মুখোশের_আড়ালে পর্ব-১৩

0
3306

#মুখোশের_আড়ালে
#Writerঃতাসনিম_রাইসা(আরিয়ানা)
#Partঃ13

ওষুধ গুলো দেখে রাইয়ের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে…ও ভাবতে থাকে মানুষ এতটা নিচ কি করে হতে পারে??ও আরিয়ানকে সবটা দেখায়।।আরিয়ান কিছুতেই বুঝতে পারছে না রাজ এসব কেনো করলো??ও যদি রাইকে ভালোইবাসতো তাহলে এতো কিছু কেনো করলো…আরিয়ান শুধু সুযোগের অপেক্ষায় আছে…রাজের ভালো মানুষের মুখোশটা ওর খুলতেই হবে…সাথে পুলিশ অফিসারেরও

মিমির মা বাবা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক তারা মিমিকে হারিয়েও দুটো মেয়ে পেয়েছে…রাই আর রিমি দুজনই তাদের ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখে…তারা এখন আসল অপরাধীর শাস্তির অপেক্ষা করছেন।।
রাই এখন অনেকটাই স্বাভাবিক,ও ওর দিকে এখন ঠিক মতই খেয়াল রাখে।।ও ওর পেটের বাচ্চাটাকে আর কষ্ট দিতে চায় না…ওর তো কোনো দোষ ছিল না তাহলে ও কেনো কষ্ট পাবে তাই ও বাচ্চার জন্য হলেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে…

আজ নীরবকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করা হয়েছে…ডক্টর নীরবের দিকে আরও খেয়াল রাখতে বলেছে আর কোনপ্রকার চাপ যেন ওর মাথায় না পরে তা বার বার সতর্ক করে দিয়েছে…নীরব বাসায় আসতেই কান্নায় ভেঙ্গে পরে…মিমির এরকম অবস্থার জন্য বার বার নিজেকেই দোষী ভাবছিলো…ওকে শান্ত করতে গিয়ে সবাই কান্না করে দেয়।।রাই জানতো এরকম কিছুই হবে ভালবাসার মানুষকে হারানোর কষ্ট সেই বুঝে যে হারিয়ে ফেলে…রাই রিমিকে নীরবের কাছে রেখেই নিজের রুমে যায়…এবার আর ও চুপ করে বসে থাকবে না রাজকে ওর পাপের শাস্তি দেবেই…রাই ফ্রেশ হয়ে আরিয়ানের কাছে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়…রাইকে দেখে আরিয়ান শোয়া থেকে উঠে বসে।।

আরিয়ানঃতোমার অপেক্ষায় ছিলাম…রাজকে এবার ওর পাপের শাস্তি দিতে হবে
.
রাইঃহুম বাট এটাও তো জানতে হবে কেনো উনি এসব করলো??
.
আরিয়ানঃহুম তা কালই জানতে পারবো…

রাই আরিয়ানের সাথে কথা বলে নীরবের রুমে ঢুকে দেখলো নীরব রিমির কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরেছে…রিমি নীরবের মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর ওর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে…রাই কাশি দিতেই রিমি কিছুটা ভয় পেয়ে যায়…

রাইঃআরে ভয় পেও না আমি এসেছি কোনো ভুত আসে নি…তা এরকমভাবে কি দেখছিলে??
.
রিমিঃকই কিছু না তো…(লজ্জায় মাথা নিচু করে)
.
রাইঃহয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না…আমি জানি তুমি আমার ভাইটাকে ভালোবাসো
.
রিমিঃনিশ্চুপ……..
.
রাইঃআচ্ছা এতো ভালোবাসলে কেনো??
.
রিমিঃএকটা মানুষ এতটা ভালো হতে পারে তা তোমার ভাইকে না দেখলে বুঝতাম না…আর উনি মিমিকে পাগলের মতো ভালোবাসে…মিমি চলে যাওয়ার পরেও এই জিনিসটা আমায় ওনাকে ভালবাসতে বাধ্য করেছে…তোমরা চাইলেই আমি ওর পাশে সারাজীবন থাকবো
.
রাইঃতা আবার বলতে হয়…আমার ভাইটাও যে তোমায় পেয়ে অনেকটা ভালো আছে তা ওকে দেখেই বোঝা যায়…তুমি আমাদের জন্য যা করেছো তার ঋণ আমরা কখনই শোধ করতে পারবো না…
.
রিমিঃতুমি আমায় পর করে দিলে…আমি আরও তোমাদের আমার আপনভেবে সবটা করলাম আর তুমি কি না……(কান্নাজড়ানো কণ্ঠে)
.
রাইঃসরি সরি ভুল হয়ে গেছে…তোমার মধ্যে না আমি মিমিকে খুঁজে পাই…ও তোমার মতই সবটা সময় আমাদের হাসিখুশিতে মাতিয়ে রাখতো আর অনেক কেয়ার করতো…

রিমিঃমনে করো না আমি মিমি…ওর মতই আমায় ভালোবাসো
.
রাইঃওকে আমার কলিজার ভাবি

রাই ওর মা বাবার রুমে গিয়ে দেখলো ওনারা ঘুমিয়ে পরেছে…রিমি বাসায় যেতে চাইলেও রাই আর আরিয়ান ওকে যেতে দেয় নি…রাজ নিজের রুমে আছে…ঘর থেকে তেমন বের হয় না।।আরিয়ান আর রাইয়ের মিল দেখে ওর খুব রাগ হয়,ও আরিয়ানকে সহ্য করতে পারে না…সবাই খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে পরে…রিমি রাইয়ের সাথেই ঘুমায়।।মাঝরাতে রাই ওর ঘাড়ে কারো ঠোঁটের ছোঁয়া পায়…ওর ঘুম ভেঙ্গে যায়,চোখজোড়া খুলতে চাইলেও কিছু একটার কারণে পারছে না।।ওর মনে হচ্ছে কেউ খুব শক্ত করে চোখজোড়া বেঁধে রেখেছে…ঘুম ছুটতেই ওর চোখজোড়া প্রচুর ব্যথা করছে আর জ্বালা করছে,হাত নারাতে গিয়েও পারলো না,তার হাতটাও খুব শক্তভাবে বাধা হয়েছে,যার জন্য সে নারাতে পারছে না…হাত পা কিছুই যে এখন আর তার কন্ট্রোলে নেই,চাইলেও এখন সে আর তার হাতপা কাজে লাগাতে পারবে না।।খুব ভয় করছে ওর,কে করছে এসব??ওর পাশে তো রিমি ছিল,রিমির কথা মাথায় আসতেই রাইয়ের বুকটা ভয়ে কেঁপে উঠে…মিমির মতো রিমির সাথেও যদি এরকমটা হয়…নাহ ওর আর ভাবতে পারছে না…শরীরের উপর ভর দেয়া লোকটার সাথে যুদ্ধ চালানো শুরু করে রাই…নিজেকে ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সে পারছে না।।

নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও যখন লোকটার থেকে ছাড়াতে পারে নি হাল ছেড়ে দিয়ে গাঁ ছেড়ে দেয় রাই…পাশ থেকে কারো ঘোঙ্গানির শব্দ খুব প্রকটভাবে রাইয়ের কানে এসে বিঁধছে…ভয়ে তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না,এক মনে শুধু সৃষ্টিকর্তাকে ডেকে যাচ্ছে…কিছুক্ষণ পর রাই বুঝতে পারলো তার উপর থেকে মানুষটা সরে গেছে,এতক্ষণ দম বন্ধ হয়ে আসছিলো তার,রাইয়ের মাথায় একটাই কথা এখন ঘুরপাক খাচ্ছে নিজেকে বাচাতে না পারলেও রিমিকে যে তার বাচাতেই হবে…আস্তে আস্তে রাই ওর মুখ খুললো,কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে উঠলো সে..

রাইঃরি..রি..রিমি

পাশ থেকে শুধু ঘোঙ্গানির শব্দ পেলো…এবার আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না রাই,যেই করছে এসব তাকে ও ছাড়বে না…জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো সে…

রাইঃকে আপনি??চাচ্ছেন কি আমাদের থেকে??কেনো এভাবে আঁটকে রেখেছেন আমাদের…প্লিজ ছেড়ে দিন,আপনার যদি আমার সাথে শত্রুতা থাকে তো আমায় শাস্তি দিন রিমিকে ছেড়ে দিন প্লিজ…(কান্না করতে করতে)

পাশ থেকে কারো অট্ট হাসির শব্দে ভয় পেয়ে যায় রাই…ছেলেটা রাইয়ের কাছে এসে ওর মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে বললো।

ছেলেটিঃএতো তাড়া কেনো বেবি??খেলতো আবি বাকি হে মেরি জান……
.
রাইঃকে আপনি??আপনার কণ্ঠটা আমার চেনা চেনা লাগছে…(ভয়ে ভয়ে)
.
ছেলেটিঃতা সময় হলেই জানতে পারবে কে আমি??

রাইকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিয়ে চলে যায় ছেলেটি।।ছেলেটি চলে যাওয়ার পর রাই রিমিকে বার বার ডাকতে থাকে বাট কোনো সাড়া না পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরে,আজ মিমির কথা ওর বড্ড মনে পরছে,ওকে বাচাতেই প্রাণ দিতে হয়েছে মিমিকে এবার রিমি নাহ ও এটা হতে দেবে না,কোনোভাবেই না…

সকাল ১০ টায় ঘুম ভাঙলো আরিয়ানের,শোয়া থেকে উঠতেই মুহূর্তেই মাথা ধরে আসলো তার,প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে তার মাথায়…গাঁ যেন কেমন গুলচ্ছে তার,শোয়া থেকে কোনোরকম উঠেই ওয়াশরুমের দিকে দৌড়ে গেলো…ওয়াশরুমে ঢুকতেই গড়গড় করে বমি করে দিলো সে…ফ্রেশ হয়ে বের হতেই মাথাটা আবার ধরেছে,বিছানায় এসে গাঁ এলিয়ে দিলো সে…মাথার সাথে চোখজোড়াও প্রচণ্ড ব্যথা করছে..হঠাৎ তার এতো মাথা ব্যথার কারণ সে খুঁজে পাচ্ছে না..ফোনটা নেয়ার জন্য বালিশের দিকে হাত বাড়ালো আরিয়ান,ফোনটা হাতে নিয়েই কিছুটা অবাক হলো সে,রুমে থাকা ঘড়ির দিকে খেয়াল করতেই দেখলো ঘড়ির কাঁটায় ১০ বেজে ৫০ মিনিট…সে ভেবেছিলো তার ফোনটা হয়তো ভুল টাইম নোট করেছে,কিন্তু না তার ফোন আর দেয়াল ঘড়ি ঠিক টাইম বলছে…এতো বেলা করে ঘুমালো কি করে ও??ছুটির দিনেতেও তো এতো বেলা করে ঘুমানো হয় না তার তবে আজ কি করে??হঠাৎ শোয়া থেকে ঝটপট উঠেই চারদিকে চোখ বুলালো আরিয়ান,এটা তার রুম নয়…চারপাশে ভালোভাবে চোখ বুলাতেই বুঝতে পারলো এটা রাইয়ের রুম,আরিয়ানের মাথায় মুহূর্তের মধ্যেই হাজার চিন্তা আর প্রশ্ন এসে ভর করলো…সে তো তার রুমে ছিল এখানে আসলো কি করে??রাই-ই বা কোথায়??রিমিকেও দেখছে না সে??বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে এসব??রাতে ঠিক কি হয়েছিল মনে করতে চাইলেও মনে করতে পারলো না আরিয়ান,তার মাথা ব্যথাটা আরও বেড়েই চলেছে…

রুম থেকে বের হয়ে রাই আর রিমিকে খুঁজতে লাগলো আরিয়ান কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না সে,এতো বেলা হয়ে গেলো অথচ এখনো কেউ ঘুম থেকে উঠে নি,ব্যপারটা আরিয়ানকে খুব ভাবাচ্ছে…নীরবের রুমে ঢুকে নীরবকে ঘুমুতে দেখে সেখান থেকে চলে আসলো আরিয়ান…মাথা ব্যথাটা কিছুতেই কমছে না তার বরং আরও বাড়ছে।।নিজের রুমে গিয়ে মাথা ব্যথার ওষুধ খেয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে রাইয়ের নাম্বার ডায়াল করলো,রিং হচ্ছে বাট তুলছে না…কয়েকবার দেয়ার পরেও যখন কোনো রেসপন্স দিলো না,তখন আরিয়ান রিমির নাম্বারে কল দেয়,রিমির নাম্বারেও সেইম এক কাজই হলো…বেশ চিন্তায় পরে যায় আরিয়ান,এক মনে ভাবতে থাকে গেলো কোথায় ওরা??দরজা খোলার শব্দে ঘোর কাটলো তার,পেছনে তাকাতেই নীরবকে দেখতে পেলো…দৌড়ে ওর কাছে গিয়েই বলে উঠলো সে…

আরিয়ানঃঐ তোকে এই শরীর নিয়ে এখানে আসতে বলেছে কে??ডাক দিলেই তো পারতি…
.
নীরবঃরাইকে অনেক বার ডেকেছি কিন্তু কোনো সাড়া পাই নি তাই উঠে আসলাম,উঠে দেখি সবাই ঘুমুচ্ছে তাই তোর রুমে আসলাম…
.
আরিয়ানঃহুম আস্তে আস্তে এখানে এসে বস
.
নীরবঃআরিয়ান তোকে একটা কথা বলতাম(বসতে বসতে)
.
আরিয়ানঃহুম বল…
.
নীরবঃআমার জানি কেনো মনে হচ্ছে গতকাল রাতে কিছু একটা হয়েছে।।
.
আরিয়ানঃকিছু হয়েছে মানে??(অবাক হয়ে)
.
নীরবঃগতকাল রাতে প্রায় ২ টো কি ৩ টে হবে আমি বাহিরের দরজা খুলার শব্দ পেয়েছিলাম।।এতো রাতে কেউ তো বাহিরে যায় না,পায়ের শব্দ পেয়েছিলাম…
.
আরিয়ানঃহুম বুঝলাম তুই চিন্তা করিস না আমি সব দেখছি ওকে।।
.
নীরবঃহুম শোন তোকে আরেকটা কথা জানানোর ছিল…
.
আরিয়ানঃহুম জলদি বল…আমায় আবার তৈরি হয়ে থানায় যেতে হবে,এমনিতেই অনেক লেট হয়ে গেছে…
.
নীরবঃতাহলে তুই বাসায় আসলেই বলবো
.
আরিয়ানঃনাহ এখনি বল,সমস্যা নেই
.
নীরবঃওকে শোন….
.
আরিয়ানঃহুম বল

আরিয়ান নীরবের কথাগুলো এক মনে শুনে নীরবকে ওর রুমে দিয়ে রাইয়ের আম্মুকে ডেকে নিজের রুমে আসে তৈরি হওয়ার জন্য,ফোনটা হাতে নিয়ে রাইয়ের নাম্বারে ডায়াল করলো,এবার রিং হলো বাট রিসিভ করলো না,কিছুক্ষণ পর রাইয়ের নাম্বার থেকে আরিয়ানের ফোনে একটা মেসেজ আসে……

চলবে………