেন একটা মেয়ের নাকি কিসের সাইন লাগবে,আমি না পড়েই সাইন করেছিলাম
.
রাজঃহ্যা ওগুলো তোর আর আমার বিয়ের রেজ্রিসট্রেশনের কাগজ ছিলো,তুই সরল মনেই কিছু না পড়েই সাইন করে দিয়েছিলি।। তখন থেকেই আমরা আইনত স্বামী স্ত্রী

কথাগুলো শুনে সবাই অবাক হয়,রাজ এত কিছু করে ফেললো অথচ তারা জানতেও পারলো না,রাই কান্নায় ভেঙ্গে পরলো

রাইঃকেনো এমনভাবে আমার সরলতার সুযোগ নিলেন??
.
রাজঃমাফ করে দে,এছাড়া আমার কোনো উপায় ছিলো না,ভেবেছিলাম তুই আমার প্রোপোজালে রাজি হলে তোকে সবটা খুলে বলবো বাট তুই রাজি হসনি আর তাই আমাকে এসব কাজ করতো হলো।।
.
মিমিঃআচ্ছা রিতু আপুকে কে ধর্ষন করলো??
.
রাজঃআমরা সবাই যখন জানতে পারি রিতু প্রেগন্যান্ট তখন সবাই ওকে অনেক বাজে বাজে কথা শুনাই,সবাই ওর সাথে কথা বলা অফ করে দেই,বাট রাই রিতুর বেস্ট ফ্রেন্ডের মতো ছিলো, রাই শুধু ওর সাথে কথা বলতো।। রিতু রাইকে কিছু বলতে চেয়েছিলো বাট বলতে পারেনি।।
.
আম্মুঃরিতুর সাথে এতকিছু হলো ও আমাদের কিছু জানায়নি কেনো??
.
রাজঃচাচি আমরা কেউ তো ওর কথা শুনতে চাইনি।। যেদিন রিতুকে ঘরে গলায় দড়ি দেয়া অবস্থায় দেখি,সেদিন রিতু আমার ফোনে একটা ম্যাসেজ সেন্ট করেছিল তখন আমি অফিসে ছিলাম,রিতু আমাকে ম্যাসেজে কিছু কথা বলে ফোন অফ করে দেয়,(ভাইয়া আমাকে মাফ করে দিস,আমি আর বাচবো নারে,ভাইয়া আমি সমাজে কাউকে মুখ দেখাতে পারবো না,ভাইয়া আমার কোনো অন্যায় ছিল না,আমি বাজে মেয়ে না ভাইয়া।। ভাইয়া আমার টেবিলের ড্রয়ারে একটা ক্যামেরা আছে সেটাতে কিছু ভিডিও আছে আর একটা কাগজ আছে সেটা থেকে সবটা জেনে নিস,আর ভাইয়া তোর কাছে একটা অনুরোধ,তুই তো রাইকে ভালোবাসিস,তুই রাইকে ঐ জানোয়ারটার হাত থেকে রক্ষা করিস প্লিজ ভাইয়া,ভালো থাকিস)আমি ম্যাসেজ পড়ে সাথে সাথেই অফিস থেকে বেরিয়ে পরি বাট তাও আমি আমার বোনকে বাচাতে পারিনি,পরে ঐ ভিডিও দেখে আর কাগজটা পড়ে সবটা জানতে পারি

কথাগুলো বলে রাজ সবাইকে ম্যাসেজটা দেখায় আর রাজ হাউমাউ করে কান্না করে দেয়,সবার চোখেই পানি।।রাজ এবার ঘরে গিয়ে ক্যামেরাটা এনে ভিডিওটি চালু করে সবাইকে দেখায়,সবাই অবাক হয়ে যায়,কারো মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না,রাজ এরপর রাইয়ের সাথে ঘটা ভিডিওগুলো দেখায়,ভিডিও দেখে সবার মাথায় বাজ পরলো,কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না,রাইয়ের চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে,সে ভাবতেও পারছে না তার সাথে এতকিছু হয়ে গেছে,ও বুঝতেও পারেনি, ওর কাছের কেউ ওর সাথে এমন করবে ও কল্পনাও করেনি,রাই আর ভাবতে পারছে না,হঠাৎ রাই মাথা ঘুরে সেখানে পরে যায়

চলবে……