মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-০৯

0
615

#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ৯
#Saiyara_Hossain_Kayanat

আমি পিছন ফিরে সাইফ ভাইয়ার কাছে গিয়ে মন খারাপ করে বললাম-

—”ভাইয়া ওরা সবাই তো আমাকে একা রেখেই চলে গেলো গাড়ি নিয়ে। এখন আমি যাবো কিভাবে!!”

সাইফ ভাইয়া আমার কাধের উপর হাত রেখে বললেন-

—”চিন্তা করিস না অনি আমি আছি তো আমি তোকে দিয়ে আসবো। আর মন খারাপ করে থাকিস না…..তুই তো জানিস আমি তোর মন খারাপ দেখতে পারি না।”

সব কাজিনদের সাথে আমার সম্পর্ক মারামারি আর ঝগড়াঝাটির সম্পর্ক হলেও এই মানুষটা আমার প্রতি কখন বিরক্ত হয় না। আমি যা যা বলি সব কিছুই মেনে নেয় আর না হয় উনি ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে আমাকে শান্ত করে দেয়। এইজন্যই আমার সব কাজিনদের মধ্যে এই সাইফ ভাইয়াকেই বেশি ভালোবাসি। একদম নিজের ভাইয়ের মতো।

ভাইয়ার কথা শুনে খুশি হয়ে ভাইয়ার গাল ধরে টান দিয়ে বললাম-

—”এই না হলো আমার সাইফ ভাই….. এত্তো গুলা ভালোবাসা ভাইয়া। চল চল এখনই আমাকে দিয়ে আসো।”

সাইফ ভাইয়া আমার হাত ধরে বললেন-

—”এক মাত্র তুই-ই আমার গাল গুলা টেনে টেনে ছিরে ফেলবি একদিন। আর তুই ভিতরে আয় আমার তো আগে রেডি হতে হবে তারপর না হয় তোকে দিয়ে আসবো।”

পাশ থেকে অর্ক ভাই বললে উঠলো-

—”সব আদর ভালোবাসা শুধু তোমাদের দুইজনেরই আর আমরা তো রাস্তার মানুষ। ”

অর্ক ভাইয়ের কথা শুনে আমি আর সাইফ ভাই এক সাথে হাসতে হাসতে বললাম-

—”একদম সত্যি কথা।”

আমাদের হাসাহাসির মাঝেই হঠাৎ করে একটা গাড়ি এসে আমাদের সামনে জোরে ব্রেক করলো। আমরা সবাই কিছুটা উৎসুক দৃষ্টিতে গাড়ি দিকে তাকিয়ে আছি। একটু পরেই শুভ্র ভাই দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে এসে আমার হাত ধরে বললেন-

—”তাড়াতাড়ি চল অনন্য দেরি হয়ে গেছে ওই গাড়ি হয়তো অনেক দূর চলে গেছে। আর অর্ক তোরা সবাই কিন্তু আমাদের বাসায় যাস বেড়াতে। আজ আসি অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

একথা বলেই আমার ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন তারপর উনিও বসে ড্রাইভিং শুরু করে দিলেন। আর আমি কিছুই বলার সময় পেলাম না। শুধু ভাবতে লাগলাম শুভ্র ভাইও যাবে আমাদের সাথে!! আর এই জন্যই বাকি সবাই আমাকে এখানে একা রেখেই চলে গেছে!!

নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরে শুভ্র ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম-

—”আচ্ছা শুভ্র ভাই আপনারা আমাদের সাথে কেন যাচ্ছেন আপনাদের বাসা তো অন্য দিকে??”

—”সেটা না হয় পরেই জানতে পারবি। এখন এসব নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।”

শুভ্র ভাই ড্রাইভিং করতে করতেই কথাটা বললেন। ভাবতে হবে না বললেই কি হয় নাকি আমার মাথা তো এখন হাজার খানেক প্রশ্ন ঘুরছে। এইসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল নেই।

শুভ্র ভাইয়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো। আমি চোখ মেলে তাকাতেই শুভ্র ভাই বললো-

—”সারা রাস্তাই তো ঘুমিয়ে ছিলি এবার ওঠে পর বাসায় এসে পরেছি।”

আমি ঘুম ঘুম চোখ গাড়ি থেকে নেমে আস্তে আস্তে করে হেটে বাসার ভিতরে চলে গেলাম। কিন্তু গিয়ে দেখলাম আমাদের ফ্ল্যাটের দরজায় তালা লাগানো। শুভ্র ভাই আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন-

—”দাঁড়িয়ে আছিস কেন ভিতরে না গিয়ে??”

—”তালা লাগানো দেখতে পাচ্ছেন না আপনি??”

—”পিছনে তাকিয়ে দেখ একবার। ”

আমি পিছনে তাকিয়ে দেখলাম শুভ্র ভাইদের ফ্ল্যাটের দরজা খোলা। আমি ভিতরে যেতেই অবাক হয়ে গেলাম। সবাই এখানেই বসে আছে৷ আর ফ্ল্যাটের সব কিছু একদম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন তার মানে কি শুভ্র ভাইরা আবার এখানে সিফট করেছে নাকি!! আর এই জন্যই কি শুভ্র ভাই রহস্যময় হাসি দিতেন আমাকে দেখে????

এই ক’দিনে শুভ্র ভাইয়ের ধমকে আর ওনার অদ্ভুত রকমেরই সব কাজকর্মে আমার অবস্থা নাজেরহাল। এখন মনে হচ্ছে প্রতি দিনই ওনার ধমক খেয়ে হজম করতে হবে। আমার সুখের দিন শেষ ভাবতেই আমার কান্না পাচ্ছে।

———————

দিন গুলো ভালোই যাচ্ছিলো এই এক সপ্তাহে শুভ্র ভাইয়ের সাথে তেমন কোনো কথা হয়নি আর দেখা ও হয়নি হয়তো ব্যস্ত আছেন। সব ভালো কাটলেও আহনাফ আমার পিছু ছাড়েনি। ভার্সিটিতে যাওয়ার পথে প্রতিদিন দেখি আহনাফ দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু ভাইয়া সাথে থাকায় আমার কাছে আসতে পারে না। আহনাফকে ইগ্নোর করার জন্যই ভাইয়াকে বলছি আমাকে ভার্সিটিতে দিয়ে যেতে আবার এসে নিয়ে যেতে। তবে আজ ভাইয়া নেই ওর একটা কাজ থাকায় আমি একাই আজ যাচ্ছি ভার্সিটিতে। যাওয়ার পথে আহনাফের সামনে পরতে হয়নি। কিন্তু আসার সময় আহনাফ আমার সামনে এসে দাড়ালেন। আমার হাত ধরে এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে বললেন-

—”অনন্যা প্লিজ আজ আমাকে ইগ্নোর করো না। প্লিজ আমাকে একবার সব কিছু বুঝিয়ে বলতে দাও। একবার আমার কথা গুলো শোন প্লিজ অনন্যা। আমার বন্ধুদের কথায় তোমাকে প্রপোজ করেছি এটা সত্যি আমি মানছি। কিন্তু আমি তোমাকে সত্যি সত্যিই ভালোবেসি এটা মিথ্যা না। প্রথম প্রথম আমি আমাদের সম্পর্ক নিয়ে তেমন একটা সিরিয়াস না থাকলেও। ওই দুইমাস তোমার সাথে কাটানোর পর আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি আর এই জন্যই ডেয়ার কমপ্লিট হওয়ার পরেও আমি তোমার সাথে ব্রেকআপ করিনি। ভেবেছিলাম তোমাকে সব সত্যি বলে মাফ চেয়ে নিবো আর আমাদের সম্পর্ক আবার নতুনভাবে সব শুরু করবো। কিন্তু আমার ভাগ্য খারাপ তাই আমি কিছু বলার আগেই তুমি সব জেনে গেলে। আর আমাকে ইগ্নোর করা শুরু করলে আমাকে একটা বারও কিছু বলার সুযোগ দাও নি। তারপর হঠাৎ করেই একদিন বাবা অসুস্থ হয়ে পরে তাই আমার পরিবারের সবাই আব্বুর চিকিৎসার জন্য এখান থেকে চলে গিয়েছিলাম তোমাকে বলেও যেতে পারিনি। আর ওখানে যাওয়ার এক বছরের মাথায় আব্বু মারা যায়।”

এতো টুক বলে একটু থেমে আবার বলা শুরু করলেন-

—”আব্বু মারা যাওয়ার পর পুরো পরিবার আর ব্যবসা সব সামলিয়ে কিছুদিন আগে এখানে আসলাম। আর তখনই তোমার সাথে দেখা হলো কিন্তু তুমি দুইবছর পর আমাকে দেখেও আগের মতোই ইগ্নোর করে চলে গেলে। আমি তোমার ভার্সিটিতে গিয়ে ও খুঁজেছি তারপর তোমার ফ্রেন্ডদের থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম তুমি তোমার কাজিনের বিয়েতে গেছো। এই দু’বছরে আমি অনেক বার তোমার সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি। তুমি যোগাযোগের সব রাস্তা আমার জন্য বন্ধ করে দিয়েছিলে। আমি মানছি আমি ভুল করেছি।”

আহনাফের কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। এই মুহূর্তে আমার কি বলা উচিত বা করা উচিত আমি কিছুই বুঝতে পারছি। জ্ঞানশূন্য হয়ে গেছি আমি এই মুহূর্তে।
এখন মনে হচ্ছে আসলেই আমার একবার আহনাফের কথা শোনা উচিত ছিল। এই মুহূর্তে আহনাফের জন্য অনেক খারাপ লাগছে। এই দু’বছরে কতো কিছুই না সহ্য করেছে।

আমি কিছু বলবো তার আগেই কোথা থেকে যেন শুভ্র ভাই ঝড়েরবেগে এসে আমার হাত টান দিয়ে আহনাফের হাত থেকে ছুটিয়ে নিলো। আচমকা এমন কিছু হওয়াতে আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। কি থেকে কি হয়ে গেল!!!শুভ্র ভাই এখানে কিভাবে আসলেন!!

চলবে…..