মুগ্ধতার ভিরে পর্ব-২+৩

0
5651

#মুগ্ধতার_ভিরে🥀
#লেখিকাঃফাতেমা_জোহরা_নাভিলা
#পর্ব-২+৩

_কি আবার ভিজে টাওয়াল দেখছিস না।১০৩ ডিগ্রি জ্বর আবার বাধালি কি করে! এক সাপ্তাহ ও হয়নি যে সুস্থ হয়েছিস আবার ও সেই জ্বর এসে হাজির।(চিন্তিতো শুরে বললেন)

_বিশ্বাস কর আম্মু আমি একটু বাধাতে চাইনি সে নিজেই এসে হাজির হয়েছে তোমার বাড়ি । কত বড় বেয়াদব লোক বিনা নোটিশে খালি আমার সাথে দেখা করতে এসে পরে দেখসো আম্মু?
ঠোটঁ উল্টিয়ে ইনোসেন্ট ফেশ করে বলল,,

মিসেস উম্মে ছোট একটা নিশ্বাস ছেড়ে মেয়ে দিকে তাকিয়ে বললেন,,

_ এখন চুপচাপ ঔষধটা খেয়ে নেয় আমি জলপট্টি করে দিয়েছি আসা করছি তাতে কিছুটা হলে ও জ্বর কমে আসবে।
হাতে নাপা এক্সটা দিয়ে,,

_অফফ এই বেটা জ্বরের জন্য এখন বিনা কারনে অকারনে আমাকে সকাল বিকাল আবার ও নাপা এক্সটা খেতে হচ্ছে বিরক্তিকর ।

_যখন ঠিকঠাক করে খাওয়া দাওয়া করবি আর সারাদিনে ফোন কম গুতাবি তখন দেখবি দুইদিন পর পর জ্বর তোর কাছে আসতে ও চাইবো না । আর না তখন সকাল বিকাল নাপা খেতে হবে।

_এই তোমরা সব মারা এমন কেন?বলতো!

_কেমন আবার!

_এই যে কথায় কথায় খালি খাওয়া দাওয়ার কথা বল আর কিছু হলেই আমার বাচ্চা মাসুম নিশ্বপাপ ফোনকে বকা দাও।

-কারন,,,

— আম্মু দিন দিন আমাদের বাসায় এমন বারো মাসের ফার্মের রুগি কোথা থেকে আসছে!
কপাল কিছুটা খাদ করে রুমে এসে বলল নাফিজ,

ভাইয়ের এমন অদ্ভুত উটকো কথা শুনে বিরক্তি নিয়ে বিপরীতে নাভিলা বলল ,,
_মানে!

_জ্বর আসল কি করে। নিশ্চয় তুই বাহিরে উল্টা পাল্টা কিছু খেয়েছিস!

__এই মা ভুলে গেলা ভাইয়া! জ্বর যে আমার পুরাতন প্রেমিক।পুরাতন প্রেমিক বীর পুরুষরা কি আর আসার আগে বলে আসবে!ওগো প্রিয়তমা আমি আসছিগো। শুনছ! হ্যাঁ তোমাকেই বলছি।

–মাইর চিনিস?
হাত দেখিয়ে বলল নাফিজ,,

–বারে, আজীব প্রশ্ন জিগ্যেস করবা তুমি তার উত্তর দিতে গেলে তখন বলবা মাইর চিনিস। এটা কেমন কথা ভাইয়া।

–আম্মু পাশের বাসার আন্টি আসছে তোমাকে খুঁজছে কি জানি লাগবে তার তুমি যাও আমি আছি অর সাথে।
কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলল,,

_আচ্ছা যাচ্ছি।
মা রুম থেকে যেতেই নাফিজ চট করে পড়ার টেবিলেত সামনে থেকে ছোট কাঠের টুলটা নিয়ে বোনের পাশে এনে আয়েসি ভঙিতে ঘা এলিয়ে দিয়ে বসে কাল শার্টের হাতা কুনুই পর্যন্ত ফোল্ড করতে করতে বলে উঠল,,

_নার্ভাসনেস না ভয় ?

_একটাও না।

_তাহলে তো জ্বর আসার কথা ছিলো না। কিছু হয়েছে! ভার্সিটিতে কেউ কি কিছু বলেছে তোকে?
চোখ ছোট করে জিগ্যেস করল,,

নাভিলা ভাইয়ার কথায় শুনে ভয়ে কিছুটা হকচকিয়ে গেলো,,

-চুপ করে আছিস কেন!এভ্যরি থিংক অল রাইট?

নাভিলা জিভ দিয়ে হাল্কা ঠোটঁ ভিজিয়ে আমতা আমতা করে হেসে বলল,,
_ দূর কে কি বলবে। এমন কিছুই না তুমি সব সময় আমাকে নিয়ে বেশী ভাব ভাইয়া।

_এমন কিছু না হলেই ভালো। আচ্ছা ফাস্ট ডে এট কলেজ থুক্কু ভার্সিটি কেমন কাটলো তোর।

ভার্সিটি নামটা শুনেই হাসিখুশি মুখটা আবার ও মলিন হয়ে গেলো নাভিলা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,

_ভালো ছিলো। তুমি আসলেই ঠিক বলছিলে ভার্সিটিটা আসলেই অনেক সুন্দর।

–আর ভার্সিটি সিনিয়র গুলো!

— সিনিয়র দিয়ে আমি কি করবো ভাই!

–কি আর করবি বড়সড় আমার জন্য একটা মেয়ে খুঁজবি আর নিজে সে সুযোগ বিলুপ্ত করে একটা ছোটখাটো প্রেম করবি।ছোটখাটো কিন্তু বড়সড় না আগেই বলে দিলাম।

— ওয়াও, আইডিয়াটা কিন্তু মন্ধ না জোস ছিলো । কিন্তু সমস্যা হল আমার পরম আদরের আব্বাজানের কানে বাই এনি চান্স এই কথাটা ফোড়ন কেটে গেলে বড়সড় স্ট্রোক করবে। তার সাথে সাথেই এই ভয়াংকর অপরাধে তোমার পাছায় এক লাথি দিয়ে বের ও করে দিতে পারে বাসা থেকে। বিশ্বাস নেই আব্বু কি থেকে কি করে ফেলে😐।

দুই ভাই বোন একে উপরের দিকে তাকিয়ে এক সাথে হো হো করে হেসে দিলো।
___________________
ব্যলকনিতে মৃদু আলোতে ইজি চেয়ারে বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছে জায়ান। এটা তার ডেইলি রুটিন রাতের এই সময়টা বাসায় বসে অফিসের ফাইল গুলো চেইক করা। ঘড়িতে ডং ডং আওয়াজ হতেই সচেতন চোখে ল্যাপটপ থেকে একবার চোখ তোলে ঘড়ির দিকে তাকালো জায়ান। দশটা মত বাজছে। ঘড়ি থেকে চোখ ফিরিয়ে ছোট একটা ক্লান্তি নিশ্বাস ছেড়ে কাধে হাত দিয়ে দুইদিকে কাধ নাড়িয়ে কাজে দিকে পূনরায় মন দেওয়ার চেষ্টা করলো ।

অন্ধকার ভূতুড়ে রুমে প্রবেশ করার আগে বুকে দুই তিনবার থু থু দিলা মুন্না। তার কাছে এই বাসায় মধ্যে এই ঘরটা ঘর কম অদ্ভুত ভূতুড়ে লাইব্রেরি বেশী মনে হয়ে। তিন বছর ধরে এই বাসায় কাজ করছে কিন্তু এখনো দোতালার এই রুমটায় আসতে তার বড্ডো ভয় করে।তার মূলত কারন বেশী ভাগ সময়ই এই রুমটা লাইট বন্ধ থাকে আর আসবাবপত্র চেয়ে মোটা মোটা বই দিয়ে তাক ভরা। তার মতে মোটাগাটা বইয়ের মাঝে গম্ভীর ভূতের বসবাস থাকে। এই কথা তার গ্রামের রহমত চাচা থেকে শুনেছিলো একদিন। তার পর থেকেই তার যতসব ভয়। এক বুক সাহস নিয়ে আয়াতুল কুরসি পরে রুমে এসে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দ্রুত পায়ে ব্যালকনিতে আসলো মুন্না। বুকে এক হাত দিয়ে বলল।

__ভাইজান আফামনি আফনের লেইগগা কালা চা পাঠাইসে।

__অটা কালা চা না মুন্না ব্লাক কফি হবে।

__হয় অইটাই পাঠাইসে।

__এখানে রাখ আমি পরে খাচ্ছি।
ল্যাপটপে চোখ রেখেই বলল জায়ান,,

__ভাইজান আফামনি এক্কেখান (একটা) কথা ও জিগাইসে আফনে কি অহন (এখন) ডিনার করবেন না ফরে(পরে)!

_ঠিক নেই।আপুকে বল আপেক্ষা করতে না আমি পরে এসে করে নিবো।

_আইচ্ছা

ডান হাত বারিয়ে কফির মগ মুখের সামনে এনে দুই এক চুমুক দিতেই হঠাৎ ফোনে মেসেজের টুংটাং টোন বেজে উঠল। জায়ান আড়চোখে একবার ফোনের দিকে তাকালো পাত্তা না দিয়ে আবার ও নিজের কফি খাওয়াতে মন দিলো। কিন্তু বেশী সময় আর হতে পারলো না এভার ফোনবাবাজ্বী বেজে উঠল তাত বাজখাঁই আওয়াজে । জায়ান কফির মগটা কাচের ছোট টি-টেবিলে রেখে বিরক্তি নিয়ে ফোন হাতে নিলো। ফোনের স্কিনে ভেষে উঠল সাথে সাথে “শিহাব” নামটা। ফোন রিসিভ করে কানে দিতেই অই পাশ থেকে চটজলদি দ্রুত ফোড়ন কেটে বলে উঠল,,

__দেখেছিস!

__ কি দেখবো! কিছু কি দেখার কথা ছিলো আমার?

__ আরে ডিটেইলসের কথা বলছি গাধা।

_কিসের ডিটেইলস? বনিতা না করে সারমর্মটা একটু ঝেড়ে ক্লিয়ার করে বল।

__আরে সেই মেয়ের কথা বলছি।

__কোন মেয়ে?

_ আরে যে তোকে সেদিন চড় দিলো।

শিহাবের এই কথা শুনে মুহূর্তে জায়ানের মস্তিষ্ক আনাচেকানাচে বার বার চড় কথাটা এসে নাড়া দিয়ে উঠলো আর চোখের সামনে ভেষে উঠল সেই দিনে মেয়েটা।সে তো এই দুইদিনের কাজের চাপে একদমই কথাটা ভুলেই গিয়েছিলো তাকে যে কেউ চড় দিয়েছিলো। জায়ান খট করে ফোনটা রেখে দিল। চট করে ফোনের মেসেজ অফসেনে আসলো স্কিনে তাকিয়ে,,,

নামঃ ফাতেমা জোহরা নাভিলা
অনার্স ফাস্ট ইয়ার। ডিপার্টমেন্ট অফ ম্যানেজমেন্ট। জেলা:নারায়ণগঞ্জ

অহ্ আই সি মিস নারায়ণগইঞ্জা বলেই এত দূর সাহস। সমস্যা নেই মিস এই জায়ান সব কিছু পেকেট করে তোমাকে অতি শীঘ্রই এখান থেকে পাঠিয়ে দিবে। (বাকা হেসে)

এতটুকু পড়তে আবার ও শিহাব ফোন দিলো,,

ফোন রিসিভ করতে শিহাব বলে উঠল,,

_দেখেছিস!

_নাও দ্যা গার্ল ইউল বি গন ডুড,,,

চলবে,,,

#মুগ্ধতার_ভিরে🥀
#পর্ব__০৩
#লেখিকাঃফাতেমা_জোহরা_নাভিলা

বাসার নিচে কড়া কাঠাফাটা রোদের তেজের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে নাভিলা ।ফর্সা চেহারাটা রোদের তাপে কিছুটা লাল হয়ে আছে। তার সাথে তাল মিলিয়ে চেহারা ও কিছুটা ঘেমে শেষ। ঘায়ে নতুন রংধনুর উড়নার এক কোণায় দিয়ে একটু পর পর কপালের জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো মুছে নিচ্ছে ডান হাত দিয়ে। আর বিরক্তি নিয়ে কিছুক্ষন পর পর ডানে বামে তাকাচ্ছে। কিন্তু এতে ফলাফল হলো শূন্য জর্জেট উড়না দিয়ে কি আর ঘাম মুছা যায়।বিরক্তি নিয়ে এভার বাম হাতটা উঁচু করে চকচক সিলভার ক্লারের ঘড়ির দিকে এক নজর তাকালো আর মুখ থেকে সাথে সাথেই আচমকা ‘চ’ আওয়াজ বের হলো । সাতটা পঁয়ত্রিশ বাজছে রিয়ার আসার কোনো নাম গন্ধ নেই। আটটা বিশে নারায়ণগঞ্জ টু ঢাকা তাদের বাস । বাই এনি চান্স যদি মিস হয়ে যায়। এই মেয়ে কি এখনো নাকে ডকায় প্রান সরিষা তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে! তা ভেবেই খুব রাগ উঠছে নাভিলার ।

রাগে সামনে ধুম ধাম কয়ে এক কদম দিয়ে ছোট এবড়োথেবড়ো গল্লিটা পার হতেই। তার সামনে মোড়ে হঠাৎ লাল রঙের একটা মিশু এসে সোজোরে ব্রেককষে থামলো।হুটহাট এমন কিছু হওয়াতে নাভিলার মেজাজ গেলো আরো চটে যেই না বাজখাঁই আওয়াজে ড্রাইভারকে গুরে কঠিনতম কিছু কথা বলতে যাবে। অমনেই মিশুর পিছনের সিট থেকে রিয়া হাত নাড়িয়ে তাড়া দিয়ে তাকে মিশুতে উঠতে বলল।রাগে গজগজ করতে করতে নাভিলা চুপচাপ মিশুতে উঠে রিয়ার পিঠে ধুম করে এক কিল বসিয়ে দিয়ে রিয়ার পাশে এসে বসল,,,

_অই হারামি ছেমরি মারলি কেন?

_ অই বদ্দের নানি লেইট করলি কেন।

_কই লেইট করছি?

_তোর জন্য আমি পাক্কা দমে দশ মিনিট এই কাঠাফাটা রোদের মাঝে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম আর তুই বলছিস লেইট করস নাই।(রাগতে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল)

_তো!

_তো মানে,

_দেখ একদমই হুদাই চিল্লাইবি না আমার উপর নাবু। একেতো এই ধরিত্রী দুনিয়াতে ৪০ টাকায় একটা রিক্সা পাওয়া ও মহা মুশকিল। তার উপর এই গরমের মধ্যে তোর এমন ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যান ভাল্লাগেতাসে না আর কিছু আমার।
.
নাভিলা আর কিছু বলল না রাগে চুপ হয়ে গেলো।
________________________

পাক্কা দুই ঘন্টা জার্নি করে ভার্সিটিতে আসলো নাভিলা আর রিয়া। রিক্সা থেকে চট করে দুইজন নেমে ভাড়া মিটিয়ে সামনে হাটা দিলো। দুই বন্ধুবি কথা বলতে বলতে হাসিমুখে ভার্সিটি গেট পেরিয়ে ক্যাম্পাসে আসতেই হঠাৎ কোথায় থেকে জেনো একরাশ বিনা মসামকি ভারসাতের নীল বৃষ্টির পানি এসে তাদের বরন করে নিলো। জেনো তাদের বরন করে নেওয়ার জন্যই মূলত এতক্ষন ধরে অপেহ্মা করছিলো। তারা আসলে শুধু তাদের উপরই আজ বর্ষন হয়ে নামবে। দুইজন পুরো ভিজে টুইটুম্বল কাকভেঁজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ক্যাম্পাসে ।একে উপরের দিকে অসহায় ভাবে বিষ্মত নয়ণে হ্যা করে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে আসলে তাদের সাথে এটা হলোটা কি!হুটহাট এমন কিছুর জন্য তারা মোটেও একদম রেডি ছিলো না।রিয়ার কাঁদোকাঁদো হয়ে এভার নিজের দিকে তাকালো তার পরনে ড্রাক কফি ক্লার জামাটা নিমিষেই কেমন ফেকাসে হয়ে গেছে।নাভিলার ঘায়ের নতুন ধবধব সাদা জামাটা সামনের দিকে কিছুটা ছোপছোপ নীল হয়ে আছে সাথে রংধনু উড়নার একপাশ ও নীল হয়ে গেছে মনে হচ্ছে হাফ নীলের মধ্যে অদ্ভুত ভলপিন করা সাথে মুখ,হাত ও নীল হয়ে গেছে। ড্রেসটা আপাতত দেখতে খুব বিছড়ি লাগছে। খুব শখ করে অনলাইন থেকে জাতীয় ড্রেসটা অর্ডার করেছিলো ৭০০ শত টাকা দিয়ে সেই কম কথা! যা কয়েক ঘন্টা ব্যবধানে পুরো দমে করুন অব্যস্থা পরিণত হল আজ। অই হুটহাট একরাশ নীল রঙের পানির মেঘ বৃষ্টির খুঁজে চোখ দুইটি রক্তলাল করে যখন হাত মুঠো শক্ত করে সামনে কটমট করে তাকালো । তখন তাদের থেকে কিছু দূরে এক গুচ্ছো ছেলে মেয়ের মাঝে দুষ্টু হাসিমাখা অতি চেনা সেই ভয়াংকর মুখ দেখতে পেলো নাভিলা। বুঝতে আর কোথাও সমস্যা হল না ।যে এই বিনা মেঘের গর্জন তাদের উপর কোন ভাবে সেইদিনের সেই ভয়াংকর ছেলেটাই করেছে।

কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বাইকের সাথে হেলাল দিয়ে জায়ান দশ বারে জনের ছেলের মেয়ের ভিরের মাঝে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে নাভিলার দিকে কিলার লুক ট্যাগ করে দাঁড়িয়ে আছে।মুখে তার এক চিলতে আকাঁবাকা দাঁতের বিশ্ব জয়ের মুচকি হাসি। এভার বাইক থেকে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে ফর্সা বাম হাতের সাদা শার্টের ফোল্ড করা হাতাটা ঠিক করতে করতে এভার সে ধীরে পায়ে নাভিলার সামনে আসলো। সাথে আশেপাশে এক বার চোখ বুলিয়ে ভালো করে সবায়কে দেখে নিলো। সেইদিনের মত আজ ও মুহূর্তে একটা ছোটখাটো ভির জমে গেছে। পাবলিকের আর ফ্রিতে কিছু মিস করার স্বভাবটা আর গেলো না।যদি হয় সেটা আবার ফ্রিতে বিনোদন তাহলে তো কথাই নেই ।

জায়ানের মুখে এত হাসি দেখে নাভিলা বিরক্তিটা মস্তিষ্কে এসে নাড়া দিয়ে বড্ডো বিষাক্তহীন করে তুলছে। মনে প্রানে চাচ্ছে সোজোরে ঠাটিয়ে এই ছেলের গালে এক চড় বসিয়ে লাল করে দিতে। এই কেমন ফাইজলামো রে ভাই! ফাইজলামির একটা লিমিটেড থাকে। দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে নাভিলা।
.
জায়ান একবার চোরা চোখে নাভিলার দিকে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করে নিলো। বুঝতে পারলো সে খুব ভয়াংকর ভাবে রেগে আছে আর তার দিকে লালবর্ন হয়ে তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে কালো সানগ্লাসটা খুলে ধবধব সাদা বুকের শার্টের মাঝ বরাবর বাজ করতে করতে বলে উঠল,,,

_ওয়েলকাম টু ঢাবি মিস নারায়ণগইনঞ্জা।

নাভিলা জায়ানের সামনে এসে কপালের খাদটা হাল্কা করে চোখে চোখ রেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে উঠল,,

_থ্যাংক ইউ সো মাচ , আমাদের এত সুন্দর করে ওয়েলকাম করার জন্য।

_মোস্ট ওয়েলকাম মিস।

_ কিন্তু কি বলুনতো, আপনি আমাদের এত সুন্দর করে সাগতম জানালেন।এখন আমার ও তো উচিৎ বিনিময় আপনাকে কিছু উপহার দেওয়া। তাই না!আচ্ছা আপনিই বলুনতো! আপানাকে এই মুহূর্তে ঠিক কি দেওয়া যায়!আমি না আবার নিজের কাছে কাউর ঋণ বেশী দিন রাখা একদমই পছন্দ করি নাহ্ বড় মনের বালিকাতো তাই।

_নাইস জোকস। এই নিহান্ত রহমান জায়ানকে আজ পর্যন্ত টক্কর দেওয়ার মত কাউর দূর সাহস হয়নি।তোমার সাহস আছে বলতে হবে। আই এম ইমপ্রেস। কিন্তু কি বলতো মিস নিজের এই ছোট মাথায় অযথা এত কষ্ট আর বেশী চাপ দিও না। আমার সাথে লড়তে আসলে যে ভেংগে চুড়ে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাবে।
.
বলেই জায়ান নাভিলার দিকে তাকিয়ে এক চোখ টিপ দিয়ে গুরে সামনের দিকে হাটা দিলো।
.
ম্রিস্টার নিহান্ত!
.
হঠাৎ পিছু থেকে ডাক পরায় জায়ান থেমে গেলো,, কপাল কিছুটা খাদ করে ভ্রুত্রুটি কুঁচকে যেই না পিছে গুরে তাকালো অমনেই তার মুখের উপর বালটির অবশিষ্ট পানিটুকু এসে পরলো।
.
নাভিলার এমন কার্যকলাপে শিহাব চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে উৎসুক নিয়ে একবার নাভিলার দিকে একবার জায়ানের দিকে তাকাচ্ছে নেকক্স কি হবে বুঝার জন্য।রিয়া ভয়ার্ত হয়ে মুখে অটমেটিকলি দুই হাত চেপে বলে উঠল,,,,,,’সর্বনাশ ‘

.
জায়ান রাগে ফুঁসছে। জায়ানের চোখ মুখ কপাল ভয়ংকর ভাবে রাগে লাল হয়ে আছে।ফর্সা কপালে সবুজ কয়েকটা রগ স্পষ্ট ফুলে উঠেছে। ডান হাত দিয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু নীল রঙের পানিগুলো চেপে মুছে দাঁতে দাঁত চেপে চিল্লিয়ে বলে উঠল,,,

_ হেই ইউউউউউউউউ

_এভার হিসাবটা কিছুটা বরাবর হল তাই না!
বালতিটা হাত থেকে নিচে নামিয়ে বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে বলল,,

_তোমার সাহস কি করে হলো আমার সাথে এমন কিছু করার।

_অহ প্লিজ ম্রিস্টার নিহান্ত একদমই চৈঁচাবেন না তো! কাকে আপনার এই অযথা রাগ দেখাচ্ছেন আমাকে! কিন্তু কেন! কিছু বলার আগে একবার ভাবুন তো!আপনি আমার সাথে ঠিক কি করেছেন! পরের জন্য খাল কাটলে সে খালে নিজে পরলো কেমন লাগে! খুব রাগ উঠছে আমার উপর তাইনা? আমার ও উঠেছিলো।বিশ্বাস করুন সেই সময়ে ঠাঠিয়ে এক চড় দিতে মন চেয়েছিলো আপনাকে।কিন্তু সিনিয়র বলে কিছু বলিনি। চুপচাপ সব সহ্য করেছি।
.
-তুমি কাকে কি বলছো আদৌ বুঝে বলছো তো!
রাগে কটমট করে বলল,,,

.
_জ্বী আমি আপনাকেই এই নিহান্ত রহমান জায়ানকে কথাগুলো বলছি।আমাকে বাকি সবার মত দূবল বা অবলা ভাবার একদমই ভুল করবেন না।আমি নিজের জন্য যথেষ্ট পরিমান ফাইট করতে জানি।তাই নেকক্স টাইম আমার থেকে দূরে থাকবেন।
(বলে নাভিলা হনহন করে ভিতে চলে গেলো)

শিহাব নাভিলা যাওয়ার দিকে তাকিয়ে জায়ানের কাধে হাত দিয়ে বলে উঠল,,,

__দোস্ত হোয়াট এ টাসান!

_জাস্ট ওয়েট এন্ড সি আমি এই মেয়ের লাইফকে হেল না করেছি আমার নাম ও জায়ান না।(জায়ান শিহাবের দিকে তাকিয়ে রেগে বলে উঠলো)
______________________
ওয়াশরুমে বড় আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে নাভিলা। মুখের অব্যস্থা খুব বাজে আর জামার কথাতো বাদই দিলাম।পানির কলটা ছেড়ে পানি দিচ্ছে চোখ মুখে আর রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।তার পাশে রিয়া দাঁত দিয়ে নখ খাচ্ছে আর ভয়ে ওয়াশরুমে পায়চারী করছে।তার এখন ওয়াশরুম থেকে বের হতে ও কেমন জেনো ভয় করছে। যদি আবার ও হুটহাট কিছু হয়।এতদিন গল্পেই মধ্যে শুধু শুনে এসেছে সিনিয়রদের হাতে জুনিয়রদের জ্যাগ হয়।কিন্ত কে জানতো তারা একদিন এইসবের প্যাংগা শিকার হবে।

__বইন তোর ভয় করছে না!

_নাহ্

_তুই এত শান্ত কিভাবে আছিস ভাই?

_কারন তুই অশান্ত আছিস তাই।রিলাক্স রিয়া মাথায় জগাখিচুড়ি করা বন্ধ কর।(রিয়ার কাধে দুই হাত দিয়ে)

_কিহ ভাবে বন্ধ করবো বল,আমার যে বড্ডো ভয়ে করছে।যদি আবার ও কিছু হয়!

_আজকের মত কিছু আর হবেনা। এটা নিয়ে তুই নিশ্চিন্ততা থাক।আজকের করা অপমান হজম করতে তার বেশ হেসপেস হবে তাই আপাতত কিছু করবে বলে মনে হয়না।চল ক্লাসে যাই।ক্লাস করতে হবে তো।

_হ্যাঁ চল,,

চলবে,,,,