মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-১০

0
664

#মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ১০
#Saiyara_Hossain_Kayanat

শুভ্র ভাই টান দিয়ে এক ঝটকায় আমার হাত আহনাফের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলেন। কিছু না বলেই আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। পিছনে একবার তাকিয়ে দেখলাম আহনাফ আমাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

শুভ্র ভাই গাড়ির সামনের এসে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে শক্ত গলায় বললেন-

—”গাড়িতে বস।”

আমি কিছু না বলে চুপ করে গাড়িতে বসে পরলাম। শুভ্র ভাই গাড়িতে বসে ড্রাইভ করা শুরু করলেন। আমার সাথে কোনো কথাই বলছেন না। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর আমি নিজেই কথা বলা শুরু করলাম। একটু ভয় নিয়েই জিজ্ঞেস করলাম-

—”শুভ্র ভাই আপনি আমার কলেজে কিসের জন্য এসেছিলেম???”

শুভ্র ভাই সামনের দিকে তাকিয়েই কাঠকাঠ গলায় বললেন-

—”আন্টি পাঠিয়েছিলেন তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তোর প্রেমে বাধা দিয়ে দিলাম।”

—”এসব কি বলছেন শুভ্র ভাই!!”

উনি আমার দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বললেন-

—”কেন মিথ্যে বলছি আমি???”

শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওনার চোখ রাগে লাল হয়ে আছে। চোখ মুখে রাগের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। যে কেউ দেখলেই বুঝে যাবে এই মুহূর্তে শুভ্র ভাই প্রচন্ড রেগে আছে। আমি কিছু বলার আগেই শুভ্র ভাই গাড়ি থামিয়ে দিলেন। গাড়ি থেকে নেমে আমার বা-হাত শক্ত করে চেপে ধরে গাড়ি থেকে নামালেন। চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম নির্জন একটা রাস্তা। দুই পাশে শুধু বড় বড় গাছ জায়গায়টা খুব মনোমুগ্ধকর হলেও শুভ্র ভাই এতো জোরে হাতে চাপ দিয়ে ধরে আছেন যে ব্যথার কারনে এখন আর এই সুন্দর পরিবেশ অনুভব করতে পারছি না৷

আমি হাত ছুটানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেও পারলাম না। শুভ্র ভাই গাড়ি থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন এখনও আমার হাত ধরে আছেন। এবার আমি থাকতে না পেরে হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতেই ভয়ে বললাম-

—”শুভ্র ভাই কি করছেন প্লিজ হাতটা ছাড়ুন ব্যথা পাচ্ছি তো!”

শুভ্র ভাই আমার হাত ধরে জোরে টান দিয়ে আমাকে ওনার একদম কাছাকাছি নিয়ে এসে রাগে হুংকার দিয়ে বলে উঠলেন-

—”আমি হাত ধরলেই কেন এতো সমস্যা তোর?? আমি ধরলেই কেন হাত ছুটানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠিস?? আর যখন ওই ছেলে হাত ধরে ছিল তখন তো কিছু বললি না। একদম চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলি তখন তো কখন সমস্যা হচ্ছিলো না তোর। এখনো ভালোবাসিস নাকি আহনাফকে??”

শুভ্র ভাই আমার হাত আগের থেকে আরও বেশি শক্ত করে ধরেছেন। মনে হচ্ছে হাত হয়তো ভেঙেই যাবে। শুভ্র ভাইয়ের রাগ দেখে ভয়ে আর হাতের ব্যথায় চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পরলো। আমার চোখে পানি দেখে শুভ্র ভাই সাথে সাথেই আমার হাত ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে চলে গেলেন।
শুভ্র ভাই গাছের মধ্যে হাত দিয়ে কয়েকটা আঘাত করে চোখ বন্ধ করে জোরে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছেন। ওনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাগ কন্ট্রোল করার জন্য প্রানপন চেষ্টা করছে। আমি ওনার দিকেই তাকিয়ে আছি ওনার কর্মকান্ড দেখছি।

একটু পর শুভ্র ভাই আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলেন আর কিছুটা চিন্তিত সুরে বললেন-

—”খুব বেশিই ব্যথা দিয়েছি অনন্য?? ইসস একদম লাল হয়ে গেছে হাতটা।”

শুভ্র ভাই এতো তাড়াতাড়ি নিজের রাগ কন্ট্রোল করে ফেললেন!!! এখন একদমই শান্ত একটা মানুষ মনে হচ্ছে তাকে। আমি কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি এখনো আমার চোখ দিয়ে পানি পরছে কিন্তু কেন বুঝতে পারছি না এখন তো আর ভয়ও করছে না।

শুভ্র ভাই আমার কান্না দেখে উত্তেজিত হয়ে বললেন-

—”হাত কি বেশি ব্যথা করছে অনন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো?? কিরে কিছু বল আমাকে।”

এবার আমি মাথা দুপাশে নাড়িয়ে না ইশারা করলাম। শুভ্র ভাই আমার চোখ পানি মুছে দিয়ে আমার মাথাটা ওনার বুকের সাথে চেপে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন-

—”সরি অনন্য আমি প্রচুর রেগে গিয়েছিলাম তখন তোর হাত ওই ছেলের হাতে দেখে। আর রাগের মাথায় তোকে ব্যথা দিয়ে দিলাম। সরি রে এবারের মতো আমাকে মাফ করে দে আর কখনো এমন করবো না প্রমিজ।”

আমি কিছু বললাম না শুধু এক হাত দিয়ে ওনার পিঠের দিকের শার্ট শক্ত করে খামচে ধরলাম।
শুভ্র ভাই আমার মাথা তুলে চুল ঠিক করে দিতে দিতে বললেন-

—”দেখ অনন্য তুই বাচ্চাদের মতো কেঁদেকেটে নিজের মুখের কি অবস্থা করেছিস।”

আমি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে গাল মুছে অভিমানের সুরে বললাম-

—”আপনার জন্যই তো সব হয়েছে। কিছু না জেনে শুনেই আমার সাথে এমন রাগারাগি করলেন আর হাতটা তো প্রায় ভেঙেই ফেলেছিলেন।”

—”বললাম তো রাগের মাথায় এমনটা করে করেছি। এখন তুই আমাকে যা শাস্তি দিবি আমি মাথা পেতে মেনে নিব।”

—”আমি কোনো শাস্তি দিব না আমি আংকেল কে সব বলে দিব বাসায় গিয়ে। তারপর আংকেলই আপনাকে যা করার করবে।”

—”দেখ অনন্য তুই যা করার কর কিন্তু আব্বুকে কিছু বলিস না। এক থাপ্পড়ের জন্য আব্বু আমাকে দশ বছরের জন্য বিদেশ পাঠিয়ে দিয়েছিলেন এখন আর এমন কোনো শাস্তি চাই না। এবারের মতো মাফ করে দে প্লিজ।”

আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম-

—”ভেবে দেখবো।”

————————

কি থেকে কি হয়ে গেল এই অল্প কিছু সময়ের মধ্যে। আহনাফের জন্য অনেক খারাপ লাগছে। আমি কি আহনাফের সাথে অন্যায় করেছি এতোদিন!!!!!
আহনাফের মুখ থেকে কখনো এসব কথা শুনতে হবে আমি ভাবতেও পারিনি। কিন্তু এখন এই পরিস্থিতিতে আমার কি করা উচিত কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

শুভ্র ভাই আমাকে একটা রেস্টুরেন্টে বসিয়ে রেখে কোথায় যেন গেলেন প্রায় দশ মিনিট হলো এখনো আসছে না। একটু পর শুভ্র ভাই এসে আমার পাশে বসে পরলেন। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি শুভ্র ভাইয়ের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছি না লজ্জা লাগছে খুব। উনি আমাকে জরিয়ে ধরেছিলেন ভাবতেই ভয়ংকর রকমের লজ্জা এসে আমাকে আক্রমণ করছে। এই ভয়ংকর অনুভূতির সাথে আমি কখন পরিচিত হইনি।
শুভ্র ভাই পকেট থেকে একটা মলম বের করে আমার হাতে লাগিয়ে দিতে লাগলেন। তার মানে উনি মলম আনতে গিয়েছিলেন!!
আমি হাত সরিয়ে নিতে চাইছি দেখে শুভ্র ভাই আমাকে ধমক দিয়ে বললেন-

—”একদম হাত নাড়াবি না মলমটা লাগাতে দে ভাল করে। দেখ হাতটা লাল হয়ে গেছে। আচ্ছা শোন বেশি ব্যথা করলে আমাকে বলিস আমি হসপিটালে নিয়ে যাব।”

শুভ্র ভাইয়ের এতো কেয়ার দেখে আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম-

—”আরে ভাইয়া হাত একটুও ব্যথা করছে না এখন…. শুধু শুধুই মলম লাগাচ্ছেন।”

শুভ্র ভাই দিলেন এক ধমক—”বেশি কথা না বলে চুপ করে বসে থাক অনন্য।”

আমি আর কিছু বললাম না। শুভ্র ভাই হাতে মলম লাগানো শেষে আমার হাত ধরে নিচের দিকে তাকিয়েই শান্ত কন্ঠে বললেন-

—”আচ্ছা অনন্য তুই কি এখনো আহনাফকে ভালোবাসিস? আমাকে ভয় পাওয়ার দরকার নেই যা সত্যি তা-ই বল আমাকে।”

শুভ্র ভাইয়ের এমন শান্ত কন্ঠ শুনে আমার কেমন যেন লাগলো। কি বলা উচিত এখন!! আমি কি সব সত্যি কথা বলে দিবো ওনাকে!!!

চলবে…..