মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-০৫

0
703

#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ৫
#Saiyara_Hossain_Kayanat

আহনাফ তার বন্ধুদের উদ্দেশ্য করে বলছে-

—”তোদের এই ফালতু ডেয়ার এর জন্য আমি অনন্যার পিছনে প্রায় দুমাস ধরে ঘুরছি। আজ আর তোদের এইসব ট্রুথ ওর ডেয়ার খেলার মধ্যে আমি নেই। তোরাই খেল এসব গেম।”

আহনাফের এই কথা শুনে ওর বন্ধুরা বললো-

—”তুই প্রপোজ করেছিস আর ওই মেয়ে রাজি হয়েছে এই পর্যন্তই ডেয়ার ছিলো। তুই এখনো কেন রিলেশন রাখলি ব্রেকআপ করে দে কাহিনি শেষ।”

এতোটুক শুনেই চলে আসলাম ওদের আর কোনো কথা শোনার মতো শক্তি আমার নেই। এতোটা বোকা আমি কি করে হলাম। আহনাফের কাছ এতো সহজে কিভাবে ধোকা খেয়ে গেলাম। আমার বিশ্বাস ভেঙে গেলো আহনাফের উপর থেকে। বাসায়া গিয়ে ওইদিন প্রচুর কান্না করে ছিলাম। এর পর আর কান্না আসেনি নিজেকে অনেক শক্ত করে ফেলেছিলাম। ওই দিনের পর থেকে আহনাফের সাথে আর কোনো যোগাযোগ করি নি আহনাফ বার বার আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিল। আমি শুধু বলেছিলাম- “আপনার ডেয়ার কমপ্লিট হয়ে গেছে এখন আর কথা বলার কোনো কারন আমি দেখছি না।” এই কথা বলেই চলে এসেছিলাম আহনাফকে আর কিছু বলতে দেইনি।
এটাই ছিল আমাদের শেষ কথা। এর পর আহনাফ দেখা করতে চাইলেও আমি ইগ্নোর করতাম সব জায়গায় শাকিল ভাইয়াকে নিয়ে যেতাম। কারন আহনাফ কে দেখলেই আমি দুর্বল হয়ে পরতাম। কিছুদিন যেতেই শুনেছিলাম আহনাফ অন্য শহরে চলে গেছে পরিবাবের সাথে দু’বছর পর এখানে আসার পথেই দেখেছিলাম আহনাফকে।

অতীত নিয়ে ভাবতে ভাবতে বারান্দার দোলনাতেই ঘুমিয়ে পরলাম।

———————

সকালে আযানের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। শোয়া থেকে উঠে বসতেই খেয়াল করলাম আমি বিছানায়। কিন্তু আমি রুমে কখন আসলাম!!! আমি তো বারান্দাতেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম তাহলে কি আমি ঘুমের ঘোরেই এসে পরেছি!!

বিছানা থেকে উঠেতেই পাশের টেবিলে একটি চিরকুট দেখতে পেলাম। চিরকুট খুলে দেখলাম-

“যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পরা কি তোমার অভ্যাস হয়ে গেছি নাকি ঘুমন্তপরি!!! ভ্যাগিস আমি দেখেছিলাম নিচ থেকে তুমি বারান্দায় ঘুমাচ্ছো। যদি অন্য কেউ দেখতো তখন তোমার শাস্তি নিশ্চিত ছিল।
আমি চাই না তোমার এই ঘুমন্ত চেহারার মুগ্ধতায় অন্য কেউ হারিয়ে যাক। তোমার মুগ্ধতার শহরে আমি শুধু নিজেকে হারাতে চাই বারংবার।

আর হ্যাঁ যা চলে গেছে সেটা নিয়ে বেশি ভেবে মন খারাপ করো না।

ইতি,
তোমার মুগ্ধতায় মুগ্ধ এক প্রেমিক”

চিরকুটটা পরে আমি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। কি ভাববো সেটাও বুঝতে পারছি না মাথা কেমন যেন ফাঁক ফাঁক লাগছে এই মুহূর্তে। কেমন অদ্ভুত রকমেরই অনুভূতি হচ্ছে আমার মধ্যে। শুভ্র ভাই আমাকে কেন এসব চিঠি লিখবে!! মজা করছে নাকি আমার সাথে!! আর আমাকেই বা বারান্দায় থেকে রুমে নিয়ে আসলো কিভাবে????? নাহ আর কিছু ভাবতে পারছি না আমি।

———————
নামাজ পরে সকাল সকাল বাগানে হাঁটাহাঁটি করতে চলে গেলাম। শীতল বাতাস বইছে চারপাশে। বাগানের পাশে বসার জায়গায় বসে চোখ বন্ধ করে সকালের এই শীতল হাওয়া অনুভব করছি। তখনই পাশ থেকে শুভ্র ভাইয়ের কন্ঠ কানে ভেসে আসলো।

—”এখন কি আবার আমার কোলে চড়ে রুমে যেতে ইচ্ছে করছে নাকি তোর যে এখানে বসে বসে ঘুমাচ্ছিস!!!”

শুভ্র ভাইয়ের কথা শুনে চট করেই চোখ খুলে ওনার দিকে তাকালাম পরক্ষণেই লজ্জায় আবার মাথা নিচু করে ফেললাম। ছিঃ কি লজ্জার বিষয় উনি কাল রাতে তাহলে আমাকে কোলে করে রুমে নিয়ে গেছিলো!!! আর কোলে করে নিয়ে গেলেও কি এভাবে আমার সামনে বলে লজ্জায় ফেলতে হবে আমকে!! শুভ্র ভাই আমাকে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবার বললেন-

—”এতো লজ্জা পেতে হবে না। এখন চল আমার সাথে।”

এই সকালবেলা কোথায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে আমাকে!! আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন। রাস্তায় গিয়ে আমার হাত ছেড়ে আমার পাশাপাশি হাটা শুরু করলেন। হাটতে হাটতে উনি একটি চায়ের দোকানের সামনে এসে থামলেন। বেঞ্চিতে বসে চুপচাপ চা খাচ্ছিলাম হঠাৎ করে দোকানদার শুভ্র ভাইকে বললেন-

—”নতুন নতুন বিয়া হইসে বুঝি ভাইসাহেব?? আমার দোহানে মেলা মানুষই সকাল বেলা আইসা বউ নিয়া চা খাইয়া যায়। সকালে খরেদার কম থাহে তো তাই।”

ওনার কথা শুনে আমি বিষম খেয়ে কাশতে লাগলাম শুভ্র ভাই এসে আমার পিঠে আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম শুভ্র ভাই মুচকি মুচকি হাসছে। দোকানদার আবার বললেন-

—”ভাবি মনে হয় শরম পাইছে ভাইসাহেব।”

শুভ্র ভাইও এবার তাল মিলিয়ে বললেন-

—”হুম ও অল্পতেই লজ্জায় নুয়ে পরে একদম লজ্জাবতী গাছের মতো”

এই কথা বলেই উচ্চস্বরে হাসা শুরু করলেন। আর এইদিকে লজ্জায় আমার ইচ্ছে করছে মাটিতে মিশে যেতে। শুভ্র ভাই ইচ্ছে করেই আমাকে এমন লজ্জায় ফেলছে বার বার। আমি এখানে আর থাকতে না পেরে হাটা শুরু করলাম শুভ্র ভাই ও পিছন পিছন আসলেন। পুরো রাস্তায় আর কোনো কথা বললাম না। ওনার দিকে তাকাতেই যেন লজ্জা লাগছে আমার।

বাসায় এসে দেখলাম শুভ্র ভাইয়ের আব্বু আম্মু আর আমার আব্বু এসে পরেছে। ড্রইংরুমে সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এতো সকালে আমাদের দুজনকে এক সাথে দেখে কে কি ভাচ্ছে আল্লাহ মালুম। শুভ্র ভাইয়ের আব্বু আমার কাছে এসে বললেন-

—”আমার মামনিকে ঘুরতে নিয়ে গেছিলি বুঝি শুভ্র!! মামনি শুভ্র তোমাকে ধমকায় নি তো আবার?? ওর তো ছোট থেকেই তোমাকে ধমকানো অভ্যাস এখন কি পাল্টেছে নাকি আগের মতোই আছে??

“আংকেল আপনার এই অসভ্য ছেলে এখন আগের থেকেও বেশি ধমকায়, হুমকি দেয় আর কথায় কথায় আমাকে লজ্জায় ফেলে। আস্ত একটা অসভ্য লোক।” এসব বলতে চাইলেও মনের কথা মনেই রেখে দিলাম আর মুখে বললাম-

—”নাহ আংকেল ঠিক আছে। এসব বাদ দাও তোমার কখন আসলে?”

—”এই মাত্রই আসলাম”

আংকেল আন্টির আর বাকি সবার সাথে কুশল বিনিময় শেষে রুমে চলে আসলাম।

——————

অর্ক ভাইয়ার গায়ে হলুদে আমি হলুদ লেহেঙ্গা পরতে চেয়েছিলাম কারন আমি শাড়ি পরে চলতেই পারি না। কেমন যেন ভয় লাগে মনে হয় এই বুঝি শাড়ী খুলে যাবে, এখনই হয়তো শাড়িতে পেচিয়ে পরে যাব একদমই বিরক্তিকর লাগে। কিন্তু ওই অসভ্য শুভ্র ভাই সবাইকে কড়া গলায় বলে দিয়েছে মেয়েরা সবাই শাড়ি আর ছেলেরা পাঞ্জাবি পরবে। একটাই গায়ে হলুদের ড্রেস কোড। শুভ্র ভাই সবার জন্য শাড়ি আর পাঞ্জাবি পছন্দ করে কিনে নিয়ে আসছে।

অর্ক ভাইয়ার ফ্রেন্ডের বোনের সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে একদিনেই। মেয়েটার নাম প্রমি আমার থেকে দুই এক বছরের ছোট হয়েও খুব বেশি চঞ্চল আর পটু। আমি শাড়ি পরতে পারি না বলে প্রমিই আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে।

আয়নায় নিজেকে দেখছি নিখুঁতভাবে হলুদের সাথে শুভ্র রঙের শাড়ি। খুব বেশিই সুন্দর শাড়িটা। হালকা লিপস্টিক আর কাজল দিয়ে কাচা ফুলের গহনা গুলো পরে ফেললাম। আমার কোমর অব্দি চুল গুলো খুলে দিলাম। অবশেষে রেডি হয়ে গেলাম। আয়নায় নিজেকে দেখে সব কিছু ঠিকঠাক লাগলেও কিছু একটার কমতি মনে হচ্ছে সাজ যেন পুরো হয়নি। কিন্তু কিসের কমতি!!

হঠাৎ করেই দরজার কেউ নক দিল। দরজা খুলে দিতেই শুভ্র ভাই রুমের ভিতরে ডুকে দরজা লাগিয়ে দিলেন। এভাবে রুমে ডুকে দরজা লাগানোর মানে কি??? শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বসলাম-

—”আপনি এখনো রেডি হননি কেন? একটু পরেই তো অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে। আর আমার রুমে কি করছেন দরজা লাগালেন কেন? একটা মেয়ের রুমে হুটহাট করে ডুকে পরতে আপনার লজ্জা করে না?? কেউ দেখে ফেলে কি হবে ভাবতে পারছেন?? আপনি যান এখান থেকে শুভ্র ভাই।

এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে ফেললাম। শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওনার চোখ গুলো লাল আকার ধারণ করেছে। কপালের রগ গুলো ভেসে ওঠেছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে আমার কথায় উনি প্রচুর ক্ষেপে গেছে। আমি হয়তো বেশিই বলে ফেলেছি। শুভ্র ভাই আস্তে আস্তে আমার সামনে আসছে। যে পরিমানে রেগে এখনই হয়তো আমার গালে এক বিশাল আকারের থাপ্পড় পরবে। এই ওনার হাতের থাপ্পড় বেচে থাকতে পারবো কি কে জানে!! ভয়ে চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে ফেললাম।

চলবে….