মুগ্ধতার ভিরে পর্ব-১১

0
4551

মুগ্ধতার_ভিরে🥀
#পর্ব__১১
#লেখিকাঃফাতেমা জোহরা নাভিলা

“নাভিলা জায়ানের দিকে ভ্রুত্রুটি কুঁচকে চোখ ছোট করে পাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে। জায়ান এখনো নাভিলার দিকে খেয়াল করেনি। সে উল্টো দিকে ফিরে আপাতত স্টেজে পাশে দাঁড়ানো শিহাব, রাফি, আকাশ এর দিকে হাতের ইশারায় কি জেনো বুঝাচ্ছে।শিহাব কিছুক্ষনের ব্যবধানে দ্রুত হাতে একটা গিটার নিয়ে স্টেজে এসে জায়ানের হাতে দিয়ে “অল দ্যা বেস্ট “বলে চলে গেলো। জায়ান হাতে গিটার নিয়ে চোখ বুঝে জোড়ে জোড়ে দুই তিনটে লম্বা নিশ্বাস ত্যাগ করতে লাগলো।

_এই রিয়া চলতো। এখানে এভাবে সং সেজে দাঁড়িয়ে থাকা কোনো মানেই হয় না। আমার মনে হচ্ছে হচ্ছে কি রে ।বলছি তোকে এটাও হান্ডেড পাসেন্ট গ্যারান্টি সিউরিটি দিয়ে। এই খচ্চোর কোনো গান টান কিছুই পারেনা। হুদাই বেটা গিটার নিয়ে ভাব দেখাচ্ছে। আর উগন্ডার অন্ধ ভোক্তরা এটা দেখেই কাকের মত সুরিলা গলায় চিল্লাচ্ছে।চল তো এখান থেকে আমার কান একদমই জ্বালাপালা হয়ে গেলো এদের চিল্লানোর জ্বালায়। আর কিছুক্ষন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে আমার নিশ্চিয় আজ বয়ড়া হতে টাইম লাগবে না । ,,,
দাঁতে দাঁত চেপে বিরক্তি নিয়ে বলল নাভিলা,

_ আরে দাঁড়ায় না এত কষ্ট করে যেহেতু এসেই পরেছি তাহলে দেখেই যাই না হোয়াট দ্যা এন্ড 😁

_তুই দেখ বেশী করে আমার দেখার কোনো ইচ্ছে টিচ্ছে নেই।এদের চিল্লানোর জ্বালায় রিতিমত মাথা ব্যাথা শুরু করে দিয়েছে। তার উপর আজ এত গরম তার মধ্যে এত ঠ্যালাঠ্যালিতে আমি আধ মরা সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। আমি চললাম,,
বলেই এক নজর জায়ানের দিকে তাকিয়ে গাল ফুলিয়ে নাভিলা পিছনে দিকে হাটা ধরলো,,,

_এই নাবু দাঁড়া আরে বাবা দাঁড়া কই যাস!!

মুখে এক চিলতে মিষ্টি হাসি নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে। নিজেকে শান্ত করে বাম হাতের দ্বারা কপালের বাম ভ্রুটা চুল্কে। উপরের ঠোটঁ দিয়ে নিচের ঠোটঁ চেপে গিটারের টুংটাং আওয়াজ সুর তুলে এভার গুরে সবার দিকে তাকালো জায়ান,,,🎶🎶🎶

“গিটারের টুংটাং আওয়াজ শুনতে পেয়ে হঠাৎ নাভিলা কৃষ্ণচূড়া গাছটার সামনে এসে থোমকে দাঁড়ালো কৌতূহোল নিয়ে এভার পিছে গুরে তাকাতে,,,, ”

তোমার এলোমেলো চুলে
আমার সাদা মনে
হারিয়ে যেতে চাই
কোন হুটতোলা রিকশায়
এক মুঠো প্রেম নিয়ে
আমার শূন্য পকেটে
হারাতে দ্বিধা নাই
অচেনা গলিতে🎶🎶🎶🎶
(হঠাৎ জায়ানের চোখ কৃষচূড়া গাছে দিকে যেতে একজোড়া চোখের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়। জায়ান সে দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে আবার ও গাওয়া শুরু করল)

এক শহর ভালবাসা দিতে চাই🎶🎶🎶🎶
এই নরম বিকেলে
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
শুধু বলতে ভয়,
ভালোবাসতে চাই
দ্বিধার আদরে
আমি খুব সাধারন
সাদামাটা একজন
মরতে পারি, বাঁচতে শিখি
তা দ্বিধা ছাড়াই🎶🎶🎶
(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিয়েন জায়ান ভাইয়ার গান🙃)

” পুরোটা সময় নাভিলা জায়ানের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ নয়ণে সম্পূর্ণ গানটা শুনছিলো। জায়ান যে এত সুন্দর গানের আওয়াজ হবে এটা তার ধারানা বাহিরে ছিলো ।ছেলেটার সব কিছুতেই কেমন একটা আলাদা মুগ্ধতা আছে যা তাকে জেনো ক্রমশয় দিন দিন তার দিকে আকর্ষন করে টানে । হঠাৎ সবার কোলতালির আওয়াজে নাভিলার ধ্যান ভাঙে নাভিলা দ্রুত জায়ান থেকে লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়।”

“জায়ান মুচকি হাসি দিয়ে স্টেজ থেকে নামতে নিতেই সবায় চিল্লিয়ে বলে উঠে,,,,

“ওয়ান্স মোর, ওয়ান্স মোর, ওয়ান্স মোর,প্লিজ্জজ জায়য়য়য়য়য়য়ান ”

“জায়ান মুচকি হাসি দিয়ে আবার ও গিটারের টুংটাং আওয়াজ করে আর একটা গানের সুর তুললো,,,🎶🎶🎶

কথা হবে দেখা হবে
প্রেমে প্রেমে মেলা হবে
কাছে আসা আসি
আর হবে না,
চোখে চোখে কথা হবে
ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে
ভালবাসা-বাসি আর হবে না।
শত রাত জাগা হবে
থালে ভাত জমা রবে।
খাওয়া দাওয়া, কিছু মজা হবে না।
হুট করে ফিরে এসে,
লুট করে নিয়ে যাবে।
এই মন ভেঙে যাবে,জানো না।
“আমার এই বাজে স্বভাব
কোনো দিন যাবে না”

“গান শেষে জায়ান মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে স্টেজ থেকে দ্রুত নিচে নেমে আসলো”

কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে দাঁড়িয় চোরা চোখে নাভিলা এতক্ষন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে গানের ফাঁকেফাঁকে জায়ানকে দূর থেকে স্কেন করছিলো । জায়ান আজ কালো ক্লারের পাঞ্জাবী পরেছে ।ফর্সা গায়ে কালো পাঞ্জাবীতে তাকে মারাত্মক লাগছে ।হাতা কনুই পর্যন্ত ঘোঁটানো। এক হাতে দামি না জানা কোনো ব্যান্ডের ঘড়ি হবে আর এক হাতে তিন চারটে কিছু ব্যাস্লেট পরিহিত। হোয়াট এ কন্সিডেন্স আজ আমি ও পুরো কালও পরেছি আর জায়ান বেটা ও দেখছি। বাহহ বেটা দেখি আমাকে কপি পেস্ট করছে। হাহাহাহা নাভিলা নিজে নিজেই বলে ফিক করে হেসে দিলো। জায়ানকে এভার হঠাৎ এই দিকে আসতে দেখে দ্রুত নাভিলা চোখ ফিরিয়ে নিলো। অন্য দিকে তাকিয়ে আশেপাশে রিয়াকে খুঁজতে লাগলো। রিয়াকে তার আশেপাশে দেখতে না পেয়ে পুকুর পাড়ের দিকে চলে আসলো এই দিকটায় মানুষের ভির কিছুটা কম। চার পাশে অত কোলাহলধ্বনি নেই।

“জায়ান নাভিলা সামনে এসে দাঁড়িয়ে কপাল গম্ভীর করে ঘোঁটানো হাতা ঠিক করতে করতে তার দিকে আড়চোখে একবার তাকালো। কালো ক্লারের জর্জেট শাড়ি দিয়ে কপালে জমে থাকা ঘাম গুলো মুচছে মেয়েটা।যার ফলে ফর্সা চেহারাটা আপাতত কিছুটা লাল আভা ধারন করেছে।চুল গুলো আধ খোঁপা করে রাখা, কিন্তু অবাধ্য কিছু চুল সামনের দিকে এলোমেলো হয়ে উড়ছে। শাড়ির নিচের দিকের কুচিগুলো অগুছালো হয়ে আছে কিন্ত সেই দিকে এই মেয়ের কোনো ভ্রুহ্মেপ নেই।হাতের উঠা নামা নাড়াচাড়াতে রেশমি চুড়ি থেকে টুংটাং এক মিষ্টি আওয়াজ ভেজে চলছে। চেহারাতে কোনো ভারি সাজ নেই। এই হাল্কা সাজে শাড়ি আর আধ খোঁপাতেই মেয়েটা কেমন স্নিগ্ধ লাগছে। কপালে নাকে বিন্দু বিন্দু শুভ্র জমে থাকা ছোট ছোট ঘামের ফোটা গুলো রোদের আলোতে মুক্তার মত চিকচিক করছে।জায়ান কয়েক সেকেন্ড এভাবে তাকিয়ে থেকে চট করে চোখ নামিয়ে আশেপাশে একবার তাকিয়ে পাঞ্জাবী পকেট হাত ঢুকিয়ে স্টান হয়ে দাঁড়িয়ে
বলে উঠল,,,,

_কি দেখছিলে তখন অই ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে।

হঠাৎ এমন কথা নাভিলা তার পাশে তাকালো জায়ানকে তার পাশে দেখে বিষম খেলো। সাথে কিছুটা লজ্জা ও পেলে পর মুহূর্তে তার কথা মস্তিষ্ক যেতেই আড়ালে তাকিয়ে ও যে হাতেনাতে এভাবে ধরা খেয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। সে হন্তদস্ত হয়ে বিপরীতে আমতা আমতা করে বলে উঠল,,

_এ এ এএক এক্স কককিউউউস মি, আপনি কাকে বলছেন !

_আমার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে তাকেই বলছি।

_ সেই তো আশেপাশে ডানে বামে তো অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে কাকেই বা বলছেন ভাইয়া।

জায়ান কিছুটা বিরক্তি হল নাভিলার দিকে তাকিয়ে বলল,

_আমার জ্যেকেট কই! দেওয়ার কি কোনো ইচ্ছে নেই ! নিজের কাছে কি রেখে দিবা?

_এই আপনার কি একটাই জ্যেকেট আছে যে এমন ছ্যেছড়ামি করছেন!আপনার ফালতু কাইল্লা মার্কা জ্যেকেট নিজের কাছে রাখার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই।তাড়াহুড়া নিয়ে আসতে ভুলে গেছি কাল দিয়ে দিবো।

_ইট’স নট কাইল্লা।ইট’স এ ব্লাক বাংলায় কালো হবে ওকে। আমার একটা না কয়টা আছে তা তোমাকে বলতে ইচ্ছুক নই।সেই দিয়ে দিলেই ভালো হয়। বাই দ্যা ওয়ে ধুয়ে ছিলে?

_জ্বী আম্মু থালাবাসন ভিম সাবান দিয়ে ঘষেমেজে ধুয়ে চকাচক করে দিয়েছি।কাল দিয়ে দিবো আপনার ফালতু মার্কা জ্যেকেট। তার পর ধুয়ে ধুয়ে রোজ সকালে এক গ্লাস পানি খাইয়েন আপনার জ্যেকেট এর।
বলেই নাভিলা হনহন করে জায়ানের সামনে থেকে চলে আসলো জায়ান তার কথা শুনে ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।

ভার্সিটি বাহিরে আসতেই নাভিলা ফোন টুং করে উঠল বিরক্তি নিয়ে ফোন দিকে তাকাতেই সব বিরক্তি গায়েব হয়ে গেলো নিমিষেই নেমে আসলো একঝাক কৌতূহোল।

শহর জুড়ে তোমার মত

বিকেল,অবাধ্যতার নীল;

শরীর ঘিরে রং-তুলির আঁচড়,

কী ভীষণ সাবলীল।

আজ নাহয় থেমে গেল এই

একরাশ লুকোচুরির #মুগ্ধতার_ভিরে সময়,

আইভি লতার বুকে;

পরাজিত মেঘ হতে রাজি,

তোমার স্পর্শসুখে।(সংগ্রহীত)

____________________
সময় চলমান কাউ জন্য অপেক্ষা করে থেমে থাকে না।দেখতে দেখতে আজ দেড় মাস হয়ে গেলো।এই দেড় মাসে নাভিলা আর জায়ানের তেমন আর কোনো দেখা হয়ে উঠেনি।শুধু মাঝে মাঝে কয়েকবার ক্যাম্পাসে চোখাচোখি ছাড়া। তার মূলত কারন তাদের সেমিস্টার। এক্সামের টেনশনে তারা একে উপরের কথা যেমন ভুলেই গেছে। বললেই চলে।

নাভিলা ভার্সিটি থেকে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ক্লান্তিতে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। আজ তার সেমিস্টারের লাস্ট এক্সাম ছিলো। এখন হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে একটা ঘুম দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।এক্সামের প্যারাময় তার এত দিন ঠিকঠাক ঘুম ও ভালো করে হয়নি।

দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে মিসেস উম্মে তড়িগড়ি হয়ে বলতে লাগলেন……

—” তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ বিয়ে ও হয়ে যেতে পারে”।

হটাৎ এমন কিছু শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না নাভিলা। হতম্ভব হয়ে শুয়া থেকে চট করে উঠে বসে বলল,,,

_মজা করছো আম্মু! যদি করে থাকো তাহলে এটা খুব বাজে একটা মজা ছিলো।আমার একদমই হাসি পায়নি দেখো।

__আমি কোনো মজা করছিনা জলদি করে রেডি হয়ে নে।ছেলেপক্ষকে নিয়ে তোর ফুঁপি যে কোনো সময় এসে পরতে পারে।

__মানে কি! কথা নাই বার্তা নাই দেখতে আসছে আবার বলছো ঠিকঠাক থাকলে আজ বিয়ে হয়ে যেতে পারে!একটু ক্লিয়ার কাট করে বলবা।এই সবের বলার মানে কি!

__ তোর ফুঁপি নিয়ে আসছে ছেলে খুব ভালো সম্পর্কে আবিরের শালা হয়। ছেলের সব দিক দেখে বিবেচনা করে তোর আব্বু আর আসতে অমত করেনি। আর আমাদের ও ছেলেকে খুব ভালো লেগেছে। নাফিজ সব খোজ খবর নিয়ে দেখেছে ছেলে খুব ভালো।

__ছেলে ভালো হলেই বিয়ে করে নিতে হবে এমন কোনো কথা বলা আছে আদৌ?আর এত কিছু হয়ে গেলো তোমরা আমাকে একবারো জানানো ও প্রয়োজন বোধ মনে করলে না।

মেয়ের কথা শোনে মিসেস উম্মে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। কি বলবেন মেয়ে কে?পরিবেশ ঠিক করার জন্য মিসেস উম্মে আবার ও ইতদস্ত হয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বলে উঠলেন…..

—তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?বা কাউকে ভালবাসিস?তোর জীবনে কি কেউ আছে?

—নাহ্ নেই। থাকলে তো তোমাকে আগেই বলতাম। আর আমি তো আগেই বলেছি আমি এই সবের ধারের কাছে ও নেই।প্রেম ভালবাসা আমার দ্বারা সম্ভব না।তোমরা আমার জন্য যাকে ঠিক করবে আমি তাকেই বিয়ে করবো।

মেয়ের উত্তর শুনে মিসেস উম্মে কিছুটা চিন্তা মুক্ত হলেন মেয়ের উদ্দেশ্য বলে উঠলেন…..

— আমাকে যেতে হবে রান্নাঘরে অনেক কাজ আছে। নাবু আলমারি থেকে চট জলদি লাল শাড়িটা পরে নেয়। আর কোনো কথা না।

কথাটা বলে হনহন করে চলে গেলেন মিসেস উম্মে। নাভিলার মাথার উপর যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। হটাৎ করে কিসব হয়ে যাচ্ছে। মা-বাবার কথা তো আর অমান্য করা যাবে না সেই জন্য আলমারি থেকে শাড়ি বের করে পড়তে লাগলো। আর ভাবতে লাগলো এই নতুন প্যাড়াময় কথা

চলবে………