মুগ্ধতার ভিরে পর্ব-০১

0
5183

মুগ্ধতার ভিরে🥀
#সূচনা পর্ব
#লেখিকাঃফাতেমা_জোহরা_নাভিলা

ভার্সিটি ক্যাম্পাসে একঝাক লোকের ভিরের মাঝে ভয়ে মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে নাভিলা।প্রথম দিনেই তাকে চড় দিয়ে সাগতম জানালো ভার্সিটির সিনিয়র আর ভার্সিটি অধেক মেয়েদের ক্রাশ জায়ান।ছলছল চোখে একবার জায়ানের দিকে আর একবার আশেপাশে সবার দিকে তাকালাম। সাথে সাথেই মাথা আবার ও নিচু করে ফেললাম। এতগুলো লোকের মাঝে একজন সুঠাম দেহের ছেলের হাতে চড় খাওয়াতো আর কম বড় কথা না। গালে তিব্বো পরিমান ব্যাথা অনুভব করছে সাথে জ্বলে ও যাচ্ছে। চড় খেলাম তো খেলাম এটাও ক্যাম্পাসে লোক ভর্তি সবার সামনে। দুঃখে মরে যেতে ইচ্ছে করছে।

জায়ান চোখ মুখ লাল করে তার হাত মুঠো শক্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে সে হুংকার ছেড়ে বলেল,

–“হাউ ডেয়ার ইউ! তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে থাপ্পড় দেওয়া। এই জায়ানকে থাপ্পড় দেওয়া তোমার দূর সাহস কি করে হলো!তুমি জানো আমি তোমার সাথে এর জন্য এই মুহূর্তে ঠিক কি করতে পারি?(জায়ান)

_দোস্ত শান্ত হও প্লিজ। মেয়েটা ভুলে করে ফেলেছে মাফ করে দে।( শিহাব)

“এর মধ্যে জায়ানের মুঠো ফোন বেজে উঠল ফোনের দিকে তাকিয়ে,,,

_emergency তে আছি বলে আপাতত কিছু বলছিনা নেক্সট টাইম যদি ভুলেও বাই এনি চান্স আমার চোখের সামনে এসেছ তাহলে তোমার গালের জায়গায় আর গাল থাকবে না তক্তা বানিয়ে দিবো ইউ ইডিয়েট।”(জায়ান)

বলেই হনহন করে রাগে গজগজ করতে ভার্সিটি থেকে চলে যায় জায়ান সাথে তার বন্ধুরা। হুট করে এতো বড় অপমানের জন্য আমি মোটেও তৈরি ছিলাম না। চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের নোনাজল গুলো ফেলছি। বলার মত বাকী আর রেখেছেন কি উনি?এভাবে কেউ কখনো আমায় অপমান করেনি আর হাত তোলাত বাদই দিলাম। হয়তো উনার মতো অত বড় কোনো উচ্চো ফ্যামিলি থেকে বিলং করি নাহ্। মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ঘরের ছোট মেয়ে হতে পারি কিন্তু নিজের মা বাবা অতি খুব আদরের সন্তান । তারা কখনো ভুলেও আমার ঘায়ে ফুলের টুক্কাও দেইনি আজ পর্যন্ত আর থাপ্পড় তো দূরে থাক। জানি ভুলটা প্রথমে আমারই ছিলো কিছু না বুঝে যাচাই না করে চড় দেওয়া ঠিক হয়নি কিন্তু আমিত সরি বলেছি তার জন্য।হঠাৎ রিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় আমার সামনে এসে বলল,

–দোস্ত ঠিক আছিস।

–আমি ছলছল চোখে রিয়ার দিকে তাকালাম মাথা ডানে বামে দুইদিকে মাথা দুলালাম।যার অর্থ নেই। আমি বাড়ি যাব রিয়া।
—-আর ক্লাস করবি না!
—ক্লাস করার মত আমার মুখ রাখসে সেই লোক এখন ক্লাসে গেলেই সবার হাসি তামাশা রোলের পাত্র হবো।আজ আর ক্লাস করার শক্তি বা মুড অবশিষ্ট বাকী আমার মধ্যে নেই।তুই একটা রিক্সা ডাক।

–হ্যাঁ দেখছি দোস্ত তুই দাঁড়ায়।

রিয়া গিয়ে ভাগ্যক্রমে মিনিট দুইয়ের মধ্যে রিকশা নিয়ে ও আসলো। রিকশায় উঠলাম আমি আর রিয়া। বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। রিক্সা নিজ গতিতে চলছে আর আমি ফুঁপিয়ে কান্না করছি।

–দোস্ত তোর খুব খারাপ লাগছে তাই না ?গাল পুরো লাল হয়ে গিয়েছে ব্যাথা করছে খুব?

— বিশ্বাস কর দোস্ত কেউ চড় দিলে হয়তো এত ব্যাথা করতো না কিন্তু দিয়েছে তো পাথড় ঘাটের শক্ত পাথড় দিয়ে বারি তাই করছে।

–দোস্ত সরি ভুলটা হয়তো আমারই ছিলো।

-তুই সরি কেন বলছিস গাধা!
নাক টেনে টেনে,,

–আমার জন্য তুই তখন ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে রাজি হয়েছিলিস। আমি যদি তখন এমন কিছু না বলতাম তোকে তাহলে,,

—ধুর বাদ দে তো কপালে যা হওয়ার কথা ছিলো তাই হয়েছে এখানে তোর বা আমার কাউর হাত ছিলো না।এখন ভুলে ও এই ব্যাপারে ভাইয়া বা বাসার কাউকে কিছু বলিস না।
—আচ্ছা।

এভার তাদের পরিচয় পত্র দেওয়া যাক,

এনি হলেন ফাতেমা জোহরা নাভিলা এবার অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী। পরিবারের সাথে নারায়ণগঞ্জ থাকে ।বাবা একজন বেসরকারি স্কুলে টিচার,ভাইয়া একজন ব্যাংকার। ফাতেমা দেখতে উজ্জ্বল ফর্সা, চঞ্চল স্বভাব,গুলুমুলু কিন্ত বেশ মায়াবতী।দেখতে যতোটা সুন্দর অতোটাই দুষ্ট।

দেশের নাম করা ব্যবসায়ী এক মাত্র ছেলে নিহান্ত রহমান জায়ান। উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি , উজ্জ্বল ফর্সা,খোঁচা খোঁচা দাড়ি।ফিট জিম করা বডি।নিভ্রনীল চোখ জোড়া,দেখতে কিছুটা ইরানি নাগরিকদের মত।দেখতে যতোটা সুন্দর রাগ উঠলে অতোটাই ভয়াবহ। রাগ যেমন তার নাকের ডকায় কথায় কথায় এসে থাকে।

~ফ্ল্যাশব্যাক ~

আজ ভার্সিটিতে প্রথম দিন ছিলো আমার। সাপ্তাহখানিক আগেই ভার্সিটির ক্লাস শুরু হয়েছে।কিন্তু অসুস্থ থাকায় আমি এতদিন আসতে পারিনি।ভার্সিটিতে এসেই ডানে বামে না তাকিয়ে রিয়ার সাথে নিজের ডিপার্টমেন্ট এসে ক্লাসে চুপচাপ বসে পরি।নতুন কোনো পরিবেশে নিজেকে সহজে খাপ খাওয়াতে পারিনা এটা আমার একটা স্বভাব। তখন চুপচাপ আশেপাশে মানুষ আর পরিবেশর সংকেত গুলো শুধু বুঝার চেষ্টা করি।

–দোস্ত!(রিয়া)
—-হুম।(আমি)
—-আমাদের ভার্সিটি টা অনেক সুন্দর তাই না?
—-না
–মানে!
–তুই তো বললি সুন্দর না তাহলে আমি কি আর বলবো।
–দূর,, আচ্ছা শুননা??নাবু বেবী,,
— কিহ বলতে চাস তা ঝেড়ে কাশ মাখন কম উইস কর।

–চল না একটু ভার্সিটি টা ঘুরে দেখি।তেমন করে তো আর দেখা হল না।

—এই না স্যার এখন চলে এসে পরবে আর আমি এমনে ও এক সাপ্তাহ ক্লাস মিস করে ফেলছি। তাই প্রথম ক্লাসটা আপাতত কিছুতেই মিস করতে চাইছিনা।

—আরে কিছু হবে না চল।

—তুই যা আমি যাব না।

— বারে,, এই ছিলো তোর মনে! তোর সাথে গুরে দেখবো বলে আমি এখনো ভালো করে গুরে কিছু দেখিনি আর সেই তুই বলছিস তুই যাহ্। যাহ্ তোর সাথে আর কথাই বলমুনা।

—-অরে আমার ড্রামাবাজরে ঠিক আছে চল আর গাল ফুলানোর নাটক করতে হবে না।

“রিয়া আর আমি পুরো ক্যাম্পাস গুরে গুরে দেখছি। এক একটা ডিপার্টমেন্ট ভবন আলাদা। এক ভবন থেকে আর এক ভবনে যেতে পাক্কা পাচঁ থেকে সাত মিনিট সময় লাগে। পুরো ভার্সিটিতে কৃষ্ণচূড়ার গাছের সমহার।গেট থেকে সরু রাস্তাটা সাগতম জানানোর জন্য কৃষ্ণচূড়া ফুলের পাপড়িতে বরে আছে মনে হচ্ছে। ভাইয়া আসলে ঠিকই বলছে ভার্সিটি আসলেই অনেক সুন্দর। হঠাৎ বেখালিভাবে হাটায় পিছু থেকে উড়না টান অনুভব হল, মনে হল কে জেনো পিছু থেকে টান দিয়ে উঠলো।কে আবার টান দিবে আমি বিরক্ত নিয়ে উড়না টান দিয়ে ঠিক করে সামলিয়ে হাটতে নিলে আবার ও পিছু থেকে কে জেনো টান দিয়ে উঠলো তার টানার ফলে আমার উড়না ঘায়ে থেকে অনেকটাই পিছে চলে গেছে ঘায়ে অল্প একটু অংশ অবশিষ্ট ছিলো। একে তো স্ফিটিপিন আটকাটে ভুলে গেছি দ্বিতীয় তো সিল্কি কাপড়ের উড়না ছিলো যা এক টানেই চলে গেছে। আমি কপাট রাগ নিয়ে যেই না পিছে গুরে তাকাবো অমনেই মেজাজ গেলো তিব্বো মান চটে আমার।আমার পিছু একটা সুর্দশন ছেলে দাঁড়ানো ফোনে কার সাথে জেনো কথা বলছে হাবভাব এমন সেই কিছু করেনি।দেখতে সুন্দর হলে কি হবে অতোটাই অসভ্য বদ্দ লোক। আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে হা করে তাকিয়ে আছে আবার জেনো কিছুই করেনি।আমি কপাট রাগ নিয়ে কিছু না বলে তার গালে সোজোরে এক চড় মেরে দেই।

হুটহাট চড় মারায় রিয়া ভয়ে আর্তকে উঠে,,

–নাবু!!কি করলি কি তুই?(ভয়ার্ত গলায় আমার হাত চেপে ধরে বলল রিয়া)
—কি করলাম মানে দেখতে পাচ্ছিস না তুই। উনি কত বড় অসভ্য লোক দেখছিস। মেয়ে দেখলেই এরা ছ্যেছড়ামি,,,,,
–আরে আরে চুপ কর বইন সামনে তাকা তার পর কথা বল ডাফার।
—আমি বিরক্ত নিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি আমার সামনে ছোট দশ থেকে বারো বছরের ছোট এক মেয়ে ভয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এক হাতে তার গোলাপ ফুলের ছোট ঝুড়ি আর এক হাতে আমার উড়নার এক অংশ। এভার বুঝতে কোথাও আর সমস্যা হলো না রাগের মাথায় আমি যে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। জিভ দিয়ে ঠোটঁ কিছুটা ভিজিয়ে আমতা আমতা করতে করতে “ইয়ে মানে বলছিলাম ভাইয়া”

ছোট বাচ্চাটা ভয়ে আমার দিকে আর জায়ানের দিকে তাকিয়ে উড়না ছেড়ে দিয়ে এক দৌড়।আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে “সরি আসলে আমি বুঝতে পারিনি,,আর কিছু বলার আগেই সবার সামনে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল আমার গালে জায়ান।

~বর্তমানে ~

রিক্সা থেকে নেমে বাসার চলে আসলাম ।বাসায় এসে আম্মুকে রান্নাঘরে দেখতে পেলাম ।বিনা কোনো টু শব্দ না করে চুপচাপ নিজের রুমে চলে আসলাম।রুমে এসে দীর্ঘ শ্বাস ত্যাগ করে কাধের ব্যাগটা রাগে বেডের উপর ছুড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে লম্বা এক শাওয়ার নিলাম। বিছনায় এসে শরীর একদম এলিয়ে দিলাম।সাথে সাথেই গালের সাথে পাল্লামেপে মাথা প্রচণ্ড ব্যাথা ভর করলো। মনে হচ্ছে কেউ আমাকে গালে চড় মারেনি দশ ইঞ্চি ইট ছুড়ে মেরেছে।বিছনা ঘা এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে চলে গেলাম।

________________________
হাতের কাছে যাই পাচ্ছে তা ছুড়ে ভাংচুর করছে জায়ান।রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে।আজ পর্যন্ত কেউ তার চোখের দিকে তাকিয়ে ও ভালো করে কথা বলেনি। আর সেই জায়গায় দুই দিনের আসা কে না কে তাকে ভার্সিটি সবার সামনে চড় দিলো।

– যাই বলিস দোস্ত মেয়েটাকে পুরো ভরা ক্যাম্পাসে মাঝে তোর মারা একদমই ঠিক হয়নি। (শিহাব )

– আমি কি মেয়েটাকে নাচতে নাচতে বিনা কারনে চড় দিয়েছি?মেয়েটা কি আমাকে মারেনি? তখন তোর কাছে তা ঠিক বেঠিক বলে মনে হয়েছিলো? (জায়ান)

-তোর চড়ের সম্পর্কে আমার ধারনা আছে তাই বলছি। বাচ্চা একটা মেয়ে ভুল করে তোকে চড় দিয়ে ফেলছে তার জন্য তো সরি ও বলছে।

জায়ান রাগ নিয়ে বলল –লাইক সিরিয়াসলি শিহাব এই তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড !আমার ফ্রেন্ড হয়েই আমার হয়ে কথা না বলে তার হয়ে কথা বলছিস?এটাও কার জন্য?অই অপরিচিত মেয়ের জন্য!

– দেখ তুই আমাকে ভুল বুঝছিস। (শিহাব)

– তোর যা মনে হয় হোক আই ডোন্ট কেয়ার! অই মেয়ের সাহস কি করে হয়ে নিহান্ত রহমান জায়ানের ঘায়ে হাত তোলার এর ভয়াবহ শাস্তি তো তাকে পেতেই হবে।

-ভাইয়া! কি হচ্ছে কি এইসব? তুই এখনো কি ছোট বাচ্চা,,, নিচে যে দাদি অসুস্থ তা তুই ভুলে গেলি।আর রেডি হসনি কেনো! আমাদের যে একটু পর বের হতে হবে সেখেয়াল আছে তোর।
পিছু থেকে জায়ানের বড় বোন অহনা এসে রেগে বলে উঠল,,
-তুই যাহ্ আপি আমি আসছি।
-আর জেনো কোনো ভাংচুরের টু শব্দ না হয়।

-আচ্ছা

অহনা যেতেই জায়ান শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,

— এট এনি হাউ তুই মেয়েটার ফুল ইনফোরমেশন বের কর শিহাব।

” বি রেডি অ্যান্ড প্রিপেয়ার ইওর মাইন্ড ফর টুমরোও মাই পানিশমেন্ট মিস,,,হোয়াট এভার” (জায়ান)

___________________
মার ডাকে বিকালবেলা ঘুম ভাঙল নাভিলার। ঘুম থেকে উঠেই বড়সড় এক টাস্কি খেলো। থমথম খেয়ে ভয়ার্ত গলায় মার দিকে তাকিয়ে বলল “এইসব কি আম্মু”

চলবে,,,