মুখোশের_আড়ালে পর্ব-০৭

0
2795

#মুখোশের_আড়ালে
#Writerঃতাসনিম_রাইসা(আরিয়ানা)
#Partঃ7

রাইয়ের চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে,সে ভাবতেও পারছে না তার সাথে এত কিছু হয়ে গেছে,ও বুঝতেও পারেনি ওর কাছের কেও ওর সাথে এমন করবে ও কল্পনাও করতে পারেনি,রাই আর ভাবতে পারছে না,হঠাৎ রাই মাথা ঘুরে সেখানে পরে যায়
সবাই মিলে রাইকে ধরে ওর রুমে নিয়ে যায়, রাইয়ের চোখে মুখে পানি দেয় মিমি,রাজ সেখান থেকে চলে যায়, এই মুহূর্তে রাজ কি করবে বুঝতে পারছে না, নীরব রাজকে দেখতে না পেয়ে রুম থেকে বাহিরে বেরিয়ে রাজকে খুঁজতে থাকে, নীরব বুঝতে পারছে ও রাজের সাথে অন্যায় করেছে, ওকে মারার আগে অন্তত সত্যিটা জানার দরকার ছিল,আর নিজের ভালবাসার মানুষকে বাচাতে যে কেও এসব করবে,আমি হলেও করতাম,ভালবাসার মর্ম ও একটু হলেও বুঝে,কারন ও ও তো একজনকে ভালবাসে,নীরব বুঝতে পারছে রাজ রাইকে কতটা ভালবাসে,নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে নীরবের,যত যাই হোক কেও পাশে না থাকলেও রাজ আর রাইয়ের পাশে নীরব থাকবেই,নীরব রাজকে খুঁজতে থাকে, নীরব রাজের রুমে গিয়ে দেখে ও মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে,নীরব রাজের কাঁধে হাত দিতেই রাজ নীরবকে ধরেই কান্না করে দেয়, নীরব ওর কষ্টটা একটু হলেও বুঝতে পারে,নিজের বোনের সাথে এমনটা হলে কোন ভাইয়ের মাথাই ঠিক থাকবে না। নীরব রাজকে এভাবে অনেক দিন পর কাঁদতে দেখলও, সেই রিতু মরার পর ওকে এভাবে কাঁদতে দেখেছিল আর দেখল আজকে।

রাজঃনিরব আমাকে মাফ করে দে ভাই, আমি রাইয়ের ভালর জন্য এসব করেছি, আমি ওকে ভালবাসি ওর ক্ষতি হবে আমি তা দেখতে পারব না,ভাই হয়েও রিতুর জন্য কিছু করতে পারি নি বাট ওর জন্য তো করতে পারব,আমার খারাপ কোন উদ্দেশ্য ছিল না (কান্না জড়ানো কণ্ঠে),আমি রিতুর কথা রাখতেই কাজগুলো করেছি
.
নিরবঃহুম আমি বুঝেছি,তুই আমাকে মাফ করে দে (করুন চোখে)তোকে ভুল বুঝে মেরেছি, নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে, আমাকে মাফ করে দে ভাই।
.
রাজঃহুম আমার তোর কিছু হেল্প চাই,ঐ জানোয়ারটাকে আমি শাস্তি দিতে চাই,ও আমার বোনের সাথেও এমনটা করেছে, ওকে তো এর শাস্তি পেতেই হবে
.
নিরবঃহুম যা হেল্প লাগবে আমাকে বলবি আমি করার জন্য প্রস্তুত আছি,আমিও চাই মুখোশের আড়ালের মানুষটার আসল রূপ সবাই জানুক (দাঁতে দাঁত চেপে রাগ দেখিয়ে), তবে রাইকে আর চাপ দেয়া ঠিক হবে না
.
রাজঃহুম ওর উপর দিয়ে অনেক চাপ গিয়েছে, আমিও আর চাইনা ও আর এসব চাপে পরুক

কথা শেষ করেই রাজ আর নীরব রাইয়ের রুমে প্রবেশ করল,রাইকে সবার সান্ত্বনা দেয়া ছাড়া আর কিছুই যে করার নেই,মিমি রাইকে ক্রমাগত বুঝিয়ে যাচ্ছে,বাট রাইয়ের চোখগুলো বাঁধা মানছে না পানি পরেই যাচ্ছে,তার যে আর বাচতে ইচ্ছে করছে না, ও বুঝতে পারছে রিতু আপু কেন আত্মহত্যা করেছিলো,বাট আমি রাজ ভাইয়াকে কখনও মাফ করব না,উনি চাইলে তো আমাকে সব খুলে বলতে পারত,তাহলে কেনই বা এসব করতে গেলো, সেও রাইয়ের চোখে আজ অপরাধি,রাই আর ভাবতে পারছে না তার মাথা প্রচুর ব্যাথা করছে,রাইয়ের মা বাবার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ,আশেপাশের সবাই জানতে পারলে তাদের মানসম্মান আর থাকবে না,মেয়েটাই বা সমাজে মুখ দেখাবে কি করে,রাজের কথায় সবার ভাবনার ছেদ ঘটলো,

রাজঃকাকিমনি তোমাদের সাথে আমার কথা আছে,তার আগে আমি জানতে চাই তোমরা আমাকে মাফ করেছ কিনা,বিশেষ করে রাই তুই কি আমাকে মাফ করেছিস??

রাই ঘেন্নায় রাজের দিকে তাকাতেও পারছে না,রাই তাকে মাফ করতে পারবে না,এ মানুষটাও যে ওর সাথে অন্যায় করেছে।। ওর সম্মতি না নিয়েই ওকে ধোঁকা দিয়ে বিয়ে করেছে,রাইয়ের এসব ভাবতেই কষ্টে বুকটা ধুমরে মুচড়ে যাচ্ছে,

রাইঃআমি আপনাকে কখনও মাফ করব না,আপনিও অপরাধী আপনাকে দেখলে আমার ঘেন্না লাগে(রাগি কণ্ঠে)
.
মিমিঃকিন্তু রাই……
.
রাইঃপ্লিজ মিমি অন্তত তুই আমাকে এসব করতে বলিস না,আমি পারব না এই মানুষটাকে মাফ করতে

রাজ আর কিছু বলল না, ও জানে এই মুহূর্তে রাইকে হাজার বার বুঝালেও ও বুঝবে না, আগে ও অপরাধীকে শাস্তি দিক পরে সবটা ভাবা যাবে আর এসব নিয়ে না ভেবে কি করে ওকে হাতেনাতে ধরে পুলিশের কাছে দেবে সেই নিয়েই ভাবছে সবাইকে নিচে নামতে বলে রাজ রাইয়ের রুম থেকে বেরিয়ে এলো,রাজের খুব কষ্ট হচ্ছে রাইয়ের জন্য শুধু একটাই প্রে করে যেন রাই ওর থেকে দূরে না যায়,তাহলে যে ও পাগল হয়ে যাবে,বড্ড ভালবাসে পাগলিটাকে,হারাতে চায় না,এগুলো নিয়েই রাজ ভাবছিল,হঠাৎ কারও কণ্ঠে চমকে উঠে রাজ,পেছনে তাকিয়ে দেখে রাই,কিছুটা গাবরে যায় রাজ

রাজঃরাই তোর শরীর তো ভাল না,তুই নিচে কেন নেমেছিস,যা উপরে গিয়ে রেস্ট নে
.
রাইঃআমার এত কেয়ার আপনাকে নিতে হবে না(বিরক্তি ভাব নিয়ে),আপনি সবাইকে কি বলবেন তা শোনার জন্যই এলাম,বলুন কি বলবেন(জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে)

রাজ আর কিছু বলল না,চুপচাপ রাইয়ের কথাগুলো শুনল,কারন এই মুহূর্তে যে ও রাইয়ের কাছে অপরাধি,আস্তে আস্তে সবাই নিচে নামলো।। রাজ সবাইকে ওর প্ল্যান বলা শুরু করলো

রাজঃমিমি আমার তোমার হেল্প চাই,আজকে রাইয়ের জায়গায় ওর রুমে তুমি একা থাকবে,চিন্তা কর না আমরা তোমার সাথেই থাকব বাট লুকিয়ে
.
মিমিঃওকে!!
.
রাজঃআমার সবার কাছে আমার অনুরোধ কেও আজ রহিম চাচার দেয়া দুধ খাবে না ওটাতে ঘুমের ওষুধ মেশানো থাকে আর রহিম চাচাও মেবি এর সাথে জড়িত আছে,তবে আমি সিউর নই

সবাইতো রীতিমত অবাক,রহিম চাচা এরকম করবে,তার নিজেরও তো একটা মেয়ে আছে,রাইতো তার মেয়ের বয়সি সে কেনই বা এসব করবে,আর ১০ বছর ধরে উনার থেকে গাইয়ের দুধ নেয়,অনেক বিশ্বস্ত লোক,কখনও তো বাজে মতলব দেখি নি,উনি তো রাইকে অনেক আদর করে তাহলে কেনই বা এমনটা করবে,তবে সবার মনে একটাই কথা আসল অপরাধী কে তা তারা জানে,তাও একে হাতেনাতে ধরতে চায় তারা,তার ভাল মানুষের রূপটা সবাই যেন জানতে পারে তাই চায়

মিমিঃতাইতো বলি সেদিন আমি সবাইকে এত ডাকলাম কেও সারা কেন দিল না আর রাইও
বলত ও ঘুমের জন্য চোখ খুলতে পারত না
.
রাজঃআমি আগেই টের পেয়েছিলাম তাই তোমাদের সবাইকে আগেই থেকেই সাবধান করছি,আর রাই তোর রুমে ফুলের টপের সাইডে একটা ক্যামেরা আছে ওটা সরাবি না,ওটা আমি রেখেছি আজ ওটা কাজে লাগবে

রাজের কথা শুনে সবাই অবাক হলেও রাই অবাক হয় নি,এতকিছু যখন করতে পেরেছে এটাও যে করেছে তাতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই বলে রাই মনে করে,বাট ওর রহিম চাচার উপর প্রচুর রাগ আর ঘেন্না আসছে,যে লোকটাকে সব সময় বাবার মত জেনেছে সে কিনা ছিঃ

রাজঃরাই তুই আজ কাকা আর কাকিমনির সাথে থাকবি,সময় মত তোদের ডাকা হবে,নিরব আর আমি মিমির সাথে রুমে থাকব তবে লুকিয়ে আর কিভাবে কি হয়েছে সবটা জানবি ওকে ধরার পর

সবাই রাজের কথায় সম্মতি জানাল,রাই এখন নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করছে তাকে যে শক্ত থাকতেই হবে,রিতু আপুর আর আমার যে এত বড় সর্বনাশ করেছে তাকে তো শাস্তি পেতেই হবে……

চলবে___