মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-০৬

0
701

#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ৬
#Saiyara_Hossain_Kayanat

শুভ্র ভাই আমার অনেকটা কাছে এসে বললেন-

—”ভয় পাস না অনন্য এখন আর তোর গায়ে হাত তুলবো না। এক ভুল আমি বার বার করি না। ওই একটা থাপ্পড় দেওয়ার জন্য আমাকে কম শাস্তি পেতে হয়নি।”

শুভ্র ভাইয়ের কথা শুনে আমি স্বস্তি পেলাম। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলাম ওনার চোখ মুখে অনুতপ্তের ছাপ কোনো রাগ নেই এখন কিন্তু কেন!! ছোট বেলার সেই ছোট্ট একটা ঘটনার জন্য??

“আমার বয়স তখন দশ এগারো বছর হবে হয়তো শুভ্র ভাইয়ের কথার অমান্য হওয়ার ফলে আমার গালে কোষে এক থাপ্পড় দিয়ে লাল করে ফেলেছিল। আর সেই দিন আংকেল শুভ্র ভাইকে প্রচুর বকা দিয়েছিলেন। এর কিছু দিন পরেই তারা আমাদের পাশের ফ্ল্যাট থেকে চলে গিয়েছিলেন তাদের অন্য বাসায়। তার এক মাস পরেই শুবেছিলাম শুভ্র ভাই নাকি বিদেশে চলে গেছেন পড়াশোনার জন্য। আমি তো ওনার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।”

আমার ভাবনার মাঝেই খেয়াল করলাম শুভ্র ভাই আমার চুলে কিছু একটা লাগাচ্ছে। আমি সরে আসতে চাইলেই এক ধমক দিয়ে আমাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে বললেন। উফফ এই লোকটা আমাকে এতো ধমকায়া কেন!!
একটু পর উনি আমার সামনে এসে এক নজরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলেন।

—”এখন সব ঠিক আছে কি না আয়ানায় দেখ। অনেক কষ্ট করে এতো গুলো দোকান খুজে এই বেলীফুলের গাজরাটা পেয়েছি। কোথাও পাওয়াই যাচ্ছিলো না।”

আয়নায় তাকিয়ে দেখলাম এখন সাজটা পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে এই বেলীফুলের গাজরারই কমতি ছিল।শুভ্র ভাই এতো কষ্ট করলেন এই সামান্য ফুল আনার জন্য!! আচ্ছা উনি আমার মনের কথা সব সময় বুঝে যান কিভাবে!! যাইহোক ভাবনা বাদ দিয়ে খুশি হয়ে শুভ্র ভাইকে বললাম-

—” অনেক অনেক ধন্যবাদ শুভ্র ভাই এতোক্ষন ধরে কিছু একটা কমতি মনে হচ্ছিলো এখন আমার সাজ একদম কমপ্লিট হয়ে গেছে।”

—”আচ্ছা আমি এখন যাই আমাকে আবার রেডি হতে হবে এখনো অনেক কাজ আছে আমার। তুই কিছুক্ষণ পর ছাদে চলে যাস অনুষ্ঠানে। আর হ্যাঁ এমন কোনো কাজ করিস না যাতে আমার রাগ উঠে যায়। খুবই কষ্টে এই দশ বছরের নিজের রাগ কন্ট্রোলে এনেছি আমি শুধু তোর জন্য।”

এই কথা বলেই শুভ্র ভাই দরজা খুলে চলে গেলেন আমার রুম থেকে। একটু পর আবার এসে আমার হাতে একটা সাদা গোলাপ আর একটা চিরকুট দিয়ে আমার মুখের সামনে এসে পরা চুল গুলো ঠিক করতে করতে বললেন-

—”দেখে শুনে সাবধানে চলাফেরা করিস শাড়ির সাথে আবার পেচিয়ে পরে যাস না।”

শুভ্র ভাই আবার দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেলেন। আমি সাদা গোলাপটার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম হঠাৎ করে শুভ্র ভাইয়ের কি হয়ে গেল এমন অদ্ভুত রকমের কাজ করছে কেন??
হাতের চিরকুটটা খুলে দেখলাম-

” প্রিয় অনন্যময়ি

আমার শুভ্র রঙে তোমাকে সাজিয়ে তুলতে চেয়েছিলাম তাই নিজে পছন্দ করেই তোমার জন্য এই শাড়িটা পুরো মার্কেট খুঁজে কিনেছি। আর এই শুভ্র রঙের গোলাপটাও যেন তোমার কাছেই মানাবে তাই দিয়ে দিলাম। সুন্দর করে মাথার এক পাশে লাগিয়ে নিও।

আজ তোমাকে আর ঘুমন্তপরি লাগছে না একদম অনন্যময়ি লাগছে যার সাথে কোনো কিছুর তুলনা হয় না। শাড়িতে যেন তোমার মুগ্ধতা আরও বেড়ে গেছে।

ইতি
তোমার মুগ্ধ প্রেমিক”

শুভ্র ভাইয়ের চিঠি পরে আমার হৃদ স্পন্দন যেন থেমে গেলো। লজ্জা যেন আমাকে আঁকড়ে ধরে আছে এই মুহূর্তে। আগে কখনো কেউ আমাকে চিঠি দেয় নি আর না কখনো এভাবে কেউ কথা বলেছে এরকম অনুভূতিও আগে কখনো হয়নি আমার। কেন এমন হচ্ছে আমার সাথে!!

——————

ছাদের এক পাশে প্রমির সাথে দাঁড়িয়ে আছি অনেক মানুষের ভিড় তারপর আবার শাড়ি পরে আছি একদমই বিরক্ত লাগছে। ঠিক মতো হাটতেও পারছি শাড়ির জন্য তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু এই প্রমি মেয়েটার কাছে যেন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা একদমই অসম্ভব একটা কাজ তাই তো একটু পরপরই এখানে ওখানে চলে যাচ্ছে।
আমাকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাইফ ভাই আমার কাছে এসে পরলেন। আমাকে পা থেকে মাথা অব্দি দেখে বললেন-

—”বাহ আজ তো আমার অনিকে একদম হলুদ পরি লাগছে দেখতে। পরি হয়ে উড়ে চলে যাস না আবার।”

ভাইয়ার কথা শুনে আমরা দুজনই এক সাথে হেসে উঠলাম। হাসির মাঝে হঠাৎ করেই সামনে চোখ পরল। শুভ্র ভাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। উনি হলুদ আর শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পরেছেন কিছু টা আমার শাড়ির সাথে মিল আছে। সব ছেলেরাই তো হলুদ আর সবুজ রঙের পাঞ্জাবি আর মেয়েরা হলুদ আর লাল রঙের শাড়ি পরেছে তাহলে শুভ্র ভাই আর আমারটাই কেন আলাদা???

আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েরা শুভ্র ভাইকে একদম চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। খাওয়ারই কথা সাদা বিড়ালের উপর কে না ক্রাশ খায়!!!

———————

অর্ক ভাইকে হলুদ লাগানো শেষে আমি, শাকিল ভাইয়া আর আবির কথা বলছিলাম তার মাঝেই আমি বললাম-

—”ভাইয়া আমি একটু নিচে গেলাম।”

—”আচ্ছা যা তাড়াতাড়ি আসিস না হলে আম্মু খুজবে তোকে।”

—”ঠিক আছে।”

শাড়ির কুচি কেমন যেন ঢিলা হয়ে গেছে মনে হচ্ছে এখনই ছুটে যাবে। তাড়াতাড়ি রুমে যেয়ে ঠিক করতে হবে। শাড়ির কুচি ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে হাটছি তখনই একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে পিছনের দিকে পরে যেতে নিলেই শুভ্র ভাই কোথা থেকে এসে যেন আমাকে ধরে ফেললেন। আমাকে সোজা করে দাড় করিয়ে দিয়েই শক্ত গলায় বললেন-

—”অনন্য কে ইচ্ছে করা ধাক্কা দেওয়াটা কি তোমার ঠিক হয়েছে!! অনন্য খেয়াল করেনি বলে যে আমিও খেয়াল করিনি সেটা কিন্তু ভেবো না।”

সামনে তাকিয়ে দেখলাম আমার থেকে একটু বড় একটা ছেলে দারিয়ে আছে। কিন্তু শুভ্র ভাই কি বলছেন!! এই ছেলে আমাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিছেয়ে????

ছেলেটা ভয়ার্ত স্বরে বললো-

—”সরি ভাইয়া আর কখনো এমন ভুল করব মাফ করে দিন।”

এতো টুক বলেই একপ্রকার দৌড়ে চলে গেলো গেলো ছেলেটা। আর শুভ্র ভাই আমার হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিচে নিয়ে যাচ্ছে।

চলবে…